Showing posts with label ভ্রান্ত আকিদা. Show all posts
Showing posts with label ভ্রান্ত আকিদা. Show all posts

Sunday, August 25, 2019

বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ


▌বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

এটি সুবিদিত যে, বিদ‘আত একটি গর্হিত অপরাধ এবং অন্যায় কাজ। বিদ‘আতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার জন্য এই দুটি হাদীসই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ:
ক. নাবী ﷺ বলেছেন, “(দ্বীনের মধ্যে) যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে সাবধান! কারণ প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয় হলো বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” [আবূ দাউদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]

·
খ. নাবী ﷺ বলেছেন, “আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। আমি তখন বলব, এরা তো আমারই উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না আপনার পরে এরা (দ্বীনের মধ্যে) কী সব নতুন নতুন কথা ও কাজ (বিদ‘আত) সৃষ্টি করেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে, তারা দূর হও, দূর হও!” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫৮৩-৬৫৮৪]

আর মহান আল্লাহ বলেছেন, لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ، كَانُواْ لاَ يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাঊদ ও মারইয়াম তনয় ‘ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতইনা নিকৃষ্ট!” [সূরাহ মাইদাহ: ৭৮-৭৯]

·
ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,

أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ الصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ.‏ فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ.

“মারওয়ান সর্বপ্রথম ‘ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুত্ববাহ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করেন। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, খুত্ববাহ’র আগে সালাত (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। তখন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ওই ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গৰ্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) তা পরিবর্তন করে, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ‏.

“আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবীকেই কোনো উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সঙ্গী ছিল। তারা তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। তারপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর (দ্বীনের ব্যাপারে) যা করে, তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি (অর্থাৎ, বিদ‘আত)। অতএব যে ব্যক্তি তাদেরকে হাত (শক্তি) দ্বারা মোকাবিলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যক্তি জবান দারা মোকাবিলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা মোকাবিলা করবে সেও মু’মিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫০; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

·
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম,
إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم.
“অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)– বলা আমার কাছে খুব ভারী মনে হয়।” আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,
واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ.
“জেনে রেখো, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হয় ব্যক্তি পথ ভুল করেছে, অথচ সে স্রেফ কল্যাণের অভিলাষীই ছিল। এক্ষেত্রে তাঁর ভুলের অনুসরণ করা যাবে না। নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর না হয় ব্যক্তি সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] পূর্বোক্ত কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,

هذا الذي خرج عن الحق متعمدًا لا يجوز السكوت عنه بل يجب أن يكشف أمره ويفضح خزيه حتى يحذره الناس ولا يقال: الناس أحرار في الرأي، حرية الكلمة، إحترام الرأي الآخر، كما يدندنون به الآن من إحترام الرأي الآخر فالمسألة ليست مسألة أرآء المسألة مسألة إتباع نحن قد رسم الله لنا طريقًا واضحًا وقال لنا سيروا عليه حينما قال وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [ الأنعام: ١٥٣] فأي شخصٍ يأتينا ويريد منا أن نخرج عن هذا الصراط فإننا: أولا نرفض قوله. وثانيا :نبين ونحذر الناس منه ولا يسعنا السكوت عنه، لأننا إذا سكتنا عنه اقترّ به الناس، لاسيما إذا كان صاحب فصاحة ولسان وقلم وثقافة فإن الناس يغترون به فيقولون هذا مؤهل هذا من المفكرين كما هو حاصل الآن فالمسألة خطيرة جداً.
وهذا فيه وجوب الرد على المخالف عكس ما يقوله أولئك يقولون اتركوا الردود دعوا الناس كل له رأيه واحترامه وحرية الرأي وحرية الكلمة بهذا تهلك الأمة فالسلف ما سكتوا عن امثال هؤلاء بل فضحوهم وردوا عليهم لعلمهم بخطرهم على الأمة، نحن لا يسعنا ان نسكت على شرهم بل لابد من بيان ما أنزل الله وإلا فأننا نكون كاتمين من الذين قال الله فيهم: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ [البقرة: ١٥٩] فلا يقتصر الأمر على المبتدع بل يتناول الأمر من سكت عنه فإنه يتناوله الذم والعقاب لأن الواجب البيان والتوضيح للناس وهذه وظيفة الردود العلمية المتوفرة الآن في مكتبات المسلمين كلها تذب عن الصراط المستقيم وتحذر من هؤلاء فلا يروج هذا الفكرة فكرة حرية الرأي وحرية الكلمة واحترام الآخر إلا مضلل كاتم للحق نحن قصدنا الحق ما قصدنا نجرح الناس نتكلم في الناس القصد هو بيان الحق وهذه أمانة حمّلها الله العلماء فلا يجوز السكوت عن أمثال هولاء لكن مع الأسف لو يأتي عالم يرد على أمثال هولاء قالوا هذا متسرع إلى غير ذلك من الوساوس فهذا لا يخذّل أهل العلم أن يبينوا شر دعاة الضلال لا يخذلونهم.

“যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হক থেকে বেরিয়ে গেছে, তার ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। বরং তার বিষয়টি প্রকাশ করা এবং তার রহস্য উন্মোচন করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ তার থেকে সতর্ক থাকতে পারে। একথা বলা হবে না যে, মানুষ তার মতপ্রকাশে স্বাধীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে। যেমন তারা ইদানীং ‘অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে’ বলে বকবক করছে। এটি নানাজনের মতামতের ইস্যু নয়। এটি ইত্তিবা‘ তথা অনুসরণের ইস্যু। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্পষ্ট পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে ওই পথে চলতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করো।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)

সুতরাং যে ব্যক্তিই আমাদের কাছে আসে এবং চায় যে, আমরা এই পথ থেকে বের হয়ে যাই, আমরা প্রথমত তার কথা প্রত্যাখান করব। দ্বিতীয়ত, আমরা বিষয়টি বর্ণনা করব এবং তার থেকে মানুষকে সতর্ক করব। আমাদের কাছে তার ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। কেননা আমরা যদি তার ব্যাপারে চুপ থাকি, তাহলে মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে। বিশেষত সে যখন বাগ্মিতা, ক্ষুরধার লেখনী ও উচ্চশিক্ষার অধিকারী হয়। কেননা মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে, আর বলবে—ইনি তো যোগ্য লোক, ইনি একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ইত্যাদি। যেমনটি বর্তমানে হচ্ছে। সুতরাং এটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়।

এতে আমাদের জন্য শরিয়ত বিরোধীকে রদ করার আবশ্যকীয়তার বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যের বিপরীতে, যারা বলে, ‘তোমরা রদ করা বাদ দাও এবং সকল মানুষকে দা‘ওয়াত দাও, প্রত্যেকের মতামতের সম্মান রয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, একারণে উম্মত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’ সালাফগণ ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকেননি। বরং তাঁরা তাদের বিষয় প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে রদ করেছেন। কারণ তাঁরা জানতেন, উম্মতের জন্য ওরা কতটা বিপজ্জনক।

আমাদের নিকটেও তাদের অনিষ্টের ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। বরং আবশ্যিকভাবে আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান বর্ণনা করতে হবে। নতুবা আমরা শরিয়ত গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যে সব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯)

বিষয়টি শুধু বিদ‘আতীর উপরই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে বিদ‘আতীর ব্যাপারে চুপ থেকেছে, বিষয়টি তাকেও শামিল করে। উল্লিখিত ভর্ৎসনা ও শাস্তি তাকেও শামিল করে। কেননা মানুষের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব। বর্তমানে মুসলিমদের লাইব্রেরিগুলোতে বিদ্যমান পর্যাপ্ত ‘ইলমী রুদূদের (রিফিউটেশনস) সকল গ্রন্থ সিরাত্বে মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথকে ডিফেন্ড করে এবং ওই ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক করে। সুতরাং এই মতবাদ –সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতের সম্মান আছে ইত্যাদি বলার মতবাদ– হককে গোপনকারী এবং অন্যকে পথভ্রষ্টকারী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ প্রচার করে না।

আমরা হক বর্ণনা করতে চাই। আমরা মানুষকে জারাহ করা, বা মানুষের সমালোচনা করার অভিলাষ করি না। আমাদের অভিলাষ তো স্রেফ হক বর্ণনা করা। এটি একটি আমানত, যা আল্লাহ ‘আলিমদের উপর অর্পণ করেছেন। সুতরাং ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকা না-জায়েজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো ‘আলিম এসে ওদের মত ব্যক্তিদের রদ করলে তারা বলে, ‘ইনি তাড়াহুড়া করছেন’ ইত্যাদি কুমন্ত্রণামূলক কথাবার্তা। সুতরাং কেউ ‘আলিমদেরকে পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অনিষ্ট মানুষের কাছে বর্ণনা করতে বারণ করবে না, তাঁদেরকে (এ থেকে) বারণ করবে না।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৫; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

ومثل أئمة البدع من أهل المقالات المخالفة للكتاب والسنة، أو العبارات المخالفة للكتاب والسنة، فإن بيان حالهم وتحذير الأمة منهم واجب باتفاق المسلمين، حتى قيل لأحمد بن حنبل: الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ فقال: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.
فبيّن أن نفع هذا عام للمسلمين في دينهم من جنس الجهاد في سبيل الله، إذ تطهير سبيل الله ودينه ومنهاجه وشرعته ودفع بغي هؤلاء وعدوانهم على ذلك واجب على الكفاية باتفاق المسلمين، ولولا من يقيمه الله لدفع ضرر هؤلاء لفسد الدين، وكان فساده أعظم من فساد استيلاء العدو من أهل الحرب، فإن هؤلاء إذا استولوا لم يفسـدوا القلوب وما فيها من الدين إلا تبعاً، وأما أولئك فهم يفسدون القلوب ابتداءً.

“যেমন কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য বা কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী কথার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত বিদ‘আতের ইমামগণ। তাদের অবস্থা বর্ণনা করা এবং উম্মাহকে তাদের থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এমনকি আহমাদ বিন হাম্বালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “একজন ব্যক্তি সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে, ই‘তিকাফ করে– সে আপনার কাছে অধিক প্রিয়, না কি সে ব্যক্তি যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?” তখন তিনি বলেন, “যখন সে সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তখন সে তা নিজের জন্য করে। আর যখন সে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে, তখন সে তা মুসলিমদের জন্য করে; সুতরাং এটি উত্তম।”

তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মুসলিমদের জন্য তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে এই কাজের উপকারিতা ব্যাপক, যা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহ’র রাস্তা, দ্বীন, মানহাজ ও শরিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং এর উপর এদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকে প্রতিহত করা মুসলিমদের ঐক্যমতে ওয়াজিবে কিফায়াহ। [ওয়াজিবে কিফায়াহ’র অর্থ: উম্মাহ’র কতিপয় আদায় করলে, বাকিদের উপর থেকে তা আদায় না করার পাপ ঝরে পড়ে। – সংকলক।] আল্লাহ যদি কতিপয় ব্যক্তিকে এদের অনিষ্ট প্রতিহত করতে নিয়োগ না করতেন, তাহলে অবশ্যই দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত। যেহেতু এর অনিষ্ট শত্রু যোদ্ধাদলের কাছে পরাভূত হওয়ার অনিষ্ট থেকেও বেশি। কেননা তারা যখন পরাভূত করে, তখন তারা (মানুষের) অন্তর এবং অন্তরিস্থ দ্বীনকে নষ্ট করে না; তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের দ্বীন নষ্ট করে, তবে তার কথা ভিন্ন। পক্ষান্তরে এরা শুরুতেই মানুষের অন্তরকে নষ্ট করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১-২৩২; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]

·
বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

فالواجب على علماء المسلمين توضيح الحقيقة ومناقشة كل جماعة أو جمعية ونصح الجميع بأن يسيروا في الخط الذي رسمه الله لعباده ودعا إليه نبينا محمد ﷺ، ومن تجاوز هذا أو استمر في عناده لمصالح شخصية أو لمقاصد لا يعلمها إلا الله- فإن الواجب التشهير به والتحذير منه ممن عرف الحقيقة، حتى يتجنب الناس طريقهم وحتى لا يدخل معهم من لا يعرف حقيقة أمرهم فيضلوه ويصرفوه عن الطريق المستقيم الذي أمرنا الله باتباعه في قوله جل وعلا: وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.

“মুসলিমদের ‘আলিমদের উপর প্রকৃত বিষয় বর্ণনা করা, প্রত্যেক দল বা সংগঠনের সাথে (শার‘ঈ) বিতর্ক সম্পন্ন করা এবং সবাইকে ওই পথের উপর চলতে নসিহত করা ওয়াজিব, যে পথ স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য চিত্রিত করেছেন, আর যে পথের দিকে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে আহ্বান করেছেন। যে ব্যক্তি এই পথের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বা কেবল আল্লাহ জানেন এমন কোনো (গুপ্ত) উদ্দেশ্যের কারণে নিজের জিদ ও হঠকারিতায় অটল থাকে, তাহলে যারা প্রকৃত বিষয়টি জানে তাদের জন্য ওই ব্যক্তির সমালোচনা করা এবং তার থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ এই ব্যক্তিদের পথ বর্জন করে, আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বিষয় জানে না সে তাদের দলে প্রবেশ না করে। নতুবা তারা ওই অজ্ঞ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। যেই সঠিক পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,

ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﺴﻜﻮﺕ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻟﻠﻔﺎﺟﺮ ﻭﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻉ ﻭﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﻏﻠﻂ ﻋﻈﻴﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻧﺘﺸﺎﺭ ﺍﻟﺸﺮ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﺧﺘﻔﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﻗﻠﺘﻪ ﻭﺧﻔﺎﺀ ﺍﻟﺴﻨﺔ. ﻓﺎﻟﻮﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﻜﻠﻤﻮﺍ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻭﻳﺪﻋﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻨﻜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭﻳﺤﺬﺭﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻭﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﻭﺑﺼﻴﺮﺓ.

“পাপাচারী, মূর্খ ও বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা ‘আলিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা এটি একটি মারাত্মক গলত। এটি অকল্যান ও বিদ‘আত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটি কল্যাণ কমে যাওয়া, কল্যাণ দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং ‘আলিমদের জন্য হক বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বাতিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শার‘ঈ ‘ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৩]

·
❏ যারা বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ولو سكت أهل الحق عن بيانه: لاستمر المخطئون على أخطائهم، وقلدهم غيرهم في ذلك، وباء الساكتون بإثم الكتمان الذي توعدهم الله في قوله سبحانه: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
وقد أخذ الله على علماء أهل الكتاب الميثاق لتبيننه للناس ولا تكتمونه، وذمهم على نبذه وراء ظهورهم، وحذرنا من اتباعهم.
فإذا سكت أهل السنة عن بيان أخطـاء من خالف الكتاب والسنة شَـابَهُوا بذلك أهل الكتاب المغضوب عليهم والضالين.

“হকপন্থিরা যদি হক বর্ণনা করা থেকে চুপ থাকে, তাহলে ভুলকারীরা তাদের ভুলে অটল থাকবে এবং অন্যরা সেই ভুলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। আর নীরবতা অবলম্বনকারীরা শরিয়ত গোপনের পাপ বহন করবে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তাদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

আল্লাহ আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ‘আলিমদের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা তা মানুষের কাছে বর্ণনা করবে, গোপন করবে না। কিন্তু তারা সে অঙ্গীকার তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলার কারণে আল্লাহ তাদের ভর্ৎসনা করেছেন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করেছেন।

কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধীদের ভুল বর্ণনা করা থেকে আহলুস সুন্নাহ যদি চুপ থাকে, তাহলে তারা এর মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে, যে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩]

·
❏ বিদ‘আতীদের রদ না করে তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত:

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يقول السَّائل: هل عدم الرَّد على أهل البدع وكتمان باطلهم والدِّفاع عنهم يعتبر من الغشّ للمسلمين؟

“প্রশ্নকারী বলছেন, বিদ‘আতীদের রদ না করা, তাদের বাতিল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদেরকে ডিফেন্ড করা কি মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত হবে?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

هذا من أكبر الغش للمسلمين، السكوت على أهل البدع وعدم بيان بدعهم هذا من الغش للمسلمين، فإذا انضاف إلى هذا أنه يمدحهم ويثني عليهم فهذا أشد وأنكر والعياذ بالله، فالواجب على من عنده علم أن يُبَيِّن البدع والمحدثات وأن ينهى عنها ويُحذِّر منها ولا يسكت،السكوت هذا من الكتمان ﴿إِنَّ الذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ البَيِّنَاتِ وَالهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ إِلَّا الذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾ لا يجوز للمسلم الذي عنده علم أن يسكت على البدع والمخالفات ولا يُبَيِّنُها للناس لأنه إذا سكت احتجَّ الناس به وقالوا لو كان هذا محرمًا أو ممنوعًا ما سكت العالم الفلاني وهو يراه، نعم.

“এটি মুসলিমদের সাথে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদের বিদ‘আত বর্ণনা না করা মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। আর যখন এর সাথে এটা যুক্ত হয় যে, সে তাদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করছে, তখন তা হয় অধিক ভয়ানক ও গুরুতর। সুতরাং যার ‘ইলম আছে, তার উপর ওয়াজিব হলো বিদ‘আতসমূহ বর্ণনা করে তা থেকে নিষেধ ও সতর্ক করা এবং এ ব্যাপারে চুপ না থাকা। কেননা চুপ থাকা শরিয়ত গোপন করার অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

যে মুসলিমের কাছে ‘ইলম আছে, তার জন্য বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধিতার ব্যাপারে চুপ থাকা এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করা বৈধ নয়। কেননা সে যদি চুপ থাকে, তাহলে মানুষ তা দলিল হিসেবে গ্রহণ করবে এবং বলবে, “এটা যদি হারাম বা নিষিদ্ধই হত, তাহলে অমুক ‘আলিম তা দেখা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতেন না”।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=122996 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ আমাদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক থাকার, অন্যদের সতর্ক করার এবং যারা বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক করা থেকে বারণ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Friday, August 23, 2019

বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?


▌বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

কতিপয় বিদ‘আতী একটি অদ্ভুত অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। তারা বলে, বর্তমান যুগের পরিস্থিতি সালাফদের যুগের পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন। সুতরাং সালাফদের মানহাজ তাঁদের যুগের জন্য উপযোগী হলেও, বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী নয়। অর্থাৎ, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগের জন্য পারফেক্ট নয়। ধূর্ত বিদ‘আতীদের এই অভিনব কৌশল কতইনা নিকৃষ্ট! আল্লাহ’র কাছে এদের থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
সালাফী মানহাজের ব্যাপারে ধূর্ত বিদ‘আতীদের এ জাতীয় কূটকৌশলের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

ومنهم من يقول لسنا مكلفين بفقه السلف وعلم السلف، لسنا مكلفين نشق طريقنا نحن، نستنبط الأحكام من جديد، نوجد لنا فقهاً جديداً هذه فقه قديم، فقه السلف فقه قديم، ويقولون ما يصلح لهذا الزمان هو صالح لزمانهم، زماننا غير فيزهدون في فقه السلف، ويدعون إلى فقه جديد، كثر هذا في الجرائد والمجلات من الكُتاب وأهل الضلال، يريدون أن يفلتوا أيدينا من منهج السلف، لأننا إذا لم نعرف مذهب السلف وزهدنا به ولم ندرسه، فإنه لا يكفي الانتساب إلى السلف من غير علم ومن غير بصيرة بمذهبه، هذا ما يريدون منه، يريدون أن نترك مذهب السلف وفقه السلف وعلم السلف ونحدث فقهاً جديدا كما يقولون يصلح لهذا الزمان مع أن هذا كذب، وشريعة الإسلام صالحة لكل زمان ومكان إلى أن تقوم الساعة.
فمنهج السلف صالح لكل زمان ومكان، نور من الله عز وجل، لا يزهدك فيه كلام هؤلاء المخذلين أو الضالين لا يزهدك فيه.
الإمام مالك رحمه الله يقول: «لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها»، الذي أصلحها أولها ما هو؟
هو الكتاب والسنة واتباع الرسول صلى الله عليه وسلم، العمل بالقرآن والعمل بالسنة هذا هو الذي أصلح أول الأمة ولا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها.

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “আমরা সালাফদের ফিক্বহ ও সালাফদের ‘ইলমের ব্যাপারে শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা এর আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা নিজেরাই আমাদের রাস্তা তৈরি করব। আমরা নতুন করে বিধিবিধান উদ্ঘাটন করব। আমরা আমাদের জন্য নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করব। এগুলো প্রাচীন ফিক্বহ। সালাফদের ফিক্বহ হলো প্রাচীন ফিক্বহ।” তারা বলে, “এটি (সালাফদের ফিক্বহ) এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, এটি তাদের যুগের জন্য উপযোগী ছিল, আমাদের যুগ ভিন্নতর।” তারা সালাফদের ফিক্বহ ত্যাগ করতে বলে, আর নব্য ফিক্বহের দিকে আহ্বান করে। বিভিন্ন কলামিস্ট ও পথভ্রষ্টদের মাধ্যমে এই বিষয়টি পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আমাদের হাতকে সালাফদের মানহাজ থেকে মুক্ত করতে চায়।

কেননা আমরা যখন সালাফদের মানহাজ জানব না, সে ব্যাপারে অনাগ্রহী হব এবং তা অধ্যয়ন করব না, তখন সালাফদের মানহাজের ব্যাপারে না জেনে সালাফদের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করা যথেষ্ট হবে না। আর তারা এটাই চায়। তারা চায় যে, আমরা সালাফদের মানহাজ, ফিক্বহ ও ‘ইলম পরিত্যাগ করি, আর তাদের ভাষ্য মোতাবেক এই যুগের জন্য উপযোগী নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করি, যদিও তাদের ভাষ্য মিথ্যা। ইসলামী শরিয়ত কিয়ামত অবধি সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। এটি মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আগত নূর (জ্যোতি)। ওই নিরাশকারী ভ্রষ্টদের কথা যেন তোমাকে এ থেকে অনাগ্রহী না করে।

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।” এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, সেটা কী? তা হলো কিতাব, সুন্নাহ এবং রাসূল ﷺ এর অনুসরণ। কুরআনের প্রতি আমল এবং সুন্নাহ’র প্রতি আমল। এটাই এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছে। আর এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই পারে এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফিস সালিহি ওয়া হাজাতুল উম্মাতি ইলাইহি”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/15030.]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবুল হারিস মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুর রহমান বিন আবূ যি’ব—ইবনু আবী যি’ব নামে প্রসিদ্ধ—(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৯ হি.] বলেছেন,

إن الحق لا تنقله الأزمان عن مواضعه ، ولا تغيره عن وجهه.

“নিশ্চয় যুগসমূহ হককে তার যথাস্থান থেকে স্থানান্তরিত করে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা থেকেও তাকে পরিবর্তিত করে না।” [ইমাম আবূ সুলাইমান আর-রাব‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-জুয’উ ফীহি মিন আখবারি ইবনি আবী যি’ব; পৃষ্ঠা: ৫৮; মুআসসাসাতুর রাইয়্যান, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); গৃহীত: সাহাব ডট নেট]

অর্থাৎ, হক অপরিবর্তিত। হক সকল যুগের জন্যই উপযোগী। সুতরাং আধুনিক যুগে সালাফদের মানহাজ অনুপযোগী, এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

·
ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] —যিনি কিনা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছাকাছি যুগের মানুষ ছিলেন এবং ইমাম আহমাদের ছাত্রদের ছাত্র ছিলেন—বলেছেন,

فانظر رحمك الله كلّ من سمعت من كلامه من أهل زمانك خاصة فلا تَعْجَلَّنَ، ولا تدخلنّ في شيء منه حتى تسأل وتنظر هل تكلم فيه أحد من أصحاب النبي ﷺ ورضي الله عنهم أو أحد من العلماء؟ فإن وجدت فيه أثراً عنهم فتمسك به، ولا تُجاوزه لشيء، ولا تختار عليه شيئاً فتسقط في النار.

“আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি যাদের কথা শুনো, তাদের প্রত্যেককে লক্ষ করো, বিশেষ করে তোমার যুগের লোকদেরকে। তুমি তাড়াহুড়া কোরো না। তুমি তাদের কোন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না তুমি প্রশ্ন করছ, আর লক্ষ করছ যে, এ ব্যাপারে কি নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ, অথবা (নির্ভরযোগ্য ও সালাফদের মানহাজের অনুসারী এমন) ‘আলিমদের কেউ কথা বলেছেন? তুমি যদি এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো কথা পাও, তাহলে তা আঁকড়ে ধরো। তুমি কোনো কিছুর জন্যই তা অতিক্রম কোরো না। তুমি তার ওপর কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিয়ো না। নতুবা তুমি জাহান্নামে পতিত হবে।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

ইমাম বারবাহারী’র ওপর আল্লাহ রহম করুন। তাঁর কথা পড়ে মনে হচ্ছে, তিনি যেন কথাগুলো এই যুগের ধূর্ত বিদ‘আতীদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন।

·
❏ বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইখওয়ানী দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূরের কুফরি বক্তব্য ও তার জবাব:

সুরূরিয়্যাহ মানহাজের প্রবক্তা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূর বিন নায়িফ যাইনুল ‘আবিদীন [মৃত: ২০১৬ খ্রি.] বলেছেন,

نظرت في كتب العقيدة فرأيت أنها كتبت في غير عصرنا وكانت حلولاً لقضايا ومشكلات العصر الذي كتبت فيه رغم أهميتها ورغم تشابهه المشكلات أحياناً، ولعصرنا مشكلاته التي تحتاج إلى حلول جديدة، ومن ثم فأسلوب كتب العقيدة فيه كثير من الجفاف لأنها نصوص وأحكام، ولهذا أعرض معظم الشباب عنها وزهدوا بها.

“আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে, এগুলো আমাদের যুগে লেখা হয়নি। এগুলো সে যুগের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকারী ছিল, যে যুগে এগুলো কখনো কখনো তার গুরুত্ব এবং (সে সময়ের) সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার কারণে লেখা হয়েছিল। আমাদের যুগেরও বিভিন্ন সমস্যা আছে, যেগুলো নতুন সমাধানের মুখাপেক্ষী। আর ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” [মুহাম্মাদ সুরূর, মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৫; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا غلط عظيم كتب العقيدة: الصحيح أنها ليست جفاءً، قال الله، قال الرسول. فإذا كان يصف القرآن والسنة بأنها جفاء؛ فهذا رِدَّة عن الإسلام، هذه عبارة سقيمة خبيثة.

“এটি একটি মহাভুল। সঠিক কথা হলো—‘আক্বীদাহর বইপুস্তক বাতিল নয়। এগুলো স্রেফ ক্বালাল্লাহ, আর ক্বালার রাসূল (আল্লাহ ও রাসূলের কথা)। সে যদি কুরআন-সুন্নাহকে বাতিল বলে থাকে, তবে তা ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল। এটি একটি নোংরা রোগাগ্রস্ত কথা।”
এছাড়াও তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “বইটিতে যদি এই কথা থেকে থাকে, তাহলে তা বিক্রি করা না-জায়েজ। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক (إن كان فيه هذا القول فلا يجوز بيعه، ويجب تمزيقه)।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রদত্ত “আফাতুল লিসান”– শীর্ষক লেকচার; লেকচার প্রদানের তারিখ: ২৯শে যুলহাজ্ব, ১৪১৩ হিজরী; অনূদিত অংশের সময়: ৩৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড থেকে ৩৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত; লেকচার লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=QfoTo2MVqnY (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا القائل من دعاة الضلال؛ نسأل الله العافية فيجب أن نَحْذَر من كتابه هذا، وأن نُحذِّر منه. وأذكر لكم أن الشيخ محمد أمان الجامي – وفقه الله – قد أملى شريطًا كاملاً على هذه الكلمة «أن كتب العقيدة نصوص وأحكام …» رد عليه ردًا بليغًا فعليكم أن تبحثوا عن الشريط وأن تنشروه بين المسلمين، حتى يحذروا من هذا الخبث، ومن هذا الشر الوافد إلى بلاد المسلمين.
نعم؛ هذا شريط قيم جدًا، جزا الله خيرًا شيخنا الشيخ محمد أمان الجامي، ونصر به الإسلام والمسلمين.

“এই কথার কথক পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা আল্লাহ’র কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তার এই বই থেকে সতর্ক থাকা এবং (মানুষকে) তা থেকে সতর্ক করা আবশ্যক। আমি তোমাদেরকে বলছি, শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (আল্লাহ তাঁকে তাওফীক্ব দান করুন) এই কথা—“আক্বীদাহর বইপুস্তক স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান”– এর ব্যাপারে তাকে পূর্ণরূপে রদ করে একটি অডিও ক্লিপ (টেপ/ক্যাসেট) বের করেছেন। তোমাদের জন্য এই অডিও ক্লিপটি খুঁজে বের করে তা মুসলিমদের মধ্যে প্রচার করা আবশ্যক। যাতে করে মুসলিমরা এই দুষ্কর্ম এবং মুসলিমদের দেশে আগত এই অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
হ্যাঁ, এটি খুবই মূল্যবান একটি অডিও ক্লিপ। আল্লাহ আমাদের শাইখ আশ-শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের উপকৃত করুন।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৯; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
ইয়েমেনের প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৬ হি./২০১৫ খ্রি.] সুরূরিয়্যাহ মানহাজের ভুলত্রুটি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন,

المأخذ الأول : ولاؤهم لمحمد سرور وقد قال : كلمة (الكفر)، وهذه الكلمة هي التي ذكرها في كتابه «منهج الأنبياء في الدعوة إلى الله»، إذ قال : «نظرت في كتب العقيدة ... إلى أن قال: فرأيت أن أسلوبها فيه كثير من الجفاف ، لأنها نصوص وأحكام ولهذا أعرض عنها معظم الشباب» وهذه الكلمة لما سُئل عنها الشيخ ابن عثيمين قال هذه الكلمة كفر، ولما سئل عنها الشيخ الفوزان قال : هذا كفر، من قال هذا ؟! قالوا هذا محمد سرور قال : هذا رجل خبيث، ولما سئل عنها الشيخ ابن باز – إلا أنها حرفت على السائل – بكلمة (جفاء) بدل (جفاف) فقال : هذه ردة وكلمة خبيثة قالوا يا شيخ ما حكم بيع هذا الكتاب والقراءة فيه؟! قال: يحرم بيعه ويجب تمزيقه. وعام 1408هـ جاء محمد سرور بنفسه إلى دماج وأنا حين ذاك موجود، فألقى محاضرة بعد المغرب ولم أكن قد علمت أنه سطر هذه الكلمة الخبيثة في كتابه المذكور من قبل أربع سنين حتى سمعتها منه مشافهة قالها بلسانه بأن كتب العقيدة فيها كثير من الجفاف ولما انتهى من كلمته قال لي الشيخ مقبل تفضل تكلم وكان محمد سرور موجوداً فقلت: إن هذا الكلام على كتب العقيدة ووصفها بأن فيها كثيراً من الجفاف لا يجوز وهذا حرام ويجب على المسلم أن يعظم كلام الله وكلام رسول الله، والعقيدة هي أساس ديننا، ولا قبول للأعمال إلا أن تكون موحداً لله سبحانه وتعالى ومن ذوي العقيدة الصافية ... الخ، وظهر عليه الغضب والإنفعال ولما انتهينا من صلاة العشاء ذهبنا إلى بيت الشيخ مقبل –حفظه الله– أيضاً كان كالذي يأكل نفسه ما هو موافق على ما قلنا في رد ظلمه وعدوانه على كتب العقيدة وبعد أربع سنين من ذلك الحين تأتي كلمة الشيخ عبدالعزيز بن باز –حفظه الله– ثم تتابع كلام أهل العلم كالشيخ الفوزان والشيخ ابن عثيمين.

“প্রথম ভুল: তারা (সুরূরীরা) মুহাম্মাদ সুরূরের জন্য মিত্রতা স্থাপন করে। অথচ সে কুফরি কথা বলেছে। এই কথা সে তার লেখা “মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। সে বলেছে, “আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে... ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” এই কথার ব্যাপারে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কথা কুফর।’ এ ব্যাপারে শাইখ ফাওযানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি কুফর। কে বলেছে এই কথা?!’ তাঁকে বলা হয়েছে, ‘এই লোক মুহাম্মাদ সুরূর।’ তখন তিনি বলেন, ‘এ তো খবিস লোক।’ তার ব্যাপারে শাইখ ইবনু বাযকে প্রশ্ন করা হলে—তবে প্রশ্নকারী জাফাফ (শুষ্কতা) শব্দের পরিবর্তে জাফা (বাতিল) বলেছে—তিনি বলেন, ‘এটি রিদ্দাহ তথা মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল, এটি জঘন্য কথা।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এই বই বিক্রি ও তা পড়ার বিধান কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘বইটি বিক্রি করা নাজায়েয। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক।’

১৪০৮ হিজরীতে স্বয়ং মুহাম্মাদ সুরূর দাম্মাজে এসেছিল। আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সে মাগরিবের পর বক্তব্য দিল। আমি জানতাম না যে, সে এই জঘন্য কথা চার বছর আগেই তার উল্লিখিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছে, যা আমি সরাসরি তার মুখ থেকে শুনেছি। সে তার জবানে বলেছে যে, ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকে শুষ্কতা রয়েছে। সে যখন তার কথা শেষ করল, তখন শাইখ মুক্ববিল আমাকে বললেন, ‘এসো, কিছু কথা বলো।’ তখনও মুহাম্মাদ সুরূর উপস্থিত রয়েছে। আমি তখন বললাম, “ ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহে শুষ্কতা রয়েছে—এরূপ বলা জায়েজ নয়, এটি হারাম। আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রাসূলের কথাকে সম্মান করা মুসলিমের ওপর আবশ্যক। ‘আক্বীদাহ আমাদের দ্বীনের মূলভিত্তি। মহান আল্লাহকে এক গণ্যকারী (তাওহীদবাদী) এবং বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত কারও আমল কবুল করা হবে না।...”

তার মধ্যে ক্রোধ ও উত্তেজনা দেখা গেল। আমরা ‘ইশার সালাত শেষ করে শাইখ মুক্ববিল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বাসায় গেলাম। সে যেন (ক্রোধে) নিজেকে খেয়ে ফেলছিল। ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে তার বিদ্বেষ ও জুলুমের ব্যাপারে আমরা যা বলেছি, সে ব্যাপারে সে আমাদের সাথে একমত ছিল না। এই ঘটনার চার বছর পর এ ব্যাপারে শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য এসেছে। তারপর অন্যান্য ‘আলিমগণের বক্তব্য এসেছে। যেমন: শাইখ ফাওযান, শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন।” [শাইখ ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “ ‘ইশরূনা মা’খাযান ‘আলাস সুরূরিয়্যাহ”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=51016.]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يزعم بعض الناس أن منهج أهل السنة و الجماعة لم يعد مناسباً لهذا العصر ، مستدلين بأن الضوابط الشرعية التي يراها أهل السنة و الجماعة لا يمكن أن تتحقق اليوم؟

“কতিপয় লোক মনে করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী হিসেবে বিবেচিত নয়; এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত যেসব শার‘ঈ মূলনীতির মত পোষণ করে, সেগুলো বর্তমান সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

الذي يرى أن منهج السلف الصالح لم يعد صالحاً لهذا الزمان، هذا يعتبر ضالاً مضللاً؛ لأن منهج السلف الصالح هو المنهج الذي أمرنا الله باتباعه حتى تقوم الساعة، يقول ﷺ : فإنه من يعش منكم فسوف يرى اختلافاً كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسكوا بها وعضّوا عليها بالنواجذ.
وهذا خطاب للأمة إلى أن تقوم الساعة، وهذا يدل على أنه لابد من السير على منهج السلف، وأن منهج السلف صالح لكل زمان ومكان، والله سبحانه وتعالى يقول : وَالسَّابِقُونَ الأوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ [التوبة : ١٠٠] وهذا يشمل الأمة إلى أن تقوم الساعة.
فالواجب عليها أن تتابع منهج السابقين الأولين من المهاجرين و الأنصار ، و الإمام مالك بن أنس يقول : لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلح أولها.
فالذي يريد أن يعزل الأمة عن ماضيها ويعزل الأمة عن السلف الصالح يريد الشر بالمسلمين، ويريد تغيير هذا الإسلام ويريد إحداث البدع و المخالفات، وهذا يجب رفضه ويجب قطع حجته و التحذير من شره، لأنه لابد من التمسك بمنهج السلف والاقتداء بالسلف ولابد من السير على منهج السلف.
وذلك في كتاب الله عز وجل وفي سنة رسوله ﷺ كما ذكرنا، فالذي يريد قطع خلف الأمة عن سلفها في الأرض يجب أن يرفض قوله وأن يرد قوله وأن يحذر منه، والذين عرف عنهم هذا القول السيء لا عبرة بهم.

“যে মনে করে, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, সে নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ তো সেই মানহাজ, কেয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে মানহাজের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)

এই সম্বোধন কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহ’র উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, অবশ্যই সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করতে হবে, আর ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। মহান আল্লাহ বলেছেন, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী এবং যারা উত্তমরূপে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও আল্লাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” (সূরাহ তাওবাহ: ১০০) মহান আল্লাহ’র এই বাণী কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহকে শামিল করে।

উম্মাহ’র ওপর অবশ্য করণীয় হলো, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী, তাঁদের মানহাজ অনুসরণ করা। ইমাম মালিক বিন আনাস বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।”

সুতরাং যে ব্যক্তি উম্মাহকে তার অতীত থেকে আলাদা করতে চায়, উম্মাহকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের থেকে আলাদা করতে চায়, সে মূলত মুসলিমদের অনিষ্ট কামনা করে। সে এই ইসলামকে পরিবর্তন করতে চায় এবং বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড উদ্ভাবন করতে চায়। তাকে বর্জন করা, তার দলিল কর্তন করা এবং তার অনিষ্ট থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। কেননা অবশ্যই সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরতে হবে এবং সালাফদের অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই সালাফদের মানহাজে পথ চলতে হবে।

আর এটি মহান আল্লাহ’র কিতাব এবং তাঁর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ’য় রয়েছে, যেমনটি আমরা উল্লেখ করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি পৃথিবীতে এই উম্মাহ’র খালাফকে (শেষ প্রজন্ম) তার সালাফদের (প্রথম প্রজন্ম) থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, সে ব্যক্তির কথা প্রত্যাখ্যান করা, তার কথা খণ্ডন করা এবং তার থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাদের নিকট থেকে এই খারাপ কথা এসেছে বলে জানা গেছে, তাদের কোনো মূল্য নেই।” [ড. ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আর-রিফা‘ঈ, মুরাজা‘আতুন ফিল ফিক্বহিল ওয়াক্বি‘ইস সিয়াসিয়্যি ওয়াল ফিকরী (শাইখ ইবনু বায, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান এবং শাইখ সালিহ আস-সাদলানের সাথে কথোপকথন); পৃষ্ঠা: ৫৫-৫৬; দারুল মা‘আরিজিদ দাওলিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগেও গ্রহণযোগ্য। যারা বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ অগ্রহনযোগ্য—বলে প্রচার করে, তারা বিদ‘আতী। আল্লাহ আমাদেরকে ধূর্ত বিদ‘আতীদের সৃষ্ট যাবতীয় সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Thursday, August 22, 2019

বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি



▌বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

বিদ‘আতীদের রদ (রিফিউট) করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। সালাফদের যুগ থেকেই বিদ‘আতীদের রদ করার এই শার‘ঈ নীতি চলে আসছে। আমরা প্রথমে এটা প্রমাণ করব যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মূলনীতি। তারপর পরবর্তীতে বিদ‘আতীদের রদ করার আবশ্যকীয়তা এবং তাদের ব্যাপারে চুপ থাকার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

বিদ‘আতীদের রদকারীদের ব্যাপারে নাবী ﷺ প্রশংসামূলক কথা বলেছেন। ইবরাহীম বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-‘উযরী কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, يَحْمِلُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُه يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ وَانْتَحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَأْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ “প্রত্যেক আগত দলের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহ’র) এই ‘ইলম গ্রহণ করবে। আর তারাই কিতাব ও সুন্নাহ’র ‘ইলমের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কৃত রদবদল, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার এবং জাহিল ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন করবে।” [বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২১৪৩৯; ইবনু বাত্বত্বাহ, ইবানাতুল কুবরা, হা/৩৪; মিশকাত, হা/২৪৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

·
আমরা যখন বিদ‘আতীদের রদ করতে যাই, তখন কতিপয় ব্যক্তির কথায় খুবই আশ্চর্য হই, যখন তাঁরা বলেন যে, বিদ‘আতীদের রদ করা ঠিক নয়, কারণ এতে মনোমালিন্য ও বিভেদ সৃষ্টি হয়। কী ধরনের ইবলিসি কথা! এটা তো ওই কাফিরদের কথা, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ “তারা চায় যে, তুমি যদি আপসকামী হও, তবে তারাও আপসকারী হবে।” [সূরাহ ক্বালাম: ৯]

যারা বিদ‘আতীদের রদ করার বিরুদ্ধে কথা বলে, নিঃসন্দেহে তারা জেনে অথবা না জেনে দ্বীনকে ধ্বংস করার প্রোপাগান্ডায় শামিল হয়। কারণ যদি রদ না থাকত, তাহলে যার যা ইচ্ছা সে তাই বলে বেড়াত।

·
আর তাইতো শরিয়ত বিরোধীদের রদ করার এই মহান নীতি স্বয়ং নাবী ﷺ শিখিয়ে গেছেন। সাহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، أَنَّ رَجُلاً، خَطَبَ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ مَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشِدَ وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ  ﷺ‏:‏ بِئْسَ الْخَطِيبُ أَنْتَ،‏ قُلْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ‘আদী বিন হাতিম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর সামনে ভাষণ দিল। সে বলল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল, সে সঠিক পথ পেল, আর যে ব্যক্তি তাঁদের অবাধ্যচরণ করল, সে পথভ্রষ্ট হলো।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তুমি এক নিকৃষ্ট বক্তা, তুমি এভাবে বল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৭০; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১৩]

ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “ওই বক্তাকে রাসূল ﷺ দীর্ঘ খুতবাহ দেওয়ার কারণে ভর্ৎসনা করেছিলেন।” [শারহু মুসলিম, হা/৮৭০ – এর ব্যাখ্যা]

·
সাহাবীগণের কর্মেও আমরা এই নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই। সাহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أُمِّ الْحَكَمِ يَخْطُبُ قَاعِدًا فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا الْخَبِيثِ يَخْطُبُ قَاعِدًا وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ‏وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا‏ কা‘ব বিন উজরাহ কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি মাসজিদে প্রবেশ করলেন, আর তখন ‘আব্দুর রাহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন। কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “তোমরা এই খবিসের প্রতি লক্ষ করো, সে বসে বসে খুতবা দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা (খুতবা চলাকালীন সময়ে) তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল।’ (সূরাহ জুমু‘আহ: ১১)” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৬৪; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১১]

এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, কলেবর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এখানেই ক্ষান্ত হচ্ছি।

·
প্রিয় পাঠক, সাধারণভাবে বিদ‘আতীদের রদ করা নসিহতের অন্তর্ভুক্ত। যে নসিহতের ব্যাপারে নাবী ﷺ বলেছেন, الدِّينُ النَّصِيحَةُ،‏ قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ‏: ‏لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “সদুপদেশ (নসিহত) দেয়াই দ্বীন। আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞেস করলাম, ‘কার জন্য সদুপদেশ?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫৫; ‘ইমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২৩]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,

ﻻﻳﺤﻞ ﺃﻥ ﺗﻜﺘﻢ ﺍﻟﻨّﺼﻴﺤﺔ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺑﺮّﻫﻢ ﻭﻓﺎﺟﺮﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺪّﻳﻦ، ﻓﻤﻦ ﻛﺘﻢ، ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻓﻘﺪ ﺧﺎﻥ ﺍﻟﻠّﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ.

“পুণ্যবান হোক বা পাপাচারী হোক, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো মুসলিমের কাছে নসিহত তথা সদুপদেশ গোপন করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি তা গোপন করল, সে মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করল। আর যে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিল, সে মূলত দ্বীনকেই ধোঁকা দিল। আর যে দ্বীনকে ধোঁকা দিল, সে তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের সাথে খেয়ানত করল।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৯৩; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
মুমিনদের প্রতি নসিহত কেমন হওয়া উচিত তার বর্ণনা দিতে গিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,

أن تُرشِدهم إلي الصواب، وتحذّرهم من الأخطاء، و أن تأمر بالمعروف وتنهي عن المنكر، و أن تعلِّم الجاهلَ وتذكِّر الغافلَ.

“তুমি তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে, ভুল থেকে সতর্ক করবে। তুমি সৎকাজের আদেশ দিবে, আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। অজ্ঞকে শিক্ষা দিবে, আর গাফিলকে উপদেশ দিবে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১২; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] হাদীসশাস্ত্রের হাফিয শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ইসমা‘ঈল ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল-আনসারী আল-হারাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ)’র [মৃত: ৪৮১ হি.] জীবনচরিতে লিখেছেন,

قال ابن طاهر سمعته—يعني أبا إسماعيل الـهروي—يقول: عُرِضتُ على السيف خمسَ مراتٍ لا يُقال لـي: ارجع عن مذهبك، ولكن يُقال لـي: اسكتْ عمَّنْ خالفكَ ، فأقول: لا أسكت.

“ইবনু ত্বাহির বলেছেন, আমি আবূ ইসমা‘ঈল আল-হারাউয়ীকে বলতে শুনেছি, “আমাকে পাঁচবার তরবারির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে বলা হয়নি যে, তুমি তোমার মতাদর্শ থেকে ফিরে আস। বরং আমাকে বলা হয়েছে, তুমি তোমার (আদর্শ) বিরোধীদের ব্যাপারে চুপ থাক। আমি বলেছি, আমি চুপ থাকব না”।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৫০৯; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

আহলুস সুন্নাহ’র এই মহান ইমামের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তিনি তরবারির সামনেও আহলুস সুন্নাহ’র এই মূলনীতির ব্যাপারে বিদ‘আতীদের সাথে আপস করেননি। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ।

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هل الرد على المخالف وبيان خطأ المخطئين من أصول السنة؟

“শরিয়তবিরোধীকে রদ করা এবং (দ্বীনের ব্যাপারে) ভুলকারীদের ভুল বর্ণনা করা কি সুন্নাহ’র মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,

نعم، الرد على المخالف هذا من طريقة أهل السنة والجماعة.

“হ্যাঁ, শরিয়তবিরোধীকে রদ করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ত্বরীক্বাহ’র (আদর্শের) অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=kRVQsNqCYzM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি। পরন্তু বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার শামিল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

الرادّ على أهل البدع مجاهد، حتى كان يحيى بن يحيى يقول: الذب عن السنّة أفضل الجهاد.

“বিদ‘আতীদের রদকারী একজন মুজাহিদ। এমনকি ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেছেন, ‘সুন্নাহকে ডিফেন্ড করা সর্বোত্তম জিহাদ’।” [নাক্বদুল মানত্বিক্ব, পৃষ্ঠা: ১২; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল বিদা‘; পৃষ্ঠা: ১০৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন,

ﺍﻟﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺣﻤﺎﻳﺔ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺼﻖ ﺑﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﺘﺄﻟﻴﻒ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻃﺒﻌﻬﺎ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺣﻖ ﻭﺩﻋﻮﺓ ﻟﻠﺤﻖ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻤﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻥ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻓﺈﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻄﺄ.

“বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র পথে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। এটি নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে শরিয়তকে হেফাজত করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করা, তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করাটাই হক এবং এটিই হকের দা‘ওয়াত ও আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, বিদ‘আতীদের রদ করে গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করা নবউদ্ভাবিত বিষয়, সে অবশ্যই ভুলের উপর রয়েছে।” [আর-রিয়াদ্ব পত্রিকা; শুক্রবার, ৪ঠা মুহাররাম, ১৪২৪ হিজরি; সংখ্যা: ১২৬৭৪; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

منهج أهل السنة والجماعة في الرد على أهل البدع:
منهجهم في ذلك مبني على الكتاب والسنة، وهو المنهج المقنع المفحم، حيث يوردون شبه المبتدعة وينقضونها. ويستدلون بالكتاب والسنة على وجوب التمسك بالسنن، والنهي عن البدع والمحدثات، وقد ألفوا المؤلفات الكثيرة في ذلك، وردوا في كتب العقائد على الشيعة والخوارج والجهمية والمعتزلة والأشاعرة في مقالاتهم المبتدعة في أصول الإيمان والعقيدة، وألفوا كتبا خاصة في ذلك، كما ألف الإمام أحمد كتاب الرد على الجهمية، وألف غيره من الأئمة في ذلك كعثمان بن سعيد الدارمي، وكما في شيخ الإسلام ابن تيمية وتلميذهابن القيم والشيخ محمد بن عبد الوهاب وغيرهم من الرد على تلك الفرق وعلى القبورية والصوفية.
وأما الكتب الخاصة في الرد على أهل البدع فهي كثيرة منها على سبيل المثال من الكتب القديمة:
١ - كتاب الاعتصام للإمام الشاطبي،
٢ - كتاب اقتضاء الصراط المستقيم لشيخ الإسلام إبن تيمية فقد استغرق الرد على المبتدعة جزءا كبيرا منه،
٣ - كتاب إنكار الحوادث والبدع لابن وضاح،
٤ - كتاب الحوادث والبدع للطرطوشي،
٥ - كتاب الباعث على إنكار البدع والحوادث لأبي شامة.
ومن الكتب العصرية:
١ - كتاب الإبداع في مضار الابتداع للشيخ علي محفوظ.
٢ - كتاب السنن والمبتدعات المتعلقة بالأذكار والصلوات. للشيخ محمد بن أحمد الشقيري الحوامدي.
٣ - رسالة التحذير من البدع للشيخ عبد العزيز بن باز.
ولا يزال علماء المسلمين- والحمد لله- ينكرون البدع ويردون على المبتدعة من خلال الصحف والمجلات والإذاعات وخطب الجمع والندوات والمحاضرات، مما له كبير الأثر في توعية المسلمين والقضاء على البدع وقمع المبتدعين.

“বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ:

তাদের মানহাজ কিতাব ও সুন্নাহ’র উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি একটি নির্বাককারী সন্তোষজনক মানহাজ। তারা বিদ‘আতীদের শুবহাত (সংশয়) নিয়ে আসে এবং তা খণ্ডন করে। সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার আবশ্যকীয়তা এবং বিদ‘আতের নিষিদ্ধতার ব্যাপারে তারা কিতাব ও সুন্নাহ থেকে দলিল গ্রহণ করে। তারা এ ব্যাপারে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছে। তারা ‘আক্বীদাহর গ্রন্থগুলোতে শিয়া, খারিজী, জাহমী, মু‘তাযিলী ও আশ‘আরী সম্প্রদায়কে রদ করেছে, ইমান ও ‘আক্বীদাহর মূলনীতিতে তাদের বিদ‘আতী কথাবার্তার ব্যাপারে। তারা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট গ্রন্থও রচনা করেছে। যেমন ইমাম আহমাদ লিখেছেন “কিতাবুর রাদ্দি ‘আলাল জাহমিয়্যাহ (জাহমীদের খণ্ডন)”। তিনি ছাড়াও অন্য ইমামগণ এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছেন, যেমন ‘উসমান বিন সা‘ঈদ আদ-দারিমী। অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, তাঁর ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়্যিম, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং অন্যান্যদের গ্রন্থে ওই দলগুলোর এবং কবরপূজারী ও সূফীদের রদ আছে।

পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের রদ করার ব্যাপারে অনেক খাস গ্রন্থ আছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু প্রাচীন গ্রন্থের নাম:
১. ইমাম শাত্বিবী প্রণীত “আল-ই‘তিসাম”।
২. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ প্রণীত “ইক্বতিদ্বাউস সিরাত্বিল মুস্তাক্বীম”। এই গ্রন্থের একটি বড়ো অংশে বিদ‘আতীদের রদ রয়েছে।
৩. ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ প্রণীত “ইনকারুল হাওয়াদিসি ওয়াল বিদা‘”।
৪. আত্ব-ত্বারতূশী প্রণীত “আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘”।
৫. আবূ শামাহ প্রণীত “আল-বা‘ইস ‘আলা ইনকারিল বিদা‘ই ওয়াল হাওয়াদিস”।

কিছু আধুনিক গ্রন্থের নাম:
১. শাইখ ‘আলী মাহফূয প্রণীত “আল-ইবদা‘ ফী মাদ্বার্রিল ইবতিদা‘”।
২. শাইখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আশ-শুক্বাইরী আল-হাওয়ামিদী প্রণীত “আস-সুনানু ওয়াল মুবতাদা‘আত আল-মুতা‘আল্লিক্বাতু বিল আযকারি ওয়াস সালাওয়াত”।
৩. শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায প্রণীত “আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘”।

আল-হামদুলিল্লাহ, মুসলিমদের ‘আলিমগণ এখনও পত্রপত্রিকা, রেডিয়ো, জুমু‘আহর খুতবা, সভা-সেমিনার ও লেকচারের মাধ্যমে বিদ‘আতের সমালোচনা এবং বিদ‘আতীদের রদ করে চলেছেন। মুসলিমদের সচেতনকরণে এবং বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের বিনাশে এর অনেক বড়ো প্রভাব রয়েছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ; পৃষ্ঠা: ১৯১-১৯২; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, উম্মতকে যারা রদবিমুখ করে অসৎ ফায়দা আহরণ করতে চাইছে, আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়াত দেন এবং তাদের তৈরিকৃত সংশয় থেকে আমাদের হেফাজত করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

বইঃ হিদায়া কিতাবের একি হিদায়াত !!

Thursday, August 15, 2019

বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি



▌বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

আমাদের অগ্রবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ ইমামদের সর্বজনগৃহীত একটি নীতি ছিল—বিদ‘আতীদের সাথে কেউ যেন ওঠাবসা বা চলাফেরা বা মেলামেশা না করে। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের শ্রদ্ধেয় ইমাম, শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আহলুস সুন্নাহ’র মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

أصول السنة عندنا : ترك الخصومات والجلوس مع أصحاب الأهواء.

“আমাদের নিকট সুন্নাহ’র মূলনীতি হচ্ছে, বিদ‘আতীদের সাথে তর্কবিতর্ক এবং (তাদের সাথে) ওঠাবসা বর্জন করা।” [ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ), উসূলুস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩; তারিখ ও প্রকাশনার বিহীন; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

·
এই মূলনীতি গৃহীত হয়েছে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীবর্গ এবং তাঁদের পরবর্তী অনুসারীগণ কর্তৃক অবলম্বিত মানহাজ থেকে।

আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “এক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, ‘সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।’ এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নাবী ﷺ আনন্দ সহকারে তার সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথেই আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন।’ তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “হে ‘আইশাহ, তুমি কখনো আমাকে অশালীন দেখেছ? কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬০৩২; সাহীহ মুসলিম, হা/২৫৯১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ, মাদীনাহ’র শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুফতী, ইমাম সুলাইমান বিন ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বানূ তামীম গোত্রে সাবীগ বিন ‘ইসল নামে এক ব্যক্তি ছিল। একবার সে মাদীনাহ’য় আগমন করে। তার কাছে বেশ কিছু গ্রন্থ ছিল। সে লোকদেরকে কুরআনের মুতাশাবিহ তথা দ্ব্যর্থবোধক আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল। ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাকে ডেকে পাঠান। আর তার জন্য তিনি খেজুর গাছের (কাঁদির) অনেকগুলো শুকনো দণ্ড প্রস্তুত করেন। সে যখন তাঁর নিকটে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করে, তখন তিনি বলেন, ‘তুমি কে?’ সে বলে, ‘আমি আল্লাহ’র গোলাম সাবীগ।’ ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আর আমি হলাম আল্লাহ’র গোলাম ‘উমার।’ এই বলে তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ওই প্রস্তুতকৃত শুকনো খর্জূর দণ্ডগুলো দিয়ে পিটাতে লাগলেন। তিনি তাকে মারতেই থাকলেন, এমনকি মারতে মারতে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন, আর ওই ব্যক্তির মুখ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। সে বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন, যথেষ্ট হয়েছে। আল্লাহ’র কসম, আমার মাথায় যা (ভ্রান্ত বিশ্বাস) ছিল তা উধাও হয়ে গেছে’।” [ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৩৮; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬০; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

ইবনু যুর‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সাবীগ বিন ‘ইসলকে বসরায় দেখেছি। সে যেন খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত এক উট, সে (লোকদের) বৈঠকগুলোতে যেত। যখনই সে কোনো বৈঠকে বসত, তখনই ওই বৈঠকের লোকেরা উঠে চলে যেত এবং তাকে বর্জন করত। সে যদি এমন সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বসত যারা তাকে চিনে না, তাহলে অপর বৈঠকের লোকেরা তাদের ডাক দিয়ে বলত, আমীরুল মু’মিনীনের কড়া নির্দেশ আছে (অর্থাৎ, ওই লোককে পরিত্যাগ করো)।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ১১৪০; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬১]

·
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,

من أحب أن يكرم دينه فليعتزل مجالسة أصحاب الأهواء، فإن مجالستهم ألصق من الجرب.

“যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সম্মান করতে পছন্দ করে, সে যেন বিদ‘আতীদের সংস্রব বর্জন করে। কেননা বিদ‘আতীদের সংস্রব খোস-পাঁচড়ার চেয়েও অধিক সংক্রামক।” [ইমাম ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহয়ু ‘আনহা; আসার নং: ১৩১; পৃষ্ঠা: ৯৬; মাকতাবাতু ইবনি তাইমিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন,

لا تجالس أهل الأهواء فإن مجالستهم ممرضة للقلوب.

“তুমি বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা তাদের সাথে ওঠাবসা অন্তরে রোগ সৃষ্টি করে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৭১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,

لا تجلس مع صاحب بدعة، فإني أخاف أن ينزل عليك اللعنة.

“তুমি বিদ‘আতীর সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমার উপর লা‘নাত বর্ষণ করা হবে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৪১; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৬২]

ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] আরও বলেছেন,

ومن جلس مع صاحب بدعة فاحذره، ومن جلس مع صاحب البدعة لم يعط الحكمة، وأحب أن يكون بيني وبين صاحب بدعة حصن من حديد، آكل مع اليهودي والنصراني أحب إلي من أن آكل عند صاحب بدعة.

“যে ব্যক্তি বিদ‘আতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি থেকে সাবধান থাক। যে ব্যক্তি কোনো বিদ‘আতীর সাথে বসে, তাকে হিকমাহ (প্রজ্ঞা) দেওয়া হয় না। আমি তো এটা পছন্দ করি যে, আমার ও বিদ‘আতীর মধ্যে একটি লোহার কেল্লা (স্থাপিত) হবে। কোনো বিদ‘আতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টানের নিকট খাওয়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।” [আবূ নু‘আইম (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১০৩; ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৪৯ (শব্দগুচ্ছ লালাকাঈ’র)]

·
শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ নু‘আইম ফাদ্বল বিন ‘আমর আত তাইমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৮ হি.] বলেছেন,

دخل الثوري يوم الجمعة فإذا الحسن بن صالح بن حي يصلي، فقال: نعوذ بالله من خشوع النفاق وأخذ بنعليه فتحول.

“এক জুমু‘আহর দিন সুফইয়ান সাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] মাসজিদে প্রবেশ করলেন। সে সময় (বিদ‘আতী) হাসান বিন সালিহ বিন হাই সালাত পড়ছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, ‘আমরা আল্লাহ’র কাছে মুনাফিক্বের বিনয়নম্রতা থেকে পানাহ চাচ্ছি।’ তারপর তিনি তাঁর জুতো নিয়ে ফিরে গেলেন।” [তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৮০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৬৩]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] কে বলা হলো,

إن رجلاً يقول: أنا أجالس أهل السنة وأجالس أهل البدع، فقال الأوزاعي: هذا رجل يريد أن يساوي بين الحق والباطل.

“এক ব্যক্তি বলছে, ‘আমি আহলুস সুন্নাহ’র সাথেও ওঠাবসা করি, আবার বিদ‘আতীদের সাথেও ওঠাবসা করি।’ তখন আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, ‘এই লোক হক এবং বাতিলকে সমান করতে চাচ্ছে’।” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০]

এই আসারটি বর্ণনা করার পর ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] বলেছেন, “আওযা‘ঈ সত্যই বলেছেন। আমি বলছি, এই ব্যক্তি হক ও বাতিলের এবং ঈমান ও কুফরের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নয়। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং নাবী ﷺ থেকে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ “যখন তারা মু’মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানদের (সর্দারদের) সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি’।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৪)” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০ – এর টীকা]

·
❏ বিদ‘আতীদের সাথে মেলামেশার কুফল:

ইমাম ইয়া‘কূব বিন শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৬২ হি.] বলেছেন, “বানূ সাদওয়াস গোত্রে ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে নাবী ﷺ এর একদল সাহাবীকে পেয়েছিল। এতৎসত্ত্বেও সে খারিজী মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিল। এর কারণ সম্পর্কে আমাদের কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তা হলো, তার এক চাচাতো বোন ছিল, যে খারিজী মতাদর্শ লালন করত। ‘ইমরান সেই মেয়েকে বিয়ে করে, তাকে তার ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে ফেরানোর জন্য। কিন্তু ওই মেয়েই তাকে নিজের মতাদর্শে দীক্ষিত করে ফেলে।” [তারীখু দিমাশক্ব; খণ্ড: ৪৩; পৃষ্ঠা: ৪৯০; তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ৩২৩; গৃহীত: শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ), লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বাওলিল মা’সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ১৮৮; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

পরবর্তীতে এই খারিজী ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান ইসলামের চতুর্থ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকারী ‘আব্দুর রহমান বিন মুলজিম আল-খারিজী’র প্রশংসা করে দীর্ঘ কবিতা রচনা করে। আল্লাহ’র কাছে যাবতীয় বিদ‘আত ও তার বাহকদের সংস্পর্শ থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
ভারতবর্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, “এই সাদৃশ্য স্থাপনের মধ্যে বেশ কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ সকল বিদ‘আত এবং তা পালনকারী বিদ‘আতীদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। যেহেতু জলাতঙ্ক রোগ সংক্রামক ব্যাধির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জলাতঙ্ক রোগের উৎস রয়েছে কুকুরের মধ্যে। সেই কুকুর যখন কাউকে কামড় দেয়, তখন সেও তার মতোই (ব্যাধি বহনকারী) হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে এই রোগ থেকে না মরে নিস্তার পায় না। একইভাবে একজন বিদ‘আতী যখন কারও কাছে নিজের (ভ্রান্ত) মতাদর্শ এবং সংশয় পরিবেশন করে, তখন খুব কম সময়ই সে ওই (বিদ‘আতীর) দুর্যোগ থেকে নিস্তার পায়। বরং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) হয় সে ওই বিদ‘আতীর সাথে তার (সংশয়পূর্ণ) মতাদর্শে পতিত হয় এবং তার দলেরই একজন সদস্য বনে যায়। নতুবা ওই বিদ‘আতী এই ব্যক্তির অন্তরে সংশয় প্রোথিত করে; যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু সক্ষম হয় না।

এটা পাপাচারিতার বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাপচারী ব্যক্তি তার সাথের ব্যক্তিটির অনিষ্ট করে না এবং স্বীয় পাপাচারিতায় তাকে প্রবিষ্ট করে না। তবে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্ঠতা ও মেলামেশা থাকলে এবং তার পাপকাজে বারবার উপস্থিত হলে ভিন্ন কথা। (সালাফদের থেকে বর্ণিত) আসারসমূহে যে বর্ণনা এসেছে তা এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে ওঠাবসা করতে ও তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন, এবং বিদ‘আতীদের সাথে যারা কথা বলে তাদের সাথেও কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আর এ ব্যাপারে তাঁরা কঠোরতা অবলম্বন করেছেন।” [ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭৮; গৃহীত: শাইখ খালিদ আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ১০২-১০৩; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মহান মূলনীতি। তাই আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে উক্ত মূলনীতিটি হেফাজত করার মাধ্যমে সালাফী মানহাজের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান



▌বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

অনেক অজ্ঞ ও ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়েন এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনেন। আমি মনে করি, তাঁরা এই কাজের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেননি এবং এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেননি। কিছু ভাই আবার ইবলিসী ধোঁকায় পতিত হওয়ার কারণে মনে করেন—‘আমি তো আর বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে সব কথা গ্রহণ করছি না, আমি স্রেফ হকটাই নিচ্ছি, আর বাতিলটা বর্জন করছি!’ তাই এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফ ও খালাফদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বক্তব্য পেশ করা জরুরি মনে করছি। আর উপরিউক্ত ভ্রান্ত ধারণার ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ।

·
আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত যে, ‘ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আল্লাহ’র কিতাব, রাসূলের ﷺ সুন্নাহ এবং সালাফদের সমঝই যথেষ্ট। ১২শ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাবের সুযোগ্য পৌত্র ইমাম ‘আব্দুর রাহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৮৫ হি./১৮৬৯ খ্রি.] বলেছেন,

ومن له نهمة في طلب الأدلة على الحق، ففي كتاب الله، وسنّة رسوله، ما يكفي ويشفي؛ وهما سلاح كل موحد ومثبت، لكن كتب أهل السنّة تزيد الراغب وتعينه على الفهم وعندكم من مصنفات شيخنا -رحمه الله- ما يكفي مع التأمل؛ فيجب عليكم هجر أهل البدع، والإنكار عليهم.

“হকের দলিল অন্বেষণে যার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ’র কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহতেই যথেষ্ট ও সন্তোষজনক উপাদান রয়েছে। এই দুটি বস্তু (কিতাব ও সুন্নাহ) প্রত্যেক তাওহীদবাদী ও জ্ঞানীর অস্ত্র। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ’র গ্রন্থসমূহ আগ্রহী ব্যক্তিকে পাথেয় যোগায় এবং (কিতাব ও সুন্নাহ) বুঝতে সাহায্য করে। তোমাদের কাছে আমাদের শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র গ্রন্থসমূহ রয়েছে, যা গবেষণার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের জন্য বিদ‘আতীদের বর্জন করা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১১; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
স্বয়ং রাসূল ﷺ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, অথচ সেগুলো বিলকুল হকমুক্ত নয়। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَتى رَسُولَ اللهِ ﷺ بِنُسْخَةٍ مِنْ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنْ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يَقْرَأُ وَوَجْهُ رَسُولِ اللهِ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلى وَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ غَضَبِ اللهِ وَغَضَبِ رَسُولِه رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي.

“একদা ‘উমার ইবনুল খাত্বত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল! এটা হলো তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ থাকলেন। এরপর ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। (এদিকে রাগে) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হতে লাগল। আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘উমার, তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিবর্ণ মুখমণ্ডল দেখছ না? ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ করে) বললেন, ‘আমি আল্লাহ’র শাস্তি ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ‘রব’ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের ওপর এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ ﷺ এর ওপর সন্তুষ্ট আছি।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “আল্লাহ’র কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি (তাওরাতের নাবী স্বয়ং) মূসা (‘আলাইহিস সালাম) তোমাদের মধ্যে থাকতেন, আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে এবং আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা (‘আলাইহিস সালাম) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নুবুওয়্যাতের যুগ পেতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন।” [দারিমী, হা/৪৪৯; মিশকাত, হা/১৯৪; সনদ: হাসান]

·
এমনকি কতিপয় ইমাম বিদ‘আতীদের বইপুস্তক না পড়ার উপর ইজমা‘ নক্বল (বর্ণনা) করেছেন। তাঁরা বলেননি যে, তোমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের কথাবার্তা শুনে তা থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো।

ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩১১ হি.] কে আল্লাহ’র নাম ও গুণাবলির সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

 بدعة ابتدعوها، لم يكن أئمة المسلمين وأرباب المذاهب وأئمة الدين، مثل مالك، وسفيان، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحـاق، ويحيى بن يحيى، وابن المبارك، ومحمد بن يحيى، وأبي حنيفة، ومحمد بن الحسن، وأبي يوسف: يتكلمون في ذلك، وينهون عن الخوض فيه، ويدلّون أصحابهم على الكتاب والسنّة، فإياك والخوض فيه والنظر في كتبهم بحال.

“এটি একটি নবআবিষ্কৃত বিষয় (বিদ‘আত), যা তারা আবিষ্কার করেছে। মুসলিমদের ইমামগণ, মাযহাবসমূহের প্রধানগণ ও দ্বীনের ইমামগণ যেমন: মালিক, সুফইয়ান, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারাক, মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া, আবূ হানীফাহ, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আবূ ইউসুফ প্রমুখ এই বিষয়ে সমালোচনা করেননি। তাঁরা এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা বলা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তাঁদের সাথীদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে পথনির্দেশ করেছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা থেকে দূরে থাক এবং সাথে সাথে তাদের বইপুস্তক পড়া থেকেও দূরে থাক।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইস্তিক্বামাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৮; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫-৬৬]

ইমাম আবূ মানসূর মা‘মার বিন আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪১৮ হি.] বলেছেন,

ثم من السنة: ترك الرأي والقياس في الدين، وترك الجدال والخصومات، وترك مفاتحة القدرية وأصحاب الكلام وترك النظر في كتب الكلام وكتب النجوم، فهذه السنة التي اجتمعت عليها الأمة.

“অতঃপর সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে দ্বীনের ক্ষেত্রে রায় ও ক্বিয়াস বর্জন করা, তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা, ক্বাদারিয়্যাহ ও যুক্তিবিদ সম্প্রদায়ের মতবাদের আলোচনার শুরু না করা এবং কালামশাস্ত্র (তর্কশাস্ত্র) ও জ্যোতিষশাস্ত্রের বইপুস্তক পাঠ বর্জন করা। এটি এমন সুন্নাহ, যে ব্যাপারে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।” [ইমাম আবুল ক্বাসিম আল-আসবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৬]

·
এতদ্ব্যতীত ইসলামের ইমামগণ বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথাবার্তা শোনা বর্জন করাকে সুন্নাহ’র মূলনীতি সাব্যস্ত করেছেন এবং এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নসিহত করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম মুওয়াফফাক্বুদ দীন ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم، وكل محدثة في الدين بدعة.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হল বিদ‘আত।” [ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪]

ইমাম ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৮৪ হি.] বলেছেন,

ذكر الشيخ موفق الدين –رحمه الله– في المنع من النظر في كتب المبتدعة، قال: كان السلف ينهون عن مجالسة أهل البدع، والنظر في كتبهم والإستماع لكلامهم.

“শাইখ মুওয়াফফাক্বুদ দীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পাঠের নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে বলেছেন, সালাফগণ বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করতে, তাদের বইপুস্তক পড়তে এবং তাদের কথাবার্তা শুনতে নিষেধ করতেন।” [আল-আদাবুশ শারী‘আহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৩২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] যখন এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন যে, “প্রত্যেক যে বিষয় আল্লাহ’র অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহ’র আনুগত্য থেকে নিষেধ করে, সেটাই আল্লাহ’র অবাধ্যতার শামিল”, তখন তিনি বলেছেন,

ومن هذا الباب سماع كلام أهل البدع، والنظر في كتبهم لمن يضره ذلك ويدعوه إلى سبيلهم وإلى معصية الله.

“এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ওই ব্যক্তি কর্তৃক বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শ্রবণ এবং তাদের বইপুস্তক পঠন, যা (শ্রবণ ও পঠন) তার ক্ষতি করে এবং তাকে তাদের (বিদ‘আতীদের) পথের দিকে ও আল্লাহ’র অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৩৩৬; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وكل محدثة في الدين بدعة، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم في أصول الدين وفروعه، كالرافضة والخوارج والجهمية والقدرية والمرجئة والكرامية والمعتزلة، فهذه فرق الضلالة وطرائق البدع.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা; আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদ‘আত। এছাড়াও বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে তাদের কথাবার্তা শোনা বাদ দেওয়া সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রাফিদ্বী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, জাহমী সম্প্রদায়, ক্বাদারী সম্প্রদায়, মুরজিয়া সম্প্রদায়, কাররামী সম্প্রদায়, মু‘তাযিলী সম্প্রদায়; এগুলো পথভ্রষ্ট ফিরক্বাহ এবং বিদ‘আতী ত্বরীক্বাহ।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান (রাহিমাহুল্লাহ), ক্বাতফুস সামার ফী ‘আক্বীদাতি আহলিল আসার; পৃষ্ঠা: ১৫৭; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]

·
বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে সালাফদের কঠোরতা:

ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। নিম্নোক্ত আসার তিনটি বিদ‘আতীদের ব্যাপারে তাঁদের কঠোর অবস্থান এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র শিথিল না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করবে, ইনশাআল্লাহ।

১. আসমা বিন ‘উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دخل رجلان من أصحاب الأهواء على ابن سيرين فقالا: يا أبا بكر نحدثك بحديث؟ قال: لا، قالا: فنقرأ عليك آية من كتاب الله؟ قال: لا، لتقومان عني أو لأقومن. قال: فخرجا، فقال بعض القوم: يا أبا بكر، ما كان عليك أن يقرآ عليك آية من كتاب الله تعالى؟ قال: إني خشيت أن يقرآ علي آية فيحرفانها، فيقر ذلك في قلبي.

“দুজন বিদ‘আতী ইবনু সীরীনের [মৃত: ১১০ হি.] নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবূ বাকার, আমরা আপনার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে চলে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন প্রস্থান করল। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আবূ বাকার, আপনার কী (ক্ষতি) হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ তিনি (ইবনু সীরীন) বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি যে, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি (তাহরীফ) সাধন করবে, ফলে তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে’।” [দারিমী, হা/৪১১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৯৮; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪২; আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ; আসার নং: ৬২]

২. ইমাম সাল্লাম বিন আবূ মুত্বী‘ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৩ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أن رجلا من أهل الأهواء قال لأيوب: يا أبا بكر، أسألك عن كلمة؟ قال: فولى وهو يشير بأصبعه ولا نصف كلمة. وأشار لنا سعيد بخنصره اليمنى.

“একজন বিদ‘আতী আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩১ হি.] কে বলল, হে আবূ বাকার, আমি আপনাকে একটি শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন করি? বর্ণনাকারী বলছেন, তখন তিনি দ্রুত প্রস্থান করলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁর আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলছিলেন, আধা শব্দও নয়। বর্ণনকারী সা‘ঈদ আমাদেরকে তাঁর ডান কনিষ্ঠা দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন।” [দারিমী, হা/৪১২; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০২; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৯১]

৩. শাইখুল ইসলাম ইমাম মা‘মার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৩ হি.] বলেছেন,

كان ابن طاوس جالسًا فجاء رجل من المعتزلة فجعل يتكلم، قال فأدخل ابن طاوس أصبعيه في أذنيه، قال: وقال لإبنه: أي بني، أدخل أصبعيك في أذنيك وتشدد، ولا تسمع من كلامه شيئًا. قال معمر: يعني أن القلب ضعيف.

“একদা ইবনু ত্বাউস [মৃত: ১৩২ হি.] উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক মু‘তাযিলী এসে কথা বলা শুরু করল। বর্ণনকারী বলছেন, তখন ইবনু ত্বাউস তাঁর দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করালেন এবং তাঁর ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি তোমার দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করাও এবং চেপে ধরে থাকো, তুমি তাঁর সামান্য কথাও শুনো না।” মা‘মার (তাঁর এই কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে) বলেছেন, ‘অর্থাৎ অন্তর খুবই দুর্বল (আমরা তার কথা শুনলে আমাদের অন্তরে তা গেঁথে যেতে পারে)’।” [ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০০; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪৮]

প্রিয় পাঠক, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। সালাফগণ বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের কথা শুনেননি। যারা ছিলেন উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁরাই বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন, তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? এরপরেও কি আমাদের এটা বলা সমীচীন হবে যে, আমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে শুধু হকটাই নিব, বাতিলটা নিব না?!

·
বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের ফাতাওয়া:

বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের অনেক ফাতওয়া রয়েছে। আমরা এখানে আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণের ৭ টি ফাতওয়া উপস্থাপন করলাম।

·
১. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

ومن هجر أهل البدع: ترك النظر في كتبهم خوفًا من الفتنة بها، أو ترويجها بين الناس، فالابتعاد عن مواطن الضلال واجب لقوله ﷺ، في الدجال: «مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ» رواه أبو داود قال الألباني: وأسناده صحيح.
لكن إن كان الغرض من النظر في كتبهم معرفة بدعهم للرد عليها فلا بأس بذلك إن كان عنده من العقيدة الصحيحة ما يتحصن به وكان قادرًا على الرد عليهم، بل ربما كان واجبًا؛ لأن رد البدعة واجب وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب.

“বিদ‘আতীদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাহগ্রস্ত হওয়া এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। ভ্রষ্টতার জায়গাসমূহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নাবী ﷺ দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহ’র কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে দাজ্জাল কর্তৃক তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তার (দাজ্জালের) অনুসরণ করবে।” আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেছেন, ‘হাদীসটির সনদ সাহীহ (বিশুদ্ধ)’।

কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদ‘আতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদ‘আতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
২. বিদ‘আতীদের দারসসমূহে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র সুস্পষ্ট ফাতওয়া—
السؤال: ما حكم حضور دروس أهل البدع؟
الجواب: إذا كان يحضر دروس أهل البدعة من أجل أن يناقشهم ويبين لهم الحق والصواب فهو واجب. وإذا كان يريد أن يتعلم منهم فلا يتعلم منهم، حتى لو كان في غير العقيدة، حتى لو كان يدرسهم في النحو أو البلاغة. لا تـقـربهم؛ لأنهـم قد يدسون السم في الدسم، وأيضاً إذا حضرتهم ربما يغتر بك أحد من الناس؛ يقول هؤلاء ليس في حضور دروسهم بأس.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের দারসে উপস্থিত হওয়ার বিধান কী?”

উত্তর: “কেউ যদি বিদ‘আতীদের সাথে (‘ইলমী) বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের কাছে হক ও সঠিক বিষয় তুলে ধরার জন্য তাদের দারসে উপস্থিত হয়, তবে তা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করতে চায়, তবে সে যেন তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন না করে। যদিও তা ‘আক্বীদাহ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান হয়। যদিও সে তাদের কাছে নাহূ (আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র) ও বালাগাত (অলংকারশাস্ত্র) অধ্যয়ন করে। তুমি তাদের নিকটবর্তী হবে না। কেননা তারা তেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। [অর্থাৎ, ক্ষতিকর বিষয় আকর্ষণীয় মোড়কে উপস্থাপন করে। – সংকলক।] অনুরূপভাবে তুমি যখন তাদের কাছে উপস্থিত হবে, তখন হয়তো তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি ধোঁকায় পতিত হবে। ফলে বলবে, তাদের দারসে উপস্থিত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), লিক্বাআতুল বাবিল মাফতূহ; ১৬২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=82749.]

·
৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: ما هو القول الحق في قراءة كتب المبتدعة، وسماع أشرطتهم؟
الجواب: لا يجوز قراءة كتب المبتدعة ولا سماع أشرطتهم إلا لمن يريد أن يرد علهم ويبين ضلالهم.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে হক কথা কী?”
উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
৪. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: هل يجوز طلب العلم من أهل البدعة وقراءة كتبهم لعدم وجود كتب أهل السنة في بلدي؟
الجواب: الحمد الله، أهل السنة موجودون وكتبهم موجودة، لكن يحتاج [كلام غير واضح] إلى طلب وحرص، ولا تعتمد على أهل البدع وكتب المبتدعة، لا تعتمد عليها، لأنها كالغذاء المسموم القاتل، نعم.

প্রশ্ন: “আমার দেশে আহলুস সুন্নাহ’র বইপুস্তক না থাকার কারণে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা এবং তাদের বইপুস্তক পড়া কি বৈধ হবে?”

উত্তর: “আল-হামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ বিদ্যমান রয়েছে এবং তাদের বইপুস্তকও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অন্বেষণ ও আগ্রহের প্রয়োজন আছে। তুমি বিদ‘আতীদের উপর এবং তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। তুমি তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। কেননা সেগুলো প্রাণঘাতী বিষমিশ্রিত খাদ্যের মতো।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/1512.]

·
৫. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: كثير من طلاب العلم يقول: إن الحق يأخذ من كلام كل أحد حتى من المبتدع، فيجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم.
الجواب: ما يجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم، إلا لبيان ما عندهم من الضلال، حتى يحذر ذلك.

প্রশ্ন: “অসংখ্য ত্বালিবুল ‘ইলম বলছে, নিশ্চয় হক প্রত্যেকের কথা থেকে গ্রহণ করতে হবে, যদিও সে বিদ‘আতী হয়। সুতরাং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ।”

উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য জায়েজ, যাতে করে তা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক থাকা যায়।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=p5G4gb0oEJM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
৬. সৌদি আরবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আবূ মুহাম্মাদ যাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি.] বলেছেন,

وقد حذر سلفنا الصالح رضوان الله عليهم ـ من النظر في كتب المبتدعة لما يترتب على ذلك من المفاسد العظيمة فإن القلوب ضعيفة والشبه خطافة ومما يؤسف له أن كثيرا من الشباب اليوم يقرؤون في كتب أهل الأهواء والضلال ويربون أنفسهم عليها ثم يعودون حربا على السنة وأهلها وحربا على منهج السلف الحق ، فإنا لله وإنا إليه راجعون.

“আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, এর ফলে অপরিহার্যভাবে বড়ো বড়ো ক্ষতি ও অপকারিতা আসার কারণে। কেননা অন্তরসমূহ দুর্বল, আর সংশয়সমূহ (অন্তরস্থ ঈমানকে) লুণ্ঠনকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—বর্তমান যুগে অধিকাংশ যুবক পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ছে এবং সেসবের উপর ভিত্তি করে নিজেদের গড়ে তুলছে। তারপর তারা সুন্নাহ ও তার ধারকদের বিরুদ্ধে এবং সালাফদের হক মানহাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন।” [‘আল্লামাহ যাইদ আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফ ফিত তা‘আমুলি মা‘আ কুতুবি আহলিল বিদা‘”– গ্রন্থ দ্রষ্টব্য; গৃহীত: sahab.net]

·
৭. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] বিদ‘আতীদের কিতাব পড়ার তিনটি বিধান বর্ণনা করে বলেছেন,

ﺇﻥَّ ﺍﻟﻨَّﻈﺮ ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﺍﻻﻧﺤﺮﺍﻑ ﻟﻪ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﺣﻜﺎﻡ:
١ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺑﺪﻋﺔً ﺧﺎﻟﺼﺎً ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺍﻟﺴُﻨَّﺔ، ﻭﻣﺜﺎﻝ ﺫﻟﻚ: (ﺃﺻﻮﻝ ﺍﻟﻜﺎﻓﻲ) ﻟﻠﻜُﻠَﻴْﻤﻲّ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺮﺍﻓﻀﺔ، ﻓﻬﺬﺍ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻨﻈﺮ ﻓﻴﻪ ﻭﻣﻄﺎﻟﻌﺘﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣﺘﻤﻜﻦ ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮﺩَّ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ .
ﺳﻤﻌﺘﻢ؟ ﺷﺮﻃﻴﻦ: ١ - ﻋﺎﻟﻢ ﻣﺘﻤﻜﻦ ٢ - ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮَّﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ.
٢ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﻠﻴﻄﺎً ﻓﻴﻪ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻭﺑﺪﻋﺔ؛ ﻓﻬﺬﺍ ﻻ ﻳﺤﻞ ﺍﻟﻨﻈﺮُ ﻓﻴﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣُﺘﻤﻜﻦ ﻗﺎﺩﺭٌ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﺴﻘﻴﻢ ﻭﺍﻟﻐﺚ ﻭﺍﻟﺴﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻋﺔ؛ ﻭﻣﻦ ﺃﻣﺜﻠﺔ ﺫﻟﻚ: (ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ) ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﺰﻣﺨﺸﺮﻱ ﻣﻌﺘﺰﻟﻲ ﺟﻠﺪ، ﻣﺎﻛﺮٌ ﺩﺍﻫﻴﺔٌ، ﻳﺪُﺱُّ ﺍﻋﺘﺰﺍﻟﻴﺎﺗﻪ؛ ﻓﺎﻟﻤُﺘﻤﻜِّﻦُ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻳﺴﺘﻔﻴﺪُ ﻣﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻭﺍﻟﺒﻼﻏﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻳﻊ ﻭﺍﻟﻠﻐﺔ ﻭﺍﻟﻨﺤﻮ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﻋﻨﺪﻩ ﺍﻟﻘﺪﺭﺓُ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ .
٣ - ﺍﻟﺜﺎﻟﺚُ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﻟﻴﺎً ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ، ﺻﺎﺣﺒﻪُ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻣُﺆﻟﻔﻪ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻭﻟﻜﻦَّ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻳﺆﻟﻒُ ﻣﺜﻼً ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ، ﻓﻲ ﺍﻟﻄﻬﺎﺭﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻮﻉ، ﻭﻻ ﻳﺪﺱُّ، ﻳﻘﻮﻝ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﺷﺄﻥ، ﺃﻧﺎ ﺃﺅﻟﻒ ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﻤﻌﻴﺸﺔ، ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﺮﺯﻕ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺄﻟﻴﻒ، ﺃﻭ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﺜﻼً ﻛﺘﺎﺑﺎً ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻳﺮﺗﺒﻪ ﻭﻳﻨﻈﻢُ ﺃﺑﻮﺍﺑﻪُ ﻭﻳُﺮﻗﻤﻪ ﻓﻘﻂ، ﻭﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻦ ﺑﺪﻋﺘﻪ، ﻓﻬﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻴﻪ ﻋﺎﻟﻢٌ ﻣﺘﻤﻜﻦٌ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ، ﻭﻗﺎﻝ ﻟﻚ :ﺇﻥ ﻛﺘﺎﺏ ﻓُﻼﻥ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻃﺎﻟﻌﺘﻪُ ﻭﺧﺒَﺮﺗﻪُ، ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻔﻼﻧﻲ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺑِﺪَﻋِِﻪِ، ﻓﻼ ﻣﺎﻧﻊ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺀﺗﻪ.

“বিদ‘আতীদের বই পড়ার ৩ টি বিধান রয়েছে। যথা:

১. যে বই বিদ‘আতে পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো সুন্নাহ নেই, যেমন: কুলাইমীর “উসূলুল কাফি” এবং রাফিদ্বী শী‘আদের অন্যান্য বই। এমন বই পড়া হারাম। তবে কোনো সামর্থবান ‘আলিম যদি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের বই দিয়ে রদ করতে চান (তাহলে জায়েজ)। তোমরা কি শুনেছ? শর্ত হলো দুটি: ক. সামর্থবান ‘আলিম হতে হবে খ. আর তিনি তাদের বই দিয়ে তাদেরকে রদ করার ইচ্ছা করবেন।

২. যে বই সুন্নাহ ও বিদ‘আহ মিশ্রিত। এই বইও সামর্থবান ‘আলিম ছাড়া অন্য কারও জন্য পড়া জায়েজ নয়; এমন ‘আলিম যিনি সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এমন বইয়ের উদাহরণ হলো— যামাখশারীর “তাফসীরে কাশশাফ”। যামাখশারী ছিল কট্টর মু‘তাযিলী, আর ধূর্ত কূটকৌশলী, সে তার মু‘তাযিলী ‘আক্বীদাহ বইয়ে প্রবিষ্ট করত। ‘আলিমদের মধ্যে যারা সামর্থবান, তাঁরা এই বইয়ে উল্লিখিত শব্দার্থ, অলঙ্কারশাস্ত্র, আরবি ভাষার চমৎকার বাক্যবিন্যাস-শাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, নাহূশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন; যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা থাকে।

৩. যে বই বিদ‘আত থেকে মুক্ত। বইয়ের লেখক বিদ‘আতী, কিন্তু বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। যেমন কেউ ফিক্বহশাস্ত্রের বই লিখেছে, পবিত্রতা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বই লিখেছে এবং বইয়ে কোনো বিদ‘আত প্রবিষ্ট করেনি। সে বলে যে, “আমার (অন্য) কোনো ব্যাপার নেই, আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য বই লিখি, আমি এই বইয়ের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করি।” সে হয়তো কোনো হাদীসগ্রন্থের অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করে, হাদীসের নম্বর দেয় এবং তাতে কোনো বিদ‘আত প্রবেশ করায় না। যদি কোনো সামর্থবান ‘আলিম এই বই পড়ার পরামর্শ দেন, তাহলে আমিও তোমাকে তা অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিই। আর সেই ‘আলিম তোমাকে বলেন যে, “অমুক লোকের এই বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। সেটা আমি পড়েছি এবং নিরীক্ষা করেছি। অমুক বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই।” তাহলে এই বই পড়ায় কোনো আপত্তি নেই।” [দ্র.: www.ajurry.com/Kotob-Manhag.htm; গৃহীত: https://tinyurl.com/yb9qkdzx (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট থেকে)]

·
আমি (সংকলক) বলছি, শেষোক্ত ফাতওয়াটির মধ্যে বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ার ব্যাপারে তাফসীলী তথা সুবিস্তারিত হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি পাঠক মহোদয়কে উক্ত ফাতওয়ার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে অনুরোধ করছি।

আর বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়াকে বৈধ করার জন্য বিদ‘আতীরা বেশ কিছু সংশয় পেশ করে থাকে। পরবর্তী পোস্টে এ সংক্রান্ত সংশয়গুলোর প্রামাণ্য জবাব দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং অনুসন্ধিৎসু পাঠক মহোদয়কে আমি পরবর্তী নিবন্ধটিও পড়ার অনুরোধ করব। বারাকাল্লাহু ফীকুম।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari

পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত



▌পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।

যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “হক এসেছে, আর বাতিল অপসৃত হয়েছে; বাতিল তো অপসৃত হওয়ারই ছিল।” [সূরাহ বানী ইসরাঈল: ৮১]

শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “তুমি হক (সত্য) বল, যদিও তা তিক্ত হয়।” [সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩; সনদ: সাহীহ লি গাইরিহী] অন্যত্র বলেছেন, “তুমি হক বল, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।” [সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৯১১; সাহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯; সনদ: সাহীহ]

·
পর সমাচার এই যে, বর্তমানে সালাফী কমিউনিটিতে একটি ফিতনার সয়লাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সালাফীদের একটি বড়ো অংশকে দেখা যাচ্ছে, তারা খারিজী ও ইখওয়ানী দা‘ঈদের বইপুস্তক পড়ছে, তাদেরকে ‘শাইখ’ আখ্যা দিচ্ছে এবং যাচ্ছেতাইভাবে প্রোমোট করছে। এমনকি দু পয়সা লাভের আশায় কিংবা সালাফী লাইব্রেরিয়ানদের মানহাজগত বিভ্রান্তি থাকার কারণে সালাফী লাইব্রেরিগুলোতেও ইখওয়ানী-খারিজীদের বইপুস্তক দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

আমি প্রায়শই বলি, ‘ইলম নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যা পাই তাই খাই’—নীতি অবলম্বন করা যাবে না। মানহাজ ঠিক রাখতে হলে এই ভুয়া নীতিকে কবর দিতে হবে। আমি ভাইদেরকে এসব বিষয়ে বরাবরই সতর্ক করে থাকি। আজকেও সতর্ক করার জন্যই লিখছি। সম্প্রতি যেসব ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈর বইপুস্তক বাংলায় অনূদিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী অন্যতম। বঙ্গীয় খারিজীরা তার বইয়ের জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। আর কিছু সালাফীকেও ত্বারীফীর বইপুস্তক পড়তে এবং তাকে প্রোমোট করতে দেখা যাচ্ছে।

তাই আমাদের জানা দরকার যে, এই ত্বারীফী সালাফী দা‘ঈ কিনা, তার কাছ থেকে দ্বীন শেখা এবং তাকে প্রোমোট করা নিরাপদ কিনা। আমি বলছি, সালাফী ‘উলামা ও ত্বালাবাহ’র নিকট ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী দা‘ঈ। তার কতিপয় বিভ্রান্তির বিবরণ নিম্নে আলোচিত হলো।

·
১. পথভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী (হাদাহুল্লাহ) একজন ক্বা‘আদী খারিজী (সিটিং খারিজী; অর্থাৎ যে নিজে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে না, কিন্তু বিদ্রোহের উসকানি দেয়) এবং জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সাপোর্টার। সে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে আল-কায়েদার খারিজী সন্ত্রাসী উসামাহ বিন লাদেনের ভুলকে সম্মানিত সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ভুলের সাথে তুলনা দিয়েছে এবং বিন লাদেনের জন্য প্রকাশ্যে কল্যাণের দু‘আ করেছে! [পোস্টের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

·
২. ভ্রষ্ট ত্বারীফী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পক্ষ নিতে গিয়ে সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ ‘আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে এবং তাঁর জঘন্য নিন্দা করেছে। সম্মানিত গ্র্যান্ড মুফতী আইএস এবং আল-কায়েদার ব্যাপারে বলেছেন, “তারা খারিজী সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায় ইসলামের ওপর নেই।” তো গ্র্যান্ড মুফতীর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ত্বারীফী সাহেব তার টুইটার অ্যাকাউন্টের এক টুইটে লিখেছে,

لا تؤثر أقوال العلماء في تصويب الأخطاء إذا كانوا يقوون عند أخطاء الضعفاء ويضعفون عند أخطاء الأقوياء، فالنفوس تزهد بالحق إن فقدت إنصاف أهله.

“ভুলকে সঠিক গণ্য করার জন্য তুমি ‘উলামাদের কথাকে প্রাধান্য দিয়ো না। যখন সেই ‘উলামারা দুর্বলদের ভুলের ব্যাপারে বলশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়, আর শক্তিশালীদের ভুলের সামনে দুর্বল হয়ে যায়। আসলে মানুষ তখন হককে প্রত্যাখ্যান করে, যখন সে হকপন্থির ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হয়।” [টুইটের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

উক্ত কথার মাধ্যমে ত্বারীফী গ্র্যান্ড মুফতীর প্রতি যেসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেগুলো হলো—(১) তিনি দুর্বলদের সামনে শক্তিশালী, যেহেতু জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিয়েছেন (২) তিনি শক্তিশালীদের সামনে দুর্বল, যেহেতু তিনি ত্বারীফী ও তার সমমনা খারিজীদের মতো মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন না, (৩) তিনি বেইনসাফি কাজ করছেন, যেহেতু তিনি পূর্বোক্ত দুটি অভিযোগে অভিযুক্ত।

·
৩. এতদ্ব্যতীত ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী সিরিয়ার দুর্যোগময় বিপ্লবকে ‘আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত’ আখ্যা দিয়েছে। সে বলেছে,

الثورة السورية: أرى أنها نعمة من الله، وما يحدث في سوريا هو خير عظيم.

“সিরীয় বিপ্লবকে আমি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত মনে করি। সিরিয়ায় যা ঘটছে, সেটা হলো মহাকল্যাণ।” [দ্র.: https://youtu.be/zIujJs1Cst4 (ভিডিয়ো ক্লিপ)]

যে বিপ্লবের কারণে মুসলিমরা করুণভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে, সেটা নাকি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত। ইয়া সুবহানাল্লাহ, এটা তো বিকারগ্রস্ত লোকের কথা! শাসকের বিরুদ্ধে উরাধুরা বিদ্রোহকে সমর্থন করতে গিয়ে এদের মস্তিষ্কের এ কী বিকৃতি ঘটেছে! আল্লাহ আমাদেরকে এদের বিকৃত চেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

·
৪. ভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী বিদ‘আতী ফিরক্বাহ মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিয়ে নিজের ব্যক্ত করা সুন্নী মানহাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে তার একটি বক্তব্যে জবরদখলকারী শাসকের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র প্রকৃত মানহাজ বর্ণনা করে বলেছে,

...ومنها الغلب، أن يغلب بسيفه على البلد وهو في ذاته مسلم، وإن قتل من الناس حتى تغلب وتمكن، فلا يجوز الخروج عليه. ومن خرج عليه لسبب فسقه فهو ظالم لنفسه.

“কোনো মুসলিম যদি তরবারি দিয়ে কোনো রাষ্ট্র দখল করে নেয় এবং জবরদখল করে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়, তাহলে সে যদি মানুষ হত্যা করে থাকে, তবুও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। আর যে ব্যক্তি ওই শাসকের পাপাচারিতার কারণে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সে হলো নিজের আত্মার ওপর জুলুমকারী।” [দ্র.: https://youtu.be/aRqTuKlMIfw (ভিডিয়ো ক্লিপ); ২০ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত]

এরপর যখন মিশরে সিসি সাহেব সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইখওয়ানী প্রেসিডেন্ট মুরসীকে হটিয়ে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো, তখন ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বক্তব্যের সুর পাল্টে গেল। মিশরে সিসির সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে ত্বারীফী তার এক ফাতওয়া’য় বলেছে, إن الحاكم الموجود في مصر أنه ليس حاكما متغلبا، وإنما ظالم من جهة الحقيقة “মিশরের বর্তমান শাসক জবরদখলকারী শাসক নয়! প্রকৃতপক্ষে সে একজন জালিম।” [প্রাগুক্ত; ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত]

অর্থাৎ, ত্বারীফী মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিতে গিয়ে সিসিকে ‘জবরদখলকারী শাসক’ হিসেবে মানছে না, যে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা না-জায়েজ। উল্লেখ্য যে, আরও অনেক ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈ ও তাদের সমর্থক সিসির অভ্যুত্থানকে ‘জবরদখল’ বা ‘বিপ্লব’ হিসেবে দেখেনি, বরং সেটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি কেউ কেউ তো ওই সেনা অভ্যুত্থানকে ‘রিদ্দাহ’ (মুরতাদ হয়ে যাওয়া) আখ্যা দিয়েছে! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।

·
৫. ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী হলো তাকফীরী। ত্বারীফী সাহেব মিশরের সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর তারিখের টুইটে বলেছে,

من عرف الفريقين بمصر (القالب) و (المقلوب) ومسافة كل واحد منهم من الحق والباطل، عرف أن ما أحدث إنما هو صراع بين إسلام وكفر ونفاق وإيمان.

“যে ব্যক্তি মিশরের দুটো দল সম্পর্কে তথা পরিবর্তনকারী দল ও পরিবর্তিত দল সম্পর্কে এবং হক ও বাতিল থেকে এদের মধ্যকার ব্যবধান সম্পর্কে অবগত হয়েছে, সে জেনেছে যে, মিশরে যা সংঘটিত হয়েছে, তা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই এবং নিফাক্ব ও ইমানের লড়াই!” [দ্র.: https://youtu.be/VTh_r0qW2VI (ডকুমেন্টারি ভিডিয়ো ক্লিপ); ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে উক্ত টুইটের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে]

চিন্তা করেন! মুসলিম ব্রাদারহুড—যারা কিনা ক্ষমতায় এসে আল্লাহ’র আইন বাস্তবায়ন করা তো দূরের কথা, নানারকম অপব্যাখ্যা করে আল্লাহ’র আইনকে পরিত্যাগ করেছে—যে সিসির সাথে লড়াই করেছে, সেটা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই! তার মানে সিসি ও তার সাঙ্গপাঙ্গ সব কাফিরের দল! না‘ঊযু বিল্লাহি মিন যালিক।

·
ত্বারীফীর এসব ভয়ংকর বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির কারণে সালাফী ‘উলামা ও সিনিয়র ত্বালিবগণ ত্বারীফীকে পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী আখ্যা দিয়েছেন। এরকম কয়েকটি জারাহ (ক্রিটিসিজম/কাউকে মন্দ আখ্যা দেওয়া) নিম্নে উল্লিখিত হলো।

১. মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাসজিদে নাবাউয়ী’র সম্মানিত মুদার্রিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

ليست العبرة بالتلميع، بل أنا أقول: القاعدة، إذا وجدت الرجل يلمَّع من الحزبيين، ويبرز على أنه الحافظ والمحدث والفقيه والإمام، فاعلم أنه منحرف، مثل الددو ومثل الطريفي ومثل العريفي. هؤلاء منحرفون على منهج الإخوان، عندهم إنحرافات عقدية وشرعية. لكن هؤلاء يلمَّعون—المحدث الكبير، يحفظ الكتب الستة. فإذا وجدت التلميع من الحزبيين ومن وسائل الإعلام اليوم، فاعلم أن وراء الأكمة ما وراء.

“কাউকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করার কোনো মূল্য নেই। আমি একটি মূলনীতি বলে দিচ্ছি। যখন তুমি দেখবে, কোনো লোককে দলবাজ হিযবীদের পক্ষ থেকে খুব চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এবং বলা হচ্ছে, ইনি একজন হাফিয, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ, কিংবা ইমাম; তখন তুমি জানবে যে, ওই লোক একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী। যেমন: মুহাম্মাদ হাসান ওয়ালিদ আদ-দিদূ, ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, মুহাম্মাদ আল-‘আরীফী প্রমুখ। এরা মুসলিম ব্রাদারহুডের মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত ভ্রষ্ট বিপথগামী। এদের রয়েছে ‘আক্বীদাহ ও শরিয়তগত বিভ্রান্তি। কিন্তু এদেরকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করে বলা হয়—‘ইনি অনেক বড়ো মুহাদ্দিস, ইনার সম্পূর্ণ কুতুবে সিত্তাহ মুখস্থ!’ অতএব তুমি যখন হিযবীদের পক্ষ থেকে অথবা বিভিন্ন মিডিয়ার পক্ষ থেকে এরকম চমকপ্রদ উপস্থাপনা লক্ষ করবে, তখন জানবে যে, এর নেপথ্যে কিছু একটা লুকায়িত আছে।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y2qwprtc (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট লিংক)]

·
২. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী থেকে সতর্ক করেছেন।

ইমাম সালিহ আল-ফাওযানকে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هنالك بعض الشباب يطعنون في ولاة الأمور، ويقولون: إن ولاة الأمور سجنوا العلماء والصالحين ويقصدون بالعلماء عبد العزيز الطريفي وسليمان العلوان وخالد الراشد.

“এখানে কিছু যুবক শাসকের নিন্দা-সমালোচনা করে। তারা বলে, শাসকরা ‘উলামা ও ভালো ব্যক্তিদের জেলবন্দি করেছে। তারা ‘উলামা বলার মাধ্যমে উদ্দেশ্য করে—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, সুলাইমান আল-‘আলাওয়ান, খালিদ আর-রাশিদ প্রমুখকে।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন, أتركهم، لا تدخل فيهم، ولا تجلس معهم “তুমি তাদেরকে পরিত্যাগ করো, তাদের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, এবং তাদের সাথে ওঠাবসা কোরো না।”

এরপর প্রশ্নকারী পুনরায় বলেন, “কিছু মানুষ এদের (উক্ত দা‘ঈদের) ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হচ্ছে।” তখন ইমাম ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) তাদের ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেন। [দ্র.: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=18595 (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
সুপ্রিয় পাঠক, আপনি দেখলেন, সালাফিয়্যাহ’র ইমাম ‘আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) ত্বারীফীর ভক্তদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ সে একজন খারিজী দা‘ঈ। সুতরাং এই খারিজী দা‘ঈকে যারা প্রোমোট করবে এবং তার গুণকীর্তন করবে, আমাদের জন্য তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। যে ব্যক্তিই ত্বারীফীর গুণকীর্তন করবে এবং তাকে প্রোমোট করবে, তার মানহাজের ব্যাপারে সন্দেহ করুন। সে যেই হোক না কেন, যে পর্যায়ের দা‘ঈ বা বক্তাই হোক না কেন, তাকে বর্জন করতে হবে।

আমরা ইতঃপূর্বে জনৈক সৌদি প্রবাসী বাঙালি দা‘ঈকে দেখেছি, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই ত্বারীফীর গুণগান গাইতে। এ ধরনের ভুঁইফোঁড় দা‘ঈদেরকেও প্রোমোট করা থেকে বিরত থাকুন। কথা স্পষ্ট। মানহাজের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এসব ভণ্ডদের বই ইনোসেন্ট সালাফীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ কামাচ্ছেন, তারাও কেয়ামত দিবসে আল্লাহ’র কাছে জবাবদিহিতা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। ওই শুনুন, মহান আল্লাহ’র হুঁশিয়ারি—“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (অর্থাৎ, সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর কতই না মন্দ সে আবাসস্থল!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিদ‘আতী দা‘ঈদের বিকৃত দা‘ওয়াত থেকে হেফাজত করুন এবং যথাযথভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

·
রচনাকাল—
দুপুর ২ টা ২১ মিনিট।
বৃহস্পতিবার।
১৩ই যুলহাজ্ব, ১৪৪০ হিজরী।
৩১শে শ্রাবণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
১৫ই আগস্ট, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...