Friday, June 18, 2021

▌বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হওয়া সালাফী মানহাজের অন্তর্ভুক্ত


 ▌বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হওয়া সালাফী মানহাজের অন্তর্ভুক্ত

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিরা ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি করে। তাদের দ্বারা হকপন্থি মুসলিমরা কষ্ট পায়। তাই তারা যখন মারা যায়, তখন হকপন্থি মু’মিনের হৃদয় প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ করে। আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা বিদ‘আতীদের মৃত্যুসংবাদ শুনে খুশি হয়। কারণ তারা এই আশ্বাস লাভ করে যে, ওই সদ্য প্রয়াত বিদ‘আতীর দ্বারা মানুষের আর বিপথগামী হওয়ার সুযোগ থাকছে না, অথবা সুযোগ থাকলেও তা অচিরেই দুর্বল ও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে।
·
অনিষ্টকারী বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে মু’মিনের অন্তর যে প্রশান্তি লাভ করে, তা বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ক্বাতাদাহ ইবনু রিব‘ঈ আল-আনসারী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُسْتَرِيحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ قَالَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ “একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পাশ দিয়ে একটি জানাযাহ নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেন, সে শান্তিপ্রাপ্ত অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ’র রাসূল, ‘শান্তিপ্রাপ্ত’ আর ‘(অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী’—এর অর্থ কী? তিনি বললেন, মু’মিন বান্দা মারা গেলে, দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ’র রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে, তার অনিষ্ট থেকে (মুক্তি পেয়ে) সকল বান্দা, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তি লাভ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫১২; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৫০]
সালাফগণ বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিদের মৃত্যুতে খুশি হতেন। আমরা নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু দলিল পেশ করব। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
·
১. সাহাবী ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এক খারিজী বিদ‘আতীর মৃত্যুতে খুশি হয়ে সিজদা দিয়েছিলেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, وقاتل أمير المؤمنين علي بن أبى طالب رضي الله عنه الخوارجَ، وذكر فيهم سنَّة رسول الله المتضمنة لقتالهم، وفرح بقتلهم، وسجد لله شكراً لما رأى أباهم مقتولاً وهو ذو الثُّدَيَّة “আমীরুল মু’মিনীন ‘আলী বিন ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদ করেছেন। তাদের ব্যাপারে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ’র কথা আলোচনা করেছেন, যেখানে খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদের কথা শামিল রয়েছে। তিনি তাদেরকে হত্যা করে খুশি হয়েছেন। এমনকি তিনি যখন তাদের নেতাকে—সে ছিল যুস সুদাইয়্যাহ—নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি শোকরানা সিজদা দিয়েছিলেন।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৩৯৫]
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, وقد سجد أبو بكر الصِّدِّيق لما جاءه قتلُ مُسَيْلِمة الكذَّاب، وسجد علىُّ بن أبى طالب لما وجد ذا الثُّديَّةِ مقتولاً فى الخوارج “আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্বের নিকট যখন মুসাইলামাতুল কাযযাবের নিহত হওয়ার সংবাদ পৌঁছেছিল, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন। একইভাবে ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব যখন খারিজীদের মধ্যে যুস সুদাইয়্যাহকে নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন।” [যাদুল মা‘আদ, পরিচ্ছেদ: শোকরানা সিজদা সাহাবীদের আদতের অন্তর্ভুক্ত (فصل في سجود الشكر من عادة الصحابة)]
·
২. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমাম হাফিয আহমাদ বিন বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বলা হলো, الرجل يفرح بما ينزل بأصحاب ابن أبي دؤاد، عليه في ذلك إثم؟ قال : ومن لا يفرح بهذا؟ “এক ব্যক্তি ইবনু আবি দুআদের (এ ছিল সে যুগের শীর্ষস্থানীয় বিদ‘আতী) সাথীদের এই বিপদে আনন্দিত হয়েছে, এ কাজের জন্য তার কি পাপ হবে?” তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বললেন, “কে আছে, যে এ সংবাদে খুশি হবে না?” [ইমাম খাল্লালের ‘আস-সুন্নাহ’; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১২১]
·
৩. ইমাম খাত্বীব বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৬৩ হি.] বর্ণনা করেছেন, বিশর ইবনুল হারিস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, جاء موت هذا الذي يقال له المريسي وأنا في السوق. فلولا أنه كان موضع شهرة لكان موضع شكر وسجود. الحمد لله الذي أماته “যখন আল-মারীসী (নেতৃস্থানীয় বিদ‘আতী) মারা গেল, তখন আমি বাজারে ছিলাম। এটা যদি প্রসিদ্ধির স্থান না হতো, তাহলে অবশ্যই তা শুকরিয়া জ্ঞাপন ও সিজদা দেওয়ার জায়গা হতো। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য, যিনি তার মৃত্যু দিয়েছেন।” [তারীখু বাগদাদ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৬৬; লিসানুল মীযান, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৮]
·
৪. সালামাহ বিন শাবীব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, كنت عند عبد الرزاق -يعني الصنعاني-، فجاءنا موت عبد المجيد، فقال: الحمد لله الذي أراح أُمة محمد من عبد المجيد “একদা আমি ‘আব্দুর রাযযাক্ব আস-সান‘আনী’র (মৃত: ২১১ হি.) নিকট অবস্থান করছিলাম। এমন সময় আমাদের নিকট ‘আব্দুল মাজীদের (সে ছিল নেতৃস্থানীয় মুরজিয়া বিদ‘আতী) মৃত্যুসংবাদ পৌঁছল। সংবাদ শুনে তিনি (ইমাম সান‘আনী) বললেন, যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহ’র জন্য, যিনি মুহাম্মাদের উম্মতকে ‘আব্দুল মাজীদের নিকট থেকে নিস্তার দিয়ে আনন্দিত করেছেন।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৩৫]
·
৫. ইমাম ‘আব্দুর রাহমান বিন মাহদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৯৮ হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর কাছে যখন ওয়াহাব বিন কাসীর আল-ক্বারশী নামক পথভ্রষ্ট মিথ্যুকের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছল, তখন তিনি বলেছিলেন, الحمد لله الذي أراح المسلمين منه “যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ’র জন্য, যিনি তার থেকে নিস্তার দিয়ে মুসলিমদেরকে আনন্দিত করেছেন।” [লিসানুল মীযান, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৪০২]
·
৬. ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৪ হি.] বলেছেন, الحسن بن صافي بن بزدن التركي، كان من أكابر أمراء بغداد المتحكمين في الدولة، ولكنه كان رافضيّاً خبيثاً متعصباً للروافض، وكانوا في خفارته وجاهه، حتى أراح الله المسلمين منه في هذه السنَة في ذي الحجة منها، ودفن بداره، ثم نقل إلى مقابر قريش، فلله الحمد والمنَّة. وحين مات فرح أهل السنة بموته فرحاً شديداً، وأظهروا الشكر لله، فلا تجد أحداً منهم إلا يحمد الله “হাসান বিন সাফী বিন বাযদান আত-তুর্কী বাগদাদের ওই সকল বড়ো আমীরদের অন্যতম ছিল, যারা দেশে স্বৈরশাসন করতো। কিন্তু সে ছিল রাফিদ্বী (শিয়া) খবিস এবং রাফিদ্বী সম্প্রদায়ের গোঁড়া সমর্থক। লোকেরা তার কঠিন নজরদারির মধ্যে থাকত। এ বছরের যুলহাজ মাসে আল্লাহ তার থেকে নিস্তার দিয়ে মুসলিমদেরকে আনন্দিত করেন। তাকে তার বাসভবনে কবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কুরাইশদের কবরস্থানে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। যাবতীয় প্রশংসা ও অনুগ্রহ আল্লাহ’রই। সে যখন মারা যায়, তখন আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা চরম খুশি হয়েছিল এবং আল্লাহ’র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। তুমি তাদের মধ্যে এমন একজনকেও পাবে না, যে আল্লাহ’র প্রশংসা করেনি।” [আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ৩৩৮]
·
৭. ইমাম খাত্বীব বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৬৩ হি.] ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন হুসাইন আবুল ক্বাসিম আল-হাফফাফ—যিনি ইবনুন নাক্বীব নামে পরিচিত—রাহিমাহুল্লাহ’র জীবনচরিতে লিখেছেন, كتبتُ عنه، وكان سماعه صحيحاً، وكان شديداً في السنَّة، وبلغني أنه جلس للتهنئة لما مات ابن المعلم شيخ الرافضة وقال : ما أبالي أي وقت مت بعد أن شاهدت موت ابن المعلم “আমি তাঁর নিকট থেকে লিপিবদ্ধ করেছি। তাঁর (রিওয়াইয়াত) শ্রবণ বিশুদ্ধ ছিল। তিনি তীব্রভাবে সুন্নাহ পালন করতেন। আমার নিকট এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, রাফিদ্বী শিয়াদের শাইখ ইবনুল মু‘লিম যখন মারা যায়, তখন তিনি মানুষকে মুবারকবাদ জানানোর জন্য আসন গ্রহণ করেছিলেন। তিনি (আনন্দিত হয়ে) বলেছিলেন, ইবনুল মু’লিমের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করার পর আমি আর কোনো পরোয়া করি না যে, আমার মৃত্যু কখন হবে!” [তারীখু বাগদাদ, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৩৮২]
·
৮. ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] বর্ণনা করেছেন, শাইখ মুহিউদ্দীন আস-সূসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لما بلغ جدي موت سبط ابن الجوزي قال : لا رحمه الله كان رافضيًّا “আমার পিতামহের নিকট যখন সিবত্ব ইবনুল জাওযী’র মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে, তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ তার ওপর রহম না করুন, সে রাফিদ্বী (শিয়া) ছিল।” [মীযানুল ই‘তিদাল, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩০৪]
·
৯. ইমাম খাত্বীব বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৬৩ হি.] বর্ণনা করেছেন, যখন পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী ইবনু আবী দুআদ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলো, তখন এতে আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা আনন্দিত হয়েছিল। এমনকি ইবনু শারা‘আহ আল-বাসরী এ নিয়ে কবিতাও রচনা করেছেন। ইবনু শারা‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
أفَلَتْ نُجُومُ سُعودِك ابنَ دُوَادِ ~ وَبَدتْ نُحُوسُكَ في جميع إيَاد
ِفَرِحَتْ بمَصْرَعِكَ البَرِيَّةُ كُلُّها ~ مَن كَان منها مُوقناً بمعَادِ
لم يَبْقَ منكَ سِوَى خَيَالٍ لامِعٍ ~ فوق الفِرَاشِ مُمَهَّداً بوِسادِ
وَخَبتْ لَدَى الخلفاء نارٌ بَعْدَمَا ~ قد كنت تَقْدحُهَا بكُلِّ زِنادِ
“ওহে দুআদ তনয়, অস্তমিত হয়েছে তোমার সৌভাগ্য-সূর্য, আর প্রকাশিত হয়েছে তোমার ভয়াল দুর্ভাগ্য।
তোমার এহেন ধ্বংসে সৃষ্টিকুল হয়েছে আনন্দিত, পরকালে বিশ্বাসী মু’মিন যারা বিশেষত।
তোমার নিকট জ্বলজ্বলে খেয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই অবশিষ্ট, যা রয়েছে তোমার বিছানালগ্ন বালিশের সাথে শায়িত।
খলিফাদের নিকটস্থ অগ্নি হয়েছে নির্বাপিত, যা তুমি এক সময় চকমকি পাথর দিয়ে করতে প্রজ্বলিত।” [তারীখু বাগদাদ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৫৫]
·
১০. ইমাম হাম্মাদ বিন আবূ সুলাইমান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২০ হি.] বলেছেন, بَشَّرْتُ إِبْرَاهِيْمَ بِمَوْتِ الحَجَّاجِ، فَسَجَدَ، وَرَأَيْتُهُ يَبْكِي مِنَ الفَرَحِ “আমি ইবরাহীম আন-নাখ‘ঈকে (মৃত: ৯৬ হি.) হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মারা যাওয়ার সুসংবাদ দিলে, তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। আমি দেখেছি, তিনি আনন্দের আতিশয্যে কেঁদে ফেলেছেন।” [ত্বাবাক্বাতু ইবনি সা‘দ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৮০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫২৪]
·
১১. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] বলেছেন, ولذلك فإن من السلف رحمهم الله من الصحابة والتابعين ومن بعدهم كانوا يفرحون بموت أهل البدع ويُظهرون ذلك، إظهاراً لنعمة الله أن خلّصهم من بدعهم وضلالهم وشرهم وآذاهم على الناس “একারণে সালাফগণ—যাঁরা সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাঁদের পরবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত—বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হতেন এবং তাঁরা তা প্রকাশ করতেন। তাঁরা এটা করতেন আল্লাহ’র এই অনুগ্রহ জাহির করার জন্য যে, তিনি তাঁদেরকে বিদ‘আতীদের বিদ‘আত, ভ্রষ্টতা, অকল্যাণ ও মানুষকে কষ্টদানের বিষয় থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন।” [শাইখের “আয-যারী‘আহ শারহু কিতাবিশ শারী‘আহ”– নামক গ্রন্থ থেকে; গৃহীত: tasfiatarbia.org]
·
১২. মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] কে ১৪৩২ হিজরীর ২৮শে জুমাদাল উলা সোমবার ইশার নামাজের পর আল-কায়েদা নামক জঙ্গি সংগঠনের নেতা উসামাহ বিন লাদেনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে,
ما هو القول الوسط في مقتل أسامة بن لادن فهناك من فرح بمقتله، وهناك من قال إنه كان مجاهداً وحكم له بالشهادة؟
“উসামাহ বিন লাদেন নিহত হওয়ার ব্যাপারে মধ্যপন্থামূলক বক্তব্য কী? কেউ কেউ তার নিহত হওয়ায় আনন্দিত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছে, ‘সে মুজাহিদ ছিল’, আর তারা তাকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিচ্ছে।”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
كيف مجاهد؟! نعم هو مجاهد في سبيل الشيطان. أسامة بن لادن جلب شراً عظيماً على المسلمين. ولا شك أن ذهابه فيه راحة لهم، يرتاح الناس بذهابه.
“সে কী করে মুজাহিদ হয়? হ্যাঁ, সে মুজাহিদ, তবে শয়তানের রাস্তার মুজাহিদ। উসামাহ বিন লাদেন মুসলিমদের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগ আনয়ন করেছে। নিঃসন্দেহে তার মৃত্যুতে মুসলিমদের জন্য স্বস্তি রয়েছে। সে চলে যাওয়ায় মানুষ প্রশান্তি লাভ করবে।” [দ্র.: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=16159.]
·
১৩. মাদীনাহ’র প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل يجوز الفرح بموت المبتدع أو المنحرف؟
الجواب: نعم، نعم يجوز، ونفرح، ونثرب من يعزينا في هؤلاء ثربوا عليه. نعم. الإمام أحمد -رحمه الله- كُلم في هذا فقال: ومن لا يفرح. فإذا أصابت المبتدع مصيبة في ماله يفرح له بهذا، المبتدع الداعي إلى بدعته هذا خبيث ضال مضل مفسد على أهل الإسلام. وأنبه إلى أنّ قولك : «أو منحرف» إذا كان انحراف بدعي يدعوا إلى بدعته فنعم يفرح به؛ أما إن كان بدعي لا يدعوا إلى بدعته فما علمت أحدًا يفرح له بذلك؛ وكذلك إذا كان انحرافه فسقي انحرافه فسقي نعم لكنه مقصورًا عليه مثل أن يشرب الخمر هو بنفسه، ولا يؤذي أحدًا، ولا يسطو على مال وعرض، أو مثلا يصر على إسبال الثياب وهو من الكبائر في حق الرجل فهذا يدعى له بالهداية ولا يفرح بما أصابه من هذه البلايا، إذا أصابته مصيبة لا يفرح ويدعى له بالهداية، ويطمع في هدايته بتكرار النصيحة عليه، فإذا مات فإنّا نخشى عليه من العقاب كما نرجو لمن مات على تقى وصلاح نرجو له الثواب. نعم هذه عقيدة أهل السنة في الناس عامة. نعم.
প্রশ্ন: “বিদ‘আতী বা বিপথগামীর মৃত্যুতে খুশি হওয়া কি জায়েজ?”
উত্তর: “হ্যাঁ, জায়েজ। আমরা খুশি হই। আর যে ব্যক্তি তাদের ব্যাপারে আমাদের নিকট শোক প্রকাশ করে, আমরা তার নিন্দা করি। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কে আছে, যে এ সংবাদে খুশি হবে না?’ যখন কোনো বিদ‘আতী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হবে, তখন এ সংবাদে খুশি হওয়া যাবে। যে বিদ‘আতী স্বীয় বিদ‘আতের দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সে হলো খবিস, নিজে ভ্রষ্ট, অপরকে ভ্রষ্টকারী এবং মুসলিমদের অনিষ্ট সাধনকারী।
তবে আমি তোমার বলা ‘অথবা বিপথগামী’—কথাটির ব্যাপারে একটি জ্ঞাতব্য বিষয় ব্যক্ত করছি। যখন ব্যক্তির বিপথগামিতা বিদ‘আত হয়, যেই বিদ‘আতের দিকে সে মানুষকে আহ্বান করে, তখন সে ব্যক্তির দুর্যোগে খুশি হওয়া যাবে। পক্ষান্তরে ব্যক্তির বিপথগামিতা যদি বিদ‘আত হয়, কিন্তু ওই বিদ‘আতের দিকে সে মানুষকে আহ্বান করে না, তখন সে ব্যক্তির দুর্যোগে কেউ খুশি হয়েছেন বলে আমি জানি না (অর্থাৎ, এ ধরনের ব্যক্তির বিপদে খুশি হওয়া যাবে না)।
অনুরূপভাবে ব্যক্তির বিপথগামিতা যদি পাপাচারিতামূলক হয়, কিন্তু তা কেবল তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন কেউ মদ্যপান করে, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেয় না, কারও সম্পদ ও সম্ভ্রমের ওপর হামলা করে না। অথবা কোনো ব্যক্তি প্রতিনিয়ত টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, যা পুরুষদের জন্য কাবীরাহ গুনাহ। এসব ক্ষেত্রে তার জন্য হেদায়াতের দু‘আ করতে হবে এবং সে বিপদগ্রস্ত হলে খুশি হওয়া যাবে না। সে যদি বিপদগ্রস্ত হয় তাহলে আনন্দিত হওয়া যাবে না, বরং তার জন্য হেদায়াতের দু‘আ করতে হবে। তাকে বারবার নসিহত করার মাধ্যমে তার হেদায়াতের আশা করতে হবে। আর সে মারা গেলে আমরা তার ব্যাপারে শাস্তির ভয় করব, যেমনভাবে কেউ পরহেজগারিতা ও সৎকর্মের ওপর অটল থাকা অবস্থায় মারা গেলে আমরা তার ব্যাপারে উত্তম প্রতিদানের আশা করি। এটাই সার্বজনিক মানুষের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র ‘আক্বীদাহ। না‘আম।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/fatwa/58.]
·
১৪. উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘উমার সালিম বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, علمني ديني : أنه لا حرج في الفرح بموت أهل البدع وأهل الباطل، فقد أراح الله منهم البلاد والعباد “আমার দ্বীন আমাকে এ শিক্ষা দিয়েছে যে, বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিদের মৃত্যুতে খুশি হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। বস্তুত আল্লাহ তাদের থেকে নিস্তার দিয়ে শহর-বন্দর ও স্বীয় বান্দাদেরকে স্বস্তি দিয়ে থাকেন।” [দ্র.: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=41194.]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, অনিষ্টকারী বিদ‘আতীদের—বিশেষত শীর্ষস্থানীয় বিদ‘আতীদের—মৃত্যুতে খুশি হওয়া জায়েজ। সালাফগণ পথভ্রষ্ট ও অনিষ্টকারী বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হতেন। সুতরাং এই বিষয়কে সালাফী মানহাজের পরিপন্থি বলা অনুচিত। আল্লাহ আমাদেরকে হক গ্রহণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
·
উৎস:
(১) “আল-ফারহু বি হালাকিল মুবতাদি‘ সুন্নাতুম মাসমূ‘আহ ওয়া ত্বারীক্বাতুন আসারিয়্যাতুম মাতবূ‘আহ, ফাজ‘আলহা নুসবা ‘আইনাইকা ওয়ালা তাহুদ্দা ‘আনহা ক্বীদা আনমালাহ”– শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধের লিংক: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=16159
(২) “তাযকীরুন নুবাহা বি জাওয়াযি ইযহারিল ফারহি বি মাওতি আহলিল বিদা‘ই ওয়াল আহওয়া”– শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধের লিংক: www.ajurry.com/vb/showthread.php?t=42471
(৩) “আল-মাওক্বিফুশ শার‘ইয়্যুস সাহীহ মিন ওয়াফাতি আহলিদ্ব দ্বালাল”– শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধের লিংক: https://dorar.net/article/492
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...