Sunday, May 17, 2020

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য




পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
এক. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটা মালিকী, শাফি‘ঈ এবং হাম্বালী মাযহাবের মত। [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
দুই. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম। এটি হানাফী মাযহাবের মত। [ইমাম কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ), বাদাই‘উস সানা’ই‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
তিন. প্রয়োজন দেখা দিলে বা কল্যাণকর মনে হলে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ আছে। একটি অপ্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি মত। এই মতকে পছন্দ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮২-৮৩; বাদশাহ ফাহাদ বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
আমরা এই তিনটি মতের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্বানের মতটিকে অগ্রগণ্য ও সঠিক বলে থাকি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
·
এক. রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোতে স্রেফ খাদ্যদ্রব্যের কথা এসেছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা আসেনি। যেমন: ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطرِ صَاعًا مِن تَمرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أو عَبدٍ ذَكَرٍ أو أُنثَى مِنَ المُسلِمِينَ.
“প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নর-নারী, ছোটো-বড়ো সকল মুসলিমের ওপর আল্লাহ’র রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক তা এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
كُنَّا نُخرِجُ فِي عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَومَ الفِطرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ. وَقَالَ أبُو سَعيدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأقِطُ وَالتَّمرُ.
“আমরা আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা‘ঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর’।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১০]
রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
·
দুই. রাসূল ﷺ ফিতরাকে মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরজ করেছেন, অর্থস্বরূপ ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধকারীস্বরূপ এবং মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]
·
তিন. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো তা দলিলনির্ভর হতে হবে। সুতরাং কারও জন্য সেই ইবাদত করা জায়েজ নয়, যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরিয়তপ্রণেতা রাসূল ﷺ থেকে সাব্যস্ত হয়নি।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)] আর শরিয়তপ্রণেতা কর্তৃক অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়নি।
·
চার. রাসূল ﷺ এর যুগে মুদ্রার প্রচলন ছিল এবং অভাবী ব্যক্তির বিদ্যমানতাও ছিল। তখন স্বাভাবিকভাবেই অভাবী ব্যক্তিরা অর্থের মুখাপেক্ষী ছিল। এতৎসত্ত্বেও রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয়নি। আর এটি শরিয়তের একটি সুবিদিত মূলনীতি যে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ (لا يجوز تأخير البيان عن وقت الحاجة)। অর্থাৎ, প্রয়োজনের সময় হুকুম বর্ণনা করতে দেরি করা জায়েজ নয়। সুতরাং রাসূল ﷺ যেহেতু অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বৈধতা বর্ণনা করেননি, সেহেতু অর্থ দিয়ে তা আদায় করা শরিয়তসম্মত হবে না।
·
এখন আমরা আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া মতটির স্বপক্ষে আহলুস সুন্নাহ’র ইমামগণের বক্তব্য পেশ করব। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
১. শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন,
ولا يجزئ أن يجعل الرجل مكان زكاة الفطر عرضًا من العروض وليس كذلك أمر النبي عليه الصلاة والسلام.
“ফিতরার জায়গায় অর্থ বা খাদ্যমূল্য নির্ধারণ করলে তা যথেষ্ট হবে না। নাবী ﷺ এভাবে আদেশ দেননি।” [আল-মুদাওয়্যানাতুল কুবরা, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৮৫; গৃহীত: tasfiatarbia.org]
·
২. শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,
ولا يؤدي قيمته (يعني طعام الفطرة).
“আর ফিতরার খাদ্যমূল্য দিয়ে তা আদায় করবে না।” [ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) কিতাবুল উম্ম, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৭৪; দারুল ওয়াফা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৩. শাইখুল ইসলাম ইমামু আহলিস সুন্নাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,
ولا يعطي قيمته، قيل له: يقولون: عمر بن عبد العزيز كان يأخذ القيمة، قال: يدعون قول رسول الله ﷺ ويقولون قال فلان؟ قال ابن عمر: فرض رسول الله ﷺ. وقال الله: أطيعوا الله وأطيعوا الرسول. وقال قوم يردون السنن: قال وقال فلان.
“ফিতরার খাদ্যমূল্য প্রদান করবে না।” তখন তাঁকে বলা হলো, “তারা বলে, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয খাদ্যমূল্য গ্রহণ করতেন।” তখন তিনি (ইমাম আহমাদ) বললেন, “তারা আল্লাহ’র রাসূলের ﷺ কথা পরিত্যাগ করছে, আর বলছে, অমুক এটা বলেছেন?! ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ (ফিতরা) ফরজ করেছেন।” আর আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আল্লাহ’র আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।” (সূরাহ নিসা: ৫৯) অথচ একদল লোক সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে বলছে, অমুক বলেছেন, আর তমুক বলেছেন!” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
·
৪. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেছেন,
ومما ذكرنا يَتَّضِحُ لصاحب الحق أن إخراج النقود في زكاة الفطر لا يجوز ولا يجزئ عمن أخرجه؛ لكونه مخالفا لما ذُكر من الأدلة الشرعية.
“আমরা যে আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে, অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, আর যে ব্যক্তি অর্থ দিয়ে আদায় করে, তার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু তা উল্লিখিত শার‘ঈ দলিল বিরোধী।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২১১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৫. বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুজাদ্দিদ আল-ফাক্বীহুন নাক্বিদ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
الذين يقولون بجواز إخراج صدقة الفطر نقودًا هم مخطئون، لأنهم يخالفون النص.
“যারা বলেন, অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েজ, তারা ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তারা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধিতা করছেন।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর; ২৭৪ নং অডিয়ো ক্লিপ; সংগৃহীত: sahab.net]
·
৬. বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
لا يجوز أن تُدفَعَ زكاة الفطر نقودا بأي حال من الأحوال، بل تدفع طعاما، والفقير إذا شاء باع هذا الطعام وانتفع بثمنه.
“অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। বরং তা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আদায় করতে হবে। তবে অভাবী ব্যক্তি চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে উপকৃত হতে পারবে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৭; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৭. সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
إخراج القيمة نقودًا عن صدقة الفطر؛ هذا لا يجزئ؛ لأنه خلاف ما أمر به النبي ﷺ، لأن الرسول ﷺ أمر بإخراجه من الطعام. ... هذا قول جمهور أهل العلم، والأئمة الثلاثة: مالكٍ والشافعيِّ وأحمدَ رحمهم الله، وأجاز أبو حنيفة –رحمه الله– إخراج القيمة، ولكن هذا خلاف النص واجتهاد مع النص، ولا يجوز الإجتهاد مع وجود النص، ولهذا لما سئل الإمام أحمد رحمه الله عن إخراج القيمة وأن فلانًا أفتى بإخراج القيمة قال رحمه الله: يدعون قول رسول الله ﷺ ويأخذون بقول فلان. فالواجب العمل بالنص.
“অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা (আদায় হিসেবে) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী ﷺ এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রাসূল ﷺ খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।... এটা অধিকাংশ ‘আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)’র মত। আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ। আর সুস্পষ্ট দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েজ নয়। একারণে যখন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং বলা হয় যে, অমুক (‘আলিম) ‘অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ’ ফাতওয়া দিয়েছেন, তখন তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা পরিত্যাগ করছে, আর অমুকের কথা গ্রহণ করছে!’ সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫; দারুল ‘আসিমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৮. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে,
في بلادنا زكاة الفطر تدفع مالًا بحجة أن المساكين لا يريدون حبوبًا وغيرها، فماذا نفعل؟
“আমাদের দেশে অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা হয় এ দলিলের ভিত্তিতে যে, মিসকীনরা শস্য চায় না। এক্ষেত্রে আমরা কী করব?”
শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
ليس الأمر للمساكين، هذه عبادة، تنفذ كما جائت عن الرسول ﷺ، والذي لا يريد الطعام هذا ليس بمحتاج، أعطه المحتاج الذي يريد الطعام.
“এটা মিসকীনদের কথা অনুযায়ী হবে না। এটি একটি ইবাদত। রাসূল ﷺ থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। আর যে খাদ্য চায় না, সে মূলত অভাবীই নয়। সুতরাং ফিতরা অভাবী ব্যক্তিকে দাও, যে খাদ্য চায়।” [দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/12939.]
·
৯. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,
ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺗﻮﺯﻳﻊ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻧﻘﺪًﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻓﻴﻤﺎ ﻧﻌﻠﻢ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ.
“আমাদের জানামতে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী অর্থ দ্বারা ফিতরা বণ্টন করা জায়েজ নয়। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত।”
ফাত‌ওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ৯২৩১; প্রশ্ন নং: ৪; সংগৃহীত: alifta.net]
·
১০. স্থায়ী কমিটির আরেকটি ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,
ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻨﻘﻮﺩ ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺧﺮﺍﺝ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ.
“খাদ্যের পরিবর্তে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়। কেননা নাবী ﷺ খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; আল ইফতা ডট নেটে রমজান মাস সেকশনের ‘যাকাত ও ফিতরা’ অংশের ফাত‌ওয়া; প্রশ্ন নং: ৫; সংগৃহীত: alifta.net]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, বরং আবশ্যিকভাবে খাদ্যদ্রব্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করতে হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয় জানার এবং তা যথাযথভাবে মানার তাওফীক্ব দান করুন।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

খারেজীদের গুরু আহমাদ মূসা জিবরীল এর ব্যাপারে সতর্কতা



তাকফীরী যুবকদের একটি সাধারন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; তারা বয়ঃজ্যৈষ্ঠ সালাফী আলিমদের গালমন্দ করে অথচ আহমাদ মুসা জিবরীল ও আনোয়ার আল আউলাকির মতো মানুষকে 'ইমাম' হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। এরা আসলেই মিসকিন বৈ কিছুই না।
.
তাকফীরী ধূর্তরা আহমাদ মূসা জিবরীলের ডিফেন্সে নানারূপে চল-চাতুরী করে। যেমন : এরা যুগ শ্রেষ্ঠ আলিমেদ্বীন ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ-র তাজকিয়্যাহ পেশ করে ( জানিনা এটা সত্য নাকি ভুয়া) যদি সত্যও হয়ে থাকে তাহলেও তা বাতিল হয়ে যাবে ঠিক যেমনটি বাতিল হয়ে গেছে সাইয়্যদ ক্বুতুব এবং জামা’য়াত আত তাবলীগের ব্যাপারে করা তাঁর প্রশংসা। কেননা ঐ সমস্ত লোকের ব্যাপারে পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন। চ্যালেঞ্জ রইল, পারলে দেখাও - ইমাম ইবনু বায এর জীবিত ছাত্রদের মধ্যে কে তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছে ?
ইমাম ফাউজান ? লুহাইদান ? রাবী?
.
সালাফীদের মূলনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; অপরিচিত (মাজহুল) কারো নিকট হতে জ্ঞান আহরণ করা হয়না। আমাদের কাছে উলামাদের পক্ষ হতে তাযকিয়্যাহ নিয়ে এসো। যাও _
.
আহমাদ মুূসা জিবরীলের অনুসারীদের দাবী হচ্ছে, ইমাম ইবনু বায [ রাহিমাহুল্লাহ ] নাকি সাধারনভাবে তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন।
আমরা জিবরীলের অনুসারীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ মারা ১৯৯৯ সালে। ঠিক তখনও অর্থাৎ ২০০০ – ২০০১ সাল পর্যন্ত আহমেদ মুসা জিবরীল খোলাখুলিভাবে তার খারেজিপনা প্রচার শুরু করেনি ঠিক যেমনিভাবে আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক তার দুষ্ট নবউদ্ভাবিত ধারণা ততক্ষণ পর্যন্ত শুরু করেনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইমাম আল আলবানী এবং ইমাম মুক্ববীল [ রাহিমাহুমুল্লাহ ] জীবিত ছিলেন।

.
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আহমাদ মূসা জিবরীল বিরচিত " ধূলোমলিন রমাদান " নামক একটা বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে। সেখানেও লিখক পরিচিতিতে কারসাজি করা হয়েছে! বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিখ্যাত আহলে হাদিস আলিম, আল্লামাহ এহসান এলাহী যাহীর [ রাহিমাহুল্লাহ ] নাকি তাকে তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন! অথচ আমরা উইকিপিডিয়া এবং আহমাদ মুসা জিবরীল সাহেবের অফিশিয়াল পেইজে তালাশ করে দেখলাম যে, তিনি ১৯৮৯-১৯৯০ তে মদিনায় পড়তে এসেছিলেন!
এখন যদি কেউ দাবী করে যে, একটা বাচ্চা ছেলেকে আল্লামাহ যাহীর রাহিমাহুল্লাহ তাজকিয়্যাহ দিয়েছেন সেটা চরম হাস্যকরই বটে! কারণ, ৩০ মার্চ ’১৯৮৭ সালে সোমবার ভোর রাত ৪-টার সময় মাত্র ৪২ বছর বয়সে আল্লামাহ যহীর বোমা হামলায় আহত হন এবং সৌদির একটি হসপিটালের ইন্তেকাল করেন। তারমানে হল, মূসা জিবরীল সাহেব মদিনায় ছাত্রত্ব গ্রহণের ৩ বছর আগেই আল্লামাহ যাহীর রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যবরণ করেন।
.
এসব কথিত প্রশংসাপত্র আহমাদ মুসা জিবরীলের অনুসারীরা ব্যবহার করে থাকে তাকে রক্ষা করার জন্য এবং যারা তার সমালোচনা করে তাদেরকে মিথ্যা বা ভুল প্রমাণ করার জন্য। জ্ঞাতব্য যে, এটা রক্ষার চেষ্টা নয় বরং এক ধরনের দ্বিচারিতা, অপ-কৌশল ও মিথ্যাচার, যা দ্বারা তার প্রমোটার-রা ধোঁকাগ্রস্থ সালাফীদের ব্লাকমেইল করে থাকে। অবশ্য, এটা নতুন কিছুই নয়, কেননা আমরা প্রায়ই দেখে আসছি খ্যাতি অর্জনে ইচ্ছুক অনেক বক্তাকেই এমনিভাবে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।
.
এদের আরেকটি খোঁড়া যুক্তি হল “ আহমাদ মূসা জিবরীল মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছিলেন এবং ইযাযতপ্রাপ্তও ছিলেন।“
শেষোক্ত অংশের (ইযাযত) ব্যাপারে আমাদের নিকট কোনো অথেনটিক প্রমাণ নেই তবে "মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ" এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক আদর্শ অনুসারে সনদধারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে সাধারণ ইযাযত হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকন্তু, মদিনার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আশ শাইখুল আল্লামাহ, আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ আল বদর [ হাফিয্বাহুল্লাহ ] বলেছেন, "যখন কেউ মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তখন তিনি গবেষণামূলক জ্ঞানের প্রারম্ভিক ছাত্র হিসেবে বিবেচিত হন, তবে তিনি ‘আলিম নন"।
.
ওহে খারেজীদের লেজের সমর্থকরা! ক্বাবার প্রভুর দোহাই দিয়ে বলছি : মিথ্যাচার বন্ধ কর, আল্লাহকে ভয় কর এবং আহমাদ মূসা জিবরীল [ হাদাহুল্লাহ ] ও অন্যান্য খারেজীদের প্রতি অন্ধ গোঁড়ামি পরিহার কর।
অত:পর সালাফী ভাইদের অনুরোধ করব, "তোমরা সালফদের পথ অনুসরণ করো। সর্বোত্তম বক্তব্য হল আল্লাহর আর সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা তার রসূলের। কাজেই একজন প্রতারককে পছন্দ করার চেয়ে এটাই তোমাদের জন্য অধিকতর পছন্দনীয় হওয়া উচিৎ।
হে ভাই তুমি হয়ত ভাবছো যে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য উমুক ব্যক্তি আমেরিকার কারাগারে বন্দী হয়েছিলেন , অথচ সে কোনো মহৎ কাজের জন্য কারারুদ্ধ হননি বরং গ্রেফতার হয়েছিলেন কর ফাঁকির জন্য।
মনে রেখো, একজন ধোঁকাবাজ ও চক্রান্তকারী ব্যক্তি সমসাময়িক যেকোন বিষয়ে কিছু আবেগময় লেকচার দিয়ে তোমাকে সপ্নের মুজাহিদ বানিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু তাকিয়ে দেখ, সে এবং তাঁর পরিবার নিরাপদ জীবন যাপন করছে।
.
যুবক! জেগে উঠো, আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং অন্ধ গোঁড়ামির রোগ হতে হিফাজত করুন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ভালবাসার উপরে অন্যকারো ভালবাসাকে স্থান দেয়া হতে আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন। আমীন।
.
#সুন্নাহর পথযাত্রী

"সদাকাতুল ফিতর"



সম্মানিত ভাইয়েরা আমার!  আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের শেষে একটি বিধান দিয়েছেন। অর্থাৎ ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে ‘সদকাতুল ফিতর’ আদায় করা। আজকের মজলিসে এ বিষয়ে কথা বলব। এর বিধান, উপকারীতা, শ্রেণী, পরিমাণ, অপরিহার্যতা, আদায় করার সময় ও স্থান সম্পর্কে আলোচনা করব।

সদকাতুল ফিতরের বিধান

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মুসলিমদের উপর আবশ্যক করেছেন। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আদেশ করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক আদেশ করার সমতুল্য।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء: ٨٠]
‘যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’[1]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [النساء: ١١٥]
‘যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকে ফিরাব যে দিকে সে ফিরতে চায় এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। তা নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল।’[2]
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧﴾ [الحشر: ٧]
 ‘আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল তোমাদের যা আদেশ করেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।’[3]

সাদকাতুল ফিতর মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, আজাদ-গোলাম সকলের উপর ওয়াজিব। 
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে আজাদ, গোলাম, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের উপর এক সা’ খেজুর, বা এক সা’ যব সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। 
পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু কেউ যদি আদায় করে, তাহলে নফল সদকা হিসেবে আদায় হবে। ওসমান রাদিআল্লাহু আনহু পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতেন। ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে আদায় করবে। যেমন স্ত্রী ও সন্তান। যদি তাদের নিজস্ব সম্পদ থাকে তবে তাদের সম্পদ থেকেই সদকাতুল ফিতর আদায় করবে।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]
‘তোমরা সাধ্য অনুপাতে আল্লাহকে ভয় কর।’[4]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ»
‘আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে আদেশ করি, তোমরা তা সাধ্যানুযায়ী পালন কর।’[5]

সদকাতুল ফিতরের উপকারিতা

১. দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হয়
২. ঈদের দিনগুলোতে দরিদ্র ব্যক্তিরা ধনীদের ন্যায় স্বচ্ছলতা বোধ করে
৩. সদকাতুল ফিতরের ফলে ধনী-গরীব সবার জন্য ঈদ আনন্দদায়ক হয়
৪. সদকাতুল ফিতর আদায়কারী দানশীল হিসেবে পরিগণিত হয়
৫. সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে সিয়াম অবস্থায় ঘটে যাওয়া ক্রটিগুলোর কাফ্ফারা করা হয়
৬. সদকাতুল ফিতর দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ অনুগ্রহে বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তওফিক দিয়েছেন, সাথে সাথে সদকাতুল ফিতিরের ন্যায় আরেকটি ভাল কাজের তওফিক দান করলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল ও অনর্থক কথা-বার্তার কারণে সিয়ামে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর করার জন্য ও মিসকিনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা সদাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হিসেবে গন্য হবে।[6]

যে সব জিনিস দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায়

মানুষের সাধারণ খাবার জাতীয় বস্ত্ত দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায়। যেমন, খেজুর, গম, চাল, পনির, ঘি ইত্যাদি।
বুখারী ও মুসলিমে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিত্র খেজুর অথবা যব দ্বারা আদায় করতে বলেছেন। যবের ক্ষেত্রে দুই দিনের খাবারের সমপরিমণ যব প্রদান করা।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা খাবার জাতীয় জিনিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। সে সময় আমাদের সবার খাবার ছিল পনির, ঘি এবং খেজুর।[7]

মানুষ ব্যতীত অন্য কোন প্রাণীর খাদ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফরজ করেছেন মিসকিনদের খাদ্যের অভাব পূরণ করার জন্য, কোন প্রাণীর খাদ্যাভাব পুরণের জন্য নয়। এমনকি কাপড়, বিছানা, পান পাত্র ইত্যাদি দ্বারাও আদায় হবে না। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকায়ে ফিতর খাদ্যের মাধ্যমে আদায় করা ফরজ করেছেন।[8] খাদ্যমূল্য দ্বারা আদায় করলেও আদায় হবে না। যেহেতু এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশের বিপরীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা পরিত্যাজ্য।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, 
‘যে আমাদের ধর্মে এমন জিনিস সৃষ্টি করল, যা আমাদের ধর্মে নেই, তা পরিত্যাজ্য।’[9] 
তাছাড়া খাদ্যমূল্য প্রদান করা সাহাবাদের আমলের পরিপন্থী। কারণ, তারা খাদ্যজাতীয় বস্তু দ্বারাই সদকাতুল ফিত্র আদায় করতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার পরবর্তীতে সঠিক পথে পরিচালিত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আকড়ে ধর। 
সদকাতুল ফিতর নির্দিষ্ট একটি এবাদত, তাই অনির্দিষ্ট বস্ত্ত দ্বারা আদায় করলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। যেমন নির্দিষ্ট সময় ছাড়া আদায় করলে আদায় হয় না।

যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য দ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন। আর প্রত্যেক খাদ্য দ্রব্যের মূল্য সমান নয়। সুতরাং মূল্যই যদি ধর্তব্য হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কোন এক প্রকারের এক সা’ হত এবং তার বিপরীত বস্ত্ত দ্বারা ভিন্ন মূল্যের হত। দ্বিতীয়ত মূল্য প্রদানের দ্বারা সদকাতুল ফিতর প্রকাশ্য এবাদতের রূপ হারিয়ে গোপন এবাদতের রূপ পরিগ্রহণ করে, তাই এটা পরিহার করাই বাঞ্চনীয়। এক সা’ খাদ্য সবার দৃষ্টি গোচর হয়,  কিন্তু মূল্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় না।

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের এক সা’। যার ওজন চার শত আশি মিসকাল গম। ইংরেজী ওজনে যা দুই কেজি ৪০ গ্রাম গম। যেহেতু এক মিসকাল সমান চার গ্রাম ও এক চতুর্থাংশ হয়। সুতরাং ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম হয়। অতএব রাসূলের যুগের সা’ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা পরিমাপ করতে হবে।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ায় সময়

ঈদের রাতে সূর্যাস্তের সময় জীবিত থাকলে তার উপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক, নতুবা নয়। সুতরাং কেউ সূর্যাস্তের এক মিনিট পূর্বে মারা গেলে তার উপর ওয়াজিব হবে না। এক মিনিট পরে মারা গেলে অবশ্যই তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে। যদি কোন শিশু সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পর ভূমিষ্ট হয়, তার উপরও আবশ্যক হবে না, তবে আদায় করা সুন্নত। যার আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে ভুমিষ্ট হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।
সদকাতুল ফিতর আবশ্যক হওয়ার ওয়াক্ত রমজানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পরবর্তী সময় নির্ধারণ করার কারণ হচ্ছে, তখন থেকে ফিতর তথা খাওয়ার মাধ্যমে রমজানের সিয়াম সমাপ্ত হয়। এ কারণেই একে রমজনের সদকাতুল ফিতর বা সিয়াম খোলার ফিতর বলা হয়। বুঝা গেল, ফিতর তথা সিয়াম শেষ হওয়ার সময়টাই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়।[10]

সদকাতুল ফিতর আদায়ের সময় দু’ধরণের : ১. ফজিলতপূর্ণ সময় ও ২. ওয়াক্ত জাওয়াজ বা সাধারণ সময়
১. ফজিলতপূর্ণ সময় : ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাতের পূর্বে। বুখারীতে বর্ণিত, আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহ আনহু বলেন, 
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সদকাতুল ফিতর হিসেবে ঈদুল ফিতরের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য আদায় করতাম। 
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, 
রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের ঈদের সালাত পড়তে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ দিয়েছে।
ইবনে উয়াইনা স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে আমর বিন দীনারের সূত্রে ইকরামা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 
মানুষ ঈদের দিন সদকাতুল ফিতর ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করবে।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : 
‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্বরণ করে, অতঃপর সালাত আদায় করে।’[11]
সুতরাং ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্বে আদায় করা উত্তম। যাতে মানুষ সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে।

২. জায়েজ সময় : ঈদের একদিন দু’দিন পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।
বুখারীতে আছে, নাফে রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু নিজের এবং ছোট-বড় সন্তানদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ হতেও। তিনি জাকাতের হকদারদের ঈদের একদিন বা দুদিন পূর্বে সদকাতুল ফিতর দিতেন। ঈদের সালাতের পর আদায় করা জায়েজ নেই। অতএব, বিনা কারণে সালাতের পর বিলম্ব করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশের পরিপন্থী। পূর্বে ইবনে আববাস রাদিআল্লাহু আনহু এর হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে, 
যে ব্যক্তি সদকাতুল ফিতর ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করবে, তার দান সদকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ঈদের সালাতের পর আদায় করবে, তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হিসেবে গণ্য হবে।[12] 
যদি কোন কারণ বশত বিলম্ব করে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন সে এমন স্থানে আছে যে, তার নিকট আদায় করার মত কোন বস্তু নেই বা এমন কোন ব্যক্তিও নেই, যে এর হকদার হবে। অথবা হঠাৎ তার নিকট ঈদের সালাতের সংবাদ পৌঁছল, যে কারণে সে সালাতের পূর্বে আদায় করার সুযোগ পেল না। অথবা সে কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিল, যে তা আদায় করতে ভুলে গেছে। এমতাবস্থায় সালাতের পর আদায় করলে কোন অসুবিধা নেই। কারণ সে অপারগ।

ওয়াজিব হচ্ছে, সদকাতুল ফিতর তার প্রাপকের হাতে সরাসরি বা উকিলের মাধ্যমে যথাসময়ে সালাতের পূর্বে পৌঁছানো। যদি নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে প্রদানের নিয়ত করে, অথচ তার সঙ্গে বা তার নিকট পৌঁছতে পারে এমন কারো সঙ্গে সাক্ষাত না হয়, তাহলে অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবে, বিলম্ব করবে না।

সদকাতুল ফিতর প্রদানের স্থান

সদকাতুল ফিতর প্রদানের সময় যে এলাকায় সে অবস্থান করছে ঐ এলাকার গরীবরাই বেশী হকদার। উক্ত এলাকায় সে স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী। কিন্তু যদি তার বসতি এলাকায় কোন হকদার না থাকে বা হকদার চেনা অসম্ভব হয়, তাহলে তার পক্ষে উকিল নিযুক্ত করবে। সে উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে তার সদকাতুল ফিতর আদায় করে দিবে ।

সদকাতুল ফিতরের হকদার

সদকাতুল ফিতর হকদার হচেছ (১) দরিদ্র (২) ঋণ আদায়ে অক্ষম (৩) ঋণগ্রস্ত, তাকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে। এক সদকাতুল ফিতর অনেক ফকীরকে দেয়া যাবে এবং অনেক সদকাতুল ফিতর এক মিসকিনকেও দেয়া যাবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু হকদারকে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যদি অনেক ব্যক্তি তাদের সদকাতুল ফিতর ওজন করার পর একটি পাত্রে জমা করে এবং সেখান থেকে তা পুনরায় পরিমাপ ছাড়া বণ্টন করে, তবে তা বৈধ হবে। কিন্তু ফকীরকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ। তাকে তারা যা দিচ্ছে তার পরিমাণ তারা জানে না। ফকীরের জন্য বৈধ, কারো থেকে সদকাতুল ফিতর গ্রহণের পর নিজের পক্ষ থেকে বা পরিবারের অন্য সদস্যের পক্ষ থেকে দাতার কথায় বিশ্বাস করে পরিমাপ ছাড়াই কাউকে কিছু দেয়া।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী আনুগত্য করার তওফিক দিন। আমাদের আত্মা, কথা ও কাজ শুদ্ধ করে দিন। আমাদেরকে বিশ্বাস, কথা ও কাজের ভ্রষ্টতা থেকে পবিত্র করুন। নিশ্চয়ই আপনি উত্তম দানশীল ও করুনাময়। হে আল্লাহ! আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তার সকল পরিবার ও সাহাবাগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন

সমাপ্ত

[1] নিসা : ৮০
[2] নিসা : ১১৫
[3] হাশর : ৭
[4] তাগাবুন : ১৬
[5] বুখারী ও মুসলিম
[6] আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ
[7] বুখারী
[8] হানাফি মাজহাবের ওলামায়ে কেরামের মত অনুসারে মূল্য দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করলে, সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে যাবে।
[9] মুসলিম
[10] হানাফী মাজহাবে ঈদের দিনের সুবহে সাদিকের সময় সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়।
[11] আলা : ১৪-১৫
[12] আবু দাউদ, ইবনে মাজা
_________________________________________________________________________________

লেখক : শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদক: মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম চান্দ মিয়াঁ - সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

‘লাইলাতুল্ কদর’ এ কি কি ইবাদত করবেন?



আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ
অনেক দ্বীনী ভাই আছেন যারা সহীহ নিয়মে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করতে ইচ্ছুক। তাই তারা প্রশ্ন করে থাকেন যে, লাইলাতুল কদরে আমরা কি কি ইবাদত করতে পারি? এই রকম ভাই এবং সকল মুসলিম ভাইদের জ্ঞাতার্থে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু উল্লেখ করা হল। [ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ]

প্রথমতঃ আল্লাহ তাআ’লা আমাদের বলে দিয়েছেন যে, এই রাত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। [আল্ মিসবাহ আল্ মুনীর/১৫২১] 
তাই এই রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করাই হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়তঃ জানা দরকার যে ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত হচ্ছে, প্রত্যেক এমন আন্তরিক ও বাহ্যিক কথা ও কাজ যা, আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। [মাজমুউ ফাতাওয়া,১০/১৪৯]
উক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যেতে পারে যে ইবাদত বিশেষ এক-দুটি কাজে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আমরা একাধিক ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি অতিবাহিত করতে পারি। নিম্নে কিছু উৎকৃষ্ট ইবাদত উল্লেখ করা হলঃ

১- ফরয নামায সমূহ ঠিক সময়ে জামাআ’তের সাথে আদায় করা। 
যেমন মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামায। তার সাথে সাথে সুন্নতে মুআক্কাদা, তাহিয়্যাতুল মসজিদ সহ অন্যান্য মাসনূন নামায আদায় করা।

২- কিয়ামে লাইলাতুল্ কদর করা। 
অর্থাৎ রাতে তারবীহর নামায আদায় করা। নবী (সাঃ) বলেনঃ 
“যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে (নামায পড়বে) তার বিগত গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। [ফাতহুল বারী,৪/২৯৪] 
এই নামায জামাআতের সাথে আদায় করা উত্তম। অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে ইমাম দীর্ঘ কিরাআতের মাধ্যমে নামায সম্পাদন করতে পারেন। ইশার পর প্রথম রাতে কিছু নামায পড়ে বাকী নামায শেষ রাতে পড়াতে পারেন। একা একা নামায আদায়কারী হলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়তে পারে।

৩- বেশী বেশী দুআ করা। 
তন্মধ্যে সেই দুআটি বেশী বেশী পাঠ করা যা নবী (সাঃ) মা আয়েশা (রাযিঃ) কে শিখিয়েছিলেন। 
মা আয়েশা নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দুআ করবো? তিনি (সাঃ) বলেনঃ বলবে, (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা’ফু আন্নী”। [আহমদ,৬/১৮২] অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ কর, তাই আমাকে ক্ষমা কর”।

এছাড়া বান্দা পছন্দ মত দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যাবতীয় দুআ করবে। সে গুলো প্রমাণিত আরবী ভাষায় দুআ হোক কিংবা নিজ ভাষায় হোক। এ ক্ষেত্রে ইবাদতকারী একটি সুন্দর সহীহ দুআ সংকলিত দুআর বইয়ের সাহায্য নিতে পারে। সালাফে সালেহীনদের অনেকে এই রাতে অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে দুআ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ এতে বান্দার মুক্ষাপেক্ষীতা, প্রয়োজনীয়তা ও বিনম্রতা প্রকাশ পায়, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।

৪- যিকর আযকার ও তাসবীহ তাহলীল করা। 
অবশ্য এগুলো দুআরই অংশ বিশেষ। কিন্তু বিশেষ করে সেই শব্দ ও বাক্য সমূহকে যিকর বলে, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা হয়। যেমন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্ হামদু ল্লিল্লাহ” “সুবহানাল্লাহ”, “আল্লাহুআকবার” “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ”। ইত্যাদি।

৫- কুরআন তিলাওয়াত। 
কুরআন পাঠ একটি বাচনিক ইবাদত, যা দীর্ঘ সময় ধরে করা যেতে পারে। যার এক একটি অক্ষর পাঠে রয়েছে এক একটি নেকী। নবী (সাঃ) বলেনঃ 
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পড়বে, সে তার বিনিময়ে একটি নেকী পাবে… আমি একথা বলছি না যে, আলিফ,লাম ও মীম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর”। [তিরমিযী, তিনি বর্ণনাটিকে হাসান সহীহ বলেন]
এছাড়া কুরআন যদি কিয়ামত দিবসে আপনার সুপারিশকারী হয়, তাহলে কতই না সৌভাগ্যের বিষয়! নবী (সাঃ) বলেনঃ 
“তোমরা কুরআন পড়; কারণ সে কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে”। [মুসলিম]

৬- সাধ্যমত আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান-সাদকা করা। 
নবী (সাঃ) বলেনঃ 
“সাদাকা পাপকে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়”। [সহীহুত তারগবি]

শবে কদরের একটি রাতে এই রকম ইবাদতের মাধ্যমে আপনি ৮৩ বছর ৪ মাসের সমান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইবাদতের এই সুবর্ণ সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!
উল্লেখ থাকে যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে বৈষয়িক কাজ-কর্মও ইবাদতে পরিণত হয়। যেমন রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খাওয়া, রাত জাগার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম সেরে নেওয়া। তাই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বান্দা যেসব দুনিয়াবী কাজ করে সেগুলোও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
আশা করি আপনাদের বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিছু আইডিয়া দিতে পেরেছি। ওয়ামা তাওফীক ইল্লা বিল্লাহ্

শাইখ আব্দুর রকীব মাদানী
লিসান্স : মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
আল খাফজী দাওয়াহ সেন্টার, সঊদী আরব।

"ভ্রান্ত বক্তা নোমান আলী খান"


প্রচারেঃজাহিদ হাসান নিলয়
পশ্চিমা দেশের অসংখ্য ভ্রান্ত বক্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নোমান আলী খান। তাকে কুরআনের তাফসির বিশেষজ্ঞ বলা হয়।তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক,তিনি বিভিন্ন জায়গায় তাফসিরের আলোচনা করে থাকেন,তাছাড়া বিষয় ভিত্তিক আলোচনাও করে থাকেন যা থাকে গল্প-গুজব,হাসিঠাট্টা খেল তামাশা,জাল হাদিস,উদ্ভট উদ্ভট তাফসিরে পরিপূর্ণ।যাহোক এই বক্তার ইলম বা কুরআন-হাদিসের বেসিক নলেজও নেই,তার আকিদা ও মানহাজ ভ্রান্ত।তাসত্ত্বেও কিছু ভাই হয়ত তার সম্পর্কে না জানার কারনে তার লেকচার শুনে ও শেয়ার করে,এই ধরণের ভাইরা ফেইসবুক টুইটারে যা পায় তাই শেয়ার করে দেয়,যারা একটু ইউনিক আবেগি বা লুলামি কথা বলে হাসায়-কাঁদায় তাদের ভিডিও শেয়ার করার জন্য ব্যকুল হয়ে পরে।তাদেরকে যদি বিষয়টি অবগত করানো হয় তাহলে তারা বলে এই লোক কি ভ্রান্ত কথা বলে আগে জানান তারপর দেখব। তাই এরই পরিপ্রেক্ষিতে নোমান আলী খানের কিছু বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য পেশ করা হল ।
(১) নোমান আলী খানের কাছে আকিদার কোন গুরুত্ব নেইঃ
নোমান আলী খান আকিদা নিয়ে ব্যাঙ্গ করে ,মানুষকে আকিদার গুরুত্ব থেকে সরিয়ে আনার জন্য সে একটা কাহিনী বলে-
এক মহিলা তাকে বলে আপনার উচিত মানুষকে বলা যে তারা যাতে সঠিক আকিদা শিখে,তারপর ওই মহিলা নোমান আলী খানকে একটি বই দেখিয়ে বলে এটা একটি আকিদার বই আপনার এটা শিখান উচিত যাতে তারা সঠিক তাওহিদে উলুহিয়াহ,রুবুবিয়াহ ও আসমা-ওয়াসসিফাত সম্পর্কে জানে কারন লোকেরা অনেক শিরক করে ,কারন তাদের আকিদা সঠিক নয়।
এই কথা বলায় নোমান আলী খান ব্যঙ্গ করে বলা শুরু করে যে, "এটা কি কুরআন না সূরা ?
মহিলা বলেঃ আপনি কি আকিদা সম্পর্কে জানতে চান না ?
নোমান আলী খান বলেঃ না, আমার জানার প্রয়োজন নেই।আমি আকিদা সম্পর্কে খুজলাম কোথাও পেলাম না ,এটা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে এটি কথায় আছে?
লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=mYoXqtIjkH4&feature=youtu.be
জবাবঃ-
ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোর অন্যতম হল "আক্বিদাহ"! যারা আকিদার ব্যাপারে কোন গুরুত্ব প্রদান করে না এবং বলে, ঈমান খাকাই যথেষ্ট - তাদের ব্যাপারে শাইখ সালিহ আল ফওযান হাফি. বলেন,
“এটা বিরোধপূর্ণ বক্তব্য কারণ সঠিক আক্বিদাহ ব্যতীত ঈমান কোন ঈমানই নয়। এবং যদি আক্বিদাহ বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে সেখানে কোন ঈমানই নেই, এবং কোন দ্বীনও নেই।”
[ফাতাওয়া আস-সিয়াসাহ আশ-শা’রীয়াহ, প্রশ্ন-১]

-
বিংশ শতাব্দীর সশ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন আল্লামাহ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেন,
فتاوى نور على الدرب لابن باز بعناية الشويعر
العقيدة أهم الأمور، وهي أصل الدين وأساس الملة
আক্বিদাই হল উত্তম জিনিস, এবং এটাই দ্বীনের মূল এবং ইহাই হল ধর্মের মূল ভিত্তি।
-
স্বনামধন্য আলেমদ্বীন ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ: তার লিখিত "ইসলামী আক্বিদাহ" নামক বইতে বলেন-
‘আকিদা’ শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের সঙ্গে গুলিয়ে যায়। মূলত অস্বচ্ছ ধারণার ফলে এমনটা হয়।
প্রথমত, ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আর আকিদাহ দীনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত, আকিদার তুলনায় ঈমান আরও ব্যাপক পরিভাষা। আকিদাহ হলো কিছু ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের নাম।
অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়;বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ।
একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদাহ পোষণ। আরেকটি বিষয় হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
তৃতীয়ত, আকিদা হলো ঈমানের মূলভিত্তি। আকিদাব্যতীত ঈমানের উপস্থিতি তেমন অসম্ভব, যেমনিভাবে ভিত্তি ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব।
-
শাইখুল ইসলাম ঈমাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহ. বলেন-
ক্বোরআন, ছুন্নাহ্ ও ছালাফে সালিহীনের (رضوان الله عليهم أجمعين) ঐকমত্যের বিরোধী প্রতিটি ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ও ‘ইবাদাহ্‌ হলো বিদ‘আত। যেমন- খারিজী, রাফিযী, ক্বাদরিয়াহ্‌, জাহ্‌মিয়াহ্ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কথা-বার্তা ও আক্বীদাহ্-বিশ্বাস হলো বিদ‘আহ্‌। মজলিশে তবলা ও গান-বাজনার মাধ্যমে ‘ইবাদত করা, দাড়ী শেইভ বা মুন্ডানোর মাধ্যমে, গাজা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য পানের মাধ্যমে আল্লাহর ‘ইবাদত বা নৈকট্য কামনা করা ইত্যাদি কর্মকান্ড, যেগুলো ক্বোরআন-ছুন্নাহ্‌র বিরোধীতাকারী বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ের লোকেরা করে থাকে- এ সবই হলো বিদ‘আত। (ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়াহ্- ১৮/৩৪৬)
(২) ঈমানের রুকন ছয়টি তার মধ্যে একটি হল "আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস"!
নোমান আলী খানের কাছে "আল্লাহ্‌ কোথায়" এ সম্পর্কে জানার কোন গুরুত্ব নেই।
নোমান আলী খান তার কোন এক বক্তব্যে বলেন, লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে আল্লাহ্‌ কোথায়? তিনি সাত আসমানের উপর না সবজায়গায় বিরাজমান ?(তারপর সে বলে) এই প্রশ্ন কি আল্লাহ্‌ করেছেন ? সাহাবিরা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন ? আমাদের এই বিষয় দমন করতে হবে। (ইন্নানিল্লাহ)
লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=E7kyeQUyWMo
জবাবঃ-
আমরা প্রথমেই আল্লাহ কোথায় এবং আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে সালাফগন কেমন আক্বিদাহ রাখতেন সেটা তুলে ধরব!
ক. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসহাক ইবন খুযাইমাহ (২২৩ - ৩১১ হিজরি) রহিমাহুল্লাহ বলেন:
.
من لم يقر بأن الله عز وجل على عرشه، فوق سبع سمواته، فهو كافر بربه، حلال الدم، يستتاب فإن تاب
وإلا ضربت عنقه، وألقي على بعض المزابل حتى لا يتأذى المسلمون ولا المعاهدون بنتن رائحة جيفته، وكان ماله فيئا لا يرثه أحد من المسلمين، إذ المسلم لا يرث الكافر، كما قال الني صلى الله عليه وسلم " لا يرث المسلم الكافر ولا الكافر المسلم "
.
"যে ব্যক্তি এই স্বীকারোক্তি দেয় না যে: আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লা তাঁর সাত আসমানের ঊর্ধ্বে তাঁর আরশের উপর; তবে সে তার রবের প্রতি কাফির। তার রক্ত হালাল। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। যদি সে তাওবা করে (তবে ভালো) অন্যথায় তার শিরোচ্ছেদ করা হবে এবং কোন একটি নর্দমায় তাঁকে নিক্ষেপ করা হবে যেন লাশের দূর্গন্ধে মুসলিম এবং চুক্তিবদ্ধরা (যিম্মি) কষ্ট না পায়। আর, তার সম্পদ 'ফাই' হিসেবে গণ্য হবে এবং কোন মুসলিম এটি উত্তরাধিকারসুত্রে লাভ করবে না। কেননা মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকার লাভ করে না। যেমন নবি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "মুসলিম কাফিরের উত্তারিধারী হয় না এবং কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকারী হয় না।"
.
সনদসুত্র:
ইমাম ইবন খুযাইমা থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম আন-নাইসাবুরি তার "আত-তারিখ" গ্রন্থে, শায়খুল ইসলাম আবু 'উসমান আস-সাবুনি তার "আক্বিদাতুস সালাফ আসহাবিল হাদিস" গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৯), হাফিয আয-যাহাবি তার আল-'উলু গ্রন্থে (বর্ণনা ৫২৮)।
খ. আল্লাহতালা আরশের উপর নন বরং সব জায়গায় বিরাজমান এমন আকিদাধারী ব্যক্তির হুকুম সম্পর্কে
ইমাম আবু হানিফাহ রাহঃ বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলে যে, জানি না আমার প্রতিপালক আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে?
সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়!যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দয়াময় আল্লাহ আরশে আরোহণ করলেন।”
আর তাঁর আরশ সপ্তাকাশের উপরে। আবার সে যদি বলে, ‘তিনি আরশের উপরেই আছেন’, কিন্তু আমি ‘জানি না যে, আল্লাহর আরশ আকাশে নাকি জমিনে?তাহলেও সে কাফের!কারণ সে একথা অস্বীকার করে যে, তিনি আকাশের উপর আছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর আরশে থাকার কথা অস্বীকার করে, সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়। যেহেতু আল্লাহ সকল সৃষ্টির ঊর্ধে আছেন এবং উপর দিকে মুখ করে তাঁকে ডাকা হয়(দু’আ করা হয়), নিচের দিকে মুখ করে নয়’।
শারহুল আক্বীদাতিত্ব ত্বাহাবিয়াহ ৩২২ পৃ,আল ফিকহুল আবসাত্ব ৪৬ পৃ, ইতিক্বাদু আইম্মাতিল আরবাআহ ১/৬।
গ. "আল্লাহ কোথায়" এ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা কি অবান্তর?
উত্তর: না এ প্রশ্ন টি ইমানের সাথে সম্পৃক্ত! কেননা
রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক দাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ বলতো আল্লাহ্‌ কোথায়? তখন ঐ দাসী বলেছিলেন, আসমানের উপরে!
তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন বলতো আমি কে?
ঐ মেয়েটা তখন বলল,আপনি আল্লাহর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেন- তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু'মিনা । (সহিহ মুসলিম)
এছাড়াও "আল্লাহ্‌ কোথায়" এ সম্পর্কে কুরআনে অনেক আয়াত আছে।
যেমন-সূরা রাদঃ ০২,
ইউনুসঃ ০৩,
তহাঃ ০৫
ফুরকানঃ ৫৯,
সাজদাহঃ ৫৪ ইত্যাদি ।
সুতরাং "আল্লাহতালা আসমানের উপরে আছেন" এই আক্বিদাহ রাখা হল ঈমান আর এর বিপরীত আক্বিদাহ পোষণ করা হল কুফর! এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা না বললেই নয় তা হল,মহান আল্লাহতালা আসমানের উপর 'কি হালতে আছেন অথবা তিনি কিভাবে উঠেছেন' এমন প্রশ্ন করাটা বিদায়াত!
আহলুস সুন্নাহর ইমাম মালেক (রাহ:) কে একবার প্রশ্ন করা হলো,.
{الرَّحْمَنُ عَلَى العَرْشِ اسْتَوَى.
পরম দয়াময় আরশের উপর উঠেছেন, এর তাফসির সম্পর্কে আপনি কী বলেন?
এই উপরে উঠেছেন তা কীরূপ?
এই প্রশ্ন শুনে তিনি খুবই দুঃখিত হলেন এবং মাথা নত করে মাটির দিক তাকিয়ে রইলেন। তিনি এত আশ্চর্য হলেন যে তাঁর কপাল ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল। অতঃপর তিনি বললেন-
الكيف منه غير معقول و الاستواء منه غير مجهول و الإيمان به واجب و السؤال عنه بدعة.
তার স্বরূপ অবোধগম্য,এবং তার উপরে উঠা অজ্ঞাত নয়(বরং জ্ঞাত),এবং তাতে ঈমান আনা ওয়াজিব,এবং তার ব্যাপারে প্রশ্ন করা(সেটা কেমন/কিভাবে/ধরণ ইত্যাদি জিজ্ঞেস করা) বিদ'আহ"।
[ শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রাহ:), বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন,পৃ:২১; ইফাবা]
(৩) নোমান আলী খানের কাছে বিদআত থেকে মানুষকে সতর্ক করার গুরুত্ব নেইঃ
নোমান আলী খান বলে, "যখন আমার কাছে কোন লোক আসে এবং জিজ্ঞেস করে মিলাদুন্নাবি সম্পর্কে আপনার মতামত কি ?আমি বলি,মিলাদুন্নাবি সম্পর্কে আমার কোন মতামত নেই,কারন এটা কোন সমস্যা না সমস্যা হল আমাদের বাচ্চারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে ,বাচ্চারা ইসলাম ছাড়ছে ,এটি সমস্যা।
জবাবঃ
আমরা আগেই বলেছিলাম এই লোকের ইসলামের বেসিক নলেজই নেই,ইসলামের রুকণ সম্পর্কে জ্ঞান নেই, না আছে ঈমানের ভিত্তি সম্পর্কে জ্ঞান, তবুও সে মুফাসসিরে কুরআন (!)
মিলাদুন্নাবী নাকি কোন সমস্যা না? আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,"প্রত্যেক বিদআতই পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম"।
তাছাড়া "মিলাদুন্নবী যে বিদায়াত" এর পক্ষে আহলুস সুন্নাহর উলামায়ে ক্বিরামের ভুরি ভুরি ফতওয়া রয়েছে, কিন্তু পোস্ট বড় হয়ে যাচ্ছে তাই এখানে উল্লেখ্য করলাম না! আপনারা আলেমদের ফতওয়া,লিখনি,বক্তব্য থেকে বিস্তারিত জেনে নিবেন!
(৪) কুরআনের আয়াত বা শব্দ বিকৃতকরণে নোমান আলী খানঃ
নোমান আলী খান একটি কাহিনী বর্ণনা করেন,আর তা হল -
এক সাহাবীর কাছে এক নওমুসলিম আসলো!
সাহাবী নওমুসলিমকে কুরআন শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন নওমুসলিমের "মুশরিকিন" শব্দ উচ্চারনে সমস্যা হচ্ছিল! তিনি বার বার মুছরিকিন উচ্চারন করছিলেন (ভুল উচ্চারন করছিলেন) ,পরে নাকি সাহাবী বললেন তুমি এর পরিবর্তে এটা "ফুজার" মুখস্ত কর।
নোট:- কত বড় জঘন্য কথা,সাহাবিদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ,কুরআনের যেকোন শব্দ বা আয়াত পরিবর্তন বা সংযোজন করা কুফরি তা হয়ত বক্তা সাহেব জানেন ই না!
লিংক- https://www.youtube.com/watch?v=BlBT9WKA7to&feature=youtu.be
জবাবঃ
মহান আল্লাহ্‌তালার মাত্র একটি আয়াত ই যথেষ্ট! তিনি বলেন,
" যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, নাকি যে কিয়ামাত দিবসে নিরাপদে থাকবে সে? তোমাদের যা ইচ্ছা তা কর; তোমরা যা কর তিনি তার দ্রষ্টা।" সূরা ৪১-ফুসসিলাতঃ৪০
(৫) নোমান আলী খান বিদাতিদের সাথে উঠাবসা করে,তার হিরো তারিক জামিল! এই বিদাতি তারেক জামিল কে সে "উস্তায" উপাধি দিয়েছিল!
প্রমাণ স্বরুপ নোমান আলী খানের ফেইসবুক পেজ ভিজিট করতে পারেন!
জবাব-
নোমান আলী খান যেহেতু সালাফদের বিপরীত মানহাজ অনুসরণ করে সেহেতু বিদাতিদের সাথে উঠাবসা চলবেই।তার হিরো হল পাকিস্তানের প্রখ্যাত বিদআতি তারিক জামিল। এই তারিক জামিলের ভণ্ডামি আপনাদের জানা আছে,কারো জানা না থাকলে জানাবেন বা ইউটিউবে তার কুফুরি বক্তব্যগুলো অহরহ পাবেন। যেমনঃ তারিক জামিল বলেছিল ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জানাজা নাকি আল্লাহ্‌ পরিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ),মাযারে দোয়া করা ইত্যাদি ।
বিদাতিদের প্রশংসা, তাদের সাথে উঠা বসা,তাদের বক্তব্য শোনা যাবে কিনা এ প্রসঙ্গে
মাত্র তিনটি উক্তি পেশ করছি, এতেই স্পষ্ট বুঝে যাবেন আমাদের সালাফগন কতটা কঠোর ছিলেন এবিষয়ে -
ক. ইমাম ইবনু সীরীন (রহিমাহুল্লা-হ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়:— "আহলুল হাওয়াদের (বিদাতিদের) বক্তব্য শোনার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?"
তিনি জবাব দিলেন:— "আমরা ওদের বক্তব্যও শুনিনা এবং ওদেরকে সম্মানও করি না।"
[সিয়ার আ'লাম নুবালা: ৪/৬১১]
খ. প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম হাসান আল-বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:— "বিদাতি ও আহলুল হাওয়াদের সাথে বসবে না, তাদের সাথে তর্ক করবে না, তাদের কথাও শুনবে না।"
[দারেমীর সুনানে বর্ণিত হয়েছে (১/১২১)]
গ. ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি বিদআ’তীদের প্রতি সু-ধারনা রাখে এবং এই দাবি করে যে, তাদের অবস্থা অজ্ঞাত, তাহলে তাকে তাদের (বিদআ’তীদের) অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। সুতরাং, সে যদি বিদআ'তীদের ব্যপারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন না হয়, এবং তাদের প্রতি প্রতিবাদমূলক মনোভাব প্রকাশ না করে, তাহলে তাকেও বিদআ’তীদেরই মতাবলম্বী ও দলভুক্ত বলে জানতে হবে।” মাজমুয়া ফাতাওয়াঃ ২/১৩৩।
{৬} নোমান আলী খান বলেন, আমাদের কাফিরদেরকে ভালবাসতে হবেঃ
জবাব-
ঈমান ও আকিদার মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত হল "আল অলা ওয়াল বারা"
প্রত্যেক মুসলমান ইসলামী আকিদাহ পন্থিদের সাথে মিত্রতা পোষণ ও আকিদার বিরোধীদের সাথে বৈরতা পোষণ করা ইসলামী আকিদা-মতাদর্শের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ্‌ বলেছেন,
"হে মুমিনগণ ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে মিত্ররুপে গ্রহণ করনা,তারা পরস্পর বন্ধু,আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে মিত্রতা করবে নিশ্চয় সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। {সূরা মায়িদাহঃ৫১}
কাফিররা নিকটাত্মীয় হলেও তাদের সাথে মিত্রতা রাখা যাবে না
"হে মুমিনগণ ! তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে মিত্ররুপে গ্রহণ করনা যদি তারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরকে পছন্দ করে।আর তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদের সাথে মিত্রতা রাখবে,বস্তুতঃ অইসব লোকই হচ্ছে জালিম। {সুরাঃ তাওবাঃ২৩}
(৭) জাল হাদিস প্রচারে নোমান আলী খানঃ

এর পরেও কি প্রশ্ন আসে যে,তার থেকে ইলম নেয়া যাবে কিনা ?
এর পরেও কি তার লেকচার শুনবেন ?
এর পরেও কি তাকে প্রমট করবেন ?
নোমান আলী খান একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তি ,তার ইসলাম সম্পর্কে বেসিক নলেজই নেই।তার উক্ত ভুল ছাড়াও আরো অনেক ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। তার এই বিভ্রান্ত হওয়ার মুল কারন কুরআন-হাদিসকে সালফে-সালেহিনদের বুঝ অনুযায়ী না বুঝে,নিজের মত করে বুঝা (!) যার ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন!

Saturday, November 9, 2019

বইঃ কিতাবুল ইলম (শাইখ সালেহ আল উসাইমিন রহিমাহুল্লাহ)



মহিলাদের দাওয়াতি কাজের হুকুম



▌মহিলাদের দাওয়াতি কাজের হুকুম

·
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও মুজাদ্দিদ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয় (শাইখ প্রশ্নটি পড়ছেন, যেটি সম্ভবত কোনো বোনের পক্ষ থেকে), “এখানে একটি প্রশ্ন যেটাকে আমার খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছে: দা‘ওয়াহ দেয়ার সর্বোত্তম উপায় কী? দা‘ওয়াহ কীভাবে দেওয়া হয়?”

উত্তর: ❝নারীদের আমি বলছি, তোমরা তোমাদের বাড়িতে থাকো। দা‘ওয়াহর কাজটি তোমাদের চিন্তার বিষয় নয়। আমি তরুণদের মাঝে দা‘ওয়াহ শব্দটির (এরূপ) ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করি যে, “এরা হলো দা‘ঈ”, যেনো দা‘ওয়াহ যুগের একটি ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। যে কারো কিছু পরিমাণ ‘ইলম রয়েছে, সে একজন দা‘ঈ হয়ে গিয়েছে। এটি শুধু অল্পবয়স্ক ছেলেদের আক্রান্ত করেনি, এটি অল্পবয়স্ক মেয়েদের এবং গৃহ অভ্যন্তরীণ নারীদের পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। তারা তাদের বাড়ির ও স্বামীর প্রতি দায়িত্ব থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং এমন জিনিসের অভিমুখী হয়েছে যা তাদের জন্য ওয়াজিব না, অর্থাৎ দা‘ওয়াহর কাজ করা। পূর্বের একটি প্রশ্ন একজন নারীর ব্যাপারে ছিলো যে আমার কুয়েতের মিটিং এর রেকর্ডিং থেকে শুনেছে যে নারীদের জন্য দা‘ওয়াহর কাজে বাইরে যাওয়া জায়েজ না। এবং এখানে এই প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, "দা‘ওয়াহ দেয়ার সর্বোত্তম উপায় কি? দা‘ওয়াহ কীভাবে দেয়া হয়?" বিধান হলো একজন নারী বাড়িতে থাকবে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তার জন্য বাইরে যাওয়া জায়েজ না। পূর্বে আমরা নাবী ﷺ এর বাণী উল্লেখ করেছি, “আর মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে তাদের বাড়ি তাদের জন্য উত্তম।” বর্তমানে আমরা নারীদের মধ্যে একটি বহুবিস্তৃত ব্যাপার দেখি তা হলো, জুম‘আহ ছাড়াও জামা‘আতে সালাত আদায় করতে খুব বেশি মসজিদে যাওয়া। তাদের বাড়ি তাদের জন্য উত্তম, তবে যেমনটি আমি পূর্বে বলেছি, মসজিদের ইমাম যদি জ্ঞানী হন এবং যারা উপস্থিত আছেন তাদের দ্বীনের ব্যাপারে কিছু শেখান, আর এতে করে একজন নারী মাসজিদে সালাত আদায় করতে ও ‘ইলম নিতে যায়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু দা‘ওয়াহর কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়াটা, (তাহলে এটা জায়েজ না), তার উচিৎ বাড়িতে থাকা এবং তার স্বামী, অথবা ভাই, অথবা অন্য মাহরাম আত্মীয়দের দেয়া কিতাবাদি পড়া। তা করার পর এটা করা তার জন্য ঠিক আছে যে সে একটি দিন নির্ধারণ করবে এবং অন্য নারীদের তার বাড়িতে আসার দাওয়াত দিবে, অথবা সে অন্য কোনো নারীর বাড়িতে যাবে, একদল নারী বাইরে যাওয়ার চেয়ে এটি উত্তম, তাদের একজনের অন্যদের কাছে যাওয়াটা অন্যদের সকলের তার নিকট আসা থেকে উত্তম। আর (দা‘ওয়াহর জন্য) তার ভ্রমণে বের হওয়া হলো বর্তমান সময়ের একটি বিদ‘আত, যা এমনকি মাহরাম ছাড়াও হয়ে থাকে। আর আমি এটি শুধু নারীদের ব্যাপারেই বলছি না, এটা ওইসব তরুণ ছেলেদের জন্যও প্রযোজ্য যারা দা‘ওয়াহ বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করে, যদিও তাদের ‘ইলমের স্তর অগভীর।❞

·
তথ্যসূত্র:

https://youtu.be/kmu7QdqmSW0 [Manhaj ul-Haqq (সালাফী ইউটিউব চ্যানেল)]

·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...