Showing posts with label ফাতওয়া. Show all posts
Showing posts with label ফাতওয়া. Show all posts

Friday, June 18, 2021

ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন


 

ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন
প্রশ্ন: "যে ভুলে যায় তাকে ফাসেক বলা হয় না" এটা কার উক্তি?"
উত্তর:
"যে ভুলে যায় তাকে ফাসেক বলা হয় না" এটা কার উক্তি-তা জানা নাই। তবে হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত অন্যায়ের গুনাহ লিখেন না। সুতরাং সে ব্যক্তি ফাসিক (পাপী) বলে গণ্য হবে না।
◍ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"إنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ"
"আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌ আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে।"
[এ হাদিসটি হাসান। ইবনে মাজাহ্ (নং-২০৪৫), বায়হাকী (সুনান, হাদিস নং-৭) ও আরও অনেকেই এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসের মানঃ হাসান, আন্‌-নওয়াবির চল্লিশ হাদিস]
অর্থাৎ কেউ যদি ভুল বশত: বা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে কোনও অন্যায় করে ফেলে তাহলে তার কোনও গুনাহ লেখা হবে না। তবে স্মরণ আসার সাথে সাথে হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে বা ছুটে যাওয়া আমলটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
যেমন:
◍ অন্য একটি হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল যে, এক ব্যক্তি সালাতের কথা ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন,
‏ يُصَلِّيهَا إِذَا ذَكَرَهَا
"যখনই তার স্মরণে আসবে, তখনই সে ঐ সালাত আদায় করবে।" [বুখারি ও মুসলিম সহ কুতুবুস সিত্তাহ]
◍ এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ أَكَلَ نَاسِيًا وَهُوَ صَائِمٌ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ
“যে রোজাদার ব্যক্তি ভুল বশত: কিছু খায় সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে (রোজা অব্যাহত রাখে)। কেননা, আল্লাহ তাকে পানাহার করিয়েছেন।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: ৮৩/ শপথ ও মানত, পরিচ্ছেদ: ৮৩/১৫. শপথ করে ভুলে যখন শপথ ভঙ্গ করে]
মোটকথা, ভুলে যাওয়া মানবিক বৈশিষ্ট্য। তা সব মানুষেরই হতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও কিছু বিষয় ভুলে গেছেন। (যেমন: সালাতে ভুল হওয়ার একাধিক ঘটনা)। তাই কোনও মানুষ ভুলে যাওয়ার কারণে কোনও গুনাহ করে ফেললে বা কোনও অপরিহার্য আমল পরিত্যাগ করলে দয়াময় আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। তবে স্মরণ আসার সাথে সাথে কাল বিলম্ব না করে ছুটে যাওয়া আমলটি সম্পাদন করতে হবে এবং অন্যায় হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

ওষুধ খাওয়ার আগে আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী বলার বিধান


 

ওষুধ খাওয়ার আগে আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী বলার বিধান
প্রশ্ন: ওষুধ খাওয়া সময় আমরা সাধারণত "আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী" বলি। এটি কি জায়েজ?
উত্তর:
ঈমনদারের কর্তব্য, যে কোনও আমলের পূর্বে তা বিশুদ্ধ সূত্রে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। দলিল বহির্ভূত, মনগড়া, ভিত্তিহীন, সমাজে প্রচলিত, লোকমুখে শোনা, মুরুব্বীদের থেকে শেখা ইত্যাদি আমল করলে তা হবে গোমরাহি ও ধ্বংসের কারণ। সুতরাং আমাদের জীবনের ছোট-বড় সকল ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুসন্ধান করা অপরিহার্য।
◈◈ খাদ্য-পানীয় গ্রহণের পূর্বে কোন দুআ পড়া সুন্নত?
যেকোনো হালাল খাদ্য-পানীয় গ্রহণের পূর্বে বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বলতে হবে। এটাই সুন্নাহ। ‌নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
“তোমাদের কেউ যখন খাওয়া শুরু করে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ (অর্থ: নামে শুরু করছি) আর যদি, শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেনো বলে: “বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী” (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে) [হিসনুল মুসলিম ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদিসটি নেওয়া হয়েছে সুনানে আবু দাউদ থেকে]
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
بسم الله أَوَّلَه وآخرَه
"বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু" [অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে]
এমনকি খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে অথবা সামান্য একটু পরও যদি মনে পড়ে তাহলেও তা বলা জায়েজ আছে। কাশশাফুল কেনা’ গ্রন্থে এসেছে:
وظاهره ولو بعد فراغه من الأكل
“উক্ত হাদিসের বাহ্যিক অর্থ হল, খাবার শেষ করার পরও যদি তা স্মরণ হয় তাহলেও উক্ত দুআটি (বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী) পাঠ করা যাবে।” [কাশশাফুল কেনা ৫/১৭৩]
নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
لا يأتي بها ( أي التسمية ) بعد فراغ وضوئه ، بخلاف الأكل فإنه يأتي بها بعده
“(ওজুর শুরুতে বলতে ভুলে গেলে) শেষ করার পর তা (বিসমিল্লাহ) বলবে না। কিন্তু খাবার ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে শেষ করার পর হলেও বিসমিল্লাহি (তথা বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী) বলবে। [নিহায়াতুল মুহতাজ ১/১৮৪]
সুতরাং ওষুধ সেবনের পূর্বেও বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু) বলতে হবে। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে মনে হওয়ার সাথে সাথে "বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু" বা "বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী" পড়া কর্তব্য।
◈◈ ওষুধ সেবনের পূর্বে "আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী" পড়ার বিধান কি?
আমাদের সমাজে কিছু মানুষ বলে থাকে যে, ওষুধ সেবনের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়লে ওষুধের কার্যকারিতা হারিয়ে যায় বা রোগ বেড়ে যায় ! তাই বিসমিল্লাহ বলা ঠিক নয়! (নাউযুবিল্লাহ)
এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা ও মূর্খতা সুলভ বিশ্বাস। বরং সঠিক কথা হল, বিসমিল্লাহ বলে ওষুধ সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রোগ-ব্যাধিতে আল্লাহই সুস্থতা দান কারী। আর ওষুধ তাঁরই দেয়া নেয়ামত। সুতরাং তার নাম নিয়ে ওষুধ সেবন করলে দ্রুত সুস্থতা বা আরোগ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, বিসমিল্লাহ মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্তি এবং বরকত লাভের দোয়া।
অথচ দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের দীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত অনেক মানুষকে ঔষধ সেবনের পূর্বে নিম্নোক্ত কথাগুলো শোনা যায়:
আল্লাহ শাফী (আরোগ্য দান কারি),
আল্লাহ কাফী (আল্লাহ যথেষ্ট),
আল্লাহ মাফী (এ শব্দটি মূলত: মুআফি শব্দের অপভ্রংশ) (আল্লাহ সুস্থতা দান কারি)
কিন্তু সব কথাবার্তা বলার বিষয়টি কোন হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নি। বরং তা মানুষের মনগড়া ও ভিত্তিহীন।
ডঃ শাইখ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ. হাদিসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থে বলেন,
"আরও কিছু ভিত্তিহীন প্রচলিত কথা:
১৬. ঔষধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে ‘আল্লাহ শফি, আল্লাহ কাফি, আল্লাহ মাফি’ বলতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঔষধ খেলে ঔষধ পানি হয়ে যায়।"
অত:এব, ঔষধ সেবনের পূর্বে এই সকল বানোয়াট কথাবার্তা উচ্চারণ করাকে শরিয়তের বিধান মনে করলে তা দীনের ভিতরে নব সংযোজিত বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর প্রতিটি বেদআতই গোমরাহি। আর প্রতিটি গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।)
সুতরাং আমাদের কতর্ব্য, ঔষধ সেবনের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' (আল্লাহর নামে শুরু) পাঠ করা এবং এ ছাড়া অন্যান্য সকল বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ তওফিক দান কারী।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

হিন্দু রুমমেটের সাথে একসাথে থাকা এবং এক পাতিলে রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া করার বিধান


 

হিন্দু রুমমেটের সাথে একসাথে থাকা এবং এক পাতিলে রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া করার বিধান
▬▬▬◖◯◗▬▬▬
প্রশ্ন: আমি পড়া-শোনার জন্য একটি ম্যাচে উঠেছি। তো আমার রুমমেট হিন্দু। তার সাথে একই পাতিলে খাবার খেতে হচ্ছে। এতে কি কোন সমস্যা হবে? মানে ইসলাম কি এটা অনুমোদন করে?
উত্তর:
খাবারটা যদি হালাল হয়-যেমন: শাক-সবজি, মাছ, ডাল, ডিম ইত্যাদি তাহলে এক পাতিলে রান্না করেে একসাথে খাওয়া জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।
তবে তার হাতের জবাই করা কোন প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়, অনুরূপভাবে তাদের পূজা বা ধর্মীয় উপলক্ষে বিশেষ কিছু রান্নাবান্না করা বা তা খাওয়া জায়েজ হবে না।
قال قتادة : " لا بأس بأكل طعام المجوسي ، ما خلا ذبيحته ". انتهى من " مصنف عبد الرزاق" (6/109)
◈ কাতাদা রহ. বলেন: “অগ্নীপূজক এর খাবার খেতে অসুবিধা নেই-তার জবেহকৃত প্রাণীর গোস্ত ছাড়া।” (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১০৯)
وقال القرطبي : " ولا بأس بأكل طعام من لا كتاب له ، كالمشركين ، وعبدة الأوثان ، ما لم يكن من ذبائحهم ". انتهى من " الجامع لأحكام القرآن" (6/77)
◈ কুরতুবী বলেন: “যারা কিতাবধারী নয় (আহলে কিতাব নয়) যেমন: মুশরিক, মূর্তীপূজারী-তাদের খাবার খাওয়ায় কোন দোষ নেই যদি তাদের তাদের জবেহকৃত প্রাণীর গোস্ত না হয়।” (আল জামে লি আহকামিল কুরআন-তাফসিরে কুরতুবী ৬/৭৭)
◈ প্রশ্ন: কোন মুসলিমের জন্য কি কোন কাফেরের সাথে খাওয়া-দাওয়া করা সম্ভব?
" إذا كان الطعام حلالا جاز الأكل معه ، ولا سيما إذا دعت الحاجة إلى ذلك ؛ لكونه ضيفاً ، ولقصد دعوته إلى الإسلام ، ونحو ذلك ، مع بقاء بغضه في الله حتى يُسلم ". انتهى من " فتاوى اللجنة الدائمة " (22/413).
“খাবারটা যদি হালাল হয় তাহলে কাফেরের সাথে খাবার খাওয়া জায়েজ আছে। বিশেষ করে যদি প্রয়োজন দেখা যায়। যেমন: হয়ত সে মেহমান এসেছে অথবা তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে আছে ইত্যাদি। তবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার প্রতি মনের মধ্যে বিদ্বেষ পোষণ হবে যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।” (সৌদি স্থায়ী ফতোয়া কমিটি ২২/৪১৩)
➧ মনে রাখা কর্তব্য যে, মুসলিমদের জন্য যথাসম্ভব মুসলিম দ্বীনদার ও সৎচরিত্রবান রুমমেটের সাথে থাকার চেষ্টা করা উচিৎ। এটা উভয়ের জন্যেই মানসিক প্রশান্তি ও দ্বীন পালন ও চরিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ।
তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে অমুসলিমর সাথে একই রুমে থাকতে হয় তাহলে একজন মুসলিমের দায়িত্ব হল, তার সঙ্গীকে দ্বীনের পথে নিয়ে এসে আখিরাতের নিশ্চিত জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। এ জন্য তার কাছে ইসলামের সৌন্দর্য, উদারতা ও মহত্ম প্রকাশ করে তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় বরং উল্টো মনে হয় যে, সে নিজেই তার সাথে থাকার ফলে দ্বীনদারী ও চারিত্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাহলে অনতিবিলম্বে তার জন্য রুম পরিবর্তন করার চেষ্টা করা জরুরি-যদি সম্ভব হয়।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◖◯◗▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB ID:AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

কুরবানি সংক্রান্ত প্রচলিত ১৭টি ভুল


 কুরবানি সংক্রান্ত প্রচলিত ১৭টি ভুল

লেখক: আব্দুর রাকীব মাদানী
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বাদঃ
অতঃপর এই সংক্ষিপ্ত লেখায় আমরা কুরবানি সংক্রান্ত কতিপয় ভুল-ত্রুটি আলোকপাত করার ইচ্ছা করেছি, যেন এই ইবাদতটি আমরা সঠিক ভাবে সম্পাদন করতে পারি এবং ভুল-ত্রুটি থেকে দূরে থেকে পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হতে পারি। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।
◈ ১-কুরবানির উদ্দেশ্যে ভুল:
কুরবানি একটি ইবাদত কারণ মহান আল্লাহ তা পছন্দ করেন এবং আমাদের তা করার আদেশ দেন। আল্লাহ বলেন: (তাই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে স্বলাত পড় এবং কুরবানি কর।) [সূরা কাউসার/২] এই রকম প্রত্যেক ইবাদত কবুলের প্রথম শর্ত হল, ইবাদতে ইখলাস থাকা। অর্থাৎ ইবাদতটি খাঁটি ভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হওয়া। তাই কুরবানি করার উদ্দেশ্য হবে শরীয়া নির্দিষ্ট পশু নির্দিষ্ট সময়ে জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহকে রাযী-খুশী করা। কিন্তু তিক্ত সত্য হচ্ছে সমাজের বহু লোক কুরবানি দেয় গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে, যা তাদের কথা-বার্তায় অনেক সময় প্রকাশও পায়। তারা বলে: কুরবানি না দিলে গ্রাম-সমাজের লোকেরা কি বলবে! সেদিন সবাই গোশত খাবে আর আমার বাচ্চা-কাচ্চারা কি খাবে! আর অনেকে দেয় সমাজে প্রসিদ্ধ হবার উদ্দেশ্যে ও নাম পাবার আশায়। তাই বাজারের সেরা পশু ক্রয় করে পত্র-পত্রিকায় প্রচার করে বা প্রচারের আশা করে। অথচ আল্লাহ বলেন:
لَنْ يَنَالَ اللَّـهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَـٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ
অর্থ: “আল্লাহর কাছে ঐসবের গোশত এবং রক্ত পৌঁছে না বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (আল্লাহ ভীরুতা)।” [আল হজ্জ/৩৭]
◈ ২-অনেক সামর্থবান ব্যক্তি কুরবানি তো করে কিন্তু ফরয ইবাদত হজ্জকে বেমালুম ভুলে যায়:
যিল হজ্জ মাসের ১০ম তারিখ যেদিন কুরবানির দিন সেদিন কিন্তু হজ্জেরও বিশেষ দিন। প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের প্রতি হজ্জ করা ফরয। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা প্রতি বছর কুরবানি তো ধুমধামের সাথে করে থাকে কিন্তু তাদের উপর হজ্জ করা যে জরুরি তা বেমালুম ভুলে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হজ্জ করা লোকদের উপর আবশ্যক যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ জগত সমূহের প্রতি অমুখাপেক্ষী।”[আল ইমরান/৯৭]
◈ ৩-যিল হজ্জ তথা কুরবানির মাসের প্রথম দশকের বিভিন্ন ফযিলত উপেক্ষা করে শুধু কুরবানি করতে আগ্রহী হওয়া:
উল্লেখ্য যে, যিল হজ্জ মাসের ১ম দশক খুবই ফযীলতপূর্ণ দশক। অনেক উলামার মতে, আল্লাহর নিকট যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনের সৎ আমল সমূহ রমাযানের শেষ দশকের দিনের ইবাদতের থেকেও উত্তম। [শারহুল্ মুমতি, ইবনু উসাইমীন,৬/৪৭০] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোনো এমন দিন নেই, যাতে এই দশকের তুলনায় সৎ আমল আল্লাহর নিকট বেশী পছন্দনীয়। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন: আল্লাহর রসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি বেশী পছন্দনীয় নয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও বেশী পছন্দনীয় নয় কিন্তু সেই ব্যক্তি যে তার জান ও মাল নিয়ে বের হয় এবং তা নিয়ে আর পুনরায় ফেরত আসে না”। [বুখারী, দুই ঈদ অধ্যায়, নং (৯৬৯)/আবু দাঊদ নং (২৪৩৮)]
উপরোক্ত হাদিসের মর্মার্থ ব্যাপক, তাই সকল ধরণের সৎ আমল এই দশকে বেশী বেশী করণীয়। যেমন,
হজ্জ ও উমরাহ। কারণ এটি হজ্জের মাস এবং উক্ত আমল দুটির ফযিলত ও অপরিসীম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “এক উমরা আর এক উমরার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফ্ফারা স্বরূপ। আর (মাবরূর) গৃহীত হজ্জের বদলা জান্নাত ছাড়া কিছু নয়”। [বুখারী, নং ১৭৭৩ মুসলিম নং ১৩৪৯]
সিয়াম পালন। যেহেতু হাদিসে সৎ আমল কথাটি ব্যাপক আর রোযা হচ্ছে সৎ আমল, তাই অনেকে এই দশকের প্রথম থেকে নবম দিন পর্যন্ত রোযা পালন উত্তম মনে করেছেন।[শারহু মুসলিম, নবভী, ৮/৭৫] বিশেষ করে আরাফার দিনে। কারণ আরাফার দিনের রোযা বিগত ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা স্বরূপ। [মুসলিম, নং ১১৬২]
এই দশকে তাকবীর পাঠ করা। [বিস্তারিত এই পয়েন্টের পরে]
কুরবানি করা।
দুআ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর-আযকার, সদকা, আত্মীয়তা বজায় রাখা ইত্যদি।
কিন্তু আমদের অনেকেই উপরোক্ত আমল সমূহের প্রতি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে কেবল কুরবানি করার জন্য, পশু ক্রয় করা ও তা কুরবানি দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকি!
◈ ৪-এই পুরো দশকে সাধারণত: এবং তাশরীকের দিন গুলিতে ফরয নামাযান্তে বিশেষ করে তাকবীর পড়ার সুন্নতকে অবহেলা করা:
এই দিনগুলি হচ্ছে বিশেষ করে আল্লাহকে স্মরণ করার দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তাই এতে বেশী বেশী তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমীদ (আল্ হামদুলিল্লাহ) পাঠ কর”। [আহমদ, নং ৬১৫৪, আহমদ শাকির সহীহ বলেছেন] অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “এগুলি পানাহার এবং আল্লাহর যিকরের দিন”। [আবু দাঊদ (২৪১৯, নাসাঈ ৩৯৯৫)
এই ১৩ দিনে দুই ধরণের তাকবীর পাঠ সুন্নাহ:
একটি হলঃ সাধারণ তাকবীর পাঠ, যা ১ম যিল হজ্জ থেকে ১৩ই যিল হজ্জের সূর্য ডোবা পর্যন্ত যে কোনো সময় পাঠ করা সুন্নাহ। আর একটি হল মুক্বায়্যাদ (শর্তযুক্ত) তাকবীর পাঠ। আর তা হচ্ছে, প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে তাকবীর পাঠ যা, আরাফার দিন ফজর নামাযের পর থেকে শুরু হয়ে ১৩ই যুল হজ্জের আসর নামায পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। (এটা তাদের জন্য যারা হজ্জ পালনকারী নয়) আর হাজীদের ক্ষেত্রে এই মুক্বায়্যাদ তাকবীর কুরবানির দিন যোহর থেকে শুরু হবে এবং তাশরীকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। [মাজমুউ ফাতাওয়া,২৪/২৫৩, মুলাখ্খাস আল ফিকহী, ১৩২-১৩৩]
একাধিক সাহাবা থেকে এই তাকবীরের শব্দগুলি প্রমাণিত, তন্মধ্যেঃ
◉ ক-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবীরা। [বায়হাক্বী,৩/৩১৬, ফাতহুল বারী, ২/৪৬২]
◉ খ-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। [মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা (৫৬৩৩)]
◉ গ- আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল্ল, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। [মুসান্নাফ নং (৫৬৪৬)]
এই দশকে ইবনু উমার ও আবু হুরাইরা (রাযিঃ) বাজারে বের হতেন, তারা তাকবীর দিতেন এবং অন্য লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীর পড়তেন। [বুখারী, ঈদাইন অধ্যায়, তা’লীকান]
আজ আমাদের সমাজে এই সুন্নাহ মৃতপ্রায়। আমাদের এই সুন্নাহ পুনর্জীবিত করার সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।
◈ ৫-যে ব্যক্তি কুরবানী করার নিয়ত করেছে এবং যিল হজ্জ মাসের চাঁদ দেখা দিয়েছে এমন ব্যক্তির কুরবানী না করা পর্যন্ত চুল, চামড়া ও নোখ কাটা থেকে বিরত না থাকা:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যখন (যিল হজ্জ মাসের) দশক শুরু হবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন তার চুল, চামড়া ও নোখের কোনো কিছু না কাটে”। [মুসলিম, আযাহী অধ্যায়, নং ১৯৭৭]
তাই যে ভাই কুরবানী করতে চায়, সে যেন উপরে বর্ণিত কোনো কিছু না কাটে। কিন্তু যে নিজে কুরবানীদাতা নয় বরং তার পক্ষ থেকে বাড়ির গার্জিয়ান দেয়, যেমন ধরুন পরিবারের সদস্যরা তাহলে তারাও কি উপরের আদেশের অন্তর্ভুক্ত? শাইখ ইবনে উসায়মীন (রাহেঃ) মনে করেনঃ উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা কেবল তার জন্য যে স্বয়ং কুরবানী দাতা আর যাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় তাদের উপর সে সব কর্তন করা অবৈধ নয়। তিনি মনে করেনঃ হাদীসে নিষেধাজ্ঞা স্বরূপ যেই সম্বোধন রয়েছে তা দ্বারা কেবল তাকে বুঝানো হয়েছে, যে প্রকৃতপক্ষে কুরবানীদাতা আর যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া হয়, তারা এই সম্বোধনের অন্তর্ভুক্ত নয়। [শারহুল মুমতি, ৭/৪৮৬-৪৮৭]
আবার এমনও লোক দেখা যায়, যারা কুরবানী করতে ইচ্ছুক তাই এই দশকে দাড়ি কাটে না কিন্তু কুরবানী করার পর দাড়ি কেটে ফেলে। এমন লোকের জানা উচিৎ যে, দাড়ি সব সময় রাখাই হচ্ছে মুমিনের কর্তব্য। তা এই দশকে রেখে সওয়াব পাওয়ার আশা করা অযৌক্তিক। অতঃপর কুরবানীর সাথে সাথে দাড়ির কুরবানী একটি শরীয়ত গর্হিত কাজ।
◈ ৬-এই দশকে রক্ত প্রবাহ করা বা রক্ত দেখা নিষেধ মনে করা:
কিছু সমাজে এমনও ধারণা আছে যে, যিল হজ্জ মাসের চাঁদ উঠলে কোনো পশু যবাই করা যাবে না বা রক্ত দেখা যাবে না; যতক্ষণ কুরবানী না দেওয়া হয়। এই কারণে সেই সময় তাদের বাড়িতে মেহমান আসলে তারা মুরগী, ছাগল, গরু ইত্যাদি জবেহ করে মেহমানের আপ্যায়ন না করে গোশত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা আপ্যায়ন করে থাকে। মনে রাখা উচিৎ, হালাল পশু-পাখি সাধারণ লোকদের জন্য সব সময় হালাল। এই দশকে রক্ত প্রবাহ করা যাবে না-মর্মে শরীয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর শরীয়া যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ মনে করাও নিষেধ।
◈ ৭-গরু বা উটে ভাগে কুরবানী করাকে সফরের সাথে নির্দিষ্ট মনে করাঃ
উট ও গরুতে শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া প্রমাণিত।
عن جابر بن عبد الله، قال: حججنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم، فنحرنا البعير عن سبعة، والبقرة عن سبعة. رواه مسلم
আবদুল্লার পুত্র জাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ করলাম। অতঃপর সাত জনের পক্ষে একটি উট নহর করলাম এবং সাত জনের পক্ষে একটি গাভী। [মুসলিম, অধ্যায়, হাজ্জ, অনুচ্ছেদ নং ৬২, হাদীস নং ৩৫১]
কিন্তু এই রকম ভাগে কুরবানী দেওয়াটা কেবল সফরের সাথে নির্দিষ্ট আর মুকীম অর্থাৎ নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারীরা ভাগে কুরবানী দিতে পারে না মনে করা একটি ভুল ফতোয়া। এমন পার্থক্য না তো হাদীস থেকে বুঝা যায় আর না কোনো সালাফ এমন বলেছেন আর না মুহাদ্দিস ও ফুকাহাগণ করেছেন। তাই এই বিষয়ে এমন পার্থক্য করা একটি অভিনব ও সালাফদের জ্ঞান ও বুঝের বিপরীত ফতোয়া। ফুকাহাদের মধ্যে কেবল লাইস এমন মন্তব্য করলে ইবনু হাযম বলেনঃ ‘এবং লাইস সফরে কুরবানীতে শরীক হওয়া বৈধ মনে করেন। আর এটা এমন তাখসীস/নির্দিষ্টকরণ যার কোন অর্থ হয় না’। [আল্ মুহাল্লা,৪/৩৮১]
প্রকাশ থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যাবতীয় কথা ও কাজ আম তথা ব্যাপক অর্থ বহন করে, যতক্ষণ তা কোনো কিছুর সাথে নির্দিষ্ট না করা হয়।
এটা প্রমাণিত যে, ইসলামে মুসাফিরের জন্য কিছু বিধানে কতিপয় ছাড় ও সুবিধা রয়েছে, যেমন সফর অবস্থায় নামায কসর করা, জুমআর নামায ফরজ না হওয়া, রোযা ছেড়ে দেয়া, মোজার উপর মাসাহ করার সময়-সীমা মুকীমের তুলনায় বেশী থাকা ইত্যাদি। এ জাতীয় যে সব বিষয়ে মুসাফিরের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে তা আমাদের পূর্ববর্তী উলামা ও ফকীহগণ বর্ণনা করে গেছেন কিন্তু তারা কেউই ভাগা কুরবানীকে সফরের বিধানের মধ্যে উল্লেখ করেন নি আর না এমন বলেছেন যে, মুসাফিরদের জন্য ছাড় হল যে, তারা ভাগা কুরবানী দিতে পারে।
◈ ৮-উট কিংবা গরু কুরবানী দেওয়ার সময় সাত ভাগের কোনো ভাগে আক্বীকা উদ্দেশ্য করা:
আক্বীকা একটি এমন ইবাদত, যার সময় নির্ধারিত আর তা হচ্ছে বাচ্চার জন্মের সপ্তম দিন। আর এক হাসান হাদীস অনুযায়ী সাত তারিখে না পারলে ১৪ তারিখে আর তাতেও সম্ভব না হলে ২১ তারিখে। [স্বাহীহুল জামি আস্ স্বগীর ৪০১১] এই ভাবে কুরবানীর সময়ও নির্ধারিত আর তা হল, যিল হজ্জ মাসের ১০ তারিখ এবং ১১, ১২ ও ১৩ তরিখ। যে সব ইবাদত বিশেষ দিন ও তারিখের সাথে সম্পর্কিত তা অন্য দিনে করলে বিদআত ও অগ্রহণীয় বিবেচিত হবে। তাই উপরোক্ত তারিখ ছাড়া অন্য দিনে কুরবানী দিলে কুরবানী হবে না; কারণ কুরবানীর দিন তারিখ শরীয়া কর্তৃক নির্ধারিত। এই ভাবে আক্বীকার দিন-তারিখও নির্ধারিত, তাহলে তা সেই সময়ে না করলে অন্য দিনে করলে কি ভাবে কবুল হতে পারে? শরীয়ত কি কারণ ছাড়াই সেই সময় নির্ধারণ করেছেন? অন্যদিকে যারা সেই নির্ধারিত সময়ে আক্বীকা না দিয়ে কুরবানীর দিনে কুরবানীর ভাগে আক্বীকা দেয়, তারা তাদের সন্তানের আক্বীকা দিতে আন্তরিক তো, না সুযোগের অপব্যবহার করে, কোনোরূপে দায়ভার থেকে মুক্তির চেষ্টা করে?
যারা এই বলে কুরবানীর ভাগায় আক্বীকা দেওয়ার পক্ষপাতী যে, দুটিই নৈকট্যের কাজ তাই একত্রে দেওয়া যায়। তাদের মনে রাখা উচিৎ যে, এমন মন্তব্য দলীলের মুকাবিলায় একটি কিয়াস/অনুমান, যা পরিত্যাজ্য এবং এটাও মনে রাখা উচিৎ যে, কোনও কাজ শুধু নৈকট্যের হলেই গ্রহণীয় হয় না যতক্ষণে তা নবীর তরীকায় সম্পাদন না করা হয়। আর কুরবানীর সাথে আক্বীকা দেওয়া নবীর তরীকা নয়।
◈ ৯-এমন মনে করা যে, একটি ছাগল কিংবা একটি ভেড়ার কুরবানী কেবল এক জনের পক্ষ থেকে হয়; একটি পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয় না:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ছাগল কুরবানী দিয়েছেন এবং সাহাবাগণও একটি ছাগল নিজ ও নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে যবাই করতেন, তাতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যাই হোক না কেন। আবু আইয়্যুব আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মানুষ তার ও তার বাড়ির সদস্যদের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী করতেন, নিজে খেতেন এবং অপরকে খাওয়াতেন’। [তিরমিযী, আযাহী অধ্যায়, নং (১৫০৫)/ইবনু মাজাহ]
উল্লেখ্য যে, সবচেয়ে উত্তম কুরবানী হচ্ছে, একটি পূর্ণ উটের কুরবানী অতঃপর একটি পূর্ণ গরুর কুরবানী অতঃপর একটি পূর্ণ ছাগল কিংবা ভেড়ার কুরবানী অতঃপর উট কিংবা গরুর এক অংশের কুরবানী। [মুগনী ১৩/৩৬৬]
◈ ১০-মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা:
এই প্রসঙ্গটির কয়েকটি দিক রয়েছেঃ
◆ ক- কোনো মৃতের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্ররূপে একটি আলাদাই কুরবানী দেওয়া। যেমন, একটি ছাগল বা গরু বা গরু কিংবা উটের কোনো বিশেষ এক-দুই ভাগ মৃতের জন্য দেয়া। মৃতের জন্য এমন স্বতন্ত্র কুরবানী বৈধ নয়। সত্যিকারে কুরবানীর সুন্নতটি জীবিতদের জন্য এটা মৃতদের জন্য নয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত প্রিয়া স্ত্রী খাদীজা (রাযিঃ), তাঁর মৃত প্রিয় চাচা হামযা (রাযিঃ) এবং মৃত প্রিয় সন্তানাদির কারোর পক্ষ থেকে কুরবানী দেন নি। বরং তিনি নিজের ও নিজ পরিবারে পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন।
◆ খ-এমন ব্যক্তি যে কাউকে মৃত্যুর পূর্বে অসীয়ত করে যায় যে, সে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে যেন সে কুরবানী দেয়, তাহলে সেই মৃত ব্যক্তির অসীয়ত অনুযায়ী এবং তার অসীয়ত বাস্তবায়নে কুরবানী করা বৈধ। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “অতঃপর যে ব্যক্তি তা শুনার পর অসীয়তে পরিবর্তন ঘটাবে, তবে তার গুনাহ তাদেরই উপর বর্তাবে, যারা তার পরিবর্তন ঘটাবে।” [সূরা বাক্বারা/১৮১]
আলী (রাযীঃ) হতে প্রমাণিত রয়েছে যে, তিনি দুটি ভেড়া কুরবানী দেন এবং বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে অসীয়ত করে গেছেন যেন আমি তার পক্ষ থেকে কুরবানী দেই, তাই আমি তার পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়ে থাকি”। [আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাদীটিকে শাইখ আলবানী যয়ীফ বলেছেন]
◆ গ-জীবিতদের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার সময় পরিবারের মৃতদেরও সওয়াবে ভাগিদার করার নিয়ত করা। এমন করা একটি বিতর্কিত বিষয়। কেউ এটাকে বৈধ বলেন আর কেউ অবৈধ। বৈধতার পক্ষে দলীল হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানী দিতেন ও বলতেনঃ “হে আল্লাহ! এটা মুহাম্মদের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে”। [মুসলিম] অথচ পরিবারের অনেকেই ইতিপূর্বে মৃত্যু বরণ করেছিল। আর যারা অবৈধ মনে করেন, তাদের নিকট দলীলটি স্পষ্ট নয় এবং তার পরে খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে এমন করা প্রমাণিত নয়। [শারহুল মুমতি ৭/৪৭৯-৪৮০]
◈ ১১-কুরবানীর সময় শুধু ১০ম যিল হজ্জকে মনে করাঃ
কুরবানীর সময় ১০ম যিল হজ্জে ঈদের নামায সমাপ্ত হলে শুরু হয় এবং তাশরীকের শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ ই যিল হজ্জের সূর্যাস্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম তারিখেই কুরবানী করতেন কিন্তু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এও বলেছেনঃ “এবং তাশরীকের সমস্ত দিন কুরবানীর দিন”। [আহমদ, স্বহীহুল জামি, আলবানী নং ৪৫৩৭]
তাই কোনো ব্যক্তি যদি ১০ম যিল হজ্জে কোনো কারণে কুরবানী না করতে পারে তাহলে, তাশরীকের যে কোনো দিনে কুরবানী করতে পারে।
◈ ১২-কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি তা দোষ যুক্ত হয়ে যায় (যেমন লেংড়া হয়ে যায়, কানা হয়ে যায়..) কিংবা মারা যায় কিংবা হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়, তাহলে তার পরিবর্তে কুরবানী দেওয়া জরুরি মনে করা:
উপরের বিষয়গুলি যদি কুরবানীদাতার অবহেলায় ও তার কারণে ঘটে। যেমন সেই পশুকে এমন ভাবে প্রহার করেছে যে, পা ভেঙ্গে গেছে বা চোখ অন্ধ হয়ে গেছে কিংবা খোলা মাঠে ছেড়ে রেখেছে তাই হারিয়ে গেছে কিংবা যেখানে মানুষ রাতে পশু রাখে সেখানে না রেখে গোয়াল ঘরের বাইরে খোলা স্থানে বেঁধে রাখার কারণে চুরি হয়ে গেছে কিংবা এমন উঁচু স্থানে বেঁধে রেখেছে যেখান থেকে পড়ার আশংকা ছিল, তাই পড়ে মারা গেছে , তাহলে তাকে তার পরিবর্তে অন্য কুরবানী দেওয়া জরুরি। আর যদি তা তার অবহেলায় না ঘটে বরং সে দোষ হীন পশু ক্রয় করেছিল কিন্তু ক্রয় করার পর দোষ যুক্ত হয়েছে, তাহলে তার উপর এর বদলে অন্য কুরবানী জরুরি নয়, সেটা দিলেই যথেষ্ট হবে। এই পার্থক্যের কারণ হল, কোনও পশু যখন কুরবানীর নিয়তে ক্রয় করা হয়, তখন সেটা কুরবানী করা পর্যন্ত তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। আর আমানতের বিধান হল, যদি আমানতদার নিজ অবহেলায় আমানত নষ্ট করে তাহলে তার উপর জামানত/দণ্ড জরুরি হয়। আর যদি তার অবহেলায় তা নষ্ট না হয়, তাহলে তার উপর দণ্ড জরুরি হয় না। [আল মুগনী,১৩/৩৭৩, শারহুল মুমতি,৭/৪৭৫-৪৭৬]
◈ ১৩-অমুসলিমকে কুরবানীর গোশত দেওয়া অবৈধ বা অপছন্দ মনে করাঃ
অমুসলিমকে তার অভাবের কারণে, প্রতিবেশী হওয়ার কারণে এমনকি তার মন জয় করার উদ্দেশ্যে তাকে কুরবানীর গোশত দান করা বা সাদাকা করা বৈধ। হ্যাঁ, তবে সে যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হয়, তাহলে তার বিধান ভিন্ন। [সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফতোয়া ১১/৪২৪]
◈ ১৪-জেনে-বুঝে দোষ যুক্ত পশু ক্রয় করাঃ
চার প্রকার দোষ ওয়ালা পশুর কুরবানী বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ চার প্রকার (দোষ থাকলে) কুরবানীতে বৈধ নয় –অন্য বর্ণনার শব্দে এসেছে যথেষ্ট নয় – স্পষ্ট টেরা, স্পষ্ট রোগা, স্পষ্ট খোঁড়া, অতি দুর্বল (অতি বয়সের কারণে মজ্জাহীন হাড় ওয়ালা) [আবু দাঊদ নং ২৮০২, তিরমিযী নং ১৪৯৭, নাসাঈ ৪৩৬৯]
এই দলীলের আলোকে এটাও বুঝা যায় যে, যেই পশুর দোষ এর থেকেও বেশী ও বড় সেসব পশুর কুরবানীও নাজায়েয। যেমন অন্ধ, পা ভাঙ্গা, চলতে অক্ষম ইত্যাদি।
উপরোক্ত দলীলের আলোকে এটাও বুঝা যায় যে, বর্ণিত দোষ থেকে নিম্ন পর্যায়ের দোষ থাকলে তার কুরবানী বৈধ কিন্তু উত্তম নয়। যেমন কান কাটা, শিং ভাঙ্গা, লেজ কাটা, চামড়া কাটা পশু। এমন দোষ থাকলে তা কুরবানীতে মাকরূহ।
এর পরেও অনেককে দেখা যায়, কিছু মানুষ স্পষ্ট খোঁড়া বা একেবারে বয়স্ক পশু কুরবানীর জন্য খরীদ করে!
◈ ১৫-কুরবানী জবাই করা সংক্রান্ত ভুল সমূহঃ
নিজে যবাই না করে অন্যের মাধ্যমে যবাই করা; অথচ কুরবানী একটি ইবাদত আর ইবাদত নিজে করা বেশী ভাল। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কুরবানী করতেন। তবে কেউ যদি যবাই করতে ভয় পায় বা ছুরি চালাতে না জনে তাহলে তার বিধান ভিন্ন।
অযু ছাড়া যবাই না করা; অথচ যবাই করার জন্য অযু না তো জরুরি আর না মুস্তাহাব। তাই যবাইয়ের উদ্দেশ্যে অযু জরুরি বা মুস্তাহাব মনে করা বিদআহ। [সউদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটি, ১১/৪৩৩-৪৩৫]
কুরবানীর পশুর সামনে ছুরি-চাকু ধার দেওয়া, পশুর সামনে উন্মুক্ত ভাবে তা ধারণ করা, এক অপরের সামনে যবাই করা, যবাই করার পর নিস্তেজ না হতেই চামড়া ছাড়ানো শুরু করা এবং নির্মম ভাবে যবাই করা মারূহ। [হাকেম, ত্বাবারানী, আহমদ, ইবনু মাজাহ (৩১৭২)]
অন্যের কুরবানী যবাই করার সময় তাঁদের নাম লেখা ও তা কুরবানীর পশু যবাই করার পূর্বে পড়া জরুরি মনে করা। যেমন, বলা যে এই গরুতে ৭ জনের নাম দেন। মনে রাখা উচিৎ, যে বা যারা কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশুটি ক্রয় করেছে এবং যত ভাগ কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তার সেই নিয়ত অনুযায়ী সে বদলা পাবে এবং তার নিয়ত আল্লাহ অবশ্যই জানেন।
এখন অন্য কোনো ব্যক্তি যদি তাদের কুরবানীটা যবাই করে দেয়, তাহলে সে শুধু কুরবানীদাতার পক্ষ থেকে যবাই করার কাজের প্রতিনিধি মাত্র। বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রকম ষাটাধিক সাহাবীর কুরবানী করেছিলেন, তাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নাম জিজ্ঞেস করেন নি যে, এটা কার কার পক্ষ থেকে, এই উটে তোমরা কতজন শরীক রয়েছো, নাম উল্লেখ কর, ইত্যাদি। বরং তিনি সাধারণ ভাবে যবাই করে গেছেন। তবে এটাও প্রমাণিত যে, তিনি অনেক ক্ষেত্রে যবাই করার পর বলতেনঃ “এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে যারা কুরবানী দেয় নি”। [আহমদ, আবু দাঊদ, তিরমিযী] তাই যার কুরবানী অন্য যবাই করছে, সে যবাই দেয়ার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবারের পর তার নাম বলতে পারে যে এটা অমুক বা অমুক অমুকের পক্ষ থেকে। কিন্তু যবাই করার পূর্বে তা বলার নিয়ম নেই।
কুরবানী দাতা সে একটি পূর্ণ পশু কুরবানী দিক বা ভাগা কুরবানী দিক কুরবানী দেওয়ার সময় সে তা নিজ ও পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে নিয়ত করবে। অর্থাৎ সেই কুরবানীর সওয়াব সকলে পাক, তা নিয়ত করবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাগল কুরবানী দেওয়ার পর বলেনঃ “হে আল্লাহ! এটা মুহাম্মদ, মুহাম্মদের পরিবার এবং মুহাম্মদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল কর”। [আহমদ, মুসলিম] এখন যারা প্রতি ভাগে একটা করে নাম নেয়, তারা বুঝাতে চায় যে, এটি এক জনের পক্ষ থেকেই হচ্ছে অন্যরা এর সওয়াব পাবে না; অথচ কুরবানীদাতা তার কুরবানীতে নিজ ও নিজ পরিবার সকলের সওয়াব কামনা করবে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন।
কুরবানীর পশু যবাই করার জন্য বিশেষ কোনো দুআ আছে মনে করা। অথচ সাধারণ পশু যবাই করার সময় যেমন আল্লাহর নাম নেওয়া জরুরি তেমন কুরবানীতেও তাই জরুরি। তাই ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে যবাই করলেই হয়ে গেল। যবাই করার পূর্বে (ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া…) বলা ও যবাই শেষে (আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল…) বলা মুস্তাব, জরুরি নয়।
‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে পশুর গলার চামড়া কেটে দিয়ে কশাইকে বাকি যবাই সম্পন্ন করতে দেওয়া। এটি আসলে কশাইর মাধ্যমে যবাই করা গণ্য হবে। কারণ শারঈ যবাই তখন হবে যখন, পশুর শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও এর দুই পাশের মোটা রগ দুটি কর্তন করা হবে। আর এখানে যবাইকারী ব্যক্তি শুধু চামড়া কাটে আর প্রকৃতপক্ষে যবাইর কাজ কশাই করে। অন্য দিকে এই সময় কশাই সাধারণতঃ আল্লাহর নাম নেয় না।
কশাইকে কুরবানীর গোশত দেওয়া নিষেধ বলতে কশাইকে কাজের মজুরি স্বরূপ দেওয়া নিষেধ বুঝায়। সে তার মজুরি হিসাবে টাকা কিংবা অন্য কিছু নিতে পারে। কিন্তু কুরবানীর গোশত যেমন অন্যকে দান হিসেবে দেয়া মুস্তাহাব তেমন তাকেও দেওয়া মুস্তাহাব।
কুরবানী যবাই করার পর পশুর রক্ত, গোবর, হাড়, চামড়া প্রভৃতি মাটির উপর যেখানে সেখানে ফেলে রাখা যাতে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং মানুষের কষ্ট হয় এমনকি পশুদেরও কষ্ট হয়।
◈ ১৬-কুরবানীর গোশত জরুরি ভিত্তিক তিন ভাগে বিভক্ত করে সমাজকে বিতরণ করতে দেওয়া:
কিছু সমাজে জরুরি ভিত্তিক এমন নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে যে, তাদের গ্রামে বা সমাজে যারাই কুরবানী দিবে, তাদেরকে অবশ্যই তাদের কুরবানীর গোশত তিন ভাগে বিভক্ত করতে হবে। অতঃপর এক ভাগ যতক্ষণ সামাজে জমা না দেওয়া হয় ততক্ষণ তারা বাড়িতে গোশত নিয়ে যেতে পারবে না বা এই ধরণের অন্য নিয়ম।
◉ প্রথমতঃ শরীয়া কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগে বিভক্ত করা জরুরি করে নি। “তোমরা নিজে খাও, অপরকে খাওয়াও এবং জমা রাখ”। [বুখারী, আযাহী, নং ৫৫৬৯] এবং অন্য হাদীস “তোমরা নিজে খাও, জমা রাখ এবং দান কর”। [মুসলিম নং ১৯৭১] এই হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে কুরবানীর গোশতের খাত বুঝা যায়, তা আবশ্যিক ভাবে তিনভাগে বিভক্ত করা বুঝায় না।
◉ দ্বিতীয়তঃ “অপরকে খাওয়াও বা সাদাকা কর” সম্বোধনটি প্রত্যেক কুরবানীদাতাকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে; সমাজ নেতাদের নয়। তাই কুরবানী দাতা নিজে কুরবানীর গোশতের বণ্টন করবে-এটাই হাদীসের মর্ম। কিন্তু সমাজ বিতরণ করার দায়িত্ব নিলে তাদের জন্য এটা বৈধ; তবে জরুরি নয়।
এই সামাজিক নিয়মের সমস্যা হল, তারা জোরপূর্বক মানুষের কাছ থেকে কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক জমা দেয়ার নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়। অথচ সাদাকা ও দান আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি মনে স্বেচ্ছায় না দিলে কবুল হয় না। অনুরূপ কারও কাছ থেকে কোনো কিছু জোরপূর্বক নেওয়া এবং তা দান করাও নিষেধ। তাই এই নিয়মে সাদাকা কারীর ইখলাস ও আন্তরিকতা থাকে না ‌বরং থাকে সামাজিকতার অবৈধ চাপ।
এই আবশ্যপালনীয় সামাজিক নিয়মের আর একটি সমস্যা হল, সমাজ যখন কুরবানীর গোশত জমা করে বিতরণ করে, তখন বিভিন্ন গ্রামের ফকির-মিসকিন উপস্থিত হয় এবং তাদের ভাগ্যে আসে দু-চার শ গ্রাম গোশত। তাই তাকে সেই দিনে আবারও ভিক্ষা করার ন্যায় ঘুরতে হয় পাঁ দশ গ্রাম। অথচ প্রত্যেক গ্রামে কুরবানীদাতা স্বয়ং যদি তার আশেপাশে বসবাসকারী পরিচিতদের দুই-চার জনকে গোশত বিতরণ করে এই ভাবে অন্যরাও বিতরণ করে তাহলে গ্রামের সকল অভাবীর বাসায় গোশত পৌঁছে যাবে। তাদেরকে সে দিন লজ্জা, কষ্ট, তিরষ্কার মাথায় নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
আরো একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে যা আমরা অনেকে অনুভব করি না। তা হল, অনেকে একটি ছাগল বা একটি গরুর ভাগ কুরবানী দেয়। তারা খুব বেশী তো ৮/১০ কেচিরেরে গোশত পায়। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বা আধা যদি সমাজিক নিয়মের কারণে তাদের দিতে হয়, তাহলে তার কাছে অবশিষ্ট থাকে ৫-৬ কে.জি.। এখন বাড়িতে-৭-৮ জন সদস্য সংখ্যা হলে অনুমান করুন তো তারা দু বেলা তৃপ্তি সহকারে গোশত খেতে পারবে কি? তারা নিজ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের দিতে পারবে কি? তাই এমন বহু লোক ভারাক্রান্ত মনে সমাজের নির্ধারিত অংশ জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে। অথচ এই দিনগুলি পানাহারের দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তাশরীকের দিনগুলি খান-পান ও আল্লাহর যিকরের দিন”। [মুসলিম, নং ১১৪১] তাই তারা প্রথমে আনন্দ করে খাবে এটা ঈদুল আযহার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। অতঃপর অন্যকেও দিবে। এমন লোক কুরবানী দাতা হলেও তাদের কুরবানীর গোশত হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া উচিৎ।
◈ ১৭-কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করাঃ
উল্লেখ্য যে, কুরবানীর পশুর সব কিছুই আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তাই তার কোনো অংশ বিক্রয় নিষেধ। যেমন তার গোশত বিক্রয় নিষেধ তেমন তার চামড়া বিক্রি করাও নিষেধ। আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা কুরবানীর উটের দায়িত্ব দেন এবং আদেশ করেন, যেন আমি সেই উটের গোশত, চামড়া, পরিধেয়, সাদাকা/দান করে দেই এবং কশাইকে তা থেকে কিছু না দেই”। [মুসলিম নং ১৩১৭]
তাই স্বয়ং কুরবানীদাতা কুরবানীর চামড়া দ্বারা উপকৃত হবে কিংবা ফকীর মিসকীনকে দান করে দিবে কিংবা কাউকে হাদিয়া করে দিবে। এটাই হবে চামড়ার সঠিক খাদ। কিন্তু যদি সমাজের অবস্থা এমন হয় যে, স্বয়ং কুরবানী দাতা তা ব্যবহার করতে জানে না কিংবা ফকীর মিসকীনরাও চামড়া নেয় না, তাহলে কি করণীয়? এমতাবস্থায় কুরবানীর চামড়া নষ্ট না করে যদি তা বিক্রয় করে অন্যকে দান করা হয়, তাহলে এটা প্রয়োজনার্থে ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বৈধ হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ যার মূল্য রয়েছে তা একেবারে নষ্ট করে দেয়ার চাইতে উপকৃত হওয়া ভাল। তাছাড়া এই ক্ষেত্রে কুরবানীদাতা স্বয়ং সেই চামড়ার মূল্য ভক্ষণকারী নয়; বরং সে সেই মূল্য সাদাকাকারী। হাসান, নাখঈ, আওযায়ী এবং ইমাম আবু হানীফা (রাহেঃ) কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং ইবনে উমার (রাযিঃ) এর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি চামড়া বিক্রি করতেন এবং তার মূল্য সাদাকা করতেন। [মুগনী, ইবনু কুদামাহ ১৩/৩৮২]
উল্লেখ্য যে, কুরবানীর চামড়ার মূল্যের খাত ব্যাপক। কারণ তা সাধারণ সাদাকার অন্তর্ভূক্ত। তাই তা ফকির, মিসকিনকে দেয়া সহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় যে কোনও সওয়াবের খাতে ব্যবহার করা যাবে। [আল্লাহই ভাল জানেন]

Thursday, May 28, 2020

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত:





আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আহলুস সুন্নাহর ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)’র উপদেশ:
প্রশ্ন: আমরা বাইতুল ফাক্বিহ শহর থেকে আহলুস সুন্নাহ’র যুব-সম্প্রদায়। আমাদের নিজেদের জন্যে কোনো ঈদগাহ নেই যেখানে আমরা ঈদের সালাত আদায় করতে পারি। তবে শহরের মধ্যে একটি সর্বজনীন ঈদগাহ রয়েছে, যেটির খতিব একজন সূফী, আর অন্যান্য এমন লোকেরা সেখানে রয়েছে যারা সুরূরী (আধুনিক যুগের অন্যতম খারিজী মুহাম্মাদ সুরূর যাইনুল ‘আবিদীনের অনুসারী)। একারণে আমরা পার্শ্ববর্তী আরেকটি শহরে যাই (ঈদের সালাত আদায়ের জন্য) যা আমাদের শহর থেকে ৫ কি.মি দূরে। তা করার কারণে আমরা আমাদের ভাইদের সমালোচনার সম্মুখীন হই, যারা বলে, “এটা মুসলিমদের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ ঘটানো।” সুতরাং, এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন।
উত্তর: আমরা তোমাকে তামাইয়ুযের (স্পষ্টরূপে স্বতন্ত্র হওয়া) ব্যাপারে নসিহত করছি। তুমি কীভাবে একজন সূফীর পেছনে সালাত আদায় করবে যে তার সূফিয়্যাহ প্রচার করে?! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে। তাও যদি না করতে পারে, তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯]
আর বিদ‘আতীদের থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এবং উপকারী ‘ইলম ও আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার নিকটবর্তী থাকার মাধ্যমে ফিতনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। বারাকাল্লাহু ফীক।
আর যারা তোমার এই কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে, হয় তারা আহলুস সুন্নাহ’র মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ইখওয়ানুল মুসলিমীনের (মুসলিম ব্রাদারহুড) সদস্য, আর না হয় তারা আহলুস সুন্নাহ, কিন্তু হিযবীদের ষড়যন্ত্রের সাথে পরিচিত না।
সুতরাং, আমরা আহলুস সুন্নাহ’র সবাইকে নসিহত করছি সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হতে (অর্থাৎ, বিদ‘আতীদের থেকে আলাদা হতে, ঈদের সালাত, জুম‘আহর সালাত এবং মাসজিদ বা মাসজিদের বাইরের অন্যান্য সালাতের ব্যাপারে)। আত-তামাইয়ুয একটি পরম প্রয়োজনীয়তা। এটা করার পর ইন-শা-আল্লাহ লোকজন আসবে (তোমাদের ঈদগাহে) যদি তোমরা এমন একজন খতিব নিয়োগ করো, যে ‘ইলমের দিক থেকে ততটুক উপকৃত হয়েছে, যতটুক হলে সে অন্যদের উপকৃত করতে পারে। আল্লাহ’র অনুমতিতে (ইচ্ছায়) লোকেরা আসবে, তোমাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং ওই সূফীকে বর্জন করবে।

সুতরাং, আমি আল্লাহ’র কাছে আহলুস সুন্নাহ’র এই ভাইদের ব্যাপারে একটি অভিযোগ করছি। হতে পারে সে একজন সুন্নী, যে কল্যাণ ভালোবাসে, কিন্তু সে এসব বলে (অর্থাৎ, বলে যে ওই সূফী ইমামের পেছনে ও অন্যান্য সুরূরীদের সাথে ঈদের সালাত আদায় না করে আলাদাভাবে সালাত আদায় করা হলো মুসলিমদের ঐক্যে বিভেদ ঘটানো)! যারা এটা বলে তাদেরকে বর্জন করো। আল্লাহ বলেন, “যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তোমাদের মাঝে ফিতনা-ফাসাদই বৃদ্ধি করত। আর তারা তোমাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দৌড়াদৌড়ি করে ফিরত।” [সূরাহ আত-তাওবাহ: ৪৭]
সুতরাং, আমরা বিদ‘আতী এবং রোগাক্রান্ত অন্তরের লোকদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। এবং আমরা রাসূলুল্লাহ’র (ﷺ) সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর মহান কিতাবে বলেন, “নিজেকে তুমি রাখবে তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে তাদের রাব্বকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, ফলে সে তার খেয়ালখুশির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে, তুমি তার আনুগত্য কোরো না।” [সূরাহ কাহফ: ২৮]
সুতরাং, বিদ‘আতীদের কথার ব্যাপারে আমরা ন্যূনতম চিন্তিতও নই। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত খুশি হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মতো বিদ‘আতী হয়ে যাও। সুতরাং, শুরু থেকেই আমরা নিজেদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি, আর আমরা বিদ‘আহ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখব। ওয়াল্লাহুল মুস্তা‘আন।
·
[ইমাম মুক্ববিলের ‘আল-ঈলাহ মিন
বাইতিল ফাক্বীহ’ নামক অডিয়ো ক্যাসেট থেকে]
·
উৎস: https://goo.gl/U8ZSsn
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম



Sunday, May 17, 2020

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য




পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
এক. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটা মালিকী, শাফি‘ঈ এবং হাম্বালী মাযহাবের মত। [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
দুই. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম। এটি হানাফী মাযহাবের মত। [ইমাম কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ), বাদাই‘উস সানা’ই‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
তিন. প্রয়োজন দেখা দিলে বা কল্যাণকর মনে হলে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ আছে। একটি অপ্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি মত। এই মতকে পছন্দ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮২-৮৩; বাদশাহ ফাহাদ বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
আমরা এই তিনটি মতের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্বানের মতটিকে অগ্রগণ্য ও সঠিক বলে থাকি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
·
এক. রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোতে স্রেফ খাদ্যদ্রব্যের কথা এসেছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা আসেনি। যেমন: ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطرِ صَاعًا مِن تَمرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أو عَبدٍ ذَكَرٍ أو أُنثَى مِنَ المُسلِمِينَ.
“প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নর-নারী, ছোটো-বড়ো সকল মুসলিমের ওপর আল্লাহ’র রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক তা এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
كُنَّا نُخرِجُ فِي عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَومَ الفِطرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ. وَقَالَ أبُو سَعيدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأقِطُ وَالتَّمرُ.
“আমরা আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা‘ঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর’।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১০]
রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
·
দুই. রাসূল ﷺ ফিতরাকে মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরজ করেছেন, অর্থস্বরূপ ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধকারীস্বরূপ এবং মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]
·
তিন. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো তা দলিলনির্ভর হতে হবে। সুতরাং কারও জন্য সেই ইবাদত করা জায়েজ নয়, যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরিয়তপ্রণেতা রাসূল ﷺ থেকে সাব্যস্ত হয়নি।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)] আর শরিয়তপ্রণেতা কর্তৃক অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়নি।
·
চার. রাসূল ﷺ এর যুগে মুদ্রার প্রচলন ছিল এবং অভাবী ব্যক্তির বিদ্যমানতাও ছিল। তখন স্বাভাবিকভাবেই অভাবী ব্যক্তিরা অর্থের মুখাপেক্ষী ছিল। এতৎসত্ত্বেও রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয়নি। আর এটি শরিয়তের একটি সুবিদিত মূলনীতি যে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ (لا يجوز تأخير البيان عن وقت الحاجة)। অর্থাৎ, প্রয়োজনের সময় হুকুম বর্ণনা করতে দেরি করা জায়েজ নয়। সুতরাং রাসূল ﷺ যেহেতু অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বৈধতা বর্ণনা করেননি, সেহেতু অর্থ দিয়ে তা আদায় করা শরিয়তসম্মত হবে না।
·
এখন আমরা আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া মতটির স্বপক্ষে আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণের বক্তব্য পেশ করব। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
১. শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন,
ولا يجزئ أن يجعل الرجل مكان زكاة الفطر عرضًا من العروض وليس كذلك أمر النبي عليه الصلاة والسلام.
“ফিতরার জায়গায় অর্থ বা খাদ্যমূল্য নির্ধারণ করলে তা যথেষ্ট হবে না। নাবী ﷺ এভাবে আদেশ দেননি।” [আল-মুদাওয়্যানাতুল কুবরা, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৮৫; গৃহীত: tasfiatarbia.org]
·
২. শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,
ولا يؤدي قيمته (يعني طعام الفطرة).
“আর ফিতরার খাদ্যমূল্য দিয়ে তা আদায় করবে না।” [ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) কিতাবুল উম্ম, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৭৪; দারুল ওয়াফা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৩. শাইখুল ইসলাম ইমামু আহলিস সুন্নাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,
ولا يعطي قيمته، قيل له: يقولون: عمر بن عبد العزيز كان يأخذ القيمة، قال: يدعون قول رسول الله ﷺ ويقولون قال فلان؟ قال ابن عمر: فرض رسول الله ﷺ. وقال الله: أطيعوا الله وأطيعوا الرسول. وقال قوم يردون السنن: قال وقال فلان.
“ফিতরার খাদ্যমূল্য প্রদান করবে না।” তখন তাঁকে বলা হলো, “তারা বলে, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয খাদ্যমূল্য গ্রহণ করতেন।” তখন তিনি (ইমাম আহমাদ) বললেন, “তারা আল্লাহ’র রাসূলের ﷺ কথা পরিত্যাগ করছে, আর বলছে, অমুক এটা বলেছেন?! ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ (ফিতরা) ফরজ করেছেন।” আর আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আল্লাহ’র আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।” (সূরাহ নিসা: ৫৯) অথচ একদল লোক সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে বলছে, অমুক বলেছেন, আর তমুক বলেছেন!” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
·
৪. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেছেন,
ومما ذكرنا يَتَّضِحُ لصاحب الحق أن إخراج النقود في زكاة الفطر لا يجوز ولا يجزئ عمن أخرجه؛ لكونه مخالفا لما ذُكر من الأدلة الشرعية.
“আমরা যে আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে, অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, আর যে ব্যক্তি অর্থ দিয়ে আদায় করে, তার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু তা উল্লিখিত শার‘ঈ দলিল বিরোধী।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২১১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৫. বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুজাদ্দিদ আল-ফাক্বীহুন নাক্বিদ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
الذين يقولون بجواز إخراج صدقة الفطر نقودًا هم مخطئون، لأنهم يخالفون النص.
“যারা বলেন, অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েজ, তারা ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তারা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধিতা করছেন।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর; ২৭৪ নং অডিয়ো ক্লিপ; সংগৃহীত: sahab.net]
·
৬. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
لا يجوز أن تُدفَعَ زكاة الفطر نقودا بأي حال من الأحوال، بل تدفع طعاما، والفقير إذا شاء باع هذا الطعام وانتفع بثمنه.
“অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। বরং তা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আদায় করতে হবে। তবে অভাবী ব্যক্তি চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে উপকৃত হতে পারবে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৭; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৭. সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
إخراج القيمة نقودًا عن صدقة الفطر؛ هذا لا يجزئ؛ لأنه خلاف ما أمر به النبي ﷺ، لأن الرسول ﷺ أمر بإخراجه من الطعام. ... هذا قول جمهور أهل العلم، والأئمة الثلاثة: مالكٍ والشافعيِّ وأحمدَ رحمهم الله، وأجاز أبو حنيفة –رحمه الله– إخراج القيمة، ولكن هذا خلاف النص واجتهاد مع النص، ولا يجوز الإجتهاد مع وجود النص، ولهذا لما سئل الإمام أحمد رحمه الله عن إخراج القيمة وأن فلانًا أفتى بإخراج القيمة قال رحمه الله: يدعون قول رسول الله ﷺ ويأخذون بقول فلان. فالواجب العمل بالنص.
“অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা (আদায় হিসেবে) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী ﷺ এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রাসূল ﷺ খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।... এটা অধিকাংশ ‘আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)’র মত। আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ। আর সুস্পষ্ট দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েজ নয়। একারণে যখন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং বলা হয় যে, অমুক (‘আলিম) ‘অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ’ ফাতওয়া দিয়েছেন, তখন তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা পরিত্যাগ করছে, আর অমুকের কথা গ্রহণ করছে!’ সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫; দারুল ‘আসিমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৮. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে,
في بلادنا زكاة الفطر تدفع مالًا بحجة أن المساكين لا يريدون حبوبًا وغيرها، فماذا نفعل؟
“আমাদের দেশে অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা হয় এ দলিলের ভিত্তিতে যে, মিসকীনরা শস্য চায় না। এক্ষেত্রে আমরা কী করব?”
শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
ليس الأمر للمساكين، هذه عبادة، تنفذ كما جائت عن الرسول ﷺ، والذي لا يريد الطعام هذا ليس بمحتاج، أعطه المحتاج الذي يريد الطعام.
“এটা মিসকীনদের কথা অনুযায়ী হবে না। এটি একটি ইবাদত। রাসূল ﷺ থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। আর যে খাদ্য চায় না, সে মূলত অভাবীই নয়। সুতরাং ফিতরা অভাবী ব্যক্তিকে দাও, যে খাদ্য চায়।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/12939.]
·
৯. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,
ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺗﻮﺯﻳﻊ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻧﻘﺪًﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻓﻴﻤﺎ ﻧﻌﻠﻢ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ.
“আমাদের জানামতে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী অর্থ দ্বারা ফিতরা বণ্টন করা জায়েজ নয়। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত।”
ফাত‌ওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ৯২৩১; প্রশ্ন নং: ৪; সংগৃহীত: alifta.net]
·
১০. স্থায়ী কমিটির আরেকটি ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,
ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻨﻘﻮﺩ ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺧﺮﺍﺝ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ.
“খাদ্যের পরিবর্তে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়। কেননা নাবী ﷺ খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; আল ইফতা ডট নেটে রমজান মাস সেকশনের ‘যাকাত ও ফিতরা’ অংশের ফাত‌ওয়া; প্রশ্ন নং: ৫; সংগৃহীত: alifta.net]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, বরং আবশ্যিকভাবে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয় জানার এবং তা যথাযথভাবে মানার তাওফীক্ব দান করুন।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...