Wednesday, June 17, 2020

"আল্লাহর জন্য দেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করার বিধান" !


  • পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:

  • আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কোনো অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে।

  • যেমন একটি মূলনীতি হলো—আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেসব নাম ও গুণ বর্ণনা করেছে, আমরা কেবল সেসবই সাব্যস্ত করব, কোনোরূপ কমবেশি করব না। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে কমবেশি করে, সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতী। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য, এবং এটাই তাদের মূলনীতি।
  • ·
  • দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
  • আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহয় আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আছে নাকি নেই—তা বর্ণিত হয়নি। তাই আমাদেরকে এ বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা বলব না, এসব বিষয় আল্লাহর আছে। আবার এও বলব না যে, এসব বিষয় আল্লাহর নেই। আল্লাহর ওপর খবরদারি করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা হলো কঠিন বিদ‘আত এবং ভয়াবহ কাবীরাহ গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
  • ·
  • মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ—যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।” [সূরাহ আ‘রাফ: ৩৩]

  • সম্মানিত পাঠক, হাত (ইয়াদ), চোখ (‘আইন), পা (ক্বাদাম) আল্লাহর সিফাত তথা গুণ। কিন্তু এসব গুণ থেকে আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা যায় না। এরকম কাজ সালাফদের কেউ করেননি। তাই যারা এরকম করছেন, তারা বড়ো ধরনের ভুল করছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অবলোকন করে আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফী হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মহান ইমামদের বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ প্রভৃতি শব্দাবলি ব্যবহার করার ব্যাপারে আইম্মায়ে সুন্নাহর বক্তব্য পেশ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।

  • ·
  • ইমামু আহলিস সুন্নাহ হাফিয আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত হাদীসসমূহের ব্যাপারে বলেছেন,
  • نؤمن بها، ونصدق بها بلا كيف، ولا معنى، ولا نرد شيئا منها، ونعلم أن ما جاء به الرسول حق، ولا نرد على رسول الله ﷺ ولا نصف الله بأكثر مما وصف به نفسه بلا حد ولا غاية، ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾ [الشورى : ١١] ، ونقول كما قال، ونصفه بما وصف به نفسه، ولا نتعدى ذلك، ولا يبلغه وصف الواصفين، نؤمن بالقرآن كله محكمه ومتشابه، ولا نزيل عنه صفة من صفاته لشناعة شنعت، ولا نتعدى القرآن والحديث، ولا نعلم كيف كنه ذلك إلا بتصديق الرسول ﷺ وتثبيت القرآن.
  • “আমরা এগুলোর প্রতি ইমান রাখি, কোনো ধরন (কাইফিয়্যাহ) ও অপব্যাখ্যা (তা’উয়ীল) ছাড়াই এগুলোকে সত্যায়ন করি। আমরা এগুলোর কোনো কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করি না। আর আমরা জানি যে, রাসূল ﷺ যা আনয়ন করেছেন তা সুনিশ্চিত হক। আমরা রাসূল ﷺ এর ওপর খবরদারি করি না। আল্লাহ নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার চেয়ে বাড়িয়ে (বাড়তি গুণ দিয়ে) আমরা তাঁকে গুণান্বিত করি না; (আর তাঁর গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে) আমরা সেসবের সীমা ও ধরন বর্ণনা করি না। “বস্তুত তাঁর সদৃশ কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরাহ শূরা: ১১) তিনি যেমন বলেছেন, আমরা তেমনই বলে থাকি।

  • তিনি যে গুণে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন, আমরা সে গুণেই তাঁকে গুণান্বিত করি। আমরা এরচেয়ে অগ্রগমন (বাড়তি) করি না। আর তাঁর কাছে গুণ বর্ণনাকারীদের গুণ পৌঁছে না (অর্থাৎ, সৃষ্টিকুলের কেউ আল্লাহর গুণ নিজে থেকে বর্ণনা করতে সক্ষম নয়)। আমরা সমুদয় কুরআনের প্রতি ইমান রাখি, কুরআনের দ্ব্যর্থহীন (মুহকাম) ও দ্ব্যর্থবোধক (মুতাশাবিহ) বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করি। কারও নিন্দা বা সমালোচনার ভয়ে আমরা তাঁর গুণাবলির মধ্য থেকে কোনো একটি গুণকেও বিলোপ করি না। আমরা (এ ব্যাপারে) কুরআন-হাদীসের ওপর অগ্রগমন করি না (অর্থাৎ, আমরা মনে করি, আল্লাহর সমুদয় গুণাবলি সরাসরি কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর)। কুরআনের প্রমাণীকরণ ও রাসূল ﷺ এর সত্যায়ন ব্যতিরেকে আমরা এগুলোর ধরন-প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ (ইমাম ফাওযানের ভাষ্য-সহ); পৃষ্ঠা: ৪৭-৫৪]
  • আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর—মর্মে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম, ইমাম ইবনু বায ও ইমাম ‘উসাইমীন-সহ আরও অনেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: মাজমূ‘উ ফাতাওয়া লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৬; বাদায়ে‘উল ফাওয়াইদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭০; ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৫১০; শারহুল ক্বাওয়া‘ইদিল মুসলা, পৃষ্ঠা: ৫৯-৬১, ১৪২-১৪৩।
  • ·
  • ১. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] আল্লাহর শানে ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেছেন,
  • فإن ذكر لفظ (الجسم) في أسماء الله وصفاتِه بدعة، لم ينطق بها كتاب ولا سنة، ولا قالَها أحد من سلفِ الأمة وأئمتها، لم يقل أحد منهم: إن الله جسم، ولا إن الله ليس بجسم، ولا إن الله جوهر، ولا إن الله ليس بجوهر.
  • ولفظ (الجسم) لفظٌ مجمل، فمعناه في اللغة هو البدن، ومن قال: إنّ الله مثل بدن الإنسان فهو مفترٍ على الله، ومن قال: إنّ الله يُماثِله شيء من المخلوقات فهو مفترٍ على الله. ومن قال: إن الله ليس بجسمٍ، وأراد بذلك أنه لا يُماثِله شيء من المخلوقات، فالمعنى صحيح وإن كان اللفظ بدعة. وأما من قال: إنَّ الله ليس بجسم، وأراد بذلك أنه لا يُرى في الآخرة، وأنه لم يتكلم بالقرآن العربي، بل القرآن العربي مخلوقٌ أو تصنيفُ جبريل ونحو ذلك، فهذا مفترٍ على الله فيما نفاه عنه.
  • “নিশ্চয় আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দ উল্লেখ করা বিদ‘আত। কেননা কিতাব ও সুন্নাহ এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি; আর না বলেছেন এই উম্মতের সালাফ ও ইমামদের কেউ। তাঁদের কেউ বলেননি, ‘আল্লাহর দেহ আছে’, আর না বলেছেন, ‘আল্লাহর দেহ নেই।’ কেউ বলেননি, ‘আল্লাহ হলেন বস্তু (জাওহার)’, আর না বলেছেন, ‘আল্লাহ বস্তু নন।’
  • ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ শরীর। যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ হলেন মানুষের শরীরের মতো, সে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে। আর যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ দেহসম্পন্ন নন। আর সে উক্ত কথার দ্বারা এই উদ্দেশ্য করে যে, সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তাহলে তার কথার অর্থ বিশুদ্ধ বিবেচিত হবে, যদিও উক্ত শব্দ (অর্থাৎ, ‘দেহ’ শব্দটি) বিদ‘আত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ দেহসম্পন্ন নন। আর সে উক্ত কথার দ্বারা এই উদ্দেশ্য করে যে, আল্লাহকে পরকালে দেখা যাবে না, তিনি (নিজে) আরবি কুরআন বলেননি, বরং আরবি কুরআন হলো মাখলুক (সৃষ্ট) অথবা জিবরীলের রচনা, তাহলে আল্লাহ নিজের থেকে যেসব বিষয়কে নাকচ করেছেন, সেসব বিষয়ে সেই ব্যক্তি আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), জামি‘উল মাসাইল, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২০৬-২০৭; দারু ‘আলামিল ফাওয়ায়েদ, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
  • ·
  • ২. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বর্তমান যুগের মুজাদ্দিদ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ‘জিসম’ বা ‘দেহ’ শব্দের ব্যাপারে ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’ গ্রন্থের রচয়িতা মুহাম্মাদ ‘আলী সাবূনীকে (জন্ম: ১৯৩০ খ্রি.) রদ (খণ্ডন) করতে গিয়ে বলেছেন,
  • ثم ذكر الصابوني-هداه الله-تنزيه الله سبحانه عن الجسم والحدقة والصماخ واللسان والحنجرة، وهذا ليس بمذهب أهل السنة بل هو من أقوال أهل الكلام المذموم وتكلفهم، فإن أهل السنة لا ينفون عن الله إلا ما نفاه عن نفسه، أو نفاه رسولهﷺ، ولا يثبتون له إلا ما أثبته لنفسه أو أثبته له رسولهﷺ، ولم يرد في النصوص نفي هذه الأمور ولا إثباتها، فالواجب الكف عنها وعدم التعرض لها، لا بنفي ولا إثبات، ويغني عن ذلك قول أهل السنة في إثبات صفات الله وأسمائه أنه لا يشابه فيها خلقه، وأنه سبحانه لا ند له ولا كفو له.
  • “অতঃপর সাবূনী হাদাহুল্লাহ (আল্লাহ তাকে হেদায়েত দিন) ‘দেহ, নয়নতারা, কর্ণকুহর, জিহ্বা ও বাগ্‌যন্ত্র থেকে মহান আল্লাহ মুক্ত’—বলে উল্লেখ করেছে। এটা আহলুস সুন্নাহর মতাদর্শ নয়। বরং এটা নিন্দনীয় কালামশাস্ত্র চর্চাকারীদের মতবাদ এবং তাদের বাড়াবাড়ি বক্তব্য। আল্লাহ নিজেকে যে বিষয় থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন, অথবা তাঁর রাসূল ﷺ তাঁকে যা থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন, তা ব্যতীত অন্য কিছুকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত আল্লাহ থেকে মুক্ত ঘোষণা করে না।
  • আর আল্লাহ নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল ﷺ তাঁর জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন, তা ব্যতীত অন্য কিছুকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে না। কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিলসমূহে এসকল বিষয়ের বিদ্যমানতা-অবিদ্যমানতা সম্পর্কে কিছুই বর্ণিত হয়নি (অর্থাৎ, এ সমস্ত বিষয় আল্লাহর আছে কি নেই—তা বর্ণিত হয়নি)। তাই এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা এবং সাব্যস্ত বা নাকচ করার মাধ্যমে এসব নিয়ে পর্যালোচনা না করা আবশ্যক (ওয়াজিব)।
  • প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর এই বক্তব্যই ওই সকল কাজ থেকে অমুখাপেক্ষী করে যে, তিনি (আল্লাহ) কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই তাঁর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নন, বরং তিনি মহাপবিত্র, তাঁর কোনো সমকক্ষ ও শরিক নেই।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২০ হিজরি]
  • ·
  • ৩. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
  • مسألة الجسمية لم ترد لا في القرآن ولا في السنَّة إثباتاً ولا نفياً ، ولكن نقول بالنسبة للفظ : لا ننفي ولا نثبت ، لا نقول : جسم وغير جسم.
  • “জিসমিয়্যাহ বা দেহবাদের মাসআলাহ কুরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি। না বলা হয়েছে, ‘এর অস্তিত্ব আছে’, আর না বলা হয়েছে, ‘এর অস্তিত্ব নেই।’ তাই আমরা এই শব্দের ব্যাপারে বলি, ‘আমরা (এটাকে) সাব্যস্ত করি না, আবার নাকচও করি না।’ আমরা বলি না, ‘আল্লাহর দেহ আছে।’ আবার এও বলি না যে, ‘আল্লাহর দেহ নেই’।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুল ‘আক্বীদাতিস সাফফারীনিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৮; মাদারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
  • ·
  • ৪. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
  • ولكن كيفيتها لا نعلم، لا نقول: جوارح، ولا نقول: غير جوارح. لأن لفظ (الجارحة) لم يرد نفيها ولا إثباتها في كتاب الله ولا في السنة. نحن لا نتكلم في الجوارح ولا نتكلم بالجوارح. مثل : الجسم. الجسم لم يثبته الله ولم ينفه. فنحن لا نتدخل فيه. نتوقف عما لم يرد نفيه ولا إثباته، نتوقف عنه. فلا نقول : هذه جوارح، ولا أنها غير جوارح، ما ندري. لكنها يد حقيقية لائقة بالله جل وعلا، سمع وبصر لائقان بالله جل وعلا. هذا الذي نقول. أما أنها مثل يد المخلوق، أو سمع المخلوق، أو بصر المخلوق، كما تقول الممثلة؛ أو أن معناها القدرة، أو العلم، أو النعمة، كما تقوله المعطلة — كل هذا باطل.
  • “কিন্তু এর (আল্লাহর গুণের) ধরন কেমন—তা আমরা জানি না। আমরা বলি না, ‘এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।’ আবার এও বলি না যে, ‘এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নয়।’ কেননা সাব্যস্তকরণ বা নাকচকরণ কোনো দিক থেকেই ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দ আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি। আমরা (আল্লাহর শানে) ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দ ব্যবহার করি না। যেমন ‘জিসম’ তথা ‘দেহ’। আল্লাহ ‘দেহ’ শব্দকে সাব্যস্ত করেননি, আবার নাকচও করেননি। আমরা এ ব্যাপারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করি না। সাব্যস্তকরণ বা নাকচকরণ—কোনো দিক থেকেই যে বিষয়টি বর্ণিত হয়নি, সে ব্যাপারে আমরা তাওয়াক্বকুফ (ক্ষান্ত বা বিরত থাকা) অবলম্বন করি। আমরা এরকম বিষয়ে ক্ষান্ত থাকি। আমরা বলি না, এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আবার এও বলি না যে, এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নয়।
  • কেননা আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। কিন্তু (আল্লাহর ‘হাত’ নামক গুণের ব্যাপারে আমরা বলি,) সেটা সত্যিকারার্থেই হাত, যা মহান আল্লাহর জন্য উপযোগী। শ্রবণ ও দর্শন—এমন দুটি গুণ, যা মহান আল্লাহর জন্য উপযোগী। আমরা এটাই বলি। পক্ষান্তরে (আল্লাহর গুণের ব্যাপারে) এরকম বলা যে, তা সৃষ্টিজীবের হাতের মতো, বা সৃষ্টিজীবের শ্রবণের মতো, বা সৃষ্টিজীবের দর্শনের মতো, যেমনটি মুমাসসিলাহ সম্প্রদায় বলে থাকে, অথবা এরকম বলা যে, এসবের অর্থ কুদরত, বা জ্ঞান, বা অনুগ্রহ, যেমনটি মু‘আত্বত্বিলাহ সম্প্রদায় বলে থাকে—এগুলোর সবই বাতিল।” [দ্র.: https://youtu.be/Ae_5Bn_aY88 (শারহুল ফাতাওয়া আল-হামাউয়িয়্যাহর ১৯ নং অডিয়ো ক্লিপ থেকে সংগৃহীত)]
  • ·
  • উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ নবআবিষ্কৃত বিদ‘আত। ‘আক্বীদাহ বিশুদ্ধ রাখার জন্য এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তাই যেসব দা‘ঈ ও বক্তা এই বিদ‘আত প্রচার করেছেন, তাদের উচিত আল্লাহর ওয়াস্তে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়া। দু‘আ করি, আল্লাহ তাঁদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে হক গ্রহণ করার এবং ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ার তৌফিক দান করুন। আর সর্বোপরি আমাদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
  • ·
  • অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Tuesday, June 16, 2020

জিন ও শয়তান: পরিচয়, প্রকারভেদ ও পার্থক্য



প্রশ্ন: জিন ও শয়তান কি একই না কি তাদের মাঝে পার্থক্য আছে?
উত্তর:
নিন্মে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শয়তানের পরিচয়, প্রকারভেদ এবং জিন ও শয়তানের মাঝে পার্থক্য তুলে ধরা হল:
🌀 শয়তান কাকে বলে?
শয়তান বলতে কী বুঝায় সে ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◈ বিশিষ্ট ভাষাবিদ, ফিকাহ বিদ ও হাদিস বিদ আবু উবাইদ কাসেম বিন সাল্লাম [জন্ম: ১৫৭ হি:-২২৪ হি:] বলেন:
الشيطان كل عات متمرد من إنس, أو جن
“প্রত্যেক অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘণকারীকে শয়তান বলা হয়।” (বাহরুল উলুম লিস সামারকান্দি ১/২৭৭)
◈ আবু বকর মুহাম্মদ বিন ইসহাক [জন্ম ৮৫ হি:-মৃত্যু: ১৫১ হি;] বলেন:
إنما سمي شيطاناً لأنه شطن عن أمر ربه، والشطون البعيد النازح
“শয়তানকে এই জন্যই শয়তান বলা হয় যে, সে আল্লাহর নির্দেশ পালন থেকে দূরে থাকে। কেননা আরবিতে الشطون-শাতূন শব্দের অর্থ হল, দূরে অবস্থানকারী ও পলাতক।” [আয যীনাহ ফিল কালিমাতুল ইসলামিয়্যাতিল আরাবিয়াহ ২/১৭৯]
◈ কোন কোনো আলেম বলেন: যে নিজে আল্লাহর অবাধ্যতা করে এবং নানা অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত থাকার পাশাপাশি অন্যকে আল্লাহর আনুগত্য করতে বাধা দেয় এবং দ্বীন ও কল্যাণের পথ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে তাকেই ইসলামের পরিভাষায় শয়তান বলা হয়-চাই সে জিনের মধ্য থেকে হোক অথবা মানুষের মধ্য থেকে হোক।
🌀 শয়তান দু প্রকার। যথা:

◉ ক. জিন রূপী শয়তান।
◉ খ. মানুষ রূপী শয়তান।
🌀 জিন দু প্রকার। যথা:
◉ ক. ভালো, দ্বীনদার, আল্লাহ ভীরু, আল্লাহর আনুগত্য শীল ও সৎ কর্মপরায়ন জিন।
◉ খ. খারাপ, ইবলিসের অনুসারী, অবাধ্য, সীমালঙ্ঘণকারী ও দুষ্কৃতিকারী জিন। এই দ্বিতীয় প্রকার হল, জিন রূপী শয়তান।
🌀 জিনদের মত মানুষও ভালো ও মন্দ দু প্রকার।
মানুষের মধ্যেও যারা খারাপ, আল্লাহর অবাধ্য, ইবলিসের অনুসারী ও দুষ্কৃতিকারী তারা হল, মানুষ রূপী শয়তান।
◆ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا
“এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিন শয়তাদেরকে শত্রু নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরা একে অপরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কথাবার্তা শিখিয়ে দেয় যেন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে পারে ।” (সূরা আনআম: ১১২)
◆ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উভয় প্রকার দু প্রকার শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
“(আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই শয়তান থেকে যে) কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।”
(সূরা নাস: ৫ ও ৬)
◆ আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
يا أبا ذر تعوذ بالله من شر شياطين الجن والإنس، قال: يا نبي الله، وهل للإنس شياطين؟ قال: نعم: ((شَيَاطِينَ الإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا)) [الأنعام: 112]
“হে আবু যর, জিন ও মানুষ শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।”
তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী, মানুষের মধ্যেও কি শয়তান আছে?
তিনি বললেন: হ্যাঁ। (তারপর এই আয়াতটি পাঠ করলেন):
شَيَاطِينَ الإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا
“এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিন শয়তাদেরকে শত্রু নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা একে অপরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কথাবার্তা শিখিয়ে দেয় যেন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে পারে।” (সূরা আনআম: ১১২)
সুতরাং জিন রূপী হোক আর মানুষরূপী হোক-উভয় প্রকার শয়তান থেকে আমাদেরকে বাঁচতে হবে এবং আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

Monday, June 15, 2020

মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান কি?





প্রশ্ন: হাজীদের যারা মদিনায় গমন করেন তাদের মারফতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জন্য সালাম প্রেরণের বিধান কি? 
উত্তর: 
আলহামদু লিল্লাহ,
এ কাজটি শরিয়ত সম্মত নয়। এ ধরণের আমলের প্রচলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল না। এবং মুসলমান আলেমরা এ ধরনের কোন আমল করেছেন তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ, যে কোন মুসলমানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেয়া, দুনিয়ার যে কোন স্থান হতেই সম্ভব। আর আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি এ সালাত ও সালামকে তার ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌছে দেবেন, যাদের তিনি এ দায়িত্বেই নিয়োজিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, যে কোন ব্যক্তি যে কোন স্থান হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেবে, তার সালাম অবশ্যই পৌছানো হবে, এতে কোনরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নাই। সুতরাং, মদিনা মুনাওয়ারা যিয়ারতকারীকে সালাম পৌছানোর দায়িত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। তার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না যে, সে কি পৌছতে পারবে নাকি পথে মারা যাবে! অথবা সে কি ভুলে যাবে নাকি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে?
আব্দুল্লাহ বিন মাসদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
পৃথিবীতে আল্লাহর কতক ভ্রমণকারী ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌছে দেয়। (নাসায়ী:১২৮২)‌‌ শায়খ আলবা‌‌নি সহিহ তারগিবে(১৬৬৪)হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। 

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানাবে না, আর আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করবে না। আর আমার উপর দরূদ পাঠ কর, কারণ, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহিহ আল-জামেতে(৭২২৬) সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন। 

আল-লুজনা আদ-দায়িমার আলেমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তিকে সালাম পৌঁছানোর জন্য অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া শরিয়ত অনুমোদিত নয়। বরং, বিদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল বিদআতই গোমরাহি, আর সব গোমরাহির শেষ পরিণতি জাহান্নাম। 
সুতরাং, আমাদের কর্তব্য হলো, এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকা এবং যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের সতর্ক করা। এবং জানিয়ে দেয়া যে, এটি শরিয়ত সম্মত নয়। যাতে তারা এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকে। আমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও মহা করুণা যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দেয়া আমাদের সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত কিংবা পূর্ব প্রান্ত যেখান থেকেই আমরা সালাম দেই না কেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত, তিনি বলেন, 
পৃথিবীতে ভ্রমণকারী আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (বর্ণনায়, ইমাম আহমাদ, নাসায়ি ও অন্যান্যরা) 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমাদের সর্বত্তোম দিন হলো জুমুআর দিন, তাই তোমরা ঐদিনে আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমরা আমার কবরকে উৎসবের জায়গা বানাবে না এবং নিজেদের ঘরকে কবর বানাবে না। আর তোমরা আমার উপর দরূদ পড়বে, কারণ, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়,তোমরা যেখানেই থাক না কেন? 
এ সম্পর্কে আরো বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায, শায়খ আব্দুল আজীজ আলে শেখ, শায়খ ছালেহ আল ফাওজান এবং বকর আবু জায়েদ। ফতোয়া আললুজনা আদদায়েমাহ ৩০,২৯/১৬)

মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিভাগের সদস্য, শেখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক বলেন, মদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাম পাঠানোর কোন প্রমাণ নাই। সাহাবায়ে কিরাম, সালাফে সালেহীন, তাবেয়ীন এবং আহলে ইলমদের কারোরই এ অভ্যাস ছিল না। তারা কেউ অপরের মাধ্যমে নবীর উপর সালাম পাঠাতেন না। এবং তাদের কারো হতেই এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি উম্মতের দেয়া সালাম ও দরূদ কোন মাধ্যম ছাড়া এমনিতেই পৌঁছানো হয়ে থাকে। যেমন, সহিহ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না, আর আমার কবরকে উৎসব উদযাপনের জায়গায় পরিণত করো না। আমার উপর দরূদ পড়, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌছানো হয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); 
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অন্যের মাধ্যমে সালাম পাঠানোর ইবাদতটি সম্পূর্ণ বিদআত। বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি সালাম পাঠানোর কোন বিধান শরিয়ত সম্মত নয়। মৃত ব্যক্তির উপর সেই পাঠাবে যে তার কবর যিয়ারত করবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করতেন, তাদের সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন। তিনি তার সাহাবিদের শিখিয়ে দিতেন, তোমরা কবর যিয়ারত কালে এভাবে বলবে, 
 ( السَّلامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاحِقُونَ ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ ) أخرجه مسلم (975)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন, তুমি বল,
 (السَّلامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاحِقُونَ ) أخرجه مسلم (974) ،
তবে অনুপুস্থিত জীবিত ব্যক্তির জন্য সালাম পাঠানোতে কোন অসুবিধা নাই। তার জন্য অপরের মাধ্যমে সালাম পাঠানো জায়েয আছে। 
মোট কথা: আল্লাহ তায়ালা এ উম্মাতের উপর খুশি হন, যখন তারা তাদের নবীর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে। আর তারা যত বেশি এ আমল করে, আল্লাহ তায়ালা ততবেশি খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত আছে, 
আল্লাহ তায়ালা তার কবরে কিছু ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন তারা তার উম্মাতের পক্ষ হতে তাদের সালাত ও সালাম তার নিকট পৌছায়।
আল্লাহই ভালো জানেন।

শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমিন রহ. বলেন, তা সত্বেও আমরা বলি, আর যদি তুমি তার উপর দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত থেকেও সালাম পাঠাও তবে তোমাদের সালাম তার নিকট পৌছবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতাদের নিয়োজিত করেছেন, যখন তোমাদের কেউ রাসূলের উপর সালাম পাঠায়, তারা সে সালাম রাসূলের নিকট পৌঁছে দেয়। 
সূতরাং আমরা যদি এখন বলি,  " اللهم صلِّ وسلِّم على رسول الله " আমাদের এ সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে। সালাতে আমরা বলে থাকি, " السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته " তখনো আমাদের সালাম তাঁর নিকট পৌছানো হয়।
আমি মদিনাতে অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, আমার পিতা আমাকে ওসিয়ত করেছেন, যাতে আমি রাসূলের উপর সালাম প্রেরণ করি। তিনি আমাকে বলেন, আমার পক্ষ থেকে রাসূলের উপর সালাম পাঠ করবে। এটি সর্ম্পূণ ভূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত নন, তাহলে জীবিত ব্যক্তির সালামের ন্যায় তাঁর নিকট প্রেরণ করা যেত! আর যদি তোমার পিতা রাসূলের উপর সালাম দিয়ে থাকেন, তার সালাম পৌছানোর জন্য তোমার চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তোমার চেয়ে অধিক বিশ্বাসী রয়েছে যারা তোমার পিতার সালামকে রাসূলের প্রতি পৌঁছাবে। আর তারা হলো আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতা বৃন্দ।
সুতরাং, এর কোন প্রয়োজন নাই যে, তুমি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠাবে। আমরা বলি, তুমি তোমার জায়গা হতে অথবা দুনিয়ার যে কোন জায়গা হতে বলবে,  السلام عليك أيها النبي এটি অতিদ্রুত ও সুন্দরভাবে তার নিকট পৌছানো হবে, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নাই। 
আল্লাহই ভালো জানেন।


মুফতী : সৌদিআরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ
অনুবাদক : জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

Tuesday, June 9, 2020

আপনি যেভাবে শয়তান থেকে বাঁচবেন !!


আল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়াছ্ ছালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্।
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা করুন। শয়তান মানুষের প্রথম এবং শেষ শত্রু প্রকাশ্য শত্রু। তার কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য মানুষ মাত্রেই প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু অস্ত্র যদি ধারালো না হয় বা সঠিকভাবে নিক্ষিপ্ত না হয় তবে শত্রু লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। তাই শয়তান নামক শত্রু থেকে বাঁচার জন্য মহান ক্ষমতাধর আল্লাহ্ তা‘আলার এলাহী অস্ত্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
মনে রাখবেন, এই শয়তান থেকে বাঁচতে হলে মনগড়া রক্ষা-কবচ ব্যবহার করলে হবে না। যেমন তাবীয-কবচ, সুতা, তাগা, রিং প্রভৃতি। কেননা এগুলো ব্যবহার করা শির্ক। 
যেমন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার করবে সে শির্ক করবে।” (আহমাদ)

আমরা আপনাদের সামনে ইসলামে অনুমোদিত সেই সমস্ত মাধ্যম উল্লেখ করছি যা দ্বারা আপনি শয়তানকে বিতাড়িত ও পরাজিত করতে পারবেন। তার চক্রান্ত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

১)      মহান আল্লাহর উপর শিরক মুক্ত নিখাদ পরিপূর্ণ ঈমান। কেননা বান্দা শিরক করলে শয়তান সবচেয়ে বেশী খুশি হয়। চাই তা বড় শির্ক হোক বা ছোট শিরক। কারণ এতে বান্দার ঈমান নষ্ট হয় তার জন্য জান্নাতের পথ বন্ধ হয়।
২)      একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর ইবাদত-দাসত্ব করা। রিয়া বা লোক দেখানোর আমল পরিত্যাগ করা।
৩)      সার্বিক ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুসরণ করা। সবধরনের বিদআত থেকে দূরে থাকা। কেননা সাধারণ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বিদআতে লিপ্ত হওয়াতে শয়তান বেশী খুশি হয়। কারণ সাধারণ পাপকর্ম থেকে তওবা করা হয় কিন্তু বিদআত থেকে তওবা করা হয়না। তাছাড়া বিদআত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা তার তওবা কবুল করেন না। (ছহীহ্ তারগীব তারহীব)
৪)      পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাসময়ে আদায় করা। বিনয়-নম্রতার সাথে ছালাত সমূহ আদায় করা এবং মসজিদে গিয়ে মুসলমানদের জামাতে শরীক হওয়া।
৫)      ফরয সমাপনান্তে সুন্নত-নফল ছালাত সমূহ অধিকহারে আদায়ের চেষ্টা করা।
৬)      অধিকহারে নফল ছিয়াম আদায় করার চেষ্টা করা। কেননা ছিয়াম শয়তানী প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৭)      সবধরনের নফল ইবাদত বেশী বেশী আদায় করা।
৮)      গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা। 
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর।” (মুসলিম)
৯)      অধিকহারে আল্লাহর জিকির করা। কেননা শয়তান বিতাড়িত করার সর্বোত্তম মাধ্যম হল আল্লাহর জিকির।
১০)    আল্লাহর দরবারে তওবা করা এবং আত্ম সমালোচনা করা।
১১)    আল্লাহর কাছে দু‘আ করা এবং তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা।
১২)    আল্লাহর দরবারে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করা। যে সকল স্থানে শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করতে হয় তা হল: ছালাতে, কুরআন তেলাওয়াত করার সময়, রেগে গেলে, সকাল-সন্ধ্যায়, নিজগৃহে প্রবেশ করার সময়, দ্বীনের মৌলিক কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে, স্ত্রী সহবাস করার আগে, ঘুমানের সময়, কোন খারাপ স্বপ্ন দেখলে।
১৩)    কুরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা বাক্বারা পাঠ করা।
১৪)    ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করা।
১৫)    বেশী ক্রোধান্বিত হলে ওযু করে নিবে। কেননা তা একটি শয়তানী প্রবণতা। শয়তান আগুন থকে সৃষ্টি হয়েছে। আর পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।
১৬)    অধিকহারে ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা। ‘লাহওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্’ বেশী বেশী পাঠ করা।
১৭)    নিজ গৃহকে শয়তানকে খুশী করে এমন আসবাব থেকে মুক্ত করা। যেমন বাদ্য-যন্ত্র, ঘণ্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য এবং যাবতীয় খেল-তামাশা ও গর্হিত বিষয়-বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত ও সংরক্ষণ করা।
১৮)    পরিবার এবং সন্তানদেরকে শরীয়ত সম্মত দু‘আ-যিকর দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে হেফাজত করা। এবং এ ঝাড়-ফুঁক নিয়মমাফিক সবসময় করা। যেমন: আয়াতাল কুরসী, (সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস) প্রভৃতি পাঠ করা।
১৯)    দৃষ্টি অবনত রাখা। পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা। কেননা নারী যখন সামনে আসে তখন শয়তানের আকৃতিতে আসে আর যখন ফিরে যায় তখন শয়তানের আকৃতিতে ফিরে যায়।
২০)    পরনারীর সাথে নির্জন না হওয়া। কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের তৃতীয় জন হিসেবে সেখানে বিরাজ করে।
২১)    ইচ্ছাকৃত ভাবে শয়তানী কাজের বিরোধিতা করা। যেমন, ডান হাতে খানা-পিনা করা। কেননা শয়তান বাম হাতে খানা-পিনা করে। ক্বায়লুলা করা অর্থাৎ- যোহরের পর সামান্য সময়ের জন্য নিদ্রা যাওয়া। কেননা শয়তান এরকম নিদ্রা যায় না। অপব্যয় অপচয় না করা। কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই। প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন করা। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সাধ্যানুযায়ী হাই উঠানোকে প্রতিরোধ করা। কেননা হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।
২২)    একাকী কোথাও ভ্রমণে না যাওয়া। কেননা একক ভ্রমণকারী শয়তান। দু‘জন ভ্রমণকারী দু‘জন শয়তান এবং তিনজন হচ্ছে ভ্রমণকারী।
২৩)    প্রত্যেক কাজের সময় বিসমিল্লাহ্‌ বলা। কেননা বিসমিল্লাহ্‌ বললে শয়তান ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছির মত ছোট্ট হয়ে যায়।
২৪)    দিনে একশবার পাঠ করা ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’
২৫)    প্রথম ওয়াক্তে ফজরের নামাজ আদায় করা। কেননা যে ফজর ছালাত আদায় করবে সে আল্লাহর জিম্মাদারির মধ্যে হয়ে যাবে।
২৬)    ছালাত অবস্থায় এদিক-ওদিক না চাওয়া। কেননা ছালাতাবস্থায় এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
২৭)    বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন সে বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং উঁকি দিয়ে দেখে।


সমাপ্ত

লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী
সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী

Monday, June 8, 2020

দ্বীন কায়েম বলতে আপনি কি বুঝেছেন ?


যদি আপনি এমন মনে করেন যে - ইসলামের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলঃ একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে দ্বীন কায়েম করা, তাহলে প্রশ্ন আসেঃ

১. ইসলামের যেই ৫টি রুকনের কথা নবী (সাঃ) হাদীসে জিব্রীলে উল্লেখ করলেন, তাতে এই ইকামতে দ্বীন কোথায়? তাহলে যেগুলো ইসলামের মূল বিধান তা বাদ দিয়ে ইসলামের নামে একটি নব আবিষ্কৃত লক্ষ্য উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়নি কি?

২. ধরে নিলাম একটি ইসলামী রাষ্ট্র কেউ তৈরী করলো, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র তৈরী হলেই কি সাথে সাথে কাফেররা মুমিন হয়ে যাবে এবং মুশরিকরা শির্ক বর্জন করে তাওহীদী হয়ে যাবে? ধরুন বাংলাদেশে এমন একটি সরকার আসলো, তাতে কি পীরপন্থী, কবর-মাযারওয়ালারা কবরপূজা ছেড়ে দিবে? আইনের ভয়ে যদি তারা কিছু কার্য-কলাপ বন্ধও রাখে কিন্তু তাতে কি তাদের ঈমান পরিবর্তন হবে? তাই অন্তরের পরিবর্তনই মূল পরিবর্তন, আইনী পরিবর্তন হচ্ছে সাময়িক ও মুনাফেকী পরিবর্তন।


৩. ইসলামের অধিকাংশ বিধানের প্রতি আমল করতে কি কোন ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রয়োজন আছে? ইসলামী হুকুমত থাকবে তাহলেই কি আপনি নামায, রোযা, হজ্জ যাকাত দিতে পারেন, না এমনিতেই দিতে পারেন? আসলে ইসলামের অধিকাংশ বিধান মানবীয় ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্য রাখে তা মানতে সরকারি ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না।

৪. ঈমান ও আক্বীদা হচ্ছে ইসলামের মূল বিষয়, তা বিশ্বাস করতে কি কোন সরকারের প্রয়োজন হয? ধরুন আরকানে ঈমানের যাবতীয় কিছু, আল্লাহর প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, কিতাব সমূহের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, শেষ দিনের প্রতি ও ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান রাখতে কি সরকারের দরকার হয়?

৫. ইসলামে যে সব ক্রাইমের শস্তির বিধান রয়েছে, সে সবের জন্য সরকারি ক্ষতার প্রয়োজন আছে, যাকে ‘হুদুদ’ বলা হয়। এসব হুদুদ বিশ্বের কোন মুসলিম দেশে বাস্তবায়ন করা হয় না, শুধুমাত্র সউদী আরব ছাড়া। তার পরেও তো আমাদের দেশের ইকামতে দ্বীন পন্থিীরা দিন-রাত সউদী আরবের সমালোচনাই করে যায়। তাহলে কোন ইসলামী রাষ্ট্র চান তারা?

৬. বর্তমানে যে সব মুসলিম ভাই অমুসলিম দেশে বসবাস করেন, তারা যদি ঈমান ও সৎ আমলের সহিত মারা যান, তাহলে তারা জান্নাত পাবেন না কি? তাহলে ইসলামী হুকুমত জান্নাত পাওয়ার জন্যও তো জরুরী নয়।

৭. সেই ইসলামী হুকুমত যদি কায়েম করতে হয়, তাহলে তার পদ্ধতিটা কি হওয়া উচিৎ? গণতন্ত্রের ভোটের নিয়মে নাকি অন্য কিছু? গনতন্ত্র কি ইসলাম?

শেষে বলি, ইসলামী হুকুমত কায়মে হোক, তার জন্য চেষ্টা করা হোক, কিন্তু তা হতে হবে ব্যাপক তাওহীদ ও সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক দাওয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তির সংশোধন। অতঃপর সমাজ ও দেশের পরিবর্তন, অতঃপর ইসলামী হুকূমত। যেমন ছিল নবী (সাঃ) এর তরীকা, ক্ষমতার বলে নয়, দাওয়াতী সংশোধনের মাধ্যমে দেশ গঠন।


Collected from Shaykh Abdur Raquib

Saturday, May 30, 2020

ইসলাম ধ্বংসকারী ১০ টি বিষয়।




সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক সেই মহান নবীর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই। আরো নাযিল হোক তাঁর পরিবার বর্গ, সহচর বৃন্দ এবং তাঁর হেদায়াতের অনুসারীদের উপর।
অতঃপর হে মুসলিম ভাই!
এ কথা জেনে নিন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরজ করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে দিকে আহবান করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্‌ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করবে সে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। তিনি বহু আয়াতে মুরতাদ হওয়ার মাধ্যম, শির্ক ও কুফরীর সকল প্রকার হতে সতর্ক করেছেন।
বিদ্যানগণ মুরতাদের বিধি-বিধান অধ্যায়ে এই মর্মে উল্লেখ করেছেন যে, একজন মুসলমান ব্যক্তির রক্ত ও ধন-সম্পদ হালাল কারী বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংসী কার্য কলাপ সম্পদনের মাধ্যমে মুরতাদ ও ইসলাম হতে বহিস্কার হয়ে যায়।
ইসলাম বিধ্বংসী কাজ হল সর্ব মোট ১০টি যা শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহিমাহু্মুল্লাহ) ও অন্যান্য বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। আমরা ঐ সকল ইসলাম বিধ্বংসী কাজ গুলো নিন্মে সংক্ষিপ্ত ভাবে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ আপনার জন্য উল্লেখ করছি। যাতে আপনি উক্ত বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থেকে অপরকে সতর্ক করতে পারেন।
ইসলাম বিধ্বংশী কাজ গুলো নিন্মরূপঃ
.
প্রথমঃ আল্লাহর ইবাদতে শির্ক করা। আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। উহা ব্যতিরেকে উহার নিন্ম পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন”। [নিসা : ১১৬]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্ক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এই সমস্ত যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না”। [সূরা মায়েদাহ্‌ : ৭২]
জ্ঞাতব্যঃ এই শির্কের অন্তর্ভূক্ত হল: মৃতকে আহবান করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, তাদের জন্য নযর-নেয়াজ মানা ও পশু যবেহ করা। যেমন কোন ব্যক্তি জ্বিনের জন্য বা কোন কবেরর জন্য যবেহ করল ইত্যাদি।

.
দ্বিতীয়ঃ নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য।
.
তৃতীয়ঃ মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না বলা বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।
.
চতুর্থঃ এই বিশ্বাস করা যে অন্যের আদর্শ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যেমন কেউ কেউ তাগুতের বিধানকে নবীর বিধানের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিযে থাকে) সে ব্যক্তি কাফের বলে গণ্য হবে।
.
পঞ্চমঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত কোন বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে যদিও সে ঐ বস্তুর উপর বাহ্যিক ভাবে আমল করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“ইহা এজন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল গুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন”। [সূরা মুহাম্মাদ : ৯]
.
ষষ্ঠঃ দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে বা তার পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ
“আপনি বলুন (হে রাসূল) তোমরা কি আল্লাহর সাথে, স্বীয় আয়াত সমূহের সাথে এবং রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? কোন প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর আবার কুফরী করেছ”। [সূরা তাওবাহ্‌ : ৬৫-৬৬]
.
সপ্তমঃ যাদু-টোনা করা: যাদুর অন্যতম প্রকার হল তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে দুজন মানুষের বন্ধন তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার বলেনঃ
“ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন-নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না”। [সূরা বাকারা : ১০২]
.
অষ্টমঃ মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলার বাণী:
“তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না”। [সূরা মায়েদা : ৫১]
.
নবমঃ এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ:)এর জন্য মূসার (আ:) শরীয়ত হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্থদের দলভূক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]
.
দশমঃ সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশী যালিম (অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী”। [সূরা সাজদাহ্‌ : ২২]
.
কোন লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক। অবশ্য কাউকে যদি বাধ্য করা হয় তবে তার ব্যাপার আলাদ। এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয় অত্যন্ত মারাত্মক। তার পরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য কর্তব্য হল এ সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা। আমরা আল্লাহর নিকট তার ক্রোধ অবধারিত কারী বিষয় হতে এবং তাঁর যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সৃষ্টির সেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর পরিবারের উপর, সাহাবীগণের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক।
[এখান থেকেই শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহ:) এর বক্তব্য শেষ]।
.
উল্লেখিত চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে ঐ ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে যে, মানুষ যে সমস্ত সংবিধান রচনা করেছে উহা ইসলামী সংবিধানের চেয়েও উত্তম, অথবা উহার সম পর্যায়ের অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ঐ সমস্ত মানব রচিত বিধানের নিকট ফায়সালা তলব করা জায়েয, যদিও শরীয়তের বিধানকেই সে উত্তম মনে করে- এধরণের সকল বিশ্বাসই চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে ইসলামের বিধি-বিধান এই বিংশ শতাব্দীতে বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ইহাই মূলত: মুসলিমদের পশ্চাদ মুখী হওয়ার কারণ। অথবা উহাকে সে স্বীয় প্রতি পালকের সাথে সর্ম্পর্কত করার মধ্যেই সীমিত রাখে, জীবনের অন্যান্য বিষয়ের কোন কর্তৃত্ব নেই বলে ধারণা করে।অর্থাৎ বলে যে শরীয়ত ব্যক্তিগত জিনিস, সমাজ, রাষ্ট বা জীবনের অন্য ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রয়োজন নাই তাহলে সেও চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশকারী আমল সম্দপনকারী কাফেরদের দলভূক্ত হবে।
অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারে শামিল হবে ঐ ব্যক্তির কথা যে এমনটি ধারণা করে যে, চোরের হাত কাটা, বিবাহিত ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করা ইত্যাদী আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা আধুনিক যুগের জন্য উপযোগী নয়।
অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভূক্ত ঐ ব্যক্তির কথা, যে বিশ্বাস করে যে বৈষয়িক বিষয় সমূহ এবং দণ্ডবিধি ইত্যাদির ব্যাপারে শরিয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করা জায়েয। যদিও সে এই বিশ্বাস না রাখে যে উহা শরীয়তের বিধান অপেক্ষা উত্তম। (তবুও সে কাফের বলেই গণ্য হবে) কারণ সে এর মাধ্যমে এমন বিষয়কে হালাল করেছে যা আল্লাহ হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হারাম কৃত বিধানকে হালাল করবে যার হারাম হওয়া দ্বীন ইসলামে সর্বজন বিদিত। যেমন: ব্যাভিচার করা, মদ্যপান করা, সূদী কারবার করা, আল্লাহর শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা ইত্যাদী বিষয়কে যে হালাল মনে করবে সে মুসলমানদের সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য হবে।
.
আমরা আল্লাহর সমীপে এই কামনা করি, তিনি যেন সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি মূলক কাজের তাওফীক দেন এবং আমাদেরকে এবং সমস্ত মুসলিমদেরকে সঠিক পথের হেদায়াত দান করেন। নিশ্চয় তিনি সর্ব শ্রোতা ও নিকটবর্তী। আল্লাহ্‌ তাআলা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার বর্গ ও সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ করূন। আমীন॥

মূলঃ আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ্‌ বিন বায (রহঃ) |
অনুবাদঃ শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম।

Friday, May 29, 2020

আকিদার ৪ মূলনীতি


আরশে আযীমের প্রতিপালক মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন,আপনাকে বরকতময় করেন আপনি যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, আপনাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন, যাকে কিছু প্রদান করা হলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, পরীক্ষায় পড়লে ধৈর্য ধারণ করে এবং গুনাহ করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কারণ এই তিনটি বিষয় হচ্ছে সৌভাগ্যের প্রতীক।
জেনে নিন-আল্লাহ আপনাকে তাঁর আনুগত্যের পথ দেখাক- নিষ্ঠাবান মিল্লাতে ইব্রাহীম হচ্ছে, আপনি এক আল্লাহর ইবাদত করবেন নিষ্ঠার সাথে। আর আল্লাহ তাআ’লা সকল মানুষকে এরই আদেশ করেছেন এবং এর কারণে তাদের সৃষ্টি করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন :
وَ مَا خَلَقْتُ الجنَّ والإنْسَ إلاّ لِيَعْبُدُونِ
““আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি।”[যারিয়াত/৫৬]
অতঃপর যখন জানতে পারলেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তখন এটাও জেনে নিন, যে তাওহীদ ব্যতীত ইবাদত, ইবাদত হিসেবে গণ্য নয়, যেমন পবিত্রতা ব্যতীত নামায, নামায হিসাবে গণ্য নয়। ইবাদতে শিরক প্রবেশ করলে তা নষ্ট হয়ে যায়, যেমন পবিত্রতার পর বায়ু নির্গত হলে তা বিনষ্ট হয়।
অতঃপর যখন জানলেন যে, যখন ইবাদতে শিরকের সংমিশ্রণ হয় তখন আমলকে নষ্ট করে দেয় এবং সে ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাই এই বিষয়টি জানা জরুরী যেন আল্লাহ আপনাকে এই বেড়াজাল থেকে মুক্তি দেন। আর তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করা যার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
إنَّ اللهَ لا يَغْفِرُ أن يُشْرَكَ بِهِ ، و يَغْفِرُ مَا دُونَ ذالكَ لِمن يشاَءُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং তদ্ব্যতীত যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [ নিসা/৪৮] আর এটা চারটি মূলনীতি জানার মাধ্যমে হবে, যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন :
প্রথম মূলনীতি: জানা প্রয়োজন যে, ঐ সমস্ত কাফের যাদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ করেছিলেন, তারা স্বীকার করত যে আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টিকর্তা এবং পরিচালক। তবুও এই স্বীকারোক্তি তাদের ইসলামের গণ্ডিতে প্রবেশ করায় নি।এর প্রমাণে আল্লাহর বাণী:
قُلْ مَن يَرزُقُكُمْ من السماءِ والأرْضِ أمّن يملكُ السمْعَ والأبْصارَ وَ مَن يُخْرِجُ الحَيَّ مِنَ المَيِّتِ وَيُخْرِجُ المَيِّتَ مِنَ الحَيِّ وَ مَن يُدَبِّرُ الأمْرَ ، فَسَيَقُولُونَ اللهُ ، فَقُلْ أفَلا تَتَّقُونَ
“তুমি বল : তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন হতে রিজিক দিয়ে থাকেন? অথবা কে তিনি, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের করেন, আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে বের করেন? আর তিনি কে যিনি সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন? তখন অবশ্যই তারা বলবে যে, আল্লাহ। অতএব, তুমি বল: তবে কেন তোমরা (শিরক হতে) বিরত থাকছ না? ” (সূরা ইউনুস: ৩১)
দ্বিতীয় মূলনীতি: তারা বলে: আমরা তাদের নিকট প্রার্থনা করি না এবং তাদের শরণাপন্ন হই না কিন্তু নৈকট্য এবং সুপারিশ পাওয়ার আশায়।
নৈকট্যের প্রমাণে আল্লাহর বাণী :
وَالذيْنَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِه أولِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إلاَّ لِيُقَرِّبُوْنَا إلى اللهِ زُلْفَى إنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ ، إنَّ اللهَ لا يَهْدِى مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
“যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, (তারা বলে) আমরা তো এদের পূজা এজন্যেই করি যে, এরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফায়সালা করে দিবেন । যে মিথ্যাবাদী ও কাফির , আল্লাহ তাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।” [জুমার/৩] শাফায়াতের প্রমাণে আল্লাহর বাণী : “আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহেরও ইবাদত করে যারা তাদের কোন অপকারও করতে পারে না এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারে না, আর তারা বলে: এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশ কারী ।” [ ইউনুস/১৮] সুপারিশ বা শাফাআত দুই প্রকার। যথা: ক) অস্বীকৃত খ) স্বীকৃত।
ক- অস্বীকৃত সুপারিশ হচ্ছে, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া হয়, যার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নেই। যেমন আল্লাহ বলেন:
يأيُّها الذيْنَ آمَنوا أنْفِقُوا ممَّا رَزَقْناكُمْ مِنْ قَبْلِ أن يأتِيَ يَومٌ لا بَيْعٌ فيْهِ وَ لا خُلَّةٌ وَ لا شَفَاعَةٌ والكَافِرُونَ هُمُ الظّالِمُونَ
“হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি, তা হতে সে সময় আসার পূর্বে ব্যয় কর যাতে ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই, আর কাফেররাই অত্যাচারী।” [ বাক্বারাহ: ২৫৪] খ- স্বীকৃত সুপারিশ হচ্ছে, যা আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়। সুপারিশ কারী সুপারিশের মাধ্যমে সম্মানিত। সে হবে সেই ব্যক্তি যার কথা ও কাজ থেকে আল্লাহ সন্তুষ্ট। অনুরূপ সে এমন হবে যাকে সুপারিশের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেন :
مَنْ ذَا الذي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إلا بِإذْنِهِ
“এমন কে আছে যে অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে?” বাক্বারাহ/২৫৫] তৃতীয় মূলনীতি: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন ঘটে এমন লোকদের মাঝে যারা তাদের ইবাদতে এক ছিল না; বরং তাদের মধ্যে কেউ ফেরেশতার ইবাদত করতো, কেউ নবী ও সৎ লোকদের ইবাদত করতো, কেউ গাছ-পালা ও পাথরের পূজা করতো এবং কেউ সূর্য ও চন্দ্রের ইবাদত করতো। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পার্থক্য ছাড়াই এদের সবার সাথে যুদ্ধ করেন। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণী: তোমরা “সদা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়।” [ আন্ ফাল/৩৯]
সূর্য চন্দ্রের ইবাদতের প্রমাণে : আল্লাহ বলেন :
وَ مِنْ ءَايَاتِهِ الَّيْلُ والنَّهَارُ والشَّمسُ والْقَمَرُ لا تَسْجُدُوا للشَّمْسِ وَ لا للقَمَرِ واسْجُدُوا للهِ الذي خَلَقَهُنَّ إنْ كُنْتُمْ إيّاهُ تَعْبُدُونْ
“তাঁর নিদর্শনা বলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র । তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না; সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এইগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।” [ হা মীম সাজদা/৩৭]
সেকালে ফেরেশতার ইবাদতের প্রমাণে আল্লাহ বলেন :
وَ لا يأمُرُكُمْ أنْ تَتَّخِذُوا المَلائِكَةَ والنَّبِيّيْنَ أرْبَاباً
“আর তিনি আদেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতাগণ ও নবীগণকে প্রতিপালক রূপে গ্রহণ কর।” [ আল্ ইমরান/৮০]
নবীগণের ইবাদতের দলীল: আল্লাহ বলেন: “আর যখন আল্লাহ বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে মা’বূদ বানিয়ে নাও ? ঈসা নিবেদন করবেন আমি তো আপনাকে পবিত্র মনে করি; আমার পক্ষে কোনক্রমেই শোভনীয় ছিল না যে, আমি এমন কথা বলি যা বলবার আমার কোনই অধিকার নেই; যদি আমি বলে থাকি, তবে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে; আপনি তো আমার অন্তরের কথাও জানেন, পক্ষান্তরে আপনার অন্তরে যা কিছু রয়েছে আমি তা জানি না; সমস্ত গায়েবের বিষয় আপনিই জ্ঞাত।” [ আল্ মায়েদা/১১৬] নেক লোকদের ইবাদতের প্রমাণস্বরূপ আল্লাহর বাণী :
أولئك الذينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إلى رَبِّهمُ الوَسِيْلَةَ أيُّهُمْ أقْرَبُ وَ يَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَ يَخافُونَ عَذابَه
“ তারা যাদের আহ্বান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে।” [ ইস্ রা/৫৭] গাছ-পালা ও পাথরের ইবাদতের দলীল। আল্লাহ বলেন :
أفَرأيْتُمُ اللاتَ والْعُزَّى ، والْمَنَاتَ الثّالِثَةَ الأخْرَى
“তোমরা কি ভেবে দেখেছো ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্বন্ধে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে?” [নাজম/১৯-২০] এ প্রসঙ্গে ওয়াকিদ লায়সী (রাযিঃ) এর হাদীস, তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে হুনাইনের যুদ্ধে বের হলাম আমরা তখন নূতন মুসলমান ছিলাম।সেকালে মুশরিকদের একটি কুল-বৃক্ষ ছিল, যার পার্শ্বে তারা অবস্থান করতো এবং তাতে তাদের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। ওটাকে বলা হত ‘যাতু আন্ওয়াত্’ (বরকতের গাছ)। আমরা এই ধরনের এক কুল-গাছের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমরা আল্লাহর রাসূলকে বললাম : হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের জন্যও একটি ঝুলিয়ে রাখার বৃক্ষ নির্ধারণ করে দিন যেমন তাদের রয়েছে ..।
চতুর্থ মূলনীতিঃ আমাদের যুগের শিরক কারীরা পূর্বের যুগের শিরক কারীদের থেকে অধিক কঠোর। কারণ পূর্বের লোকেরা সুখ-সচ্ছলতার সময় শিরক করতো আর দুঃখের সময় তাকেই ডাকতো। কিন্তু আমাদের যুগের শিরককারীরা সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় অংশী করে। এর স্বপক্ষে দলীল, আল্লাহ বলেন :
فَإذَا رَكِبوا فَي الفُلْكِ دَعَوُا اللهَ مُخْلِصِيْنَ له الدينَ فَلَما نجَّاهُمْ إلى البَرِّ إذا هُمْ يُشْرِكُونَ
“তারা যখন নৌকায় আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধ চিত্তে খাঁটি ভাবে আল্লাহকে ডাকে; অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদের উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে।” [ আনকাবূত/৬৫] পরিশেষে নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার – পরিজন ও সাথীদের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

মূলঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল অহহাব রাহে:

অনুবাদঃ আব্দুর রাকীব বুখারি মাদানী ।
বি.এ. অনার্স ফিকহ (মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
এম.এ. এরাবিক ( জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া,নিউ দিল্লী )
সাবেক দাঈ, বাংলা বিভাগ: ইসলামিক দাওয়াত সেন্টার, খাফজী, সউদী আরব।

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...