Thursday, August 9, 2018

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ


লেখকঃ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল | অনুবাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد

মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে  তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়!  সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:
১. বেশী বেশী দু‘আ করা
মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে,

رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]

‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীমঃ৪১]
এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।
মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ».

অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।
২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে  সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ »

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।
৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালনঃ
মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«مَنْ مَاتَ  وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»

অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]।
অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।
৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ
মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা  উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ»

অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২]
তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।
৫. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করাঃ
মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ نُعْتِقُ عَنْهَا رَقَبَةً ، وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ ، قَالَ : ادْعُ بِهَا ، فَجَاءَتْ ، فَقَالَ : مَنْ رَبُّكِ ؟ قَالَتِ : اللَّهُ ، قَالَ : مَنْ أَنَا ؟ قَالَتْ : رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : أَعْتِقْهَا ، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ».

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]
৬. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করাঃ
মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ ».

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]।
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ « أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ »

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]
৭. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখাঃ
সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ»

‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]
৮. ঋণ পরিশোধ করাঃ
মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ».

অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে,

«مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ»

অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]
৯. কাফফারা আদায় করাঃ
মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢]

অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) [ সূরা আন-নিসা:৯২]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ».

অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’ [সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] ।
এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।
১০. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ
মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ»

অর্থ: আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]।
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ».

অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]।
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।
১১. মান্নত পূরণ করাঃ
মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :« صُمْ عَنْهَا ».

অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]
১২. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখাঃ
মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]

«مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ»

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।
১৩. কবর যিয়ারত করাঃ
সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ»

অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,

«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».

অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]
১৪. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করাঃ
মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٤ ﴾ [الاسراء: ٣٤

অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]
১৫.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ».

এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।
১৬.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়াঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে।  কেননা হাদীসে এসেছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]
সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

Wednesday, August 1, 2018

দাম্পত্য সম্পর্কের ৫০ টি বিষয় যা আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
ভাষান্তর : শাহোরিনা ইয়াসমিন |  সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ
১. সুন্দর সম্পর্ক নিজে থেকেই তৈরি হয় না, সেটি তৈরি করতে হয়। তাই আপনাকেও সেটি তৈরি করতে হবে।
২. কর্মক্ষেত্রেই যদি আপনার সবটুকু কর্মক্ষমতা নিঃশেষ করে ফেলেন, তাহলে   আপনার দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৩. আপনার উৎফুল্ল আচরণ হতে পারে আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর জন্য খুব দামি একটি উপহার।
৪. কাউকে একইসাথে ভালোবাসা এবং ঘৃণা করা আপনার জন্য অসম্ভব নয়।
৫. আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া আপনার দাম্পত্য সম্পর্কে  বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
৬. দাম্পত্য জীবনে তা-ই নিয়ম যা দুইজনের পছন্দের ভিত্তিতে ঘটে।
৭. সাময়িক ঝগড়া বিবাদের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ আর যন্ত্রণাই দাম্পত্য জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
৮. দাম্পত্য সম্পর্ক, “কী পেলাম?” –এর হিসেবে মেলানোর জন্য নয়। বরং সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে “কী দিতে পেরেছি,” তা-ই দাম্পত্য সম্পর্কের মূলকথা।
৯. “জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী হিসেবে আমি সর্বোত্তম”-এমনটি মনে হওয়া অতি আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। এমনটি মনে হলে নিজেকে যাচাই করুন।
১০. সংসারের ক্রমাগত আর্থিক সচ্ছলতা অর্থ এই নয় যে, দাম্পত্য জীবনও সুখের মধ্য দিয়ে কাটছে।
১১. যদি বিশ্বাস ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই বিশ্বাস জোড়া দেওয়ার সময় এখনও পার হয়ে যায়নি। এজন্য যেকোনো সময়ই উপযুক্ত সময়।
১২. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা নিয়ে তর্ক হয় তা আসল বিষয় থাকে না।
১৩. ভালোবাসা কেবল অনুভুতি নয়; বরং আমাদের কাজের মাধ্যমেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১৪. বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের হতাশা ও অতৃপ্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
১৫. দাম্পত্য জীবনের অনেক তর্কই হয়ত এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ক্ষতিকর বিতর্ককে এড়িয়ে যেতেই হবে।
১৬. জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর প্রতি আপনার গভীর মনোযোগ পরস্পরের জন্য হতে পারে অমূল্য উপহার।
১৭. অনেক সময় সুখী দম্পতিরাও ভাবেন যে, তারা ভুল মানুষটিকে বিয়ে করেছেন।
১৮. আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী আপনাকে সুখী করার শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও তিনি আপনার সুখী হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সাহায্য করতে পারেন।
১৯. মিথ্যা বলে হয়ত সামান্য কিছু সুবিধা পান। কিন্তু পরিমাণে মিথ্যা বলার জন্য সুবিধার চেয়ে অনেক বেশি চড়া মূল্য দিতে হয়। অতএব, মিথ্যা বলা বর্জন করুন।
২০. আপনার মতামত যে সবসময় সঠিক, এমনটি ভাববেন না।
২১. বছরের পর বছর ধরে যে বিশ্বাস আপনি গড়ে তুলেছেন, তা এক মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
২২. সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অপরাধবোধকে দীর্ঘায়িত করে তার অনুভূতি নিয়ে খেলা করে আপনি যা পেতে চান, তা কখনোই পাবেন না।
২৩. আপনার বন্ধুদেরকে অবহেলা করবেন না।
২৪. আপনার যদি মনে হয়, ‘তুমিই আমার জন্য সঠিক মানুষটি, যাকে আমি বিয়ে করেছি’, তাহলে আপনি ঠিক পথেই আছেন।
২৫. কোনোকিছু প্রমাণ করতে যাওয়ার প্রলোভনকে দমন করতে পারলে, বস্তুত আপনি অনেক কিছুই প্রমাণ করতে পারলেন।
২৬. আত্মিক উদারতা একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের প্রধান ভিত্তি।
২৭. সঙ্গী বা সঙ্গিনী যদি কোনো রক্ষণাত্মক আচরণ করে, তাহলে তার রক্ষণাত্মক হওয়ার পক্ষে আপনিও কিছু কারন দেখাতে পারেন।
২৮. বিয়ে কোন ৫০/৫০ সম্ভাবনা না; বরং এটি হলো ১০০/১০০।
২৯. দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কোনোকিছু এখনও পরিশোধ করতে পারেন আবার পরেও পারেন। তবে যতদেরিতে তা করবেন, ততবেশি জরিমানা আপনাকে দিতে হতে পারে।
৩০. সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা প্রয়োজন। এমনটি করতে পারলে, আপনি আপনার ত্যাগের চেয়ে ভোগই বেশি করতে পারবেন।
৩১. ক্ষমা কোন সাময়িক গুণ নয়; বরং ক্ষমা একটি চলমান প্রক্রিয়ার নাম।
৩২. দাম্পত্য জীবনের কঠিন সময়গুলো আপনাকে একজন ভালো মানুষ করে তুলবে।
৩৩. বিয়ে অনেকটা রকেট উৎক্ষেপণের মতো। যখন তাতে মাধ্যাকর্ষণ টান পূর্ণ থাকে, তখন ফ্লাইট চলতে খুব সামান্য জ্বালানীর প্রয়োজন হয়।
৩৪. দাম্পত্য জীবনে সাফল্য পেতে হলে, অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
৩৫. আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা বোধকে নিজের ভেতর চেপে রাখবেন না।
৩৬. বাস্তবতার খাতিরে মাঝে মাঝে নীরবতা পালন করা একটি অসাধারন উপায়।
৩৭. আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে আপনার সর্বোত্তম প্রশ্নগুলোর একটি হতে পারে, “আমি কীভাবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি?
৩৮. চাইলেই দাম্পত্য জীবনকে চিরসবুজ করে রাখা যায়।
৩৯. যৌক্তিক অনুমানের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অনুমানকে যাচাই করে নেওয়াই আবশ্যক।
৪০. মনের ইচ্ছা বা উদ্দেশ্যই সবকিছু নয়, কিন্তু তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি।
৪১. সার্থক যৌন সম্পর্ক সার্থক দাম্পত্য সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে তা সার্থক দাম্পত্য সম্পর্ক নির্মাণে সহায়তা করে।
৪২. ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে না। তবে সন্দেহজনক বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে।
৪৩. সঙ্গী/সঙ্গিনীকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা এবং ঈর্ষাপরায়ণতার জন্ম হয় ভয় থেকে, ভালোবাসা থেকে নয়।
৪৪. বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্বাসযোগ্যতার জন্ম দেয় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তোলে।
৪৫. আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনোকিছুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, তাহলে তা আপানর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪৬. দাম্পত্য সম্পর্কে প্রেমাবেগের প্রয়োজন কখনোই ফুরিয়ে যায় না।
৪৭. নতুন সম্পর্কের ঔজ্জ্বল্য সবসময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে।
৪৮. নীরবতাও আক্রমণাত্মক হতে পারে যখন তা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
৪৯. অধিক উত্তম হলো নিজে কীভাবে সঠিক কাজটি করতে পারেন সেদিনে মনোযোগ দেওয়া। তারপর আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী কী ভুল করেছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।
৫০. দাম্পত্য সম্পর্ককে মানিয়ে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব মনে হলে, কেবল তখনই বিচ্ছেদের দিকে পা বাড়াতে পারেন।

কিন্তু তোমরা নসীহতকারীদেরকে পছন্দ কর না…

****সূরা আসর আমাদের যা শেখায়****

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন নাযিল করেছেন মানুষের জন্য উপদেশ ও জীবন বিধান হিসাবে। এ লক্ষ্যেই তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার প্রতি : ‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?’ (মুহাম্মাদ : ২৪)
কুরআন নিয়ে যতই চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা হবে অন্তরে কুরআনের আবেদন ও কুরআনের প্রতি ভক্তি ততই বৃদ্ধি পাবে। মানুষের স্বভাব চরিত্রে, আচার-আচরণে এর প্রভাব পড়বে। তাই তো আমরা দেখি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন:

‘তাঁর চরিত্র ছিল আল কুরআন।’ (মুসলিম)


কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনকে নিজের জীবনের পাথেয় হিসেবে

নিয়েছিলেন। এতে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেছেন এবং নিজ জীবনে তা পূর্ণাঙ্গরূপেবাস্তবায়ন করেছেন। আমরা আজ কুরআন পাঠ করি কিন্তু তা আমাদের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না। আমাদের জীবনাচারে পরিবর্তন সূচিত করে না। কারণ আমরা কুরআনের মর্ম নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করি না। আলী রা. বলেছেন, ‘যে কুরআন পাঠে চিন্তা-ভাবনা নেই, সে পাঠে কোনো কল্যাণ নেই।’ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, ‘আজ তোমরা সূরা ফাতেহা থেকে নিয়ে শেষ পর্যস্ত এমনভাবে কুরআন খতম করো যে, একটি হরফও বাদ পড়ে না। কিন্তু বাস্তব কথা হল, সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন বাদ পড়ে যায়।’
আমরা সূরা আল আসর পাঠ করি।  তা  মুখস্থও করেছি । জীবনে কতবার যে পাঠ করেছি তার হিসেব তো নিজের কাছেও নেই; কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি ছোট এই সূরাটির মধ্যে আল্লাহ তাআলা কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রেখেছেন। কত চমৎকার হেদায়েত রেখেছেন ক্ষুদে এ সূরাটির মধ্যে। ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির স্পষ্ট সনদ রেখেছেন তিনি মাত্র তিন আয়াত বিশিষ্ট এ সূরার মধ্যে। সাহাবায়ে কেরামের অনেকের সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা যখন একজন অপর জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতেন তখন সূরা আল আসর পাঠ করে শুনাতেন। (তাবরানি, হায়সামি ফি মাজমাআয যাওয়ায়েদ)
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যদি কুরআনে অন্য কোনো সূরা নাযিল না করে শুধু সূরা আল আসর নাযিল করতেন তাহলে এটা মানুষের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হত।'(মিফতাহুস সাআদাহ : ইমাম শাফেয়ি)
যদি কেউ এ সূরায় গভীরভাবে দৃষ্টি দেয় তাহলে সে তাতে একটি উন্নত, সুন্দর, শান্তিময়, পরিপূর্ণ এবং সবার জন্য কল্যাণকর সমাজের চিত্র দেখতে পাবে। (আদওয়াউল বায়ান : ৯/৫০৭)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সূরাটি শুরু করেছেন ‘ওয়াল আসর’ শব্দ দিয়ে। ইরশাদ হয়েছে- ‘আসরের শপথ।’ (১)

‘আসর’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

‘আসর’ শব্দের দুটো অর্থ : এক. যুগ বা সময়। দুই. আসরের নামাজের সময়, যার আগমন হয় জোহরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর এবং শেষ হয় সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে। আল্লাহ তাআলা কোনটির শপথ করেছেন? সময়ের শপথ না আসরের ওয়াক্তের শপথ?
সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হল তিনি ‘আসর’ বলতে এখানে সমস্ত সময়ের শপথ করেছেন। করেছেন যুগের শপথ। আর যুগের গর্ভেই এক জাতির উত্থান ঘটে,  অন্য জাতির ঘটে পতন। রাত্রি আসে। যায় দিন। পরিবর্তিত হয় পরিবেশ ও মানব সমাজ। এমন সব পরিবর্তন আসে যা মানুষ কল্পনা করতে পারে না। কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত কখনো বা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে এ সময়ের ব্যবধানেই। তাই এ যুগ বা সময় বড় বিস্ময়কর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানব, দানব, জীব-জন্তুসহ তাবৎ সৃষ্টিকুলের জন্য। এটা বুঝানোর জন্যই আল্লাহ তাআলা সময়ের শপথ করেছেন। (আত তিবইয়ান ফি আকসামিল বায়ান : ইবনুল কায়্যিম আল জাওযি)
কোনো বস্তু বা বিষয়ের শপথ করলে তার অস্বাভাবিক গুরুত্ব বুঝায়। সময় এমনই এক বিস্ময়ের আধার যে, আমরা জানি না অতীতকালে এটা কি কারণে হয়েছে। আমরা জানি না ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবন, নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা বলতে পারি না যে আগামী কালকের পরিবশেটা ঠিক আজকের মত থাকবে কি থাকবে না। দেখা যায় মানুষ নিজ সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামীকাল এটা সে বাস্তবায়ন করবে। অর্জন করবে এটা সেটা অনেক কিছু। সে দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। সব উপকরণ থাকে হাতের নাগালে। সব মাধ্যম ও ফলাফল থাকে আপন নখদর্পনে। কোনো কিছুরই অভাব নেই। তবুও এ ‘সময়’ নামক বস্তুটির ব্যবধানে এমন কিছু ঘটে যায় যা তার সব কিছুকে তছনছ করে দেয়। সে ভাবতেই পারে না- কেন এমন হল। অনেক বড় বড় হিসাব সে মিলিয়েছে কিন্তু এর হিসাব সে মেলাতে পারছে না। এটাই হল ‘সময়’। আল্লাহ তাআলা এর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই বলেছেন, ‘ওয়াল আসর’ – শপথ সময়ের।
এ থেকে আমরা জীবনের জন্য সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ হলেন মহান। তিনি মহান বস্তু ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর শপথ করেন না।
তাফসিরবিদ ইকরামাসহ অনেকে বলেছেন, ‘আসর’ বলতে এখানে আসরের নামাজের সময়ের শপথ করা হয়েছে। কেননা আসর নামাজের সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রখ্যাত তাফসিরবিদ ইবনে জারির আত তাবারী রহ. বলেছেন, ‘সঠিক কথা হল এখানে ‘আসর’ বলতে আল্লাহ তাআলা ‘সময়’ কে বুঝিয়েছেন। যুগের অপর নাম সময়। সকাল, বিকাল, দুপুর, রাত, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ, শতাব্দী, সহস্রাব্দ ইত্যাদি সব কিছুই বুঝায় এ ‘আসর’ বা ‘সময়’ নামক শব্দ। (জামেউল বায়ান : ১৫/২৮৯)
যদি এ সূরাটির প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে যে, সময়টাকে সকল যুগে টেনে নেয়া হয়েছে। মানুষকে সময়ের মধ্যে আবদ্ধ করা হয়েছে। সময় ছাড়া মানুষের জীবন যেমন সচল নয়, তেমনি সময় ব্যতীত তাদের কোনো অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতও নেই।

দ্বিতীয় আয়াত :

‘অবশ্যই মানুষ ক্ষতিতে নিপতিত।’
যদিও এখানে ইনসান বা মানুষ শব্দটি এক বচনে ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু তার পূর্বে জাতিবাচক আলিফ লাম ব্যবহার করে পুরো মানব জাতিকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পুরো মানবগোষ্ঠি ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সকলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে যাদের মধ্যে চারটি গুণ আছে তারা ব্যতীত। এ চারটি গুণের অধিকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত নয়। তারা লাভবান সর্বদা। লাভবান ইহকাল ও পরকালে। পরবর্তী আয়াতে এ চারটি গুণের কথাই বর্ণিত হয়েছে।

তৃতীয় আয়াত :

‘তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’
চারটি গুণ যাদের মধ্যে থাকবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এক. ঈমান
দুই. সৎকাজ বা আমালে সালেহ
তিন. অন্যকে সত্যের পথে আহবান
চার. অন্যকে ধৈর্যের উপদেশ দান
একজন মুসলিম শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে না। নিজের সুখে সন্তুষ্ট থাকে না। যেমন সে নিজের দুঃখেই শুধু ব্যথিত হয় না। অন্যের কথা চিন্তা করতে হয় তাকে। অন্যের কল্যাণে কাজ করতে হয়। অন্যের দুখে দুখী ও অন্যের সুখে সুখী হওয়া তার কর্তব্য। এজন্য এ চারটি গুণের প্রথম দুটো গুণ নিজের কল্যাণের জন্য আর পরের গুণ দুটো হল অন্যের কল্যাণের জন্য। প্রথম গুণ দুটো দ্বারা একজন মুসলিম নিজেকে পরিপূর্ণ করে, আর অপর দুইগুণ দ্বারা অন্যকে পরিপূর্ণ করার প্রয়াস পায়।
প্রথম গুণটি হল ঈমান। এটা একটা ব্যাপকভিত্তিক আদর্শের নাম। প্রখ্যাত তাফসিরবিদ মুজাহিদ রহ. বলেছেন, ঈমান হল, আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, তাঁর একত্ববাদকে সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করা। তাঁর পক্ষ থেকে যা কিছু এসেছে সবগুলোকে মেনে নেয়া এবং সর্বক্ষেত্রেই তার কাছে জওয়াব দিতে হবে এ আদর্শ ধারণ করা। (তাফসিরে তাবারি)
ঈমানের পর নেক আমল বা সৎকর্মের স্থান। সৎকর্ম কম বেশি সকল মানুষই করে। তবে ঈমান নামক আদর্শ তারা সকলে বহন করে না। ফলে তাদের আমল বা কর্মগুলো দিয়ে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। সৎকর্মশীল মানুষগুলো যদি ঈমান নামের আদর্শকে গ্রহণ করে তাহলে এ সৎকর্ম দ্বারা তারা দুনিয়াতে যেমন লাভবান হবে আখেরাতেও তারা অনন্তকাল ধরে এ লাভ ভোগ করবে। আর যদি সৎকর্মের সঙ্গে ঈমান নামের আদর্শ না থাকে, তাহলে সৎকর্ম দিয়ে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে কিছুটা লাভবান হলেও আখেরাতের স্থায়ী জীবনে এটা তাদের কোনো কল্যাণে আসবে না। এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথমে ঈমানের কথা বলেছেন।
সৎকর্ম হল, যা কিছু ইসলাম করতে বলেছে সেগুলো পালন করা আর যা কিছু নিষেধ করেছে সেগুলো থেকে বিরত থাকা। হতে পারে তা ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বা নফল। আর বর্জনীয় বিষয়গুলো বর্জন করে চলা। হতে পারে তা হারাম, মাকরূহ।
যখন মানুষ ঈমান স্থাপন করল, তারপর সৎকর্ম করল, তখন সে নিজেকে পরিপূর্ণ করে নিল। নিজেকে লাভ, সফলতা ও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করল। কিন্তু ঈমানদার হিসাবে তার দায়িত্ব কি শেষ হয়ে গেল? সে কি অন্য মানুষ সম্পর্কে বে-খবর থাকবে? কিভাবে সে এত স্বার্থপর হবে? অন্য সকলকে কি সে তার যাপিত কল্যাণকর, সফল জীবনের প্রতি আহবান করবে না? কেনই বা করবে না? সে তো মুসলিম। তাদের আভির্ভাব ঘটানো হয়েছে তো বিশ্ব মানবের কল্যাণের জন্য। আর এ জন্যই তো মুসলিমরা শ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহ তাআলা তো বলেই দিয়েছেন:
‘তোমরা হলে সর্বোত্তম জাতি, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (আলে ইমরান : ১১০)
অতএব নিজেকে ঠিক করার পর তার দায়িত্ব হবে অন্যকে কল্যাণের পথে আহবান করা। তাই ঈমান ও সৎকর্ম নামক গুণ দুটো উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা আরো দুটো গুণের কথা বললেন :
‘আর তারা পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’
সত্যের দিকে মানুষকে আহবান করা, এ আহবান করতে গিয়ে ও আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে যে সকল বিপদ-মুসিবত, অত্যাচার-নির্যাতন আসবে তাতে ধৈর্য ধারনের জন্য একে অন্যকে উপদেশ দেয়া কর্তব্য। প্রশ্ন হতে পারে সত্যের মধ্যেই তো ধৈর্য আছে। ধৈর্য তো হক বা সত্যের একটি। তাহলে এটা আলাদাভাবে উল্লেখ না করলে কি হত না? কোনো বিষয়ের গুরুত্ব বুঝাতে সাধারণভাবে তা উল্লেখ করা হলেও আবার বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। পরিভাষায় এটাকে বলা হয় : ذكر الخاص بعد العام
কোনো বিষয় অর্জন করা সহজ হতে পারে কিন্তু সেটি ধরে রাখা ও তার ওপর অটল থাকা ততটা সহজ নাও হতে পারে। আর এ জন্যই প্রয়োজন ধৈর্য ও সবরের।

সূরা থেকে অর্জিত শিক্ষা  মাসায়েলসমূহ :

১- এ সূরার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, চারটি বিষয় অর্জন করা আমাদের জন্য জরুরি :
এক. ইলম বা জ্ঞান অর্জন। ইলম ব্যতীত ঈমান স্থাপন সম্ভব নয়। ঈমানের জন্য কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। (ক) আল্লাহ তাআলাকে জানতে হবে। (খ) তাঁর রাসূলকে জানতে হবে। (গ) তাঁর প্রেরিত দীন-ধর্মকে জানতে হবে। এগুলো জানার পরই তার ওপর ঈমান আনা সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে:
‘অতএব জেনে নাও যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।’ (মুহাম্মাদ : ১৯)
আমরা দেখলাম, এ আয়াতে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে জানতে বলেছেন অর্থাৎ ইলম অর্জন করতে বলেছেন। তারপর ইস্তেগফার তথা আমল করতে বলেছেন।
দুই. ইলম অনুযায়ী কাজ করা। তিনটি বিষয় -আল্লাহ, রাসূল ও দীন সম্পর্কে ইলম অর্জন করে আল্লাহর প্রতি ঈমান স্থাপন করার পর সেই ইলম বা জ্ঞান অনুযায়ী আমল করতে হবে।
তিন. অন্যকে এই ইলম ও আমলের দিকে আহবান করতে হবে বা দীনে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে।
চার. ধৈর্য ধারন করা। ইলম, ঈমান, আমল ও দাওয়াত দিতে গিয়ে যে সকল বিপদ-মুসীবত, দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়,  তাতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে ও অন্যকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে হবে। এছাড়া সকল প্রকার বিপদ মুসিবতে, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে ও অন্যকে ধৈর্য ধারণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
২- আল্লাহ তাআলা ‘আল আসর’ তথা সময়, হায়াত, যুগের শপথ করেছেন। এ শপথের মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে সময় ও জীবনের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। মানুষের আয়ু কত মূল্যবান তা অনুধাবন করতে বলেছেন। তেমনি ‘আল আসর’ এর কসম করে যা বলেছেন সেটারও গুরুত্ব বুঝিয়েছেন তিনি। আর তা হল; মানুষ ক্ষতিতে নিপতিত। মানুষ ধ্বংসের দিকে ধাবিত। তাই ক্ষতির পথ ছেড়ে তাকে লাভ ও কল্যাণের পথে আসতে হবে। যারা ক্ষতিগস্ত হচ্ছে তারা কিন্তু সময়টাকে বর্ণিত কাজগুলোতে লাগাচ্ছে না বলেই তারা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
৩- আল্লাহ তাআলা যুগের শপথ করেছেন। যুগে যুগে যা কিছু ঘটেছে সেগুলো ইতিহাস। তাতে রয়েছে মানুষের জন্য শিক্ষা ও নসিহত। যুগে যুগে অত্যাচারী শক্তিধর জাতির পতন ঘটেছে। নির্যাতিত দুর্বল জাতির উত্থান হয়েছে। এসবই মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর সর্বময় ক্ষমতার প্রমাণ।
৪- মানুষ দুনিয়াতে আয়ু পার করে বার্ধক্যে উপনীত হয় বটে কিন্তু সে লাভবান হয় না। তবে যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, মানুষকে সত্যের পথে আহবান করেছে, ধৈর্য ধারণ করেছে তারা এর ব্যতিক্রম। তারা বৃদ্ধ অক্ষম হয়ে গেলেও তাদের নামে সৎকর্ম যোগ হতে থাকে। যেমন আবু মুসা আশাআরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একাধিকবার বলতেশুনেছি-‘কোন মানুষ যখন সৎকর্ম করতে থাকে, পরে তাকে রোগ-ব্যধি পেয়ে বসে অথবা সফর অবস্থায় থাকে, তখন তার কর্ম বিবরণীতে সে আমলগুলো লেখা হতে থাকে, যেগুলো সে সুস্থ ও গৃহে থাকাবস্থায় করে আসছিল।’ (বুখারি, জিহাদ অধ্যায়)
৫- মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকভাবে হতে পারে : প্রথম. কুফরি করার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহি পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (যুমার : ৬৫)
দ্বিতীয়. মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম কম হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন : আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজদের ক্ষতি করল।‘ (মুমিনূন : ১০৩)
তৃতীয়. সত্য তথা ইসলাম গ্রহণ না করে অন্য আদর্শ গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : ‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আলে ইমরান : ৮৫)
চতুর্থ. ধৈর্য ধারণ না করে হতাশ হয়ে পড়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :‘মানুষের মধ্যে কতক এমন রয়েছে, যারা দ্বিধার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি তার কোনো কল্যাণ হয় তবে সে তাতে প্রশান্ত হয়। আর যদি তার কোনো বিপর্যয় ঘটে, তাহলে সে তার আসল চেহারায় ফিরে যায়। সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি হল সুস্পষ্ট ক্ষতি।’ (হজ : ১১)
৬- ঈমানের আভিধানিক অর্থ, সত্যায়ন করা, স্বীকার করা, মেনে নেয়া।
পারিভাষিক অর্থ, হাদিসে জিবরিলে বর্ণিত ঈমানের যে ছয়টি ভিত্তি আছে তার
সবগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। একটু বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলা যায়, ঈমান হল : অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা, মুখ দিয়ে স্বীকার করা আর অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা। তাই শুধু বিশ্বাস দিয়ে কাজ হবে না, যদি না সে বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করা হয়।
৭- আমর বিল মারুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার অর্থাৎ অন্যকে সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করার গুরুত্ব অনুধাবন করা যেতে পারে। সত্যের পথে মানুষকে আসার উপদেশ দেয়া মানে সৎকাজের আদেশ করা। এর জন্য প্রয়োজন হবে ধৈর্যের। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লুকমান হাকিমের উপদেশ উল্লেখ করেছেন। সেখানেও এ বিষয়টি দেখা যায়। লুকমান তার ছেলেকে বলেছিলেন :’হে আমার প্রিয় বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ কর এবং তোমার ওপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।‘ (লুকমান : ১৭)
৮- আমালে সালেহ বা সৎকর্মের মধ্যে হুকুকুল্লাহ (আল্লাহর অধিকার) ও হুকুকুল ইবাদ (মানুষের অধিকার) দুটোই অন্তর্ভুক্ত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির গুরুত্ব দেয়ায় কাজ হবে না। তাওহিদে বিশ্বাস, ঈমানে কামেল, ইবাদত-বন্দেগি, ফরজ-ওয়াজিব ও সুন্নাত-মুস্তাহাব আমলগুলো যেমন সৎকর্ম তেমনি পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী-সহযাত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করাও সৎকর্মের  অন্তর্ভুক্ত। দেখুন কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজের অধিকার বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের কথাও বলেছেন : ‘তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে, ইয়াতিম, মিসকিন, নিকট আত্মীয়- প্রতিবেশী, অনাত্মীয়- প্রতিবেশী, পার্শবর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী।’ (নিসা : ৩৬)
৯- সবর বা ধৈর্য তিন প্রকার : (ক) আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ করা। তাঁর আদেশ নির্দেশগুলো মানতে গিয়ে অধৈর্য না হওয়া। এটাকে বলা হয় : الصبر على طاعة الله
(খ) আল্লাহর অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে  ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ তাআলা যা কিছু হারাম করেছেন সেগুলোর ধারে কাছে না গিয়ে ধৈর্য অবলম্বন করা। এটাকে বলা হয় : الصبر عن معصية الله
(গ) উপস্থিত বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা। এটাকে বলা হয় : الصبر على أقدار الله
১০- সূরা আল বালাদেও অন্যকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়ার নির্দেশ এসেছে, সেখানে এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। যেমন : ‘অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।’
এ আয়াতে মুমিনদের গুণাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, তারা ধৈর্য ধারণ আর পরস্পরকে দয়া-অনুগ্রহ করার উপদেশ দেয়।
তারা ডানদিকের দল। তাই একজন মুমিন যেমন নিজে ধৈর্য ধারণ করে ও অন্যকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়, তেমনি সে নিজে দয়া অনুগ্রহ করে ও অন্যকে দয়া অনুগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
আল্লাহ আমাদেরকে সূরা আল আসরের শিক্ষাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য তাউফিক দান করুন।

Tuesday, July 31, 2018

সহজ দশটি আযকার (যিকির) যার সাওয়াব অনেক বেশি



(১) প্রতিদিন ১০০ বার “سبحان الله” পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয় ।
[সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]
(২) “الحمد لله” মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং সর্বোত্তম দোআ’। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৩) “لا اله الا الله” হলো সর্বোত্তম যিকর।
[তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৪) “سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر” এই কালিমাগুলি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেনঃ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চাইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়।
[ সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২
(৫) যে ব্যক্তি “سبحان الله وبحمده” প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে।
[সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১]
(৬) নবী (সঃ) বলেনঃ “سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم” এই কালীমাগুলি জিহ্বায় উচ্চারনে সহজ , মীযানের পাল্লায় ভারী ,দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয় । [সহিহ আল- বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২]।
(৭) যে ব্যক্তি “سبحان الله العظيم وبحمده” পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী)খেজুর গাছ রোপন করা হবে । [আত-তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১, সহীহ আল-জামে’-৫/৫৩১, সহীহ আত-তিরমিজী-৩/১৬০ ]
(৮) নবী (সঃ) বলেনঃ “لا حول ولا قوة الا بالله” হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন।
[ সহীহ আল-বুখারী -১১/২১৩, সহীহ মুসলিম- ৪/২০৭৬]
(৯) নবী (সঃ) বলেনঃ “سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبرو لا حول ولا قوة الا بالله” এই কালীমাগুলি হচ্ছে “অবশিষ্ট নেকআ’মল সমুহ” । [ আহমাদ (সহীহ)-৫১৩, মাজমাউজ জাওয়াঈদ-১/২৯৭ ]
(১০) নবী (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি দশ বার রহমত বর্ষণ করবেন। এবং তিনি (সঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে। [তাবারানী,মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৭৩]

খুব সুন্দর একটা হাদিস

টি

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...