Showing posts with label ভ্রান্ত আকিদা. Show all posts
Showing posts with label ভ্রান্ত আকিদা. Show all posts

Monday, June 15, 2020

মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান কি?





প্রশ্ন: হাজীদের যারা মদিনায় গমন করেন তাদের মারফতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জন্য সালাম প্রেরণের বিধান কি? 
উত্তর: 
আলহামদু লিল্লাহ,
এ কাজটি শরিয়ত সম্মত নয়। এ ধরণের আমলের প্রচলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল না। এবং মুসলমান আলেমরা এ ধরনের কোন আমল করেছেন তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ, যে কোন মুসলমানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেয়া, দুনিয়ার যে কোন স্থান হতেই সম্ভব। আর আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি এ সালাত ও সালামকে তার ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌছে দেবেন, যাদের তিনি এ দায়িত্বেই নিয়োজিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, যে কোন ব্যক্তি যে কোন স্থান হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেবে, তার সালাম অবশ্যই পৌছানো হবে, এতে কোনরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নাই। সুতরাং, মদিনা মুনাওয়ারা যিয়ারতকারীকে সালাম পৌছানোর দায়িত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। তার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না যে, সে কি পৌছতে পারবে নাকি পথে মারা যাবে! অথবা সে কি ভুলে যাবে নাকি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে?
আব্দুল্লাহ বিন মাসদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
পৃথিবীতে আল্লাহর কতক ভ্রমণকারী ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌছে দেয়। (নাসায়ী:১২৮২)‌‌ শায়খ আলবা‌‌নি সহিহ তারগিবে(১৬৬৪)হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। 

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানাবে না, আর আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করবে না। আর আমার উপর দরূদ পাঠ কর, কারণ, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহিহ আল-জামেতে(৭২২৬) সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন। 

আল-লুজনা আদ-দায়িমার আলেমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তিকে সালাম পৌঁছানোর জন্য অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া শরিয়ত অনুমোদিত নয়। বরং, বিদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল বিদআতই গোমরাহি, আর সব গোমরাহির শেষ পরিণতি জাহান্নাম। 
সুতরাং, আমাদের কর্তব্য হলো, এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকা এবং যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের সতর্ক করা। এবং জানিয়ে দেয়া যে, এটি শরিয়ত সম্মত নয়। যাতে তারা এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকে। আমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও মহা করুণা যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দেয়া আমাদের সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত কিংবা পূর্ব প্রান্ত যেখান থেকেই আমরা সালাম দেই না কেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত, তিনি বলেন, 
পৃথিবীতে ভ্রমণকারী আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (বর্ণনায়, ইমাম আহমাদ, নাসায়ি ও অন্যান্যরা) 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমাদের সর্বত্তোম দিন হলো জুমুআর দিন, তাই তোমরা ঐদিনে আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমরা আমার কবরকে উৎসবের জায়গা বানাবে না এবং নিজেদের ঘরকে কবর বানাবে না। আর তোমরা আমার উপর দরূদ পড়বে, কারণ, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়,তোমরা যেখানেই থাক না কেন? 
এ সম্পর্কে আরো বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায, শায়খ আব্দুল আজীজ আলে শেখ, শায়খ ছালেহ আল ফাওজান এবং বকর আবু জায়েদ। ফতোয়া আললুজনা আদদায়েমাহ ৩০,২৯/১৬)

মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিভাগের সদস্য, শেখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক বলেন, মদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাম পাঠানোর কোন প্রমাণ নাই। সাহাবায়ে কিরাম, সালাফে সালেহীন, তাবেয়ীন এবং আহলে ইলমদের কারোরই এ অভ্যাস ছিল না। তারা কেউ অপরের মাধ্যমে নবীর উপর সালাম পাঠাতেন না। এবং তাদের কারো হতেই এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি উম্মতের দেয়া সালাম ও দরূদ কোন মাধ্যম ছাড়া এমনিতেই পৌঁছানো হয়ে থাকে। যেমন, সহিহ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না, আর আমার কবরকে উৎসব উদযাপনের জায়গায় পরিণত করো না। আমার উপর দরূদ পড়, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌছানো হয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); 
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অন্যের মাধ্যমে সালাম পাঠানোর ইবাদতটি সম্পূর্ণ বিদআত। বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি সালাম পাঠানোর কোন বিধান শরিয়ত সম্মত নয়। মৃত ব্যক্তির উপর সেই পাঠাবে যে তার কবর যিয়ারত করবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করতেন, তাদের সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন। তিনি তার সাহাবিদের শিখিয়ে দিতেন, তোমরা কবর যিয়ারত কালে এভাবে বলবে, 
 ( السَّلامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاحِقُونَ ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ ) أخرجه مسلم (975)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন, তুমি বল,
 (السَّلامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاحِقُونَ ) أخرجه مسلم (974) ،
তবে অনুপুস্থিত জীবিত ব্যক্তির জন্য সালাম পাঠানোতে কোন অসুবিধা নাই। তার জন্য অপরের মাধ্যমে সালাম পাঠানো জায়েয আছে। 
মোট কথা: আল্লাহ তায়ালা এ উম্মাতের উপর খুশি হন, যখন তারা তাদের নবীর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে। আর তারা যত বেশি এ আমল করে, আল্লাহ তায়ালা ততবেশি খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত আছে, 
আল্লাহ তায়ালা তার কবরে কিছু ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন তারা তার উম্মাতের পক্ষ হতে তাদের সালাত ও সালাম তার নিকট পৌছায়।
আল্লাহই ভালো জানেন।

শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমিন রহ. বলেন, তা সত্বেও আমরা বলি, আর যদি তুমি তার উপর দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত থেকেও সালাম পাঠাও তবে তোমাদের সালাম তার নিকট পৌছবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতাদের নিয়োজিত করেছেন, যখন তোমাদের কেউ রাসূলের উপর সালাম পাঠায়, তারা সে সালাম রাসূলের নিকট পৌঁছে দেয়। 
সূতরাং আমরা যদি এখন বলি,  " اللهم صلِّ وسلِّم على رسول الله " আমাদের এ সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে। সালাতে আমরা বলে থাকি, " السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته " তখনো আমাদের সালাম তাঁর নিকট পৌছানো হয়।
আমি মদিনাতে অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, আমার পিতা আমাকে ওসিয়ত করেছেন, যাতে আমি রাসূলের উপর সালাম প্রেরণ করি। তিনি আমাকে বলেন, আমার পক্ষ থেকে রাসূলের উপর সালাম পাঠ করবে। এটি সর্ম্পূণ ভূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত নন, তাহলে জীবিত ব্যক্তির সালামের ন্যায় তাঁর নিকট প্রেরণ করা যেত! আর যদি তোমার পিতা রাসূলের উপর সালাম দিয়ে থাকেন, তার সালাম পৌছানোর জন্য তোমার চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তোমার চেয়ে অধিক বিশ্বাসী রয়েছে যারা তোমার পিতার সালামকে রাসূলের প্রতি পৌঁছাবে। আর তারা হলো আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতা বৃন্দ।
সুতরাং, এর কোন প্রয়োজন নাই যে, তুমি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠাবে। আমরা বলি, তুমি তোমার জায়গা হতে অথবা দুনিয়ার যে কোন জায়গা হতে বলবে,  السلام عليك أيها النبي এটি অতিদ্রুত ও সুন্দরভাবে তার নিকট পৌছানো হবে, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নাই। 
আল্লাহই ভালো জানেন।


মুফতী : সৌদিআরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ
অনুবাদক : জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

Monday, June 8, 2020

দ্বীন কায়েম বলতে আপনি কি বুঝেছেন ?


যদি আপনি এমন মনে করেন যে - ইসলামের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলঃ একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে দ্বীন কায়েম করা, তাহলে প্রশ্ন আসেঃ

১. ইসলামের যেই ৫টি রুকনের কথা নবী (সাঃ) হাদীসে জিব্রীলে উল্লেখ করলেন, তাতে এই ইকামতে দ্বীন কোথায়? তাহলে যেগুলো ইসলামের মূল বিধান তা বাদ দিয়ে ইসলামের নামে একটি নব আবিষ্কৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়নি কি?

২. ধরে নিলাম একটি ইসলামী রাষ্ট্র কেউ তৈরী করলো, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র তৈরী হলেই কি সাথে সাথে কাফেররা মুমিন হয়ে যাবে এবং মুশরিকরা শির্ক বর্জন করে তাওহীদী হয়ে যাবে? ধরুন বাংলাদেশে এমন একটি সরকার আসলো, তাতে কি পীরপন্থী, কবর-মাযারওয়ালারা কবরপূজা ছেড়ে দিবে? আইনের ভয়ে যদি তারা কিছু কার্য-কলাপ বন্ধও রাখে কিন্তু তাতে কি তাদের ঈমান পরিবর্তন হবে? তাই অন্তরের পরিবর্তনই মূল পরিবর্তন, আইনী পরিবর্তন হচ্ছে সাময়িক ও মুনাফেকী পরিবর্তন।


৩. ইসলামের অধিকাংশ বিধানের প্রতি আমল করতে কি কোন ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রয়োজন আছে? ইসলামী হুকুমত থাকবে তাহলেই কি আপনি নামায, রোযা, হজ্জ যাকাত দিতে পারেন, না এমনিতেই দিতে পারেন? আসলে ইসলামের অধিকাংশ বিধান মানবীয় ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্য রাখে তা মানতে সরকারি ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না।

৪. ঈমান ও আক্বীদা হচ্ছে ইসলামের মূল বিষয়, তা বিশ্বাস করতে কি কোন সরকারের প্রয়োজন হয? ধরুন আরকানে ঈমানের যাবতীয় কিছু, আল্লাহর প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, কিতাব সমূহের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, শেষ দিনের প্রতি ও ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান রাখতে কি সরকারের দরকার হয়?

৫. ইসলামে যে সব ক্রাইমের শস্তির বিধান রয়েছে, সে সবের জন্য সরকারি ক্ষতার প্রয়োজন আছে, যাকে ‘হুদুদ’ বলা হয়। এসব হুদুদ বিশ্বের কোন মুসলিম দেশে বাস্তবায়ন করা হয় না, শুধুমাত্র সউদী আরব ছাড়া। তার পরেও তো আমাদের দেশের ইকামতে দ্বীন পন্থিীরা দিন-রাত সউদী আরবের সমালোচনাই করে যায়। তাহলে কোন ইসলামী রাষ্ট্র চান তারা?

৬. বর্তমানে যে সব মুসলিম ভাই অমুসলিম দেশে বসবাস করেন, তারা যদি ঈমান ও সৎ আমলের সহিত মারা যান, তাহলে তারা জান্নাত পাবেন না কি? তাহলে ইসলামী হুকুমত জান্নাত পাওয়ার জন্যও তো জরুরী নয়।

৭. সেই ইসলামী হুকুমত যদি কায়েম করতে হয়, তাহলে তার পদ্ধতিটা কি হওয়া উচিৎ? গণতন্ত্রের ভোটের নিয়মে নাকি অন্য কিছু? গনতন্ত্র কি ইসলাম?

শেষে বলি, ইসলামী হুকুমত কায়মে হোক, তার জন্য চেষ্টা করা হোক, কিন্তু তা হতে হবে ব্যাপক তাওহীদ ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক দাওয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তির সংশোধন। অতঃপর সমাজ ও দেশের পরিবর্তন, অতঃপর ইসলামী হুকূমত। যেমন ছিল নবী (সাঃ) এর তরীকা, ক্ষমতার বলে নয়, দাওয়াতী সংশোধনের মাধ্যমে দেশ গঠন।


Collected from Shaykh Abdur Raquib

Sunday, May 17, 2020

খারেজীদের গুরু আহমাদ মূসা জিবরীল এর ব্যাপারে সতর্কতা



তাকফীরী যুবকদের একটি সাধারন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; তারা বয়ঃজ্যৈষ্ঠ সালাফী আলিমদের গালমন্দ করে অথচ আহমাদ মুসা জিবরীল ও আনোয়ার আল আউলাকির মতো মানুষকে 'ইমাম' হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। এরা আসলেই মিসকিন বৈ কিছুই না।
.
তাকফীরী ধূর্তরা আহমাদ মূসা জিবরীলের ডিফেন্সে নানারূপে চল-চাতুরী করে। যেমন : এরা যুগ শ্রেষ্ঠ আলিমেদ্বীন ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ-র তাজকিয়্যাহ পেশ করে ( জানিনা এটা সত্য নাকি ভুয়া) যদি সত্যও হয়ে থাকে তাহলেও তা বাতিল হয়ে যাবে ঠিক যেমনটি বাতিল হয়ে গেছে সাইয়্যদ ক্বুতুব এবং জামা’য়াত আত তাবলীগের ব্যাপারে করা তাঁর প্রশংসা। কেননা ঐ সমস্ত লোকের ব্যাপারে পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। চ্যালেঞ্জ রইল, পারলে দেখাও - ইমাম ইবনু বায এর জীবিত ছাত্রদের মধ্যে কে তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছে ?
ইমাম ফাউজান ? লুহাইদান ? রাবী?
.
সালাফীদের মূলনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; অপরিচিত (মাজহুল) কারো নিকট হতে জ্ঞান আহরণ করা হয়না। আমাদের কাছে উলামাদের পক্ষ হতে তাযকিয়্যাহ নিয়ে এসো। যাও _
.
আহমাদ মুূসা জিবরীলের অনুসারীদের দাবী হচ্ছে, ইমাম ইবনু বায [ রাহিমাহুল্লাহ ] নাকি সাধারনভাবে তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন।
আমরা জিবরীলের অনুসারীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ মারা ১৯৯৯ সালে। ঠিক তখনও অর্থাৎ ২০০০ – ২০০১ সাল পর্যন্ত আহমেদ মুসা জিবরীল খোলাখুলিভাবে তার খারেজিপনা প্রচার শুরু করেনি ঠিক যেমনিভাবে আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক তার দুষ্ট নবউদ্ভাবিত ধারণা ততক্ষণ পর্যন্ত শুরু করেনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইমাম আল আলবানী এবং ইমাম মুক্ববীল [ রাহিমাহুমুল্লাহ ] জীবিত ছিলেন।

.
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আহমাদ মূসা জিবরীল বিরচিত " ধূলোমলিন রমাদান " নামক একটা বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে। সেখানেও লিখক পরিচিতিতে কারসাজি করা হয়েছে! বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিখ্যাত আহলে হাদিস আলিম, আল্লামাহ এহসান এলাহী যাহীর [ রাহিমাহুল্লাহ ] নাকি তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন! অথচ আমরা উইকিপিডিয়া এবং আহমাদ মুসা জিবরীল সাহেবের অফিশিয়াল পেইজে তালাশ করে দেখলাম যে, তিনি ১৯৮৯-১৯৯০ তে মদিনায় পড়তে এসেছিলেন!
এখন যদি কেউ দাবী করে যে, একটা বাচ্চা ছেলেকে আল্লামাহ যাহীর রাহিমাহুল্লাহ তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন সেটা চরম হাস্যকরই বটে! কারণ, ৩০ মার্চ ’১৯৮৭ সালে সোমবার ভোর রাত ৪-টার সময় মাত্র ৪২ বছর বয়সে আল্লামাহ যহীর বোমা হামলায় আহত হন এবং সৌদির একটি হসপিটালের ইন্তেকাল করেন। তারমানে হল, মূসা জিবরীল সাহেব মদিনায় ছাত্রত্ব গ্রহণের ৩ বছর আগেই আল্লামাহ যাহীর রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যবরণ করেন।
.
এসব কথিত প্রশংসাপত্র আহমাদ মুসা জিবরীলের অনুসারীরা ব্যবহার করে থাকে তাকে রক্ষা করার জন্য এবং যারা তার সমালোচনা করে তাদেরকে মিথ্যা বা ভুল প্রমাণ করার জন্য। জ্ঞাতব্য যে, এটা রক্ষার চেষ্টা নয় বরং এক ধরনের দ্বিচারিতা, অপ-কৌশল ও মিথ্যাচার, যা দ্বারা তার প্রমোটার-রা ধোঁকাগ্রস্থ সালাফীদের ব্লাকমেইল করে থাকে। অবশ্য, এটা নতুন কিছুই নয়, কেননা আমরা প্রায়ই দেখে আসছি খ্যাতি অর্জনে ইচ্ছুক অনেক বক্তাকেই এমনিভাবে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।
.
এদের আরেকটি খোঁড়া যুক্তি হল “ আহমাদ মূসা জিবরীল মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছিলেন এবং ইযাযতপ্রাপ্তও ছিলেন।“
শেষোক্ত অংশের (ইযাযত) ব্যাপারে আমাদের নিকট কোনো অথেনটিক প্রমাণ নেই তবে "মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ" এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক আদর্শ অনুসারে সনদধারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে সাধারণ ইযাযত হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকন্তু, মদিনার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আশ শাইখুল আল্লামাহ, আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ আল বদর [ হাফিয্বাহুল্লাহ ] বলেছেন, "যখন কেউ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তখন তিনি গবেষণামূলক জ্ঞানের প্রারম্ভিক ছাত্র হিসেবে বিবেচিত হন, তবে তিনি ‘আলিম নন"।
.
ওহে খারেজীদের লেজের সমর্থকরা! ক্বাবার প্রভুর দোহাই দিয়ে বলছি : মিথ্যাচার বন্ধ কর, আল্লাহকে ভয় কর এবং আহমাদ মূসা জিবরীল [ হাদাহুল্লাহ ] ও অন্যান্য খারেজীদের প্রতি অন্ধ গোঁড়ামি পরিহার কর।
অত:পর সালাফী ভাইদের অনুরোধ করব, "তোমরা সালফদের পথ অনুসরণ করো। সর্বোত্তম বক্তব্য হল আল্লাহর আর সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা তার রসূলের। কাজেই একজন প্রতারককে পছন্দ করার চেয়ে এটাই তোমাদের জন্য অধিকতর পছন্দনীয় হওয়া উচিৎ।
হে ভাই তুমি হয়ত ভাবছো যে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য উমুক ব্যক্তি আমেরিকার কারাগারে বন্দী হয়েছিলেন , অথচ সে কোনো মহৎ কাজের জন্য কারারুদ্ধ হননি বরং গ্রেফতার হয়েছিলেন কর ফাঁকির জন্য।
মনে রেখো, একজন ধোঁকাবাজ ও চক্রান্তকারী ব্যক্তি সমসাময়িক যেকোন বিষয়ে কিছু আবেগময় লেকচার দিয়ে তোমাকে সপ্নের মুজাহিদ বানিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু তাকিয়ে দেখ, সে এবং তাঁর পরিবার নিরাপদ জীবন যাপন করছে।
.
যুবক! জেগে উঠো, আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং অন্ধ গোঁড়ামির রোগ হতে হিফাজত করুন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ভালবাসার উপরে অন্যকারো ভালবাসাকে স্থান দেয়া হতে আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন। আমীন।
.
#সুন্নাহর পথযাত্রী

"ভ্রান্ত বক্তা নোমান আলী খান"


প্রচারেঃজাহিদ হাসান নিলয়
পশ্চিমা দেশের অসংখ্য ভ্রান্ত বক্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নোমান আলী খান। তাকে কুরআনের তাফসির বিশেষজ্ঞ বলা হয়।তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক,তিনি বিভিন্ন জায়গায় তাফসিরের আলোচনা করে থাকেন,তাছাড়া বিষয় ভিত্তিক আলোচনাও করে থাকেন যা থাকে গল্প-গুজব,হাসিঠাট্টা খেল তামাশা,জাল হাদিস,উদ্ভট উদ্ভট তাফসিরে পরিপূর্ণ।যাহোক এই বক্তার ইলম বা কুরআন-হাদিসের বেসিক নলেজও নেই,তার আকিদা ও মানহাজ ভ্রান্ত।তাসত্ত্বেও কিছু ভাই হয়ত তার সম্পর্কে না জানার কারনে তার লেকচার শুনে ও শেয়ার করে,এই ধরণের ভাইরা ফেইসবুক টুইটারে যা পায় তাই শেয়ার করে দেয়,যারা একটু ইউনিক আবেগি বা লুলামি কথা বলে হাসায়-কাঁদায় তাদের ভিডিও শেয়ার করার জন্য ব্যকুল হয়ে পরে।তাদেরকে যদি বিষয়টি অবগত করানো হয় তাহলে তারা বলে এই লোক কি ভ্রান্ত কথা বলে আগে জানান তারপর দেখব। তাই এরই পরিপ্রেক্ষিতে নোমান আলী খানের কিছু বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য পেশ করা হল ।
(১) নোমান আলী খানের কাছে আকিদার কোন গুরুত্ব নেইঃ
নোমান আলী খান আকিদা নিয়ে ব্যাঙ্গ করে ,মানুষকে আকিদার গুরুত্ব থেকে সরিয়ে আনার জন্য সে একটা কাহিনী বলে-
এক মহিলা তাকে বলে আপনার উচিত মানুষকে বলা যে তারা যাতে সঠিক আকিদা শিখে,তারপর ওই মহিলা নোমান আলী খানকে একটি বই দেখিয়ে বলে এটা একটি আকিদার বই আপনার এটা শিখান উচিত যাতে তারা সঠিক তাওহিদে উলুহিয়াহ,রুবুবিয়াহ ও আসমা-ওয়াসসিফাত সম্পর্কে জানে কারন লোকেরা অনেক শিরক করে ,কারন তাদের আকিদা সঠিক নয়।
এই কথা বলায় নোমান আলী খান ব্যঙ্গ করে বলা শুরু করে যে, "এটা কি কুরআন না সূরা ?
মহিলা বলেঃ আপনি কি আকিদা সম্পর্কে জানতে চান না ?
নোমান আলী খান বলেঃ না, আমার জানার প্রয়োজন নেই।আমি আকিদা সম্পর্কে খুজলাম কোথাও পেলাম না ,এটা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে এটি কথায় আছে?
লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=mYoXqtIjkH4&feature=youtu.be
জবাবঃ-
ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর অন্যতম হল "আক্বিদাহ"! যারা আকিদার ব্যাপারে কোন গুরুত্ব প্রদান করে না এবং বলে, ঈমান খাকাই যথেষ্ট - তাদের ব্যাপারে শাইখ সালিহ আল ফওযান হাফি. বলেন,
“এটা বিরোধপূর্ণ বক্তব্য কারণ সঠিক আক্বিদাহ ব্যতীত ঈমান কোন ঈমানই নয়। এবং যদি আক্বিদাহ বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে সেখানে কোন ঈমানই নেই, এবং কোন দ্বীনও নেই।”
[ফাতাওয়া আস-সিয়াসাহ আশ-শা’রীয়াহ, প্রশ্ন-১]

-
বিংশ শতাব্দীর সশ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন আল্লামাহ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেন,
فتاوى نور على الدرب لابن باز بعناية الشويعر
العقيدة أهم الأمور، وهي أصل الدين وأساس الملة
আক্বিদাই হল উত্তম জিনিস, এবং এটাই দ্বীনের মূল এবং ইহাই হল ধর্মের মূল ভিত্তি।
-
স্বনামধন্য আলেমদ্বীন ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ: তার লিখিত "ইসলামী আক্বিদাহ" নামক বইতে বলেন-
‘আকিদা’ শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের সঙ্গে গুলিয়ে যায়। মূলত অস্বচ্ছ ধারণার ফলে এমনটা হয়।
প্রথমত, ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আর আকিদাহ দীনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত, আকিদার তুলনায় ঈমান আরও ব্যাপক পরিভাষা। আকিদাহ হলো কিছু ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের নাম।
অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়;বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ।
একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদাহ পোষণ। আরেকটি বিষয় হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
তৃতীয়ত, আকিদা হলো ঈমানের মূলভিত্তি। আকিদাব্যতীত ঈমানের উপস্থিতি তেমন অসম্ভব, যেমনিভাবে ভিত্তি ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব।
-
শাইখুল ইসলাম ঈমাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহ. বলেন-
ক্বোরআন, ছুন্নাহ্ ও ছালাফে সালিহীনের (رضوان الله عليهم أجمعين) ঐকমত্যের বিরোধী প্রতিটি ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ও ‘ইবাদাহ্‌ হলো বিদ‘আত। যেমন- খারিজী, রাফিযী, ক্বাদরিয়াহ্‌, জাহ্‌মিয়াহ্ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কথা-বার্তা ও আক্বীদাহ্-বিশ্বাস হলো বিদ‘আহ্‌। মজলিশে তবলা ও গান-বাজনার মাধ্যমে ‘ইবাদত করা, দাড়ী শেইভ বা মুন্ডানোর মাধ্যমে, গাজা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য পানের মাধ্যমে আল্লাহর ‘ইবাদত বা নৈকট্য কামনা করা ইত্যাদি কর্মকান্ড, যেগুলো ক্বোরআন-ছুন্নাহ্‌র বিরোধীতাকারী বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ের লোকেরা করে থাকে- এ সবই হলো বিদ‘আত। (ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়াহ্- ১৮/৩৪৬)
(২) ঈমানের রুকন ছয়টি তার মধ্যে একটি হল "আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস"!
নোমান আলী খানের কাছে "আল্লাহ্‌ কোথায়" এ সম্পর্কে জানার কোন গুরুত্ব নেই।
নোমান আলী খান তার কোন এক বক্তব্যে বলেন, লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে আল্লাহ্‌ কোথায়? তিনি সাত আসমানের উপর না সবজায়গায় বিরাজমান ?(তারপর সে বলে) এই প্রশ্ন কি আল্লাহ্‌ করেছেন ? সাহাবিরা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন ? আমাদের এই বিষয় দমন করতে হবে। (ইন্নানিল্লাহ)
লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=E7kyeQUyWMo
জবাবঃ-
আমরা প্রথমেই আল্লাহ কোথায় এবং আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে সালাফগন কেমন আক্বিদাহ রাখতেন সেটা তুলে ধরব!
ক. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক ইবন খুযাইমাহ (২২৩ - ৩১১ হিজরি) রহিমাহুল্লাহ বলেন:
.
من لم يقر بأن الله عز وجل على عرشه، فوق سبع سمواته، فهو كافر بربه، حلال الدم، يستتاب فإن تاب
وإلا ضربت عنقه، وألقي على بعض المزابل حتى لا يتأذى المسلمون ولا المعاهدون بنتن رائحة جيفته، وكان ماله فيئا لا يرثه أحد من المسلمين، إذ المسلم لا يرث الكافر، كما قال الني صلى الله عليه وسلم " لا يرث المسلم الكافر ولا الكافر المسلم "
.
"যে ব্যক্তি এই স্বীকারোক্তি দেয় না যে: আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা তাঁর সাত আসমানের ঊর্ধ্বে তাঁর আরশের উপর; তবে সে তার রবের প্রতি কাফির। তার রক্ত হালাল। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। যদি সে তাওবা করে (তবে ভালো) অন্যথায় তার শিরোচ্ছেদ করা হবে এবং কোন একটি নর্দমায় তাঁকে নিক্ষেপ করা হবে যেন লাশের দূর্গন্ধে মুসলিম এবং চুক্তিবদ্ধরা (যিম্মি) কষ্ট না পায়। আর, তার সম্পদ 'ফাই' হিসেবে গণ্য হবে এবং কোন মুসলিম এটি উত্তরাধিকারসুত্রে লাভ করবে না। কেননা মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকার লাভ করে না। যেমন নবি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "মুসলিম কাফিরের উত্তারিধারী হয় না এবং কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকারী হয় না।"
.
সনদসুত্র:
ইমাম ইবন খুযাইমা থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম আন-নাইসাবুরি তার "আত-তারিখ" গ্রন্থে, শায়খুল ইসলাম আবু 'উসমান আস-সাবুনি তার "আক্বিদাতুস সালাফ আসহাবিল হাদিস" গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৯), হাফিয আয-যাহাবি তার আল-'উলু গ্রন্থে (বর্ণনা ৫২৮)।
খ. আল্লাহতালা আরশের উপর নন বরং সব জায়গায় বিরাজমান এমন আকিদাধারী ব্যক্তির হুকুম সম্পর্কে
ইমাম আবু হানিফাহ রাহঃ বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলে যে, জানি না আমার প্রতিপালক আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে?
সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়!যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দয়াময় আল্লাহ আরশে আরোহণ করলেন।”
আর তাঁর আরশ সপ্তাকাশের উপরে। আবার সে যদি বলে, ‘তিনি আরশের উপরেই আছেন’, কিন্তু আমি ‘জানি না যে, আল্লাহর আরশ আকাশে নাকি জমিনে?তাহলেও সে কাফের!কারণ সে একথা অস্বীকার করে যে, তিনি আকাশের উপর আছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আরশে থাকার কথা অস্বীকার করে, সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়। যেহেতু আল্লাহ সকল সৃষ্টির ঊর্ধে আছেন এবং উপর দিকে মুখ করে তাঁকে ডাকা হয়(দু’আ করা হয়), নিচের দিকে মুখ করে নয়’।
শারহুল আক্বীদাতিত্ব ত্বাহাবিয়াহ ৩২২ পৃ,আল ফিকহুল আবসাত্ব ৪৬ পৃ, ইতিক্বাদু আইম্মাতিল আরবাআহ ১/৬।
গ. "আল্লাহ কোথায়" এ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা কি অবান্তর?
উত্তর: না এ প্রশ্ন টি ইমানের সাথে সম্পৃক্ত! কেননা
রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক দাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ বলতো আল্লাহ্‌ কোথায়? তখন ঐ দাসী বলেছিলেন, আসমানের উপরে!
তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন বলতো আমি কে?
ঐ মেয়েটা তখন বলল,আপনি আল্লাহর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেন- তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু'মিনা । (সহিহ মুসলিম)
এছাড়াও "আল্লাহ্‌ কোথায়" এ সম্পর্কে কুরআনে অনেক আয়াত আছে।
যেমন-সূরা রাদঃ ০২,
ইউনুসঃ ০৩,
তহাঃ ০৫
ফুরকানঃ ৫৯,
সাজদাহঃ ৫৪ ইত্যাদি ।
সুতরাং "আল্লাহতালা আসমানের উপরে আছেন" এই আক্বিদাহ রাখা হল ঈমান আর এর বিপরীত আক্বিদাহ পোষণ করা হল কুফর! এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা না বললেই নয় তা হল,মহান আল্লাহতালা আসমানের উপর 'কি হালতে আছেন অথবা তিনি কিভাবে উঠেছেন' এমন প্রশ্ন করাটা বিদায়াত!
আহলুস সুন্নাহর ইমাম মালেক (রাহ:) কে একবার প্রশ্ন করা হলো,.
{الرَّحْمَنُ عَلَى العَرْشِ اسْتَوَى.
পরম দয়াময় আরশের উপর উঠেছেন, এর তাফসির সম্পর্কে আপনি কী বলেন?
এই উপরে উঠেছেন তা কীরূপ?
এই প্রশ্ন শুনে তিনি খুবই দুঃখিত হলেন এবং মাথা নত করে মাটির দিক তাকিয়ে রইলেন। তিনি এত আশ্চর্য হলেন যে তাঁর কপাল ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল। অতঃপর তিনি বললেন-
الكيف منه غير معقول و الاستواء منه غير مجهول و الإيمان به واجب و السؤال عنه بدعة.
তার স্বরূপ অবোধগম্য,এবং তার উপরে উঠা অজ্ঞাত নয়(বরং জ্ঞাত),এবং তাতে ঈমান আনা ওয়াজিব,এবং তার ব্যাপারে প্রশ্ন করা(সেটা কেমন/কিভাবে/ধরণ ইত্যাদি জিজ্ঞেস করা) বিদ'আহ"।
[ শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রাহ:), বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন,পৃ:২১; ইফাবা]
(৩) নোমান আলী খানের কাছে বিদআত থেকে মানুষকে সতর্ক করার গুরুত্ব নেইঃ
নোমান আলী খান বলে, "যখন আমার কাছে কোন লোক আসে এবং জিজ্ঞেস করে মিলাদুন্নাবি সম্পর্কে আপনার মতামত কি ?আমি বলি,মিলাদুন্নাবি সম্পর্কে আমার কোন মতামত নেই,কারন এটা কোন সমস্যা না সমস্যা হল আমাদের বাচ্চারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে ,বাচ্চারা ইসলাম ছাড়ছে ,এটি সমস্যা।
জবাবঃ
আমরা আগেই বলেছিলাম এই লোকের ইসলামের বেসিক নলেজই নেই,ইসলামের রুকণ সম্পর্কে জ্ঞান নেই, না আছে ঈমানের ভিত্তি সম্পর্কে জ্ঞান, তবুও সে মুফাসসিরে কুরআন (!)
মিলাদুন্নাবী নাকি কোন সমস্যা না? আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,"প্রত্যেক বিদআতই পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম"।
তাছাড়া "মিলাদুন্নবী যে বিদায়াত" এর পক্ষে আহলুস সুন্নাহর উলামায়ে ক্বিরামের ভুরি ভুরি ফতওয়া রয়েছে, কিন্তু পোস্ট বড় হয়ে যাচ্ছে তাই এখানে উল্লেখ্য করলাম না! আপনারা আলেমদের ফতওয়া,লিখনি,বক্তব্য থেকে বিস্তারিত জেনে নিবেন!
(৪) কুরআনের আয়াত বা শব্দ বিকৃতকরণে নোমান আলী খানঃ
নোমান আলী খান একটি কাহিনী বর্ণনা করেন,আর তা হল -
এক সাহাবীর কাছে এক নওমুসলিম আসলো!
সাহাবী নওমুসলিমকে কুরআন শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন নওমুসলিমের "মুশরিকিন" শব্দ উচ্চারনে সমস্যা হচ্ছিল! তিনি বার বার মুছরিকিন উচ্চারন করছিলেন (ভুল উচ্চারন করছিলেন) ,পরে নাকি সাহাবী বললেন তুমি এর পরিবর্তে এটা "ফুজার" মুখস্ত কর।
নোট:- কত বড় জঘন্য কথা,সাহাবিদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ,কুরআনের যেকোন শব্দ বা আয়াত পরিবর্তন বা সংযোজন করা কুফরি তা হয়ত বক্তা সাহেব জানেন ই না!
লিংক- https://www.youtube.com/watch?v=BlBT9WKA7to&feature=youtu.be
জবাবঃ
মহান আল্লাহ্‌তালার মাত্র একটি আয়াত ই যথেষ্ট! তিনি বলেন,
" যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, নাকি যে কিয়ামাত দিবসে নিরাপদে থাকবে সে? তোমাদের যা ইচ্ছা তা কর; তোমরা যা কর তিনি তার দ্রষ্টা।" সূরা ৪১-ফুসসিলাতঃ৪০
(৫) নোমান আলী খান বিদাতিদের সাথে উঠাবসা করে,তার হিরো তারিক জামিল! এই বিদাতি তারেক জামিল কে সে "উস্তায" উপাধি দিয়েছিল!
প্রমাণ স্বরুপ নোমান আলী খানের ফেইসবুক পেজ ভিজিট করতে পারেন!
জবাব-
নোমান আলী খান যেহেতু সালাফদের বিপরীত মানহাজ অনুসরণ করে সেহেতু বিদাতিদের সাথে উঠাবসা চলবেই।তার হিরো হল পাকিস্তানের প্রখ্যাত বিদআতি তারিক জামিল। এই তারিক জামিলের ভণ্ডামি আপনাদের জানা আছে,কারো জানা না থাকলে জানাবেন বা ইউটিউবে তার কুফুরি বক্তব্যগুলো অহরহ পাবেন। যেমনঃ তারিক জামিল বলেছিল ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জানাজা নাকি আল্লাহ্‌ পরিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ),মাযারে দোয়া করা ইত্যাদি ।
বিদাতিদের প্রশংসা, তাদের সাথে উঠা বসা,তাদের বক্তব্য শোনা যাবে কিনা এ প্রসঙ্গে
মাত্র তিনটি উক্তি পেশ করছি, এতেই স্পষ্ট বুঝে যাবেন আমাদের সালাফগন কতটা কঠোর ছিলেন এবিষয়ে -
ক. ইমাম ইবনু সীরীন (রহিমাহুল্লা-হ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়:— "আহলুল হাওয়াদের (বিদাতিদের) বক্তব্য শোনার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?"
তিনি জবাব দিলেন:— "আমরা ওদের বক্তব্যও শুনিনা এবং ওদেরকে সম্মানও করি না।"
[সিয়ার আ'লাম নুবালা: ৪/৬১১]
খ. প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম হাসান আল-বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:— "বিদাতি ও আহলুল হাওয়াদের সাথে বসবে না, তাদের সাথে তর্ক করবে না, তাদের কথাও শুনবে না।"
[দারেমীর সুনানে বর্ণিত হয়েছে (১/১২১)]
গ. ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি বিদআ’তীদের প্রতি সু-ধারনা রাখে এবং এই দাবি করে যে, তাদের অবস্থা অজ্ঞাত, তাহলে তাকে তাদের (বিদআ’তীদের) অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। সুতরাং, সে যদি বিদআ'তীদের ব্যপারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন না হয়, এবং তাদের প্রতি প্রতিবাদমূলক মনোভাব প্রকাশ না করে, তাহলে তাকেও বিদআ’তীদেরই মতাবলম্বী ও দলভুক্ত বলে জানতে হবে।” মাজমুয়া ফাতাওয়াঃ ২/১৩৩।
{৬} নোমান আলী খান বলেন, আমাদের কাফিরদেরকে ভালবাসতে হবেঃ
জবাব-
ঈমান ও আকিদার মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত হল "আল অলা ওয়াল বারা"
প্রত্যেক মুসলমান ইসলামী আকিদাহ পন্থিদের সাথে মিত্রতা পোষণ ও আকিদার বিরোধীদের সাথে বৈরতা পোষণ করা ইসলামী আকিদা-মতাদর্শের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ্‌ বলেছেন,
"হে মুমিনগণ ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে মিত্ররুপে গ্রহণ করনা,তারা পরস্পর বন্ধু,আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে মিত্রতা করবে নিশ্চয় সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। {সূরা মায়িদাহঃ৫১}
কাফিররা নিকটাত্মীয় হলেও তাদের সাথে মিত্রতা রাখা যাবে না
"হে মুমিনগণ ! তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে মিত্ররুপে গ্রহণ করনা যদি তারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরকে পছন্দ করে।আর তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদের সাথে মিত্রতা রাখবে,বস্তুতঃ অইসব লোকই হচ্ছে জালিম। {সুরাঃ তাওবাঃ২৩}
(৭) জাল হাদিস প্রচারে নোমান আলী খানঃ

এর পরেও কি প্রশ্ন আসে যে,তার থেকে ইলম নেয়া যাবে কিনা ?
এর পরেও কি তার লেকচার শুনবেন ?
এর পরেও কি তাকে প্রমট করবেন ?
নোমান আলী খান একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি ,তার ইসলাম সম্পর্কে বেসিক নলেজই নেই।তার উক্ত ভুল ছাড়াও আরো অনেক ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। তার এই বিভ্রান্ত হওয়ার মুল কারন কুরআন-হাদিসকে সালফে-সালেহিনদের বুঝ অনুযায়ী না বুঝে,নিজের মত করে বুঝা (!) যার ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন!

Saturday, November 9, 2019

জঙ্গে কাশ্মীর : শাসকের অনুমতি নেওয়া কি অনাবশ্যক?



▌জঙ্গে কাশ্মীর : শাসকের অনুমতি নেওয়া কি অনাবশ্যক?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

সম্প্রতি কাশ্মীরে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে সম্মাননীয় উস্তায ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ)’র একটি ভিডিয়ো ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিয়োতে দেখা গেছে, ড. জাকারিয়া স্যারকে কাশ্মীরে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ওখানে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। শাসকের অনুমতি ছাড়া ওখানে যুদ্ধ করতে যাওয়া না-জায়েজ। [দ্র.: https://youtu.be/BcboIzSgeKw (১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট থেকে দেখুন)]

তো স্যারের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভুঁইফোঁড় মুফতি সাহেব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। দেখা গেছে, কেউ কেউ বলছে, মাঝে মাঝেই উনি এরকম বিতর্কিত কথাবার্তা বলেন। কেউ বলছে, তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে নাকি তাওহীদ ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। আবার জনৈক হাম্বালী দাবিদার সেলিব্রেটি ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য আংশিক উদ্ধৃত করে ড. জাকারিয়া স্যারের বক্তব্যকে রদ করার অপচেষ্টা করেছেন। অনুরূপভাবে জনৈক দেওবন্দী মুফতি সাহেব উরাধুরা ইস্তিদলাল করে জনমনে সংশয় সৃষ্টি করেছেন। তাই এই বিষয়ে সৃষ্ট সংশয় দূরীকরণের লক্ষ্যে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধ লিখতে বসলাম।

·
সুপ্রিয় পাঠক, এটি একটি সর্বজনবিদিত বিষয় যে, আমভাবে জিহাদ করার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। শাসকের অনুমতি হলো সশস্ত্র জিহাদের অন্যতম শর্ত। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থি লোক এই সুবিদিত বিষয়টি মানতে চায় না। কিছু চরমপন্থি আবার এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংশয় তৈরি করে। কেউ বলে, বর্তমানে মুসলিমদের কোনো প্রধান নেতা নেই, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নেতা, অতএব এখন আর শাসকের অনুমতি নিতে হবে না। আবার কেউ বলে, জিহাদ দু প্রকার। এক. আক্রমণাত্মক জিহাদ, দুই. প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে না। দ্বিতীয়োক্ত সংশয়টি বর্তমানে ছড়ানো হচ্ছে, বিধায় আমরা এই সংশয়ের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

জিহাদ দুই প্রকার। একটি হলো জিহাদুত্ব ত্বালাব তথা আক্রমণাত্মক জিহাদ, যে জিহাদে মুসলিমরা কাফিরদের ভূখণ্ডে গিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করার মাধ্যমে যুদ্ধ আরম্ভ করে। আরেকটি হলো জিহাদুদ দিফা‘ তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। এই জিহাদে শত্রুরা আগবাড়িয়ে মুসলিমদেরকে সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করে এবং যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে শত্রুদেরকে প্রতিহত করা ওই দেশের অধিবাসীদের ওপর ওয়াজিব। তারা যদি অপারগ হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর জিহাদ ওয়াজিব হয়। তারাও অপারগ হলে তার পরে যে দেশ আছে তাদের ওপর জিহাদ ওয়াজিব হয়। এভাবে পুরো মুসলিম বিশ্বের ওপর ওয়াজিব হয়, কিংবা কোনো প্রতিবন্ধকতা—যেমন: অক্ষমতা—থাকার কারণে জিহাদের আবশ্যকতা বাতিল হয়ে যায়। তো আক্রমণাত্মক জিহাদের মতো প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নিতে হবে। তবে যদি এমন হয় যে, শত্রুরা অতর্কিত হামলা করেছে, এমতাবস্থায় শাসকের অনুমতির অপেক্ষা করলে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হবে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু অবস্থা যদি এরকম না হয়, তাহলে অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।

·
এই নীতিমালার আলোকে কাশ্মীরে জিহাদে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। কারণ হামলা আপনার দেশে—আপনার ওপর হয়নি, হামলা হয়েছে কাশ্মীরে। সেখানে কাশ্মীরীরা পরিস্থিতি অনুযায়ী আত্মরক্ষার তাগিদে যুদ্ধ করবে। তারা অপারগ হলে তাদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশ সাহায্য করবে। বিষয়টি এরকম। এখানে এসব বলে বিশৃঙ্খলা করার কোনো সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশ থেকে শাসকের অনুমতি না নিয়েই বহির্বিশ্বে—কাশ্মীরে হোক বা অন্য কোনো অঞ্চলে হোক—জিহাদ করতে যাওয়া জায়েজ; কারণ ওখানে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হচ্ছে।

আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। প্রথমত, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত হওয়ার বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা‘ উল্লেখ করব। দ্বিতীয়ত, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে ‘উলামায়ে সুন্নাহ’র বক্তব্য উল্লেখ করব। তৃতীয়ত, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত কিনা, এবং এ ব্যাপারে প্রাধান্যযোগ্য মত কোনটি—তা আলোচনা করব। চতুর্থত, শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে উত্থাপিত কিছু বহুল প্রচলিত সংশয়ের জবাব দিব। ওয়াল্লাহুল মুওয়াফফিকু ওয়াল মু‘ঈন।

·
❏ প্রথম ধাপ: আমভাবে জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। এটা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা‘ দ্বারা প্রমাণিত।

এক. কুরআন থেকে:

ক. মহান আল্লাহ বলেছেন, عَفَا اللَّهُ عَنْكَ لِمَ أَذِنْتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَتَعْلَمَ الْكَاذِبِينَ “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। তুমি তাদেরকে কেন অনুমতি দিলে, যতক্ষণ না তোমার কাছে স্পষ্ট হয় তারা সত্য বলেছে এবং তুমি জেনে নাও মিথ্যাবাদীদেরকে।” [সূরাহ তাওবাহ: ৪৩]

খ. মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, فَإِنْ رَجَعَكَ اللَّهُ إِلَىٰ طَائِفَةٍ مِنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ فَقُلْ لَنْ تَخْرُجُوا مَعِيَ أَبَدًا وَلَنْ تُقَاتِلُوا مَعِيَ عَدُوًّا ۖ إِنَّكُمْ رَضِيتُمْ بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوا مَعَ الْخَالِفِينَ “অতএব যদি আল্লাহ তোমাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফিরিয়ে আনেন এবং তারা তোমার কাছে বের হওয়ার অনুমতি চায়, তবে তুমি বল, ‘তোমরা আমার সাথে কখনো বের হবে না এবং আমার সাথে কোনো দুশমনের বিরুদ্ধে কখনো লড়াই করবে না।’ নিশ্চয় তোমরা প্রথমবার বসে থাকাই পছন্দ করেছ, সুতরাং তোমরা বসে থাক, পেছনে থাকা লোকদের সাথে।” [সূরাহ তাওবাহ: ৮৩]

গ. মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ “হে ইমানদারগণ, তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহ’র রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা জমিনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়ো?” [সূরাহ তাওবাহ: ৩৮] অত্র আয়াতে শাসক কর্তৃক জিহাদে বের হওয়ার নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, জিহাদের বিষয়টি শাসকের ওপর অর্পিত, অতএব জিহাদের জন্য তাঁর অনুমতি নিতে হবে।

ঘ. মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا “আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। তারা যদি সেটা রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।” [সূরাহ নিসা: ৮৩] অত্র আয়াতে আল্লাহ সংকটময় পরিস্থিতিতে—জিহাদও তার অন্তর্ভুক্ত—কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে ফিরে যেতে বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিহাদের জন্য কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না, বরং শাসকের অনুমতি নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে জিহাদ করতে হবে।

·
দুই. সুন্নাহ থেকে:

ক. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوْا “যখন তোমাদেরকে (যুদ্ধে) বের হবার নির্দেশ দেওয়া হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৮২৫] ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো, “শাসক যখন তোমাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দিবে, তখন তোমরা যুদ্ধে বের হবে।” [শারহু মুসলিম, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১২]

খ. আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ ﷺ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ “আমি আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জিহাদ হলো হজ’।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৮৭৫] আম্মিজান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) জিহাদের জন্য শাসকের কাছে অনুমতি চাইলেন।

গ. ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ عَرَضَهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَهُوَ ابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْهُ وَعَرَضَهُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَهُ “উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধের জন্য) নিজেকে পেশ করেছিলেন, কিন্তু নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চোদ্দো বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পনেরো বছর।” [সাহীহ বুখারী, হা/৪০৯৭] অত্র হাদীস থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, জিহাদে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে।

ঘ. আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ “শাসক তো ঢালস্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জিত হয়।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭] এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ করার কর্তৃত্ব শাসকের হাতে ন্যস্ত। সুতরাং যুদ্ধে যেতে হলে তাঁর অনুমতি নিতে হবে।

·
তিন. ইজমা‘ থেকে:

ইমাম ক্বারাফী (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করে বলেছেন, فإذا تقرر الفرق بين آثار تصرفه ﷺ بالإمامة والقضاء والفتيا؛ فاعلم أن تصرفه –عليه الصلاة والسلام– ينقسم إلى أربعة أقسام: قسم اتفق العلماء على أنه تصرف بالإمامة وإقامة الحدود وإرسال الجيش ونحوها “যেহেতু নেতৃত্ব, বিচার-ফায়সালা ও ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নাবী ﷺ এর কর্তৃত্বের প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য সাব্যস্ত হয়ে গেল, সেহেতু তুমি জেনে রেখো যে, নাবী ﷺ এর কর্তৃত্ব চার ভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে একটি প্রকারের ব্যাপারে ‘উলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, তিনি নেতৃত্ব দেওয়া, দণ্ডবিধি প্রতিষ্ঠা ও সৈন্যদল পাঠানো প্রভৃতির ব্যাপারে পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখতেন।” [আল-আহকাম ফী তাময়ীযিল ফাতাওয়া ‘আনিল আহকামি ওয়া তাসাররুফাতিল ক্বাদ্বী ওয়াল ইমাম; পৃষ্ঠা: ১০৯; গৃহীত: শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; পৃষ্ঠা: ১৪৯]

এই বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদল পাঠানোর কর্তৃত্ব কেবল শাসকের রয়েছে। তাই যুদ্ধে যেতে হলে কর্তৃত্বের অধিকারী শাসকের নিকট অনুমতি নিতে হবে।

·
❏ দ্বিতীয় ধাপ: জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে ‘উলামায়ে সুন্নাহ’র বক্তব্য:

এক. প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أربع من أمر الإسلام إلى السلطان : الحكم والفيء والجهاد والجمعة “ইসলামের চারটি বিষয়ের কর্তৃত্ব শাসকের ওপর অর্পিত। যথা: রায়, ফাই (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ), জিহাদ ও জুমু‘আহ।” [মাসাইলুল ইমাম আহমাদ (হারব আল-কিরমানীর রিওয়াইয়াত), পৃষ্ঠা: ৩৯২]

দুই. ইমাম ইবনুল মানাসিফ আল-কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) জিহাদ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে দ্বিতীয় শর্ত প্রসঙ্গে বলেছেন, فصل : في طاعة الإمام و الغزو مع كل أمير براً أو فاجراً “পরিচ্ছেদ: শাসকের আনুগত্য এবং পুণ্যবান-পাপাাচারী সকল শাসকের অধীনে যুদ্ধ করা প্রসঙ্গে।” এরপর তিনি তাঁর কথার সপক্ষে দলিল পেশ করেছেন। [আল-ইনজাদ ফী আবওয়াবিল জিহাদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৩]

·
তিন. ইমাম আবুল বারাকাত ‘আব্দুস সালাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز الغزو إلا بإذن الإمام، إلا أن يفاجئهم عدو يخشى علبُه بالإذن فيسقط “শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা না-জায়েজ। তবে যদি শত্রুরা মুসলিমদের ওপর অতর্কিত হামলা করে, আর অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে তখন অনুমতি নেওয়ার শর্ত বাতিল হয়ে যাবে।” [আল-মুহার্রার, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৪১]

চার. ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ويرون –يعني أهل السنة– إقامة الحج والجهاد والجمع مع الأمراء أبراراً كانوا أو فجاراً “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত মনে করে, শাসক পুণ্যবান হোক কিংবা পাপাচারী—হজ প্রতিষ্ঠা করা, জিহাদ করা এবং জুমু‘আহ প্রতিষ্ঠা করার মতো বিষয়গুলো তাঁর (শাসকের) অধীনেই সম্পন্ন করতে হবে।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৫]

অনুরূপ কথা বলেছেন ইমাম ত্বাহাউয়ী, ইমাম ইবনুল মাদীনী, ইমাম আবূ যুর‘আহ আর-রাযী, ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল-সহ আরও অনেকে। রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা‘ঈন। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র স্পষ্টভাবে বলেছেন, الجهاد لا يقوم به إلا ولاة الأمور “শাসক ব্যতীত অন্য কেউ জিহাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।” [মিনহাজুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১১]

·
পাঁচ. ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا تخرج السرايا إلا بإذن الإمام “শাসকের অনুমতি ব্যতীত সৈন্যদল যুদ্ধ করার জন্য বের হবে না।” [আল-জামি‘ লি আহকামিল কুরআন, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৭৭]

ছয়. ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أمر الجهاد موكول للإمام واجتهاده ويلزم الرعية طاعته فيما يراه من ذلك “জিহাদের বিষয়টি শাসকের ওপর এবং শাসকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আর এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা শাসিতের জন্য অপরিহার্য।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ১৩]

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, لا يخرجون إلا بإذن الأمير؛ لأن أمر الحرب موكول إليه، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم، ومكامن العدو وكيدهم، فينبغي أن يرجع إلى رأيه، لأنه أحوط للمسلمين؛ إلا أن يتعذر استئذانه لمفاجأة عدوهم لهم، فلا يجب استئذانه، لأن المصلحة تتعين في قتالهم والخروج إليه “তারা শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করতে বের হবে না। কেননা যুদ্ধের বিষয় শাসকের ওপর অর্পিত। তিনিই শত্রুদের আধিক্য ও স্বল্পতা সম্পর্কে এবং শত্রুদের ঘাঁটি ও কৌশল সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা এটাই মুসলিমদের জন্য অধিক সতর্কতামূলক পন্থা। তবে শত্রুরা তাদেরকে অতর্কিতভাবে হামলা করার কারণে শাসকের অনুমতি নিতে অপারগ হলে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের দিকে ধাবিত হওয়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২১৩]

·
সাত. ইমাম বূতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز الغزو إلا بإذن الأمير؛ لأنه أعرف بالحرب وأمره موكول إليه “শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা তিনিই যুদ্ধ সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই উক্ত বিষয় তার ওপরই অর্পিত।” [কাশশাফুল ক্বিনা‘, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২]

আট. নাজদী মাশায়েখ—‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুল লাত্বীফ বিন ‘আব্দুর রাহমান, হাসান বিন হুসাইন, সা‘দ বিন হামাদ ‘আতীক্ব, মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল লাত্বীফ তৎকালীন শাসক ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ইমাম ‘আব্দুর রাহমান আলে ফায়সালের নিকট পত্র প্রেরণ করেছিলেন, যেখানে তাঁরা বলেছেন,
ورأينا أمرا يوجب الخلل على أهل الإسلام، ودخول التفرق في دولتهم، وهو الاستبداد من دون إمامهم، بزعمهم أنه بنية الجهاد، ولم يعلموا أن حقيقة الجهاد ومصالحة العدو، وبذل الذمة للعامة، وإقامة الحدود، أنها مختصة بالإمام، ومتعلقة به، ولا لأحد من الرعية دخل في ذلك إلا بولايته ؛ وقد سئل صلى الله عليه وسلم عن الجهاد، فأخبر بشروطه بقوله صلى الله عليه وسلم: «من أنفق الكريمة، وأطاع الإمام، وياسر الشريك، فهو المجاهد في سبيل الله». والذي يعقد له راية، ويمضي في أمر من دون إذن الإمام ونيابته، فلا هو من أهل الجهاد في سبيل الله.
“আমরা একটি বিষয় লক্ষ করেছি, যা মুসলিমদের মধ্যে প্রমাদ সংঘটিত হওয়াকে এবং তাদের দেশে বিভেদ সৃষ্টি হওয়াকে অপরিহার্য করে দিবে। আর তা হলো তাদের শাসককে বাদ দিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুতি নেওয়া, এ ধারণাবশত যে, তারা যা করছে তা জিহাদের নিয়তে করছে। অথচ তারা জানে না যে, জিহাদ করা, শত্রুপক্ষের সাথে সন্ধি করা, চুক্তিবদ্ধ লোকদের আশ্রয় দেওয়া, দণ্ডবিধি কায়েম করা প্রভৃতি শাসকের সাথে খাস এবং এগুলো তাঁর সাথেই সম্পৃক্ত। তাই কোনো শাসিতের জন্য শাসকপ্রদত্ত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে এসবের মধ্যে অনুপ্রবেশ করা বৈধ নয়। নাবী ﷺ কে জিহাদ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জিহাদের কিছু শর্ত উল্লেখ করে বলেন, “যে ব্যক্তি মূল্যবান বস্তু দান করে, শাসকের আনুগত্য করে, আর সাথীদের সাথে কোমল ব্যবহার করে, সে হলো আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদকারী প্রকৃত মুজাহিদ।” সুতরাং যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য পতাকা স্থাপন করে, এবং শাসক ও তাঁর প্রতিনিধির অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করে, সে আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদকারী প্রকৃত মুজাহিদ নয়।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৯৫]

·
নয়. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র নেতৃত্বাধীন ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ি কমিটি (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় জিহাদ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, بدؤه والدخول فيه من شأن ولي أمر المسلمين “জিহাদ আরম্ভ করা এবং জিহাদের মধ্যে প্রবেশ করা মুসলিমদের শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ১২]

দশ. ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) আলজেরিয়ার এক যুবকের সাথে জিহাদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, هل دولتكم تسمح لكم للجهاد في سبيل الله، قال: لا تسمح، قال الشيخ: إذًا كيف تتصورون أنكم تستطيعون أن تجاهدوا؟! كيف تَصِلون إلى منطقة الجهاد؟ “তোমাদের রাষ্ট্র কি তোমাদেরকে আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অনুমতি দিয়েছে? যুবক বলল, অনুমতি দেয়নি। তখন শাইখ বললেন, তাহলে তোমরা কীভাবে ভাবলে যে, তোমরা জিহাদ করতে সক্ষম?! আর তোমরা কীভাবেই বা জিহাদের ময়দানে পৌঁছবে?!” এই ফোনালাপে ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) শাসকের অনুমতি ও কর্তৃত্ব ব্যতীত স্বপ্রণোদিত হয়ে জিহাদ করা থেকে বারণ করেছেন। [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=sbQtJzc4D_4]

·
এগারো. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز غزو الجيش إلا بإذن الإمام مهما كان الأمر، لأن المخاطب بالغزو و الجهاد هم ولاة الأمر وليس أفراد الناس ... فالغزو بلا إذنه افتيات وتعد على حدوده، ولأنه لو جاز للناس أن تغزو بدون إذن الإمام لأصبحت المسألة فوضى كل من شاء ركب فرسه وغزا؛ ولأنه لو مكن الناس من ذلك لحصلت مفاسد عظيمة “যে অবস্থাই হোক না কেন, শাসকের অনুমতি ব্যতীত সৈন্যদের যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা যুদ্ধ ও জিহাদ করার জন্য শরিয়তপ্রণেতা কর্তৃক শাসকদের সম্বোধন করা হয়েছে, জনসাধারণকে নয়। ... তাই শাসকের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ করা সীমালঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার শামিল। কেননা শাসকের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ করা যদি জনসাধারণের জন্য জায়েজ হতো, তাহলে বিষয়টি গোলযোগে পরিণত হতো। ব্যাপারটি এমন হতো—যার ইচ্ছা হলো, সে তার ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ চলে গেল! যদি মানুষ এরকম করে, তাহলে অবশ্যই বড়ো ধরনের বিপর্যয় সংঘটিত হবে।” [আশ-শারহুল মুমতি‘, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২২]

বারো. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, الذي يأمر بالقتال وينظم القتال إمام المسلمين، من صلاحيات الإمام إقامة الجهاد و تنظيم الجيوش وتنظيم السرايا يقودها بنفسه أو يؤمر عليها من يقودها فالجهاد من صلاحيات الإمام ولا يجوز للمسلمين أن يقاتلوا بدون إذن الإمام “যিনি যুদ্ধ করার নির্দেশ দিবেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবেন, তিনি হলেন মুসলিমদের শাসক। জিহাদ প্রতিষ্ঠা করা, সৈন্যদল প্রস্তুত করা প্রভৃতি শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়। হয় তিনি নিজে এগুলো পরিচালনা করবেন, কিংবা এসবের পরিচালককে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দিবেন। বস্তুত জিহাদ শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়। তাই শাসকের অনুমতি ব্যতীত মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ করা জায়েজ নয়।” [আল-জিহাদ ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু, পৃষ্ঠা: ৩২]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, সশস্ত্র জিহাদ করার জন্য মুসলিম শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। অনুমতি ছাড়া গোপনে যুদ্ধ করতে যাওয়া না-জায়েজ।

·
❏ তৃতীয় ধাপ: প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া কি জরুরি?

আমি বলছি, এ ব্যাপারে ‘উলামাদের মধ্যে দুই ধরনের মত পরিলক্ষিত হয়। যথা:

এক. সংক্ষিপ্ত মত। এই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম ইবনু বায, ইমাম আলবানী, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয রাজিহী-সহ আরও অনেকে। ইনারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে নিঃশর্তভাবে বলেছেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। আসলে এই বক্তব্য ব্যাখ্যার দাবি রাখে, যা দ্বিতীয়োক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

দুই. ব্যাখ্যাপূর্ণ বিস্তারিত মত। এই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইবনু কুদামাহ, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল-সহ আরও অনেকে। তাঁদের মতে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। তবে যদি শত্রুরা অতর্কিত হামলা করে, এমতাবস্থায় শাসকের অনুমতির অপেক্ষা করতে গেলে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হবে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করতে পারবে। সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে এই মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিবেচিত হয়।

·
প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি শর্ত নয়—বলে যে সংশয় সৃষ্টি করা হয়, তার চমৎকার প্রামাণ্য জবাব দিয়েছেন মক্কাস্থ উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ, ড. মুহাম্মাদ বিন ‘উমার সালিম বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ)। আমি শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র সম্পূর্ণ বক্তব্যের সরল বঙ্গানুবাদ পেশ করছি।

‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘উমার সালিম বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

❝সংশয়: প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়। যেহেতু আক্রমাণত্মক জিহাদে যেসব বিষয়কে শর্ত করা হয়, তা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে শর্ত করা হয় না। শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারটি স্রেফ আক্রমণাত্মক জিহাদের জন্য শর্ত।

সংশয়ের জবাব: মৌলনীতি হলো—জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত। তবে শত্রুরা যদি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে, আর শাসকের অনুমতি নিতে গিয়ে শত্রুকে প্রতিরোধ করতে দেরি করলে মুসলিমদের ওপর শত্রুর উন্মত্ততার আশঙ্কা প্রকটিত হয়, তাহলে সেই অবস্থার কথা ভিন্ন। কিন্তু এই অবস্থা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিতে হবে।

ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, سمعت أبي يقول: إذا أذن الإمام، القوم يأتيهم النفير فلا بأس أن يخرجوا. قلت لأبي: فإن خرجوا بغير إذن الإمام؟ قال: لا، إلا أن يأذن الإمام، إلا أن يكون يفجأهم أمر من العدو ولا يمكنهم أن يستأذنوا الإمام فأرجو أن يكون ذلك دفعًا من المسلمين “আমি আমার পিতাজিকে (অর্থাৎ ইমাম আহমাদকে) বলতে শুনেছি, “যদি শাসক অনুমতি দেয়, আর জনগণের নিকট শত্রুদের সৈন্যদল আগমন করে, তাহলে জিহাদের জন্য বের হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” আমি পিতাজিকে বললাম, “তারা যদি শাসকের অনুমতি না নিয়ে জিহাদের জন্য বের হয় তাহলে?” তিনি বললেন, “না, যতক্ষণ না শাসক অনুমতি দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বের হবে না। তবে শত্রুরা যদি তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে, আর শাসকের অনুমতি নেওয়াও তাদের জন্য সম্ভবপর না হয়, তাহলে আমি মনে করি, তখন অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা মুসলিমদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ হিসেবে গণ্য হবে।” (মাসাইলু ‘আব্দিল্লাহি লি আবীহী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৫৮)

ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে দুটো অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন এবং দ্বিতীয় অবস্থার ক্ষেত্রে (তথা অতর্কিত হামলার ক্ষেত্রে) শাসকের অনুমতি নেওয়াকে শর্ত করেননি।

ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,
لأن أمر الحرب موكول إليه، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم، ومكامن العدو وكيدهم، فينبغي أن يرجع إلى رأيه، لأنه أحوط للمسلمين، إلا أن يتعذر استئذانه لمفاجأة عدوهم لهم، فلا يجب استئذانه، لأن المصلحة تتعين في قتالهم، والخروج إليهم، لتعين الفساد في تركهم، لذلك لما أغار الكفار على لقاح النبي ﷺ فصادفهم سلمة بن الأكوع خارجًا من المدينة، تبعهم فقاتلهم من غير إذن، فمدحه النبي ﷺ، قال: َخَيْرَ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ‏ بْنُ الْأَكْوَعِ. وأعطاه سهم فارس وراجل. اه‍
“কেননা যুদ্ধের বিষয় শাসকের ওপর অর্পিত। তিনিই শত্রুদের আধিক্য ও স্বল্পতা সম্পর্কে এবং শত্রুদের ঘাঁটি ও কৌশল সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা এটাই মুসলিমদের জন্য অধিক সতর্কতামূলক পন্থা। তবে শত্রুরা তাদেরকে অতর্কিতভাবে হামলা করার কারণে শাসকের অনুমতি নিতে অপারগ হলে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের দিকে ধাবিত হওয়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। যেহেতু তাদেরকে ছেড়ে দিলে বিপর্যয় অপরিহার্য হয়ে পড়বে। এজন্য কাফিররা যখন নাবী ﷺ এর উটের পালের ওপর হামলা করল, আর কাকতালীয়ভাবে সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ মদিনার বাইরে তাদেরকে পেয়ে গেলেন, তখন তিনি তাদেরকে ধাওয়া করলেন এবং (নাবীজীর) অনুমতি ছাড়াই তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন। পরে নাবী ﷺ তাঁর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘আমাদের শ্রেষ্ঠ পদাতিক হলো সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘।’ এরপর তিনি ﷺ তাঁকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ দিয়েছিলেন।” (আল-মুগনী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৩৬৭)

উক্ত কথার দলিল: নাবী ﷺ এর যুগে মুশরিকরা যখন মক্কায় ছিল, তখন তাদের সাথে জিহাদ ও যুদ্ধ করা এবং তাদেরকে মক্কা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ছিল প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। এতৎসত্ত্বেও রাসূল ﷺ তাদের সাথে সন্ধি করেছেন। যেমন: হুদাইবিয়ার সন্ধি। তিনি শুরুতেই তাদের সাথে যুদ্ধ করেননি এবং মক্কায় তাদেরকে প্রতিহত করেননি। রক্ষণাত্মক জিহাদের যদি শর্ত নাই থাকত এবং তা যদি (নিঃশর্তভাবে) ফরজে আইন তথা প্রত্যেকের ওপর ফরজ হতো, তাহলে সাহাবীগণের যুদ্ধ করতে দেরি করা এবং কাফিরদের সাথে সন্ধি করা জায়েজ হতো না।

এরই ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, শত্রুদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক জিহাদ করার সামর্থ্য না থাকলে শত্রুদের সাথে সন্ধি করা জায়েজ আছে, যদি শাসক সেই সিন্ধান্ত নেন তবেই। সেক্ষেত্রে যে অবস্থা তৈরি হয়, তা আক্রমণাত্মক জিহাদের মতোই। যেমন রাসূল ﷺ মুশরিকদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধি করেছেন। তিনি তখন মক্কার ভূখণ্ড এবং সেখানে অবস্থিত মুসলিমদের সম্পদকে বিপর্যয় থেকে প্রতিহত করেননি।

শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার সামর্থ্য না থাকলে, যুদ্ধ না করা জায়েজ আছে—এই কথাটির আরও দলিল হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক ‘ঈসা ﷺ এর প্রতি নির্দেশ (যে নির্দেশ তিনি কেয়ামতের প্রাক্কালে দিবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় আবির্ভূত হওয়ার পর)। হাদীসে এসেছে, তিনি বলবেন, إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لاَ يَدَانِ لأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ “আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটেয়েছি, যাদের সঙ্গে কারও যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। অতএব তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাও।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৯৩৭; ফিতনা অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৫৪; পরিচ্ছেদ- ২০)

এটা সুবিদিত যে, ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবে যা ঘটবে, তা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের মতোই। এ সত্ত্বেও মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের সাথে লড়াই না করার নির্দেশ দিবেন। এই হাদীসের মধ্যে এ কথার বড়ো দলিল রয়েছে যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের দ্বিতীয় অবস্থায় শত্রুর সাথে লড়াই করার জন্য শক্তি ও সামর্থ্য থাকা শর্ত। অন্যথায় উক্ত জিহাদ ওয়াজিব নয়।

ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘র যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, সেটাও এ ব্যাপারে একটি দলিল। সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,
قَدِمْنَا الْحُدَيْبِيَةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ .... ثُمَّ قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِظَهْرِهِ مَعَ رَبَاحٍ غُلاَمِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَأَنَا مَعَهُ وَخَرَجْتُ مَعَهُ بِفَرَسِ طَلْحَةَ أُنَدِّيهِ مَعَ الظَّهْرِ فَلَمَّا أَصْبَحْنَا إِذَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْفَزَارِيُّ قَدْ أَغَارَ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَاسْتَاقَهُ أَجْمَعَ وَقَتَلَ رَاعِيَهُ قَالَ فَقُلْتُ يَا رَبَاحُ خُذْ هَذَا الْفَرَسَ فَأَبْلِغْهُ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ وَأَخْبِرْ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَنَّ الْمُشْرِكِينَ قَدْ أَغَارُوا عَلَى سَرْحِهِ - قَالَ - ثُمَّ قُمْتُ عَلَى أَكَمَةٍ فَاسْتَقْبَلْتُ الْمَدِينَةَ فَنَادَيْتُ ثَلاَثًا يَا صَبَاحَاهْ ‏.‏ ثُمَّ خَرَجْتُ فِي آثَارِ الْقَوْمِ أَرْمِيهِمْ بِالنَّبْلِ وَأَرْتَجِزُ أَقُولُ أَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ فَأَلْحَقُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَصُكُّ سَهْمًا فِي رَحْلِهِ حَتَّى خَلَصَ نَصْلُ السَّهْمِ إِلَى كَتِفِهِ - قَالَ - قُلْتُ خُذْهَا وَأَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمُ يَوْمُ الرُّضَّعِ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا زِلْتُ أَرْمِيهِمْ وَأَعْقِرُ بِهِمْ.
“আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে হুদাইবিয়ায় পৌঁছলাম। ... তারপর আমরা মদিনায় আসলাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তার গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটসমূহ পাঠালেন। আর আমিও ত্বালহাহ’র ঘোড়ায় চড়ে তার সাথে সাথে উটগুলো হাকিয়ে চারণভূমির দিকে নিয়ে গেলাম। যখন আমাদের ভোর হলো, তখন ‘আব্দুর রাহমান ফাজারী হামলা করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সমস্ত উট ছিনিয়ে নিয়ে গেল এবং পশুপালের রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, “এই রাবাহ, ধরো, এই ঘোড়া নিয়ে তুমি ত্বালহাহ বিন ‘উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলবে, মুশরিকরা তাঁর উটগুলো লুট করে নিয়ে গেছে।” তিনি (সালামাহ) বলেন, এরপর আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম এবং মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার চিৎকার দিলাম, ‘ইয়া সাবাহা!’ তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম, আর তাদের ওপর তির নিক্ষেপ করতে লাগলাম। তখন আমি মুখে এই পঙ্‌ক্তি উচ্চারণ করছিলাম, “আমি হলাম আকওয়া‘র পুত্র, আজকের দিন মাতৃদুগ্ধ (কে কত খেয়েছে তা) স্মরণ করার দিন।” সেসময় আমি তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তার ওপর এমনভাবে তির নিক্ষেপ করেছি যে, তিরের অগ্রভাগ তার কাঁধ ছেদ করে বেরিয়েছে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১৮০৭; জিহাদ অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৩৩; পরিচ্ছেদ- ৪৫)

হাদীস থেকে দলিল গ্রহণের স্থান হলো: সালামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র এই কথা—“এই রাবাহ, ধরো, এই ঘোড়া নিয়ে তুমি ত্বালহাহ বিন ‘উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলবে, মুশরিকরা তাঁর উটগুলো লুট করে নিয়ে গেছে।” এরপর আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম এবং মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার চিৎকার দিলাম, ‘ইয়া সাবাহা!’ তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম।”

দলিলগ্রহণের দিক: সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘র কাছে এটি সুনির্ধারিত বিষয় ছিল যে, জিহাদের জন্য অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। তাই তিনি তাঁর যুদ্ধযাত্রার খবর পৌঁছানোর জন্য একজনকে রাসূল ﷺ এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তাঁর যখন প্রবল ধারণা হলো যে, তিনি যদি অপেক্ষা করেন, তাহলে শত্রুরা উটের পাল নিয়ে চলে যাবে, আর তিনি যদি তাদেরকে ধাওয়া করেন, তাহলে উটগুলোকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবেন, তখন তিনি তাদেরকে ধাওয়া শুরু করলেন, অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলেন না। পরে রাসূল ﷺ তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং তাঁকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ প্রদান করেছেন।

পূর্বোক্ত হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে, قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : كَانَ خَيْرَ فُرْسَانِنَا الْيَوْمَ أَبُو قَتَادَةَ وَخَيْرَ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ‏.‏ قَالَ ثُمَّ أَعْطَانِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ سَهْمَيْنِ سَهْمُ الْفَارِسِ وَسَهْمُ الرَّاجِلِ فَجَمَعَهُمَا لِي جَمِيعًا “রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আজকের দিনে আমাদের শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী হচ্ছে আবূ ক্বাতাদাহ, আর আমাদের শ্রেষ্ঠ পদাতিক হচ্ছে সালামাহ।” সালামাহ বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি একত্রে দুটো অংশ দিলেন।” (প্রাগুক্ত)❞ [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৪]

·
‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব।

এখানে একটি বিষয়ের দিকে ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারছি না। কিছু চরমপন্থি আছে দেখবেন, যারা বলে, যুদ্ধের জন্য শক্তি-সামর্থ্যের দরকার নেই, অমুক অমুক যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা কত কম ছিল, তারপরও তাঁরা যুদ্ধ করেছেন! অথচ আপনারা দেখলেন, ‘ঈসা ﷺ এর প্রতি আল্লাহ’র কী নির্দেশ। আল্লাহ কী চাইলে পারেন না, তাঁর রাসূলকে সাহায্য করতে?! এই নির্দেশের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ’র প্রজ্ঞা। এই নির্দেশ প্রমাণ করে যে, সামর্থ্য না থাকলে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে এবং সন্ধি করবে। যাইহোক আমরা মূল আলোচনায় ফিরে যাই।

·
প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ’র বক্তব্য উপস্থাপন করি। সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সামাহাতুল ওয়ালিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—

السؤال: هل يحتاج جهاد الدفع إلى إذن الإمام؟
الجواب: نعم، نحن مع ولي أمر المسلمين، ومع ولي أمرنا، دائمًا وأبدًا، وجهاد الدفع لا بد من إذن الإمام، لا بد من الإذن في الجهاد عمومًا، سواءً كان جهاد الطلب أو جهاد الدفع، ما يصلح الفوضى أبدًا، ولا بد أن نكون مع الإمام، ولا يجوز أننا نقاتل إلا بإذنه، لا نذهب هنا وهناك إلى القتال في ساحة—خارج البلاد إلا بإذن ولي أمرنا، لأننا رعية تحت راعٍ، فلا بد أن نتقيد بأوامره لما في ذلك من المصالح العظيمة، وهو ينظر في مصالح المسلمين ويتولى هذا الأمر، وهو نائب عن المسلمين، ينظر فيما هو الأصلح، فإذا أمر أطعناه، وإذا نهى أطعناه، لما في ذلك من المصلحة العظيمة.

প্রশ্ন: “প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য কি শাসকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে?”

উত্তর: “হ্যাঁ। আমরা মুসলিমদের শাসকের সঙ্গে আছি। আমরা সর্বদাই আমাদের শাসকের সঙ্গে আছি। প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিতে হবো। জিহাদের জন্য ব্যাপকভাবে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। চাই তা আক্রমণাত্মক জিহাদ হোক, কিংবা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হোক—উভয়ের ক্ষেত্রে একই কথা। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা করা চলবে না। আমাদেরকে (এ ব্যাপারে) শাসকের সাথে থাকা আবশ্যক। তাঁর অনুমতি ব্যতীত আমাদের জন্য যুদ্ধ করা না-জায়েজ। আমরা আমাদের শাসকের অনুমতি না নিয়ে দেশের বাইরে—বিশ্বের এখানে ওখানে—যুদ্ধ করার জন্য যাব না। কেননা আমরা একজন নেতার অধীনস্থ প্রজা। তাই আমাদের জন্য তাঁর নির্দেশনা মান্য করা আবশ্যক। কারণ এতে বিরাট কল্যাণ রয়েছে। শাসক মুসলিমদের কল্যাণের দিকে নজর দিবেন এবং তিনি নিজে এই বিষয়ের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি হলেন মুসলিমদের প্রতিনিধি। তিনি লক্ষ করবেন, কী করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তিনি যখন নির্দেশ দিবেন, তখন আমরা তাঁকে মান্য করব। তিনি যখন নিষেধ করবেন, তখন আমরা তাঁকে মান্য করব। কেননা এতে বিরাট কল্যাণ রয়েছে।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=jJq0c10BAvQ.]

·
ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) অন্যত্র বলেছেন, “যে ব্যক্তি তোমার বাড়িতে, অথবা তোমার এলাকায় তোমার ওপর হামলা করে, তোমার সম্পদ কেড়ে নিতে চায়, কিংবা তোমার প্রাণ হরন করতে চায়, অথবা তোমার সম্ভ্রম নষ্ট করতে চায়, তুমি সে ব্যক্তিকে প্রতিহত করতে পারবে, যদি তাতে বড়ো কোনো বিপর্যয় সংঘটিত না হয়। এক্ষেত্রে তুমি তাকে প্রতিহত করবে, এ জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। মহান আল্লাহ তোমাকে এই অনুমতি দিয়েছেন যে, তুমি তোমার জান, মাল ও সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য শত্রুকে প্রতিহত করতে পারবে।

পক্ষান্তরে সার্বজনিক প্রতিরক্ষা তথা দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই শাসক লাগবে। তিনি বিষয়টি সুবিন্যস্ত করবেন, এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করবেন এবং সৈন্যদল প্রস্তুত করবেন। শাসক থাকা আবশ্যক। এটি গোলযোগের বিষয় নয়। ... অন্যথায় তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হবে এবং শেষে দেখা যাবে, তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে দিবে। কিন্তু যখন শাসকের নেতৃত্বে যুদ্ধ হবে, তখন এরকম মতোবিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না।” [দ্র.: https://youtu.be/terop7kP-Jo.]

·
সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ড. ‘আব্দুল ‘আযীয আর-রাঈস (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

تقدمت الأدلة على وجوب أخذ إذن ولي الأمر في الجهاد، وبعض الناس أثار على هذا شبهات، منهم من قال: إن هذا في جهاد الطلب بدون جهاد الدفع، فيقال: إن الأدلة لم تفرق بين جهاد الدفع وجهاد الطلب. وقد نص الإمام مالك والإمام أحمد أن هذا حتى في جهاد الدفع. وذكر هذا الخراقي، وذكر ابن قدامة في المغني. قالوا : إلا أن لا يتيسر هذا الأمر، بأن يأتي العدو مباغتا المسلمين، وينقطع سبيل الإتصال بين المسلمين وبين ولي أمرهم، ففي هذا الحال لا يحتاج إلى إذن ولي الأمر وفي أمثاله من الحالات. والإ الأصل: فإنه بجب أخذ إذن ولي الأمر.

“জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক হওয়ার দলিলভিত্তিক আলোচনা গত হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু লোক এ ব্যাপারে সংশয় ছড়াচ্ছে। তাদের কেউ কেউ বলছে, কেবল আক্রমণাত্মক জিহাদের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া জরুরি, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে নয়। অথচ ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এ মর্মে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। ইমাম খিরাক্বী এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম ইবনু কুদামাহ এটা ‘মুগনী’ গ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তবে যদি অনুমতি নেওয়া সহজসাধ্য না হয়, যেমন আকস্মিকভাবে শত্রুরা মুসলিমদের ওপর চড়াও হলো, এমতাবস্থায় মুসলিমদের সাথে তাদের শাসকের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন, তাহলে এরকম অবস্থায় শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। অন্যথায় মৌলনীতি হলো—শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।” [দ্র.: https://youtu.be/Dn3_EQ6AGDY (০ মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত)]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি।

·
❏ চতুর্থ ধাপ: শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে উত্থাপিত কিছু বহুল প্রচলিত সংশয়ের জবাব

এক. হুদাইবিয়ার সন্ধি চলাকালীন সময় মক্কার নির্যাতিত সাহাবী আবূ বাসির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ও তাঁর সঙ্গীবর্গ মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। অথচ তাঁরা রাসূল ﷺ এর অধীনে ছিলেন না। সম্পূর্ণ ঘটনা সাহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে (হা/২৭৩১)। এই ঘটনা থেকে অনেকে দলিল গ্রহণ করেন যে, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়।

·
এই সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, أبو بصير رضي الله عنه ليس في قبضة الإمام ولا تحت إمرته، بل هو في قبضة الكفار وفي ولايتهم، فهو يريد أن يتخلص من قبضتهم و ولايتهم، فليس هو تحت ولاية الرسول ﷺ لأن الرسول سلّمه لهم بموجد العهد والصلح الذي جرى بينه وبين الكفار، فليس هو في بلاد المسلمين ولا تحت قبضة ولي الأمر “আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কোনো শাসকের বা কোনো রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন ছিলেন না। বরং তিনি কাফিরদের কবজায় ছিলেন এবং কাফিরদের অধীনে ছিলেন। তিনি তাদের কবজা ও অধীন থেকে নিষ্কৃতি চেয়েছিলেন। তিনি রাসূল ﷺ এর অধীনে ছিলেন না। কারণ কাফিরদের সাথে সন্ধি ও চুক্তিবদ্ধ থাকার কারণে রাসূল ﷺ তাঁকে কাফিরদের কাছে সোপর্দ করেছিলেন। তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) না ছিলেন কোনো মুসলিম দেশে, আর না কোনো শাসকের অধীনে।” [শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; পৃষ্ঠা: ৯৪]

·
‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) উক্ত সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ولو كان عملًا مرغبًا فيه مطلقًا، لرأينا من الصحابة الذين كانوا مع الرسول ﷺ في المدينة من جاء إلى أبي بصير وقاتل معه، ولكنه لما لم يكن من أبواب الجهاد، لم يحصل هذا، نعم القصة تدل على أن من كان حاله كحال أبي بصير ومن معه يجوز له فعل ذلك، فلا يتخذ ذلك قاعدة في الجهاد “এটা যদি নিঃশর্তভাবে উৎসাহব্যঞ্জক কাজ হতো, তাহলে আমরা অবশ্যই দেখতাম যে, রাসূল ﷺ এর সাথে মদিনায় অবস্থানকারী সাহাবীরাও আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে চলে যেতেন এবং তাঁর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতেন। যেহেতু এটা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই সেরকমটি ঘটেনি। হ্যাঁ, এই ঘটনা প্রমাণ করছে, যার অবস্থা আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ও তাঁর সাথীদের মতো হবে, তার জন্য ওই কাজ করা জায়েজ আছে। তাই কেউ যেন এটাকে জিহাদের মূলনীতি না বানায়।” [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭০]

·
দুই. কতিপয় লোক নাজদী শাইখ ইমাম ‘আব্দুর রহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র একটি উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন যে, জিহাদের জন্য ইমামের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। উক্তিটি হলো, “কোন কিতাব বা কোন দলিল দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, শাসক না থাকলে জিহাদ ওয়াজিব হয় না? এটি দ্বীনের মধ্যে মিথ্যা সংযোজন এবং মুমিনদের অনুসৃত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার শামিল। এ বক্তব্যকে বাতিলকারী দলিলগুলো এতটাই প্রসিদ্ধ যে, তা উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না। সেসব দলিলের মধ্যে অন্যতম হলো—জিহাদের আদেশের ব্যাপকতা, জিহাদ করার প্রতি উৎসাহপ্রদান এবং তা বর্জনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে বর্ণিত শার‘ঈ দলিল।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৯৭]

এই সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, كلام هذا العالم عن حال جهاد الدفع الذي يفجأ فيه العدو بلدًا من بلاد المسلمين، ففي هذا الحال دفع العدو فيه من باب دفع الصائل، فلا يشترط فيه شرط مما يشترط في جهاد الطلب والدعوة. أو يريد هذا العالم بكلامه الرد على من يشترط لوجوب الجهاد إذن الإمام العام، الذي تنضوي تحته جميع بلاد الإسلام، وعلى هذا فإن هذا فلا جهاد اليوم، لأنه لا يوجد إمام عام لجميع المسلمين في الدنيا، فالعالم يرد على من يقول ذلك، لا أنه ينفي طلب إذن ولي الأمر في الأصل “এই ‘আলিম প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের বিশেষ অবস্থার ব্যাপারে বলেছেন, যে অবস্থায় শত্রুরা কোনো মুসলিম দেশে অতর্কিতভাবে হামলা করে। এই অবস্থায় শত্রুদের প্রতিহত করা অতর্কিত হামলাকারীকে প্রতিহত করার পর্যায়ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদের শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে না। অথবা এই ‘আলিম তাঁর উক্ত কথার মাধমে তাদেরকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন, যারা জিহাদ ওয়াজিব হওয়ার জন্য সার্বজনিক শাসক (ইমামে ‘আম)—সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্র যাঁর অধীনে থাকে—থাকা শর্ত বলে দাবি করে। এই শর্ত মেনে নিলে বর্তমানে কোনো জিহাদই থাকবে না। কেননা বর্তমান পৃথিবীতে মুসলিমদের কোনো সার্বজনিক শাসক নেই। আসলে এই ‘আলিম উক্ত কথার কথককে খণ্ডন করেছেন। তিনি শাসকের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টিকে নাকচ করেননি।” [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭১-৭২]

·
তিন. ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) নাকি বলেছেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়?! ইমাম ‘উসাইমীন বিরচিত শারহুল মুমতি‘ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে, তাঁর মতে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। আসলে উক্ত কথা পুরোপুরি সঠিক নয়। তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য পড়লে বোঝা যায়, তিনি আমাদের নিবন্ধে উল্লিখিত দ্বিতীয় মতটিই ব্যক্ত করেছেন।

ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র সম্পূর্ণ বক্তব্য নিম্নরূপ— لا يجوز لأحد أن يغزو دون إذن الإمام إلا على سبيل الدفاع، وإذا فاجأهم عدو يخافون كلبه فحينئذٍ لهم أن يدافعوا عن أنفسهم لتعين القتال إذًا “কারও জন্য শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা জায়েজ নেই। তবে আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করলে সে কথা ভিন্ন। যদি শত্রুরা মুসলিমদের ওপর অতর্কিত হামলা করে, আর মুসলিমরা তাদের মাধ্যমে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, তখন তাদের জন্য আত্মরক্ষা করা জায়েজ হবে। কেননা তখন যুদ্ধ করা প্রত্যেকের ওপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২২]

·
প্রিয় পাঠক, ইমাম ‘উসাইমীনের উক্তিটি ভালোভাবে পড়লে বুঝতে পারবেন যে, শাইখ মুহাম্মাদ বাযমূল দলিল দিয়ে যেই তাফসীলী (বিস্তারিত) আলোচনা করেছেন, ইমাম ‘উসাইমীন সেই কথাই এখানে বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—ইমাম ‘উসাইমীনের এই বক্তব্য থেকে কিছু ভাই বুঝেছেন যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ মাত্রই তাতে শাসকের অনুমতি লাগবে না। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ইমাম ‘উসাইমীন এখানে দু প্রকার জিহাদের কোনো আলোচনাই করেননি। বরং তিনি বিশেষ অবস্থাটির কথা বর্ণনা করেই ক্ষান্ত থেকেছেন। যেই বিশেষ অবস্থাটি হলো—শত্রুরা যখন অতর্কিতভাবে হামলা করে, আর সেসময় অনুমতি নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নাই, বরং অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই জিহাদ করা জায়েজ হবে। অন্যথায় প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হবে।

·
চার. অনেকে বিভিন্ন ইমামদের থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ যেহেতু ফরজে আইন, সেহেতু এর জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। এ ধরনের সংক্ষিপ্ত কথাও ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, অনুমতি নেওয়ার দলিলগুলো প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান সাব্যস্ত করেনি। দ্বিতীয়ত, ইমামদের উক্ত বক্তব্য সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হয়, যা আমরা ইতঃপূর্বে আলোচনা করেছি। এই বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন নেই মর্মে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যথায় প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্যও অনুমতি নিতে হবে।

অতএব জিহাদ হবে সুশৃঙ্খলভাবে, এতে কোনো বিশৃঙ্খলা বা গোলযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই বাংলাদেশ থেকে যেসব উগ্রপন্থি গোপনে বহির্বিশ্বে যুদ্ধ করতে যায় এবং অন্যদের যেতে উৎসাহ দেয়, আপনারা তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। এরা যা করছে তা অন্যায় ও গোলযোগ, এদের কর্মকাণ্ডকে প্রকৃত জিহাদ বলা যায় না। তাই নিজেরাও এদের থেকে সাবধান থাকবেন, এবং পরিচিতদেরকেও সাবধান করবেন। আর সর্বোপরি, আমরা সবাই মজলুম ভাইদের জন্য দু‘আ করব। কেবল এই কাজটা করার মতো সামর্থ্যই আমাদের আছে। আল্লাহ যেন মজলুম ভাইদের প্রতি রহম করেন, তাঁদেরকে সম্মানিত করেন, আর আল্লাহদ্রোহী কাফিরদের লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত করেন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘ঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম। আমীন, আমীন, সুম্মা আমীন।

·
❏ প্রমাণপঞ্জি:

(১) ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; রেডিয়োসুন্নাহ ডট কম থেকে সংগৃহীত সফট কপি।

(২) শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ‘আল্লামাহ সালিহ আস-সুহাইমী (হাফিযাহুল্লাহ), আদ-দারুল আসারিয়্যাহ, আম্মান কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি.।

(৩) “ইশতিরাতু ইযনিল ইমামি ফিল জিহাদ”– শীর্ষক নিবন্ধ; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

·
রচনাকাল—
বিকেল ৫ টা।
বুধবার।
২৬শে জিলহজ, ১৪৪০ হিজরি।
১৩ই ভাদ্র, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
২৮শে আগস্ট, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

মধ্যপন্থার আবরণে শৈথিল্যবাদ



▌মধ্যপন্থার আবরণে শৈথিল্যবাদ

·
ইসলাম একটি মধ্যপন্থি শরিয়ত। ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে আদিষ্ট হয়েছি। মুসলিমরাও সবাই মধ্যপন্থা অনুসরণ করে দ্বীনে ইসলাম পালনের আদেশ স্বীকার করে নিয়েছে। এরপরেও দেখা যায়, মুসলিমদের মধ্যে সবাই মধ্যপন্থার অনুসরণ করে ইসলাম পালন করছে না। আজকে আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করব, তা হলো—মানহাজ সংক্রান্ত বিষয়ে মুসলিমদের ভুলের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থার অনুসরণ।

মানহাজের বিষয়ে কোনো মুসলিম—হোক তিনি একজন ‘আলিম, বা তালিবুল ‘ইলম, বা জনসাধারণের কেউ—যদি ভুলে পতিত হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী, তা বুঝতে হবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ’র বিধান থেকে এবং সেই বুঝ হতে হবে সালাফদের বুঝের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, এসব ব্যাপারে মধ্যপন্থা—যেই পন্থা অনুসরণ করতে আমরা আদিষ্ট হয়েছি—অনুসরণ করার দাবিদার ভাইয়েরা এই বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের বুঝ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছেন না। এতে করে তারা মধ্যপন্থার অনুসারী না হয়ে চরমপন্থি হয়ে যাচ্ছেন, বা শৈথিল্যবাদী হয়ে যাচ্ছেন।

·
তবে মধ্যপন্থি দাবিদার চরমপন্থির চেয়ে মধ্যপন্থি দাবিদার নরমপন্থির সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে আমাদের দেশে এদের অনেক দেখা যায়। মানহাজ সংক্রান্ত ভুলের কারণে কোনো মুসলিমের ব্যাপারে আমরা কী অবস্থান নিব, সেই ব্যাপারে তারা শৈথিল্যবাদী। আর এ ব্যাপারে তাদের শৈথিল্যবাদী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—তারা মানহাজের ব্যাপারে রচিত সালাফদের কিতাব থেকে এই বিষয়ে ‘ইলম নেয় না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বিষয়ে তাদের মধ্যপন্থা নির্ধারণের পদ্ধতি হলো নিজেদের অনুভূতি শক্তিকে কাজে লাগানো।

অর্থাৎ কোনটা মধ্যপন্থা, কোনটা চরমপন্থা, আর কোনটা শৈথিল্যবাদ—এটা তারা শিখতে চায় অনুভব করার মাধ্যমে। যেটাকে তারা মধ্যপন্থা ‘ফিল’ করে, সেটাকে তারা মধ্যপন্থা বলে। যেটাকে তারা চরমপন্থা ‘ফিল’ করে, সেটাকে তারা চরমপন্থা বলে। অথচ এটা মোটেই মধ্যপন্থা, বা চরমপন্থা, বা নরমপন্থা নির্ণয়ের পদ্ধতি নয়। যেহেতু এটি দ্বীনের অন্তর্গত বিষয়, সেহেতু এই ব্যাপারে অবশ্যই আমাদেরককে সালাফদের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে ফিরে যেতে হবে।

·
উল্লেখ্য যে, মধ্যপন্থা আর চরমপন্থার ব্যাপারে এসব ভাইদেরকে মন্তব্য করতে দেখা গেলেও শৈথিল্যবাদ বিষয়ে তাদের মন্তব্য করতে দেখা যায় না। তাদেরকে আপনি দেখবেন চরমপন্থিদের সমালোচনা করতে, অথবা মধ্যপন্থিদেরকে ‘চরমপন্থি’ ট্যাগ দিয়ে সমালোচনা করতে। কিন্তু তাদেরকে শৈথিল্যবাদীদের সমালোচনা করতে দেখবেন না—বললেই চলে। এর কারণ কী, জানেন? কারণ তারা নিজেরাই শৈথিল্যবাদী।

তো ভাইয়েরা, এই শৈথিল্যবাদীরা যে অনুভবশক্তি দিয়ে মধ্যপন্থা নির্ধারণের ভুলটা করে থাকে, তাতো বললাম। তাদের তথাকথিত মধ্যপন্থা নির্ধারণের ব্যাপারে আরও কিছু পদ্ধতি বর্ণনা না করলেই নয়। মানহাজের ব্যাপারে ভুলে পতিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কেমন হবে, এ ব্যাপারে এই শৈথিল্যবাদীরা নিজেদের পক্ষে দলিলগ্রহণের ক্ষেত্রে সালাফদের রচিত মানহাজের কিতাব বাদ দিয়ে ইতিহাস ও বিচ্ছিন্ন ঘটনার ওপর নির্ভর করে থাকে।

·
উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ। জনৈক তালিবুল ‘ইলমের একটি সংক্ষিপ্ত অডিয়ো ক্লিপে বর্ণিত হয়েছে, জনৈক শৈথিল্যবাদী তার বইয়ে লিখেছে অনেকটা এরকম কথা—“বিদ‘আতী দা‘ঈ ইবনু আবী দুআদের সাথে ইমাম আহমাদ কী আচরণ করেছিলেন তা বলা হয়, কিন্তু সাহাবীদেরকে গালিগালাজকারী রাফেজীদের সাথে তিনি কী আচরণ করেছেন তা বলা হয় না। অথচ তিনি তাদের সাথে বসেছেন এবং উত্তম আচরণ করেছেন।”

তো এই ঘটনা বর্ণনা করে ওই লেখক রেফারেন্স দিয়েছেন ‘তারীখে বাগদাদী’ নামক কিতাবের। অথচ ‘তারীখে বাগদাদী’ একটি ইতিহাসের কিতাব, মানহাজ শিক্ষার কিতাব নয়। অধিকন্তু ‘তারীখে বাগদাদী’ গ্রন্থে উক্ত ঘটনা সম্পূর্ণরূপে আসেনি, যেমনটা এসেছে ইমাম খাল্লাল বিরচিত ‘আস-সুন্নাহ’ নামক মানহাজের কিতাবে। সেখানে এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ওই রাফেজীরা যখন ইমাম আহমাদের নসিহত গ্রহণ করল না, তখন তিনি তাদের বর্জন করেছিলেন!

·
তাহলে দেখুন, ভাইয়েরা, ‘আক্বীদাহ-মানহাজের কিতাব বাদ দিয়ে ইতিহাসের কিতাব থেকে মানহাজ শিখতে গেলে কী অবস্থা হতে পারে! আরেকটা উদাহরণ দিই, যেটা সম্ভবত আপনাদের অনেকেই দেখেছেন। নিজেদের প্রিয় বক্তা বা দা‘ঈবর্গ কর্তৃক বিদ‘আতীদের সাথে না-জায়েজ কো-অপারেশনকে ডিফেন্ড করার দলিল হিসেবে প্রায় দুই বছর আগে কিছু ভাই রাবেতার ফিক্বহ কাউন্সিলের সম্মেলন থেকে তোলা গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ ও বিদ‘আতীদের গুরু ক্বারদ্বাউয়ীর ছবি প্রচার করছিল, যেখানে দুজন পাশাপাশি বসে ছিলেন।

মানে সালাফি দাবিদাররা খালাফদের যুগের, বরং বর্তমান যুগের একজন জীবিত ‘আলিম ক্বারদ্বাউয়ীর সাথে বসেছেন, সেই ছবি দিয়ে নিজেদের প্রিয় বক্তা বা দা‘ঈবর্গ কর্তৃক বিদ‘আতীদের সাথে কৃত না-জায়েজ কো-অপারেশনকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছিল! অথচ ইউসুফ আল-ক্বারদ্বাউয়ীকে আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে রাবেতার ফিক্বহ কাউন্সিল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এবং রাবেতার ইংলিশ টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এই ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তো যেসব ভাইয়েরা মুফতির সাথে ক্বারদ্বাউয়ীর ছবি দিয়ে বিদ‘আতীদের সাথে না-জায়েজ কো-অপারেশনকে জায়েজ করতে চায়, তাদের জন্য কি রাবেতার ফিক্বহ কাউন্সিল থেকে ক্বারদ্বাউয়ীর বহিষ্কৃত হওয়াটাও বিদ‘আতীদের সাথে না বসার দলিল হওয়ার কথা না?

·
আর ব্যাপারটা যদি এমনই হয়, তাহলে চিন্তা করুন, ভাইয়েরা। ছবি দেখে এক মানহাজ শিখবেন, টুইট দেখে ওই মানহাজ চেঞ্জ করে ফেলবেন! কারণ দলিল হলো ছবি, টুইট, নিউজপেপার ইত্যাদিতে পাওয়া বিচ্ছিন্ন ও প্রেক্ষাপটবিহীন চিত্র বা ঘটনা! এরাই নাকি সালাফদের মানহাজের অনুসারী ও মধ্যপন্থি! যাইহোক, এই পর্যায়ে এসে তথাকথিত মধ্যপন্থিদের পন্থা নিরধারণের ব্যাপারে পূর্বে যা বলা হয়েছে, সেই কথায় আবার ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। বলছিলাম যে, এই তথাকথিত মধ্যপন্থিরা মধ্যপন্থা বা চরমপন্থা নির্ণয় করে অনুভূতিশক্তির মাধ্যমে, ‘ইলমের মাধ্যমে না।

এর একটা ছোটো প্রমাণ দেওয়ার জন্যই আবার এই কথায় আসা। মধ্যপন্থার গুরুত্ব এবং চরমপন্থা ও চরমপন্থিদের নিন্দা প্রসঙ্গে আমাদের আলোচ্য তথাকথিত মধ্যপন্থিদের কথা বলতে দেখলেও, কখনো দেখবেন না অন্য কোনো বিষয়ে ‘ইলমী আলোচনা করতে। অর্থাৎ তাদের ‘ইলম যেন শুধু মধ্যপন্থা আর চরমপন্থা বিষয়ে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?! ইসলামের অন্য কোনো বিষয়ে আপনার গভীর ‘ইলম নেই, কিন্তু মধ্যপন্থা, আর চরমপন্থা বিষয়ে আপনি খুব ভালো জেনে ফেলেছেন, এটা তো বিশ্বাস্য না! তারমানে নিশ্চয়ই আপনি মধ্যপন্থা, আর চরমপন্থার ব্যাপারেও গভীর ইলম রাখেন না; বরং নিজের অনুভূতির দেওয়া রায়, জাহালত আর আবেগের ভিত্তিতেই কথা বলেন আপনি।

·
এখানে আরেকটি পয়েন্ট ভাইদের সামনে আনতে চাই, এই শৈথিল্যবাদী তথাকথিত মধ্যপন্থিদের ব্যাপারে। সেটা হলো—শৈথিল্যবাদীদের সবাই কিন্তু একই পর্যায়ের শৈথিল্যবাদী না। এদের কাউকে পাবেন “ভালোটা নিব, খারাপটা বর্জন করব”– নীতি অবলম্বন করে যার তার থেকে ‘ইলম নিচ্ছে, প্রোমোট করছে, বিদ‘আতীদের সাথে ধরাবাধাহীনভাবে ওঠাবসা করছে, সালাফী দাবিদার স্পষ্ট বিদ‘আতীকে সালাফী মনে করছে ইত্যাদি। এরা খুবই প্রকাশ্য এবং অতিমাত্রার শৈথিল্যবাদী।

আরেক প্রকার শৈথিল্যবাদী আছে, যারা হলো হালকা মাত্রার ছুপা শৈথিল্যবাদী, যাদের শৈথিল্যবাদ অনেক সময় বোঝা যায় না। এরা প্রথম গ্রুপের মতো বিদ‘আতীদের সাথে ধরাবাধাহীন ওঠাবসা করবে না, বিদ‘আতীদের লেকচার শুনবে না, তাদের প্রোমোটও করবে না, সালাফী দাবিদার স্পষ্ট বিদ‘আতীদের তেমনভাবে সালাফী বা ভালো বলে ডিফেন্ডও করবে না। কিন্তু এসব কাজ যারা করে—তথা জগাখিচুড়ী মানহাজের লোক, যে হয়তো টেনেটুনে সালাফী, অথবা বিদ‘আতী—তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, সতর্ক করা ও অবস্থান নেওয়াকে এই দ্বিতীয় গ্রুপের শৈথিল্যবাদীরা অবৈধ ও চরমপন্থা মনে করে।

·
এরা ইয়াসির ক্বাদ্বীর বিরুদ্ধে বলবে, কিন্তু যারা ইয়াসির ক্বাদ্বীকে নিজেদের স্টেজে উঠিয়ে লেকচার দেয়ার সুযোগ করে দেয়, তাদের সাপোর্ট করবে। কেউ যদি তাদের সমালোচনা করে, তথা যারা ইয়াসিরকে নিজেদের স্টেজে কথা বলতে দিয়েছে তাদের সমালোচনা করে, তাদেরকে উক্ত শৈথিল্যবাদীরা চরমপন্থি বলবে। এই নরমপন্থি সালাফী দাবিদারদের বলতে দেখা যায়, “আমরা সংশোধন করব, কিন্তু কারও সমালোচনা করব না, আমরা সত্যটা জানিয়ে দিব, কিন্তু কারও নিন্দা করব না।” যদিও এসব কথা বিদ‘আতী ইখওয়ানীদের অবলম্বিত মানহাজ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

এদেরকে বলতে দেখা যায়, “আমরা সব ঘরানার দা‘ঈকে সম্মান করি, যদিও সেসব দা‘ঈদের বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড আছে বা তারা বিদ‘আতী হিসেবেই পরিচিত।” অথচ সালাফগণ বিদ‘আতীদের সম্মান করতে কঠিনভাবে বারণ করেছেন, যা মানহাজের কিতাবে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। একইভাবে এসব শৈথিল্যবাদীরা বলে, “উলামারা সমালোচনা করে, তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু তালিবুল ‘ইলম বা লেইম্যানরা কেন সমালোচনা করবে?!” শোনেন কথা! যেন যে কোনো উপায়ে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করার রাস্তা রুদ্ধ করাই এদের অভিপ্রায়। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।

·
অথচ এটি একটি সিদ্ধ বিষয় যে, ‘উলামারা সমালোচনা করে থাকলে, সে সমালোচনা ছোটোখাটো তালিব বা লেইম্যানরা প্রচার করতে পারবে এবং ‘উলামাদের থেকে উদ্ধৃতি না দিয়েও বলতে পারবে যে, অমুক লোক বিদ‘আতী। কারণ তার জানা আছে যে, ‘উলামারা বা সিনিয়র তালিবরা তাকে বিদ‘আতী বলেছেন। কিন্তু ছুপা শৈথিল্যবাদীদের মতে, যারা এমনটি করবে, তারা হলো চরমপন্থি।

সত্য বলতে কী, যে কোনো উপায়ে বিদ‘আতীদের বা বিদ‘আতীর সাপোর্টারদের সমালোচনা করার রাস্তা বন্ধ করা, অথবা নিজেদেরকে ‘মধ্যপন্থি’ হিসেবে জাহির করা, কিংবা সমালোচকদের চরমপন্থি বলাই হলো এসব সালাফী দাবিদার ছুপা শৈথিল্যবাদীদের কুটিল উদ্দেশ্য। তাই এই ধরনের শৈথিল্যবাদীদের থেকেও আমাদের সতর্ক থাকা আবশ্যক। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...