Thursday, August 15, 2019

পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত



▌পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।

যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “হক এসেছে, আর বাতিল অপসৃত হয়েছে; বাতিল তো অপসৃত হওয়ারই ছিল।” [সূরাহ বানী ইসরাঈল: ৮১]

শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “তুমি হক (সত্য) বল, যদিও তা তিক্ত হয়।” [সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩; সনদ: সাহীহ লি গাইরিহী] অন্যত্র বলেছেন, “তুমি হক বল, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।” [সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৯১১; সাহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯; সনদ: সাহীহ]

·
পর সমাচার এই যে, বর্তমানে সালাফী কমিউনিটিতে একটি ফিতনার সয়লাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সালাফীদের একটি বড়ো অংশকে দেখা যাচ্ছে, তারা খারিজী ও ইখওয়ানী দা‘ঈদের বইপুস্তক পড়ছে, তাদেরকে ‘শাইখ’ আখ্যা দিচ্ছে এবং যাচ্ছেতাইভাবে প্রোমোট করছে। এমনকি দু পয়সা লাভের আশায় কিংবা সালাফী লাইব্রেরিয়ানদের মানহাজগত বিভ্রান্তি থাকার কারণে সালাফী লাইব্রেরিগুলোতেও ইখওয়ানী-খারিজীদের বইপুস্তক দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

আমি প্রায়শই বলি, ‘ইলম নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যা পাই তাই খাই’—নীতি অবলম্বন করা যাবে না। মানহাজ ঠিক রাখতে হলে এই ভুয়া নীতিকে কবর দিতে হবে। আমি ভাইদেরকে এসব বিষয়ে বরাবরই সতর্ক করে থাকি। আজকেও সতর্ক করার জন্যই লিখছি। সম্প্রতি যেসব ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈর বইপুস্তক বাংলায় অনূদিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী অন্যতম। বঙ্গীয় খারিজীরা তার বইয়ের জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। আর কিছু সালাফীকেও ত্বারীফীর বইপুস্তক পড়তে এবং তাকে প্রোমোট করতে দেখা যাচ্ছে।

তাই আমাদের জানা দরকার যে, এই ত্বারীফী সালাফী দা‘ঈ কিনা, তার কাছ থেকে দ্বীন শেখা এবং তাকে প্রোমোট করা নিরাপদ কিনা। আমি বলছি, সালাফী ‘উলামা ও ত্বালাবাহ’র নিকট ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী দা‘ঈ। তার কতিপয় বিভ্রান্তির বিবরণ নিম্নে আলোচিত হলো।

·
১. পথভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী (হাদাহুল্লাহ) একজন ক্বা‘আদী খারিজী (সিটিং খারিজী; অর্থাৎ যে নিজে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে না, কিন্তু বিদ্রোহের উসকানি দেয়) এবং জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সাপোর্টার। সে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে আল-কায়েদার খারিজী সন্ত্রাসী উসামাহ বিন লাদেনের ভুলকে সম্মানিত সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ভুলের সাথে তুলনা দিয়েছে এবং বিন লাদেনের জন্য প্রকাশ্যে কল্যাণের দু‘আ করেছে! [পোস্টের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

·
২. ভ্রষ্ট ত্বারীফী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পক্ষ নিতে গিয়ে সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ ‘আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে এবং তাঁর জঘন্য নিন্দা করেছে। সম্মানিত গ্র্যান্ড মুফতী আইএস এবং আল-কায়েদার ব্যাপারে বলেছেন, “তারা খারিজী সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায় ইসলামের ওপর নেই।” তো গ্র্যান্ড মুফতীর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ত্বারীফী সাহেব তার টুইটার অ্যাকাউন্টের এক টুইটে লিখেছে,

لا تؤثر أقوال العلماء في تصويب الأخطاء إذا كانوا يقوون عند أخطاء الضعفاء ويضعفون عند أخطاء الأقوياء، فالنفوس تزهد بالحق إن فقدت إنصاف أهله.

“ভুলকে সঠিক গণ্য করার জন্য তুমি ‘উলামাদের কথাকে প্রাধান্য দিয়ো না। যখন সেই ‘উলামারা দুর্বলদের ভুলের ব্যাপারে বলশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়, আর শক্তিশালীদের ভুলের সামনে দুর্বল হয়ে যায়। আসলে মানুষ তখন হককে প্রত্যাখ্যান করে, যখন সে হকপন্থির ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হয়।” [টুইটের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

উক্ত কথার মাধ্যমে ত্বারীফী গ্র্যান্ড মুফতীর প্রতি যেসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেগুলো হলো—(১) তিনি দুর্বলদের সামনে শক্তিশালী, যেহেতু জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিয়েছেন (২) তিনি শক্তিশালীদের সামনে দুর্বল, যেহেতু তিনি ত্বারীফী ও তার সমমনা খারিজীদের মতো মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন না, (৩) তিনি বেইনসাফি কাজ করছেন, যেহেতু তিনি পূর্বোক্ত দুটি অভিযোগে অভিযুক্ত।

·
৩. এতদ্ব্যতীত ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী সিরিয়ার দুর্যোগময় বিপ্লবকে ‘আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত’ আখ্যা দিয়েছে। সে বলেছে,

الثورة السورية: أرى أنها نعمة من الله، وما يحدث في سوريا هو خير عظيم.

“সিরীয় বিপ্লবকে আমি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত মনে করি। সিরিয়ায় যা ঘটছে, সেটা হলো মহাকল্যাণ।” [দ্র.: https://youtu.be/zIujJs1Cst4 (ভিডিয়ো ক্লিপ)]

যে বিপ্লবের কারণে মুসলিমরা করুণভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে, সেটা নাকি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত। ইয়া সুবহানাল্লাহ, এটা তো বিকারগ্রস্ত লোকের কথা! শাসকের বিরুদ্ধে উরাধুরা বিদ্রোহকে সমর্থন করতে গিয়ে এদের মস্তিষ্কের এ কী বিকৃতি ঘটেছে! আল্লাহ আমাদেরকে এদের বিকৃত চেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

·
৪. ভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী বিদ‘আতী ফিরক্বাহ মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিয়ে নিজের ব্যক্ত করা সুন্নী মানহাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে তার একটি বক্তব্যে জবরদখলকারী শাসকের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র প্রকৃত মানহাজ বর্ণনা করে বলেছে,

...ومنها الغلب، أن يغلب بسيفه على البلد وهو في ذاته مسلم، وإن قتل من الناس حتى تغلب وتمكن، فلا يجوز الخروج عليه. ومن خرج عليه لسبب فسقه فهو ظالم لنفسه.

“কোনো মুসলিম যদি তরবারি দিয়ে কোনো রাষ্ট্র দখল করে নেয় এবং জবরদখল করে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়, তাহলে সে যদি মানুষ হত্যা করে থাকে, তবুও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। আর যে ব্যক্তি ওই শাসকের পাপাচারিতার কারণে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সে হলো নিজের আত্মার ওপর জুলুমকারী।” [দ্র.: https://youtu.be/aRqTuKlMIfw (ভিডিয়ো ক্লিপ); ২০ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত]

এরপর যখন মিশরে সিসি সাহেব সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইখওয়ানী প্রেসিডেন্ট মুরসীকে হটিয়ে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো, তখন ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বক্তব্যের সুর পাল্টে গেল। মিশরে সিসির সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে ত্বারীফী তার এক ফাতওয়া’য় বলেছে, إن الحاكم الموجود في مصر أنه ليس حاكما متغلبا، وإنما ظالم من جهة الحقيقة “মিশরের বর্তমান শাসক জবরদখলকারী শাসক নয়! প্রকৃতপক্ষে সে একজন জালিম।” [প্রাগুক্ত; ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত]

অর্থাৎ, ত্বারীফী মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিতে গিয়ে সিসিকে ‘জবরদখলকারী শাসক’ হিসেবে মানছে না, যে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা না-জায়েজ। উল্লেখ্য যে, আরও অনেক ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈ ও তাদের সমর্থক সিসির অভ্যুত্থানকে ‘জবরদখল’ বা ‘বিপ্লব’ হিসেবে দেখেনি, বরং সেটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি কেউ কেউ তো ওই সেনা অভ্যুত্থানকে ‘রিদ্দাহ’ (মুরতাদ হয়ে যাওয়া) আখ্যা দিয়েছে! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।

·
৫. ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী হলো তাকফীরী। ত্বারীফী সাহেব মিশরের সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর তারিখের টুইটে বলেছে,

من عرف الفريقين بمصر (القالب) و (المقلوب) ومسافة كل واحد منهم من الحق والباطل، عرف أن ما أحدث إنما هو صراع بين إسلام وكفر ونفاق وإيمان.

“যে ব্যক্তি মিশরের দুটো দল সম্পর্কে তথা পরিবর্তনকারী দল ও পরিবর্তিত দল সম্পর্কে এবং হক ও বাতিল থেকে এদের মধ্যকার ব্যবধান সম্পর্কে অবগত হয়েছে, সে জেনেছে যে, মিশরে যা সংঘটিত হয়েছে, তা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই এবং নিফাক্ব ও ইমানের লড়াই!” [দ্র.: https://youtu.be/VTh_r0qW2VI (ডকুমেন্টারি ভিডিয়ো ক্লিপ); ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে উক্ত টুইটের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে]

চিন্তা করেন! মুসলিম ব্রাদারহুড—যারা কিনা ক্ষমতায় এসে আল্লাহ’র আইন বাস্তবায়ন করা তো দূরের কথা, নানারকম অপব্যাখ্যা করে আল্লাহ’র আইনকে পরিত্যাগ করেছে—যে সিসির সাথে লড়াই করেছে, সেটা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই! তার মানে সিসি ও তার সাঙ্গপাঙ্গ সব কাফিরের দল! না‘ঊযু বিল্লাহি মিন যালিক।

·
ত্বারীফীর এসব ভয়ংকর বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির কারণে সালাফী ‘উলামা ও সিনিয়র ত্বালিবগণ ত্বারীফীকে পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী আখ্যা দিয়েছেন। এরকম কয়েকটি জারাহ (ক্রিটিসিজম/কাউকে মন্দ আখ্যা দেওয়া) নিম্নে উল্লিখিত হলো।

১. মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাসজিদে নাবাউয়ী’র সম্মানিত মুদার্রিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

ليست العبرة بالتلميع، بل أنا أقول: القاعدة، إذا وجدت الرجل يلمَّع من الحزبيين، ويبرز على أنه الحافظ والمحدث والفقيه والإمام، فاعلم أنه منحرف، مثل الددو ومثل الطريفي ومثل العريفي. هؤلاء منحرفون على منهج الإخوان، عندهم إنحرافات عقدية وشرعية. لكن هؤلاء يلمَّعون—المحدث الكبير، يحفظ الكتب الستة. فإذا وجدت التلميع من الحزبيين ومن وسائل الإعلام اليوم، فاعلم أن وراء الأكمة ما وراء.

“কাউকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করার কোনো মূল্য নেই। আমি একটি মূলনীতি বলে দিচ্ছি। যখন তুমি দেখবে, কোনো লোককে দলবাজ হিযবীদের পক্ষ থেকে খুব চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এবং বলা হচ্ছে, ইনি একজন হাফিয, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ, কিংবা ইমাম; তখন তুমি জানবে যে, ওই লোক একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী। যেমন: মুহাম্মাদ হাসান ওয়ালিদ আদ-দিদূ, ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, মুহাম্মাদ আল-‘আরীফী প্রমুখ। এরা মুসলিম ব্রাদারহুডের মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত ভ্রষ্ট বিপথগামী। এদের রয়েছে ‘আক্বীদাহ ও শরিয়তগত বিভ্রান্তি। কিন্তু এদেরকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করে বলা হয়—‘ইনি অনেক বড়ো মুহাদ্দিস, ইনার সম্পূর্ণ কুতুবে সিত্তাহ মুখস্থ!’ অতএব তুমি যখন হিযবীদের পক্ষ থেকে অথবা বিভিন্ন মিডিয়ার পক্ষ থেকে এরকম চমকপ্রদ উপস্থাপনা লক্ষ করবে, তখন জানবে যে, এর নেপথ্যে কিছু একটা লুকায়িত আছে।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y2qwprtc (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট লিংক)]

·
২. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী থেকে সতর্ক করেছেন।

ইমাম সালিহ আল-ফাওযানকে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هنالك بعض الشباب يطعنون في ولاة الأمور، ويقولون: إن ولاة الأمور سجنوا العلماء والصالحين ويقصدون بالعلماء عبد العزيز الطريفي وسليمان العلوان وخالد الراشد.

“এখানে কিছু যুবক শাসকের নিন্দা-সমালোচনা করে। তারা বলে, শাসকরা ‘উলামা ও ভালো ব্যক্তিদের জেলবন্দি করেছে। তারা ‘উলামা বলার মাধ্যমে উদ্দেশ্য করে—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, সুলাইমান আল-‘আলাওয়ান, খালিদ আর-রাশিদ প্রমুখকে।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন, أتركهم، لا تدخل فيهم، ولا تجلس معهم “তুমি তাদেরকে পরিত্যাগ করো, তাদের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, এবং তাদের সাথে ওঠাবসা কোরো না।”

এরপর প্রশ্নকারী পুনরায় বলেন, “কিছু মানুষ এদের (উক্ত দা‘ঈদের) ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হচ্ছে।” তখন ইমাম ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) তাদের ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেন। [দ্র.: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=18595 (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
সুপ্রিয় পাঠক, আপনি দেখলেন, সালাফিয়্যাহ’র ইমাম ‘আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) ত্বারীফীর ভক্তদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ সে একজন খারিজী দা‘ঈ। সুতরাং এই খারিজী দা‘ঈকে যারা প্রোমোট করবে এবং তার গুণকীর্তন করবে, আমাদের জন্য তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। যে ব্যক্তিই ত্বারীফীর গুণকীর্তন করবে এবং তাকে প্রোমোট করবে, তার মানহাজের ব্যাপারে সন্দেহ করুন। সে যেই হোক না কেন, যে পর্যায়ের দা‘ঈ বা বক্তাই হোক না কেন, তাকে বর্জন করতে হবে।

আমরা ইতঃপূর্বে জনৈক সৌদি প্রবাসী বাঙালি দা‘ঈকে দেখেছি, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই ত্বারীফীর গুণগান গাইতে। এ ধরনের ভুঁইফোঁড় দা‘ঈদেরকেও প্রোমোট করা থেকে বিরত থাকুন। কথা স্পষ্ট। মানহাজের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এসব ভণ্ডদের বই ইনোসেন্ট সালাফীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ কামাচ্ছেন, তারাও কেয়ামত দিবসে আল্লাহ’র কাছে জবাবদিহিতা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। ওই শুনুন, মহান আল্লাহ’র হুঁশিয়ারি—“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (অর্থাৎ, সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর কতই না মন্দ সে আবাসস্থল!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিদ‘আতী দা‘ঈদের বিকৃত দা‘ওয়াত থেকে হেফাজত করুন এবং যথাযথভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

·
রচনাকাল—
দুপুর ২ টা ২১ মিনিট।
বৃহস্পতিবার।
১৩ই যুলহাজ্ব, ১৪৪০ হিজরী।
৩১শে শ্রাবণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
১৫ই আগস্ট, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

Tuesday, August 13, 2019

জুমুআর দিনের করনীয় কাজ



রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। জুম’আর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)
২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)
৩৭। যেখানে জুম’আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।
সূত্রঃ বই-প্রশ্নোত্তরে জুমু’আ ও খুৎবা
লেখকঃ অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
পরিমার্জনেঃ ডঃ মোহাম্মদ মনজুরে ইলাহী,
ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার,
ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
কৃতজ্ঞতায়: কুরআনের আলো

Tuesday, April 30, 2019

বইঃ তারাবীহ ও ইতিকাফ

বই – রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া – ফ্রী ডাউনলোড



সংকলন: ইব্রাহিম ইবনে মোহাম্মদ আল হাকিম | প্রকাশনায়: পিস পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এই বইটিতে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমযানের ৬০ শিক্ষা এবং ৩০ ফতোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বই – রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল

লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে।
এখানে শুধুমাত্র রমযানের মাসায়েল সম্পর্কেই আলোচনা হয়নি রমযান মাস আমাদের জীবনে কেন এত গুরুত্তপুর্ন তারও বর্ননা রয়েছে। এখানে আলোচিত হয়েছেঃ
• সিয়ামের ফযীলত।
• সিয়ামের প্রকারভেদ।
• রমযান মাসের বৈশিষ্ঠ্য ও রোযার ফযিলত।
• রমযানের রোযার মানুষের শ্রেণীভেদ।
• খাদ্যদানের নিয়ম।
• মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা ভালো নাকি কাযা করা ভালো?
• নিফাস ও ঋতুমতী।
• সেহেরি খাওয়া।
• ইফতার।
• রোযা অবস্থায় যা বৈধ
• রোযাদারদের জন্য যা অপছন্দনীয়।
• যাতে রোযা নষ্ট ও বাতিল হয়।
• রমযানে যে যে কাজ রোযাদারের কর্তব্য।
• ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম।
• রমযানের পরে কি?
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরন।
• তারাবীহর সালাত বা কিয়ামে রামাযান
• সাদকাহ বা দান করা
• ইফতার করানো
• কুরআন তিলাওয়াত
• উমরাহ
• শেষ দশকের আমল ও ইবাদত
• ইত্তেকাফ
• শাবে ক্বাদর অন্বেষণ করা
• ফিতরার বিবরণ
• ঈদ ও ঈদের বিভিন্ন আহকাম
• ঈদের আদব
• ঈদ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসায়েল
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরণ
• নফল রোযার প্রকারভেদ
• যে দিন গুলতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

Sunday, April 21, 2019

রামাযান মাসে মুমিনের দৈনন্দিন কর্মসূচী

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ । ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

রহমতের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস মাহে রামাযান আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কি রামাযানের এই মহামূল্যবান সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি? আসুন না একটি তালিকা তৈরি করি যেন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে নেকী কুড়িয়ে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি।

ফজর পূর্বে:

  • (১)  আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও দুয়া: কারণ মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন: “কে আছে আমার কাছে দুআকারী, আমি তার দুআ কবুল করবো”।[ মুসলিম ]
  • (২)  সাহরী ভক্ষণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “সাহরী খাও। কারণ সাহরীতে বরকত আছে”।[বুখারী মুসলিম ]

ফজর হওয়ার পর:

  • (১)  ফজরের সুন্নত আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার থেকে উত্তম”। [ মুসলিম ]
  • (২) ইকামত পর্যন্ত দুআ ও যিকিরে মশগুল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না”।[আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ]
  • (৩)  ফজরের নামায আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”তারা যদি ইশা ও ফজরের ফযীলত জানতো, তো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৪)  সূর্যোদয় পর্যন্ত সকালে পঠিতব্য দুআ-যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে অবস্থান: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর নিজ স্থানেই সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করতেন”। [ মুসলিম ]
  • (৫) সূর্যোদয়েরে পর দুই রাকাআত নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি জামায়াতের সহিত ফজরের নামায পড়লো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকর করলো, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, তার জন্য এটা একটি পূর্ণ হজ্জ ও উমরার মত “। [ তিরমিযী ]
  • (৬)  নিজ নিজ কর্মে মনোযোগ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিজ হাতের কর্ম দ্বারা উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার নেই”। [ বুখারী ]

 যহরের সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত জহরের নামায আদায়। অতঃপর কিছুক্ষণ কুরআন কিংবা অন্যান্য দীনী বই পাঠ।
  • (২)  আসর পর্যন্ত বিশ্রাম, কারণ  তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে।

আসরের সময় :

  • (১)  আসরের নামায জামাতের সাথে সম্পাদন:  অতঃপর ইমাম হলে নামাযীদের উদ্দেশ্যে দারস প্রদান কিংবা দারস শ্রবণ কিংবা ওয়ায নসীহতের ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি মসজিদে ভাল কিছু শিক্ষা নিতে কিংবা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেল, সে পূর্ণ এক হজ্জের সমান নেকী পেল”। [ ত্ববারানী ]
  • (২) পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারির আয়োজনে সহায়তা করা: এর মাধ্যমে যেমন কাজের চাপ হাল্কা হয় তেমন পরিবারের সাথে ভালবাসাও বৃদ্ধি পায়।

মাগরিবের সময় 

  • (১)  ইফতারি করা এবং এই দুআ পাঠ করা: “যাহাবায্ যামাউ ওয়াব্ তাল্লাতিল্ উরূকু ওয়া সাবাতাল্ আজরু ইন্ শাআল্লাহু তাআলা”। অর্থ: পিপাষা নিবারিত হল, রগ-রেশা সিক্ত হল এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হল।  [ আবূ দাউদ ]
  • (২)  মাগরিবের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা যদিও ইফতারি পূর্ণরূপে না করা যায়। বাকি ইফতারি নামাযের পর সেরে নেওয়া মন্দ নয়। অতঃপর সন্ধ্যায় পঠিতব্য যিকির-আযকার পাঠ করে নেওয়া।
  • (৩)  স্বভাবানুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

ইশার সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত ইশার নামায আদায় করা।
  • (২)  ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীর নামায আদায় করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম করবে, (তারাবীহ পড়বে ) তার বিগত সমস্ত (ছোট গুনাহ) ক্ষমা করা হবে”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৩)  সম্ভব হলে বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামায কর”।   [মুত্তাফিকুন আলাইহ]
Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে 
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-


. রামাদানকে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠান মনে করাঃ
আমাদের অনেকের কাছে রামাদান তাঁর আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘zombie’র মত উপোস থাকি শুধুমাত্র আমাদের আশেপাশের সবাই রোজা রাখে বলে। আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের অন্তর ও আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আমরা দু’আ করতে ভুলে যাই, ভুলে যাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করতে। নিশ্চিতভাবে আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই!
যদিও আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার নিকট রামাদান আসল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ হল না, এবং আমি বললাম, আমিন। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির নাকও মাটিতে ঘষুন যে জীবদ্দশায় তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ হতে দেখল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার রাখল না তাদের সেবা করার মাধ্যমে আর আমি বললাম, আমিন।
অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার উপস্থিতিতে যখন আপনার নাম উচ্চারণ করা হয় তখন সে আপনার প্রতি সালাম বর্ষণ করে না আর আমি বললাম, আমিন।” [তিরমিযী, আহমাদ, এবং অন্যান্য_আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত]
২. পানাহারের ব্যাপারে অতিমাত্রায় চাপে থাকাঃ
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, রামাদান মাসের পুরোটাই খাবার ঘিরে  আবর্তিত হয়। সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া বদলে আমরা পুরোটা দিন কেবল পরিকল্পনা প্রণয়ন, রান্নাবান্না, কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করে কাটাই। আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরোটা জুড়েই থাকে ‘খাওয়া-দাওয়া’।
যার দরূন আমরা উপোস থাকার মাসকে ভোজের মাসে পরিণত করেছি। ইফতারের সময়ে আমাদের টেবিলের অবস্থা দেখার মত! পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং পানীয়ে পরিপূর্ণ। পক্ষান্তরে, আমরা রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি, আর এভাবে আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির অনুসরণ বাড়তে থাকে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষালাভ করার বদলে। এটাও একধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন।
“তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ।” [সূরা আ’রাফঃ৩১]
৩. সারা দিন রান্না করে কাটানোঃ
কতিপয় বোন(হয় স্বেচ্ছায় নতুবা স্বামীর চাপে) সারা দিন ও সারা রাত ধরে রান্নাবান্না করতে থাকেন, তার ফলে দিনের শেষে তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে এশার সালাত পড়তে পারেন না, তাহাজ্জুদ কিংবা কুরআন তিলাওয়াত তো দূরে থাক! এই মাস হল মাগফিরাত এবং মুক্তিপ্রাপ্তির মাস। সুতরাং, চলুন আমরা চুলা বন্ধ করে নিজেদের ঈমানের প্রতি মনযোগী হই।
৪. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়াঃ
আমাদের কিছুসংখ্যক সেহরীর সময়ে নিজেদেরকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভরাক্রান্ত করে তুলি, কারণ আমরা মনে করি সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না করার এটাই একমাত্র পথ, আর কিছুসংখ্যক রয়েছেন যারা ইফতারের সময় এমনভাবে খান যাতে মনে হয় আগামীকাল বলে কিছুই নেই, সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যাহোক, এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ।
পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আদম সন্তান তার উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এত খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো খাবারই যথেষ্ট। যদি তোমাদেরকে উদর পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করো।” [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী কর্তৃক সহীহ্কৃত]
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং অন্তরকে বধির করে ফেলে।
ইমাম আহমদকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “উদরপূর্ণ অবস্থায় একজন মানুষ কি তার হৃদয়ে কোমলতা ও বিনয় অনুভব করে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমার মনে হয় না।”
৫. সারা দিন ঘুমিয়ে কাটানোঃ
রামাদান মাস হচ্ছে অত্যন্ত মূল্যবান সময়, এতটাই মূল্যবান যে মহান আল্লাহ্ পাক একে ‘আইয়্যামুম মাদুদাত’(একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিবস) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের অনুধাবন করার পূর্বেই এই মাগফিরাত ও মুক্তির মাস শেষ হয়ে যাবে। আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত এই পবিত্র মাসের প্রতিটি মূহুর্ত আল্লাহর ইবাদাতে কাটানোর, যাতে করে আমরা এই মাসের সর্বোচ্চ সওয়াব হাসিল করতে পারি। যাহোক, আমাদের কিছুসংখ্যক রামাদানের দিনগুলি ভিডিও গেমস্ খেলে অতিবাহিত করে, অথবা জঘন্যতম হল টিভি দেখা, ছবি দেখা এমনকি গান শোনা পর্যন্ত। সুবহানাল্লাহ্!!! আল্লাহকে মান্য করার চেষ্টা করা হয় তাঁকে অমান্য করার মাধ্যমে!
৬. রোজা রাখা অথচ খারাপ কাজ বর্জন না করাঃ
আমাদের কিছু সংখ্যক রোজা রাখে কিন্তু তারা মিথ্যাচার, অভিশাপপ্রদান, মারামারি, গীবত ইত্যাদি বর্জন করে না এবং কিছুসংখ্যক রোজা রাখার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পানাহার থেকে বিরত নয় বরং আল্লাহর প্রতি তাকওয়া(পরহেজগারী) অর্জন অনুধাবন না করে রোজা রাখে কিন্তু তারা প্রতারণা, চুরি, হারাম চুক্তি সম্পাদন, লটারির টিকেট ক্রয়, মদ বিক্রি, যিনা ইত্যাদিসহ যাবতীয় অননুমোদিত কর্মকান্ড বর্জন করে না। 
“হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” [সূরা বাকারাঃ১৮৩]
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও এর ওপর আমল করা বর্জন করে না ও মূর্খতা পরিহার করে না, তার পানাহার হতে বিরত থেকে উপবাস করা আল্লাহর নিকট প্রয়োজন নেই।” [ বুখারী ]
৭. ধূমপানঃ
  ধূমপান ইসলামে বর্জনীয় সেটা রামাদান মাসেই হোক বা এর বাইরে হোক, কারণ এটা “আল-খাবিছ্’(খারাপ কাজ) এর একটি। এবং এটা যাবতীয় ধূমপানের সামগ্রী অন্তভূর্ক্ত করে যেমনঃ সিগার, সিগারেট, পাইপ, শিশা, হুক্কা ইত্যাদি।
“তাদের জন্য যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসসমূহকে তাদের ওপর হারাম ঘোষণা করে”[সূরাআ’রাফঃ১৫৭]
এটা শুধু যে ধূমপায়ী তার জন্য ক্ষতিকর- তা নয়, বরং তার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের জন্যও ক্ষতিকর। এটা কারো অর্থ অপচয়ের জন্য একটি মাধ্যমও বটে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করা যাবে না কিংবা ক্ষতিসাধন বিনিময়ও করা যাবে না।”
এই হাদীস বিশেষত রামাদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটা সাওমকে বাতিল করে দেয়। [ফতওয়া-ইবনে উছাইমিন]
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন
৮. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়াঃ
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “সেহরী খাও, কারণ এটার মধ্যে বরকত রয়েছে।” [বুখারী, মুসলিম]
এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ “আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” [ মুসলিম]
৯. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেওয়াঃ
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃ “এটা বিদ’আত ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে নেই। বরং সুন্নাহ হল তার উল্টোটা করা। আল্লাহ প্রত্যুষের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান করেছেনঃ “আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।” [সূরা বাকারাঃ১৮৭]
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না।”
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া। এটা ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী আচরণ। আর রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে।” [ মুসলিম ]
১০. সেহরী না খাওয়ায় সাওম পালন না করাঃ
আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা সাওম পালন করে না এই ভয়ে যে সেহরী খাওয়া হয় নি।যাহোক, এটা এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালোবাসা ও কাপুরূষতা। এ আর এমন কি ব্যাপার যে সামান্য কয়েক মুঠো খাবার খাওয়া বাদ হয়ে যায়? এমন না যে এর কারণে আমরা মারা যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
১১. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়েদুআউচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইফতার এবং সেহরির যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত হয় সেগুলো বিদআত। ইফতার অথবা সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ হাদিস এ নেই। এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে।
১২. রোযা ভাঙতে দেরি করাঃ
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান শেষ হলে রোযা ভাঙেন। সূর্য অস্ত যাবার পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে রোযা ভাঙা সুন্নাহ সম্মত। আনাস(রাঃ) বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন।(মুসলিম)
১৩. ইফতার বেশি খেতে গিয়ে মাগরিবের নামায জামাআত ধরতে না পারাঃ
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা। এটা একেবারেই অনুচিত। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার ভেঙে অতঃপর মাগরিবের নামাজ এর জন্য চলে যেতেন। নামাজ শেষ করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও কিছু খেতে পারি।
১৪. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াঃ
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন: “তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- ১)একজন পিতার দুয়া, ২)রোযাদার ব্যক্তির দুয়া, ৩)মুসাফিরের নামাজ”। [ বায়হাকি ]
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল হওয়া ?
১৫. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পরাঃ
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন: “সালাত(নামাজ) হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী”। [ মুসলিম ]
আসলে শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) না পরলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না।রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন: “যে আসরের সালাত পরেনা, তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে যায়।” [ বুখারি ]
১৬. রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব না পরা কবীরা গুনাহ।
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”  [ আন-নুরঃ ৩১ ]
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [আল-আহযাবঃ ৫৯]
সুতরাং রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা অবশ্যই সিয়াম পালনের পুরস্কার হতে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও এটি সিয়াম ভঙ্গ করেনা।
১৭. পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য রোযা না রাখা
পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে রোযা না রাখা  শরীয়ত সম্মত নয়। সকালে পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময় থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।পড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন।
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” [আত-তালাকঃ ২-৩]

১৮. স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে রোযা রাখা
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোযা রাখা উচিত নয়। এটি অন্যতম একটি বড় ভুল যা আমরা করে থাকি। সিয়াম পালন করার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে কেউ রোযা রাখে তাহলে তা শিরকের(ছোট শিরক বা শিরকুল আসগার) আকার ধারন করতে পারে।
১৯. তারাবীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধঃ
তারাবীর নামাযের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাআত নেই। আট এবং বিশ রাকাআত-এ দুটোই শরীয়ত সম্মত। শেখ ইবনে উথাইমিন বলেন,“এগারো কিংবা তেইশ রাকাআতের কোনটিকে নির্দিষ্ট করে অপরটি বাতিল করা অনুচিত।কারন বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।”
২০. নির্দিষ্টভাবে শুধু ২৭ রমযানের রাতকে লাইলাতুল ক্বাদর মনে করে ইবাদত করাঃ
আমরা অনেকেই কেবল ২৭ রমযান রাতে লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করে থাকি,কিন্তু অন্যান্য বিজোড় রাতগুলিকে প্রাধান্য দেইনা। অথচ রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“রমযানের শেষ দশ রাত্রির বিজোড় রাতগুলিতে লাইলাতুল ক্বাদর তালাশ কর।”(বুখারি ও মুসলিম)
২১. ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের শেষাংশ অবহেলায় পালন করা
আমরা অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি(নতুন কাপড় কেনা,খাবারের আয়োজন করা,মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা)নিতে গিয়ে রমযানের শেষ দশ দিন অবহেলায় পালন করি(ঠিকমত ঈবাদত না করা এবং লাইলাতুল ক্বাদরের তালাশ না করা)। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)রমযানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন,কেনাকাটি করায় ব্যস্ত থাকতেন না। রমযান শুরু হবার আগেই আমাদের কেনাকাটি শেষ করা উচিৎ।
 আয়শা (রাঃ)হতে বর্ণিত: “যখন রমযানের শেষ দশক শুরু হত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন(অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন,স্ত্রীদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতেন),রাত্রি জাগরণ করতেন এবং তাঁর পরিবারকে জাগিয়ে তুলতেন।” [বুখারী,মুসলিম]
২২. ইফতার পার্টির আয়োজন করা
যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব আছে এবং এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন,যেখানে হিজাববিহীন নারীদের আগমন থেকে শুরু করে অশ্লীল নাচ-গান, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা,তারাবিহ এর নামাজ ছেঁড়ে দেওয়া- এ সবই হয়ে থাকে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ।
collected from quraner alo

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...