Thursday, August 22, 2019

বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি



▌বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

বিদ‘আতীদের রদ (রিফিউট) করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। সালাফদের যুগ থেকেই বিদ‘আতীদের রদ করার এই শার‘ঈ নীতি চলে আসছে। আমরা প্রথমে এটা প্রমাণ করব যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মূলনীতি। তারপর পরবর্তীতে বিদ‘আতীদের রদ করার আবশ্যকীয়তা এবং তাদের ব্যাপারে চুপ থাকার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

বিদ‘আতীদের রদকারীদের ব্যাপারে নাবী ﷺ প্রশংসামূলক কথা বলেছেন। ইবরাহীম বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-‘উযরী কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, يَحْمِلُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُوْلُه يَنْفُوْنَ عَنْهُ تَحْرِيْفَ الْغَالِيْنَ وَانْتَحَالَ الْمُبْطِلِيْنَ وَتَأْوِيْلَ الْجَاهِلِيْنَ “প্রত্যেক আগত দলের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহ’র) এই ‘ইলম গ্রহণ করবে। আর তারাই কিতাব ও সুন্নাহ’র ‘ইলমের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কৃত রদবদল, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার এবং জাহিল ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন করবে।” [বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২১৪৩৯; ইবনু বাত্বত্বাহ, ইবানাতুল কুবরা, হা/৩৪; মিশকাত, হা/২৪৮; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

·
আমরা যখন বিদ‘আতীদের রদ করতে যাই, তখন কতিপয় ব্যক্তির কথায় খুবই আশ্চর্য হই, যখন তাঁরা বলেন যে, বিদ‘আতীদের রদ করা ঠিক নয়, কারণ এতে মনোমালিন্য ও বিভেদ সৃষ্টি হয়। কী ধরনের ইবলিসি কথা! এটা তো ওই কাফিরদের কথা, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ “তারা চায় যে, তুমি যদি আপসকামী হও, তবে তারাও আপসকারী হবে।” [সূরাহ ক্বালাম: ৯]

যারা বিদ‘আতীদের রদ করার বিরুদ্ধে কথা বলে, নিঃসন্দেহে তারা জেনে অথবা না জেনে দ্বীনকে ধ্বংস করার প্রোপাগান্ডায় শামিল হয়। কারণ যদি রদ না থাকত, তাহলে যার যা ইচ্ছা সে তাই বলে বেড়াত।

·
আর তাইতো শরিয়ত বিরোধীদের রদ করার এই মহান নীতি স্বয়ং নাবী ﷺ শিখিয়ে গেছেন। সাহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، أَنَّ رَجُلاً، خَطَبَ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ مَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشِدَ وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَقَدْ غَوَى. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ  ﷺ‏:‏ بِئْسَ الْخَطِيبُ أَنْتَ،‏ قُلْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ‘আদী বিন হাতিম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর সামনে ভাষণ দিল। সে বলল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল, সে সঠিক পথ পেল, আর যে ব্যক্তি তাঁদের অবাধ্যচরণ করল, সে পথভ্রষ্ট হলো।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তুমি এক নিকৃষ্ট বক্তা, তুমি এভাবে বল, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৭০; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১৩]

ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “ওই বক্তাকে রাসূল ﷺ দীর্ঘ খুতবাহ দেওয়ার কারণে ভর্ৎসনা করেছিলেন।” [শারহু মুসলিম, হা/৮৭০ – এর ব্যাখ্যা]

·
সাহাবীগণের কর্মেও আমরা এই নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই। সাহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে এসেছে, عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أُمِّ الْحَكَمِ يَخْطُبُ قَاعِدًا فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا الْخَبِيثِ يَخْطُبُ قَاعِدًا وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى: ‏وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا‏ কা‘ব বিন উজরাহ কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি মাসজিদে প্রবেশ করলেন, আর তখন ‘আব্দুর রাহমান ইবনুল হাকাম বসা অবস্থায় খুতবা দিচ্ছিলেন। কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “তোমরা এই খবিসের প্রতি লক্ষ করো, সে বসে বসে খুতবা দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘এবং যখন তারা দেখল ব্যবসা ও কৌতুকের বিষয়, তখন তারা (খুতবা চলাকালীন সময়ে) তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল।’ (সূরাহ জুমু‘আহ: ১১)” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৬৪; জুমু‘আহ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১১]

এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, কলেবর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এখানেই ক্ষান্ত হচ্ছি।

·
প্রিয় পাঠক, সাধারণভাবে বিদ‘আতীদের রদ করা নসিহতের অন্তর্ভুক্ত। যে নসিহতের ব্যাপারে নাবী ﷺ বলেছেন, الدِّينُ النَّصِيحَةُ،‏ قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ‏: ‏لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ “সদুপদেশ (নসিহত) দেয়াই দ্বীন। আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞেস করলাম, ‘কার জন্য সদুপদেশ?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য’।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫৫; ‘ইমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২৩]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,

ﻻﻳﺤﻞ ﺃﻥ ﺗﻜﺘﻢ ﺍﻟﻨّﺼﻴﺤﺔ ﺃﺣﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺑﺮّﻫﻢ ﻭﻓﺎﺟﺮﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﺪّﻳﻦ، ﻓﻤﻦ ﻛﺘﻢ، ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻘﺪ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻭﻣﻦ ﻏﺶّ ﺍﻟﺪّﻳﻦ ﻓﻘﺪ ﺧﺎﻥ ﺍﻟﻠّﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ.

“পুণ্যবান হোক বা পাপাচারী হোক, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো মুসলিমের কাছে নসিহত তথা সদুপদেশ গোপন করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি তা গোপন করল, সে মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজি করল। আর যে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিল, সে মূলত দ্বীনকেই ধোঁকা দিল। আর যে দ্বীনকে ধোঁকা দিল, সে তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের সাথে খেয়ানত করল।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৯৩; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
মুমিনদের প্রতি নসিহত কেমন হওয়া উচিত তার বর্ণনা দিতে গিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,

أن تُرشِدهم إلي الصواب، وتحذّرهم من الأخطاء، و أن تأمر بالمعروف وتنهي عن المنكر، و أن تعلِّم الجاهلَ وتذكِّر الغافلَ.

“তুমি তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে, ভুল থেকে সতর্ক করবে। তুমি সৎকাজের আদেশ দিবে, আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। অজ্ঞকে শিক্ষা দিবে, আর গাফিলকে উপদেশ দিবে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১২; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] হাদীসশাস্ত্রের হাফিয শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ ইসমা‘ঈল ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল-আনসারী আল-হারাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ)’র [মৃত: ৪৮১ হি.] জীবনচরিতে লিখেছেন,

قال ابن طاهر سمعته—يعني أبا إسماعيل الـهروي—يقول: عُرِضتُ على السيف خمسَ مراتٍ لا يُقال لـي: ارجع عن مذهبك، ولكن يُقال لـي: اسكتْ عمَّنْ خالفكَ ، فأقول: لا أسكت.

“ইবনু ত্বাহির বলেছেন, আমি আবূ ইসমা‘ঈল আল-হারাউয়ীকে বলতে শুনেছি, “আমাকে পাঁচবার তরবারির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে বলা হয়নি যে, তুমি তোমার মতাদর্শ থেকে ফিরে আস। বরং আমাকে বলা হয়েছে, তুমি তোমার (আদর্শ) বিরোধীদের ব্যাপারে চুপ থাক। আমি বলেছি, আমি চুপ থাকব না”।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৫০৯; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

আহলুস সুন্নাহ’র এই মহান ইমামের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তিনি তরবারির সামনেও আহলুস সুন্নাহ’র এই মূলনীতির ব্যাপারে বিদ‘আতীদের সাথে আপস করেননি। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ।

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هل الرد على المخالف وبيان خطأ المخطئين من أصول السنة؟

“শরিয়তবিরোধীকে রদ করা এবং (দ্বীনের ব্যাপারে) ভুলকারীদের ভুল বর্ণনা করা কি সুন্নাহ’র মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,

نعم، الرد على المخالف هذا من طريقة أهل السنة والجماعة.

“হ্যাঁ, শরিয়তবিরোধীকে রদ করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ত্বরীক্বাহ’র (আদর্শের) অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=kRVQsNqCYzM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের রদ করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি। পরন্তু বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার শামিল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

الرادّ على أهل البدع مجاهد، حتى كان يحيى بن يحيى يقول: الذب عن السنّة أفضل الجهاد.

“বিদ‘আতীদের রদকারী একজন মুজাহিদ। এমনকি ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেছেন, ‘সুন্নাহকে ডিফেন্ড করা সর্বোত্তম জিহাদ’।” [নাক্বদুল মানত্বিক্ব, পৃষ্ঠা: ১২; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল বিদা‘; পৃষ্ঠা: ১০৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬২ হি./১৯৪৩ খ্রি.] বলেছেন,

ﺍﻟﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﺣﻤﺎﻳﺔ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺼﻖ ﺑﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﺘﺄﻟﻴﻒ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻃﺒﻌﻬﺎ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺣﻖ ﻭﺩﻋﻮﺓ ﻟﻠﺤﻖ ﻭﺟﻬﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻤﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻥ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻧﺸﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﻴﻦ ﺃﻣﺮ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻓﺈﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻄﺄ.

“বিদ‘আতীদের রদ করা আল্লাহ’র পথে জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। এটি নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে শরিয়তকে হেফাজত করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করা, তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করাটাই হক এবং এটিই হকের দা‘ওয়াত ও আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, বিদ‘আতীদের রদ করে গ্রন্থ মুদ্রণ ও প্রকাশ করা নবউদ্ভাবিত বিষয়, সে অবশ্যই ভুলের উপর রয়েছে।” [আর-রিয়াদ্ব পত্রিকা; শুক্রবার, ৪ঠা মুহাররাম, ১৪২৪ হিজরি; সংখ্যা: ১২৬৭৪; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

منهج أهل السنة والجماعة في الرد على أهل البدع:
منهجهم في ذلك مبني على الكتاب والسنة، وهو المنهج المقنع المفحم، حيث يوردون شبه المبتدعة وينقضونها. ويستدلون بالكتاب والسنة على وجوب التمسك بالسنن، والنهي عن البدع والمحدثات، وقد ألفوا المؤلفات الكثيرة في ذلك، وردوا في كتب العقائد على الشيعة والخوارج والجهمية والمعتزلة والأشاعرة في مقالاتهم المبتدعة في أصول الإيمان والعقيدة، وألفوا كتبا خاصة في ذلك، كما ألف الإمام أحمد كتاب الرد على الجهمية، وألف غيره من الأئمة في ذلك كعثمان بن سعيد الدارمي، وكما في شيخ الإسلام ابن تيمية وتلميذهابن القيم والشيخ محمد بن عبد الوهاب وغيرهم من الرد على تلك الفرق وعلى القبورية والصوفية.
وأما الكتب الخاصة في الرد على أهل البدع فهي كثيرة منها على سبيل المثال من الكتب القديمة:
١ - كتاب الاعتصام للإمام الشاطبي،
٢ - كتاب اقتضاء الصراط المستقيم لشيخ الإسلام إبن تيمية فقد استغرق الرد على المبتدعة جزءا كبيرا منه،
٣ - كتاب إنكار الحوادث والبدع لابن وضاح،
٤ - كتاب الحوادث والبدع للطرطوشي،
٥ - كتاب الباعث على إنكار البدع والحوادث لأبي شامة.
ومن الكتب العصرية:
١ - كتاب الإبداع في مضار الابتداع للشيخ علي محفوظ.
٢ - كتاب السنن والمبتدعات المتعلقة بالأذكار والصلوات. للشيخ محمد بن أحمد الشقيري الحوامدي.
٣ - رسالة التحذير من البدع للشيخ عبد العزيز بن باز.
ولا يزال علماء المسلمين- والحمد لله- ينكرون البدع ويردون على المبتدعة من خلال الصحف والمجلات والإذاعات وخطب الجمع والندوات والمحاضرات، مما له كبير الأثر في توعية المسلمين والقضاء على البدع وقمع المبتدعين.

“বিদ‘আতীদের রদ করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ:

তাদের মানহাজ কিতাব ও সুন্নাহ’র উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি একটি নির্বাককারী সন্তোষজনক মানহাজ। তারা বিদ‘আতীদের শুবহাত (সংশয়) নিয়ে আসে এবং তা খণ্ডন করে। সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার আবশ্যকীয়তা এবং বিদ‘আতের নিষিদ্ধতার ব্যাপারে তারা কিতাব ও সুন্নাহ থেকে দলিল গ্রহণ করে। তারা এ ব্যাপারে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছে। তারা ‘আক্বীদাহর গ্রন্থগুলোতে শিয়া, খারিজী, জাহমী, মু‘তাযিলী ও আশ‘আরী সম্প্রদায়কে রদ করেছে, ইমান ও ‘আক্বীদাহর মূলনীতিতে তাদের বিদ‘আতী কথাবার্তার ব্যাপারে। তারা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট গ্রন্থও রচনা করেছে। যেমন ইমাম আহমাদ লিখেছেন “কিতাবুর রাদ্দি ‘আলাল জাহমিয়্যাহ (জাহমীদের খণ্ডন)”। তিনি ছাড়াও অন্য ইমামগণ এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছেন, যেমন ‘উসমান বিন সা‘ঈদ আদ-দারিমী। অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, তাঁর ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়্যিম, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং অন্যান্যদের গ্রন্থে ওই দলগুলোর এবং কবরপূজারী ও সূফীদের রদ আছে।

পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের রদ করার ব্যাপারে অনেক খাস গ্রন্থ আছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু প্রাচীন গ্রন্থের নাম:
১. ইমাম শাত্বিবী প্রণীত “আল-ই‘তিসাম”।
২. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ প্রণীত “ইক্বতিদ্বাউস সিরাত্বিল মুস্তাক্বীম”। এই গ্রন্থের একটি বড়ো অংশে বিদ‘আতীদের রদ রয়েছে।
৩. ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ প্রণীত “ইনকারুল হাওয়াদিসি ওয়াল বিদা‘”।
৪. আত্ব-ত্বারতূশী প্রণীত “আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘”।
৫. আবূ শামাহ প্রণীত “আল-বা‘ইস ‘আলা ইনকারিল বিদা‘ই ওয়াল হাওয়াদিস”।

কিছু আধুনিক গ্রন্থের নাম:
১. শাইখ ‘আলী মাহফূয প্রণীত “আল-ইবদা‘ ফী মাদ্বার্রিল ইবতিদা‘”।
২. শাইখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আশ-শুক্বাইরী আল-হাওয়ামিদী প্রণীত “আস-সুনানু ওয়াল মুবতাদা‘আত আল-মুতা‘আল্লিক্বাতু বিল আযকারি ওয়াস সালাওয়াত”।
৩. শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায প্রণীত “আত-তাহযীরু মিনাল বিদা‘”।

আল-হামদুলিল্লাহ, মুসলিমদের ‘আলিমগণ এখনও পত্রপত্রিকা, রেডিয়ো, জুমু‘আহর খুতবা, সভা-সেমিনার ও লেকচারের মাধ্যমে বিদ‘আতের সমালোচনা এবং বিদ‘আতীদের রদ করে চলেছেন। মুসলিমদের সচেতনকরণে এবং বিদ‘আত ও বিদ‘আতীদের বিনাশে এর অনেক বড়ো প্রভাব রয়েছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ‘আক্বীদাতুত তাওহীদ; পৃষ্ঠা: ১৯১-১৯২; মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, উম্মতকে যারা রদবিমুখ করে অসৎ ফায়দা আহরণ করতে চাইছে, আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়াত দেন এবং তাদের তৈরিকৃত সংশয় থেকে আমাদের হেফাজত করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

No comments:

Post a Comment

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...