Thursday, December 13, 2018

ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ কবচ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লেখক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
প্রচারেঃজাহিদ হাসান নিলয়  

ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ-কবচের বিধান

আমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম-জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর-বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন। এ সম্পর্কে বাজারে কিছু বই পুস্তক পাওয়া যায়, সে সব বইয়ে নির্ধারিত বিষয়ে গ্রহণ যোগ্য কোন দলিল নেই, আছে কিছু মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনী, অসংখ্য তদবিরের বর্ণনা ও তার বানোয়াট ফাজায়েল। এ সব বই পড়ে কেউ কেউ   বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন তদবির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয় ও তা গ্রহণ করে। তারা এ ধরণের চিকিৎসার মূল্যায়ন ও তার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। আমি অত্র নিবন্ধের মাধ্যমে এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি।
এক. সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা অহেনার অংশ। {অহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।} তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দূর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না। ( সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং ৩৫৩১; হাদিসটি সহিহ্)
দুই. উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না।’ [মুসনাদআহমদ, হাদীস নং ১৬৯৫১; আহাইখ আলবানী হাদীসটিকে দাইফ বলেছেন]
তিন. উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন : ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।’ [মুসনাদে আহমেদ; হাদীস নং ১৬৯৬৯, শাইখ আলবানীর মতে এই হাদীসটি সহীহ]
চার. একদা হুজায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু এক ব্যক্তির হাতে জ্বরের একটি তাগা দেখতে পেয়ে তা কেটে ফেলেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন : তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়।‘ {ইউসুফ : ১০৬} [তাফসিরে ইবনে কাসির]। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবি হুজায়ফার মতে তাগা ব্যবহার করা শিরক।
পাঁচ. তাবেয়ি আব্দুল্লাহ বিন উকাইম সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কিছু ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছেই সোপর্দ করা হবে।’ [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪০৭৯; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২০৭২]
ছয়. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাঁড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক।[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৫৩০]
এ সব দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তাবিজ ব্যবহার করা হারাম ও শিরক।

তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করা ছোট শিরক না বড় শিরক?

কেউ যদি তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, সামুক-ঝিনুক, গিড়া, হাঁড়, তাগা-তামা-লোহা বা অনুরূপ কোন ধাতব বস্তু গলায় বা শরীরের কোথায়ও ধারণ করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, ঐ গুলো বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে তা বড় শিরক। আর যদি এ ধরনের ধারণা না হয়, তবে তা ছোট শিরক।
শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বলেছেন, বালা-মুসিবত দূর করার উদ্দেশ্যে গিড়া, তাগা পরিধান করা ছোট শিরক। অর্থাৎ যদি তা মাধ্যম বা উসিলা মনে করে ব্যবহার করা হয়। শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ বলেছেন, শয়তানের নাম, হাড়, পূঁতি, পেরেক অথবা তিলিস্মা অর্থাৎ অর্থবিহীন বিদঘুটে  শব্দ বা অক্ষর প্রভৃতি বস্তু দিয়ে তাবিজ বানানো ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ফাতহুল মাজিদ গ্রন্থের টীকায় তিনি আরো বলেছেন: তাবিজ ব্যবহার করা জাহেলি যুগের আমল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাবিজ-কবচ অনেক ধর্মের প্রতিকি চিহ্ন ছিল। যেমন হিন্দু পুরোহিতদের মাদুলী ধারণ করা, বিশেষ করে কালী শিবের পূজায়। উয়ারী সম্প্রদায়ের আকীদার অন্যতম প্রতিক ছিল বিভিন্ন ধরণের তাবিজ।
শায়খ হাফেজ হেকমি বলেন: ‌’কুরআন ও হাদিস ব্যতীত, ইহুদিদের তিলিসমাতি, মূর্তি পূজারী, নক্ষত্র পূজারী, ফেরেশতা পূজারী এবং জিনের খিদমত গ্রহণকারী বাতিল পন্থীদের তাবিজ ব্যবহার; অনুরূপভাবে পূঁতি, ধনুকের ছিলা, তাগা এবং লোহার ধাতব চুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। কারণ, এগুলো সমস্যা সমাধানের বৈধ উপায় কিংবা বিজ্ঞান সম্মত ঔষধ নয়। এ হল সেসব তাবিজ কবচের হুকুম যাতে কুরাআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া দরুদ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় না তার

কুরআন-হাদিসের তাবিজ :

হ্যাঁ, যে সব তাবিজ-কবচে কুরআন হাদিস ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এক শ্রেণীর আলেম কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহের তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ মনে করেন। যেমন, সাঈদ বিন মুসাইয়িব, আতা আবু জাফর আল-বাকের, ইমাম মালেক। এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমদ, ইবনে আব্দুল বার, বাইহাকি, কুরতুবি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়িম এবং ইবনে হাজারও রয়েছেন। তাদের দলিল, আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের সু-চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত।‘ [সূরা আল-ইসরা:৮২]  এক কল্যাণময় কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা আস-সাদ:২৯] সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমরের ব্যক্তিগত আমল সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি নিজ ছোট বাচ্চা, যারা দোয়া মুখস্থ করতে অক্ষম, তাদেরকে অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য গায়ে দোয়ার তাবিজ ঝুলিয়ে দিতেন। দোয়াটি এই:‘আল্লাহর নামে তাঁর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাঁর গজব ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্টতা থেকে এবং শয়তানদের কুমন্ত্রণা ও তাদের উপস্থিতি থেকে।’ [ মুসনাদে আহমেদ, হাদীস নংঃ৬৬৯৬; সুনানে তিরিমিজী, হাদীস নং ৩৫২৮; হাদিসটি হাসান]
পক্ষান্তরে অধিকাংশ সাহাবি ও তাদের অনুসারীদের মতে কুরআন ও হাদিসের তাবিজ ব্যবহার করাও নাজায়েজ। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, উকবা বিন আমের, ইবনে উকাইম, ইব্রাহিম নখয়ি, একটি বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ, ইবনুল আরাবি, শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসান, শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল ওয়াহহাব, শায়খ আব্দুর রহমান বিন সাদি, হাফেজ আল-হেকমি এবং মুহাম্মদ হামিদ আলফাকি। আর সমসাময়ীক মনীষীদের মধ্যে আছেন শায়খ আলবানি ও শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ। তারা বলেন,
প্রথমত: উল্লেখিত আয়াত দ্বারা তাবিজের বৈধতা প্রমাণিত হয় না। উপরন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের দ্বারা চিকিৎসা করার স্বরূপ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। এ ছাড়া কুরআনের আয়াত তাবিজ আকারে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন প্রমাণ নেই, এমনকি সাহাবাদের থেকেও।
তা ছাড়া ইমাম আবু দাউদ বলেছেন, সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমেরের বর্ণিত হাদিসের সূত্র (সনদ) হাদিস বিশারদদের নিকট বিশুদ্ধ নয়। আর শুদ্ধ হলেও এটা তার একার আমল, যা অসংখ্য সাহাবির বিপরীত হওয়ার ফলে এবং এর স্বপক্ষে কোন দলিল না থাকার কারণে অন্য সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
আরেকটি কারণ, যেসব দলিলের মাধ্যমে তাবিজ নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব দলিলে পৃথক করে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি। যদি বৈধ হত, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তা বলে দিতেন। যেমন তিনি শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুকের ব্যাপারটি অনুমতি দিয়েছেন। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ওটা শিরকের আওতাধীন না হলে তাতে কোন বাধা নেই।’[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২০০]
পক্ষান্তরে তিনি তাবিজ সম্পর্কে এরূপ কিছু বলেননি।
দ্বিতীয়ত: সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের ছাত্র ইব্রাহিম নখয়ি বলেন, তারা অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সঙ্গী-সাথী ও শিষ্যগণ কুরআন বা কুরআনের বাইরের সব ধরণের তাবিজ অপছন্দ করতেন। যেমন আলকামা, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, হারেস বিন সোয়ায়েদ, ওবায়দা সালমানি, মাসরুক, রাবি বিন খায়সাম এবং সোয়ায়েদ বিন গাফলাহ প্রমুখ তাবেয়িগণ। [ফতহুল মজিদ]
তৃতীয়ত: অবৈধ পন্থার পথ রুদ্ধ করার জন্য শরিয়ত অনেক বৈধ কাজও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে হিসেবে নিষিদ্ধ তাবিজ থেকে উম্মতকে হিফাজত করার লক্ষ্যে বৈধ তাবিজও নিষিদ্ধ করা উচিত। কারণ এ পথ খোলা রাখলে বাতিল তাবিজপন্থীরা সাধারণ মানুষের মন আল্লাহর ওপর ভরসা থেকে বিমুখ করে, তাদের লিখিত তাবিজের প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, ঐ সব শয়তানদের প্ররোচনার কারণে কতক সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আর তারা মানুষের আসক্তি দেখে তাদের সহায়-সম্পদ লুটে নেয়ার ফন্দি আটে। যেমন, তাদেরকে বলে, তোমাদের পরিবারে, ধন সম্পত্তিতে বা তোমার ওপর এরূপ বিপদ আসবে। অথবা বলে, তোমার পিছনে জিন লেগে আছে ইত্যাদি। এভাবে এমন কতগুলো শয়তানি কথা-বার্তা তুলে ধরে যা শুনে সে মনে করে, এ লোক ঠিকই বলছে। সে যথেষ্ট দয়াবান বলেই আমার উপকার করতে চায়। এভাবেই সরলমনা মূর্খ লোকেরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে ও অতঃপর ভয়ে অস্থির হয়ে যায়, আর তার কাছে সমাধান তলব করে। তাই তাবিজ কুরআন-হাদিসের হলেও ব্যবহার করা, রুগির বালিশের নীচে রাখা বা দেয়ালে ঝোলানো নাজায়েজ বলাই অধিকতর শ্রেয়।
একটি সংশয়: অনেকে বলে থাকেন, তাবিজ, কবচ ইত্যাদি আমরা দোয়া-দরুদ ও প্রাকৃতিক ঔষধের ন্যায় ব্যবহার করি। যদি তার অনুমোদন থাকে তবে তাবিজ কবচ নিষিদ্ধ কেন?
এর উত্তর হচ্ছে: অসুখ-বিসুখ ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার পদ্ধতি দুইটি :
এক. যা সরাসরি কুরআনের আয়াত বা রাসূলের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। একে শরিয়তি উপায় বা চিকিৎসা (রুকিয়া) বলা যেতে পারে। যেমন ঝাঁড় ফুক ইত্যাদি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন এবং যার বর্ণনা হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। এ গুলো আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দার মঙ্গল সাধন বা অমঙ্গল দূর করে।
দুই. প্রাকৃতিক চিকিৎসা অর্থাৎ বস্তু ও তার প্রভাবের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, যা খুবই স্পষ্ট এমনকি মানুষ সেটা বাস্তবে অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারে। যেমন: বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা ঔষধ। ইসলামি শরিয়ত এগুলো ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। কারণ, এগুলো ব্যবহার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, যিনি এ সব জিনিসে নির্দিষ্ট গুণাবলি দান করেছেন এবং তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময় এসব বস্তুর গুন ও ক্রিয়া বাতিল করে দিতে পারেন। যেমন তিনি বাতিল করেছিলেন ইব্রাহিমের আলাইহিস সালামের জন্য প্রজ্বলিত অগ্নির দাহন ক্রিয়া। কিন্তু তাবিজ ইত্যাদির মধ্যে আদৌ কোন ফলদায়ক প্রভাব নেই এবং তা কোন অমঙ্গল দূর করতে পারে না। এতে জড় বস্তুর কোন প্রভাবও নেই। তাছাড়া, মহান আল্লাহ এগুলোকে কোন শরয়ি মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেননি। মানুষও স্বাভাবিকভাবে এগুলোর কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখে না, অনুভবও করতে পারে না। এ জন্য অনেকে বলেছেন, এগুলোর ওপর ভরসা করা, মুশরিকদের ন্যায় মৃত ব্যক্তি ও মূর্তির ওপর ভরসা করার সমতুল্য; যারা শুনে না, দেখে না, কোন উপকারও করতে পারে না, আর না পারে কোন ক্ষতি করতে। কিন্তু তারা মনে করে, এগুলো আল্লাহর কাছ থেকে তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, অথবা অমঙ্গল প্রতিহত করবে। আল্লাহ বলেন, ” বল রহমানের শাস্তি থেকে কে তোমাদের রক্ষা করবে দিনে ও রাতে? বরং তারা তাদের পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।”[সূরা আল-আম্বিয়াঃ৪২]
উদাত্ত আহব্বান: এখনো যে সব আলেম-ওলামা তাবিজ-কবচ নিয়ে ব্যস্ত তাদের দরবারে আমাদের সবিনয় অনুরোধ, এর থেকে বিরত থাকুন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ, সাধারণ মানুষ খুব সহজেই টি্ভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছে যে, তাবিজ-কবচ বৈধ নয় বা ইসলামে এর কোন স্বীকৃতিও নেই। এমতাবস্থায় যারা তাবিজ-কবচ করেন বা বৈধ বলেন তাদের ব্যাপারে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হন। আল-হামদু লিল্লাহ, বর্তমান সময়ে আরবি শিক্ষিত ও সাধারণ শিক্ষিত অনেক ব্যক্তি, বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম তাবিজ-কবজের অসারতা বুঝতে পেরে এর বিরোদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নিজে রিবত থাকছেন এবং অপরকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। যেহেতু এটা আকীদার বিষয়, তাই এখানে শিথিলতার কোন সুযোগ নেই। অতএব, এ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আল্লাহ সহায়।
সমাপ্ত

সুন্নাহ সম্পর্কে সাহাবীদের দৃষ্টিভঙ্গী – ২

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
                                 লেখকঃ মেরিনার।    মূল লেখা:জামাল আদ-দ্বীন জারাবোজো
প্রচারেঃজাহিদ হাসান নিলয়
[সুন্নাহকে মুসলিম জীবনে বাতিল ও অগুরুত্বপূর্ণ প্রমান করা হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী সকল অবিশ্বাসী এবং ইসলামী বিশ্বের আধুনিকতাবাদী তথা প্রগতিশীলদের একটা অন্যতম লক্ষ্য! কারণটা খুব সাধারণ: সুন্নাহ্ না থাকলে, ইসলামেরই আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না এবং কুরআন ও ইসলামকে নিজের ইচ্ছামতো ব্যাখা করার সুযোগ তৈরী হবে।  মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবীরা (রা.) সুন্নাহকে কি চোখে দেখতেন তার ২য় পর্ব দেখবো আজ আমরা ]
(………পূর্ব প্রকাশিতের পর)
৫)আব্দুল্লাহ্‌ ইবন ওমর (রা.), রাসূল (সা.) থেকে বর্ণণা করেন যে, তিনি বলেন, “তোমাদের মেযেদের রাতে মসজিদে যেতে দিও ৷” আব্দুল্লাহর (রা.) একজন ছেলে বললেন যে, তিনি তা করবেন না ৷ এটা আব্দুল্লাহ (রা.) তাঁর ছেলেকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করলেন, তার বুকে ধাক্কা দিলেন এবং বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূলের (সা.) একটা হাদীস তোমাকে বললাম, আর তুমি বলছো ‘না’ ৷” [জামে তিরমিজী ৭০৯/১; বুখারী ৩০৫/১] এই ঘটনায় আব্দুল্লাহ্‌ ইবন ওমর (রা.), যিনি সাহাবীদের মাঝে সবচেয়ে জ্ঞানীদের একজন ছিলেন, তিনি তাঁর ছেলের বুকে এইজন্য আঘাত করেছিলেন যে, তাঁর ছেলে নবীর (সা.) একটা আদেশ না মানার প্রবণতা দেখিয়েছিলেন ৷ আব্দুল্লাহর (রা.) বক্তব্য থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তিনি এমন একটা কিছু বলছিলেন: “আমি তোমাকে নবীর (সা.) একটা বক্তব্য শোনাচ্ছি, আর তুমি ভাবছো যে, তারপরও এ ব্যাপারে তোমার নিজস্ব কোন বক্তব্য রয়েছে ৷ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তোমার আর নিজস্ব কোন বক্তব্য থাকতে পারে না ৷” [আল মাজমু’ আল কাবির ৩৬২/১২]
৬)কাতাদাহ বর্ণনা করেন, “আমরা ইমরান ইবন হুসায়েন ও বুশায়ের ইবন কাব এ সাথে বসেছিলাম ৷ ইমরান বর্ণনা করেন যে, ‘শালীনতাবোধ হচেছ একটি পরিপূর্ণ গুণ’ অথবা তিনি বলছিলেন ‘শালীনতাবোধ পুরোটাই ভাল ৷’ এটা শুনে বুশায়ের ইবন কাব বলেন `আমরা নিদিষ্ট কিছু বইয়ে অথবা জ্ঞানের বইয়ে দেখতে পাই যে, এটা হচ্ছে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত মনের প্রশান্তি অথবা আল্লাহর খাতিরে ভদ্র আচরণ এবং এর কিছু দুর্বল দিকও রয়েছে ৷’ ইমরান এতই রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর চক্ষু লাল হয়ে উঠল এবং তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূলের (সা.) একটি হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি তার বিরোধিতা করছো ৷’ ” [সহীহ আল বুখারী ৫৭৬৬, সহীহ মুসলিম ৩৭]
আব্দুল হামিদ সিদ্দিকী তাঁর সহীহ মুসলিমের অনুবাদ ও ব্যাখায় এই হাদীসের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন:”এই হাদীস একজন নবীর মর্যাদা ব্যাখ্যা করে ৷ নবীদের জ্ঞানের উৎস হচ্ছে ঐশ্বরিক ৷ আর তাই তা নিখুঁত এবং সকল প্রকার ত্রুটিমুক্ত। মানুষের প্রজ্ঞা মূলত পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও মতামতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে ৷ আর তাই তা কখনোই নির্ভুল হতে পারে না ৷ এ কারণেই মানবজাতিকে সবসময়ই নবীদের আদেশ মানার তাগিদ দেয়া হয়েছে – দার্শনিকদের নয় ৷ এ হাদীস স্পষ্টতই আমাদের হাদীসের মর্যাদা সম্বন্ধেও জ্ঞান দান করে ৷ এটা হচেছ ঐশ্বরিক জ্ঞানের অংশবিশেষ ৷ আর তাই ধর্মীয় অনুভূতি সহকারে এটাকে গ্রহণ করা উচিত৷”
এ হাদীসে বুশায়ের আরবদের কিছু প্রাচীন পুস্তকের কথা উল্লেখ করছিলেন যেগুলোতে তাদের ‘প্রজ্ঞা ’ লিপিবদ্ধ ছিল ৷ কিন্তু তা যখন সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্‌ যা নাযিল করছেনে, তার বিরোধিতা করে তখন সেটাকে কি করে ‘প্রজ্ঞা ’ বলা যায় ? রাসূল (সা.) যখন বললেন যে, এর উল্টোটাই করা সত্যি তখন সেটাকে আর কি করে ‘প্রজ্ঞা’ বলে বিবেচনা করা যায়? নবী (সা.) যখন কোন বিষয়ে কথা বলেছেন তখন সেই বিষয়ে নবীর (সা.) বক্তব্য বিরোধী কোন বক্তব্যকে কেউ কিভাবে সম্মান দেখাতে পারে?[দুভার্গ্যজনকভাবে যে কেউ এমন অনেক মুসলিম খুঁজে পাবেন যারা এমন সব ধ্যান-ধারণা অনুসরণ করেন, যা বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশের কারো কারো জন্য, ‘বিজ্ঞান সমৃদ্ধ পশ্চিম’ থেকে আসা যে কোন কিছুই তাদের নিজেদের ‘ঐতিহ্যবাহী প্রজ্ঞার’ চেয়ে উন্নততর বলে মনে হয় ৷ এটা হয়তো একধরণের হীনমন্যতা থেকে উদ্ভূত ৷ অথচ একজন মুসলিম যে কিনা কেবল আল্লাহর ইবাদত করে এবং তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তার উচিত নয় এমন কেউ বা এমন কোন সভ্যতা যা কিনা আল্লাহর হেদায়েত বিবর্জিত – তার মুখোমুখি দাঁড়াতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা ৷]
আসলে এধরণের আরো বহু উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে কেউ নবীর একটি হাদীস অস্বীকার করাতে অথবা সে সম্বন্ধে কোন বিরূপ মন্তব্য করাতে তার সাথে কেউ কথা বলতে অস্বীকার করেছে ৷ সুন্নাহর স্বপক্ষে অবস্থান করতে গিয়ে এ ধরণের আচরণের কথা আমরা আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফাল, ইবাদা ইবন আল সামতি, আবু আদ দারদা এবং আবু সাঈদ আল-খুদরীর মতো সাহাবীদের বর্ণনায় জানতে পারি ৷ পরবর্তী আলেমদের কাছ থেকেও একই ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায় ৷ এসব দুর্ব্যবহার কেবল একভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়: নবীর (সা.) কোন বক্তব্য কোন মুসলিম বিরোধিতা করবেন অথবা প্রত্যাখ্যান করবেন – এটা অকল্পণীয় ৷ ওরকম ব্যবহারের কোন অবকাশ নেই, আর তাই পাপকার্যের জঘন্যতা অনুযায়ী তার প্রতিক্রিয়া সেরকম ছিল ৷
৭) সাঈদ বিন আল-মুসাইয়্যেব বর্ণণা করেন,আলী (রা.) ও উসমান (রা.) মক্কা ও মদীনার যাত্রাপথের মাঝখানে ছিলেন ৷ সময়টা ছিল এমন যখন উসমান (রা.) কোন নিদিষ্ট কারণবশত লোকজনকে তামাত্তু সম্পাদন থেকে বিরত রাখছিলেন (অর্থাৎ একই নিয়তে মাঝখানে একটি বিরতি দিয়ে, হজ্জ এবং ওমরাহকে একই যাত্রায় সম্পাদন করা)৷ আলী (রা.) নিয়ত করলেন : “আমরা মাঝখানে একটি বিরতি সহ হজ্জ এবং ওমরাহর জন্য আসছি ৷” উসমান (রা.) তাঁকে বললেন, “তুমি দেখছো যে, আমি লোকজনকে এটা করা থেকে বিরত রাখছি অথচ তুমি তাই করছো?” আলী (রা.) তাঁকে উত্তর দিলেন, “আমি মানবজাতির কারো বক্তব্যে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুন্নাহ পরিত্যাগ করতে পারি না ৷” [সহীহ মুসলি্‌ অধ্যায়ঃ হজ্জ্ব, হাদীস নং ২৮১৬] এই ঘটনা থেকে আবারও দেখা যায় যে, নবীর (সা.) সাহাবীরা আল্লাহ অথবা তাঁর রাসূলের (সা.) কর্তৃত্ব ছাড়া আর কারো কর্তৃত্ব মেনে নিতেন না ৷ এই ঘটনায় আলী (রা.) দেখছিলেন যে, উসমানের (রা.) ফিকহী যুক্তিতে ভুল ছিল ৷ কারণ তিনি বুঝেছিলেন যে, উসমান (রা.) তামাত্তু সংক্রান্ত সুন্নাহকে সঠিকভাবে বুঝতে পারেন নি ৷ এখানে মনে রাখা উচিত যে, এই ঘটনার সময় উসমান (রা.) ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা ছিলেন ৷ এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, সাহাবীরা জানতেন যে ইসলামের ভূমিতে সর্বোচচ কর্তৃত্বের অধিকা্রী ব্যাক্তিও, তা তিনি যতই পরহেজগার হন না কেন, তিনিও এমন কোন আইন চাপিয়ে দিতে পারি না যা নবীর (সা.) সুন্নাহর বিপক্ষে যায় ৷
সাহাবীদের সম্বন্ধে অনেক কয়টি বিশ্বস্ত সূত্রে আমাদের কাছে যে বর্ণনা এসেছে তাতে দেখা যায় যে, কোন সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা প্রথমে আল্লাহর কিতাবে তার সমাধান খুঁজতেন ৷ সেখানে সমাধান না পেলে তখন তাঁরা নবী (সা.)-এঁর সুন্নাহয় তার সমাধান খুঁজতেন ৷ সেখানেও কোন সমাধান না পেলে তখন তাঁরা ব্যক্তিগত যুক্তির সাহায্য নিতেন ৷ এটি প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) এবং তাঁর উত্তরসূরী ওমর (রা.) – তাদের পন্থা এবং আসলে সকল সাহাবীদের পন্থাই ছিল এটা ৷

উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি:

ক) (দ্বীনের জ্ঞানের ব্যাপারে যাঁরা সর্বোত্তম ও সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন সেই প্রজন্ম অর্থাৎ) সাহাবীদের মাঝে এই ব্যাপারে একটা ঐকমত্য ছিল যে, নবীর (সা.) সুন্নাহ অনুসরণ করাটা তাঁদের জন্য অবশ্য করণীয় ছিল ৷ এবং তাঁদের কেউই নিজেকে এই বাধ্যবাধকতার উর্দ্ধে বলে কখনও দাবী করেন নি ৷
খ) নবীর (সা.) মৃত্যুর পরে মুসলিমরা তখনও একমত ছিলেন যে, তাঁদের অবশ্যই নবীর (সা.) সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে ৷
গ) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে – ইবাদত থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা – সব ক্ষেত্রেই নবীর (সা.) সুন্নাহকে প্রয়োগ করতে হবে এবং এমনকি রাষ্ট্রের যিনি প্রধান, তাঁরও নবীর (সা.) সুন্নাহর বিপরীতে শাসনকার্য পরিচালনা করার অধিকার নেই ৷

সুন্নাহ সম্পর্কে সাহাবীদের দৃষ্টিভঙ্গী – ১

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
                                              মূল লেখা: জামাল আদ-দ্বীন জারাবোজো
[সুন্নাহকে মুসলিম জীবনে বাতিল ও অগুরুত্বপূর্ণ প্রমান করা হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী সকল অবিশ্বাসী এবং ইসলামী বিশ্বের আধুনিকতাবাদী তথা প্রগতিশীলদের একটা অন্যতম লক্ষ্য! কারণটা খুব সাধারণ: সুন্নাহ্ না থাকলে, ইসলামেরই আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না এবং কুরআন ও ইসলামকে নিজের ইচ্ছামতো ব্যাখা করার সুযোগ তৈরী হবে। আজ আমরা ইনশা’আল্লাহ্ দেখবো মুসলিম উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবীরা (রা.) সুন্নাহকে কি চোখে দেখতেন! ]
আল্লাহর রাসূলের (সা.) পরেই যাঁরা কুর’আনের সত্যিকারের অর্থ সবচেয়ে ভাল বুঝতেন এবং একজন বিশ্বাসীর কি ধরণের আচরণ করা উচিত তা সবচেয়ে ভাল যাঁরা জানতেন, তাঁরা হচ্ছেন সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুম ৷ আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেই তাঁর প্রজন্মকে সর্বশ্রেষ্ট প্রজন্ম বলে আখ্যায়িত করেছেন: “তোমাদের (আমার উম্মতের) মাঝে সর্বশ্রেষ্ট হচ্ছে আমার প্রজন্ম, তারপর হচ্ছে তার পরের প্রজন্ম, এবং তারপর হচ্ছে তার পরের প্রজন্ম ৷”[সহীহ বুখারীঃ ৬০৬৫; সহীহ মুসলিমঃ ২৫৩৩] ৷ বাস্তবিকই সাহাবীদের (রা.) মাধ্যমে আল্লাহ কুর’আনকে সংরক্ষিত করেছিলেন এবং তাদের মাধ্যমেই পরবর্তী প্রজন্মগুলো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তারিত দিকগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। নীচে আমরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও জ্ঞানী সাহাবীদের কয়েকজনের মতামত এবং রাসূল (সা.)-এঁর সুন্নাহ সম্বন্ধে তাঁদের অবস্থান তুলে দিলাম ৷
সুন্নাহ সম্বন্ধে সাহাবীদের কিছু বক্তব্য উল্লেখ করার আগে, তাঁদের আচরণের একটা ব্যাপার সস্পর্কে উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে; তাঁরা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ট ঐ প্রজন্ম যাঁরা নবী (সা.)-কে তাৎক্ষিণকভাবে অনুসরণ করেছেন – কোন একটা নির্দিষ্ট কর্ম রাসূল (সা.) কেন সম্পাদন করলেন, সে সম্বন্ধে কোন সংশয় বা প্রশ্ন উত্থাপন করা ছাড়াই ৷ উদাহরণস্বরূপ বুখারীর বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এঁর সূত্রে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি সোনার আংটি পরতেন, আর তাই লোকেরাও সোনার আংটি পরতে শুরু করলো ৷ তারপর নবী (সা.) আংটিটি পরিত্যাগ করলেন এবং বললেন, “আমি আর কখনো এটা পরবো না ৷” লোকেরাও সাথে সাথে তাদের সোনার আংটিগুলি পরিত্যাগ করলো ৷ [সহীহ বুখারী; অধ্যায়ঃ৭২/পোষাক-পরিচ্ছদ; হাদীস নংঃ ৭৫৬]
আরেকটি উপলক্ষে নবী (সা.) সালাত আদায় করছিলেন এবং সালাতের মাঝে তিনি তাঁর জুতা খুলে ফেললেন ৷ সাহাবীরা (রা.) যখন তাঁকে ঐরকম করতে দেখলেন, তখন তাঁরা নিজেরাও তা অনুসরণ করলেন ৷ পরবর্তীতে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁরা কেন তাদের জুতা খুলে ফেলে দিলেন ৷ তাঁরা বললেন, “কেননা আমরা আপনাকে আপনার জুতো খুলে ফেলতে দেখেছি ৷” তিনি তাঁদের ব্যাখ্যা করলেন, “জিবরাইল (আ.) আমাকে জানিয়েছিলেন যে, আমার জুতোয় কিছু ময়লা লেগেছিল ৷”[আবু-দাঊদঃ ৬৫০, শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
সাহাবীদের এই আচরণ এবং এর বাস্তবতা এই যে, তাঁদের এহেন আচরণের জন্য আল্লাহ এবং রাসূল (সা.) কখনোই তাদের তিরস্কার করেননি অথবা ভুল শুধরে দেননি – এটা হচ্ছে সুন্নাহ মর্যাদার ব্যাপারে আরেকটি প্রমাণ ৷ এ ধরনের ব্যাপার: ‘আল্লাহর নীরব অনুমোদন’ – এই শ্রেণীভূক্ত হবে ৷ এটা অকল্পণীয় যে তাঁরা যদি ভুল করে থাকতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত ছাড়া তাঁদের সে আচরণ অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যেতে দেবেন ৷
আল্লাহর রাসূলের জীবিত অবস্থায় তাঁদের উপরোক্ত ধরনের কর্মকান্ড ছাড়াও সাহাবীরা সুন্নাহর মর্যাদা ও কর্তৃত্ব সম্বন্ধে পরবর্তীতে তাঁদের বিশ্বাস ব্যক্ত করে বক্তব্য প্রদান করে গেছেন এমন বহু উদ্ধৃতির মাঝে নীচের উদ্ধৃতিগুলোও রয়েছে:
১)সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি বলেন, “যারা উল্কি আঁকে, যারা উল্কি আঁকাতে চায়, যারা ভ্রু তুলে সরু করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন ঘটাতে দাঁত ফাঁক করে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ ৷” একথা উম্ম ইয়াকুবের কাছে পৌঁছালে তিনি তাঁর কাছে আসেন এবং বলেন, “আমি শুনেছি আপনি এমন এমন কথা বলেছেন ৷” তিনি তাঁকে বললেন, “আল্লাহর রাসূল (সা.) যেটাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং যা আল্লাহর কিতাবে পাওয়া যায় সেরকম ব্যাপারে যদি আমি অভিশাপ দিই তাহলে আমার দোষ কোথায়” মহিলা তাঁকে বললেন ,”আমি (আল্লাহর কিতাব) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, কিন্তু কোথাও (আপনি যা বলেছেন) তা পাইনি ৷” আব্দুল্লাহ্‌ (রা.) তাঁকে বললেন,”আপনি পড়ে থাকলে তো আপনার পাবার কথা ৷ আপনি কি পড়েন নি আল্লাহর রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করে তা থেকে দূরে থাকো’? (সূরা হাশর,৫৯;৭) মহিলা বললেন, “হ্যাঁ” তিনি বললেন, “তিনি [আল্লাহর রাসূল (সা.)] এসব জিনিস নিষেধ করেছেন ৷ ”[সহীহ বুখারীঃ ৪৬০৪; সহীহ মুসলিমঃ ২১২৫]
এই ঘটনায় একজন সাহাবী নবীর (সা.) প্রদত্ত বিধিনিষেধকে আল্লাহর বিধিনিষেধ বলে উল্লেখ করেছেন। ঐ ভদ্রমহিলা, অর্থাৎ, উম্ম ইয়াকুব, আব্দুল্লাহ্‌কে (রা.) ভুল বুঝেছিলেন, এবং ভেবেছিলেন যে, তিনি এমন কোন সুনিদিষ্ট আয়াতের কথা বলেছেন যেখানে ঐ কাজগুলির কথা নিদিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে ৷ আব্দুল্লাহ (রা.) তাঁর ব্যাখ্যায় দেখান যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা আসলে আল্লাহ যা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছেন তার মতই গুরুত্বপূর্ণ ৷ এ ব্যাপারে তাঁর প্রমাণ ছিল সূরা হাশরের সাত নম্বর আয়াত ৷
২)সাঈদ ইবন আল-মুসাইয়্যেব থেকে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে যে, উমর (রা.) বলেন, “একজন বিধবা তার স্বামী হত্যার বিপরীতে প্রাপ্ত রক্তপণ থেকে উত্তরাধিকার হিসাবে কিছুই পাবে না ৷” আদ-দুহাক ইবন সুফিয়ান, উমর (রা.) কে বলেন যে, “রাসূল(সা.) একবার তাঁকে লিখেছিলেন যে, আস-শিয়াম আল-যাহাবীর স্ত্রীকে যেন তার স্বামীর রক্তপণের একটা অংশ উত্তরাধিকার হিসাবে দেওয়া হয় ৷” উমর (রা.) তারপর তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন ৷ এবং রক্তপণের একটা অংশ বিধবাকে দান করেন ৷[সুনানে আবু-দাঊদ; খন্ড ১২, হাদীস নং ২৯২১] এই ঘটনা থেকে উমর আল-খাত্তাব (রা.) সুন্নাহর প্রতি কেমন মনোভাব পোষণ করতেন, তা বোঝা যায় – যিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন এবং দ্বীনের জ্ঞান ও সঠিক ধারণার জন্য যাঁর সুখ্যাতি ছিল ৷ না জেনে তিনি এমন একটা অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, যেটা রাসূল (সা.)-এঁর সিদ্ধান্তের বিপরীত ৷ কিন্তু যখনি তিনি বুঝলেন যে, তাঁর সিদ্ধান্ত সুন্নাহর বিপরীতে চলে যাচ্ছে, তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর মতামত পরিত্যাগ করলেন এবং আল্লাহ্‌র রাসূলের (সা.) সিদ্ধান্তের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে সমপর্ণ করলেন ৷
আরেকটি ঘটনায় যেখানে উমর (রা.) সম্পৃক্ত ছিলেন, একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কেননা একজন সাহাবী একটা সদৃশ ঘটনার ব্যাপারে নবী (সা.)-এঁর একটা হাদীস বর্ণনা করেছিলেন ৷ তারপর উমর (রা.) বলেছিলেন , “আমরা যদি এই হাদীস না শুনতাম, তবে আমরা একটা ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিতাম ৷ আমরা আমাদের মতামত অনুযায়ী বিচার করতাম ৷ এখানেও ইমাম শাফি’ঈ যেমন মন্তব্য করেন – উমরের (রা.) সিদ্ধান্ত নবীর (সা.) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হতো না ৷ কিন্তু যখন তাঁকে নবীর (সা.) সিদ্ধান্ত জানানো হলো, উমর (রা.) জানলেন যে, এ ব্যাপারে তাঁর আর কিছুই বলার রইলো না এবং উপরন্তু তিনি জানাতেন যে, একজন বিশ্বাসীকে অবশ্যই নবীর (সা.) সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে, এমনকি তা যদি তাঁর নিজের মতের বিপক্ষেও যায় ৷ 
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় একটি ঘটনার কথা উল্লিখিত হয়েছে, যেখানে উমর (রা.) আল-শামে (বৃহত্তর সিরিয়া) যাবার জন্য মনস্থির করেছিলেন, সেখানে তখন একটা মহামারির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল ৷ এমতাবস্থায় তাঁর সাথে আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.)-এঁর দেখা হলো, তখন আব্দুর রহমান (রা.) তাঁকে বললেন যে, নবী (সা.) বলেছেন, “যদি তোমরা শোন যে, কোন নিদিষ্ট স্থানে মহামারী দেখা দিয়েছে তবে, সে স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করো না; এবং তুমি যদি সেই স্থানে আগে থেকেই অবস্থান করে থাকো, তবে সেই স্থান ত্যাগ করে বাইরে যেও না ৷”[সহীহ বুখারীঃ ৫৭৩৯; সহীহ মুসলিমঃ ২২১৯] এটা শুনে উমর (রা.) বুঝলেন যে, তাঁর জন্য আল-শামের দিকে যাওয়াটা সঠিক হবে না, তাই তিনি মদীনায় ফিরে এলেন ৷
বুখারীতে লিপিবদ্ধ আরেকটি ঘটনায় দেখা যায় যে, ওমর (রা.) মাজুসিদের কাছ থেকে জিযিয়া কর সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকেন যতক্ষণ না আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.) সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নবী (সা.) তাঁদের কাছ থেকে ঐ কর সংগ্রহ করেছিলেন ৷ [সহীহ বুখারীঃ ৩১৫৭] এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, এমনকি রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নবীর(সা.) আদেশ ও সুন্নাহর কাছে সমর্পিত ৷ মাজুসীদের কাছ থেকে জিযিয়া কর গ্রহণ করার ব্যাপারে সংশয় থাকার দরুণ [যতক্ষণ না তিনি এ ব্যাপারে নবীর(সা.) উদাহরণ সম্পর্কে জানতে পারেন, ততক্ষণ], উমর (রা.) বর্ধিষ্ণু ইসলামী রাষ্ট্রের বাজেটের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছিলেন ৷
৩)আল- বাইহাকী ও আল-হাকিম কর্তৃক লিপিবদ্ধ সহীহ সনদে দেখা যায় যে, তাউস আসরের ফরজ সালাতের পরে ২ রাকাত নফল সালাত পড়ছিলেন ৷ ইবন আব্বাস (রা.) তাঁকে তা থেকে বিরত থাকতে বললেন ৷ তিনি উত্তর দিলেন যে, তিনি তা ত্যাগ করবেন না ৷ ইবন আব্বাস (রা.) তখন তাঁকে বললেন, আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) আসরের সালাতের পরে সালাত নিষিদ্ধ করেছেন [মাগরেবের আগ পর্যন্ত] সুতরাং, আমি জানিনা (তুমি যে সালাত আদায় করেছো তার জন্য) তুমি শাস্তি পাবে না পুরষ্কৃত হবে ৷ [বাইহাকী ৪৪০৪]নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বলেছেন:“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে আদেশ দিলে, কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত্তের অধিকার থাকবে না ৷ কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে ৷”(সূরা আল-আহাযাব,৩৩:৩৬)
এই ঘটনা থেকে যে কেউ নবীর আদেশের গুরুত্বটা সহজেই বুঝতে পারবেন ৷ ইবাদতের মত একটা সৎকর্মের বেলায়ও যে কারো মনে রাখতে হবে যে, সে সম্বন্ধে নবী (সা.) প্রদত্ত নিয়ম-নীতি কী ৷ ইবন আব্বাস (রা.) তাউস-কে বললেন , “আমি জানি না তুমি পুরষ্কৃত হবে না শাস্তি লাভ করবে” – তাউস যে অতিরিক্ত সালাত আদায় করার জন্য শাস্তি লাভ করবেন তা কিভাবে হয়? তা এজন্যই যে, তিনি আসলে নবীর আদেশ অমান্য করছিলেন! এ থেকে বোঝা যায়, সকল সৎকর্ম – তা যতই উন্নতমানের হোক না কেন – গ্রহণযোগ্য হবার জন্য সেগুলোকে অবশ্যই কুর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে ৷

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...