Sunday, August 25, 2019

বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ


▌বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

এটি সুবিদিত যে, বিদ‘আত একটি গর্হিত অপরাধ এবং অন্যায় কাজ। বিদ‘আতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার জন্য এই দুটি হাদীসই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ:
ক. নাবী ﷺ বলেছেন, “(দ্বীনের মধ্যে) যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে সাবধান! কারণ প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয় হলো বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” [আবূ দাউদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]

·
খ. নাবী ﷺ বলেছেন, “আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। আমি তখন বলব, এরা তো আমারই উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না আপনার পরে এরা (দ্বীনের মধ্যে) কী সব নতুন নতুন কথা ও কাজ (বিদ‘আত) সৃষ্টি করেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে, তারা দূর হও, দূর হও!” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫৮৩-৬৫৮৪]

আর মহান আল্লাহ বলেছেন, لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ، كَانُواْ لاَ يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাঊদ ও মারইয়াম তনয় ‘ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতইনা নিকৃষ্ট!” [সূরাহ মাইদাহ: ৭৮-৭৯]

·
ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,

أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ الصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ.‏ فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ.

“মারওয়ান সর্বপ্রথম ‘ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুত্ববাহ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করেন। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, খুত্ববাহ’র আগে সালাত (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। তখন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ওই ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গৰ্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) তা পরিবর্তন করে, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ‏.

“আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবীকেই কোনো উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সঙ্গী ছিল। তারা তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। তারপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর (দ্বীনের ব্যাপারে) যা করে, তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি (অর্থাৎ, বিদ‘আত)। অতএব যে ব্যক্তি তাদেরকে হাত (শক্তি) দ্বারা মোকাবিলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যক্তি জবান দারা মোকাবিলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা মোকাবিলা করবে সেও মু’মিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫০; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

·
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম,
إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم.
“অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)– বলা আমার কাছে খুব ভারী মনে হয়।” আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,
واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ.
“জেনে রেখো, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হয় ব্যক্তি পথ ভুল করেছে, অথচ সে স্রেফ কল্যাণের অভিলাষীই ছিল। এক্ষেত্রে তাঁর ভুলের অনুসরণ করা যাবে না। নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর না হয় ব্যক্তি সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] পূর্বোক্ত কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,

هذا الذي خرج عن الحق متعمدًا لا يجوز السكوت عنه بل يجب أن يكشف أمره ويفضح خزيه حتى يحذره الناس ولا يقال: الناس أحرار في الرأي، حرية الكلمة، إحترام الرأي الآخر، كما يدندنون به الآن من إحترام الرأي الآخر فالمسألة ليست مسألة أرآء المسألة مسألة إتباع نحن قد رسم الله لنا طريقًا واضحًا وقال لنا سيروا عليه حينما قال وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [ الأنعام: ١٥٣] فأي شخصٍ يأتينا ويريد منا أن نخرج عن هذا الصراط فإننا: أولا نرفض قوله. وثانيا :نبين ونحذر الناس منه ولا يسعنا السكوت عنه، لأننا إذا سكتنا عنه اقترّ به الناس، لاسيما إذا كان صاحب فصاحة ولسان وقلم وثقافة فإن الناس يغترون به فيقولون هذا مؤهل هذا من المفكرين كما هو حاصل الآن فالمسألة خطيرة جداً.
وهذا فيه وجوب الرد على المخالف عكس ما يقوله أولئك يقولون اتركوا الردود دعوا الناس كل له رأيه واحترامه وحرية الرأي وحرية الكلمة بهذا تهلك الأمة فالسلف ما سكتوا عن امثال هؤلاء بل فضحوهم وردوا عليهم لعلمهم بخطرهم على الأمة، نحن لا يسعنا ان نسكت على شرهم بل لابد من بيان ما أنزل الله وإلا فأننا نكون كاتمين من الذين قال الله فيهم: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ [البقرة: ١٥٩] فلا يقتصر الأمر على المبتدع بل يتناول الأمر من سكت عنه فإنه يتناوله الذم والعقاب لأن الواجب البيان والتوضيح للناس وهذه وظيفة الردود العلمية المتوفرة الآن في مكتبات المسلمين كلها تذب عن الصراط المستقيم وتحذر من هؤلاء فلا يروج هذا الفكرة فكرة حرية الرأي وحرية الكلمة واحترام الآخر إلا مضلل كاتم للحق نحن قصدنا الحق ما قصدنا نجرح الناس نتكلم في الناس القصد هو بيان الحق وهذه أمانة حمّلها الله العلماء فلا يجوز السكوت عن أمثال هولاء لكن مع الأسف لو يأتي عالم يرد على أمثال هولاء قالوا هذا متسرع إلى غير ذلك من الوساوس فهذا لا يخذّل أهل العلم أن يبينوا شر دعاة الضلال لا يخذلونهم.

“যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হক থেকে বেরিয়ে গেছে, তার ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। বরং তার বিষয়টি প্রকাশ করা এবং তার রহস্য উন্মোচন করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ তার থেকে সতর্ক থাকতে পারে। একথা বলা হবে না যে, মানুষ তার মতপ্রকাশে স্বাধীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে। যেমন তারা ইদানীং ‘অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে’ বলে বকবক করছে। এটি নানাজনের মতামতের ইস্যু নয়। এটি ইত্তিবা‘ তথা অনুসরণের ইস্যু। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্পষ্ট পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে ওই পথে চলতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করো।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)

সুতরাং যে ব্যক্তিই আমাদের কাছে আসে এবং চায় যে, আমরা এই পথ থেকে বের হয়ে যাই, আমরা প্রথমত তার কথা প্রত্যাখান করব। দ্বিতীয়ত, আমরা বিষয়টি বর্ণনা করব এবং তার থেকে মানুষকে সতর্ক করব। আমাদের কাছে তার ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। কেননা আমরা যদি তার ব্যাপারে চুপ থাকি, তাহলে মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে। বিশেষত সে যখন বাগ্মিতা, ক্ষুরধার লেখনী ও উচ্চশিক্ষার অধিকারী হয়। কেননা মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে, আর বলবে—ইনি তো যোগ্য লোক, ইনি একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ইত্যাদি। যেমনটি বর্তমানে হচ্ছে। সুতরাং এটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়।

এতে আমাদের জন্য শরিয়ত বিরোধীকে রদ করার আবশ্যকীয়তার বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যের বিপরীতে, যারা বলে, ‘তোমরা রদ করা বাদ দাও এবং সকল মানুষকে দা‘ওয়াত দাও, প্রত্যেকের মতামতের সম্মান রয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, একারণে উম্মত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’ সালাফগণ ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকেননি। বরং তাঁরা তাদের বিষয় প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে রদ করেছেন। কারণ তাঁরা জানতেন, উম্মতের জন্য ওরা কতটা বিপজ্জনক।

আমাদের নিকটেও তাদের অনিষ্টের ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। বরং আবশ্যিকভাবে আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান বর্ণনা করতে হবে। নতুবা আমরা শরিয়ত গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যে সব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯)

বিষয়টি শুধু বিদ‘আতীর উপরই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে বিদ‘আতীর ব্যাপারে চুপ থেকেছে, বিষয়টি তাকেও শামিল করে। উল্লিখিত ভর্ৎসনা ও শাস্তি তাকেও শামিল করে। কেননা মানুষের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব। বর্তমানে মুসলিমদের লাইব্রেরিগুলোতে বিদ্যমান পর্যাপ্ত ‘ইলমী রুদূদের (রিফিউটেশনস) সকল গ্রন্থ সিরাত্বে মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথকে ডিফেন্ড করে এবং ওই ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক করে। সুতরাং এই মতবাদ –সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতের সম্মান আছে ইত্যাদি বলার মতবাদ– হককে গোপনকারী এবং অন্যকে পথভ্রষ্টকারী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ প্রচার করে না।

আমরা হক বর্ণনা করতে চাই। আমরা মানুষকে জারাহ করা, বা মানুষের সমালোচনা করার অভিলাষ করি না। আমাদের অভিলাষ তো স্রেফ হক বর্ণনা করা। এটি একটি আমানত, যা আল্লাহ ‘আলিমদের উপর অর্পণ করেছেন। সুতরাং ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকা না-জায়েজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো ‘আলিম এসে ওদের মত ব্যক্তিদের রদ করলে তারা বলে, ‘ইনি তাড়াহুড়া করছেন’ ইত্যাদি কুমন্ত্রণামূলক কথাবার্তা। সুতরাং কেউ ‘আলিমদেরকে পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অনিষ্ট মানুষের কাছে বর্ণনা করতে বারণ করবে না, তাঁদেরকে (এ থেকে) বারণ করবে না।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৫; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

ومثل أئمة البدع من أهل المقالات المخالفة للكتاب والسنة، أو العبارات المخالفة للكتاب والسنة، فإن بيان حالهم وتحذير الأمة منهم واجب باتفاق المسلمين، حتى قيل لأحمد بن حنبل: الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ فقال: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.
فبيّن أن نفع هذا عام للمسلمين في دينهم من جنس الجهاد في سبيل الله، إذ تطهير سبيل الله ودينه ومنهاجه وشرعته ودفع بغي هؤلاء وعدوانهم على ذلك واجب على الكفاية باتفاق المسلمين، ولولا من يقيمه الله لدفع ضرر هؤلاء لفسد الدين، وكان فساده أعظم من فساد استيلاء العدو من أهل الحرب، فإن هؤلاء إذا استولوا لم يفسـدوا القلوب وما فيها من الدين إلا تبعاً، وأما أولئك فهم يفسدون القلوب ابتداءً.

“যেমন কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য বা কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী কথার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত বিদ‘আতের ইমামগণ। তাদের অবস্থা বর্ণনা করা এবং উম্মাহকে তাদের থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এমনকি আহমাদ বিন হাম্বালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “একজন ব্যক্তি সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে, ই‘তিকাফ করে– সে আপনার কাছে অধিক প্রিয়, না কি সে ব্যক্তি যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?” তখন তিনি বলেন, “যখন সে সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তখন সে তা নিজের জন্য করে। আর যখন সে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে, তখন সে তা মুসলিমদের জন্য করে; সুতরাং এটি উত্তম।”

তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মুসলিমদের জন্য তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে এই কাজের উপকারিতা ব্যাপক, যা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহ’র রাস্তা, দ্বীন, মানহাজ ও শরিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং এর উপর এদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকে প্রতিহত করা মুসলিমদের ঐক্যমতে ওয়াজিবে কিফায়াহ। [ওয়াজিবে কিফায়াহ’র অর্থ: উম্মাহ’র কতিপয় আদায় করলে, বাকিদের উপর থেকে তা আদায় না করার পাপ ঝরে পড়ে। – সংকলক।] আল্লাহ যদি কতিপয় ব্যক্তিকে এদের অনিষ্ট প্রতিহত করতে নিয়োগ না করতেন, তাহলে অবশ্যই দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত। যেহেতু এর অনিষ্ট শত্রু যোদ্ধাদলের কাছে পরাভূত হওয়ার অনিষ্ট থেকেও বেশি। কেননা তারা যখন পরাভূত করে, তখন তারা (মানুষের) অন্তর এবং অন্তরিস্থ দ্বীনকে নষ্ট করে না; তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের দ্বীন নষ্ট করে, তবে তার কথা ভিন্ন। পক্ষান্তরে এরা শুরুতেই মানুষের অন্তরকে নষ্ট করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১-২৩২; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]

·
বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

فالواجب على علماء المسلمين توضيح الحقيقة ومناقشة كل جماعة أو جمعية ونصح الجميع بأن يسيروا في الخط الذي رسمه الله لعباده ودعا إليه نبينا محمد ﷺ، ومن تجاوز هذا أو استمر في عناده لمصالح شخصية أو لمقاصد لا يعلمها إلا الله- فإن الواجب التشهير به والتحذير منه ممن عرف الحقيقة، حتى يتجنب الناس طريقهم وحتى لا يدخل معهم من لا يعرف حقيقة أمرهم فيضلوه ويصرفوه عن الطريق المستقيم الذي أمرنا الله باتباعه في قوله جل وعلا: وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.

“মুসলিমদের ‘আলিমদের উপর প্রকৃত বিষয় বর্ণনা করা, প্রত্যেক দল বা সংগঠনের সাথে (শার‘ঈ) বিতর্ক সম্পন্ন করা এবং সবাইকে ওই পথের উপর চলতে নসিহত করা ওয়াজিব, যে পথ স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য চিত্রিত করেছেন, আর যে পথের দিকে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে আহ্বান করেছেন। যে ব্যক্তি এই পথের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বা কেবল আল্লাহ জানেন এমন কোনো (গুপ্ত) উদ্দেশ্যের কারণে নিজের জিদ ও হঠকারিতায় অটল থাকে, তাহলে যারা প্রকৃত বিষয়টি জানে তাদের জন্য ওই ব্যক্তির সমালোচনা করা এবং তার থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ এই ব্যক্তিদের পথ বর্জন করে, আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বিষয় জানে না সে তাদের দলে প্রবেশ না করে। নতুবা তারা ওই অজ্ঞ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। যেই সঠিক পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,

ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﺴﻜﻮﺕ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻟﻠﻔﺎﺟﺮ ﻭﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻉ ﻭﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﻏﻠﻂ ﻋﻈﻴﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻧﺘﺸﺎﺭ ﺍﻟﺸﺮ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﺧﺘﻔﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﻗﻠﺘﻪ ﻭﺧﻔﺎﺀ ﺍﻟﺴﻨﺔ. ﻓﺎﻟﻮﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﻜﻠﻤﻮﺍ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻭﻳﺪﻋﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻨﻜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭﻳﺤﺬﺭﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻭﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﻭﺑﺼﻴﺮﺓ.

“পাপাচারী, মূর্খ ও বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা ‘আলিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা এটি একটি মারাত্মক গলত। এটি অকল্যান ও বিদ‘আত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটি কল্যাণ কমে যাওয়া, কল্যাণ দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং ‘আলিমদের জন্য হক বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বাতিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শার‘ঈ ‘ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৩]

·
❏ যারা বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ولو سكت أهل الحق عن بيانه: لاستمر المخطئون على أخطائهم، وقلدهم غيرهم في ذلك، وباء الساكتون بإثم الكتمان الذي توعدهم الله في قوله سبحانه: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
وقد أخذ الله على علماء أهل الكتاب الميثاق لتبيننه للناس ولا تكتمونه، وذمهم على نبذه وراء ظهورهم، وحذرنا من اتباعهم.
فإذا سكت أهل السنة عن بيان أخطـاء من خالف الكتاب والسنة شَـابَهُوا بذلك أهل الكتاب المغضوب عليهم والضالين.

“হকপন্থিরা যদি হক বর্ণনা করা থেকে চুপ থাকে, তাহলে ভুলকারীরা তাদের ভুলে অটল থাকবে এবং অন্যরা সেই ভুলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। আর নীরবতা অবলম্বনকারীরা শরিয়ত গোপনের পাপ বহন করবে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তাদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

আল্লাহ আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ‘আলিমদের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা তা মানুষের কাছে বর্ণনা করবে, গোপন করবে না। কিন্তু তারা সে অঙ্গীকার তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলার কারণে আল্লাহ তাদের ভর্ৎসনা করেছেন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করেছেন।

কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধীদের ভুল বর্ণনা করা থেকে আহলুস সুন্নাহ যদি চুপ থাকে, তাহলে তারা এর মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে, যে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩]

·
❏ বিদ‘আতীদের রদ না করে তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত:

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يقول السَّائل: هل عدم الرَّد على أهل البدع وكتمان باطلهم والدِّفاع عنهم يعتبر من الغشّ للمسلمين؟

“প্রশ্নকারী বলছেন, বিদ‘আতীদের রদ না করা, তাদের বাতিল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদেরকে ডিফেন্ড করা কি মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত হবে?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

هذا من أكبر الغش للمسلمين، السكوت على أهل البدع وعدم بيان بدعهم هذا من الغش للمسلمين، فإذا انضاف إلى هذا أنه يمدحهم ويثني عليهم فهذا أشد وأنكر والعياذ بالله، فالواجب على من عنده علم أن يُبَيِّن البدع والمحدثات وأن ينهى عنها ويُحذِّر منها ولا يسكت،السكوت هذا من الكتمان ﴿إِنَّ الذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ البَيِّنَاتِ وَالهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ إِلَّا الذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾ لا يجوز للمسلم الذي عنده علم أن يسكت على البدع والمخالفات ولا يُبَيِّنُها للناس لأنه إذا سكت احتجَّ الناس به وقالوا لو كان هذا محرمًا أو ممنوعًا ما سكت العالم الفلاني وهو يراه، نعم.

“এটি মুসলিমদের সাথে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদের বিদ‘আত বর্ণনা না করা মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। আর যখন এর সাথে এটা যুক্ত হয় যে, সে তাদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করছে, তখন তা হয় অধিক ভয়ানক ও গুরুতর। সুতরাং যার ‘ইলম আছে, তার উপর ওয়াজিব হলো বিদ‘আতসমূহ বর্ণনা করে তা থেকে নিষেধ ও সতর্ক করা এবং এ ব্যাপারে চুপ না থাকা। কেননা চুপ থাকা শরিয়ত গোপন করার অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

যে মুসলিমের কাছে ‘ইলম আছে, তার জন্য বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধিতার ব্যাপারে চুপ থাকা এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করা বৈধ নয়। কেননা সে যদি চুপ থাকে, তাহলে মানুষ তা দলিল হিসেবে গ্রহণ করবে এবং বলবে, “এটা যদি হারাম বা নিষিদ্ধই হত, তাহলে অমুক ‘আলিম তা দেখা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতেন না”।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=122996 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ আমাদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক থাকার, অন্যদের সতর্ক করার এবং যারা বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক করা থেকে বারণ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Friday, August 23, 2019

বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?


▌বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

কতিপয় বিদ‘আতী একটি অদ্ভুত অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। তারা বলে, বর্তমান যুগের পরিস্থিতি সালাফদের যুগের পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন। সুতরাং সালাফদের মানহাজ তাঁদের যুগের জন্য উপযোগী হলেও, বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী নয়। অর্থাৎ, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগের জন্য পারফেক্ট নয়। ধূর্ত বিদ‘আতীদের এই অভিনব কৌশল কতইনা নিকৃষ্ট! আল্লাহ’র কাছে এদের থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
সালাফী মানহাজের ব্যাপারে ধূর্ত বিদ‘আতীদের এ জাতীয় কূটকৌশলের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

ومنهم من يقول لسنا مكلفين بفقه السلف وعلم السلف، لسنا مكلفين نشق طريقنا نحن، نستنبط الأحكام من جديد، نوجد لنا فقهاً جديداً هذه فقه قديم، فقه السلف فقه قديم، ويقولون ما يصلح لهذا الزمان هو صالح لزمانهم، زماننا غير فيزهدون في فقه السلف، ويدعون إلى فقه جديد، كثر هذا في الجرائد والمجلات من الكُتاب وأهل الضلال، يريدون أن يفلتوا أيدينا من منهج السلف، لأننا إذا لم نعرف مذهب السلف وزهدنا به ولم ندرسه، فإنه لا يكفي الانتساب إلى السلف من غير علم ومن غير بصيرة بمذهبه، هذا ما يريدون منه، يريدون أن نترك مذهب السلف وفقه السلف وعلم السلف ونحدث فقهاً جديدا كما يقولون يصلح لهذا الزمان مع أن هذا كذب، وشريعة الإسلام صالحة لكل زمان ومكان إلى أن تقوم الساعة.
فمنهج السلف صالح لكل زمان ومكان، نور من الله عز وجل، لا يزهدك فيه كلام هؤلاء المخذلين أو الضالين لا يزهدك فيه.
الإمام مالك رحمه الله يقول: «لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها»، الذي أصلحها أولها ما هو؟
هو الكتاب والسنة واتباع الرسول صلى الله عليه وسلم، العمل بالقرآن والعمل بالسنة هذا هو الذي أصلح أول الأمة ولا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها.

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “আমরা সালাফদের ফিক্বহ ও সালাফদের ‘ইলমের ব্যাপারে শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা এর আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা নিজেরাই আমাদের রাস্তা তৈরি করব। আমরা নতুন করে বিধিবিধান উদ্ঘাটন করব। আমরা আমাদের জন্য নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করব। এগুলো প্রাচীন ফিক্বহ। সালাফদের ফিক্বহ হলো প্রাচীন ফিক্বহ।” তারা বলে, “এটি (সালাফদের ফিক্বহ) এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, এটি তাদের যুগের জন্য উপযোগী ছিল, আমাদের যুগ ভিন্নতর।” তারা সালাফদের ফিক্বহ ত্যাগ করতে বলে, আর নব্য ফিক্বহের দিকে আহ্বান করে। বিভিন্ন কলামিস্ট ও পথভ্রষ্টদের মাধ্যমে এই বিষয়টি পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আমাদের হাতকে সালাফদের মানহাজ থেকে মুক্ত করতে চায়।

কেননা আমরা যখন সালাফদের মানহাজ জানব না, সে ব্যাপারে অনাগ্রহী হব এবং তা অধ্যয়ন করব না, তখন সালাফদের মানহাজের ব্যাপারে না জেনে সালাফদের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করা যথেষ্ট হবে না। আর তারা এটাই চায়। তারা চায় যে, আমরা সালাফদের মানহাজ, ফিক্বহ ও ‘ইলম পরিত্যাগ করি, আর তাদের ভাষ্য মোতাবেক এই যুগের জন্য উপযোগী নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করি, যদিও তাদের ভাষ্য মিথ্যা। ইসলামী শরিয়ত কিয়ামত অবধি সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। এটি মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আগত নূর (জ্যোতি)। ওই নিরাশকারী ভ্রষ্টদের কথা যেন তোমাকে এ থেকে অনাগ্রহী না করে।

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।” এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, সেটা কী? তা হলো কিতাব, সুন্নাহ এবং রাসূল ﷺ এর অনুসরণ। কুরআনের প্রতি আমল এবং সুন্নাহ’র প্রতি আমল। এটাই এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছে। আর এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই পারে এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফিস সালিহি ওয়া হাজাতুল উম্মাতি ইলাইহি”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/15030.]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবুল হারিস মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুর রহমান বিন আবূ যি’ব—ইবনু আবী যি’ব নামে প্রসিদ্ধ—(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৯ হি.] বলেছেন,

إن الحق لا تنقله الأزمان عن مواضعه ، ولا تغيره عن وجهه.

“নিশ্চয় যুগসমূহ হককে তার যথাস্থান থেকে স্থানান্তরিত করে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা থেকেও তাকে পরিবর্তিত করে না।” [ইমাম আবূ সুলাইমান আর-রাব‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-জুয’উ ফীহি মিন আখবারি ইবনি আবী যি’ব; পৃষ্ঠা: ৫৮; মুআসসাসাতুর রাইয়্যান, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); গৃহীত: সাহাব ডট নেট]

অর্থাৎ, হক অপরিবর্তিত। হক সকল যুগের জন্যই উপযোগী। সুতরাং আধুনিক যুগে সালাফদের মানহাজ অনুপযোগী, এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

·
ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] —যিনি কিনা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছাকাছি যুগের মানুষ ছিলেন এবং ইমাম আহমাদের ছাত্রদের ছাত্র ছিলেন—বলেছেন,

فانظر رحمك الله كلّ من سمعت من كلامه من أهل زمانك خاصة فلا تَعْجَلَّنَ، ولا تدخلنّ في شيء منه حتى تسأل وتنظر هل تكلم فيه أحد من أصحاب النبي ﷺ ورضي الله عنهم أو أحد من العلماء؟ فإن وجدت فيه أثراً عنهم فتمسك به، ولا تُجاوزه لشيء، ولا تختار عليه شيئاً فتسقط في النار.

“আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি যাদের কথা শুনো, তাদের প্রত্যেককে লক্ষ করো, বিশেষ করে তোমার যুগের লোকদেরকে। তুমি তাড়াহুড়া কোরো না। তুমি তাদের কোন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না তুমি প্রশ্ন করছ, আর লক্ষ করছ যে, এ ব্যাপারে কি নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ, অথবা (নির্ভরযোগ্য ও সালাফদের মানহাজের অনুসারী এমন) ‘আলিমদের কেউ কথা বলেছেন? তুমি যদি এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো কথা পাও, তাহলে তা আঁকড়ে ধরো। তুমি কোনো কিছুর জন্যই তা অতিক্রম কোরো না। তুমি তার ওপর কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিয়ো না। নতুবা তুমি জাহান্নামে পতিত হবে।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

ইমাম বারবাহারী’র ওপর আল্লাহ রহম করুন। তাঁর কথা পড়ে মনে হচ্ছে, তিনি যেন কথাগুলো এই যুগের ধূর্ত বিদ‘আতীদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন।

·
❏ বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইখওয়ানী দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূরের কুফরি বক্তব্য ও তার জবাব:

সুরূরিয়্যাহ মানহাজের প্রবক্তা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূর বিন নায়িফ যাইনুল ‘আবিদীন [মৃত: ২০১৬ খ্রি.] বলেছেন,

نظرت في كتب العقيدة فرأيت أنها كتبت في غير عصرنا وكانت حلولاً لقضايا ومشكلات العصر الذي كتبت فيه رغم أهميتها ورغم تشابهه المشكلات أحياناً، ولعصرنا مشكلاته التي تحتاج إلى حلول جديدة، ومن ثم فأسلوب كتب العقيدة فيه كثير من الجفاف لأنها نصوص وأحكام، ولهذا أعرض معظم الشباب عنها وزهدوا بها.

“আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে, এগুলো আমাদের যুগে লেখা হয়নি। এগুলো সে যুগের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকারী ছিল, যে যুগে এগুলো কখনো কখনো তার গুরুত্ব এবং (সে সময়ের) সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার কারণে লেখা হয়েছিল। আমাদের যুগেরও বিভিন্ন সমস্যা আছে, যেগুলো নতুন সমাধানের মুখাপেক্ষী। আর ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” [মুহাম্মাদ সুরূর, মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৫; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا غلط عظيم كتب العقيدة: الصحيح أنها ليست جفاءً، قال الله، قال الرسول. فإذا كان يصف القرآن والسنة بأنها جفاء؛ فهذا رِدَّة عن الإسلام، هذه عبارة سقيمة خبيثة.

“এটি একটি মহাভুল। সঠিক কথা হলো—‘আক্বীদাহর বইপুস্তক বাতিল নয়। এগুলো স্রেফ ক্বালাল্লাহ, আর ক্বালার রাসূল (আল্লাহ ও রাসূলের কথা)। সে যদি কুরআন-সুন্নাহকে বাতিল বলে থাকে, তবে তা ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল। এটি একটি নোংরা রোগাগ্রস্ত কথা।”
এছাড়াও তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “বইটিতে যদি এই কথা থেকে থাকে, তাহলে তা বিক্রি করা না-জায়েজ। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক (إن كان فيه هذا القول فلا يجوز بيعه، ويجب تمزيقه)।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রদত্ত “আফাতুল লিসান”– শীর্ষক লেকচার; লেকচার প্রদানের তারিখ: ২৯শে যুলহাজ্ব, ১৪১৩ হিজরী; অনূদিত অংশের সময়: ৩৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড থেকে ৩৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত; লেকচার লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=QfoTo2MVqnY (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا القائل من دعاة الضلال؛ نسأل الله العافية فيجب أن نَحْذَر من كتابه هذا، وأن نُحذِّر منه. وأذكر لكم أن الشيخ محمد أمان الجامي – وفقه الله – قد أملى شريطًا كاملاً على هذه الكلمة «أن كتب العقيدة نصوص وأحكام …» رد عليه ردًا بليغًا فعليكم أن تبحثوا عن الشريط وأن تنشروه بين المسلمين، حتى يحذروا من هذا الخبث، ومن هذا الشر الوافد إلى بلاد المسلمين.
نعم؛ هذا شريط قيم جدًا، جزا الله خيرًا شيخنا الشيخ محمد أمان الجامي، ونصر به الإسلام والمسلمين.

“এই কথার কথক পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা আল্লাহ’র কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তার এই বই থেকে সতর্ক থাকা এবং (মানুষকে) তা থেকে সতর্ক করা আবশ্যক। আমি তোমাদেরকে বলছি, শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (আল্লাহ তাঁকে তাওফীক্ব দান করুন) এই কথা—“আক্বীদাহর বইপুস্তক স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান”– এর ব্যাপারে তাকে পূর্ণরূপে রদ করে একটি অডিও ক্লিপ (টেপ/ক্যাসেট) বের করেছেন। তোমাদের জন্য এই অডিও ক্লিপটি খুঁজে বের করে তা মুসলিমদের মধ্যে প্রচার করা আবশ্যক। যাতে করে মুসলিমরা এই দুষ্কর্ম এবং মুসলিমদের দেশে আগত এই অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
হ্যাঁ, এটি খুবই মূল্যবান একটি অডিও ক্লিপ। আল্লাহ আমাদের শাইখ আশ-শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের উপকৃত করুন।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৯; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
ইয়েমেনের প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৬ হি./২০১৫ খ্রি.] সুরূরিয়্যাহ মানহাজের ভুলত্রুটি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন,

المأخذ الأول : ولاؤهم لمحمد سرور وقد قال : كلمة (الكفر)، وهذه الكلمة هي التي ذكرها في كتابه «منهج الأنبياء في الدعوة إلى الله»، إذ قال : «نظرت في كتب العقيدة ... إلى أن قال: فرأيت أن أسلوبها فيه كثير من الجفاف ، لأنها نصوص وأحكام ولهذا أعرض عنها معظم الشباب» وهذه الكلمة لما سُئل عنها الشيخ ابن عثيمين قال هذه الكلمة كفر، ولما سئل عنها الشيخ الفوزان قال : هذا كفر، من قال هذا ؟! قالوا هذا محمد سرور قال : هذا رجل خبيث، ولما سئل عنها الشيخ ابن باز – إلا أنها حرفت على السائل – بكلمة (جفاء) بدل (جفاف) فقال : هذه ردة وكلمة خبيثة قالوا يا شيخ ما حكم بيع هذا الكتاب والقراءة فيه؟! قال: يحرم بيعه ويجب تمزيقه. وعام 1408هـ جاء محمد سرور بنفسه إلى دماج وأنا حين ذاك موجود، فألقى محاضرة بعد المغرب ولم أكن قد علمت أنه سطر هذه الكلمة الخبيثة في كتابه المذكور من قبل أربع سنين حتى سمعتها منه مشافهة قالها بلسانه بأن كتب العقيدة فيها كثير من الجفاف ولما انتهى من كلمته قال لي الشيخ مقبل تفضل تكلم وكان محمد سرور موجوداً فقلت: إن هذا الكلام على كتب العقيدة ووصفها بأن فيها كثيراً من الجفاف لا يجوز وهذا حرام ويجب على المسلم أن يعظم كلام الله وكلام رسول الله، والعقيدة هي أساس ديننا، ولا قبول للأعمال إلا أن تكون موحداً لله سبحانه وتعالى ومن ذوي العقيدة الصافية ... الخ، وظهر عليه الغضب والإنفعال ولما انتهينا من صلاة العشاء ذهبنا إلى بيت الشيخ مقبل –حفظه الله– أيضاً كان كالذي يأكل نفسه ما هو موافق على ما قلنا في رد ظلمه وعدوانه على كتب العقيدة وبعد أربع سنين من ذلك الحين تأتي كلمة الشيخ عبدالعزيز بن باز –حفظه الله– ثم تتابع كلام أهل العلم كالشيخ الفوزان والشيخ ابن عثيمين.

“প্রথম ভুল: তারা (সুরূরীরা) মুহাম্মাদ সুরূরের জন্য মিত্রতা স্থাপন করে। অথচ সে কুফরি কথা বলেছে। এই কথা সে তার লেখা “মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। সে বলেছে, “আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে... ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” এই কথার ব্যাপারে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কথা কুফর।’ এ ব্যাপারে শাইখ ফাওযানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি কুফর। কে বলেছে এই কথা?!’ তাঁকে বলা হয়েছে, ‘এই লোক মুহাম্মাদ সুরূর।’ তখন তিনি বলেন, ‘এ তো খবিস লোক।’ তার ব্যাপারে শাইখ ইবনু বাযকে প্রশ্ন করা হলে—তবে প্রশ্নকারী জাফাফ (শুষ্কতা) শব্দের পরিবর্তে জাফা (বাতিল) বলেছে—তিনি বলেন, ‘এটি রিদ্দাহ তথা মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল, এটি জঘন্য কথা।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এই বই বিক্রি ও তা পড়ার বিধান কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘বইটি বিক্রি করা নাজায়েয। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক।’

১৪০৮ হিজরীতে স্বয়ং মুহাম্মাদ সুরূর দাম্মাজে এসেছিল। আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সে মাগরিবের পর বক্তব্য দিল। আমি জানতাম না যে, সে এই জঘন্য কথা চার বছর আগেই তার উল্লিখিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছে, যা আমি সরাসরি তার মুখ থেকে শুনেছি। সে তার জবানে বলেছে যে, ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকে শুষ্কতা রয়েছে। সে যখন তার কথা শেষ করল, তখন শাইখ মুক্ববিল আমাকে বললেন, ‘এসো, কিছু কথা বলো।’ তখনও মুহাম্মাদ সুরূর উপস্থিত রয়েছে। আমি তখন বললাম, “ ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহে শুষ্কতা রয়েছে—এরূপ বলা জায়েজ নয়, এটি হারাম। আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রাসূলের কথাকে সম্মান করা মুসলিমের ওপর আবশ্যক। ‘আক্বীদাহ আমাদের দ্বীনের মূলভিত্তি। মহান আল্লাহকে এক গণ্যকারী (তাওহীদবাদী) এবং বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত কারও আমল কবুল করা হবে না।...”

তার মধ্যে ক্রোধ ও উত্তেজনা দেখা গেল। আমরা ‘ইশার সালাত শেষ করে শাইখ মুক্ববিল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বাসায় গেলাম। সে যেন (ক্রোধে) নিজেকে খেয়ে ফেলছিল। ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে তার বিদ্বেষ ও জুলুমের ব্যাপারে আমরা যা বলেছি, সে ব্যাপারে সে আমাদের সাথে একমত ছিল না। এই ঘটনার চার বছর পর এ ব্যাপারে শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য এসেছে। তারপর অন্যান্য ‘আলিমগণের বক্তব্য এসেছে। যেমন: শাইখ ফাওযান, শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন।” [শাইখ ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “ ‘ইশরূনা মা’খাযান ‘আলাস সুরূরিয়্যাহ”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=51016.]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يزعم بعض الناس أن منهج أهل السنة و الجماعة لم يعد مناسباً لهذا العصر ، مستدلين بأن الضوابط الشرعية التي يراها أهل السنة و الجماعة لا يمكن أن تتحقق اليوم؟

“কতিপয় লোক মনে করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী হিসেবে বিবেচিত নয়; এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত যেসব শার‘ঈ মূলনীতির মত পোষণ করে, সেগুলো বর্তমান সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

الذي يرى أن منهج السلف الصالح لم يعد صالحاً لهذا الزمان، هذا يعتبر ضالاً مضللاً؛ لأن منهج السلف الصالح هو المنهج الذي أمرنا الله باتباعه حتى تقوم الساعة، يقول ﷺ : فإنه من يعش منكم فسوف يرى اختلافاً كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسكوا بها وعضّوا عليها بالنواجذ.
وهذا خطاب للأمة إلى أن تقوم الساعة، وهذا يدل على أنه لابد من السير على منهج السلف، وأن منهج السلف صالح لكل زمان ومكان، والله سبحانه وتعالى يقول : وَالسَّابِقُونَ الأوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ [التوبة : ١٠٠] وهذا يشمل الأمة إلى أن تقوم الساعة.
فالواجب عليها أن تتابع منهج السابقين الأولين من المهاجرين و الأنصار ، و الإمام مالك بن أنس يقول : لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلح أولها.
فالذي يريد أن يعزل الأمة عن ماضيها ويعزل الأمة عن السلف الصالح يريد الشر بالمسلمين، ويريد تغيير هذا الإسلام ويريد إحداث البدع و المخالفات، وهذا يجب رفضه ويجب قطع حجته و التحذير من شره، لأنه لابد من التمسك بمنهج السلف والاقتداء بالسلف ولابد من السير على منهج السلف.
وذلك في كتاب الله عز وجل وفي سنة رسوله ﷺ كما ذكرنا، فالذي يريد قطع خلف الأمة عن سلفها في الأرض يجب أن يرفض قوله وأن يرد قوله وأن يحذر منه، والذين عرف عنهم هذا القول السيء لا عبرة بهم.

“যে মনে করে, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, সে নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ তো সেই মানহাজ, কেয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে মানহাজের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)

এই সম্বোধন কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহ’র উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, অবশ্যই সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করতে হবে, আর ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। মহান আল্লাহ বলেছেন, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী এবং যারা উত্তমরূপে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও আল্লাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” (সূরাহ তাওবাহ: ১০০) মহান আল্লাহ’র এই বাণী কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহকে শামিল করে।

উম্মাহ’র ওপর অবশ্য করণীয় হলো, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী, তাঁদের মানহাজ অনুসরণ করা। ইমাম মালিক বিন আনাস বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।”

সুতরাং যে ব্যক্তি উম্মাহকে তার অতীত থেকে আলাদা করতে চায়, উম্মাহকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের থেকে আলাদা করতে চায়, সে মূলত মুসলিমদের অনিষ্ট কামনা করে। সে এই ইসলামকে পরিবর্তন করতে চায় এবং বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড উদ্ভাবন করতে চায়। তাকে বর্জন করা, তার দলিল কর্তন করা এবং তার অনিষ্ট থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। কেননা অবশ্যই সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরতে হবে এবং সালাফদের অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই সালাফদের মানহাজে পথ চলতে হবে।

আর এটি মহান আল্লাহ’র কিতাব এবং তাঁর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ’য় রয়েছে, যেমনটি আমরা উল্লেখ করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি পৃথিবীতে এই উম্মাহ’র খালাফকে (শেষ প্রজন্ম) তার সালাফদের (প্রথম প্রজন্ম) থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, সে ব্যক্তির কথা প্রত্যাখ্যান করা, তার কথা খণ্ডন করা এবং তার থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাদের নিকট থেকে এই খারাপ কথা এসেছে বলে জানা গেছে, তাদের কোনো মূল্য নেই।” [ড. ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আর-রিফা‘ঈ, মুরাজা‘আতুন ফিল ফিক্বহিল ওয়াক্বি‘ইস সিয়াসিয়্যি ওয়াল ফিকরী (শাইখ ইবনু বায, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান এবং শাইখ সালিহ আস-সাদলানের সাথে কথোপকথন); পৃষ্ঠা: ৫৫-৫৬; দারুল মা‘আরিজিদ দাওলিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগেও গ্রহণযোগ্য। যারা বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ অগ্রহনযোগ্য—বলে প্রচার করে, তারা বিদ‘আতী। আল্লাহ আমাদেরকে ধূর্ত বিদ‘আতীদের সৃষ্ট যাবতীয় সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Thursday, August 22, 2019

বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি



▌বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

বিদ‘আতীদের রদ (রিফিউট) করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। সালাফদের যুগ থেকেই বিদ‘আতীদের রদ করার এই শার‘ঈ নীতি চলে আসছে। আমরা প্রথমে এটা প্রমাণ করব যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মূলনীতি। তারপর পরবর্তীতে বিদ‘আতীদের রদ করার আবশ্যকীয়তা এবং তাদের ব্যাপারে চুপ থাকার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

বিদ‘আতীদের রদকারীদের ব্যাপারে নাবী ﷺ প্রশংসামূলক কথা বলেছেন। ইবরাহীম বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-‘উযরী কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, يَحْمِلُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُه يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ وَانْتَحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَأْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ “প্রত্যেক আগত দলের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহ’র) এই ‘ইলম গ্রহণ করবে। আর তারাই কিতাব ও সুন্নাহ’র ‘ইলমের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কৃত রদবদল, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার এবং জাহিল ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন করবে।” [বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২১৪৩৯; ইবনু বাত্বত্বাহ, ইবানাতুল কুবরা, হা/৩৪; মিশকাত, হা/২৪৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

·
আমরা যখন বিদ‘আতীদের রদ করতে যাই, তখন কতিপয় ব্যক্তির কথায় খুবই আশ্চর্য হই, যখন তাঁরা বলেন যে, বিদ‘আতীদের রদ করা ঠিক নয়, কারণ এতে মনোমালিন্য ও বিভেদ সৃষ্টি হয়। কী ধরনের ইবলিসি কথা! এটা তো ওই কাফিরদের কথা, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ “তারা চায় যে, তুমি যদি আপসকামী হও, তবে তারাও আপসকারী হবে।” [সূরাহ ক্বালাম: ৯]

যারা বিদ‘আতীদের রদ করার বিরুদ্ধে কথা বলে, নিঃসন্দেহে তারা জেনে অথবা না জেনে দ্বীনকে ধ্বংস করার প্রোপাগান্ডায় শামিল হয়। কারণ যদি রদ না থাকত, তাহলে যার যা ইচ্ছা সে তাই বলে বেড়াত।

·
আর তাইতো শরিয়ত বিরোধীদের রদ করার এই মহান নীতি স্বয়ং নাবী ﷺ শিখিয়ে গেছেন। সাহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، أَنَّ رَجُلاً، خَطَبَ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ مَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشِدَ وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ  ﷺ‏:‏ بِئْسَ الْخَطِيبُ أَنْتَ،‏ قُلْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ‘আদী বিন হাতিম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর সামনে ভাষণ দিল। সে বলল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল, সে সঠিক পথ পেল, আর যে ব্যক্তি তাঁদের অবাধ্যচরণ করল, সে পথভ্রষ্ট হলো।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তুমি এক নিকৃষ্ট বক্তা, তুমি এভাবে বল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৭০; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১৩]

ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “ওই বক্তাকে রাসূল ﷺ দীর্ঘ খুতবাহ দেওয়ার কারণে ভর্ৎসনা করেছিলেন।” [শারহু মুসলিম, হা/৮৭০ – এর ব্যাখ্যা]

·
সাহাবীগণের কর্মেও আমরা এই নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই। সাহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أُمِّ الْحَكَمِ يَخْطُبُ قَاعِدًا فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا الْخَبِيثِ يَخْطُبُ قَاعِدًا وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ‏وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا‏ কা‘ব বিন উজরাহ কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি মাসজিদে প্রবেশ করলেন, আর তখন ‘আব্দুর রাহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন। কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “তোমরা এই খবিসের প্রতি লক্ষ করো, সে বসে বসে খুতবা দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা (খুতবা চলাকালীন সময়ে) তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল।’ (সূরাহ জুমু‘আহ: ১১)” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৬৪; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১১]

এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, কলেবর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এখানেই ক্ষান্ত হচ্ছি।

·
প্রিয় পাঠক, সাধারণভাবে বিদ‘আতীদের রদ করা নসিহতের অন্তর্ভুক্ত। যে নসিহতের ব্যাপারে নাবী ﷺ বলেছেন, الدِّينُ النَّصِيحَةُ،‏ قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ‏: ‏لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “সদুপদেশ (নসিহত) দেয়াই দ্বীন। আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞেস করলাম, ‘কার জন্য সদুপদেশ?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫৫; ‘ইমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২৩]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,

ﻻﻳﺤﻞ ﺃﻥ ﺗﻜﺘﻢ ﺍﻟﻨّﺼﻴﺤﺔ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺑﺮّﻫﻢ ﻭﻓﺎﺟﺮﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺪّﻳﻦ، ﻓﻤﻦ ﻛﺘﻢ، ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻓﻘﺪ ﺧﺎﻥ ﺍﻟﻠّﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ.

“পুণ্যবান হোক বা পাপাচারী হোক, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো মুসলিমের কাছে নসিহত তথা সদুপদেশ গোপন করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি তা গোপন করল, সে মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করল। আর যে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিল, সে মূলত দ্বীনকেই ধোঁকা দিল। আর যে দ্বীনকে ধোঁকা দিল, সে তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের সাথে খেয়ানত করল।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৯৩; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
মুমিনদের প্রতি নসিহত কেমন হওয়া উচিত তার বর্ণনা দিতে গিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,

أن تُرشِدهم إلي الصواب، وتحذّرهم من الأخطاء، و أن تأمر بالمعروف وتنهي عن المنكر، و أن تعلِّم الجاهلَ وتذكِّر الغافلَ.

“তুমি তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে, ভুল থেকে সতর্ক করবে। তুমি সৎকাজের আদেশ দিবে, আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। অজ্ঞকে শিক্ষা দিবে, আর গাফিলকে উপদেশ দিবে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১২; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] হাদীসশাস্ত্রের হাফিয শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ইসমা‘ঈল ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল-আনসারী আল-হারাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ)’র [মৃত: ৪৮১ হি.] জীবনচরিতে লিখেছেন,

قال ابن طاهر سمعته—يعني أبا إسماعيل الـهروي—يقول: عُرِضتُ على السيف خمسَ مراتٍ لا يُقال لـي: ارجع عن مذهبك، ولكن يُقال لـي: اسكتْ عمَّنْ خالفكَ ، فأقول: لا أسكت.

“ইবনু ত্বাহির বলেছেন, আমি আবূ ইসমা‘ঈল আল-হারাউয়ীকে বলতে শুনেছি, “আমাকে পাঁচবার তরবারির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে বলা হয়নি যে, তুমি তোমার মতাদর্শ থেকে ফিরে আস। বরং আমাকে বলা হয়েছে, তুমি তোমার (আদর্শ) বিরোধীদের ব্যাপারে চুপ থাক। আমি বলেছি, আমি চুপ থাকব না”।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৫০৯; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

আহলুস সুন্নাহ’র এই মহান ইমামের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তিনি তরবারির সামনেও আহলুস সুন্নাহ’র এই মূলনীতির ব্যাপারে বিদ‘আতীদের সাথে আপস করেননি। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ।

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هل الرد على المخالف وبيان خطأ المخطئين من أصول السنة؟

“শরিয়তবিরোধীকে রদ করা এবং (দ্বীনের ব্যাপারে) ভুলকারীদের ভুল বর্ণনা করা কি সুন্নাহ’র মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,

نعم، الرد على المخالف هذا من طريقة أهل السنة والجماعة.

“হ্যাঁ, শরিয়তবিরোধীকে রদ করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ত্বরীক্বাহ’র (আদর্শের) অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=kRVQsNqCYzM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি। পরন্তু বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার শামিল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

الرادّ على أهل البدع مجاهد، حتى كان يحيى بن يحيى يقول: الذب عن السنّة أفضل الجهاد.

“বিদ‘আতীদের রদকারী একজন মুজাহিদ। এমনকি ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেছেন, ‘সুন্নাহকে ডিফেন্ড করা সর্বোত্তম জিহাদ’।” [নাক্বদুল মানত্বিক্ব, পৃষ্ঠা: ১২; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল বিদা‘; পৃষ্ঠা: ১০৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন,

ﺍﻟﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺣﻤﺎﻳﺔ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺼﻖ ﺑﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﺘﺄﻟﻴﻒ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻃﺒﻌﻬﺎ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺣﻖ ﻭﺩﻋﻮﺓ ﻟﻠﺤﻖ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻤﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻥ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻓﺈﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻄﺄ.

“বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র পথে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। এটি নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে শরিয়তকে হেফাজত করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করা, তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করাটাই হক এবং এটিই হকের দা‘ওয়াত ও আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, বিদ‘আতীদের রদ করে গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করা নবউদ্ভাবিত বিষয়, সে অবশ্যই ভুলের উপর রয়েছে।” [আর-রিয়াদ্ব পত্রিকা; শুক্রবার, ৪ঠা মুহাররাম, ১৪২৪ হিজরি; সংখ্যা: ১২৬৭৪; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

منهج أهل السنة والجماعة في الرد على أهل البدع:
منهجهم في ذلك مبني على الكتاب والسنة، وهو المنهج المقنع المفحم، حيث يوردون شبه المبتدعة وينقضونها. ويستدلون بالكتاب والسنة على وجوب التمسك بالسنن، والنهي عن البدع والمحدثات، وقد ألفوا المؤلفات الكثيرة في ذلك، وردوا في كتب العقائد على الشيعة والخوارج والجهمية والمعتزلة والأشاعرة في مقالاتهم المبتدعة في أصول الإيمان والعقيدة، وألفوا كتبا خاصة في ذلك، كما ألف الإمام أحمد كتاب الرد على الجهمية، وألف غيره من الأئمة في ذلك كعثمان بن سعيد الدارمي، وكما في شيخ الإسلام ابن تيمية وتلميذهابن القيم والشيخ محمد بن عبد الوهاب وغيرهم من الرد على تلك الفرق وعلى القبورية والصوفية.
وأما الكتب الخاصة في الرد على أهل البدع فهي كثيرة منها على سبيل المثال من الكتب القديمة:
١ - كتاب الاعتصام للإمام الشاطبي،
٢ - كتاب اقتضاء الصراط المستقيم لشيخ الإسلام إبن تيمية فقد استغرق الرد على المبتدعة جزءا كبيرا منه،
٣ - كتاب إنكار الحوادث والبدع لابن وضاح،
٤ - كتاب الحوادث والبدع للطرطوشي،
٥ - كتاب الباعث على إنكار البدع والحوادث لأبي شامة.
ومن الكتب العصرية:
١ - كتاب الإبداع في مضار الابتداع للشيخ علي محفوظ.
٢ - كتاب السنن والمبتدعات المتعلقة بالأذكار والصلوات. للشيخ محمد بن أحمد الشقيري الحوامدي.
٣ - رسالة التحذير من البدع للشيخ عبد العزيز بن باز.
ولا يزال علماء المسلمين- والحمد لله- ينكرون البدع ويردون على المبتدعة من خلال الصحف والمجلات والإذاعات وخطب الجمع والندوات والمحاضرات، مما له كبير الأثر في توعية المسلمين والقضاء على البدع وقمع المبتدعين.

“বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ:

তাদের মানহাজ কিতাব ও সুন্নাহ’র উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি একটি নির্বাককারী সন্তোষজনক মানহাজ। তারা বিদ‘আতীদের শুবহাত (সংশয়) নিয়ে আসে এবং তা খণ্ডন করে। সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার আবশ্যকীয়তা এবং বিদ‘আতের নিষিদ্ধতার ব্যাপারে তারা কিতাব ও সুন্নাহ থেকে দলিল গ্রহণ করে। তারা এ ব্যাপারে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছে। তারা ‘আক্বীদাহর গ্রন্থগুলোতে শিয়া, খারিজী, জাহমী, মু‘তাযিলী ও আশ‘আরী সম্প্রদায়কে রদ করেছে, ইমান ও ‘আক্বীদাহর মূলনীতিতে তাদের বিদ‘আতী কথাবার্তার ব্যাপারে। তারা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট গ্রন্থও রচনা করেছে। যেমন ইমাম আহমাদ লিখেছেন “কিতাবুর রাদ্দি ‘আলাল জাহমিয়্যাহ (জাহমীদের খণ্ডন)”। তিনি ছাড়াও অন্য ইমামগণ এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছেন, যেমন ‘উসমান বিন সা‘ঈদ আদ-দারিমী। অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, তাঁর ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়্যিম, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং অন্যান্যদের গ্রন্থে ওই দলগুলোর এবং কবরপূজারী ও সূফীদের রদ আছে।

পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের রদ করার ব্যাপারে অনেক খাস গ্রন্থ আছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু প্রাচীন গ্রন্থের নাম:
১. ইমাম শাত্বিবী প্রণীত “আল-ই‘তিসাম”।
২. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ প্রণীত “ইক্বতিদ্বাউস সিরাত্বিল মুস্তাক্বীম”। এই গ্রন্থের একটি বড়ো অংশে বিদ‘আতীদের রদ রয়েছে।
৩. ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ প্রণীত “ইনকারুল হাওয়াদিসি ওয়াল বিদা‘”।
৪. আত্ব-ত্বারতূশী প্রণীত “আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘”।
৫. আবূ শামাহ প্রণীত “আল-বা‘ইস ‘আলা ইনকারিল বিদা‘ই ওয়াল হাওয়াদিস”।

কিছু আধুনিক গ্রন্থের নাম:
১. শাইখ ‘আলী মাহফূয প্রণীত “আল-ইবদা‘ ফী মাদ্বার্রিল ইবতিদা‘”।
২. শাইখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আশ-শুক্বাইরী আল-হাওয়ামিদী প্রণীত “আস-সুনানু ওয়াল মুবতাদা‘আত আল-মুতা‘আল্লিক্বাতু বিল আযকারি ওয়াস সালাওয়াত”।
৩. শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায প্রণীত “আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘”।

আল-হামদুলিল্লাহ, মুসলিমদের ‘আলিমগণ এখনও পত্রপত্রিকা, রেডিয়ো, জুমু‘আহর খুতবা, সভা-সেমিনার ও লেকচারের মাধ্যমে বিদ‘আতের সমালোচনা এবং বিদ‘আতীদের রদ করে চলেছেন। মুসলিমদের সচেতনকরণে এবং বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের বিনাশে এর অনেক বড়ো প্রভাব রয়েছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ; পৃষ্ঠা: ১৯১-১৯২; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, উম্মতকে যারা রদবিমুখ করে অসৎ ফায়দা আহরণ করতে চাইছে, আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়াত দেন এবং তাদের তৈরিকৃত সংশয় থেকে আমাদের হেফাজত করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

বইঃ হিদায়া কিতাবের একি হিদায়াত !!

বইঃ গুনিয়াতুত ত্বালেবীন (আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ)

Saturday, August 17, 2019

আলিম কে?



▌‘আলিম কে?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।

যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” [সূরাহ নাহল: ৪৩]

দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে যে ‘ইলম দান করেছেন তা তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো তুলে নেবেন না। বরং ‘আলিম-‘উলামা তুলে নিয়ে ‘ইলম তুলে নেবেন। এমতাবস্থায় যখন কেবল জাহিল নেতাবর্গ অবশিষ্ট থাকবে, তখন লোকেরা তাদেরকেই ফাতওয়া জিজ্ঞেস করবে। আর তারা নিজেদের রায় দ্বারা ফাতওয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরা ভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/১০১]

·
প্রারম্ভিকা:

‘আলিম’ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি অবস্থান, যে অবস্থান আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী স্রেফ তাঁর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদেরকে দান করে থাকেন। ‘আলিমগণ সম্মানিত নাবীদের ওয়ারিশ। আল্লাহ’র কাছে তাঁদের বিশাল মর্যাদা রয়েছে। এই অবস্থানের অধিকারী নির্বাচিত বান্দারা ইসলাম প্রচার ও প্রসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেন। তাঁরা দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং জনসাধারণকে শার‘ঈ পদ্ধতিতে পথনির্দেশ করেন।

কেউ চাইলেই ‘আলিম হতে পারে না, এমনকি সারাজীবন ‘ইলম অর্জনে ব্যাপৃত থাকার পরও কেউ ‘আলিম হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে ‘আলিম হিসেবে কবুল করেন।

সম্প্রতি উপমহাদেশীয় পরিমণ্ডলে একটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, আম জনসাধারণ—এমনকি কতিপয় দা‘ঈও—‘আলিম লকবটি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে। কেউ কওমি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, কেউ আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, কেউ ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, আবার কেউ কেউ দুচারটা হাদীস ও ফিক্বহের কিতাব পড়েই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

অথচ বিষয়টি এরকম জলবত তরলং নয়। ‘আলিম হওয়ার জন্য বিস্তর ‘ইলম, ফিক্বহ ও হিকমাহ’র প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে প্রকৃত ‘আলিমদের পক্ষ থেকে ‘আলিম হওয়ার শাহাদাহ’র।

বর্তমান সময়ে উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ ‘আলিমের পরিচয় সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে তারা অনির্ভরযোগ্য দা‘ঈ এবং সেলিব্রেটি বক্তাদেরকে ‘আলিম গণ্য করে তাদের কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করে, ফলে তারা ভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, “দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে আধা বক্তা, আধা ফাক্বীহ (‘আলিম), আধা ডাক্তার ও আধা ভাষাবিদ। আধা বক্তা ক্ষতি করে দ্বীনের, আধা ফাক্বীহ ক্ষতি করে দেশের, আধা ডাক্তার ক্ষতি করে শরীরের, আর আধা ভাষাবিদ ক্ষতি করে ভাষার।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১১৮-১১৯; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদের রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

এহেন বিপজ্জনক পরিস্থিতির নিরসনকল্পেই আমাদের এই নিবন্ধের অবতারণা। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে  আমরা যথাক্রমে ‘আলিমের পরিচয়, ‘আলিম হওয়ার শর্ত এবং ‘আলিম চেনার উপায় প্রসঙ্গে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করেছি। আল্লাহ আমাদের এই সামান্য প্রয়াসকে সালাফী দা‘ওয়াহর অংশ হিসেবে কবুল করুন এবং এটাকে আমাদের জান্নাতে দাখিল হওয়ার মাধ্যমে পরিণত করুন। (আমীন)

·
‘আলিমের পরিচয়:

‘আলিম ও মুজতাহিদ—অভিধা দুটি অভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, المُجتهِدُ في الحقيقةِ هو العَالِمُ “প্রকৃতপক্ষে মুজতাহিদ ব্যক্তিই হলেন ‘আলিম।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুল উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৬৭২; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৫ হিজরী (৪র্থ প্রকাশ)]

‘মুজতাহিদ’ একটি বিশেষ্য, যা ‘ইজতিহাদ’ ক্রিয়ামূল থেকে উদ্‌গত হয়েছে। ইজতিহাদের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের দিকে লক্ষ করলে আমরা মুজতাহিদের পরিচয় সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারণা লাভ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

·
আভিধানিক অর্থে—

بذل المجهود واستفراغ الوسع في فعل من الأفعال، ولا يستعمل إلا فيما فيه مشقة، يقال: اجتهد في حمل الصخرة، ولا يقال: اجتهد في حمل العصا أو النواة.

“কোনো কাজে চেষ্টাপ্রচেষ্টা করা এবং শক্তিসামর্থ্য ব্যয় করাকে ইজতিহাদ বলে। এই অভিধাটি শুধুমাত্র ওই কাজের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়, যাতে কষ্ট ও ক্লেশ যুক্ত থাকে। একারণে বলা হয়, সে (ভারি) প্রস্তরখণ্ডটি বহন করতে ইজতিহাদ করেছে। এ কথা বলা হয় না যে, সে একটি লাঠি বা একটি আঁটি বহন করতে ইজতিহাদ করেছে।” [ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) প্রমুখ; তাসহীলুল উসূল ইলা ফাহমি ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ১১৪; দারুল ইমাম আহমাদ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩২ হি./২০১১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
পারিভাষিক অর্থে—

ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, بذل الجهد لإدراك حكم شرعي “কোনো একটি শার‘ঈ বিধান জানার জন্য চেষ্টাপ্রচেষ্টা করাকে ইজতিহাদ বলে।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আল-উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৮৫; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হিজরী]

ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৯৩ হি.] বলেছেন, بذلُ الفقيهِ وسعَهُ بالنظر في الأدلة لأجل أن يحصل له الظنُّ أو القطعُ بأنَّ حكم الله في المسألة كذا “কোনো ফাক্বীহ কর্তৃক দলিলসমূহ পর্যবেক্ষণ করতে স্বীয় প্রচেষ্টা প্রয়োগ করাকে ইজতিহাদ বলে; যাতে করে তিনি অকাট্যতার ভিত্তিতে বা প্রবল ধারণার ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, এই মাসআলাহ’য় আল্লাহ’র বিধান এটা।”‌ [ইমাম শানক্বীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ), মুযাক্কিরাতু উসূলিল ফিক্বহি ‘আলা রাওদ্বাতিন নাযির, পৃষ্ঠা: ৪৮৫; দারু ‘আলামিল ফাওয়াইদ, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

আর মুজতাহিদের পরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, المجتهد من بذل جهده لذالك “যে ব্যক্তি এর জন্য (অর্থাৎ, কোনো শার‘ঈ বিধান জানার জন্য) স্বীয় প্রচেষ্টা ব্যয় করেন, তাঁকে মুজতাহিদ বলে।” [আল-উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৮৫]

·
ইজতিহাদের শর্ত:

ইজতিহাদের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। স্রেফ একজন মুজতাহিদই ইজতিহাদ করবেন, ‘আম্মী (লেইম্যান) ব্যক্তি ইজতিহাদ করবে না। ইজতিহাদ করার জন্য বেশ কিছু শর্ত আছে, যে শর্তগুলো পূরণ হলে একজন ব্যক্তি মুজতাহিদ হতে পারেন। যার মধ্যে ইজতিহাদের একটি শর্তেরও অবিদ্যমানতা পাওয়া যাবে, তিনি মুজতাহিদ তথা ‘আলিম বলে গণ্য হবেন না। এ ব্যাপারে আমরা পর্যায়ক্রমে কয়েকজন বিখ্যাত ইমামের উক্তি উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ।

ইমাম বাগাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫১৬ হি.] বলেন—

“যে ব্যক্তি (নিজের মধ্যে) পাঁচ প্রকার ‘ইলম একত্র করেছেন তিনি মুজতাহিদ। ‘ইলমগুলো হলো: আল্লাহ’র কিতাবের ‘ইলম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের ‘ইলম, ‘উলামায়ে সালাফের ইজমা‘ (মতৈক্য) ও ইখতিলাফের (মতানৈক্য) ক্ষেত্রে তাঁদের বক্তব্যসমূহের ‘ইলম, ভাষার ‘ইলম এবং কিয়াসের ‘ইলম। এটা হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে (আল্লাহ’র) বিধান উদ্‌ঘাটন করার পদ্ধতি। যখন তিনি কুরআন, সুন্নাহ, বা ইজমা‘র সুস্পষ্ট বক্তব্যের মধ্যে (আল্লাহ’র) বিধানকে স্পষ্টভাবে পাবেন না, তখন তাঁর জন‍্য কুরআন থেকে এই বিষয়গুলো জানা ওয়াজিব হয়ে যাবে—নাসিখ (রহিতকারী), মানসূখ (রহিত), মুজমাল (সংক্ষিপ্ত), মুফাসসাল (বিস্তৃত), খাস (নির্দিষ্ট), ‘আম (ব্যাপক), মুহকাম (দ্ব্যর্থহীন), মুতাশাবিহ (দ্ব্যর্থবোধক), মাকরূহ (অপছন্দনীয়), হারাম (নিষিদ্ধ), মুবাহ (বৈধ), মানদূব (পছন্দনীয়), ওয়াজিব (আবশ্যকীয়)। অনুরূপভাবে সুন্নাহ থেকেও এই বিষয়গুলো জানা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাঁর জন্য সুন্নাহ থেকে সাহীহ ও দ্ব‘ঈফ এবং মুসনাদ ও মুরসাল সম্পর্কে জানা, কুরআনের ওপর সুন্নাহ’র বিন্যাস এবং সুন্নাহ’র উপর কুরআনের বিন্যাস সম্পর্কে জানা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

যাতে করে তিনি যদি এমন হাদীস পান, যার বাহ্যিক দিক কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না, তাহলে হাদীসটির প্রায়োগিক দিকের সন্ধান লাভ করতে পারেন। কেননা সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা, কুরআনের বিরোধী নয়। অবশ্যই তাঁর জন্য শরিয়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে যে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে তা জানা ওয়াজিব; বিধিবিধান ছাড়া এতে যে ঘটনাবলি, খবরাখবর ও উপদেশসমূহ রয়েছে তা এর আওতাভুক্ত নয়। অনুরূপভাবে কুরআন-সুন্নাহ’য় বিধিবিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে যে ভাষাবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছে, সে সম্পর্কে জানাও তাঁর জন্য আবশ্যক; আরবদের সমগ্র ভাষা সম্পর্কে জানা এর আওতাভুক্ত নয়। তবে তাঁর জন্য ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করা বাঞ্ছনীয়; যাতে করে স্থান, কাল ও পাত্রভেদে আরবদের কথা যে উদ্দেশ্যের অর্থ দেয়, সে উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি অবগত হতে পারেন। কেননা (শরিয়তের) সম্বোধন আরবদের ভাষার মাধ্যমেই বর্ণিত হয়েছে; তাই যে ব্যক্তি তা জানে না, সে শরিয়তপ্রণেতার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও জানবে না।

তাঁর জন্য বিধিবিধানের ক্ষেত্রে সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের বক্তব্যসমূহ জানা এবং উম্মাহর ফাক্বীহদের অধিকাংশ ফাতওয়া জানা আবশ্যক, যাতে করে তাঁর উদ্‌ঘাটিত বিধান তাঁদের বক্তব্যের বিরোধী না হয়, যার ফলে কোনো বিধানে ইজমা‘ লঙ্ঘিত হয়। যখন তিনি এই প্রত্যেক প্রকার ‘ইলমের অধিকাংশই জানবেন, তখন তিনি মুজতাহিদ হিসেবে গণ্য হবেন। উল্লিখিত প্রত্যেক প্রকার ‘ইলমের সমগ্র অংশ জানাকে শর্ত করা হবে না, তবে কোনো শাস্ত্রের জ্ঞানই অপর্যাপ্ত থাকা যাবে না। যখন কেউ এই প্রকারগুলোর মধ্য থেকে কোনো এক প্রকার ‘ইলম সম্পর্কে জানবে না, তখন তার (অবলম্বন করার) রাস্তাই হলো তাক্বলীদ।” [আল-ইমামুল ‘আল্লামাহ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ), ‘ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদি ওয়াত তাক্বলীদ; পৃষ্ঠা: ২১-২৩; দারুল ফাতহ, শারিক্বাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৫ হি./১৯৯৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি./১৮৩৪ খ্রি.] বলেছেন,

“ইজতিহাদ করার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো—
১. কুরআন-সুন্নাহ’র নস (মূল বক্তব‍্য) সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। সে যদি কেবল একটি সম্পর্কে অবগত থাকে, তাহলে সে মুজতাহিদ নয়। তার জন্য ইজতিহাদ করা বৈধ নয়।
২. ইজমা‘র মাসআলাহসমূহ জানা থাকতে হবে। যেন সে ইজমা‘ বিরোধী ফাতওয়া না দেয়।
৩. আরবি ভাষা সম্পর্কে জানা থাকতে হবে, যেন সে কুরআন-সুন্নাহ’য় বর্ণিত অপরিচিত শব্দের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়।
৪. তার উসূলে ফিক্বহ সম্পর্কে জানা থাকতে হবে, যেহেতু তা অত্যন্ত জরুরি (‘ইলমী) বিষয়কে শামিল করে। তার উচিত এই বিষয়ে বিশেষ (‘ইলমী) যোগ্যতা অর্জন করা।
৫. তার নাসিখ (রহিতকারী) ও মানসূখ (রহিত) সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। যেন এ সংক্রান্ত কোনো মাসআলাহই তার অজানা না থাকে। আর তা একারণে যে, এর অন্যথা হলে সে হয়তো মানসূখ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে বসবে।” (সংক্ষেপিত) [ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ), ইরশাদুল ফুহূল ইলা তাহক্বীক্বিল হাক্বক্বি মিন ‘ইলমিল উসূল, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০২৭-১০৩৫; দারুল ফাদ্বীলাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২১ হি./২০০০ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন—

“ইজতিহাদের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা:

১. শার‘ঈ দলিল থেকে যা তার ইজতিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে তা জানা থাকা। যেমন: বিধিবিধানের আয়াত ও হাদীসসমূহ।
২. হাদীসের বিশুদ্ধতা ও দুর্বলতার সাথে যা সংশ্লিষ্ট তা জানা থাকা। যেমন: সনদ ও তার বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে জানা।
৩. নাসিখ (রহিতকারী) মানসূখ (রহিত), ইজমা‘ (মতৈক্য) সংঘটিত হওয়ার স্থান সম্পর্কে জানা থাকা। যাতে করে সে মানসূখ বিধান বা ইজমা‘ বিরোধী বিধান অনুযায়ী ফায়সালা না দেয়।
৪. দলিলসমূহ থেকে যার কারণে বিধান ভিন্নতর হয় তথা খাসকরণ (নির্দিষ্ট), মুক্বাইয়্যাদকরণ (শর্তযুক্ত) প্রভৃতি সম্পর্কে জানা থাকা। যাতে করে সে এগুলোর বিরোধী বিষয়ের দ্বারা ফায়সালা না দেয়।
৫. ভাষা ও ফিক্বহের মূলনীতি থেকে যা কিছু শব্দের মর্মার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট তা জানা থাকা। যেমন: ‘আম (ব্যাপক), খাস (নির্দিষ্ট), মুত্বলাক্ব (শর্তহীন), মুক্বাইয়্যাদ (শর্তযুক্ত), মুজমাল (সংক্ষিপ্ত), মুবাইয়্যান (বিস্তৃত) প্রভৃতি। যাতে করে সে ওই মর্মার্থের দাবি অনুযায়ী ফায়সালা দেয়।
৬. তার কাছে এমন সক্ষমতা থাকা, যার দ্বারা সে দলিল থেকে (শার‘ঈ) বিধান উদ্‌ঘাটন করতে পারে।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আল-উসূল মিন ‘ইলমিল উসূল; পৃষ্ঠা: ৮৫-৮৬; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হিজরী]

·
সুপ্রিয় পাঠক, এখন কিছু প্রশ্ন করি। বর্তমান সময়ে ‘আলিম হওয়ার এসব যোগ্যতা পূরণকারী লোকদের সংখ্যা কেমন হতে পারে? প্রত্যেক সুবক্তা ও বিতার্কিক, বা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী, কিংবা সেলিব্রেটি লেখক ও কিতাবের তাহক্বীক্বকারীর মধ্যেই কি এসব গুণ রয়েছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যেতে পারে বিগত শতাব্দীর প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আল-ফাক্বীহ, আল-উসূলী, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. ‘আব্দুস সালাম বিন বারজিস বিন নাসির আলে ‘আব্দুল কারীম (রাহিমাহুল্লাহ)’র নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকে।

‘আল্লামাহ ‘আব্দুস সালাম বিন বারজিস আলে ‘আব্দুল কারীম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.] বলেছেন—

“নিশ্চয়ই ‘আলিম বলে ডাকা যায় এমন লোকের সংখ্যা খুবই সামান্য। এবং এটা অতিরঞ্জন হবে না, যদি বলা হয় বিরল। এর কারণ হলো একজন ‘আলিমের কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর বর্তমানে নিজেদের ‘ইলমের সাথে সংযুক্তকারী অধিকাংশের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশই পাওয়া যায় না। সুতরাং একজন ‘আলিম সে নয় যে একজন সুবক্তা, এবং একজন ‘আলিম সে নয় যে একটি কিতাব সংকলন করে অথবা একটি পাণ্ডুলিপির তাহক্বীক্ব করে। আর শুধু এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকার কারণেই যদি কাউকে ‘আলিম বোঝানো হয়, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘আলিম কে—এই বিষয়টির সাথে অপরিচিত অনেকের মনের মধ্যেই এই বিষয়টি রয়েছে (অর্থাৎ কেউ সুবক্তা হলে, বা কিতাব সংকলন করলে, কিংবা পাণ্ডুলিপির তাহক্বীক্ব করলেই তাকে তারা ‘আলিম ভাবে), আর একারণে সাধারণ জনগণের অনেকেই অ-‘আলিম (‘আলিম নয় এমন) লোকদের বাগ্মিতা ও লেখালেখির কাছে নিজেদের বিনম্র করেছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো (বাগ্মী হওয়া, কিতাব সংকলন করা, পাণ্ডুলিপির তাহক্বীক্ব করা ইত্যাদি) তাদের কাছে একটি বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। সত্যিকারার্থে একজন ‘আলিম হলেন তিনি, যিনি শার‘ঈ ‘ইলমের ব্যাপারে বিজ্ঞ এবং কিতাব ও সুন্নাহ’র হুকুম আহকামের সাথে পরিচিত, নাসিখ-মানসূখ, মুত্বলাক্ব-মুক্বাইয়্যাদ, মুজমাল-মুফাসসারের মতো বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত, এবং যিনি সেসব ব্যাপারেও সালাফদের বক্তব্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেসব ব্যাপারে তাঁরা মতপার্থক্য করেছেন।” [শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র “মান হুমুল ‘উলামা”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ থেকে সংগৃহীত; সোর্স: সালাফিটক (salafitalk) ডট নেট]

·
‘আলিম চেনার উপায়:

পদমর্যাদা, ডিগ্রি, ক্ষমতা, বাগ্মিতা, যশ, খ্যাতি—এগুলোর কোনো কিছুই মানুষকে ‘আলিমে পরিণত করে না, যা অজ্ঞতাবশত অনেক ব্যক্তি ধারণা করে থাকে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন,

المنصب والولاية لا يجعل من ليس عالما مجتهداً عالما مجتهداً، ولو كان الكلام في العلم والدين بالولاية والمنصب لكان الخليفة والسلطان أحق بالكلام في العلم والدين، وبأن يستفتيه الناس ويرجعوا إليه فيما أشكل عليهم في العلم والدين.

“যে ব্যক্তি মুজতাহিদ ‘আলিম নয়, পদমর্যাদা ও ক্ষমতা তাকে মুজতাহিদ ‘আলিমে পরিণত করে না। যদি দ্বীন ও (শার‘ঈ) ‘ইলমের ব্যাপারে কথা বলা পদমর্যাদা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে হত, তাহলে অবশ্যই খলিফা ও বাদশাহই দ্বীন ও (শার‘ঈ) ‘ইলমের ব্যাপারে কথা বলার সবচেয়ে বড়ো হকদার হতো। আর লোকেরা তার কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করবে এবং (শার‘ঈ) ‘ইলম ও দ্বীনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, এমন অবস্থানেরও সবচেয়ে বড়ো হকদার হতো।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ২৯৬; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদের রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

আমাদের দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে—“রতনে রতন চেনে, মানিকে চেনে মানিক।” আর‌ও বলা হয়—“জহুরি জহর চেনে, কামার চেনে লোহা।” আর তাইতো প্রকৃত চিকিৎসককে একজন চিকিৎসকই চিনতে পারে এবং প্রকৃত প্রকৌশলীকে একজন প্রকৌশলীই চিনতে পারে। মানুষ এটা দুনিয়াবি ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে মেনে চলে। কিন্তু হায়! পারলৌকিক বিষয়ে তাদের যত অবহেলা, অবজ্ঞা ও হঠকারিতা। সুস্থ মস্তিষ্কে একটু চিন্তাও করে না যে, একজন প্রকৃত ‘আলিমই দ্বীনের পথনির্দেশক, আর একজন ‘আলিমই কেবল চিনতে পারেন—কে প্রকৃত ‘আলিম, আর কে ভুয়া ‘আলিম তথা পাক্কা জাহিল। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

সালাফদের যুগ থেকেই এই সিলসিলা চলে আসছে যে, একজন ‘আলিমকে চেনা হবে সামসময়িক ‘আলিমদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। বর্তমান যুগেও একজন ‘আলিমকে চিনতে হলে ‘আলিমগণের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ ‘আলিমগণ ব্যক্তির যে অবস্থা বর্ণনা করবেন, সেটাই ওই ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থা। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি কিবার ‘আলিম, নাকি সাধারণ ‘আলিম, অথবা ত্বালিবুল ‘ইলম, নাকি ‘আম্মী তথা লেইম্যান—তা কেবল ‘আলিমকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমেই জানা সম্ভব।

·
শাইখুল ইসলাম, হুজ্জাতুল উম্মাহ, ইমামু দারিল হিজরাহ, আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন,

ﻣﺎ ﺃﺟَﺒْﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻔَﺘْﻮﻯ ﺣﺘﻰ ﺳﺄﻟﺖ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﻋْﻠَﻢ ﻣﻨﻲ : ﻫﻞ ﺗَﺮﺍﻧﻲ ﻣَﻮﺿِﻌﺎ ﻟﺬﻟﻚ؟ ﺳﺄﻟﺖ ﺭَﺑﻴﻌَﺔ، ﻭﺳﺄﻟﺖ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ، ﻓﺄَﻣَﺮﺍﻧﻲ ﺑﺬﻟﻚ، ﻓﻘﻠﺖ ﻟﻪ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋَﺒْﺪ ﺍﻟﻠﻪ : ﻟﻮ ﻧَﻬَﻮْﻙ؟ ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺖ ﺃﻧْﺘَﻬﻲ؛ ﻻ ﻳَﻨﺒَﻐﻲ ﻟﺮَﺟُﻞ ﺃﻥ ﻳﺮﻯ ﻧَﻔﺴَﻪ ﺃﻫﻼ ﻟِﺸَﻲﺀ، ﺣﺘﻰ ﻳَﺴﺄَﻝ ﻣﻦ ﻫﻮ ﺃﻋْﻠَﻢ ﻣﻨﻪ.

“আমি ফাত‌ওয়ার জবাব দিইনি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তিনি আমাকে এর উপযুক্ত মনে করেন কিনা। আমি রাবী‘আহকে জিজ্ঞেস করেছি, আমি ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদকে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা আমাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।” বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে (ইমাম মালিককে) বললাম, “হে আবূ ‘আব্দুল্লাহ, তাঁরা যদি আপনাকে নিষেধ করতেন?” তিনি বললেন, “তাহলে আমি বিরত থাকতাম। কোনো ব্যক্তির উচিত নয় নিজেকে কোনো বিষয়ের উপযুক্ত মনে করা, যতক্ষণ না সে (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে) তার চেয়ে বেশি জানা ব্যক্তিকে (নিজের ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করে।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৬২; মুআসসাসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) আর‌ও বলেন, ﻣَﺎ ﺃَﻓْﺘَﻴْﺖُ ﺣَﺘَّﻰ ﺷَﻬِﺪَ ﻟِﻲ ﺳَﺒْﻌُﻮﻥَ ﺃَﻧِّﻲ ﺃَﻫْﻞٌ ﻟِﺬَﻟِﻚَ “আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ফাতওয়া দিইনি, যতক্ষণ না সত্তরজন (‘আলিম) আমার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আমি এ কাজের উপযুক্ত।” [আবূ নু‘আইম আল-আসবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩১৬; আসার নং: ৮৯৭০]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

الناس في حقائق الإيمان متفاضلون تفاضلا عظيما، فأهل الطبقة العليا يعلمون حال أهل السفلى من غير عكس، كما أن أهل الجنة في الجنة ينزل الأعلى إلى الأسفل، ولا يصعد الأسفل إلى الأعلى، والعالم يعرف الجاهل؛ لأنه كان جاهلا والجاهل لا يعرف العالم لأنه لم يكن عالماً.

“ইমানের প্রকৃতত্বের ক্ষেত্রে মানুষ বিশাল (মর্যাদাগত) পার্থক্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। সর্বোচ্চ স্তরের অধিবাসীরা কোনোরূপ বৈপরীত্য ছাড়াই নিচের স্তরের অধিবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে জানে। যেমনভাবে জান্নাতে জান্নাতবাসীদের মধ্যে উঁচু স্তরের অধিবাসী নিচু স্তরের অধিবাসীর নিকট নামতে পারবে, কিন্তু নিচু স্তরের অধিবাসী উঁচু স্তরের অধিবাসীর নিকট উঠতে পারবে না। ‘আলিম জাহিলকে চিনতে পারেন, কেননা তিনি একসময় জাহিল ছিলেন। কিন্তু জাহিল ‘আলিমকে চিনতে পারে না, কারণ সে কখনো ‘আলিম ছিল না।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৩৫; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদের রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] বলেছেন, ﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻻ ﻳﻌﻠﻢ ﺭﺗﺒﺔ ﻧﻔﺴﻪ، ﻓﻜﻴﻒ ﻳﻌﺮﻑ ﺭﺗﺒﺔ ﻏﻴﺮﻩ “জাহিল ব্যক্তি নিজের অবস্থান সম্পর্কেই অবগত নয়, সে কীভাবে অন্যের অবস্থান সম্পর্কে জানবে?!” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩২১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

·
উপসংহার:

পরিশেষে বলছি, আমাদের জন্য প্রকৃত ‘আলিম চেনা অতীব জরুরি কাজ। কারণ আমাদেরকে দ্বীন বুঝতে হলে তাঁদের শরণাপন্ন হতে হয়, তাঁদেরকে দ্বীনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হয়। আর যাকে তাকে ‘আলিম গণ্য করে তাদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করলে ধ্বংস অনিবার্য। মহান আল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (অর্থাৎ, সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর কতই না মন্দ সে আবাসস্থল!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]

আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত ও নির্ভরযোগ্য ‘আলিম চেনার এবং তাঁদের কাছ থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Friday, August 16, 2019

ইসলামে হালাল উপার্জন : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

লিখেছেন: ড. মোঃ আবদুল কাদের | ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার
ইসলাম পরিপূর্ণ এক জীবন ব্যবস্থার নাম।এতে মানবজীবনের ব্যক্তিগত পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের যাবতীয় বিষয়ের সমাধানে হিকমতপূর্ণ বিধানের বর্ণনা রয়েছে। এটি মানুষের জন্য যা কল্যাণকর ও হিতকর সে বিষয় বৈধ করত: সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও ক্ষতিকর বিষয় হতে মানবজাতিকে সর্তক করেছে। অতএব, ইসলাম মানবজাতির জন্য কল্যাণের আঁধার হিসেবে শান্তির বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। মানবদেহের জীবনীশক্তি হিসেবে রক্তের যে গুরুত্ব রয়েছে, মানবজীবনে অর্থের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাও তেমনি তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে অর্থ মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এর জন্য প্রয়োজন মেধা, শ্রম ও সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার। জীবন নির্বাহের এ মাধ্যমটিই পেশা হিসেবে পরিগণিত।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নির্ধারিত ফরজ ইবাদত (যেমন নামায) সম্পন্ন করার পর জীবিকা অন্বেষনে জমীনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব নিজেই জীবিকা অর্জনে ব্রতী হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পরিশ্রম লব্দ উপার্জনকে সর্বোত্তম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে নিশ্চয় উপার্জনের পন্থা শরীয়াত নির্ধারিত পন্থায় হতে হবে। এমন উপার্জনকে ইসলাম অবৈধ ঘোষনা করেছে, যাতে প্রতারনা, মিথ্যা, ধোঁকাবাজি, জনসাধারণের অকল্যাণ সর্বোপরি জুলুম রয়েছে। দুনিয়ার জীবনে অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে সুখ-সাচ্ছন্দ লাভ করলেও পরকালীন জীবনে রয়েছে এর জন্য জবাবদিহিতা ও সুবিচার। সে লক্ষে ইসলাম হালাল উপার্জনের অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছে। নিম্নে এসম্পর্কে আলোচনা প্রদত্ত হলো:

উপার্জনের গুরুত্ব

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলোর যোগান দিতে মানুষকে বেছে নিতে হয় সম্পদ উপার্জনের নানাবিধ পন্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেসব পেশা অবলম্বন করে তা হলো: কৃষি, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরী, শিল্প প্রভৃতি। উপার্জনের মাধ্যম ব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষেই উপর্যুক্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে মহান আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব হিসেবে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি; বরং তাদের যাবতিয় মৌলিক অধিকারও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে লক্ষে তিনি মহাশুণ্যের সব সৃষ্টিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের (ব্যবহারের জন্য) তৈরী করেছেন।’’ [1]
তবে এক্ষেত্রে তিনি মানুষকে দিয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা যা তার ইখতিয়ারভুক্ত একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ফলে প্রত্যেকে স্ব-স্ব যোগ্যতা, মেধা, শ্রম ও সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যেমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রয়াস চালায়।
মানবজীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানুষের জীবন নির্বাহের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে সমাদৃত, মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ মানুষকে এর গুরুত্ব অনুধাবন বোধগম্য করার নিমিত্তে পবিত্র কুরআনে সালাতের পাশাপাশি যাকাত তথা অর্থের উল্লেখ ৮২ স্থানে করেছেন। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ অর্থনৈতিক বিধানও নির্দেশ করেছেন। ফলে কুরআনুল কারিমকে একটি অর্থবিদ্যার মহাকোষ বললেও অত্যুক্তি হবে না। মানুষ কিভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণাবলীর সম্পর্কে এর সুষ্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। তাইতো ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদে তিনি যাকাত ফরয করেছেন, যেন সম্পদ এক শ্রেণির লোকদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে। আল্লাহ তা‘আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: ‘‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।’’ [2]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন: ‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো।’’ [3]
এখানে উপার্জনের একটি মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। আর তাহলো এমন পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আল্লাহর স্মরণে ব্রত থাকা যায়।
অতএব, যেসব পেশায় বা উপার্জনের পন্থায় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলাম তা অবৈধ হিসেবে ঘোষনা করেছে। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। সেটি হলো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যদি কখনও আল্লাহর স্মরণে ব্রত হওয়ার আহবান আসে, তাহলে তখন যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্ম পরিহার করা সকল ইমানদারদের জন্য ওয়াজিব। [4]
জীবিকা অর্জনের নিমিত্তে বিদেশে পাড়ি জমানোরও নির্দেশও রয়েছে এবং এটিকে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সমপর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।’’ [5]
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন: ‘‘অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত।’’ [6]
তাছাড়া ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। এ মর্মে যুবাইর ইবনে ‘আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রয় করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুক এটা তার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করা, চাই তাকে দান করুক বা না করুক তার চাইতে উত্তম।’’ [7]
অতএব উপার্জন করার মনোবৃত্তি ব্যতিরেকে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হয় তাদের এ ধরনের পেশাকে অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায় সে কিয়ামতের দিন এমন অরস্থায় আগমন করবে যে, তার মুখমণ্ডলে এক টুকরো গোশতও থাকবে না।’’ [8]
ইসলাম মানবতার ধর্ম। দুস্থ মানবতার সেবায় দান করার রীতি ইসলামে চালু আছে। তবে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে ইসলাম অনুমোদন দেয় নি। বরং একে বার বার নিরুৎসাহিত করেছে যা, নিষেধের পর্যায় পৌঁছে গিয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম নিজ হাতে উপার্জন করাকে সর্বোত্তম উপার্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ মর্মে হাদীসে এসেছে: “হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।’’ [9]
নবী রাসূলগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানো ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন

হালাল বলতে আমরা সাধারণত: যাবতীয় বৈধ পন্থাকেই বুঝি। যা কল্যানকর ও হিতকর এবং যাবতীয় অবৈধ ও অকল্যাণকর হতে মুক্ত। ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে উপার্জনের জন্যে উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং যাবতীয় বৈধ ও অবৈধ পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। অতএব হালাল উপার্জন বলতে বুঝায় উপার্জনের ক্ষেত্রে বৈধ ও শরী‘আত সম্মত পন্থা অবলম্বন।
হালাল উপায়ে জীবিকা উপার্জনের ফলে সমাজ ব্যবস্থায় ধনী দরিদ্রের মাঝে সুষম ভারসাম্য ফিরে আসে; কৃষক দিন মজুর, ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিক-মালিক এবং অধস্তনদের সাথে উর্ধ্বতনদের সুদৃঢ় ও সংগতিপূণ সর্ম্পক তৈরী হয়। ফলে সকল শ্রেণীর নাগরিকই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় এবং সমাজ সংসারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস। মূলত: ইসলাম যে পেশাকে অবৈধ বলে ঘোষনা করেছে সেসব পন্থায় উপার্জন ব্যতীত অন্যান্য পন্থায় উপার্জন করা বৈধ বলে বিবেচিত।[10]
ইসলাম প্রদত্ত সীমারেখা ও মূলনীতি ঠিক রেখে বৈধ যে কোন পণ্যের ব্যবসা করার মাধ্যমে উপার্জনকে ইসলামী শরী‘আত হালাল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া যদি কেউ বৈধ উপায়ে যোগ্যতানুযায়ী চাকুরী করে এবং ঘুষ সহ যাবতীয় অবৈধ লেন-দেন ও অসৎ মানসিকতা থেকে দুরে থাকে তবে সেটাও জীবিকার্জনের হালাল পন্থা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোযা, যাকাত প্রভৃতির উপরই সীমাবদ্ধ নয়। জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপ রেখার প্রণেতা হিসেবে ইসলামে রয়েছে জীবন ধারনের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও অন্যতম একটি মৌলিক ইবাদত। শুধু তাই নয়, ইসলাম এটিকে অত্যাবশ্যক (ফরয) কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস প্রনিধানযোগ্য। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘ফরয আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরয।’’ [11]
উপর্যুক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রতিভাত হয় যে, ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব কতখানি এবং কোন ব্যক্তি যেন হারাম কোন পেশা অবলম্বন না করে উপরোক্ত হাদীসে সে মর্মেও অর্ন্তনিহীত নির্দেশ রয়েছে। পরকালীন জীবনে এ ফরয ইবাদতটি সম্পর্কে যে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা যাবতীয় ফরয সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব এটি ফরয কাজ সমূহের অন্তর্গত এক মৌলিক অত্যাশ্যকীয় ইবাদতে গণ্য হয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব পন্থাকে হালাল করেছে সেগুলোর মূলনীতিসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো:

১.১ ব্যবসা বাণিজ্য

উপার্জনের ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য সব চেয়ে বড় সেক্টর। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মহৎ পেশা। সমাজ জীবনে যার ক্রিয়াশীলতা ও প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূঢ় প্রসারী। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে শুধু বৈধ বলেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছে। যেন মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর বুকে একটি শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ও স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তিনি (আল্লাহ) ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’’ [12]
উপরোক্ত আয়াতের মর্ম উপলব্দিতে প্রতীয়মান হয় যে, সুদভিত্তিক লেন-দেনের মাধ্যমে যারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করছে তাদের মুকাবিলায় মহান আল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ বলে ঘোষনা দিয়েছেন। অতএব অবৈধ পন্থা হতে বাঁচার এবং প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি লাভের এটি অনেক বড় অবলম্বণ। এছাড়াও জীবিকার একটি বৃহৎ অংশ রয়েছে এ ব্যবস্থাপনায়। মুরসাল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: ‘‘তোমরা ব্যবসা বানিজ্য কর। কারণ তাতেই নিহিত রয়েছে নয়-দশমাংশ জীবিকা’’ [13]
তাছাড়া সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়নতা, ধোঁকামুক্ত, কল্যাণমুখী মানসিকতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদীস বিদ্যমান। এ ধরনের ব্যবসায়ীকে তিনি নবীগণ, ছিদ্দিক, ও শহীদদের সমমর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিকীন ও আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে।[14]
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব মূলনীতি দিয়েছে তাহলো: ধোঁকা ও প্রতারনামুক্ত, মিথ্যার আশ্রয় বিহীন, পণ্যের দোষ – গুণ স্পষ্ট থাকা, ভাল পণ্যের সাথে খারাপ পণ্যের মিশ্রণ না করা, মুনাফাখোরী মানোবৃত্তি পরিহার করে কল্যাণমুখী মানষিকতা পোষণ, মজুদদারি চিন্তা-চেতনা পোষণ না করা, ওজনে হের-ফের না করা, সর্বোপরি যাবতীয় শঠতা ও জুলুম থেকে বিরত থাকা।

১.২. চাকুরী

এটি জীবিকা নির্বাহে উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমাদের দেশে সরকারী আধা-সরকারী, বেসরকারী, ব্যাংক-বীমা, এন.জি.ও. ও ব্যক্তিমালিকানাধিন এবং স্বায়ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: ‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’’ [15]
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সকলকে যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি যেমন ঘুষ গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি অন্যায়ভাবে কাউকে  সুযোগ সুবিধা (undue Facilities) দান, কারো প্রতি জুলুম করা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি-পরায়ণদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। [16]
এছাড়াও কর্তব্যে অবহেলা, অনিয়মানুবর্তিতা ও কার্যে উদাসীনতার দরুন চাকুরীজীবিদের উপার্জন অনেক সময় বৈধতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে দেখা যায় অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠ দানের পরিবর্তে টিউশনী ও কোচিং সেন্টারের প্রতি বেশী ঝুকে পড়েছেন। অনেক ডাক্তার হাসপাতালে রোগী না দেখে ক্লিনিকে জমজমাট ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। যা কর্তব্যে অবহেলার নামান্তর। তারা যদি স্বীয় দায়িত্ব যথাযথ ও পূর্ণভাবে পালন করার পর অতিরিক্ত সময় এসব কাজ করেন তবে তা দোষের নয়।

১.৩.কৃষিকর্ম

কৃষিকর্ম জীবিকা নির্বাহে অন্যতম উপার্জন মাধ্যম। ইসলাম এটিকে মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কৃষিকার্যের সুচনা হয়েছে আদিপিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকেই তাঁকে কৃষি কার্য, আগুনের ব্যবহার ও কুটির শিল্প শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। [17]
পর্যায়ক্রমে এ ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মানবজাতির কল্যাণে এ ব্যবস্থাকে সাব্যস্ত করেছেন।[18]
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষি নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ ইসলামের কৃষিনীতি সম্পর্কে অবগত হয়ে যদি কেউ তাঁর এ ব্যবস্থাপনায় ইসলামী নীতি অনুসরণ করে তবেই তা হালাল উপার্জন হবে। আর সেগুলো হলো:
[ক]. ভূমির মালিক নিজেই চাষ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘যার জমি রয়েছে সে নিজেই চাষাবাদ করবে।’’ [19]
তবে এক্ষেত্রে কারো জমি অন্যায়ভাবে অধিকারে আনে কিংবা উত্তরাধিকারকে অংশ না দিয়ে চাষ করলে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [20]
অথবা, মজুরের দ্বারা নিজের তত্বাবধানে চাষ করবে অথবা কোন ভূমিহীনকে চাষাবাদ ও ভোগদখল করতে দিবে।
[খ]. উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ দেয়ার শর্তে কাউকে চাষ করতে দেয়া।
[গ]. প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকার বিনিময়ে কাউকে এক বছরের জন্য তার ভোগাধিকার দান করা। [21]
[ঘ]. জমিতে হারাম দ্রব্য উৎপাদন না করা, যাতে ক্ষতিকর কোন উপাদান রয়েছে্ যেমন: আফিম, গাঁজা, চারস বা অনুরূপ মাদক দ্রব্য। [22]
[ঙ]. অংশীদারিত্ব চাষাবাদ যাবতীয় প্রতারণা, ধোঁকা, ঠকবাজি, ও অজ্ঞতা থেকে মুক্ত থেকে ন্যায়পরায়নতা ও ইনসাফ ভিত্তিক নীতির লালন করতে হবে। আল্লামা মাওয়ারদী উল্লেখ করেছেন যে: উৎপাদনের মূল উপাদান দু’টি, এক. কৃষি, দুই. ব্যবসা-বানিজ্য। তবে এদুয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম হলো কৃষি। [23]
ইসলামে মানুষের অর্থ-সম্পদ লাভের তিনটি নৈতিক পন্থা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। আর তা হলো:
১. পরিশ্রম: পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ অর্থ সম্পদ উপার্জন করতে পারে। সে সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার সমন্বয়ে মানুষ অর্থের পাহাড় গড়তে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর নিকট ঐ জীবিকাই উত্তম যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জন করে। এভাবে শ্রমদানের ক্ষেত্রও বহুবিধ ও বিচিত্র ধরনের। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
২. শিল্পকর্ম: ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি শিল্পকর্মও মানুষের অন্যতম পেশা। এ মহতি পেশায় জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়োজিত রয়েছে। এ কর্মটি সম্পর্কে ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বরোপ করেছে। যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসূলগণ শুধু উৎসাহের বানী প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি; বরং শিল্প ও ব্যবসার ময়দানে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘‘আমি তাঁকে (দাউদ আলাইহিস সালাম) বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে।’’ [24]
শিল্প শিক্ষাকে মহান আল্লাহ নিয়ামত হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এ-জন্য শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নবীগণ কোন না কোন শিল্পকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। উপরোক্ত আয়াতে দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম শিল্পে নিয়োজিত ছিলেন বলে আভাস রয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রথম জীবনে চাষী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি শষ্য বপন ও কর্তন করতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে জমি মানুষের খিদমতের জন্য কোন কাজ করে তাঁর দৃষ্টান্ত মূসা আলাইহিস সালাম জননীর ন্যায়। তিনি নিজে সন্তানকে দুধ পান করিয়েছেন; আবার ফেরাউনের কাছ থেকে পাবিশ্রমিক পেয়েছেন।
এছাড়া মূসা আলাইহিস সালাম মাদইয়ানে ৮ বছর চাকরী করছেন, নূহ আলাইহিস সালাম জাহাজ নির্মান করেছেন। যাকারিয়া আলাইহিস সালাম কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকালে ছাগল চরাতেন, যৌবনে ব্যবসা করেছেন, চাকরী করেছেন, খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন, মাথায় বোঝা বহন করেছেন। কূপ থেকে পানি তুলেছেন, নিজ হাতে জামা ও জুতা সেলাই করেছেন, স্ত্রীকে ঘরে রান্নার কাজে সাহায্য করেছেন, এমনকি দুধ দোহনও করেছেন। এজন্য পেশা ক্ষুদ্র হোক, বৃহৎ হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। নিজে পরিশ্রম করে শ্রমলব্দ আয়ে নিজের পরিবারবর্গের আস্বাদনের জন্য সংগ্রাম করা অতিশয় সম্মান ও পূণ্যের কাজ।
৩. উত্তরাধিকার: উত্তরাধিকারসূত্রে মানুষ অর্থ সম্পদ লাভ করে থাকে। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিগণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী মৃতের পরিত্যক্ত স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি হতে যে সম্পদ লাব করে থাকে তা হালাল।
৪. হেবা বা দান: কোন বিনিময় মূল্য বা প্রতিদান ব্যাতিরেকে কাউকে নিজের সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর বা দান করা এবং যার অনুকুলে হস্তান্তর বা দান করা হয় সে ব্যাক্তি কর্তৃক তা গ্রহণ করাকে হেবা বলা হয়। হেবার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পদ হালাল।

উপার্জন বৈধ হওয়ার ইসলামী মূলনীতি

ইসলামে উপার্জনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দু’টি মূলনীতি রয়েছে।
এক. মূলগত: যা উপার্জন করা হবে তা মূলগতভাবে হালাল হতে হবে।
দুই. পদ্ধতিগত: যা উপার্জন করব তা বৈধ পন্থায় হতে হবে।

এক. মূলগত

একজন ব্যক্তি যা উপার্জন করবে সে উপার্জেয় বস্ত্তটি অবশ্যই উত্তম ও হালাল হতে হবে। আর ইসলাম যাবতীয় কল্যাণকর ও হিতকর বস্ত্তকে মানবজাতির জন্য হালাল করেছে।
সেলক্ষ্যেই পবিত্র কুরআনে طيبات ও حلال শব্দের অবতারনা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সম্বোধন করে হালাল ও তাইয়্যিব যা রয়েছে তা থেকে আহার করতে বলেছেন। তিনি বলেন: ‘‘হে মানুষ! পৃথিবীতে হালাল ও তাইয়্যেব যা রয়েছে তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [25]
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, শুধুমাত্র হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই তাইয়্যিব (পবিত্র ও উত্তম) হতে হবে। এখানে তাইয়্যিব বলতে ভেজালমূক্ত স্বাস্থসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ আয়াতে হালাল শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং তাইয়্যিব দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং এ দু’শব্দ দিয়ে দু’টি মূলনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

দুই. পদ্ধতিগত

উপার্জনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটি অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে। কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থসম্পদ উপার্জন করতে ইসলাম নিষেধ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুমিনগণকে সর্তক করা হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা। কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ; এবং একে অপরকে হত্যা করিওনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’’ [26]
মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।’’ [27]
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, উপার্জনের পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির ঘোষনা রয়েছে। আর এ ধরনের উপায় জুলমের নামান্তর। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত উচিত উপার্জনের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
প্রখ্যাত আধুনিক তাফসিরকার আল্লামা রশিদ রেজা আয়াতে উল্লেখিত হালাল ও তাইয়্যিবা এ দু’টি শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, কোন বস্ত্ত তাইয়্যিব বা উত্তম হওয়ার অর্থ হলো তাতে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকা। কেননা পবিত্র কুরআনে যেসব বস্ত্তর ব্যাপারে হারাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো মূলগতভাবেই হারাম বা নিষিদ্ধ। একমাত্র নিরূপায় অবস্থা ছাড়া কোন অবস্থাতেই তার ব্যবহার বৈধ নয়। এ ছাড়াও এক ধরনের হারাম রয়েছে যা মূলগতভাবে হারাম নয় কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন কারণে তাকে হারাম বলা হয়েছে। মূলত: এ জাতীয় বস্ত্তর বিপরীতেই তাইয়্যিব বা উত্তম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যেসব বস্ত্ত অন্যায়ভাবে উপার্জন করা হয়েছে, ন্যায়ানুগ পন্থায় করা হয়নি। যেমন: সুদ, ঘুষ, জুয়া, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধোঁকা-প্রতারনা, আমানতের খিয়নত ইত্যাদি পন্থায় করা হয়েছে এগুলো হারাম। অর্থ্যাৎ এগুলো তাইয়্যিব বা উত্তম নয়। সারকথা প্রতিটি অপবিত্র বস্ত্তই হারাম, তা মূলগত কারণেই হোক কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন কারণেই হোক।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের গুরুত্ব ইসলামে যেমনি রয়েছে, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও অত্যাধিক। ইসলাম মানুষের জন্য যাবতীয় জীবনোপকরণকে সহজসাধ্য, সুস্পষ্ট, ও পবিত্র করার নিমিত্বে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা দিয়েছে। অতএব নির্দেশনা বহির্ভূত যাবতীয় উপার্জনই হারাম বা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের বক্তব্য হল মানুষকে নিজের সার্মথ্য ও যোগ্যতানুযায়ী নিজেই নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর সন্ধান করবে। এটি মানুষের অন্যতম অধিকার। তবে ইসলাম মানুষকে এ অধিকার দেয়নি যে, সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্য স্বীয় খেয়ালখুশিমত যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারবে। তাইতো ইসলাম অর্থসম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যাক্তির জন্য কল্যানকর যাবতীয় ব্যবস্থাকে ইসলাম হালাল করেছে। নিম্নে এ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল:

এক. হালাল উপার্জন একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান

ইসলাম মানুষের জন্য হালাল ও হারামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপন করেই শেষ করেনি, বরং হালাল উপার্জনে রয়েছে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা। ফরজ ইবাদত সমূহের আদায়ের পর এ মহতি কর্মে ঝাপিয়ে পরতে উৎসাহিত করা হয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও বৈধ উপায় অবলম্বন করা ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের উপর ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের প্রশ্নে সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদের ব্যপারে নবী করিম সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন ব্যক্তি কোন উৎস থেকে সম্পদ আহরন করছে, তা হালাল না হারাম, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না।’’ [28]

দুই. হালাল উপার্জন দু’আ কবুলের পূর্বশর্ত

মানুষের প্রত্যহিক ও জাগতিক জীবনের চাহিদার কোন অন্ত নেই। তবে এগুলো মানুষের কাঙ্খিত ও বাঞ্চিত হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মহান স্রষ্ট্রার অনুগ্রহের, ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। আর এর জন্য প্রয়োজন একান্তে তাঁর দরবানে আরাধনা করা। মহান আল্লাহ ও মানুষে এ ব্যপারে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এটি অন্যতম ইবাদত ও বটে। রাসূল সা. বলেন: ‘‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত’’ অতএব দু’আ ইসলামে অন্যতম একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর গভীর প্রেম নিবেদন করা চলে এবং যাবতীয় প্রয়োজন পূনণে সহায়ক হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মটি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেননা, অতএব অবৈধ উপার্জন যারা করে তাদের খাদ্যের উপার্জন হয় অবৈধ অর্থে হওয়ায় ইসলম যাবতীয় রক্ত মাংশ সবই হারাম দ্বারা পুষ্ট হয়। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির প্রার্থনাকে ইসলামে কখনো সমর্থন করেনা। [29]
এ মর্মে রাসূল সা. বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূল সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’’ [30]
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা হল। ‘‘হে মানবমন্ডলী ! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী ভক্ষন কর।’’ তখন সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লহর কাছে দু’আ করুন যেন আমার দু’আ কবুল হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সা‘দ, তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তোমার দু’আ কবুল হবে।’’  [31]

তিন. হালাল উপার্জনে বরকত লাভ হয়

উপার্জনে বরকত লাভ করতে হষে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেকেই বরকত মন্ডিত করেন। এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের বারকত নষ্ট করে দেন। আর যেখানে অপচয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্পদের প্রাচুর্যতা লাভে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে বরকতের কারণে খুব স্বল্প সময়েই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চার. হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়

মানুষের দু’টি জীবন রয়েছে, একটি ইহলৌকিক, অপরটি পরলৌকিক। অতএব হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যাক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাস্তি অপেক্ষা করছে।

পাঁচ. অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জনকারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত

ইবন আববাস রা.বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ ‘‘আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম।’’ [32]
কাব ইবন উজরাহ রা. রাসূলে কারীম সা. থেকে বর্ণনা করেন: ‘‘যে শরীর হারাম পেয়ে হ্রষ্ট পুষ্ট হয়েছে, তা জান্নাতে যাবে না।’’  [33]
দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের উপর ভিত্তি করে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য পুরুস্কার ও শাস্তি উভয়ের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যারা তাঁর অনুগত বান্দা তারাই পুরুস্কার প্রাপ্ত হবে। যেহেতু অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারী ব্যক্তি তার অবাধ্য ও দুশমন তাই তাদের জন্য ও শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। অতএব এ পন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি জাহান্নামী।

ছয়. হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের শর্ত

অর্থ-সম্পদ দ্বারাই মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে, খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে তার দেহের বৃদ্ধি ঘটে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ হয়। কিন্তু এ উপকরণ ক্রয়ের অর্থ যদি অবৈধ উপায়ে উপার্জিত হয় তবে তা কিভাবে বৈধ শারিরিক বৃদ্ধি হতে পারে। ফলে তার শরীরের রক্তে ও মাংসে অবৈধ বিষয়ের সংমিশ্রন ঘটে। আর এর দ্বারা যত ইবাদতই করা হোক না তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। কেননা আল্লাহ অপবিত্র কোন কিছুই গ্রহণ করে না। অতএব হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হিসেবে শিরোধার্য। সালাত, যাকাত ও হজ্জ ইত্যাদি ফরয ইবাদতসমূহ কবুল হওয়ার জন্র অবশ্যই বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে হবে।

খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন হালাল উপার্জনের অন্বেষক

তাঁরা যাবতীয় লেন দেন হালাল পন্থা অবলম্বন করতেন। হারামের ভয়াবহতা সম্পর্কে তারা খুবই সচেতন ছিলেন। আবু বকর রা. এর একটি ঘটনা থেকে তাঁর হারাম বর্জন প্রবণতা ও হালালের বিষয়ে কঠোরতা সহজেই অনুমেয়। বর্ণিত আছে যে, আবু বকর রা. এর এক গোলাম ছিল সে তাঁর সঙ্গে কিছু অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তি পত্র করে। অতঃপর সে যখন প্রতিদিন মুক্তিতপনের কিছু অর্থ নিয়ে আসতো, তখন আবু বকর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, এ অর্থ কিভাবে সংগ্রহ করেছো? যদি সে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারতো, তবেই তিনি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতেন। অন্যথায় ব্যবহার করতেন না। এক রাতে সে আবু বকর রা. এর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সে দিন তিনি রোযা রেখেছিলেন। তাই সেই খাবার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ভুরে যান এবং তা থেকে এক লোকমা খেয়ে ফেলেন। অতঃপর মনে হওয়া মাত্র তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কিভাবে অর্জন করেছ? সে বললোঃ জাহেলিয়াতের আমলে আমি মানুষের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভাল গণক ছিলাম না। তাই মানুষকে শুধু ধোঁকা দিতাম। এই খাবার সেই ধোঁকার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংগৃহীত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ সর্বনাশ তুমি আমায় একি করেছ! অতঃপর তিনি গলায় আঙ্গুল দিয়ে ভমি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে খাবারের কিছুই বের হয়নি। অতঃপর তিনি পানি পান করে ইচ্ছাকৃত বমির মাধ্যমে পেটের সব খাবার বের করে দিলেন। তিনি আরো বললেনঃ উক্ত খাবার বের করতে গিয়ে আমার মৃত্যুর ঝঁকি থাকত তাহলেও তা বের করে ছাড়তাম। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যে শরীর হারাম খাদ্য দিয়ে স্বাস্থ্য লাভ করে, তার জন্য জাহান্নাম উপযুক্ত স্থান। তাই আমি ভয় পেয়ে যাই, যে এক লোকমা হারাম খাবার দিয়ে আমার শরীর কিভাবে মোটা-তাজা হতে পারে।’’

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে উলামায়ে কিরামের বক্তব্য

বৈধ পন্থায় উপার্জনের গুরুত্ব উপলব্দি করতঃ তার তাৎপর্য ও পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে বিদগ্ধ উলামায়ে কিরাম ও মুফাসসিরগণ পান্ডিত্যপূণ উক্তির অবতারনা করেছেন। যেমন: সুফিয়ান সাওরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ ‘‘না জানি তা হারামের অন্তর্ভক্ত হয়ে যায় এ আশংকায় আমরা হালাল সম্পদের দশভাগের নয়ভাগ পরিহার করতাম।’’
দুই. ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ তাওবা করে হালাল উপার্জনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ এমন কোন মানুষের নামায কবুল করেন না, যার উদরে হারাম খাদ্য রয়েছে।
তিন. ইমাম ওহাব ইবনুল ওয়ারদ (রহ.) বলেনঃ যদি তুমি রাত ভর খুটির ন্যায় ইবাদতে দাড়িয়ে থাক, তবুও তা তোমার কোন কাজে আসবে না! যতক্ষন পর্যন্ত তুমি নিশ্চত হবে যে, তুমি যা খাচ্ছ তা হালাল না হারাম।
চার. সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেনঃ যে লোক অবৈধ অর্থ দিয়ে কোন নেক কাজ করে, সে পেশাব দিয়ে কাপড় পবিত্র কারীর মত।

উপসংহার:

ইলাম কল্যাণকর এক মহতি জীবন ব্যবস্থা এতে যাবতিয় পবিত্র ও উত্তম বিষয় ও বস্ত্তকে বৈধ করা হয়েছে। কেননা বস্তু মাত্রের মাঝেই কিছু কল্যাণ ও কিছু অকল্যাণের সমাহার রয়েছে। গুনাগুণের বিচারে যে বস্ত্ততে মানুষের জন্য কল্যানকর উপাদানের পরিমাণ বেশী, অকল্যানের পরিমাণ কম, সেই গুলোকেই মহান আল্লাহ মানুষের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। আর যে সকল বস্ত্ততে কল্যান কম অথচ অকল্যানের পরিমাণ বেশী, সেগুলোকে মনুষের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (যেমন মদ হারাম হওয়ার কারণ কুরআনে বিধৃত হয়েছে) অতএব, আমাদেরক খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-আষাক এবং বিভিন্ন দ্রব্য সামগী্রর ব্যবহার, এমনকি যাবতীয় আয় উপার্জনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সেগুলো যেন হালাল ও উত্তম হয়। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্নক পদার্থ্য দিয়ে তৈরী অথবা যা মানুষের মানবতা বোধকে ধ্বংস করে অথবা যা মানুষের জন্য পাশবিকতার জন্ম দেয় এবং তার সংযমী স্বভাবকে বিনষ্ট করে! কিংবা যা মানুষের আধ্যাতিক ও নৈতিক ক্ষতির (ব্যধি) কারণ হয়, এসকল বস্ত্ত ও উপার্জন মাধ্যম অবশ্যই পরিহার করতে হবে। তাছাড়া যেসব উপায় দম্ভ, অহংকার জন্ম দেয়, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধকে নষ্ট করে, নিষিদ্ধ ভোগ-বিলাসের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে, জুলুম-স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্নকেন্দ্রিকতার জন্ম দেয়, দুশ্চরিত্রের প্রতিধাবিত করে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই এসব মাধ্যম বর্জন করতে হবে। আমাদের রুজি-রোজগার যখন এসব থেকে পূতে পবিত্র হবে তখনই তা হালাল ও সিদ্ধ হবে।

[1]. সূরা আল-বাকারাহ: ২৯।
[2]. সূরা জুমআহ: ১০।
[3]. কুরতুবী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, আলজামেউ লি আহকামিল কুরআন, খ.১৮,পৃ.৯৬।
[4]. সূরা জুমআহ: ৯।
[5]. সূরা মুয়যাম্মিল: ২০।
[6]. আবুল দিদা ইসমইল ইবন উমর ইবন কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, সম্পাদনায়: সামী ইবন মুহাম্মদ সাল্লামা, বৈরুত: দারু তাইবা নিন্ন্যাসরী, দিত্বীয় সংস্করণ, ১৪২০ হি, খ. ৮, পৃ. ২৫৮।
[7]. ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম. হাদীস নং. (১০৪২)।
[8]. ইমাম বুখারী, আলজামে‘উসসাহীহ, হাদীস নং ১৪৭৪; ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম. হাদীস নং. ১০৪০।
[9]. ইমাম আহমাদ, মুসনাদ, খ.৪, পৃ. ১৪১.
[10]. ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম পেশা হলো: অপ্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ, বেশ্যাবৃত্তি, নৃত্য ও যেনৈশিল্প, অবৈধ ব্যবসা-বানিজ্য যেমন, মুর্তি, অবৈধ পাণীয়, ভাষ্কর্য ও প্রতিকৃতি নির্মান শিল্প, সুফী কারবার, ওজনে কম দেয়া, ধোঁকা ও প্রতারণামূলক ব্যবসা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, ও চাকুরী হতে অবৈধ উপার্জন যেমন ঘুষ গ্রহণ।
[11]. আবূ বকর আহমদ ইবনুল হুসাইন আল-বায়হাকী, সুনান আল-বায়হাকী, সম্পাদনায়: আব্দুল কাদির আতা (মক্কা আল-মুকাররমা: মাকতাবাতু দারুল বায, ১৪১৪ হি/১৯৯৪ খ্রী.) খ. ৬, পৃ. ১২৮। ইমাম বায়হাকী বলেন, এর রাবী দুর্বল।
[12]. সূরা আল-বাকারা: ২৭৫।
[13]. গাযালী, ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন, (মাকতবাতুল মুস্তফা আল বাবী ওয়াল হালবী) খ. ২, পৃ. ৬৪। ইমাম ‘ইরাকী বলেন: মুরসাল
[14]. ইমাম তিরমিযী, জামে’ আত্-তিরমিযী, হাদীস নং- ১২০৯। তবে আল্লামা আলবানী এটাকে দুর্বল বলেছেন।
[15]. ইমাম বুখারী, সহীহ, হাদীস নং ৮৯৩ ; ইমাম মুসলিম, সহীহ, হাদীস নং ১৮২৯।
[16]. ঘুষ গ্রহীতা ও দাতা উভয়ের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِي ‘‘ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে আল্লাহ্‌র রাসূল লা‘নত করেছেন।” [ইমাম তিরমিযী, সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৩৭; ইমাম আবু দাউদ, আসসুনান, ৩৫৮০] জুলুম, স্বজনপ্রীতি সংক্রান্ত হাদীস আসবে।
[17]. ইসলামী বিশ্বকোষ, (ঢাকা: ই. ফা. বা. তা. বি.) খ. ১, পৃ. ২৪৩; ইবন খালদুন, মুবাদ্দমা, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১ম প্রকাশ, ১৯৮১) খ. ২, পৃ. ৭-৮।
[18]. আল্লাহ তা’আলা বলেন:
﴿فَلۡيَنظُرِ ٱلۡإِنسَٰنُ إِلَىٰ طَعَامِهِۦٓ ٢٤ أَنَّا صَبَبۡنَا ٱلۡمَآءَ صَبّٗا ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا ٱلۡأَرۡضَ شَقّٗا ٢٦ فَأَنۢبَتۡنَا فِيهَا حَبّٗا ٢٧ وَعِنَبٗا وَقَضۡبٗا ٢٨ وَزَيۡتُونٗا وَنَخۡلٗا ٢٩ وَحَدَآئِقَ غُلۡبٗا ٣٠ وَفَٰكِهَةٗ وَأَبّٗا ٣١ مَّتَٰعٗا لَّكُمۡ وَلِأَنۡعَٰمِكُمۡ﴾
  সূরা আবাসা: ২৪-৩২।)
[19]. ইমাম বুখারী, সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং – ২৩৪০।
[20]. কেউ এক খন্ড জমি অন্যায়ভাবে অধিকারে নিলে কিয়ামতের দিন ঐ জমির সাত স্তবক পর্যন্ত তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। নবী (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। তাদের একজন হলো যে জমির আইল বা সীমানা পরিবর্তন করে ফেলে। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ (মিসর: মুয়াসসাতুল কুরতবা, তা. বি) খ. ৪, পৃ. ১০৩।
[21]. মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামের অর্থনীতি, (ঢাকা: খায়রুন প্রকাশনী, ৪র্থ সংস্করণ, ১৯৮৭) পৃ. ১৫৮-১৫৯।
[22]. রাসূল (সা.) বলেছেন, মাদক দ্রব্য উৎপাদনকারী, যে উৎপাদন করার, মদ্যপায়ী, বহনকারী, যার কাছে বহন কলে নেয়া হয়, যে পান করায়- পরিবেশনকারী, বিক্রয়কারী, মূল্য গ্রহণ ও ভক্ষনকারী এবং যার জন্য তা ক্রয় করা হয় । এ সকলের উপরই অভিশাপ। (আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আণআম আস-সিজিস্তানী। সুনান, সম্পাদনা: মহিউদ্দীন আবদুল হামিদ ) বৈরুত দারুল ফিকর, তা.বি) খ. ৩ পৃ. ২৪৪।
[23]. আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রুপায়ন (ঢাকা: কওমী পাবলিকেশন্স ১ম সংস্করণ ১৪০৮ হি:/ ২০০১ খ্রী:) পৃ. ১৭৯।
[24]. সূরা আল-আম্বিয়া: ৮০।
[25]. সূরা আল-বাকারা: 168।
[26]. সূরা নিসা:২৯।
[27].  সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৮।
[28]. ইমাম বুখারী, আস-সাহীহ, হাদীস নং ২০৫৯।
[29].  আবু দাউদ, সুনান, হাদীস নং ১৪৭৯।
[30]. ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১০১৫।
[31].  ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, খ. ৬, পৃ. ৩১০
[32]. তাবারানী।
[33]. আবু ইয়া‘লা, মুসনাদ আবী ইয়া‘লা, খ.১ পৃ. ৮৪।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে 
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...