Thursday, August 30, 2018

১০টি ইসলাম ধ্বংসকারী বিষয়


প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
FireG
মূলঃ আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন বায (রহঃ) 
অনুবাদঃ শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক সেই মহান নবীর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই। আরো নাযিল হোক তাঁর পরিবার বর্গ, সহচর বৃন্দ এবং তাঁর হেদায়াতের অনুসারীদের উপর।
অত:পর হে মুসলিম ভাই! এ কথা জেনে নিন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরজ করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে দিকে আহবান করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্‌ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করবে সে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। তিনি বহু আয়াতে মুরতাদ হওয়ার মাধ্যম, শির্ক ও কুফরীর সকল প্রকার হতে সতর্ক করেছেন।
বিদ্যানগণ মুরতাদের বিধি-বিধান অধ্যায়ে এই মর্মে উল্লেখ করেছেন যে, একজন মুসলমান ব্যক্তির রক্ত ও ধন-সম্পদ হালাল কারী বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংসী কার্য কলাপ সম্পদনের মাধ্যমে মুরতাদ ও ইসলাম হতে বহিস্কার হয়ে যায়।
ইসলাম বিধ্বংসী কাজ হল সর্ব মোট ১০টি যা শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহিমাহু্মুল্লাহ) ও অন্যান্য বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। আমরা ঐ সকল ইসলাম বিধ্বংসী কাজ গুলো নিন্মে সংক্ষিপ্ত ভাবে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ আপনার জন্য উল্লেখ করছি। যাতে আপনি উক্ত বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থেকে অপরকে সতর্ক করতে পারেন।
ইসলাম বিধ্বংশী কাজ গুলো নিন্মরূপঃ
প্রথমঃ আল্লাহর ইবাদতে শির্ক করা। আল্লাহ বলেনঃ

إنَّ اللهَ لاَيَغْفِرُ أنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ ماَ دُوْنَ ذلكَ لِمَنْ يَشاَءُ

“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। উহা ব্যতিরেকে উহার নিন্ম পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন”। [নিসা : ১১৬]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

إنَّهُ مَنْ يُشْرِكُ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظاَّلِمِيْنَ مِنْ أنْصَارِ

“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্ক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এই সমস্ত যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না”। [সূরা মায়েদাহ্‌ : ৭২]
জ্ঞাতব্যঃ এই শির্কের অন্তর্ভূক্ত হল: মৃতকে আহবান করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, তাদের জন্য নযর-নেয়াজ মানা ও পশু যবেহ করা। যেমন কোন ব্যক্তি জ্বিনের জন্য বা কোন কবেরর জন্য যবেহ করল ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ঃ নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য।
তৃতীয়ঃ  মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না বলা বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।
চতুর্থঃ এই বিশ্বাস করা যে অন্যের আদর্শ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যেমন কেউ কেউ তাগুতের বিধানকে নবীর বিধানের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিযে থাকে) সে ব্যক্তি কাফের বলে গণ্য হবে।
পঞ্চমঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত কোন বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে যদিও সে ঐ বস্তুর উপর বাহ্যিক ভাবে আমল করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

ذلكَ بِأنَّهُمْ كَرِهُوا ماَ أنْزَل اللهُ فَأحْبَطَ أعْماَلَهُمْ

“ইহা এজন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল গুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন”। [সূরা মুহাম্মাদ : ৯]
ষষ্ঠঃ দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে বা তার পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ

قُلْ أبِاللهِ وآياَتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تستهزئون . لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إيْماَنِكُمْ

“আপনি বলুন (হে রাসূল) তোমরা কি আল্লাহর সাথে, স্বীয় আয়াত সমূহের সাথে এবং রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? কোন প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর আবার কুফরী করেছ”। [সূরা তাওবাহ্‌ : ৬৫-৬৬]
সপ্তমঃ যাদু-টোনা করা: যাদুর অন্যতম প্রকার হল তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে দুজন মানুষের বন্ধন তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার বলেনঃ

(وماَ يُعَلِّماَنِ مِنْ أحَدٍ حَتىَّ يَقُوْلاَ إنَّماَ نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ )

“ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন-নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না”। [সূরা বাকারা : ১০২]
অষ্টমঃ মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলার বাণী:

وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإنَّهُ مِنْهُمْ ، إنَّ اللهَ لاَ يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظاَّلِمِيْنَ

“তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না”। [সূরা মায়েদা : ৫১]
নবমঃ এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ:)এর জন্য মূসার (আ:) শরীয়ত হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإسْلاَمِ دِيْناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوِ فِيْ الآخِرَةِ مِنَ الْخاَسِرِيْنَ

“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্থদের দলভূক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]
দশমঃ সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَمَنْ أظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآياَتِ رَبِّهِ ثُمَّ أعْرَضَ عَنْهاَ ، إناَّ مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ

“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশী যালিম (অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী”। [সূরা সাজদাহ্‌ : ২২]
কোন লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক। অবশ্য কাউকে যদি  বাধ্য করা হয় তবে তার ব্যাপার আলাদ।  এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয় অত্যন্ত মারাত্মক। তার পরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য কর্তব্য হল এ সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা। আমরা আল্লাহর নিকট তার ক্রোধ অবধারিত কারী বিষয় হতে এবং তাঁর যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সৃষ্টির সেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর পরিবারের উপর, সাহাবীগণের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক।
[এখান থেকেই শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহ:) এর বক্তব্য শেষ]।
উল্লেখিত চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে ঐ ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে যে, মানুষ যে সমস্ত সংবিধান রচনা করেছে উহা ইসলামী সংবিধানের চেয়েও উত্তম, অথবা উহার সম পর্যায়ের অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ঐ সমস্ত মানব রচিত বিধানের নিকট ফায়সালা তলব করা জায়েয, যদিও শরীয়তের বিধানকেই সে উত্তম মনে করে- এধরণের সকল বিশ্বাসই চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে ইসলামের বিধি-বিধান এই বিংশ শতাব্দীতে বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ইহাই মূলত: মুসলিমদের পশ্চাদ মুখী হওয়ার কারণ। অথবা উহাকে সে স্বীয় প্রতি পালকের সাথে সর্ম্পর্কত করার মধ্যেই সীমিত রাখে, জীবনের অন্যান্য বিষয়ের কোন কর্তৃত্ব নেই বলে ধারণা করে।অর্থাৎ বলে যে শরীয়ত ব্যক্তিগত জিনিস, সমাজ, রাষ্ট বা জীবনের অন্য ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রয়োজন নাই তাহলে সেও চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশকারী আমল সম্দপনকারী কাফেরদের দলভূক্ত হবে।
অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারে শামিল হবে ঐ ব্যক্তির কথা যে এমনটি ধারণা করে যে, চোরের হাত কাটা, বিবাহিত ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করা ইত্যাদী আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা আধুনিক যুগের জন্য উপযোগী নয়।
অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভূক্ত ঐ ব্যক্তির কথা, যে বিশ্বাস করে যে বৈষয়িক বিষয় সমূহ এবং দণ্ডবিধি ইত্যাদির ব্যাপারে শরিয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করা জায়েয। যদিও সে এই বিশ্বাস না রাখে যে উহা শরীয়তের বিধান অপেক্ষা উত্তম। (তবুও সে কাফের বলেই গণ্য হবে) কারণ সে এর মাধ্যমে এমন বিষয়কে হালাল করেছে যা আল্লাহ হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হারাম কৃত বিধানকে হালাল করবে যার হারাম হওয়া দ্বীন ইসলামে সর্বজন বিদিত। যেমন: ব্যাভিচার করা, মদ্যপান করা, সূদী কারবার করা, আল্লাহর শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা ইত্যাদী বিষয়কে যে হালাল মনে করবে সে মুসলমানদের সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য হবে।
আমরা আল্লাহর সমীপে এই কামনা করি, তিনি যেন সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি মূলক কাজের তাওফীক দেন এবং আমাদেরকে এবং সমস্ত মুসলিমদেরকে সঠিক পথের হেদায়াত দান করেন। নিশ্চয় তিনি সর্ব শ্রোতা ও নিকটবর্তী। আল্লাহ্‌ তাআলা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার বর্গ ও সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ করূন। আমীন॥

তাবলীগ জামাত কি অাসলেই হকের দাওয়াত দিচ্ছে??

তাবলীগ জামাত কি আসলেই হকের দাওয়াত দিচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনারা নিজেরাই বের করতে পারবেন,,এই সংকলনটির মাধ্যমে,যার নাম দেয়া হয়েছে,, 
ফাযায়েলে আমাল এর কিছু ক্ষতিকর কথা★   

সংকলকঃমোঃ জাহিদ হাসান নিলয়(Jh neloy salafi)

সংকলনটি pdf আকারে দেয়া হয়েছে পড়ার সুবিধার্থে” তাই ফাইলটি ডাউনলোড করে নিন।        


এই সংকলন টি তে শুধুমাত্র ফাযায়েল আমাল এর কোরঅান হাদিস বিরোধী কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে।যে কথা গুলো বিশ্বাস করলে মুসলিমদের ঈমানের ক্ষতি হবে।এর মাধ্যমে যাতে মুসলমানদের ঈমানের ক্ষতি না হয়,এই উদ্দেশ্যেই এই প্রচেষ্টা।
আল্লাহ যেন এই সংকলনটি কবুল করেন।
এর মধ্যে যদি ভুল থেকে থাকে দয়া করে জানাবেন,,সংশোধন করা হবে ইনশাআল্লাহ!!  
   

Wednesday, August 29, 2018

বইঃজিহাদ ও কিতাল

জিহাদ সম্পর্কে সঠিক ইলম অর্জন করার জন্য
বইটি অতুলনীয় ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।

লেখকঃ আমিরে জামাত ডঃমুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব।

বইঃসন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থা এবং ইসলামি দৃষ্টিকোন

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শর্তসমূহ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ অনুবাদ:সানাউল্লাহ নজির আহমদ 
প্রশ্ন: আমাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর শর্তগুলো বুঝিয়ে বলুন?
উত্তর: শাইখ  হাফেয হিকমী রহ. ‘সুল্লামুল উসূল’ গ্রন্থে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাতটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। ইলম, ইয়াকীন, কবূল, ইনকিয়াদ, সিদক, ইখলাস ও মুহব্বত। নিম্নে সবকটি শর্তের ব্যাখ্যা পেশ করছি:
প্রথম শর্ত, ইলম: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমায় দু’টি অংশ রয়েছে: ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় অর্থের ইলম বা যথার্থ জ্ঞান হাসিল করা প্রথম শর্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অতএব জেনে রেখো, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই”। [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৯]
অপর আয়াতে তিনি বলেন: “তবে তারা ছাড়া যারা জেনে-শুনে সত্য সাক্ষ্য দেয়”। [সূরা আয-যুখরূফ, আয়াত: ৮৬]
এখানে সত্য সাক্ষ্য দ্বারা উদ্দেশ্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আর জেনে-শুনে অর্থ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার সঙ্গে অন্তর দ্বারা তার অর্থের জ্ঞান হাসিল করা। সহীহ গ্রন্থে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে এমতাবস্থায় মারা গেল যে, সে জানে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[1] অতএব, মুসলিম হওয়ার জন্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লার অর্থ জানা জরুরি।
দ্বিতীয় শর্ত, ইয়াকীন: অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা, শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, আর সন্দেহপূর্ণ জ্ঞানের তো কোনো মূল্যই নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করে নি”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]
এ আয়াতে ঈমানের জন্য আল্লাহ সন্দেহ মুক্ত হওয়া শর্তারোপ করেছেন। কারণ, সন্দেহ পোষণকারী মুনাফিক, মুমিন নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, এ দু’টি বাক্যে সন্দেহ পোষণ ব্যতীত কোনো বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে না, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[2]অপর বর্ণনায় এসেছে: “কোনো বান্দা এ দু’টি সাক্ষ্যসহ, সন্দেহমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাত করবে, আর তাকে জান্নাত থেকে দূরে রাখা হবে, এরূপ হবে না”।[3] 
একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুকে নিজের দু’টি জুতাসহ প্রেরণ করে বলেন: “এই দেয়ালের পশ্চাতে যার সাথে তুমি সাক্ষাত করবে, যে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর”।[4] অতএব, জান্নাতে লাভের জন্য সন্দেহ মুক্ত সাক্ষ্য হওয়া জরুরি, অন্যথায় তাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
তৃতীয় শর্ত, কবুল: অর্থাৎ কালেমার অর্থ ও দাবিকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিকট অতীত জাতির ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যারা এ বাক্য গ্রহণ করেছে তাদের তিনি মুক্তি দিয়েছেন এবং যারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের থেকে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “(ফিরিশতাদেরকে বলা হবে), ‘একত্র কর যালিম ও তাদের সঙ্গী-সাথীদেরকে এবং যাদের ইবাদাত তারা করত আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে, আর তাদেরকে আগুনের পথে নিয়ে যাও, আর তাদেরকে থামাও, অবশ্যই তারা জিজ্ঞাসিত হবে”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ২২-২৪]
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই’, তখন নিশ্চয় তারা অহঙ্কার করত। আর বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির জন্য আমাদের উপাস্যদের ছেড়ে দেব”? [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৫-৩৬]
আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। কারণ, তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহকে অহঙ্কার ভরে ত্যাগ করেছে, আল্লাহর দা‘ঈর ওপর তারা মিথ্যারোপ করেছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি মোতাবেক তারা (অন্য মাবুদদের) প্রত্যাখ্যান ও (একমাত্র আল্লাহকে) গ্রহণ করে নি; বরং তারা বিদ্বেষ ও অহঙ্কার থেকে বলেছে: “সে কি সকল উপাস্যকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয় এ তো এক আশ্চর্য বিষয়! আর তাদের প্রধানরা চলে গেল একথা বলে যে, ‘যাও এবং তোমাদের উপাস্যগুলোর ওপর অবিচল থাক। নিশ্চয় এ বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত’। আমরা তো সর্বশেষ ধর্মে[5] এমন কথা শুনি নি। এটা তো বানোয়াট কথা ছাড়া আর কিছু নয়”। [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৫-৭]
আল্লাহ তাদের মিথ্যারোপ ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন, তিনি বলেছেন,“বরং সে সত্য নিয়ে এসেছিল এবং সে রাসূলদেরকে সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছিল”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৩৭]
অতঃপর যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহকে মেনে নিয়েছে, তাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “অবশ্য আল্লাহর মনোনীত বান্দারা ছাড়া; তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত রিযিক, নি‘আমত-ভরা জান্নাতে ফলমূল; আর তারা হবে সম্মানিত”। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৪০-৪৩]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত ও ইলমসহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ মুষলধারার বৃষ্টির ন্যায়, যা কোনো জমিনে বর্ষিত হয়েছে। তাতে কিছু উর্বর জমি ছিল, যা পানি গ্রহণ করেছে, ফলে তৃণলতা ও প্রচুর ঘাস জন্মিয়েছে। তাতে কিছু ছিল শক্ত জমি, যা পানি আটকে রেখেছে, আল্লাহ তার দ্বারা মানুষদের উপকৃত করেছেন, ফলে তারা পান করেছে, পশুদের পান করিয়েছে ও সেচ কার্য আঞ্জাম দিয়েছে। আর সে পানি জমির অপর অংশে পতিত হয়েছে, যা ছিল পাথরি জমি, যা না পানি আটকে রাখে এবং না কোনো তৃণলতা জন্মায়।
এটাই তার উদাহরণ যে দীনের ইলম অর্জন করল, আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দ্বারা তিনি তাকে উপকৃত করলেন, ফলে সে জ্ঞানার্জন করল ও অন্যকে শিখাল এবং তার উদাহরণ, যে তার প্রতি মাথা তুলে তাকায়নি ও আল্লাহর হিদায়াত গ্রহণ করে নি, যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে”।[6]
চতুর্থ শর্ত, ইনকিয়াদ: অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবিকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]
আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করার অর্থ তার তাওহীদকে বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া, যে মেনে নিল না ও ইহসান প্রদর্শন করল না, সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে নি। এ কথাই আল্লাহ পরবর্তী আয়াতে বলেছেন, “আর যে কুফরী করে, তার কুফরী যেন তোমাকে ব্যথিত না করে; আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তারা যে আমল করত আমি তা তাদেরকে জানিয়ে দেব”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]
একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“তোমাদের কেউ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত বিষয়ের অনুসারী না হবে”। এটাই পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিজেকে সমর্পণ করা।
পশ্চম শর্ত, সিদক তথা কালেমাতে সত্যারোপ করা:অর্থাৎ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসসহ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমরা তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি, ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী”। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ১-৩]
আর মুনাফিকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেদেরকেই ধোকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি, সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলত”। [সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ৮-১০]
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহ ‘আল্লাহু বলেন, “এমন কেউ নেই যে, অন্তরের অন্তস্থল থেকে সত্য সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, তবে আল্লাহ অবশ্যই তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন”।[7]
ষষ্ট শর্ত, ইখলাস: অর্থাৎ নিষ্ঠা থাকা বা সকল প্রকার শির্ক থেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “বল, ‘আমি আল্লাহরই ইবাদাত করি, তাঁরই জন্য আমার আনুগত্য একনিষ্ঠ করি”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৪]
সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সে ব্যক্তি, যে নিজের অন্তরের অন্তস্থল বা মন থেকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে”।[8]
সপ্তম শর্ত, মহব্বত তথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ কালেমাকে মহব্বত করা: তার দাবি ও অর্থকে মহব্বত করা, তার ওপর আমলকারী ও তার শর্তসমূহ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে মহব্বত করা এবং যারা তার ওপর আমল করে না তাদেরকে অপছন্দ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]
এ আয়াতে আল্লাহ সংবাদ দিচ্ছেন যে, ঈমানদাররা আল্লাহকে অধিক মহব্বত করে, কারণ তারা মহব্বতের ইবাদতে তার সাথে কাউকে শরীক করে নি, যেমন তার মহব্বতের দাবিদার মুশরিকরা তার সাথে শরীকদেরকেও তার ন্যায় মহব্বত করে। আনাস রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার সন্তান, পিতা ও সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হবে”।[9]আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন।
সূত্র:………………………….
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪
[5] তাদের সর্বশেষ ধর্ম ছিল খৃস্টধর্ম, কারো মতে ছিল কুরাইশদের ধর্ম।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯
[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬

Tuesday, August 28, 2018

যারা আল্লাহর আইন দিয়ে রাষ্ট পরিচালনা করে না, তাদের বিধান!!

উত্তর দিচ্ছেন শাইখ সালেহ আল উসাইমিন রহঃ  
আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছি যে, আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাতে আল্লাহর রুবূবীয়্যাত, পরিপূর্ণ রাজত্ব এবং পরিচালনা ক্ষমতার দাবী অনুযায়ী তাঁর হুকুম কার্যকর করার নামান্তর। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ

)اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ(

 “তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলেম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা’বূদের এবাদত করবে, যিনি ব্যতীত মা’বূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয়। তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র।” (সূরা তাওবাঃ ৩১) এখানে আল্লাহ তাআ’লা ইয়াহুদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসাবে নাম করণ করেছেন। কারণ তারাও আল্লাহর বিধানের মত বিধান রচনা করত। তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসাবে নাম দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে ঐ সব পাদ্রি ও আলেমদের কাছে নতি স্বীকার করত এবং তাদের অনুসরণ করত। আদী বিন হাতেম (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললেন, তারা তো তাদের এবাদত করে না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে। এটার নামই এবাদত।

   আপনি জেনে নিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না; বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফেক) দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

)أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا  أُوْلَئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا(

“আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তখন কেমন হবে? অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যে, কল্যাণ ও সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হল সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন, যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণের) আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবান রূপে পেত। অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে।” (সূরা নিসাঃ ৬০-৬৫)

   এখানে আল্লাহ তাআ’লা ঈমানের দাবীদার মুনাফেকদের কয়েকটি বৈশিষ্ট তুলে ধরেছেনঃ

(১) মুনাফেকদের প্রথম বৈশিষ্ট হলো তারা তাগুতের নিকট বিচার-ফায়সালার জন্য গমণ করে থাকে। প্রত্যেক ঐ বিষয় বা ব্যক্তির নামই তাগুত, যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে। সমস্ত বিচার-ফায়সালা এবং হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

)أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ  (

 “জেনে রাখ তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৪)

(২) তাদেরকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দিকে আহবান করা হলে তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(৩) তারা কোন বিপদে পড়লে অথবা তাদের কৃতকর্ম মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেলে শপথ করে বলে থাকে যে, সৎ উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা ব্যতীত আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমানে যারা ইসলামের বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাদের কথাও একই রকম। তারা বলে, আমাদের উদ্দেশ্য হল যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের উপকার সাধন করা।

   আল্লাহ তাআ’লা উপরোক্ত চরিত্রের অধিকারী মুনাফেকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ তাআ’লা তাদের অন্তরের খবর জানেন এবং তাদেরকে নসীহত করার জন্য এবং কঠোর ভাষায় কথা বলার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য হল, যাতে শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুসরণ করা হয়। অন্য মানুষের অনুসরণ নয়। তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ যতই শক্তিশালী হোক না কেন। অতঃপর আল্লাহ তাআ’লা নিজের রুবূবীয়্যাতের শপথ করে তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত কারও ঈমান সংশোধন হবে না।

১)      সকল প্রকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের দিকে ফিরে আসা।

২)      রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য অন্তরকে প্রশস্ত করা।

৩)      পরিপূর্ণভাবে রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নেয়া এবং কোন প্রকার শীথিলতা ব্যতীত তা বাস্তবে রূপদান করা।

দ্বিতীয় প্রকারের আয়াত সমূহে আল্লাহ বলেন,

)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْكَافِرُونَ(

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফের।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৪)

)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ(

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা জালেম।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৫)

)وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الفَاسِقُوْنَ(

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসেক।” (সূরা মায়েদাঃ ৪৭) যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনিটি আয়াতে পরপর কাফের, জালেম এবং ফাসেক বলেছেন। তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল না, সে কাফের, ফাসেক এবং জালেমও বটে। কেননা আল্লাহ কাফেরদেরকে জালেম এবং ফাসেক হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন,

)وَالْكَافِرُونَ هُمْ الظَّالِمُونَ(

“বস্তুতঃ কাফেরেরাই প্রকৃত জালেম।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৪) আল্লাহ বলেন,

)إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُون(

“তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং ফাসেক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” (সূরা তাওবাঃ ৮৪) প্রত্যেক কাফেরই কি জালেম এবং ফাসেক? নাকি আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা না করার কারণে বিভিন্ন প্রকার মানুষের উপর অবস্থাভেদে এ সমস্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয় মতটি আমার নিকট গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে মানুষ কখনো কাফের হয়, কখনো জালেম হয় আবার অবস্থাভেদে কখনো ফাসেক হয়।

   সুতরাং আমরা বলব যে, যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ মনে করে এবং অন্য বিধানকে অধিক উপযোগী ও উপকারী মনে করে তার মাধ্যমে মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। এদের অন্তর্ভুক্ত ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের জন্য পথ হিসাবে ইসলাম বিরোধী বিধান রচনা করে। তারা তাদের রচিত বিধানকে মানুষের জন্য অধিক উত্তম ও উপযোগী মনে করেই তৈরী করে থাকে। এ কথা স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞাত হওয়া যায় যে, মানুষ এক পথ ছেড়ে দিয়ে যখন অন্য পথে চলে, তখন এটা মনে করেই চলে যে, প্রথম পথের চেয়ে দ্বিতীয় পথটি উত্তম।

   আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বিচার-ফায়সালা করে কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না বরং সে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার কিংবা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এরূপ করে থাকে, তাহলে কাফের হবে না বরং জালেম হিসাবে গণ্য হবে।

   আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধানের মাধ্যমে রাষ্টীয় বিচার-ফায়সালা করে কিন্তু সে আল্লাহর বিধানকে অবজ্ঞা করে না এবং অন্য বিধানকে অধিক উপকারী এবং উপযোগীও মনে করে না, বরং বিচার প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিংবা ঘুষ গ্রহণের জন্য কিংবা অন্য কোন পার্থিব স্বার্থ হাসিলের জন্য এরূপ করে থাকে, তা হলে কাফের হবে না; বরং ফাসেক হিসাবে গণ্য হবে।

   শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলেমদেরকে রব্ব (প্রভু) হিসাবে গ্রহণ করে, তারা দু’প্রকার।

(১) তারা জানে যে, তাদের গুরুরা আল্লাহর দ্বীন পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারপরও তারা তাদের অনুসরণ করে এবং তাদের হালাল করা বস্তকে হালাল ও হারামকে হারাম হিসাবে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে তাদের নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। তারা ভাল করেই জানে যে, তাদের নেতারা রাসূলদের আনীত দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। এটা নিঃসন্দেহে কুফরী। এটাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল শির্ক হিসাবে ব্যক্ত করেছেন।

(২) তারা কেবলমাত্র হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করার ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করে। তারা আল্লাহর নাফরমানীতে তাদের নেতাদের অনুসরণ করেছে। যেমনভাবে মুসলমানেরা হারাম জেনেও পাপকাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাদের হুকুম অন্যান্য পাপীদের মতই।

ফতোয়া আরকানুল ইসলাম,,ঈমান অধ্যায়,, ৬৮ নং ফতোয়া 

Tuesday, August 14, 2018

উসমান ইবন আফফান (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
নাম ’উসমান, কুনিয়াত আবু ’আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা এবং লকব যুন-নূরাইন।
(তাবাকাত ৩/৫৩, তাহজীবুত তাহজীব)
পিতা ’আফ্‌ফান, মাতা আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা শাখার সন্তান। তাঁর উর্ধ পুরুষ ’আবদে মান্নাফে গিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। খুলাফায়ে রাশেদার তৃতীয় খলীফা। তাঁর নানী বায়দা বিনতু আবদিল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহর সা. ফুফু। জন্ম হস্তীসনের ছ’বছর পরে ৫৭৬ খৃষ্টাব্দে। (আল-ইসতিয়াব)
এ হিসাবে রাসূলে করীম সা. থেকে তিনি ছয় বছর ছোট। তবে তাঁর জন্মসন সম্পর্কে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। ফলে শাহাদাতের সময় তাঁর সঠিক বয়স কত ছিল সে সম্পর্কে অনুরূপ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন বর্ণনা মতে, তাঁর জন্ম হয় তায়েফে। (ফিত্‌নাতুল কুবরা, ডঃ তোহা হুসাইন)
হযরত ’উসমান রা. ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। মাংসহীন গণ্ডদেশ, ঘন দাড়ি, উজ্জ্বল ফর্সা, ঘন কেশ, বুক ও কোমর চওড়া, কান পর্যন্ত ঝোলানো যুলফী, পায়ের নলা মোটা, পশম ভরা লম্বা বাহু, মুখে বসন্তের দাগ, মেহেদী রঙের দাড়ি এবং স্বর্ণখচিত দাঁত।

হযরত ’উসমানের জীবনের প্রাথমিক অবস্থা অন্যান্য সাহাবীর মত জাহিলী যুগের অন্ধকারেই রয়ে গেছে। তাঁর ইসলামপূর্ব জীবন এমনভাবে বিলীন হয়েছে যেন ইসলামের সাথেই তাঁর জন্ম। ইসলামপূর্ব জীবনের বিশেষ কোন তথ্য ঐতিহাসিকরা আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
হযরত ’উসমান ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুষ্টিবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল তাঁর গভীর জ্ঞান। তাঁর প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্য ও লৌকিকতাবোধ ইত্যাদি গুণাবলীর জন্য সব সময় তাঁর পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকতো। জাহিলী যুগের কোন অপকর্ম তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তাঁর মহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যৌবনে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মত ব্যবসা শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায়ে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। মক্কার সমাজে একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসাবে ‘গনী’ উপাধি লাভ করেন।
হযরত ’উসমানকে ‘আস-সাবেকুনাল আওয়ালুন’ (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী), ‘আশারায়ে মুবাশ্‌শারা’ এবং সেই ছ’জন শ্রেষ্ঠ সাহাবীর মধ্যে গণ্য করা হয় যাঁদের প্রতি রাসূলে করীম সা. আমরণ খুশী ছিলেন। আবু বকর সিদ্দীকের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। তাঁরই তাবলীগ ও উৎসাহে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। (সীরাতে ইবন হিশাম) মক্কার আরো অনেক নেতৃবৃন্দের আচরণের বিপরীত হযরত ’উসমান রাসূলুল্লাহর সা. নবুওয়াতের সূচনা পর্বেই তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেন এবং আজীবন জান-মাল ও সহায় সম্পত্তি দ্বারা মুসলমানদের কল্যাণব্রতী ছিলেন। হযরত ’উসমান বলেনঃ ‘আমি ইসলাম গ্রহণকারী চারজনের মধ্যে চতুর্থ।’ (উসুদুল গাবা) ইবন ইসহাকের মতে, আবু বকর, আলী এবং যায়িদ বিন হারিসের পরে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হযরত উসমান।
হযরত ’উসমানের ইসলাম গ্রহণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সীরাত লেখক ও মুহাদ্দীসগণ যেসব বর্ণনা দিয়েছেন তার সারকথা নিম্নরূপঃ
কেউ কেউ বলেন, তাঁর খালা সু’দা ছিলেন সে ‍যুগের একজন বিশিষ্ট ‘কাহিন’ বা ভবিষ্যদ্বক্তা। তিনি নবী করীম সা. সম্পর্কে উসমানকে কিছু কথা বলেন এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনার জন্য উৎসাহ দেন। তারই উৎসাহে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল ফিত্‌নাতুল কুবরা) পক্ষান্তরে ইবন সা’দ সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেনঃ হযরত উসমান সিরিয়া সফরে ছিলেন। যখন তিনি ‘মুয়ান ও যারকার’ মধ্যবর্তী স্থানে বিশ্রাম করছিলেন তখন তন্দালু অবস্থায় এক আহবানকারীকে বলতে শুনলেনঃ ওহে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা, তাড়াতাড়ি কর। আহমাদ নামের রাসূল মক্কায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। মক্কায় ফিরে এসে শুনতে পেলেন ব্যাপারটি সত্য। অতঃপর আবু বকরের আহ্‌বানে ইসলাম গ্রহণ করেন। (তাবাকাতঃ ৩/৫৫)
হযরত ’উসমান যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন তাঁর বয়স তিরিশের উপরে। ইসলামপূর্ব যুগেও আবু বকরের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর আবু বকরের বাড়ীতে যাতায়াত ছিল। একদিন হযরত আবু বকর রা. তাঁর সামনে ইসলাম পেশ করলেন। ঘটনাক্রমে রাসূল সা.ও তখন সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ ’উসমান, জান্নাতের প্রবেশকে মেনে নাও। আমি তোমাদের এবং আল্লাহর সকল মাখলুকের প্রতি তাঁর রাসূল হিসেবে এসেছি। একথা ‍শুনার সাথে সাথে তিনি ইসলাম কবুল করেন। হযরত ’উসমানের ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর খালা সু’দা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি কাসীদা রচনা করেছিলেন।
হযরত ’উসমানের সহোদরা আমীনা, বৈপিত্রীয় ভাই বোন ওয়ালীদ, খালীদ, আম্মারা, উম্মু কুলসুম সবাই মুসলমান হয়েছিলেন। তাঁদের পিতা উকবা ইবন আবী মুয়ীত। দারু কুত্‌নী বর্ণনা করেছেন, উম্মু কুলসুম প্রথম পর্বের একজন মুহাজির। বলা হয়েছে তিনিই প্রথম কুরাইশ বধূ যিনি রাসূলুল্লাহর সা. হাতে বাইয়াত করেন। হযরত ’উসমানের অন্য ভাই-বোন মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ইসলামের শত্রুদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। তাঁর চাচা হাকাম ইবন আবিল ’আস তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম মার দিত। সে বলতো, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে তুমি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছ। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত তোমাকে ছাড়া হবে না। এতে হযরত ’উসমানের ঈমান একটু টলেনি। তিনি বলতেনঃ তোমাদের যা ইচ্ছে কর, এ দ্বীন আমি কক্ষণো ছাড়তে পারবো না। (তাবাকাতঃ ৩/৫৫)
হযরত উসমান ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ সা. নিজ কন্যা ‘রুকাইয়্যাকে’ তাঁর সাথে বিয়ে দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে মদীনায় রুকাইয়্যার ইনতিকাল হলে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর দ্বিতীয় কন্যা উম্মু কুলসুমকে তাঁর সাথে বিয়ে দেন। এ কারণে তিনি ‘যুন-নূরাইন’- দুই জ্যোতির অধিকারী উপাধি লাভ করেন।
রুকাইয়্যা ছিলেন হযরত খাদীজার রা. গর্ভজাত সন্তান। তাঁর প্রথম শাদী হয় উতবা ইবন আবী লাহাবের সাথে এবং উম্মু কুলসুমের শাদী হয় আবু লাহাবের দ্বিতীয় পুতু ’উতাইবার সাথে। আবু লাহাব ছিল আল্লাহর নবীর কট্টর দুশমন। পবিত্র কুরআনের সূরা লাহাব নাযিলের পর আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মু জামীল (হাম্মা লাতাল হাতাব) তাদের পুত্রদ্বয়কে নির্দেশ দিল ‍মুহাম্মাদের কন্যাদ্বয়কে তালাক দেওয়ার জন্য। তারা তালাক দিল। অবশ্য ইমাম সুয়ূতী মনে করেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই রুকাইয়্যার সাথে উসমানের শাদী হয়। উপরোক্ত ঘটনার আলোকে সুয়ূতির মতটি গ্রহণযোগ্য মনে হয় না।
নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রথম যে দলটি হাবশায় হিজরাত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ’উসমান ও তাঁর স্ত্রী রুকাইয়্যাও ছিলেন। হযরত আনাস রা. বলেনঃ ‘হাবশার মাটিতে প্রথম হিজরাতকারী উসমান ও তাঁর স্ত্রী নবী দুহিতা রুকাইয়্যা।’ রাসূল সা. দীর্ঘদিন তাঁদের কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে ভীষণ উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। সেই সময় এক কুরাইশ মহিলা হাবশা থেকে মক্কায় এলো। তার কাছে রাসূল সা. তাঁদের দু’জনের কুশল জিজ্ঞেস করেন। সে সংবাদ দেয়, ‘আমি দেখেছি, রুকাইয়্যা গাধার ওপর সওয়ার হয়ে আছে এবং ’উসমান গাধাটি তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূল সা. তাঁর জন্য দু’আ করেনঃ আল্লাহ তার সহায় হোন। লূতের আ. পর ’উসমান আল্লাহর রাস্তায় পরিবার পরিজনসহ প্রথম হিজরাতকারী। (আল-ইসাবা) হাবশা অবস্থানকালে তাঁদের সন্তান আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করে এবং এ ছেলের নাম অনুসারে তাঁর কুনিয়াত হয় আবু আবদিল্লাহ। হিজরী ৪র্থ সনে আবদুল্লাহ মারা যান। রুকাইয়্যার সাথে তাঁর দাম্পত্য জীবন খুব সুখের হয়েছিল। লোকেরা বলাবলি করতো কেউ যদি সর্বোত্তম জুটি দেখতে চায়, সে যেন উসমান ও রুকাইয়্যাকে দেখে।
হযরত উসমান বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর মক্কায় ফিরে আসেন এই গুজব শুনে যে, মক্কার নেতৃবৃন্দ ইসলাম গ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহর সা. মদীনায় হিজরাতের পর আবার তিনি মদীনায় হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরাতাইন’- দুই হিজরাতের অধিকারী হন।
একমাত্র বদর ছাড়া সকল যুদ্ধে তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। রাসূল সা. যখন বদর যুদ্ধে রওয়ানা হন, হযরত রুকাইয়্যা তখন রোগ শয্যায়। রাসূলের সা. নির্দেশে হযরত ’উসমান পীড়িত স্ত্রীর সেবার জন্য মদীনায় থেকে যান। বদরের বিজয়ের খবর যেদিন মদীনায় এসে পৌঁছুলো সেদিনই হযরত রুকাইয়্যা ইনতিকাল করেন। রাসূল সা. উসমানের জন্য বদরের যোদ্ধাদের মত সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। (তাবাকাতঃ ৩/৫৬) এ হিসেবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী সাহাবী।
রুকাইয়্যার ইনতিকালের পর রাসূল সা. রুকাইয়্যার ছোট বোন উম্মু কুলসুমকে উসমানের সাথে বিয়ে দেন হিজরী তৃতীয় সনে। একটি বর্ণনায় জানা যায়, আল্লাহর নির্দেশেই রাসূল সা. উম্মু কুলসুমকে ’উসমানের সাথে বিয়ে দেন। হিজরী নবম সনে উম্মু কুলসুমও নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। উম্মু কুলসুমের মৃত্যুর পর রাসূল সা. বলেনঃ ‘আমার যদি তৃতীয় কোন মেয়ে থাকতো তাকেও আমি ’উসমানের সাথে বিয়ে দিতাম।’ (হায়াতু ’উসমানঃ রিজা মিসরী)
হযরত ’উসমান উহুদের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই মুষ্টিমেয় কিছু যোদ্ধাদের মত রাসূলুল্লাহর সাথে অটল থাকতে পারেননি। অধিকাংশ মুজাহিদদের সাথে তিনিও ময়দান ছেড়ে চলে যান। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষাণো করেছেন। পরবর্তী সকল যুদ্ধেই অন্যসব বিশিষ্ট সাহাবীদের মত অংশগ্রহণ করেছেন।
রাসূল সা. তাবুক অভিযানের প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। মক্কা ও অন্যান্য আরব গোত্রসমূহেও ঘোষণা দিলেন এ অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য। ইসলামী ফৌজের সংগঠন ও ব্যায় নির্বাহের সাহায্যের আবেদন জানালেন। সাহাবীরা ব্যাপকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। আবু বকর তাঁর সকল অর্থ রাসূলের হাতে তুলে দিলেন। ’উমার তাঁর মোট অর্থের অর্ধেক নিয়ে হাজির হলেন। আর এ যুদ্ধের এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় ব্যয়ভার উসমান নিজ কাঁধে তুলে নিলেন। তিনি সাড়ে নয় শ’ উট ও পঞ্চাশটি ঘোড়া সরবরাহ করেন। ইবন ইসহাক বলেন, তাবুকের বাহিনীর পেছনে হযরত উসমান এত বিপুল অর্থ ব্যয় করেন যে, তাঁর সমপরিমাণ আর কেউ ব্যয় করতে পারেনি। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তাবুকে রণপ্রস্তুতির জন্য উসমান কোরচে করে এক হাজার দীনার নিয়ে এসে রাসূলুল্লাহর কোলে ঢেলে দেন। রাসূল সা. খুশীতে দীনারগুলি উল্টে পাল্টে দেখেন এবং বলেনঃ ‘আজ থেকে ’উসমান যা কিছুই করবে, কোন কিছুই তার জন্য ক্ষতিকর হবেনা।’ এভাবে অধিকাংশ যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় তিনি প্রাণ খুলে চাঁদা দিতেন। একটি বর্ণনায় এসেছে, তাবুকের যুদ্ধে তাঁর দানে সন্তুষ্ট হয়ে রাসূল সা. তাঁর আগে-পিছের সকল গুনাহ মাফের জন্য দু’আ করেন এবং তাঁকে জান্নাতের ওয়াদা করেন। (আল-ফিতনাতুল কুবরা)
হুদাইবিয়ার ঘটনা। রাসূল সা. ’উমারকে ডেকে বললেনঃ তুমি মক্কায় যাও। মক্কার নেতৃবৃন্দকে আমাদের আগমণের উদ্দেশ্য অবহিত কর। ’উমার বিনীতভাবে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! কুরাইশদের কাছ থেকে আমার  জীবনের আশঙ্কা করছি। আপনি জানেন তাদের সাথে আমার দুশমনি কতখানি। আমি মনে করি উসমানই এ কাজের উপযুক্ত। রাসূল সা. ’উসমানকে ডাকলেন। আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য কুরাইশ নেতৃবৃন্দের নিকট এ পয়গামসহ উসমানকে পাঠালেন যে, আমরা যুদ্ধ নয়, বরং ‘বাইতুল্লাহর’ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এসেছি।
রাসূলুল্লাহর সা. পয়গাম নিয়ে উসমান মক্কায় পৌঁছলেন। সর্ব প্রথম আবান ইবন সাঈদ ইবন আস- এর সাথে তাঁর দেখা হয়। আবান তাঁকে নিরাপত্তা দেন। আবানকে সঙ্গে করে তিনি কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করে রাসূলুল্লাহর সা. পয়গাম পৌঁছে দেন। তারা ’উসমানকে বলেন, তুমি ইচ্ছে করলে ‘তাওয়াফ’ কতে পার। কিন্তু ’উসমান তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. যতক্ষণ ‘তাওয়াফ’ না করেন, আমি ‘তাওয়াফ’ করতে পারিনে। কুরাইশরা তাঁর এ কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে আটক করে।
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, ’উসমানকে তারা তিনদিন আটক করে রাখে। এ দিকে হুদাইবিয়ায় মুসলিম শিবিরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে উসমানকে শহীদ করা হয়েছে। রাসূল সা. ঘোষণা করলেন ’উসমানের রক্তের বদলা না নিয়ে আমরা প্রত্যাবর্তন করবো না। রাসূল সা. নিজের ডান হাতটি বাম হাতের ওপরে রেখে বলেনঃ হে আল্লাহ, এ বাইয়াত ’উসমানের পক্ষ থেকে। সে তোমার ও তোমার রাসূলের কাজে মক্কায় গেছে। হযরত ’উসমান মক্কা থেকে ফিরে এসে বাইয়াতের কথা জানতে পারেন। তিনি নিজেও রাসূলুল্লাহর হাতে বাইয়াত করেন। ইতিহাসে এ ঘটনা বাইয়াতু রিদওয়ান, বাইয়াতুশ শাজারা ইত্যাদি নামে খ্যাত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এ বাইয়াতের প্রশংসা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহর ওফাতের পর যখন আবু বকরের হাতে বাইয়াত নেওয়া হচ্ছিল উসমান সংবাদ পেয়ে খুব দ্রুত সেখানে যান এবং আবু বকরের হাতে বাইয়াত করেন। মৃত্যুকালে আবু বকর ’উমারকে রা. খলীফা মনোনীত করে যে অঙ্গীকার পত্রটি লিখে যান, তার লিখক ছিলেন ’উসমান। খলীফা ’উমারের রা. হাতে তিনিই সর্বপ্রথম বাইয়াত করেন।
হযরত ’উমার রা. ছুরিকাহত হয়ে যখন মৃত্যু শয্যায়, তাঁর কাছে দাবী করা হলো পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের জন্য। কিন্তু তিনি ইতস্ততঃ করে বললেনঃ আমি যদি খলিফা বানিয়ে যাই, তবে তার দৃষ্টান্ত অবশ্য আছে, যেমনটি করেছেন আমার থেকেও এক উত্তম ব্যক্তি, অর্থাৎ আবু বকর রা. আর যদি না-ও বানিয়ে যাই তারও দৃষ্টান্ত আছে। যেমনটি করেছিলেন আমার থেকেও এক উত্তম ব্যক্তি, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সা.। তিনি আরো বললেনঃ আবু ’উবাইদা জীবিত থাকলে তাকেই খলীফা বানিয়ে যেতাম। আমার রব আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলতাম, আপনার নবীকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি এই উম্মাতের আমীন বা পরম বিশ্বাসী ব্যক্তি। যদি আবু হুজাইফার আযাদকৃত দাস সালেমও আজ জীবিত থাকতো, তাকেও খলীফা বানিয়ে যেতে পারতাম, আমার রব জিজ্ঞেস করলে বলতাম,, আপনার নবীকে আমি বলতে শুনেছি, সালেম বড় আল্লাহ-প্রেমিক। এক ব্যক্তি তখন বললো, আবদুল্লাহ ইবন উমার তো আছে। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ তোমার অমঙ্গল করুন। কসম আল্লাহর, আমি আল্লাহর কাছে এমনটি চাই না।…. খিলাফতের এ দায়িত্বের মধ্যে যদি ভালো কিছু থাকে, আমার বংশের থেকে আমি তা লাভ করেছি। আর যদি তা মন্দ হয় তাও আমরা পেয়েছি। উমারের বংশের এক ব্যক্তির হিসাব নিকাশই এজন্য যথেষ্ট। আমি আমার নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, আমার পরিবারবর্গকে মাহরূম করেছি। কোন পুরস্কারও নয় এবং কোন তিরস্কারও নয় এমনভাবে যদি আমি কোন মতে রেহাই পাই, নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।
যখন একই কথা তাঁর কাছে আবার বলা হলো, তিনি আলীর রা. দিকে ইঙ্গিত বললেন, তোমাদেরকে হকের ওপর পরিচালনার তিনিই যোগ্য। তবে আমি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় এ দায়িত্ব বহন করতে রাজী নই। তোমাদের সামনে এই একটি দল আছেন, যঁদের সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, তাঁরা জান্নাতের অধিবাসী। তাঁরা হলেন- আবদে মান্নাফের দুই পুত্র আলী ও উসমান, রাসূলের সা. দুই মাতুল আবদুর রাহমান ও সা’দ, রাসূলের সা. হাওয়ারী ও ফুফাতো ভাই যুবাইর ইবনুল আওয়াম এবং তালহা তাঁদের যে কোন একজনকে খলীফা নির্বাচিত করবে। তাঁদের যে কেউ খলীফা নির্বাচিত হলে তোমরা তাঁকে সাহায্য করবে, তাঁর সাথে সুন্দর আচরণ করবে। তিনি যদি তোমাদের কারো ওপর কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, যথাযথভাবে তোমরা তা পালন করবে।
হযরত ’উমার উল্লেখিত দলটির সদস্যদের ডেকে বললেন, আপনাদের ব্যাপারে আমি ভেবে দেখিছি। আপনারা জনগণের নেতা ও পরিচালক। খিলাফতের দায়িত্বটি আপনাদের মধ্যেই থাকা উচিত। আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট অবস্থায় রাসূল সা. ইনতিকাল করেছেন। আপনারা ঠিক থাকলে জনগণের ব্যাপারে আমার কোন ভয় নেই। তবে আপনাদের পারস্পরিক বিবাদকে আমি ভয় করি। জনগণ তাতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে।
তারপর তিনি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর তিন দিন তিন রাত্রি। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদকে বলরেন, আমাকে কবরে শায়িত করার পর এই দলটিকে একত্র করবে এবং তাঁরা তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করবে। সুহায়িবকে বললেনঃ তিন দিন তুমি নামাযের জামায়াতের ইমামতি করবে। আলী, উসমান, সা’দ, ’আবদুর রাহমান, যুবাইর ও তালহার কাছে যাবে, যদি তালহা মদীনায় থাকে (তালহা তখন মদীনার বাইরে ছিলেন)। তাদেরকে এক স্থানে সমবেত করবে। আবদুল্লাহ ইবন উমারকেও হাজির করবে। তবে খিলাফতের কোন হক তার নেই। তাঁদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে। তাঁদের পাঁচজন যদি কোন একজনের ব্যাপারে একমত হয় এবং একজন দ্বিমত পোষণ করে, তরবারি দিয়ে তার কল্লা কেটে ফেলবে। আর যদি চারজন একমত হয় এবং দু’জন অস্বীকার করে, তবে সে দু’জনের কল্লা উড়িয়ে দেবে। আর যদি তিনজন করে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়, আবদুল্লাহন বিন ’উমার যে পক্ষ সমর্থন করবে তারা তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করবে। অন্য পক্ষ যদি আবদুল্লাহ বিন ’উমারের সিদ্ধান্ত না মানে, তাহলে আবদুর রাহমান বিন ’আউফ যে দিকে থাকবে তোমরা সে দিকে যাবে। বিরোধীরা যদি জনগণের সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে তাদেরকে মানাতে বাধ্য করবে।
হযরত ’উমারকে দাফন করার পর মিকদাদ বিন আসওয়াদ শূরার সদস্যদের মিসওয়ার ইবনুল মাখরামা মতান্তরে হযরত আয়িশার হুজরায় একত্র করলেন। তাঁরা পাঁচজন। তালহা তখনো মদীনার বাইরে। তাঁদের সাথে যুক্ত হলেন আবদুল্লাহ বিন ’উমার। বাড়ীর দরজায় প্রহরী নিয়োগ করা হলো আবু তালহাকে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও তুমুল বাক-বিতণ্ডা হলো। এক পর্যায়ে আবদুর রাহমান বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ, যে তার দাবী ত্যাগ করতে পার এবং তোমাদের উত্তম ব্যক্তিকে নির্বাচনের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করতে পার? আমি আমার খিলাফতের দাবী ত্যাগ করছি। হযরত ’উসমান সর্বপ্রথম এ প্রস্তাবে রাজী হয়ে আবদুর রাহমানের হাতে তাঁর ক্ষমতা ন্যস্ত করলেন। তারপর অন্য সকলে তাঁর অনুসরণ করলেন। এভাবে খলীফা নির্বাচনের গোটা দায়িত্বটি আবদুর রাহমানের ওপর এসে বর্তায়।
হযরত আবদুর রাহমান দিনরাত রাসূলুল্লাহর সা. অন্যসব সাহাবী, মদীনায় অবস্থানরত সকল সেনা-অফিসার, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গসহ সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করলেন। কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে। প্রায় সকলেই হযরত উসমানের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেন।
যেদিন সকালে ’উমার-নির্ধারিত সময় সীমা শেষ হবে, সে রাতে আবদুর রাহমান এলেন মাখরামার বাড়ীতে। তিনি প্রথমে যুবাইর ও সা’দকে ডেকে মসজিদে নববীর সুফ্‌ফায় বসে এক এক করে তাঁদের সাথে কথা বললেন, এভাবে ’উসমান ও আলীর সাথেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত একান্তে আলাপ করেন।
এদিকে মসজিদে নববী লোকে পরিপূর্ণ। শেষ সিদ্ধান্তটি শোনার জন্য সবাই ব্যাকুল। ফজরের নামাযের পর সমবেত মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আবদুর রাহমান খলীফা হিসেবে হযরত ’উসমানের নামটি ঘোষণা করেন এবং তাঁর হাতে বাইয়াত করেন। তারপরই হযরত আলীও বাইয়াত করেন। অতঃপর সমবেত জনমণ্ডলী হযরত ’উসমানের হাতে বাইয়াত করেন। হিজরী ২৪ সনের ১লা মুহাররম সোমবার সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। (তারীখুল উম্মাহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খিদরী বেক)
হযরত ’উসমান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। খিলাফতের প্রথম পর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ শোনা যায়না। তবে শেষের দিকে বসরা, কুফা, মিসর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে। মূলতঃ এ অসন্তোষ সৃষ্টির পশ্চাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে পরাজিত ইয়াহুদী শক্তি। ধীরে ধীরে তারা সংঘবদ্ধভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং মদীনার খলীফার বাসভবন ঘেরাও করে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিল না। তারা খলীফাকে হত্যার হুমকি দিয়ে পদত্যাদ দাবী করে। খলীফার বাসগৃহের খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। মসজিদে নামায আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তারা খলীফার বাড়ীতে ঢুকে পড়ে এবং রোযা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতরত বয়োবৃদ্ধ খলীফাকে হত্যা করে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ জিলহজ্জ, শুক্রবার আসর নামাযের পর। রাসূলের সা. ওফাত ও হযরত উসমানের শাহাদাতের মধ্যে ২৫ বছরের ব্যবধান। বারো দিন কম বারো বছর তিনি খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।
জান্নাতুল বাকীর ‘হাশশে কাওকাব’ নামক অংশে তাঁকে দাফন করা হয়। মাগরিব ও ঈশার মাঝামাঝি সময়ে তাঁর দাফন কার্য সমাধা হয়। যুবাইর ইবন মুতঈম রা. তাঁর জানাযার ইমামতি করেন। কাবুল থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিশাল খিলাফতের কর্ণধারের জানাযায় মাত্র সত্তরজন লোক অংশগ্রহণ করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স কত হয়েছিল সে সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ৮২ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ছিল। (আল-ফিত্‌নাতুল কুবরা)
খলীফা উসমান বিদ্রোহীদের দ্বারা ঘেরাও হওয়ার পর ইচ্ছা করলে তাদের নির্মূল করতে পারতেন। অন্য সাহাবীরা সেজন্য প্রস্তুতও ছিলেন। কিন্তু হযরত উসমান নিজের জন্য কোন মুসলমানের রক্ত ঝরাতে চাননি। তিনি চাননি মুসলমানদের মধ্যে রক্তপাতের সূচনাকারী হতে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক নাজুক মুহূর্তে হযরত উসমান রা. যে কর্ম-পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা একজন খলীফা ও একজন বাদশার মধ্যে যে পার্থক্য তা স্পষ্ট করে তোলে। তাঁর স্থলে যদি কোন বাদশাহ হতো, নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যেকোন কৌশল প্রয়োগ করতে দ্বিধাবোধ করতো না। তাতে যত ক্ষতি বা ধ্বংসই হোক না কেন। কিন্তু তিনি ছিলেন খলীফা রাশেদ। নিজের জীবন দেওয়াকে তুচ্ছ মনে করেছেন। তবুও যেন এমন সম্মান বিনষ্ট না হতে পারে যা একজন মুসলমানের সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া উচিত।’ (খিলাফত ও মুলুকিয়্যাতঃ আবুল আ’লা মওদূদী)
ইসলামের জন্য হযরত ’উসমানের অবদান মুসলিম জাতি কোন দিন ভুলতে পারবে না। ইসলামের সেই সংকটকালে আল্লাহর রাস্তায় তিনি যেভাবে খরচ করেছেন, অন্য কোন ধনাঢ্য মুসলমানের মধ্যে তার কোন নজীর নেই। তিনি বিস্তর অর্থের বিনিময়ে ইয়াহুদী মালিকানাধীন ‘বীরে রুমা’- কূপটি খরীদ করে মদীনার মুসলমানদের জন্য ওয়াক্‌ফ করেন। বিনিময়ে রাসূল সা. তাঁকে জান্নাতের অঙ্গীকার করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যিনি একদিন ‘বীরে রুমা’ ওয়াক্‌ফ করে মদীনাবাসীদের পানি-কষ্ট দূর করেছিলেন, তাঁর বাড়ীতেই সেই কূপের পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘেরাও অবস্থায় একদিন তিনি জানালা দিয়ে মাথা বের করে মদীনাবাসীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহর সা. নির্দেশে আমিই বীরে রুমা খরীদ করে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াক্‌ফ করেছি। আজ সেই কূপের পানি থেকেই তোমরা আমাকে বঞ্চিত করছো। আমি আজ  পানির অভাবে ময়লা পানি দিয়ে ইফতার করছি।
হযরত উসমানের ফজীলাত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল সা. হতে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সারকথাঃ তিনি রাসূলুল্লাহর সা. অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। রাসূলুল্লাহর নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর বিশেষ স্থান ছিল। রাসূল সা. বার বার তাঁকে জান্নাতের খোশখবর দিয়েছেন। নবী সা. বলেছেনঃ ‘প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে উসমান।’ (তিরমিযী) হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার বলেনঃ নবীর সা. সময়ে মুসলমানরা আবু বকর, ’উমার ও উসমানকে সকলের থেকে অধিক মর্যাদাবান মনে করতেন। তা ছাড়া অন্য কোন সাহাবীকে বিশেষ কোন মর্যাদা দেওয়া হতো না।
হযরত উসমান রা. রাসূলুল্লাহর সা. সময়ে ‘কাতিবে অহী’- অহী লিখক ছিলেন। সিদ্দীকী ও ফারুকী যুগে ছিলেন পরামর্শদাতা। প্রতিবছরই তিনি হজ্জ আদায় করতেন। তবে যে বছর শহীদ হন, ঘেরাও থাকার কারণে হজ্জ আদায় করতে পারেননি। সারা বছরই রোযা রাখতেন। সারা রাত ইবাদতে কাটতো। এক রাকআতে একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন। রাতে কারও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতেন না। রাতে চাকরদের খিদমাত গ্রহণ করতেন না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। রাসূল সা. বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে উসমান সর্বাধিক লজ্জাশীল। তিনি আরো বলেছেনঃ উসমানকে দেখে ফিরিশতারাও লজ্জা পায়। আত্মীয়-বন্ধুদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত সদয়। তাঁর গুণাবলী ও মর্যাদা সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে প্রকাশ করা যাবে না।
————–
সংকলন: এম.এ. ইমরান
উৎস: আসহাবে রাসূলের জীবনকথা

কেউ কারও দাস নয়, সবাই আল্লাহর দাস

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
slave-of-allah
লেখক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
জাতিসংঘের হিসেব মতে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লক্ষাধিক নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয়েছে। তবে বিভিন্ন এনজিওর হিসেব অনুযায়ী, পাচারকৃত নারী ও শিশুর সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়েছে। পাচারকারীরা দেশের ১৮টি স্থান দিয়ে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত ব্যবহার করে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করছে। পাচারের শিকার অধিকাংশ নারীর স্থান হয়েছে ভারতের যৌনপল্লীতে। উপরন্তু বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ অধিক আয়ের আশায় নিয়মিতই সহস্রাধিক নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন দেশে অভিবাসন গ্রহণ করছে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি নির্দেশনা না মেনে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কাছ থেকে অধিক অর্থ আদায় করে, জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে শর্ত অনুযায়ী কাজ দেয় না, বিনা মজুরিতে দাসোচিত শ্রম দিতে বাধ্য করে, এরূপ ভাগ্যাহতদের ওপর যৌন হয়রানিও আকছার ঘটতে থাকে। চাকরি আর মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভনে পড়ে তারা বিদেশ-বিভুঁইয়ে অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)
অনেকে নবজাতক চুরি করে এনে হিজড়াচক্রের নেতাদের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়। গেল সেপ্টেম্বরে (২০১৪ সাল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে একটি শিশু চুরির ঘটনায় তোলপাড় হয়। পুলিশের ভাষ্য মতে, শিশুচুরিতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র আছে যারা এদের চুরি করে বিক্রি করে দেয়। হিজড়াচক্রের হোতারা এদের কিনে নিয়ে তাদের বানিয়ে নেয় নিজেদের অঘোষিত গোলাম। এদের দিয়ে ভবিষ্যতে ভিক্ষা ও চাঁদাবাজি করে অর্থ আয় করে।
পৃথিবীর সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম জাতিসংঘ এসব অপরাধের  বিরুদ্ধে কঠোর। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের সংবিধানে ‘মানব পাচার’ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও সম্প্রতি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বন্ধ হয়নি মানব পাচার। বলাবাহুল্য, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই মানব পাচার রোধ সম্ভব নয়। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধায় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন, মানুষের সৃষ্টিকর্তা, খালিক্ব ও মালিক মহান আল্লাহর প্রতি অনুগত্য, তাঁর ভয় অন্তরে লালন এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।
ইসলামে স্বাধীন মানুষকে দাস বানানো তথা মানব কেনাবেচা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ
‘আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, আমি কেয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হব : ১. যে আমার নামে শপথ করে অতঃপর বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে। ৩. যে কোনো মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে অথচ তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না।’ [ সহীহ বুখারী : ২২২৭]
বলাবাহুল্য, এ তিন অপরাধই আমাদের সমাজে চালু আছে। শপথ ভঙ্গ করার অভ্যাস যদি প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়ভাবে তাহলে শ্রমিক ঠকানোর অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে! আর মানুষের মর্যাদা ও মানবাধিকারের বুলির যুগে মানুষের কেনাবেচাও নেই থেমে।
ইসলামের দৃষ্টিতে দাসত্ব মূলত আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত। একজন মানুষ ইসলামের প্রথম শর্ত তাওহীদের কালেমা মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মানতে বাধ্য যে সে একমাত্র আল্লাহরই দাস। কেবল তাঁরই শর্তহীন আনুগত্য করবে সে। তাঁকেই একমাত্র শর্তহীন মালিক মানবে। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সবার মালিক। শর্তহীন প্রভুত্ব কেবল আল্লাহর জন্যই সংরক্ষিত। সুতরাং মানুষ মানুষের দাস হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দাসত্বের নয়; ভ্রাতৃত্বের। আদি পিতা আদমের সন্তান হিসেবে তারা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবে সবাই সমান। মানুষের সঙ্গে মানুষের মর্যাদার তারতম্য হবে শুধু  তাকওয়ার নিক্তিতে। সবার স্রষ্টা মহান আল্লাহ বলেন,
[ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ  [الحجرات: ١٣
‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত : ১৩]
এটা জানা কথা, তাকওয়া একটি ব্যক্তিগত অর্জন। মানুষ বা সৃষ্টি-জীবের পক্ষে পার্থিব-জীবনের কোনো নিশ্চিত গুণ দেখে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় কাউকে তাকওয়া দান করা বা এর উত্তরাধিকার বানানো। ফলে এ মানদণ্ডে কেউ প্রতারিত হওয়া বা বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইসলামের আবির্ভাবকালে বিশ্ব-সমাজে যুদ্ধবন্দিদের দাস বানিয়ে নেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। ইসলামের আগমনের পরও কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ রেওয়াজ অব্যাহত ছিল। ইসলাম কেবল শত্রুদের সঙ্গে তাদেরই অনুরূপ আচরণ করতে গিয়ে যুদ্ধবন্দিকে দাস বানানোর অনুমতি প্রদান করেছে। অন্যথায় মৌলিকভাবে ইসলাম দাস প্রথাকে প্রাকৃতিক নিয়ম বলে স্বীকার করে না। বরং একে ব্যতিক্রমী অবস্থা বলে গণ্য করে। এ অবস্থা বদলাতে ইসলাম প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করেছে। যাতে লোক-সমাজে সম্পর্কের প্রচলিত নিয়ম ও বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। এ কারণেই ইসলাম স্থায়ীভাবে দাস প্রথা নির্মূলে প্রয়োজনীয় বিধি ও আইন প্রণয়ন করেছে।
দাসত্বের একমাত্র বৈধ উপায় বন্ধ হওয়ার পর ইসলাম নানা উপায়-উপলক্ষে দাসত্বের নিয়ম তুলে দিয়েছে। এসব উপায়ের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন পাপের কাফফারাস্বরূপ (ক্ষতিপূরণ) প্রদেয় তিনটি সুযোগের একটি করা হয়েছে দাস মুক্ত করাকে। যেমন ইসলামের দণ্ডবিধির ধারায় কেউ অনিচ্ছাকৃত ভুলে কাউকে হত্যা করলে তার শাস্তির বিধানে বলা হয়েছে,
 وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ أَن يَقۡتُلَ مُؤۡمِنًا إِلَّا خَطَ‍ٔٗاۚ وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ فَإِن كَانَ مِن قَوۡمٍ عَدُوّٖ لَّكُمۡ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖۖ وَإِن كَانَ مِن قَوۡمِۢ بَيۡنَكُمۡ وَبَيۡنَهُم مِّيثَٰقٞ فَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦ وَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖۖ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ شَهۡرَيۡنِ مُتَتَابِعَيۡنِ تَوۡبَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا  [النساء: ٩٢
‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্তপণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৯২]
কসম করে ইচ্ছাকৃতভাবে তা ভঙ্গ করলে তার কাফফারা সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশে বলা হয়েছে :
 لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغۡوِ فِيٓ أَيۡمَٰنِكُمۡ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلۡأَيۡمَٰنَۖ فَكَفَّٰرَتُهُۥٓ إِطۡعَامُ عَشَرَةِ مَسَٰكِينَ مِنۡ أَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُونَ أَهۡلِيكُمۡ أَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ أَوۡ تَحۡرِيرُ رَقَبَةٖۖ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٖۚ ذَٰلِكَ كَفَّٰرَةُ أَيۡمَٰنِكُمۡ إِذَا حَلَفۡتُمۡۚ وَٱحۡفَظُوٓاْ أَيۡمَٰنَكُمۡۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ  [المائ‍دة: ٨٩
‘আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।’ [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮৯]
যিহারে[1]র কাফফারা সম্পর্কে বলা হয়েছে :
 وَٱلَّذِينَ يُظَٰهِرُونَ مِن نِّسَآئِهِمۡ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُواْ فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مِّن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۚ ذَٰلِكُمۡ تُوعَظُونَ بِهِۦۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٣ فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ شَهۡرَيۡنِ مُتَتَابِعَيۡنِ مِن قَبۡلِ أَن يَتَمَآسَّاۖ فَمَن لَّمۡ يَسۡتَطِعۡ فَإِطۡعَامُ سِتِّينَ مِسۡكِينٗاۚ ذَٰلِكَ لِتُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۗ وَلِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ  [المجادلة: ٣،  ٤
‘আর যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে অতঃপর তারা যা বলেছে তা থেকে ফিরে আসে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। কিন্তু যে তা পাবে না, সে লাগাতার দু’মাস সিয়াম পালন করবে, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে। আর যে (এরূপ করার) সামর্থ্য রাখে না সে ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে। এ বিধান এ জন্য যে, তোমরা যাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।’ [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত : ৩-৪]
তেমনি যে দাস, সে যদি তার দাসত্বের মূল্য পরিশোধ করে স্বাধীন হতে চায়, তাকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, এমনকি বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তা পরিশোধের অবকাশ পর্যন্ত দিয়েছে। গোলাম আজাদ করাকে বড় নেকীর কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ঘোষণা করেও দাসত্ব নির্মূলের পথ সুগম করেছে। শুধু তাই নয়, যে বাঁদি তার মনিবের সন্তান জন্ম দিয়েছে, মনিবের মৃত্যুর পর তার মুক্তিপ্রাপ্তিও নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَٱلَّذِينَ يَبۡتَغُونَ ٱلۡكِتَٰبَ مِمَّا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡ فَكَاتِبُوهُمۡ إِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِيهِمۡ خَيۡرٗاۖ وَءَاتُوهُم مِّن مَّالِ ٱللَّهِ ٱلَّذِيٓ ءَاتَىٰكُمۡۚ وَلَا تُكۡرِهُواْ فَتَيَٰتِكُمۡ عَلَى ٱلۡبِغَآءِ إِنۡ أَرَدۡنَ تَحَصُّنٗا لِّتَبۡتَغُواْ عَرَضَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۚ وَمَن يُكۡرِههُّنَّ فَإِنَّ ٱللَّهَ مِنۢ بَعۡدِ إِكۡرَٰهِهِنَّ غَفُورٞ رَّحِيمٞ [النور: ٣٣
‘আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দাও। তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের কামনায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম  দয়ালু।’ [সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩৩]
তেমনি কুরআনে কারীমে দাসমুক্ত করাকে ধর্মের ঘাঁটি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
فَلَا ٱقۡتَحَمَ ٱلۡعَقَبَةَ ١١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡعَقَبَةُ ١٢ فَكُّ رَقَبَةٍ ١٣ أَوۡ إِطۡعَٰمٞ فِي يَوۡمٖ ذِي مَسۡغَبَةٖ ١٤ يَتِيمٗا ذَا مَقۡرَبَةٍ ١٥ أَوۡ مِسۡكِينٗا ذَا مَتۡرَبَةٖ ١٦ ثُمَّ كَانَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡمَرۡحَمَةِ ١٧ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ  [البلد: ١١،  ١٨
‘তবে সে বন্ধুর গিরিপথটি অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়নি। আর কিসে তোমাকে জানাবে, বন্ধুর গিরিপথটি কি? তা হচ্ছে, দাস মুক্তকরণ অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে। ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে অথবা ধূলি-মলিন মিসকীনকে। অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।’ [সূরা আল-বালাদ, আয়াত : ১১-১৮]
মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য সম্পদ ব্যয় করা বড় সৎকাজ বলে গণ্য করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে,
۞لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَءَاتَى ٱلۡمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلۡمُوفُونَ بِعَهۡدِهِمۡ إِذَا عَٰهَدُواْۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ  [البقرة: ١٧٧
‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী।’ [সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৭]
ইসলাম রাষ্ট্রের জন্য যাকাতের অর্থ থেকে দাস-দাসীর মুক্তির জন্য বিশেষ খাত নির্ধারণ করে দিয়েছে; এই খাতকে আল-কুরআনুল কারীম দাসমুক্তির খাত নামে নামকরণ করেছে; মুসলিম রাষ্ট্রে দাস-দাসীদের মুক্ত করার জন্য এই খাত সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
 ۞إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦٠  [التوبة: ٦٠
‘সদকা তো শুধু ফকীর, মিসকীন ও সদকা আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তিতে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৬০]
অন্যদিকে যেসব হাদিসে দাস-দাসী মুক্ত করার ফযীলত ও মর্যাদা বর্ণনা এসেছে এবং দাস-দাসী মুক্তিদানকারী ব্যক্তির জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে, সেগুলোর সংখ্যা অনেক বেশি, গণনার বাইরে; আমরা উদাহরণস্বরূপ কিছু উপস্থাপন করা যাক :
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
أَيُّمَا رَجُلٍ مُسْلِمٍ أَعْتَقَ رَجُلًا مُسْلِمًا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ جَاعِلٌ وِقَاءَ كُلِّ عَظْمٍ مِنْ عِظَامِهِ عَظْمًا مِنْ عِظَامِ مُحَرَّرِهِ مِنَ النَّارِ، وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ أَعْتَقَتِ امْرَأَةً مُسْلِمَةً فَإِنَّ اللَّهَ  جَاعِلٌ وِقَاءَ كُلِّ عَظْمٍ مِنْ عِظَامِهَا عَظْمًا مِنْ عِظَامِ مُحَرَّرِهَا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে কোনো মুসলিম পুরুষ কোনো মুসলিম পুরুষ (গোলাম) কে আযাদ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রত্যেকটি অস্থির বিনিময়ে তার এক একটি অস্থিকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। আর যে কোনো মুসলিম নারী কোনো মুসলিম দাসীকে আযাদ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার প্রত্যেকটি অস্থির বিনিময়ে তার এক একটি অস্থিকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন।’ [আবূ দাউদ : ৩৯৬৫]
‘আমর ইবন ‘আবাসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا لِيُذْكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ، بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَمَنْ أَعْتَقَ نَفْسًا مُسْلِمَةً كَانَتْ فِدْيَتَهُ مِنْ جَهَنَّمَ، وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মাসজিদ নির্মাণ করবে যাতে আল্লাহ তা‘আলার যিকির (স্মরণ) করা হবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো একজন মুসলিম গোলামকে আযাদ করবে, তা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য তার মুক্তিপণ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার পথে শুভ্রকেশী (বৃদ্ধ) হবে, তা তার জন্য কিয়ামতের দিনে আলো হবে।’ [মুসনাদ আহমদ : ১৯৪৪০]
বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، عَلِّمْنِي عَمَلًا يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ، فَقَالَ: «أَعْتِقِ النَّسَمَةَ، وَفُكَّ الرَّقَبَةَ . فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَوَلَيْسَتَا بِوَاحِدَةٍ؟ قَالَ: لَا، إِنَّ عِتْقَ النَّسَمَةِ أَنْ تَفَرَّدَ بِعِتْقِهَا، وَفَكَّ الرَّقَبَةِ أَنْ تُعِينَ فِي عِتْقِهَا
‘জনৈক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে আগমন করল এবং তারপর বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের প্রশিক্ষণ দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে; তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দাস-দাসী আযাদ কর এবং দাস মুক্ত কর। তারপর সে বলল, এই দু’টি কাজই কি এক জাতীয় কাজ নয়? জবাবে তিনি বললেন, না। দাস-দাসী আযাদ করা মানে হলো, তুমি তাকে মুক্ত করার মাধ্যমে পৃথক করে দেবে; আর দাস মুক্ত করা মানে হল, তুমি তার মুক্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।’ [মুসনাদ আহমদ : ১৮৬৪৭]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُؤْمِنَةً، أَعْتَقَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنَ النَّارِ، حَتَّى يُعْتِقَ فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ»
‘যে ব্যক্তি একজন মুমিন গোলামকে আযাদ করবে, আল্লাহ তা‘আলা সেই গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে তার প্রতিটি অঙ্গকে মুক্ত করবেন; এমনকি তার গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে গুপ্তাঙ্গকে মুক্ত করবেন।’ [মুসলিম : ১৫০৯]
ইসলাম দাস-দাসী মুক্ত করার ব্যাপারে বাস্তবসম্মত ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; আর সেই কর্মসূচী নিয়ে কমপক্ষে সাতশ বছর পরিপূর্ণভাবে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হয়েছে এবং এই অগ্রগতির সাথে আরও অতিরিক্ত সংযোজন হয়েছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার মত উপাদানসমূহ, যার দিকে বিশ্বের অন্যান্যরা কেবল আধুনিক ইতিহাসের শুরুর দিকে যেতে সমর্থ হয়েছে!!
[1]. স্ত্রীকে মায়ের সাথে অথবা মায়ের কোন অংগের সাথে তুলনা করাকে ‘যিহার’ বলে। প্রাচীন আরব সমাজে স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হত। ইসলামে এর মাধ্যমে সরাসরি বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। তবে অসঙ্গত কথা বলার কারণে কাফফারা দিতে হয়।

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...