Thursday, August 15, 2019

বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি



▌বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি অন্যতম মূলনীতি

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

আমাদের অগ্রবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ ইমামদের সর্বজনগৃহীত একটি নীতি ছিল—বিদ‘আতীদের সাথে কেউ যেন ওঠাবসা বা চলাফেরা বা মেলামেশা না করে। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একটি অন্যতম মূলনীতি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের শ্রদ্ধেয় ইমাম, শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আহলুস সুন্নাহ’র মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,

أصول السنة عندنا : ترك الخصومات والجلوس مع أصحاب الأهواء.

“আমাদের নিকট সুন্নাহ’র মূলনীতি হচ্ছে, বিদ‘আতীদের সাথে তর্কবিতর্ক এবং (তাদের সাথে) ওঠাবসা বর্জন করা।” [ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ), উসূলুস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩; তারিখ ও প্রকাশনার বিহীন; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

·
এই মূলনীতি গৃহীত হয়েছে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীবর্গ এবং তাঁদের পরবর্তী অনুসারীগণ কর্তৃক অবলম্বিত মানহাজ থেকে।

আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “এক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, ‘সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।’ এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নাবী ﷺ আনন্দ সহকারে তার সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথেই আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন।’ তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “হে ‘আইশাহ, তুমি কখনো আমাকে অশালীন দেখেছ? কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬০৩২; সাহীহ মুসলিম, হা/২৫৯১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ, মাদীনাহ’র শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুফতী, ইমাম সুলাইমান বিন ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বানূ তামীম গোত্রে সাবীগ বিন ‘ইসল নামে এক ব্যক্তি ছিল। একবার সে মাদীনাহ’য় আগমন করে। তার কাছে বেশ কিছু গ্রন্থ ছিল। সে লোকদেরকে কুরআনের মুতাশাবিহ তথা দ্ব্যর্থবোধক আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল। ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাকে ডেকে পাঠান। আর তার জন্য তিনি খেজুর গাছের (কাঁদির) অনেকগুলো শুকনো দণ্ড প্রস্তুত করেন। সে যখন তাঁর নিকটে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করে, তখন তিনি বলেন, ‘তুমি কে?’ সে বলে, ‘আমি আল্লাহ’র গোলাম সাবীগ।’ ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আর আমি হলাম আল্লাহ’র গোলাম ‘উমার।’ এই বলে তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ওই প্রস্তুতকৃত শুকনো খর্জূর দণ্ডগুলো দিয়ে পিটাতে লাগলেন। তিনি তাকে মারতেই থাকলেন, এমনকি মারতে মারতে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন, আর ওই ব্যক্তির মুখ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। সে বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন, যথেষ্ট হয়েছে। আল্লাহ’র কসম, আমার মাথায় যা (ভ্রান্ত বিশ্বাস) ছিল তা উধাও হয়ে গেছে’।” [ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৩৮; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬০; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]

ইবনু যুর‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সাবীগ বিন ‘ইসলকে বসরায় দেখেছি। সে যেন খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত এক উট, সে (লোকদের) বৈঠকগুলোতে যেত। যখনই সে কোনো বৈঠকে বসত, তখনই ওই বৈঠকের লোকেরা উঠে চলে যেত এবং তাকে বর্জন করত। সে যদি এমন সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বসত যারা তাকে চিনে না, তাহলে অপর বৈঠকের লোকেরা তাদের ডাক দিয়ে বলত, আমীরুল মু’মিনীনের কড়া নির্দেশ আছে (অর্থাৎ, ওই লোককে পরিত্যাগ করো)।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ১১৪০; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬১]

·
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,

من أحب أن يكرم دينه فليعتزل مجالسة أصحاب الأهواء، فإن مجالستهم ألصق من الجرب.

“যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সম্মান করতে পছন্দ করে, সে যেন বিদ‘আতীদের সংস্রব বর্জন করে। কেননা বিদ‘আতীদের সংস্রব খোস-পাঁচড়ার চেয়েও অধিক সংক্রামক।” [ইমাম ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহয়ু ‘আনহা; আসার নং: ১৩১; পৃষ্ঠা: ৯৬; মাকতাবাতু ইবনি তাইমিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন,

لا تجالس أهل الأهواء فإن مجالستهم ممرضة للقلوب.

“তুমি বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা তাদের সাথে ওঠাবসা অন্তরে রোগ সৃষ্টি করে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৭১]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,

لا تجلس مع صاحب بدعة، فإني أخاف أن ينزل عليك اللعنة.

“তুমি বিদ‘আতীর সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমার উপর লা‘নাত বর্ষণ করা হবে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৪১; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৬২]

ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] আরও বলেছেন,

ومن جلس مع صاحب بدعة فاحذره، ومن جلس مع صاحب البدعة لم يعط الحكمة، وأحب أن يكون بيني وبين صاحب بدعة حصن من حديد، آكل مع اليهودي والنصراني أحب إلي من أن آكل عند صاحب بدعة.

“যে ব্যক্তি বিদ‘আতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি থেকে সাবধান থাক। যে ব্যক্তি কোনো বিদ‘আতীর সাথে বসে, তাকে হিকমাহ (প্রজ্ঞা) দেওয়া হয় না। আমি তো এটা পছন্দ করি যে, আমার ও বিদ‘আতীর মধ্যে একটি লোহার কেল্লা (স্থাপিত) হবে। কোনো বিদ‘আতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টানের নিকট খাওয়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।” [আবূ নু‘আইম (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১০৩; ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ১১৪৯ (শব্দগুচ্ছ লালাকাঈ’র)]

·
শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ নু‘আইম ফাদ্বল বিন ‘আমর আত তাইমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৮ হি.] বলেছেন,

دخل الثوري يوم الجمعة فإذا الحسن بن صالح بن حي يصلي، فقال: نعوذ بالله من خشوع النفاق وأخذ بنعليه فتحول.

“এক জুমু‘আহর দিন সুফইয়ান সাওরী [মৃত: ১৬১ হি.] মাসজিদে প্রবেশ করলেন। সে সময় (বিদ‘আতী) হাসান বিন সালিহ বিন হাই সালাত পড়ছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, ‘আমরা আল্লাহ’র কাছে মুনাফিক্বের বিনয়নম্রতা থেকে পানাহ চাচ্ছি।’ তারপর তিনি তাঁর জুতো নিয়ে ফিরে গেলেন।” [তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৮০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৬৩]

·
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] কে বলা হলো,

إن رجلاً يقول: أنا أجالس أهل السنة وأجالس أهل البدع، فقال الأوزاعي: هذا رجل يريد أن يساوي بين الحق والباطل.

“এক ব্যক্তি বলছে, ‘আমি আহলুস সুন্নাহ’র সাথেও ওঠাবসা করি, আবার বিদ‘আতীদের সাথেও ওঠাবসা করি।’ তখন আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, ‘এই লোক হক এবং বাতিলকে সমান করতে চাচ্ছে’।” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০]

এই আসারটি বর্ণনা করার পর ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] বলেছেন, “আওযা‘ঈ সত্যই বলেছেন। আমি বলছি, এই ব্যক্তি হক ও বাতিলের এবং ঈমান ও কুফরের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নয়। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং নাবী ﷺ থেকে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ “যখন তারা মু’মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানদের (সর্দারদের) সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি’।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৪)” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০ – এর টীকা]

·
❏ বিদ‘আতীদের সাথে মেলামেশার কুফল:

ইমাম ইয়া‘কূব বিন শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৬২ হি.] বলেছেন, “বানূ সাদওয়াস গোত্রে ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে নাবী ﷺ এর একদল সাহাবীকে পেয়েছিল। এতৎসত্ত্বেও সে খারিজী মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিল। এর কারণ সম্পর্কে আমাদের কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তা হলো, তার এক চাচাতো বোন ছিল, যে খারিজী মতাদর্শ লালন করত। ‘ইমরান সেই মেয়েকে বিয়ে করে, তাকে তার ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে ফেরানোর জন্য। কিন্তু ওই মেয়েই তাকে নিজের মতাদর্শে দীক্ষিত করে ফেলে।” [তারীখু দিমাশক্ব; খণ্ড: ৪৩; পৃষ্ঠা: ৪৯০; তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ৩২৩; গৃহীত: শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ), লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর মিনাল ক্বাওলিল মা’সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ১৮৮; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

পরবর্তীতে এই খারিজী ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান ইসলামের চতুর্থ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকারী ‘আব্দুর রহমান বিন মুলজিম আল-খারিজী’র প্রশংসা করে দীর্ঘ কবিতা রচনা করে। আল্লাহ’র কাছে যাবতীয় বিদ‘আত ও তার বাহকদের সংস্পর্শ থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
ভারতবর্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, “এই সাদৃশ্য স্থাপনের মধ্যে বেশ কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ সকল বিদ‘আত এবং তা পালনকারী বিদ‘আতীদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। যেহেতু জলাতঙ্ক রোগ সংক্রামক ব্যাধির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জলাতঙ্ক রোগের উৎস রয়েছে কুকুরের মধ্যে। সেই কুকুর যখন কাউকে কামড় দেয়, তখন সেও তার মতোই (ব্যাধি বহনকারী) হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে এই রোগ থেকে না মরে নিস্তার পায় না। একইভাবে একজন বিদ‘আতী যখন কারও কাছে নিজের (ভ্রান্ত) মতাদর্শ এবং সংশয় পরিবেশন করে, তখন খুব কম সময়ই সে ওই (বিদ‘আতীর) দুর্যোগ থেকে নিস্তার পায়। বরং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) হয় সে ওই বিদ‘আতীর সাথে তার (সংশয়পূর্ণ) মতাদর্শে পতিত হয় এবং তার দলেরই একজন সদস্য বনে যায়। নতুবা ওই বিদ‘আতী এই ব্যক্তির অন্তরে সংশয় প্রোথিত করে; যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু সক্ষম হয় না।

এটা পাপাচারিতার বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাপচারী ব্যক্তি তার সাথের ব্যক্তিটির অনিষ্ট করে না এবং স্বীয় পাপাচারিতায় তাকে প্রবিষ্ট করে না। তবে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্ঠতা ও মেলামেশা থাকলে এবং তার পাপকাজে বারবার উপস্থিত হলে ভিন্ন কথা। (সালাফদের থেকে বর্ণিত) আসারসমূহে যে বর্ণনা এসেছে তা এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে ওঠাবসা করতে ও তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন, এবং বিদ‘আতীদের সাথে যারা কথা বলে তাদের সাথেও কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আর এ ব্যাপারে তাঁরা কঠোরতা অবলম্বন করেছেন।” [ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭৮; গৃহীত: শাইখ খালিদ আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ১০২-১০৩; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মহান মূলনীতি। তাই আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে উক্ত মূলনীতিটি হেফাজত করার মাধ্যমে সালাফী মানহাজের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান



▌বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

অনেক অজ্ঞ ও ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়েন এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনেন। আমি মনে করি, তাঁরা এই কাজের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেননি এবং এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেননি। কিছু ভাই আবার ইবলিসী ধোঁকায় পতিত হওয়ার কারণে মনে করেন—‘আমি তো আর বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে সব কথা গ্রহণ করছি না, আমি স্রেফ হকটাই নিচ্ছি, আর বাতিলটা বর্জন করছি!’ তাই এই বিপজ্জনক কর্মের ব্যাপারে সালাফ ও খালাফদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বক্তব্য পেশ করা জরুরি মনে করছি। আর উপরিউক্ত ভ্রান্ত ধারণার ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ।

·
আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত যে, ‘ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আল্লাহ’র কিতাব, রাসূলের ﷺ সুন্নাহ এবং সালাফদের সমঝই যথেষ্ট। ১২শ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাবের সুযোগ্য পৌত্র ইমাম ‘আব্দুর রাহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৮৫ হি./১৮৬৯ খ্রি.] বলেছেন,

ومن له نهمة في طلب الأدلة على الحق، ففي كتاب الله، وسنّة رسوله، ما يكفي ويشفي؛ وهما سلاح كل موحد ومثبت، لكن كتب أهل السنّة تزيد الراغب وتعينه على الفهم وعندكم من مصنفات شيخنا -رحمه الله- ما يكفي مع التأمل؛ فيجب عليكم هجر أهل البدع، والإنكار عليهم.

“হকের দলিল অন্বেষণে যার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ’র কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহতেই যথেষ্ট ও সন্তোষজনক উপাদান রয়েছে। এই দুটি বস্তু (কিতাব ও সুন্নাহ) প্রত্যেক তাওহীদবাদী ও জ্ঞানীর অস্ত্র। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ’র গ্রন্থসমূহ আগ্রহী ব্যক্তিকে পাথেয় যোগায় এবং (কিতাব ও সুন্নাহ) বুঝতে সাহায্য করে। তোমাদের কাছে আমাদের শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র গ্রন্থসমূহ রয়েছে, যা গবেষণার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তোমাদের জন্য বিদ‘আতীদের বর্জন করা এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২১১; গৃহীত: শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

·
স্বয়ং রাসূল ﷺ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, অথচ সেগুলো বিলকুল হকমুক্ত নয়। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَتى رَسُولَ اللهِ ﷺ بِنُسْخَةٍ مِنْ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنْ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يَقْرَأُ وَوَجْهُ رَسُولِ اللهِ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلى وَجْهِ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ غَضَبِ اللهِ وَغَضَبِ رَسُولِه رَضِينَا بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي.

“একদা ‘উমার ইবনুল খাত্বত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল! এটা হলো তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ থাকলেন। এরপর ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। (এদিকে রাগে) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হতে লাগল। আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘উমার, তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিবর্ণ মুখমণ্ডল দেখছ না? ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ করে) বললেন, ‘আমি আল্লাহ’র শাস্তি ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ‘রব’ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের ওপর এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ ﷺ এর ওপর সন্তুষ্ট আছি।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “আল্লাহ’র কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি (তাওরাতের নাবী স্বয়ং) মূসা (‘আলাইহিস সালাম) তোমাদের মধ্যে থাকতেন, আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে এবং আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা (‘আলাইহিস সালাম) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নুবুওয়্যাতের যুগ পেতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনিও আমার অনুসরণ করতেন।” [দারিমী, হা/৪৪৯; মিশকাত, হা/১৯৪; সনদ: হাসান]

·
এমনকি কতিপয় ইমাম বিদ‘আতীদের বইপুস্তক না পড়ার উপর ইজমা‘ নক্বল (বর্ণনা) করেছেন। তাঁরা বলেননি যে, তোমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের কথাবার্তা শুনে তা থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো।

ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩১১ হি.] কে আল্লাহ’র নাম ও গুণাবলির সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

 بدعة ابتدعوها، لم يكن أئمة المسلمين وأرباب المذاهب وأئمة الدين، مثل مالك، وسفيان، والأوزاعي، والشافعي، وأحمد، وإسحـاق، ويحيى بن يحيى، وابن المبارك، ومحمد بن يحيى، وأبي حنيفة، ومحمد بن الحسن، وأبي يوسف: يتكلمون في ذلك، وينهون عن الخوض فيه، ويدلّون أصحابهم على الكتاب والسنّة، فإياك والخوض فيه والنظر في كتبهم بحال.

“এটি একটি নবআবিষ্কৃত বিষয় (বিদ‘আত), যা তারা আবিষ্কার করেছে। মুসলিমদের ইমামগণ, মাযহাবসমূহের প্রধানগণ ও দ্বীনের ইমামগণ যেমন: মালিক, সুফইয়ান, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া, ইবনুল মুবারাক, মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া, আবূ হানীফাহ, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আবূ ইউসুফ প্রমুখ এই বিষয়ে সমালোচনা করেননি। তাঁরা এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা বলা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তাঁদের সাথীদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে পথনির্দেশ করেছেন। সুতরাং এ ব্যাপারে নিরর্থক কথাবার্তা থেকে দূরে থাক এবং সাথে সাথে তাদের বইপুস্তক পড়া থেকেও দূরে থাক।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইস্তিক্বামাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৮; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৫-৬৬]

ইমাম আবূ মানসূর মা‘মার বিন আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪১৮ হি.] বলেছেন,

ثم من السنة: ترك الرأي والقياس في الدين، وترك الجدال والخصومات، وترك مفاتحة القدرية وأصحاب الكلام وترك النظر في كتب الكلام وكتب النجوم، فهذه السنة التي اجتمعت عليها الأمة.

“অতঃপর সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে দ্বীনের ক্ষেত্রে রায় ও ক্বিয়াস বর্জন করা, তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা, ক্বাদারিয়্যাহ ও যুক্তিবিদ সম্প্রদায়ের মতবাদের আলোচনার শুরু না করা এবং কালামশাস্ত্র (তর্কশাস্ত্র) ও জ্যোতিষশাস্ত্রের বইপুস্তক পাঠ বর্জন করা। এটি এমন সুন্নাহ, যে ব্যাপারে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।” [ইমাম আবুল ক্বাসিম আল-আসবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৬]

·
এতদ্ব্যতীত ইসলামের ইমামগণ বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথাবার্তা শোনা বর্জন করাকে সুন্নাহ’র মূলনীতি সাব্যস্ত করেছেন এবং এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নসিহত করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম মুওয়াফফাক্বুদ দীন ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم، وكل محدثة في الدين بدعة.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হল বিদ‘আত।” [ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪]

ইমাম ইবনু মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৮৪ হি.] বলেছেন,

ذكر الشيخ موفق الدين –رحمه الله– في المنع من النظر في كتب المبتدعة، قال: كان السلف ينهون عن مجالسة أهل البدع، والنظر في كتبهم والإستماع لكلامهم.

“শাইখ মুওয়াফফাক্বুদ দীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পাঠের নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে বলেছেন, সালাফগণ বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা করতে, তাদের বইপুস্তক পড়তে এবং তাদের কথাবার্তা শুনতে নিষেধ করতেন।” [আল-আদাবুশ শারী‘আহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৩২; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] যখন এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন যে, “প্রত্যেক যে বিষয় আল্লাহ’র অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করে এবং আল্লাহ’র আনুগত্য থেকে নিষেধ করে, সেটাই আল্লাহ’র অবাধ্যতার শামিল”, তখন তিনি বলেছেন,

ومن هذا الباب سماع كلام أهل البدع، والنظر في كتبهم لمن يضره ذلك ويدعوه إلى سبيلهم وإلى معصية الله.

“এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ওই ব্যক্তি কর্তৃক বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শ্রবণ এবং তাদের বইপুস্তক পঠন, যা (শ্রবণ ও পঠন) তার ক্ষতি করে এবং তাকে তাদের (বিদ‘আতীদের) পথের দিকে ও আল্লাহ’র অবাধ্যতার দিকে আহ্বান করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৩৩৬; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪-৭৫]

ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,

ومن السنة هجران أهل البدع ومباينتهم وترك الجدال والخصومات في الدين، وكل محدثة في الدين بدعة، وترك النظر في كتب المبتدعة، والإصغاء إلى كلامهم في أصول الدين وفروعه، كالرافضة والخوارج والجهمية والقدرية والمرجئة والكرامية والمعتزلة، فهذه فرق الضلالة وطرائق البدع.

“সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা; আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদ‘আত। এছাড়াও বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে তাদের কথাবার্তা শোনা বাদ দেওয়া সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রাফিদ্বী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, জাহমী সম্প্রদায়, ক্বাদারী সম্প্রদায়, মুরজিয়া সম্প্রদায়, কাররামী সম্প্রদায়, মু‘তাযিলী সম্প্রদায়; এগুলো পথভ্রষ্ট ফিরক্বাহ এবং বিদ‘আতী ত্বরীক্বাহ।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান (রাহিমাহুল্লাহ), ক্বাতফুস সামার ফী ‘আক্বীদাতি আহলিল আসার; পৃষ্ঠা: ১৫৭; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]

·
বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে সালাফদের কঠোরতা:

ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বিদ‘আতীদের কথাবার্তা শোনার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। নিম্নোক্ত আসার তিনটি বিদ‘আতীদের ব্যাপারে তাঁদের কঠোর অবস্থান এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র শিথিল না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করবে, ইনশাআল্লাহ।

১. আসমা বিন ‘উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دخل رجلان من أصحاب الأهواء على ابن سيرين فقالا: يا أبا بكر نحدثك بحديث؟ قال: لا، قالا: فنقرأ عليك آية من كتاب الله؟ قال: لا، لتقومان عني أو لأقومن. قال: فخرجا، فقال بعض القوم: يا أبا بكر، ما كان عليك أن يقرآ عليك آية من كتاب الله تعالى؟ قال: إني خشيت أن يقرآ علي آية فيحرفانها، فيقر ذلك في قلبي.

“দুজন বিদ‘আতী ইবনু সীরীনের [মৃত: ১১০ হি.] নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবূ বাকার, আমরা আপনার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে চলে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন প্রস্থান করল। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আবূ বাকার, আপনার কী (ক্ষতি) হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ তিনি (ইবনু সীরীন) বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি যে, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি (তাহরীফ) সাধন করবে, ফলে তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে’।” [দারিমী, হা/৪১১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৯৮; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪২; আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ; আসার নং: ৬২]

২. ইমাম সাল্লাম বিন আবূ মুত্বী‘ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৩ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أن رجلا من أهل الأهواء قال لأيوب: يا أبا بكر، أسألك عن كلمة؟ قال: فولى وهو يشير بأصبعه ولا نصف كلمة. وأشار لنا سعيد بخنصره اليمنى.

“একজন বিদ‘আতী আইয়ূব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩১ হি.] কে বলল, হে আবূ বাকার, আমি আপনাকে একটি শব্দ সম্পর্কে প্রশ্ন করি? বর্ণনাকারী বলছেন, তখন তিনি দ্রুত প্রস্থান করলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁর আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলছিলেন, আধা শব্দও নয়। বর্ণনকারী সা‘ঈদ আমাদেরকে তাঁর ডান কনিষ্ঠা দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন।” [দারিমী, হা/৪১২; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০২; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৯১]

৩. শাইখুল ইসলাম ইমাম মা‘মার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৩ হি.] বলেছেন,

كان ابن طاوس جالسًا فجاء رجل من المعتزلة فجعل يتكلم، قال فأدخل ابن طاوس أصبعيه في أذنيه، قال: وقال لإبنه: أي بني، أدخل أصبعيك في أذنيك وتشدد، ولا تسمع من كلامه شيئًا. قال معمر: يعني أن القلب ضعيف.

“একদা ইবনু ত্বাউস [মৃত: ১৩২ হি.] উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক মু‘তাযিলী এসে কথা বলা শুরু করল। বর্ণনকারী বলছেন, তখন ইবনু ত্বাউস তাঁর দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করালেন এবং তাঁর ছেলেকে বললেন, “হে বৎস, তুমি তোমার দু’কানে দুই আঙুল প্রবেশ করাও এবং চেপে ধরে থাকো, তুমি তাঁর সামান্য কথাও শুনো না।” মা‘মার (তাঁর এই কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে) বলেছেন, ‘অর্থাৎ অন্তর খুবই দুর্বল (আমরা তার কথা শুনলে আমাদের অন্তরে তা গেঁথে যেতে পারে)’।” [ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪০০; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪৮]

প্রিয় পাঠক, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। সালাফগণ বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের কথা শুনেননি। যারা ছিলেন উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁরাই বিদ‘আতীদের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন, তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? এরপরেও কি আমাদের এটা বলা সমীচীন হবে যে, আমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে শুধু হকটাই নিব, বাতিলটা নিব না?!

·
বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের ফাতাওয়া:

বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ‘আলিমদের অনেক ফাতওয়া রয়েছে। আমরা এখানে আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণের ৭ টি ফাতওয়া উপস্থাপন করলাম।

·
১. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

ومن هجر أهل البدع: ترك النظر في كتبهم خوفًا من الفتنة بها، أو ترويجها بين الناس، فالابتعاد عن مواطن الضلال واجب لقوله ﷺ، في الدجال: «مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ» رواه أبو داود قال الألباني: وأسناده صحيح.
لكن إن كان الغرض من النظر في كتبهم معرفة بدعهم للرد عليها فلا بأس بذلك إن كان عنده من العقيدة الصحيحة ما يتحصن به وكان قادرًا على الرد عليهم، بل ربما كان واجبًا؛ لأن رد البدعة واجب وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب.

“বিদ‘আতীদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাহগ্রস্ত হওয়া এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। ভ্রষ্টতার জায়গাসমূহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নাবী ﷺ দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহ’র কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে দাজ্জাল কর্তৃক তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তার (দাজ্জালের) অনুসরণ করবে।” আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেছেন, ‘হাদীসটির সনদ সাহীহ (বিশুদ্ধ)’।

কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদ‘আতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদ‘আতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
২. বিদ‘আতীদের দারসসমূহে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র সুস্পষ্ট ফাতওয়া—
السؤال: ما حكم حضور دروس أهل البدع؟
الجواب: إذا كان يحضر دروس أهل البدعة من أجل أن يناقشهم ويبين لهم الحق والصواب فهو واجب. وإذا كان يريد أن يتعلم منهم فلا يتعلم منهم، حتى لو كان في غير العقيدة، حتى لو كان يدرسهم في النحو أو البلاغة. لا تـقـربهم؛ لأنهـم قد يدسون السم في الدسم، وأيضاً إذا حضرتهم ربما يغتر بك أحد من الناس؛ يقول هؤلاء ليس في حضور دروسهم بأس.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের দারসে উপস্থিত হওয়ার বিধান কী?”

উত্তর: “কেউ যদি বিদ‘আতীদের সাথে (‘ইলমী) বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের কাছে হক ও সঠিক বিষয় তুলে ধরার জন্য তাদের দারসে উপস্থিত হয়, তবে তা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করতে চায়, তবে সে যেন তাদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন না করে। যদিও তা ‘আক্বীদাহ ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের জ্ঞান হয়। যদিও সে তাদের কাছে নাহূ (আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র) ও বালাগাত (অলংকারশাস্ত্র) অধ্যয়ন করে। তুমি তাদের নিকটবর্তী হবে না। কেননা তারা তেলের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। [অর্থাৎ, ক্ষতিকর বিষয় আকর্ষণীয় মোড়কে উপস্থাপন করে। – সংকলক।] অনুরূপভাবে তুমি যখন তাদের কাছে উপস্থিত হবে, তখন হয়তো তোমার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি ধোঁকায় পতিত হবে। ফলে বলবে, তাদের দারসে উপস্থিত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), লিক্বাআতুল বাবিল মাফতূহ; ১৬২ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=82749.]

·
৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: ما هو القول الحق في قراءة كتب المبتدعة، وسماع أشرطتهم؟
الجواب: لا يجوز قراءة كتب المبتدعة ولا سماع أشرطتهم إلا لمن يريد أن يرد علهم ويبين ضلالهم.

প্রশ্ন: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে হক কথা কী?”
উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
৪. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত আরেকটি ফাতওয়া—

السؤال: هل يجوز طلب العلم من أهل البدعة وقراءة كتبهم لعدم وجود كتب أهل السنة في بلدي؟
الجواب: الحمد الله، أهل السنة موجودون وكتبهم موجودة، لكن يحتاج [كلام غير واضح] إلى طلب وحرص، ولا تعتمد على أهل البدع وكتب المبتدعة، لا تعتمد عليها، لأنها كالغذاء المسموم القاتل، نعم.

প্রশ্ন: “আমার দেশে আহলুস সুন্নাহ’র বইপুস্তক না থাকার কারণে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা এবং তাদের বইপুস্তক পড়া কি বৈধ হবে?”

উত্তর: “আল-হামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ বিদ্যমান রয়েছে এবং তাদের বইপুস্তকও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অন্বেষণ ও আগ্রহের প্রয়োজন আছে। তুমি বিদ‘আতীদের উপর এবং তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। তুমি তাদের বইপুস্তকের উপর নির্ভর কোরো না। কেননা সেগুলো প্রাণঘাতী বিষমিশ্রিত খাদ্যের মতো।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/1512.]

·
৫. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: كثير من طلاب العلم يقول: إن الحق يأخذ من كلام كل أحد حتى من المبتدع، فيجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم.
الجواب: ما يجوز القراءة في كتب أهل البدع والإستماع لأشرطتهم، إلا لبيان ما عندهم من الضلال، حتى يحذر ذلك.

প্রশ্ন: “অসংখ্য ত্বালিবুল ‘ইলম বলছে, নিশ্চয় হক প্রত্যেকের কথা থেকে গ্রহণ করতে হবে, যদিও সে বিদ‘আতী হয়। সুতরাং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ।”

উত্তর: “বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য জায়েজ, যাতে করে তা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক থাকা যায়।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=p5G4gb0oEJM (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
৬. সৌদি আরবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আবূ মুহাম্মাদ যাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি.] বলেছেন,

وقد حذر سلفنا الصالح رضوان الله عليهم ـ من النظر في كتب المبتدعة لما يترتب على ذلك من المفاسد العظيمة فإن القلوب ضعيفة والشبه خطافة ومما يؤسف له أن كثيرا من الشباب اليوم يقرؤون في كتب أهل الأهواء والضلال ويربون أنفسهم عليها ثم يعودون حربا على السنة وأهلها وحربا على منهج السلف الحق ، فإنا لله وإنا إليه راجعون.

“আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করেছেন, এর ফলে অপরিহার্যভাবে বড়ো বড়ো ক্ষতি ও অপকারিতা আসার কারণে। কেননা অন্তরসমূহ দুর্বল, আর সংশয়সমূহ (অন্তরস্থ ঈমানকে) লুণ্ঠনকারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—বর্তমান যুগে অধিকাংশ যুবক পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ছে এবং সেসবের উপর ভিত্তি করে নিজেদের গড়ে তুলছে। তারপর তারা সুন্নাহ ও তার ধারকদের বিরুদ্ধে এবং সালাফদের হক মানহাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন।” [‘আল্লামাহ যাইদ আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফ ফিত তা‘আমুলি মা‘আ কুতুবি আহলিল বিদা‘”– গ্রন্থ দ্রষ্টব্য; গৃহীত: sahab.net]

·
৭. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] বিদ‘আতীদের কিতাব পড়ার তিনটি বিধান বর্ণনা করে বলেছেন,

ﺇﻥَّ ﺍﻟﻨَّﻈﺮ ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﺍﻻﻧﺤﺮﺍﻑ ﻟﻪ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﺣﻜﺎﻡ:
١ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺑﺪﻋﺔً ﺧﺎﻟﺼﺎً ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺍﻟﺴُﻨَّﺔ، ﻭﻣﺜﺎﻝ ﺫﻟﻚ: (ﺃﺻﻮﻝ ﺍﻟﻜﺎﻓﻲ) ﻟﻠﻜُﻠَﻴْﻤﻲّ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺮﺍﻓﻀﺔ، ﻓﻬﺬﺍ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻨﻈﺮ ﻓﻴﻪ ﻭﻣﻄﺎﻟﻌﺘﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣﺘﻤﻜﻦ ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮﺩَّ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ .
ﺳﻤﻌﺘﻢ؟ ﺷﺮﻃﻴﻦ: ١ - ﻋﺎﻟﻢ ﻣﺘﻤﻜﻦ ٢ - ﻳﺮﻳﺪ ﺍﻟﺮَّﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﺘﺒﻬﻢ.
٢ - ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﻠﻴﻄﺎً ﻓﻴﻪ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻭﺑﺪﻋﺔ؛ ﻓﻬﺬﺍ ﻻ ﻳﺤﻞ ﺍﻟﻨﻈﺮُ ﻓﻴﻪ ﺇﻻَّ ﻟﻌﺎﻟﻢٍ ﻣُﺘﻤﻜﻦ ﻗﺎﺩﺭٌ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﺴﻘﻴﻢ ﻭﺍﻟﻐﺚ ﻭﺍﻟﺴﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻋﺔ؛ ﻭﻣﻦ ﺃﻣﺜﻠﺔ ﺫﻟﻚ: (ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ) ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻜﺸَّﺎﻑ ﻟﻠﺰﻣﺨﺸﺮﻱ، ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﺰﻣﺨﺸﺮﻱ ﻣﻌﺘﺰﻟﻲ ﺟﻠﺪ، ﻣﺎﻛﺮٌ ﺩﺍﻫﻴﺔٌ، ﻳﺪُﺱُّ ﺍﻋﺘﺰﺍﻟﻴﺎﺗﻪ؛ ﻓﺎﻟﻤُﺘﻤﻜِّﻦُ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻳﺴﺘﻔﻴﺪُ ﻣﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻭﺍﻟﺒﻼﻏﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻳﻊ ﻭﺍﻟﻠﻐﺔ ﻭﺍﻟﻨﺤﻮ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﻋﻨﺪﻩ ﺍﻟﻘﺪﺭﺓُ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻤﻴﻴﺰ .
٣ - ﺍﻟﺜﺎﻟﺚُ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﻟﻴﺎً ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ، ﺻﺎﺣﺒﻪُ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻣُﺆﻟﻔﻪ ﻣﺒﺘﺪﻉ ﻭﻟﻜﻦَّ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻳﺆﻟﻒُ ﻣﺜﻼً ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻘﻪ، ﻓﻲ ﺍﻟﻄﻬﺎﺭﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻮﻉ، ﻭﻻ ﻳﺪﺱُّ، ﻳﻘﻮﻝ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﺷﺄﻥ، ﺃﻧﺎ ﺃﺅﻟﻒ ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﻤﻌﻴﺸﺔ، ﺃﻃﻠﺐ ﺍﻟﺮﺯﻕ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺄﻟﻴﻒ، ﺃﻭ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﺜﻼً ﻛﺘﺎﺑﺎً ﻣﻦ ﻛُﺘُﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻳﺮﺗﺒﻪ ﻭﻳﻨﻈﻢُ ﺃﺑﻮﺍﺑﻪُ ﻭﻳُﺮﻗﻤﻪ ﻓﻘﻂ، ﻭﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻦ ﺑﺪﻋﺘﻪ، ﻓﻬﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻴﻪ ﻋﺎﻟﻢٌ ﻣﺘﻤﻜﻦٌ ﺃﺭﺷﺪﻙ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ، ﻭﻗﺎﻝ ﻟﻚ :ﺇﻥ ﻛﺘﺎﺏ ﻓُﻼﻥ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺑﺪﻋﺔ، ﻃﺎﻟﻌﺘﻪُ ﻭﺧﺒَﺮﺗﻪُ، ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻔﻼﻧﻲ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀٌ ﻣﻦ ﺑِﺪَﻋِِﻪِ، ﻓﻼ ﻣﺎﻧﻊ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺀﺗﻪ.

“বিদ‘আতীদের বই পড়ার ৩ টি বিধান রয়েছে। যথা:

১. যে বই বিদ‘আতে পরিপূর্ণ এবং তাতে কোনো সুন্নাহ নেই, যেমন: কুলাইমীর “উসূলুল কাফি” এবং রাফিদ্বী শী‘আদের অন্যান্য বই। এমন বই পড়া হারাম। তবে কোনো সামর্থবান ‘আলিম যদি কোনো সম্প্রদায়কে তাদের বই দিয়ে রদ করতে চান (তাহলে জায়েজ)। তোমরা কি শুনেছ? শর্ত হলো দুটি: ক. সামর্থবান ‘আলিম হতে হবে খ. আর তিনি তাদের বই দিয়ে তাদেরকে রদ করার ইচ্ছা করবেন।

২. যে বই সুন্নাহ ও বিদ‘আহ মিশ্রিত। এই বইও সামর্থবান ‘আলিম ছাড়া অন্য কারও জন্য পড়া জায়েজ নয়; এমন ‘আলিম যিনি সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। এমন বইয়ের উদাহরণ হলো— যামাখশারীর “তাফসীরে কাশশাফ”। যামাখশারী ছিল কট্টর মু‘তাযিলী, আর ধূর্ত কূটকৌশলী, সে তার মু‘তাযিলী ‘আক্বীদাহ বইয়ে প্রবিষ্ট করত। ‘আলিমদের মধ্যে যারা সামর্থবান, তাঁরা এই বইয়ে উল্লিখিত শব্দার্থ, অলঙ্কারশাস্ত্র, আরবি ভাষার চমৎকার বাক্যবিন্যাস-শাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, নাহূশাস্ত্র প্রভৃতি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন; যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ, ভালো-মন্দ, সুন্নাহ-বিদ‘আহ প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করার সক্ষমতা থাকে।

৩. যে বই বিদ‘আত থেকে মুক্ত। বইয়ের লেখক বিদ‘আতী, কিন্তু বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। যেমন কেউ ফিক্বহশাস্ত্রের বই লিখেছে, পবিত্রতা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে বই লিখেছে এবং বইয়ে কোনো বিদ‘আত প্রবিষ্ট করেনি। সে বলে যে, “আমার (অন্য) কোনো ব্যাপার নেই, আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য বই লিখি, আমি এই বইয়ের মাধ্যমে রিজিক অন্বেষণ করি।” সে হয়তো কোনো হাদীসগ্রন্থের অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত করে, হাদীসের নম্বর দেয় এবং তাতে কোনো বিদ‘আত প্রবেশ করায় না। যদি কোনো সামর্থবান ‘আলিম এই বই পড়ার পরামর্শ দেন, তাহলে আমিও তোমাকে তা অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিই। আর সেই ‘আলিম তোমাকে বলেন যে, “অমুক লোকের এই বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই। সেটা আমি পড়েছি এবং নিরীক্ষা করেছি। অমুক বইয়ে কোনো বিদ‘আত নেই।” তাহলে এই বই পড়ায় কোনো আপত্তি নেই।” [দ্র.: www.ajurry.com/Kotob-Manhag.htm; গৃহীত: https://tinyurl.com/yb9qkdzx (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট থেকে)]

·
আমি (সংকলক) বলছি, শেষোক্ত ফাতওয়াটির মধ্যে বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ার ব্যাপারে তাফসীলী তথা সুবিস্তারিত হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি পাঠক মহোদয়কে উক্ত ফাতওয়ার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে অনুরোধ করছি।

আর বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়াকে বৈধ করার জন্য বিদ‘আতীরা বেশ কিছু সংশয় পেশ করে থাকে। পরবর্তী পোস্টে এ সংক্রান্ত সংশয়গুলোর প্রামাণ্য জবাব দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং অনুসন্ধিৎসু পাঠক মহোদয়কে আমি পরবর্তী নিবন্ধটিও পড়ার অনুরোধ করব। বারাকাল্লাহু ফীকুম।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari

পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত



▌পথভ্রষ্ট দা‘ঈ—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।

যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “হক এসেছে, আর বাতিল অপসৃত হয়েছে; বাতিল তো অপসৃত হওয়ারই ছিল।” [সূরাহ বানী ইসরাঈল: ৮১]

শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “তুমি হক (সত্য) বল, যদিও তা তিক্ত হয়।” [সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩; সনদ: সাহীহ লি গাইরিহী] অন্যত্র বলেছেন, “তুমি হক বল, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।” [সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৯১১; সাহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯; সনদ: সাহীহ]

·
পর সমাচার এই যে, বর্তমানে সালাফী কমিউনিটিতে একটি ফিতনার সয়লাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সালাফীদের একটি বড়ো অংশকে দেখা যাচ্ছে, তারা খারিজী ও ইখওয়ানী দা‘ঈদের বইপুস্তক পড়ছে, তাদেরকে ‘শাইখ’ আখ্যা দিচ্ছে এবং যাচ্ছেতাইভাবে প্রোমোট করছে। এমনকি দু পয়সা লাভের আশায় কিংবা সালাফী লাইব্রেরিয়ানদের মানহাজগত বিভ্রান্তি থাকার কারণে সালাফী লাইব্রেরিগুলোতেও ইখওয়ানী-খারিজীদের বইপুস্তক দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।

আমি প্রায়শই বলি, ‘ইলম নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যা পাই তাই খাই’—নীতি অবলম্বন করা যাবে না। মানহাজ ঠিক রাখতে হলে এই ভুয়া নীতিকে কবর দিতে হবে। আমি ভাইদেরকে এসব বিষয়ে বরাবরই সতর্ক করে থাকি। আজকেও সতর্ক করার জন্যই লিখছি। সম্প্রতি যেসব ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈর বইপুস্তক বাংলায় অনূদিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী অন্যতম। বঙ্গীয় খারিজীরা তার বইয়ের জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। আর কিছু সালাফীকেও ত্বারীফীর বইপুস্তক পড়তে এবং তাকে প্রোমোট করতে দেখা যাচ্ছে।

তাই আমাদের জানা দরকার যে, এই ত্বারীফী সালাফী দা‘ঈ কিনা, তার কাছ থেকে দ্বীন শেখা এবং তাকে প্রোমোট করা নিরাপদ কিনা। আমি বলছি, সালাফী ‘উলামা ও ত্বালাবাহ’র নিকট ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী দা‘ঈ। তার কতিপয় বিভ্রান্তির বিবরণ নিম্নে আলোচিত হলো।

·
১. পথভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী (হাদাহুল্লাহ) একজন ক্বা‘আদী খারিজী (সিটিং খারিজী; অর্থাৎ যে নিজে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে না, কিন্তু বিদ্রোহের উসকানি দেয়) এবং জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সাপোর্টার। সে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে আল-কায়েদার খারিজী সন্ত্রাসী উসামাহ বিন লাদেনের ভুলকে সম্মানিত সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ভুলের সাথে তুলনা দিয়েছে এবং বিন লাদেনের জন্য প্রকাশ্যে কল্যাণের দু‘আ করেছে! [পোস্টের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

·
২. ভ্রষ্ট ত্বারীফী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পক্ষ নিতে গিয়ে সৌদি আরবের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ ‘আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছে এবং তাঁর জঘন্য নিন্দা করেছে। সম্মানিত গ্র্যান্ড মুফতী আইএস এবং আল-কায়েদার ব্যাপারে বলেছেন, “তারা খারিজী সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায় ইসলামের ওপর নেই।” তো গ্র্যান্ড মুফতীর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ত্বারীফী সাহেব তার টুইটার অ্যাকাউন্টের এক টুইটে লিখেছে,

لا تؤثر أقوال العلماء في تصويب الأخطاء إذا كانوا يقوون عند أخطاء الضعفاء ويضعفون عند أخطاء الأقوياء، فالنفوس تزهد بالحق إن فقدت إنصاف أهله.

“ভুলকে সঠিক গণ্য করার জন্য তুমি ‘উলামাদের কথাকে প্রাধান্য দিয়ো না। যখন সেই ‘উলামারা দুর্বলদের ভুলের ব্যাপারে বলশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়, আর শক্তিশালীদের ভুলের সামনে দুর্বল হয়ে যায়। আসলে মানুষ তখন হককে প্রত্যাখ্যান করে, যখন সে হকপন্থির ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হয়।” [টুইটের স্ক্রিনশট সংরক্ষিত আছে; এই লিংক থেকে স্ক্রিনশট দেখে আসতে পারেন: http://muslims11.blogspot.com/2014/08/blog-post_23.html?m=1.]

উক্ত কথার মাধ্যমে ত্বারীফী গ্র্যান্ড মুফতীর প্রতি যেসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেগুলো হলো—(১) তিনি দুর্বলদের সামনে শক্তিশালী, যেহেতু জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিয়েছেন (২) তিনি শক্তিশালীদের সামনে দুর্বল, যেহেতু তিনি ত্বারীফী ও তার সমমনা খারিজীদের মতো মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন না, (৩) তিনি বেইনসাফি কাজ করছেন, যেহেতু তিনি পূর্বোক্ত দুটি অভিযোগে অভিযুক্ত।

·
৩. এতদ্ব্যতীত ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী সিরিয়ার দুর্যোগময় বিপ্লবকে ‘আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত’ আখ্যা দিয়েছে। সে বলেছে,

الثورة السورية: أرى أنها نعمة من الله، وما يحدث في سوريا هو خير عظيم.

“সিরীয় বিপ্লবকে আমি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত মনে করি। সিরিয়ায় যা ঘটছে, সেটা হলো মহাকল্যাণ।” [দ্র.: https://youtu.be/zIujJs1Cst4 (ভিডিয়ো ক্লিপ)]

যে বিপ্লবের কারণে মুসলিমরা করুণভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে, সেটা নাকি আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত। ইয়া সুবহানাল্লাহ, এটা তো বিকারগ্রস্ত লোকের কথা! শাসকের বিরুদ্ধে উরাধুরা বিদ্রোহকে সমর্থন করতে গিয়ে এদের মস্তিষ্কের এ কী বিকৃতি ঘটেছে! আল্লাহ আমাদেরকে এদের বিকৃত চেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

·
৪. ভ্রষ্ট দা‘ঈ ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী বিদ‘আতী ফিরক্বাহ মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিয়ে নিজের ব্যক্ত করা সুন্নী মানহাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে তার একটি বক্তব্যে জবরদখলকারী শাসকের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র প্রকৃত মানহাজ বর্ণনা করে বলেছে,

...ومنها الغلب، أن يغلب بسيفه على البلد وهو في ذاته مسلم، وإن قتل من الناس حتى تغلب وتمكن، فلا يجوز الخروج عليه. ومن خرج عليه لسبب فسقه فهو ظالم لنفسه.

“কোনো মুসলিম যদি তরবারি দিয়ে কোনো রাষ্ট্র দখল করে নেয় এবং জবরদখল করে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়, তাহলে সে যদি মানুষ হত্যা করে থাকে, তবুও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। আর যে ব্যক্তি ওই শাসকের পাপাচারিতার কারণে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সে হলো নিজের আত্মার ওপর জুলুমকারী।” [দ্র.: https://youtu.be/aRqTuKlMIfw (ভিডিয়ো ক্লিপ); ২০ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত]

এরপর যখন মিশরে সিসি সাহেব সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইখওয়ানী প্রেসিডেন্ট মুরসীকে হটিয়ে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো, তখন ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফীর বক্তব্যের সুর পাল্টে গেল। মিশরে সিসির সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে ত্বারীফী তার এক ফাতওয়া’য় বলেছে, إن الحاكم الموجود في مصر أنه ليس حاكما متغلبا، وإنما ظالم من جهة الحقيقة “মিশরের বর্তমান শাসক জবরদখলকারী শাসক নয়! প্রকৃতপক্ষে সে একজন জালিম।” [প্রাগুক্ত; ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত]

অর্থাৎ, ত্বারীফী মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ নিতে গিয়ে সিসিকে ‘জবরদখলকারী শাসক’ হিসেবে মানছে না, যে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা না-জায়েজ। উল্লেখ্য যে, আরও অনেক ইখওয়ানী-খারিজী দা‘ঈ ও তাদের সমর্থক সিসির অভ্যুত্থানকে ‘জবরদখল’ বা ‘বিপ্লব’ হিসেবে দেখেনি, বরং সেটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি কেউ কেউ তো ওই সেনা অভ্যুত্থানকে ‘রিদ্দাহ’ (মুরতাদ হয়ে যাওয়া) আখ্যা দিয়েছে! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।

·
৫. ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী হলো তাকফীরী। ত্বারীফী সাহেব মিশরের সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর তারিখের টুইটে বলেছে,

من عرف الفريقين بمصر (القالب) و (المقلوب) ومسافة كل واحد منهم من الحق والباطل، عرف أن ما أحدث إنما هو صراع بين إسلام وكفر ونفاق وإيمان.

“যে ব্যক্তি মিশরের দুটো দল সম্পর্কে তথা পরিবর্তনকারী দল ও পরিবর্তিত দল সম্পর্কে এবং হক ও বাতিল থেকে এদের মধ্যকার ব্যবধান সম্পর্কে অবগত হয়েছে, সে জেনেছে যে, মিশরে যা সংঘটিত হয়েছে, তা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই এবং নিফাক্ব ও ইমানের লড়াই!” [দ্র.: https://youtu.be/VTh_r0qW2VI (ডকুমেন্টারি ভিডিয়ো ক্লিপ); ১১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে উক্ত টুইটের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে]

চিন্তা করেন! মুসলিম ব্রাদারহুড—যারা কিনা ক্ষমতায় এসে আল্লাহ’র আইন বাস্তবায়ন করা তো দূরের কথা, নানারকম অপব্যাখ্যা করে আল্লাহ’র আইনকে পরিত্যাগ করেছে—যে সিসির সাথে লড়াই করেছে, সেটা হলো ইসলাম ও কুফরের লড়াই! তার মানে সিসি ও তার সাঙ্গপাঙ্গ সব কাফিরের দল! না‘ঊযু বিল্লাহি মিন যালিক।

·
ত্বারীফীর এসব ভয়ংকর বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির কারণে সালাফী ‘উলামা ও সিনিয়র ত্বালিবগণ ত্বারীফীকে পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী আখ্যা দিয়েছেন। এরকম কয়েকটি জারাহ (ক্রিটিসিজম/কাউকে মন্দ আখ্যা দেওয়া) নিম্নে উল্লিখিত হলো।

১. মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাসজিদে নাবাউয়ী’র সম্মানিত মুদার্রিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

ليست العبرة بالتلميع، بل أنا أقول: القاعدة، إذا وجدت الرجل يلمَّع من الحزبيين، ويبرز على أنه الحافظ والمحدث والفقيه والإمام، فاعلم أنه منحرف، مثل الددو ومثل الطريفي ومثل العريفي. هؤلاء منحرفون على منهج الإخوان، عندهم إنحرافات عقدية وشرعية. لكن هؤلاء يلمَّعون—المحدث الكبير، يحفظ الكتب الستة. فإذا وجدت التلميع من الحزبيين ومن وسائل الإعلام اليوم، فاعلم أن وراء الأكمة ما وراء.

“কাউকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করার কোনো মূল্য নেই। আমি একটি মূলনীতি বলে দিচ্ছি। যখন তুমি দেখবে, কোনো লোককে দলবাজ হিযবীদের পক্ষ থেকে খুব চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এবং বলা হচ্ছে, ইনি একজন হাফিয, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ, কিংবা ইমাম; তখন তুমি জানবে যে, ওই লোক একজন পথভ্রষ্ট বিপথগামী। যেমন: মুহাম্মাদ হাসান ওয়ালিদ আদ-দিদূ, ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, মুহাম্মাদ আল-‘আরীফী প্রমুখ। এরা মুসলিম ব্রাদারহুডের মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত ভ্রষ্ট বিপথগামী। এদের রয়েছে ‘আক্বীদাহ ও শরিয়তগত বিভ্রান্তি। কিন্তু এদেরকে চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করে বলা হয়—‘ইনি অনেক বড়ো মুহাদ্দিস, ইনার সম্পূর্ণ কুতুবে সিত্তাহ মুখস্থ!’ অতএব তুমি যখন হিযবীদের পক্ষ থেকে অথবা বিভিন্ন মিডিয়ার পক্ষ থেকে এরকম চমকপ্রদ উপস্থাপনা লক্ষ করবে, তখন জানবে যে, এর নেপথ্যে কিছু একটা লুকায়িত আছে।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y2qwprtc (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট লিংক)]

·
২. সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] ‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী থেকে সতর্ক করেছেন।

ইমাম সালিহ আল-ফাওযানকে প্রশ্ন করা হয়েছে,

هنالك بعض الشباب يطعنون في ولاة الأمور، ويقولون: إن ولاة الأمور سجنوا العلماء والصالحين ويقصدون بالعلماء عبد العزيز الطريفي وسليمان العلوان وخالد الراشد.

“এখানে কিছু যুবক শাসকের নিন্দা-সমালোচনা করে। তারা বলে, শাসকরা ‘উলামা ও ভালো ব্যক্তিদের জেলবন্দি করেছে। তারা ‘উলামা বলার মাধ্যমে উদ্দেশ্য করে—‘আব্দুল ‘আযীয আত্ব-ত্বারীফী, সুলাইমান আল-‘আলাওয়ান, খালিদ আর-রাশিদ প্রমুখকে।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন, أتركهم، لا تدخل فيهم، ولا تجلس معهم “তুমি তাদেরকে পরিত্যাগ করো, তাদের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, এবং তাদের সাথে ওঠাবসা কোরো না।”

এরপর প্রশ্নকারী পুনরায় বলেন, “কিছু মানুষ এদের (উক্ত দা‘ঈদের) ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হচ্ছে।” তখন ইমাম ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) তাদের ব্যাপারে ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেন। [দ্র.: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=18595 (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
সুপ্রিয় পাঠক, আপনি দেখলেন, সালাফিয়্যাহ’র ইমাম ‘আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) ত্বারীফীর ভক্তদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ সে একজন খারিজী দা‘ঈ। সুতরাং এই খারিজী দা‘ঈকে যারা প্রোমোট করবে এবং তার গুণকীর্তন করবে, আমাদের জন্য তাদের থেকে দূরে থাকা জরুরি। যে ব্যক্তিই ত্বারীফীর গুণকীর্তন করবে এবং তাকে প্রোমোট করবে, তার মানহাজের ব্যাপারে সন্দেহ করুন। সে যেই হোক না কেন, যে পর্যায়ের দা‘ঈ বা বক্তাই হোক না কেন, তাকে বর্জন করতে হবে।

আমরা ইতঃপূর্বে জনৈক সৌদি প্রবাসী বাঙালি দা‘ঈকে দেখেছি, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই ত্বারীফীর গুণগান গাইতে। এ ধরনের ভুঁইফোঁড় দা‘ঈদেরকেও প্রোমোট করা থেকে বিরত থাকুন। কথা স্পষ্ট। মানহাজের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এসব ভণ্ডদের বই ইনোসেন্ট সালাফীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ কামাচ্ছেন, তারাও কেয়ামত দিবসে আল্লাহ’র কাছে জবাবদিহিতা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। ওই শুনুন, মহান আল্লাহ’র হুঁশিয়ারি—“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (অর্থাৎ, সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায় এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর কতই না মন্দ সে আবাসস্থল!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিদ‘আতী দা‘ঈদের বিকৃত দা‘ওয়াত থেকে হেফাজত করুন এবং যথাযথভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

·
রচনাকাল—
দুপুর ২ টা ২১ মিনিট।
বৃহস্পতিবার।
১৩ই যুলহাজ্ব, ১৪৪০ হিজরী।
৩১শে শ্রাবণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
১৫ই আগস্ট, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

Tuesday, August 13, 2019

জুমুআর দিনের করনীয় কাজ



রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। জুম’আর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)
২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)
৩৭। যেখানে জুম’আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।
সূত্রঃ বই-প্রশ্নোত্তরে জুমু’আ ও খুৎবা
লেখকঃ অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
পরিমার্জনেঃ ডঃ মোহাম্মদ মনজুরে ইলাহী,
ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার,
ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
কৃতজ্ঞতায়: কুরআনের আলো

Tuesday, April 30, 2019

বইঃ তারাবীহ ও ইতিকাফ

বই – রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া – ফ্রী ডাউনলোড



সংকলন: ইব্রাহিম ইবনে মোহাম্মদ আল হাকিম | প্রকাশনায়: পিস পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এই বইটিতে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমযানের ৬০ শিক্ষা এবং ৩০ ফতোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বই – রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল

লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে।
এখানে শুধুমাত্র রমযানের মাসায়েল সম্পর্কেই আলোচনা হয়নি রমযান মাস আমাদের জীবনে কেন এত গুরুত্তপুর্ন তারও বর্ননা রয়েছে। এখানে আলোচিত হয়েছেঃ
• সিয়ামের ফযীলত।
• সিয়ামের প্রকারভেদ।
• রমযান মাসের বৈশিষ্ঠ্য ও রোযার ফযিলত।
• রমযানের রোযার মানুষের শ্রেণীভেদ।
• খাদ্যদানের নিয়ম।
• মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা ভালো নাকি কাযা করা ভালো?
• নিফাস ও ঋতুমতী।
• সেহেরি খাওয়া।
• ইফতার।
• রোযা অবস্থায় যা বৈধ
• রোযাদারদের জন্য যা অপছন্দনীয়।
• যাতে রোযা নষ্ট ও বাতিল হয়।
• রমযানে যে যে কাজ রোযাদারের কর্তব্য।
• ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম।
• রমযানের পরে কি?
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরন।
• তারাবীহর সালাত বা কিয়ামে রামাযান
• সাদকাহ বা দান করা
• ইফতার করানো
• কুরআন তিলাওয়াত
• উমরাহ
• শেষ দশকের আমল ও ইবাদত
• ইত্তেকাফ
• শাবে ক্বাদর অন্বেষণ করা
• ফিতরার বিবরণ
• ঈদ ও ঈদের বিভিন্ন আহকাম
• ঈদের আদব
• ঈদ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসায়েল
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরণ
• নফল রোযার প্রকারভেদ
• যে দিন গুলতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

Sunday, April 21, 2019

রামাযান মাসে মুমিনের দৈনন্দিন কর্মসূচী

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ । ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

রহমতের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস মাহে রামাযান আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কি রামাযানের এই মহামূল্যবান সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি? আসুন না একটি তালিকা তৈরি করি যেন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে নেকী কুড়িয়ে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি।

ফজর পূর্বে:

  • (১)  আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও দুয়া: কারণ মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন: “কে আছে আমার কাছে দুআকারী, আমি তার দুআ কবুল করবো”।[ মুসলিম ]
  • (২)  সাহরী ভক্ষণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “সাহরী খাও। কারণ সাহরীতে বরকত আছে”।[বুখারী মুসলিম ]

ফজর হওয়ার পর:

  • (১)  ফজরের সুন্নত আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার থেকে উত্তম”। [ মুসলিম ]
  • (২) ইকামত পর্যন্ত দুআ ও যিকিরে মশগুল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না”।[আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ]
  • (৩)  ফজরের নামায আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”তারা যদি ইশা ও ফজরের ফযীলত জানতো, তো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৪)  সূর্যোদয় পর্যন্ত সকালে পঠিতব্য দুআ-যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে অবস্থান: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর নিজ স্থানেই সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করতেন”। [ মুসলিম ]
  • (৫) সূর্যোদয়েরে পর দুই রাকাআত নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি জামায়াতের সহিত ফজরের নামায পড়লো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকর করলো, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, তার জন্য এটা একটি পূর্ণ হজ্জ ও উমরার মত “। [ তিরমিযী ]
  • (৬)  নিজ নিজ কর্মে মনোযোগ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিজ হাতের কর্ম দ্বারা উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার নেই”। [ বুখারী ]

 যহরের সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত জহরের নামায আদায়। অতঃপর কিছুক্ষণ কুরআন কিংবা অন্যান্য দীনী বই পাঠ।
  • (২)  আসর পর্যন্ত বিশ্রাম, কারণ  তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে।

আসরের সময় :

  • (১)  আসরের নামায জামাতের সাথে সম্পাদন:  অতঃপর ইমাম হলে নামাযীদের উদ্দেশ্যে দারস প্রদান কিংবা দারস শ্রবণ কিংবা ওয়ায নসীহতের ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি মসজিদে ভাল কিছু শিক্ষা নিতে কিংবা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেল, সে পূর্ণ এক হজ্জের সমান নেকী পেল”। [ ত্ববারানী ]
  • (২) পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারির আয়োজনে সহায়তা করা: এর মাধ্যমে যেমন কাজের চাপ হাল্কা হয় তেমন পরিবারের সাথে ভালবাসাও বৃদ্ধি পায়।

মাগরিবের সময় 

  • (১)  ইফতারি করা এবং এই দুআ পাঠ করা: “যাহাবায্ যামাউ ওয়াব্ তাল্লাতিল্ উরূকু ওয়া সাবাতাল্ আজরু ইন্ শাআল্লাহু তাআলা”। অর্থ: পিপাষা নিবারিত হল, রগ-রেশা সিক্ত হল এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হল।  [ আবূ দাউদ ]
  • (২)  মাগরিবের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা যদিও ইফতারি পূর্ণরূপে না করা যায়। বাকি ইফতারি নামাযের পর সেরে নেওয়া মন্দ নয়। অতঃপর সন্ধ্যায় পঠিতব্য যিকির-আযকার পাঠ করে নেওয়া।
  • (৩)  স্বভাবানুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

ইশার সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত ইশার নামায আদায় করা।
  • (২)  ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীর নামায আদায় করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম করবে, (তারাবীহ পড়বে ) তার বিগত সমস্ত (ছোট গুনাহ) ক্ষমা করা হবে”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৩)  সম্ভব হলে বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামায কর”।   [মুত্তাফিকুন আলাইহ]
Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে 
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...