Friday, September 24, 2021

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

 



▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার চেষ্টা করে, শাইখদের লেকচার শুনে তারা কিভাবে দাওয়াত দিবে? দাওয়াতের আওতাভুক্ত জিনিসগুলো জানতে চাচ্ছি। তারা যদি দাওয়াহ না দেয় অসৎ কাজ দেখেও, যেহেতু এই বিষয়ে সে নিজে জ্ঞান অর্জন করেনি বরং শাইখদের কাছ থেকে শুনেছে তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
✅
দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব:
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দ্বীন প্রচার করা আবশ্যক। প্রত্যেকেই তার জ্ঞান, যোগ্যতা ও সাধ্যানুযায়ী দ্বীন প্রচারে অংশ গ্রহণ করবেন। দ্বীন প্রচার করার জন্য আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন এবং এ জন্য অগণিত সোয়াবের কথা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন:
🔰
“তোমার রবের পথে ডাক হেকমত এবং উত্তম উপদেশের মধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সবোর্ত্তম পন্থায়।” (আন নাহাল: ১২৫)
🔰
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছিয়ে দাও।” (সুনান তিরমিযী, সহীহ)
🔰
আল্লাহর দ্বীনকে প্রচার করার মর্যাদা অনেক বেশি। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তার কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত?।” (সূরা ফুসসিলাত/ হা মীম সাজদাহ: ৩৩)
🔰
“তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা যদি একটি মানুষকেও হেদায়াত দেন তবে তা তোমার জন্য অনেক লাল উঁট পাওয়া থেকে উত্তম।” (সহীহ বুখারী)
🔰
“যে ব্যক্তি মানুষকে হেদায়েতের দিকে আহবান করে সে ব্যক্তি ওই সকল লোকের মতই সোয়াবের অধিকারী হয় যারা তা অনুসরণ করে। কিন্তু যারা অনুসরণ করে তাদের সোওয়াবের কোন ঘাটতি হবে না।” (সহীহ মুসলিম)
✅
দাওয়াতী কাজ থেকে পিছপা থাকলে গুনাহগার হতে হবে:
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি তার সাধ্য অনুযায়ী দাওয়াতী কাজ এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধ’ এর জন্য নির্দেশিত। সাধ্য থাকার পরও কেউ যদি এ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সেগুনাহগার হবে।
✅
সাধারণ মানুষ কোথায় কিভাবে দাওয়াতি কাজ করবে?
– এ ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষ তার অর্থ দ্বারা দ্বীনের কাজে সাহায্য করবে।
– সে দাওয়াতী কাজে শ্রম ব্যয় করবে।
– একজন গৃহিনীর সবচেয়ে বড় দাওয়াতী ক্ষেত্র হল তার পরিবার।
– একজন শিক্ষক/ শিক্ষিকার তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
– একজন ডাক্তারের তার চিকৎসালয়।
– একজন ছাত্র/ছাত্রীর তার ক্লাসের সহপাঠি এবং বন্ধু।
– একজন মানুষ তার কর্মক্ষেত্রে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে। এটাও তার দাওয়াতী কাজের অংশ। কেননা, দ্বীনদার ব্যক্তির সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, আন্তরিকতা ইত্যাদি মানুষকে দ্বীন পালনের প্রতি আগ্রহী করে তোলবে। পক্ষান্তরে তার খারাপ আচরণ ও অন্যায়-অপকর্মের কারণে মানুষের মাঝে ইসলামের প্রতি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি করবে।
এভাবে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের সাধ্য ও সমর্থ অনুযায়ী এই দায়িত্ব পালন করবে। আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

দাঈ (আল্লাহর পথে আহ্বানকারী) এর কতিপয় মৌলিক গুণাবলী

 


◈ ১) ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আন্তরিক ভাবে দাওয়াত দেয়া।
◈ ২) যে বিষয়ে দাওয়াত দিবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা এবং উক্ত বিষয়ে দলিল-প্রমাণ মুখস্থ রাখা বা প্রস্তুত রাখা।
◈ ৩) দাওয়াত দেয়ার সময় বিনয় ও নম্রতা থাকা।
◈ ৪) দাওয়াত দেয়ার পর সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়া। অর্থাৎ ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়া না করা ও রাগকে সংবরণ করা।
◈ ৫) ধৈর্য ধারণ করা। অর্থাৎ কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা ও ক্ষমা করে দেয়া।
◈ ৬) হিকমত অবলম্বন করা অর্থাৎ স্থান-কাল পাত্র ভেদে আচরণ করা। যেমন: নম্রতার জায়গায় নম্রতা, কঠোরতা জায়গায় কঠোরতা, বিতর্কের প্রয়োজন হলে উত্তম পন্থায় বিতর্ক করা...।
◈ ৭) যাকে দাওয়াত দিবে তার জন্য আল্লাহর নিকট দুয়া করা।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাওয়াতি কাজের কতিপয় মূলনীতি: যা লক্ষ্য রাখা জরুরি এ পথের পথিকদের​

 


▬▬▬▬◈◉◈▬▬▬▬
প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আমরা অনেকেই দাওয়াতি কাজ করার প্রতি আগ্রহ পোষণ করি-আল হামদুলিল্লাহ। নি:সন্দেহে এটি প্রশংসনীয়। এই মনোভাব থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। এটি নবী-রাসূল, সাহাবি, তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন, মুহাদ্দিসিন, মুফসসিরিন, ফুকাহা, মুজাহিদিন সহ যুগে যুগে পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গ এবং দীনের দাঈদের পথ। ইসলামে এর মর্যাদা অপরিসীম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ এর মূলনীতি, বৈশিষ্ট্য ও সঠিক কর্মপন্থা সম্পর্কে না জানার কারণে বা সেগুলোর প্রতি লক্ষ না রাখার কারণে আমরা অনেকেই দাওয়াতের ময়দানে এসে সামান্য বিষয়ে অযৌক্তিক ও দলিল বিহীন তর্ক-বিতর্ক, আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার, উগ্রপন্থা, বিদ্বেষ পোষণ, অহঙ্কার প্রকাশ ইত্যাদি দ্বারা মহান এ পথকে পঙ্কিল ও কুলষিত করে ফেলি। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)
তাই আসুন, অতি সংক্ষেপে দাওয়াতের কয়েকটি মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা জেনে নেই:
◈ ১) সালাফে-সালেহীন (সাহবি ও তাবেঈনদের) মূলনীতির আলোকে দাওয়াত দিন।
◈ ২) তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে আহবান করুন এবং শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে মানুষকে সাবধান করুন।
◈ ৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন। ঐক্য বিরাট একটি শক্তি। অনৈক্য ও কোন্দল কাফেরদের সামনে মুসলিমদের ধ্বংসের পথকে সুগম করে দেয়।
◈ ৪) শাখাগত মতো বিরোধপূর্ণ মাসাআলা-মসায়েলে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে ভদ্রতার সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করুন। ঝগড়া, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ, যুদ্ধ ও মারামারি কখনোই কাম্য নয়।
◈ ৫) মানুষকে আহবান করুন আল্লাহর দীনের দিকে। ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর দিকে নয়। কারণ, ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আল্লাহর দিন কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।
◈ ৬) ইসলামের সৌন্দর্যময় দিকগুলো তুলে ধরুন।
◈ ৭) সাহস নিয়ে সত্যের পথে থাকুন। সত্য বলতে অপারগ হলেও কখনো বাতিল কথা যেন মুখ থেকে বের না হয়।
◈ ৮) ধৈর্য ধারণ করুন। দাওয়াহর কাজে ধৈর্য খুবই জরুরী।
◈ ৯) কাফেরদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। শরীয়তের মূলনীতির আলোকে দুনিয়াবি বিষয়ে কাফেরদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া ইসলাম বিরোধী নয়। তবে তাদের বাতিল দীন নোংরামি ও অন্যান্য খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা ও মানুষকে সে সম্পর্কে সাবধান করা জরুরী।
◈ ১০) ইসলামকে মানুষের নিকট সহজ ভাবে উপস্থাপন করুন। সহজতা,নম্রতা ও ভদ্রতা ইসলামের মহান শিক্ষা।
রুক্ষ আচরণ, আক্রমানত্মক ভাষা প্রয়োগ, তিরস্কার বা হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ হয় না। বরং তাতে শুধু মনের ঝাল মিটানো হয়।
◈ ১১) কথা বলা বা আমল করার পূর্বে জ্ঞানার্জন করতে হবে। কোন বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে কুরআন, সুন্নাহর যোগ্য আলেমদের শরণাপন্ন হতে হবে। শুধু বই পড়ে জ্ঞানার্জনের ঝুঁকি অনেক বেশী।।
◈ ১২) খালুসিয়াত বা একনিষ্ঠ ভাবে দরদ ভরা বুকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে দাওয়াত দিন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমলে সালেহ করার পাশাপাশি ইসলাম প্রচারের কাজে অবদান রাখার তাওফিক দান করুন এবং তা কবুল করে নিন। আমীন।
মহান আল্লাহ সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী।


কিভাবে ইসলাম প্রচার করবেন?



 কিভাবে ইসলাম প্রচার করবেন?

অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” (বুখারী ১২/৩৭)
তিনি আরে বলেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا
“যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে আহবান করে সে ঐ পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হয় যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করে। কিন্তু এতে আহবানকারীর সওয়াব কমানো হয় না।”
এ জন্য আপনার কর্তব্য হল, আপনার পরিচিত অমুসলিমদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানান এবং দাওয়াতি কাজ শুরু করুন আপনার পিতা-মাতা, সন্তানাদি, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে।
আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন:
وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
“হে নবী, আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।” (সূরা শু’আরাঃ ১১৪)
আপনি তাদেরকে সঠিক দ্বীনের শিক্ষা দিন। দ্বীনের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। তাদেরকে এই শুভসংবাদ দিন যে, দ্বীন মেনে চললে দুনিয়ায় মিলবে সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে জান্নাত এবং এক মহা আনন্দময় জীবন।
সেই সাথে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখান। যেমন, মানবজাতির জন্য আলোর দিশারী এবং জীবন সংবিধান হিসেবে অবতীর্ণ মহা গ্রন্থ আল কুরআনকে কেউ যদি অস্বীকার করে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে যাকে আল্লাহ তা’আলা সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য দয়া ও কল্যাণের বার্তাবাহী হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাহলে তাদের জন্য কত কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে সে ভয় তাদেরকে প্রদর্শন করুন।
বুদ্ধিমত্তা, হেকমত, নরম ভাষা, ভালবাসা, পরম নিষ্ঠা এবং চরম ধৈর্য সহকারে মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করুন। তার আগে নিজেকে সবোর্ত্তম আদর্শ হিসেবে পেশ করুন। এমন হওয়ার চেষ্টা করুন, যেন আপনার কথা-বার্তা, চলাফেরা, আচার-আচরণে আদর্শ ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে। ভাল আমলগুলো করার ক্ষেত্রে আপনি থাকবেন সবার আগে। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
এভাবে কথা ও কাজের মাধ্যমে আপনার দাওয়াতকে ছড়িয়ে দিন। তাহলেই আপনার বন্ধুরা আপনার দাওয়াত কবুল করবে। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে সক্ষম হবে যে, আপনি যা বলছেন, সেটাই সঠিক। ফলে তারা ইসলামের আদর্শকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে। এবং হৃদয় দিয়ে ভালবাসবে ইসলামকে এবং সেই সাথে আপনাকেও।
অতএব, জানতে হবে মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করার সঠিক পদ্ধতি কি? নির্ধারণ করতে হবে কোন উপলক্ষে, কোন পরিস্থিতিতে, কোন কথাটি বলতে হবে। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“হেকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহবান কর। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। আপনার রব তো সবচেয়ে বেশি জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন কে হেদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা নাহলঃ ১২৫)
আরবদের মাঝে একটি নীতি বাক্য আছে তা হল, “পরিস্থিতির আলোকে কথা বল”। পরিস্থিতি অনুযায়ী যথোপযুক্ত কথা বললে তাতে বেশি প্রভাব সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি দাওয়াত দান কারীর মাথায় রাখা জরুরী।
আপনি যদি আরবী ভাষা না জানেন তবে আপনাকে পরামর্শ দিব, আরবী ভাষাকে রপ্ত করার চেষ্টা করুন। কারণ, যে ভাষায় আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে অবতীর্ণ করেছেন সরাসরি সে ভাষায় ইসলামকে বুঝতে পারবেন এবং পরম আস্থা আর নিশ্চিন্ত মনে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন। কারণ আপনি সরাসরি কুরআনের ভাষায় কথা বলছেন, যে ভাষায় স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা কথা বলেছেন। যে ভাষা ছিল নবী মুহাম্মাদুর রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর। যে ভাষা ছিল যুগে যুগে অসংখ্য মুসলিম মনিষীদের।
আপনি যদি আপনার উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন বই-পুস্তক দিতে পারেন তবে তা ইসলাম প্রচারে আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে আপনাকে দারুণভাবে সাহায্য করবে।
-----------------------------------
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

" ইসলাম প্রচারের ৭২টি হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি "




 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

‘আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক’
ইসলাম প্রচারের ৭২টি হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি দ্বীনের পথে দাওয়াত দান কারীর সর্বোত্তম প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন:
وَمَنْ أحْسَنُ قَوْلاً مِمَّنْ دَعاَ إلىَ اللهِ وَعَمِلَ صاَلِحاً وَقاَلَ إنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
“ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে আল্লাহর পথে আহবান করে এবং সৎ আমল করে। আর বলে নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্গত।” (সূরা ফুছ্ছিলাত: ৩৩) দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক আমাদের সর্বোত্তম আদর্শ ও প্রিয় নবী ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যিনি এরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি সৎপথে আহবান করে, সে তার অনুসরণকারীর অনুরূপ সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম)
অত:পর নিশ্চয় মুসলিম ব্যক্তি একথা ভাল করেই জানে যে, আল্লাহ তাকে দ্বীন দ্বারা সম্মানিত করেছেন এবং তা আমানত হিসেবে তাকে প্রদান করেছেন। নিশ্চয় তিনি তাকে সেই দ্বীন ও আমানত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন
(وَإنَّهُ لَذِكْرٌ لَكَ وَلِقَوْمِكَ، وَسَوْفَ تُسْأَلُوْنَ)
নিশ্চয় এই কুরআন আপনার ও আপনার কওমের লোকদের জন্য উপদেশ স্বরূপ। অচিরেই সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হতে হবে।” (সূরা যুখরুফ: ৪৪)
একজন মুসলিম ব্যক্তি অত্যন্ত খুশী হয় যখন সে এই আমানতটি আদায় করত: অন্যদের আল্লাহর পথে হেদায়েতের মাধ্যম হয়।
(قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا، هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُوْنَ)
“বলুন! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমতে তারা আনন্দ করুক। ইহাই তাদের জন্য (সম্পদ) জমা করার চেয়ে উত্তম।” (সূরা ইউনুস: ৫৮)
বর্তমান কালে আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহের অন্যতম হল: দাওয়াতের মাধ্যম, উপকরণ ও পথের বিভিন্নতা। যাতে করে প্রত্যেকেই তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তার মর্যাদা ও মহান সওয়াব অর্জন করতে পারে। দাওয়াত প্রদানকারী লক্ষ্য করবে কোন উপকরণটি মাদঊর (দাওয়াত কৃত ব্যক্তি) জন্য উপযুক্ত হবে- সেই সাথে ভিন্ন ভিন্ন ও নতুন নতুন উপকরণের খেয়াল রাখবে। যেমনটি নূহ (আ:) এবং অন্যান্য নবীদের পদ্ধতি ছিল। দাঈর উচিত, যাদেরকে সে দাওয়াত দিবে তাদের স্তর ও তাদের অবস্থান সমূহের খিয়াল রাখবে। যাতে করে দাওয়াত সবাইকে শামিল করে। যাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় তারা মূলত: পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, চাকর-বাকর, সেবক-সেবিকা, ভ্রমণকারী, প্রতিবেশী ও সাথী প্রভৃতি। কিছু স্থান রয়েছে যা দাওয়াতের ক্ষেত্র হিসাবে গণ্য করা যায়। যেমন: মসজিদ, ঈদগাহ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, জেলখানা, পার্ক, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন বৈঠক, খেলার মাঠ, পিকনিক স্পট, হজ্জের তাঁবু, হোটেল, আবাসিক এলাকা, বিমান বন্দর, বিবাহ অনুষ্ঠান কেন্দ্র (কমিউনিটি সেন্টার), বাজার, সেলুন, যানবাহনের বিভিন্ন আধুনিক মাধ্যম। পাসপোর্ট অফিস, লেবার কোর্ট, দূতাবাস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র সমূহ… ইত্যাদি। আর দাওয়াতী মাধ্যম যেহেতু ইজতেহাদী বিষয় কাজেই উচিত হবে অপর ব্যক্তির অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়া। নিজে থেকে নতুন কিছু তৈরি করা এবং এ মাধ্যমকে আরও উন্নত করা। সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকের দাওয়াতী কাজ করা উচিত। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে সঠিক পথের হেদায়েত দানকারী বানিয়ে দিন। (আমীন)
দাওয়াতের ৭২টি পদ্ধতি:
❑ পরিবারের মাঝে দাওয়াত:
1. পারিবারিক লাইব্রেরী: (লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পরিবারের সকল সদস্যের উপযোগী বই-ম্যাগাজিন, ক্যাসেট তাতে থাকে।)
2. পারিবারিক দেয়ালিকা প্রকাশ: এতে বিভিন্ন ধরণের দাওয়াতী প্রবন্ধ, বিজ্ঞাপন থাকবে। তাতে নতুনত্ব থাকবে এবং পরিবারের সকল সদস্য তাতে শরীক হবে।
3. পারিবারিক দরসের ব্যবস্থা: (এটা নির্দিষ্ট কোন কিতাব থেকে পাঠ দান হতে পারে বা কোন ক্যাসেট শ্রবণ বা কুরআন বা হাদীছ থেকে কিছু মুখস্থ করার মাধ্যমে হতে পারে।)
4. পারিবারিক প্রতিযোগিতা: (পুরস্কার হিসেবে বোর্ডে বিজয়ীর নাম লিখবে অথবা ছোটখাটো পুরস্কার নির্ধারণ করবে)
5. পারিবারিক পত্রিকা: (যদিও তা কোন ম্যাগাজিন বা পত্রিকা হতে বাছাই করা প্রবন্ধও হয়না কেন। এসব লিখনিতে পরিবারের সদস্যরা শরীক হবে।)
6. পরিবারের সামনে সৎ আমল প্রকাশ করা: (যেমন: নামায, কুরআন তিলাওয়াত, ছদকা প্রভৃতি তাদেরকে দেখিয়ে করা যাতে করে তারা আপনার অনুসরণ করতে পারে এবং শিখতে পারে।)
❑ মসজিদে দাওয়াত:
7. মসজিদের পক্ষ থেকে ইসলামী দেয়ালিকা প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা।
8. এছাড়াও মসজিদ ভিত্তিক বিভিন্ন দাওয়াতী তৎপরতায় অংশ গ্রহন করা। যেমন: মসজিদ ভিত্তিক লাইব্রেরী, মসজিদ ভিত্তিক কুরআন হিফযের হালকা ইত্যাদি তৈরী করা।
9. ইসলামী বা সাধারণ উপকারী বই-পুস্তক, ক্যাসেট ধার দেয়া বা দাতা মহল থেকে নিয়ে এসে অথবা ক্রয় করে এনে মসজিদে রাখা। (কুরআন সেলফে অন্যান্য বই-পুস্তক রাখা যেতে পারে বিশেষ করে কুরআনের তাফসীর বা তার অনুবাদ রাখা যেতে পারে।
9. বিভিন্ন ইসলামিক আলোচনা সভা, ওয়াজ মাহফিল, দরস প্রভৃতির বিজ্ঞপ্তি মসজিদে মসজিদে পৌঁছিয়ে দেয়া বা প্রচার কার্যে অংশ গ্রহন করা।
10. কোন বক্তা বা আলোচককে মসজিদে দরস বা আলোচনার জন্য দাওয়াত করা।
11. এলাকার মসজিদ কমিটিকে সাথে নিয়ে সমাজ ভিত্তিক দাওয়াতী ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন তৎপরতায় অংশ গ্রহন করা।
❑ স্কুল/মাদরাসায় দাওয়াত:
12. স্কুল/মাদরাসার দেয়ালিকা বা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহন করা এবং বাইরের ইসলামী আলোচনা, দরস প্রভৃতির বিজ্ঞাপন ওখানে প্রকাশ করা।
13. ছাত্রদের মাঝে ইসলামী বা সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করা।
14. ছাত্রদের প্রশ্ন বা অভিযোগ সমূহ একত্র করে বিশেষজ্ঞদের নিকট উপস্থাপন করা।
❑ অন্যান্য দাওয়াতী মাধ্যম সমূহ:
15. সময়োপযোগী দাওয়াতী বক্তব্য বা বাণী সম্বলিত বিভিন্ন বোর্ড স্থাপন করা বা দেয়ালে লকটানোর ব্যবস্থা করা।
16. অভিনন্দন কার্ড, ঈদ কার্ড, বিভিন্ন বৈধ দৃশ্য সম্বলিত কার্ড পত্র যোগে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। (যাতে বিভিন্ন ধরণের দৃশ্য এবং সময়োপযোগী ভাল ভাল কথা থাকবে)
17. দাওয়াতী এলবাম তৈরী করা। যাতে থাকবে বিভিন্ন ধরণের হৃদয়গ্রাহী ছবি, প্রকৃতিক দৃশ্য এবং গঠনমূলক ও দিক নির্দেশনা মূলক কথা থাকবে।
18. বিবাহের দাওয়াত কার্ড বিতরণ করার সময় কার্ডটি ছোট-খাট একটি ভাল বইয়ের কভার হিসাবে ব্যবহার করা।
19. যে ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়া উদ্দেশ্য তাকে (যোগ্যতা অনুযায়ী) দাওয়াতী বিষয়ে লেখা কোন প্রবন্ধ বা বই ভাষা গত সম্পাদনা করার জন্য দেয়া এবং তাকে সেটা ছাপানো বা ফটোকপি করে বিতরণের দায়িত্ব দেয়া।
20. মোবাইল ফোন, ইমেইল প্রভৃতির মাধ্যমে (দীনী কোন অনুষ্ঠানের কথা বা ইসলামী আলোচনা প্রভৃতির কথা স্মরণ করিয়ে ) এবং দাওয়াতী চিঠি- পত্র দেয়া।
21. ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াতী কথা বলা। ইন্টারনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে দাওয়াহ বিষয়ক চ্যাটিং বা কথোপকথনে শরীক হওয়া।
22. দাওয়াতী কার্ড বা স্টিকার বিতরণ করা: যেমন সফর ও বাহনে উঠার দুয়া, বিভিন্ন সময়ের যিকর-আযকার। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। (এর অন্যতম হল: কিবলা নির্দেশক স্টিকার বিভিন্ন হোটেল প্রভৃতিতে লাগানো। উহা সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিকে নামাযের কথা স্মরণ করাবে।
23. নামাযের ক্যালেন্ডার বের করা।
24. দাওয়াতী কর্মসূচী ও পাঠ্যসূচী সম্বলিত ডায়েরী ও খাতা প্রভৃতি দাওয়াতী কাজে ব্যবহার করা।
25. দাওয়াতী বিষয় সম্বলিত পকেট কার্ড তরী কর। (উহা বিক্রেতার নিকট রাখা যেতে পারে। যাতে করে সে তা ক্রেতাকে বিনামূলে উপহার দিতে পারে।
26. কয়েকটি পকেট কার্ড সম্বলিত দাওয়াতী ব্যাগ তৈরী করে তা বিতরণ করা। তাতে বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন বই-পুস্তক ও লিফলেট রাখা যায়।
27. কোন ব্যক্তিকে কোন ইসলামী পত্রিকার (নিজ অর্থে বা গ্রহকের নিকট অর্থ নিয়ে) গ্রাহক বানিয়ে দেয়া।
28. প্রয়োজনাতিরিক্ত ম্যাগাজিন, ইসলামী বই প্রভৃতি সংগ্রহ করে তা বিতরণ করা বা কারো নিকট পাঠানো।
29. খারাপ ক্যাসেট, খারাপ ম্যাগাজিন, মানুষের কাছ থেকে.. সেলুন প্রভৃতি থেকে উদ্ধার করে তার পরিবর্তে ভালমানের বক্তৃতার ক্যাসেট, ইসলামী ম্যাগাজিন দ্বারা পরিবর্তন করা।
30. দাওয়াতী চয়নিকা। কিছু বই, ক্যাসেট, ঘটনা বা প্রেক্ষাপট উপযোগী যেমন: হাজী, মুসাফির, আগন্তুক, অসুস্থ, ডাক্তার, বন্দী, নারী, শিশু, বর- কনে, ঈদ প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বই/ক্যাসেট প্রস্তুত করা।
31. বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পানি প্রভৃতির বিলের সাথে দাওয়াতী প্রচারণা নির্দেশনা প্রকাশ করা।
32. ক্যালেন্ডার, পঞ্জিকা, ব্যবসায়িক প্লাস্টিক ব্যাগ, চাবির রিং, কলম প্রভৃতির মধ্যে দাওয়াতী বাক্য লিখা। এগুলো মানুষ খুব বেশী ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে এগুলো করা যায়। তাদেরকে উপযুক্ত বাক্য সমূহ যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে।
33. শ্রেণী ভিত্তিক মানুষের জন্য দাওয়াতী পত্র তৈরি করা। (যেমন মসজিদের প্রতিবেশী, ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, পিতা-মাতা, স্বামী বা স্ত্রী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়িক, জেলের আসামী, মুসাফির … )
34. সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা বা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বা নির্দিষ্ট লোকদের জন্য প্রতিযোগিতার জন্য বই, ক্যাসেট প্রস্তুত করা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। তা বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত হতে পারে। আর এর পুরস্কার দাওয়া সেন্টারে বা দাওয়াতী কোন অনুষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।
35. নিম্ন লিখিত বিষয় সমূহের উপর বই বা ক্যাসেট বা অনুষ্ঠান তৈরি করা: (যেমন- অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহনের কাহিনী, বা পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তির তওবার কাহিনীর উপর ভিত্তি করে, কবিতাগুচ্ছ, সাহিত্য, মনিষী চরিত, ভ্রমণ কাহিনী.. দুনিয়াবি বিষয়েও হতে পারে: যেমন- অফিস পরিচালনা, যোগাযোগ, সৃষ্টি জগত, মানুষের শরীর বিষয়ক- যাতে করে যারা সাধারণত: দীনী বই পড়তে চায় না এগুলোর মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হবে।
36. বিভিন্ন দাওয়াহ সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রাখা, তাদের অফিস পরিদর্শন করা, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, অন্যদেরকে তাদের পরিচয় ঠিকানা প্রদান করা।
37. দাঈর বা দাওয়া সেন্টারের কর্মকাণ্ডের উপর তাদের প্রশংসা করা। যাতে কারে তাদের ব্যাপারে মাদঊর আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তারা সেখানে অংশ গ্রহণ করে।
38. দুআর মাধ্যমেও দাওয়াতী কাজ করা সম্ভব। যেমন বলবে, ‘আল্লাহর কাছে দুয়া করি তোমাকে তিনি জাহান্নাম থেকে দূরে রাখুন। তিনি আমাদেরকে জান্নাতের মাঝে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অবস্থানের তাওফীক দিন। অথবা ছাত্রের জন্য দুআ করবে: দুআ করি আল্লাহ্‌ তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন।
39. কোন সফরে দাওয়াতের জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে বের হওয়া। এটি একটি সুযোগ তাকে সংশোধন করার হেদায়েত করার। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সফর খুবই উপকারী হয়ে থাকে।
40. ছালাতে উদাসীন ব্যক্তির সাথে আযানের মূহুর্তে দেখা করতে যাওয়া এবং তাকে সাথে করে মসজিদে নিয়ে আসা।
41. ইসলামী আলোচনা সভায় বা দরসে লোকজনকে সাথে করে নিয়ে আসা।
42. মাসিক খুতবা সমূহকে লিখিত আকারে প্রস্তুত করা। তারপর বিভিন্ন খতীবদের নিকট তা বিতরণ করা, যাতে করে তা থেকে উপকার লাভ করতে পারে।
43. মসজিদের ইমাম ও খতীবদের পরস্পরের মাঝে দাওয়াতী প্রোগ্রাম বিনিময়। যেমন দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করে এক ইমাম অন্য ইমামের মসজিদ নির্ধারণ করবে। ছালাত শেষ করেই কিছুক্ষণ ওয়াজ-নছীহত করবে। অথবা খতীবগণ মসজিদ পরিবর্তন করে একজনের স্থানে আরেকজন খুতবা প্রদান করতে পারে। এতে বিষয় বস্তু প্রস্তুত করার জন্য দাঈ বা খতীবগণকে বেশী বেগ পেতে হবে না। কেননা শুধু স্থান পরিবর্তন করে একই বিষয়ের উপর সে আলোচনা করা সুযোগ পাচ্ছে।
44. নামায শেষে মুছল্লীদের জন্য ইসলামী কিতাব পাঠের প্রোগ্রাম। এক্ষেত্রে ফতোয়া প্রভৃতি উপকারী কিতাব সমূহ সাথে রাখবে এবং বিভিন্ন কিতাবের জন্য নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে তার দরস দিবে। এ প্রোগ্রাম খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। ৭ থেকে ১০ বা ১২ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে। যাতে করে মানুষের মাঝে ক্লান্তি না আসে আর ইলমের প্রসারও সংক্ষিপ্ত সময়ে হতে পারে।
45. সাধারণ পরিবহণ সমূহের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ। পরিবহণের ড্রাইভার কন্টাক্টর হেলারদেরকে প্রয়োজনীয় বই, ক্যাসেট, লিফলেট, উপযুক্ত দাওয়াতী উপহার সমূহ যথা সময়ে সরবরাহ করতে হবে। এধরণের সহযোগিতা কারী পরিবহণ শ্রমিক/মালিকদেরকে কৃতজ্ঞতা সার্টিফিকেটও প্রদান করা যেতে পারে।
46. রাস্তার ধারে দাওয়াতী বোর্ড স্থাপন।
47. শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপনের জন্য নির্ধারণ কৃত চল চিত্র স্ক্রিন (টিভি পর্দা) ব্যবহার করা এবং সেখানে আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে দাওয়াতী কাজের আঞ্জাম দেয়া।
48. ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রয়ের দোকান সমূহকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা। যাতে করে তাদের মাধ্যমে দাওয়াতী বিষয় সমূহ প্রর্দশন করা সম্ভব হয়।
49. দাওয়াতী টেলিফোন। যেমন অফিসের টেলিফোন সেটে কোন দাওয়াতী বিষয় রেকর্ড করে রাখা। উক্ত নম্বরে কেউ টেলিফোন করলেই সে তা শুনতে পাবে। অথবা অপেক্ষা করার জন্য যে সময়টুকু ব্যয় হবে তা কাজে লাগানোর জন্য সেক্ষেত্রেও কিছু দাওয়াতী বিষয় রেকর্ড করে রাখা যেতে পারে বা কোন ইসলামী রেডিও সেন্টারের সাথে ফোনের সংযোগ রাখা যেতে পারে। অথবা কোন আলোচনা ও দরস টেলিফোনের মাধ্যমে অফিসে প্রচার করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অথবা প্রশ্ন, ফতোয়া, পরামর্শ.. প্রভৃতি জিজ্ঞাসা করার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।
50. সাধারণ ডাক বা ইমেইলের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করা। এর উদ্দেশ্য হবে কোন মুসলিমকে নছীহত করা বা কোন নওমুসলিমকে শিক্ষা প্রদান করা বা কোন অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া। (তাদের সাথে সাধারণ পরিচিতির মাধ্যমে বা প্রচার মাধ্যমের দ্বারা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করা যেতে পারে।) আপনার আশেপাশে যারা দূর এলাকা থেকে এসেছে তাদের মাধ্যমে প্রথমে শুরু করবেন। সেই প্রবাসীর চিঠির সাথে একটি দাওয়াতী চিঠিও দিয়ে দিবেন।
51. বর্তমানে মোবাইলের যুগে মোবাইলের মাধ্যমে সামান্য অর্থ খরচ করে দাওয়তী কাজ করা যায়। কোন বিষয়ে সুন্দর একটি এসএমএস একজন মানুষের বন্ধ দরজাকে খুলে দিতে পারে।
52. আরবী ভাষা শিক্ষা দান প্রোগ্রাম। বিভিন্ন কোর্স অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বা ক্যাসেট, বই, লিফলেট ইত্যাদি মাধ্যমে এ কাজ করা যেতে পারে। এ সমস্ত মাধ্যমে দাওয়াতী জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় বিষয় সমূহ সংশ্লিষ্ট করা। যেমন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ব্যবসা.. প্রভৃতি সংক্রান্ত শব্দ সমূহ।
53. বিভিন্ন ইসলামী কোর্স। (যেমন, দাওয়াতের পদ্ধতি, বক্তৃতা প্রশিক্ষণ, ইমামতী প্রশিক্ষণ, সন্তান লালন-পালন পদ্ধতি… ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে কোর্সের আয়োজন করা।
54. উন্মুক্ত দাওয়াতী দিবস। সেখানে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এতে নারীদেরকেও শামিল করা যেতে পারে।
55. মাসিক দাওয়াতী বিষয় বস্তু। তা নির্দিষ্ট করে লিফলেট বা বাণী হিসেবে ছাপিয়ে মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুল সমূহে.. বিতরণ করা হবে বা লটকিয়ে দেয়া হবে। যাতে করে বিষয়টি মাসব্যাপী মানুষের আলোচনা-পর্যালোচনার কেন্দ্র বিন্দু হতে পারে।
56. এলাকায় অনুষ্ঠিত সুনির্দিষ্ট দরস সমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করা। তাতে দরসের বিষয় বস্তু, সময়, স্থান ও আলোচকের নাম উল্লেখ থাকবে থাকবে।
57. ওলামায়ে কেরাম, দাঈ, দাওয়াতী বা ইসলামী সেন্টার সমূহ, শরঈ বিষয়ে পরামর্শ দাতা ব্যক্তি প্রভৃতির তালিকা প্রকাশ করা।
58. দীনী সাময়িক পত্রিকা সমূহ, ইসলামী রেকর্ডিং সেন্টার সমূহ, ইন্টারনেটের ভাল ওয়েব সাইট সমূহ.. প্রভৃতির তালিকা প্রকাশ করা।
59. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে ‘পর্যটন ইনডেক্স’ তৈরী। (এতে থাকবে বিভিন্ন শহর বা দেশের প্রসিদ্ধ দাওয়া সেন্টার, লাইব্রেরী, ইসলামী রেকর্ডিং সেন্টার, বড় বড় জামে মসজিদ, সেখানকার প্রসিদ্ধ আলেমদের ঠিকানা… এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।)
60. লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করে জন সাধারণের পড়ার জন্য উন্মুক্ত করা।
61. ইসলামী বই, ক্যাসেট, সিডি ইত্যাদি প্রদর্শনীর আয়োজন করা।
62. ইসলামী বই-পুস্তক ও নিদর্শন সমূহের উপর প্রদর্শনীর আয়োজন করা এবং বিভিন্ন ইসলামী মেলা-প্রদর্শনী সমূহে অংশ গ্রহন করা।
63. দাওয়াতী উপকরণ সমূহের জন্য প্রদর্শণীর আয়োজন করা। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীগণ উপকৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শের মাধ্যমে সে প্রদর্শণীর মানোন্নয়ন করা।
64. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে ইসলামী সাংস্কৃতিক তাঁবু প্রতিষ্ঠা করা।
65. দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে কোন দর্শনীয় স্থানে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা।
66. রমাযান মাসে দাওয়াতী ইফতার মাহফিল।
67. হজ্জ-ওমরা প্রশিক্ষণ কোর্স।
68. দাওয়াতী গাড়ি। গাড়ির বিভিন্ন সাইডে প্রয়োজনীয় দাওয়াতী কথা লিখা থাকবে। গাড়িতে প্রয়োজনীয় দাওয়াতী সরঞ্জামাদি থাকবে। ব্যাপক লোক সমাগমের স্থানে গাড়ি গিয়ে পরিবেশ অনুযায়ী ক্যাসেট বা ভিডিও চালাবে, মানুষকে বই, ক্যাসেট, লিফলেট ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করবে বা বিক্রয় করবে।
69. সাধারণ বা ইলেকট্রনিক বোর্ড তৈরি করা। তারপর শহরের উল্লেখযোগ্য স্থানে তা স্থাপন করে বিভিন্ন উপকারী বাণী, দাওয়াতী ঘোষণা বা সংবাদ সমূহ প্রচার করা।
70. দাওয়াহ অফিসের পক্ষ থেকে ক্রীড়া টিম প্রস্তুত করা। (সেখানে বিভিন্ন দাওয়াতী অনুষ্ঠান বা বই/ ক্যাসেট/ লিফলেট ব্যবস্থা রাখা)
71. ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা বা ফ্রি প্রিসকেপশনের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে দাওয়াতী কাজ করা।
72. নারীদের জন্য নির্দিষ্ট কোর্স সমূহে দাওয়াতী প্রোগ্রাম বা উপকরণ সমূহ শামিল করা। যেমন- রান্না শিক্ষা, সন্তান লালন-পালন, সুখী দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক অর্থনীতি, চাকরানীদের দীনী শিক্ষা দান, বিবাহের পূর্বে সংসার জীবনের প্রশিক্ষণ, শিশুরোগ সম্পর্কে জ্ঞান দান, পারিবারিক নিরাপত্তা ও ফাস্ট এইড প্রশিক্ষণ.. প্রভৃতি।
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর দ্বীনের প্রচারক হিসেবে কবুল করে নেন এবং দ্বীনের উপর মর্যাদা ও সাহসের সাথে পথ চলার তাওফীক দান করেন। আমীন।
আহবান!
প্রিয় বন্ধু, উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ছাড়া যদি আপনার নিকট আরও নতুন কোন আইডিয়া থাকে দয়া করে মন্তব্যের ঘরে লিখে শেয়ার করুন। হয়ত আপনার এই একটি আইডিয়া ইসলাম প্রচারের দরজাকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে যা হবে আপনার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া ইনশাআল্লাহ। আরেকটি অনুরোধ, উল্লেখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কোন পদ্ধতিগুলো বেশী কার্যকরী মনে হয়েছে সে ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করবেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
-----------
"আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক"
ইসলাম প্রচারের ৭২টি হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি
অনুবাদ: শাইখ মুহা: আবদুল্লাহ আল কাফী ও শাইখ আখতরুল আমান বিন আব্দুস সালাম (হাফিযাহুমাল্লাহ)
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব
পো: বক্স নং ১৫৮০, জুবাইল- ৩১৯৫১ সৌদী আরব।

Friday, June 18, 2021

সগিরা গুনাহ, ভয়াবহতা এবং কতিপয় উদাহরণ


 

সগিরা গুনাহ, ভয়াবহতা এবং কতিপয় উদাহরণ
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: সগিরা বা ছোট গুনাহ কাকে বলে? এর ভয়াবহতা কতটুকু? সচরাচর মানুষ যে সব সগিরা গুনাহ করে সেগুলো কি কি? কিছু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হবো আশা করি।
উত্তর :
নিম্নে সগিরা বা ছোট গুনাহের পরিচয়, এর ভয়াবহতা এবং কতিপয় উদাহরণ তুলে ধরা হল:
🌀 সগিরা (ছোট) গুনাহ কাকে বলে?
▪শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহ. বলেন, "এ মাসয়ালায় (সগিরা বা ছোট গুনাহের পরিচয়ের ব্যাপারে) ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত কথাটি সবচেয়ে সঠিক। এটি আবু উবাইদ ও ইমাম আহমদ প্রমুখ উল্লেখ করেছেন। আর তা হল:
أن الصغيرة ما دون الحدين: حد الدنيا وحد الآخرة
“সগিরা বা ছোট পাপ বলা হয় ঐ পাপকে, যা দুনিয়ার দণ্ড ও আখিরাতের দণ্ড (অবধারিত হয় এমন পাপ) থেকে নিম্ন পর্যায়ের।"
[অর্থাৎ ছোট গুনাহ বলতে বুঝায়, যে সকল অপরাধের ক্ষেত্রে দুনিয়ায় আইনগত দণ্ড বিধি নেই (যেমন, হাত কাটা, পাথর মেরে মৃত্যু দণ্ড দেয়া, বেত্রাঘাত করা ইত্যাদি) অনুরূপভাবে আখিরাতেও নির্ধারিত কোনও দণ্ড বা শাস্তির কথা বলা হয় নি। যেমন: কবরের আজাব, জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ ইত্যাদি]
▪আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেন,
الكبائر هي ما رتب عليه عقوبة خاصة بمعنى أنها ليست مقتصرة على مجرد النهي أو التحريم، بل لا بد من عقوبة خاصة مثل أن يقال من فعل هذا فليس بمؤمن، أو فليس منا، أو ما أشبه ذلك، هذه هي الكبائر، والصغائر هي المحرمات التي ليس عليها عقوبة. انتهى
"কবিরা বা বড় গুনাহ বলা ঐ সকল গুনাহকে যেগুলোর ব্যাপারে বিশেষ কোনও শাস্তি আরোপের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ যেগুলো শুধু নিষেধ বা হারামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তাতে অবশ্যই বিশেষ শাস্তি রয়েছে। যেমন: যে এ কাজ করবে সে ইমানদার নয় অথবা সে আমাদের দলভুক্ত নয় ইত্যাদি। এগুলো হল কবিরা গুনাহ। আর সগিরা বা ছোট গুনাহ হল ঐ সকল হারাম কাজ যেগুলোর জন্য শাস্তি নাই।"
সুতরাং আলেমদের বক্তব্যের আলোকে আমরা বলতে পারি, যে সকল গুনাহ কবিরা পর্যায়ের নয় সেগুলোই সগিরা গুনাহ। তাহলে সগিরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হলে আগে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হবে।
▪কোনও কোনও আলেম বলেন, "যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না সেগুলো কবিরা গুনাহ আর যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া বিভিন্ন প্রকার নেক আমলের দ্বারা মাফ হয় সেগুলো সগিরা গুনাহ।"
🌀 সগিরা বা ছোট গুনাহের ভয়াবহতা:
➤ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوا فِي بَطْنِ وَادٍ، فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ، وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى أَنْضَجُوا خُبْزَتَهُمْ، وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ».
‘সাবধান! গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার ব্যাপারে সর্তক হও। কেননা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার উদাহরণ হল:
একদল লোক কোন এক পাহাড়ের উপত্যকায় যাত্রা বিরতি করলো। এরপর সেখানে কেউ একটা কাঠি নিয়ে এলো, আরেকজন আরেকটা কাঠি নিয়ে এলো।তারপর তারা (এই ছোট ছোট কাঠিগুলো জমা করে সেগুলো দ্বারা) রুটি পাকালো।
ঠিক তদ্রূপ যে সব গুনাহকে তুচ্ছ ভাবা হয় সেগুলোই এতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।“ [মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৩১। সহীহুল জামে‘, নাসিরুদ্দিন আলবানি, আল মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ, হাদিস নং: ২৬৮৬।]
➤ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ ، فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ
“তোমারা ছোট গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে। কেননা, এগুলো জমা হয়ে মানুষকে ধ্বংস করে ছাড়ে।” (সহীহুল জামে লিল আলবানি, হা/২৬৮৭-সহীহ)
➤ বিজ্ঞ আলিমগণ বলেছেন: ছোট গুনাহকে যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে বারবার করে বা তুচ্ছ মনে করে করে তখন তা আর ছোট থাকে না বরং তা বড় গুনাহে পরিণত হয়।
যেমন: ইমাম নওবী রহ. সহীহ মুসলিম এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন:
رُوِيَ عَنْ عُمَر وَابْن عَبَّاس وَغَيْرهمَا رَضِيَ اللَّه عَنْهُمْ : لا كَبِيرَة مَعَ اِسْتِغْفَارٍ ، وَلا صَغِيرَة مَعَ إِصْرَار
مَعْنَاهُ : أَنَّ الْكَبِيرَة تُمْحَى بِالاسْتِغْفَارِ , وَالصَّغِيرَة تَصِير كَبِيرَة بِالإِصْرَارِ اهـ
উমর রা. এবং ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে। তারা বলেছেন: ইস্তিগফার তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হলে কোনও কবিরা (বড়) গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আর কোনও গুনাহ বারবার করা হলে তা আর সগিরা (ছোট) থাকে না।"
এ কথার অর্থ হল: বড় গুনাহ ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) এর মাধ্যমে মুছে যায় আর ছোট গুনাহ বারবার করার মাধ্যমে বড় গুনাহে পরিণত হয়।"
➤ ছোট গুনাহগুলোকে তুচ্ছ মনে না করা আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّـهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ
“আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম।” (সূরা হজ্জ: ৩০)
➤ কবি বলেন: (আরবি কবিতা)
خل الذنوب صغيــــــرها
وكبيـرها فهو التـــــقى
واصنع كمـــــــاش فوق أرض
الشــــوك يحذر ما يرى
لا تحــــقرن صغيـــــرة
إن الجبـــال من الحــصى
সরল অর্থ:
ছোট -বড় সকল পাপকর্ম পরিত্যাগ কর।
এরই নাম ‘আল্লাহ ভীতি’।
আর পথ চল ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন মানুষ
কণ্টকময় রাস্তা দিয়ে সর্তকতার সাথে পথ চলে।
ছোট বলে কোন পাপকেই তুচ্ছ মনে করো না।
কেননা, বড় বড় পাহাড়গুলো (এত বিশাল আকার ধারণ করেছে)
ছোট-ছোট নুড়ি পাথর দ্বারাই।
🌀 সগিরা বা ছোট গুনাহের কতিপয় উদাহরণ:
সগিরা বা ছোট গুনাহের সীমা-সংখ্যা নাই। তবুও নিম্নে বহুল প্রচলিত কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল:
◈ নামাজরত অবস্থায় এদিক ওদিকে দৃষ্টিপাত করা।
◈ নামায অবস্থায় কাপড়, দাড়ি, বা শরীরের কোন অঙ্গ নিয়ে খেলা করা।
◈ জুমার ২য় আযানের সময় বেচাকেনা করা।
◈ কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনও মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাবের উপর তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে অন্যজন প্রস্তাব করা।
◈ বেচাকেনার ক্ষেত্রে কেউ দরদাম করছে এমতাবস্থায় তার শেষ হওয়ার আগে আরেকজন এসে দরদাম শুরু করা।
◈ কোন পর নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা।
◈ স্ত্রীকে এক বৈঠকে একাধিক তালাক দেয়া।
◈ ঋতু চলাকালীন সময়ে তালাক দেয়া।
◈ অতিরিক্ত ঝগড়া-ঝাটি করা।
◈ গীবত শুনে চুপ থাকা।
◈ পাপাচারী লোকদের সাথে ( সংশোধন ও দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া) উঠবস করা।
◈ খোলা স্থানে কিবলার দিকে মুখ করে বা কেবলাকে পেছনে করে পেশাব-পায়খানা করা।
◈ বিনা প্রয়োজনে উপকার হীন কথাবার্তা বলা ইত্যাদি।
পাপ ছোট না বড় সে দিকে না তাকিয়ে আমাদের উচিৎ সব ধরণের পাপাচার থেকে বিরত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। তারপরও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কু প্রবৃত্তির তাড়নায় কোনও পাপাচার করে ফেললে তৎক্ষণাৎ অনুতপ্ত হৃদয়ে সেই ক্ষমাশীল দয়াময় প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়।
পরিশেষে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জনৈক মনিষীর চমৎকার একটি বাণী:
لا تَنْظُرْ إِلَى صِغَرِ الْخَطِيئَةِ ، وَلَكِنِ انْظُرْ إِلَى عَظَمَةِ مَنْ تَعْصِي
"পাপের ক্ষুদ্রতার দিকে না তাকিয়ে যার অবাধ্যতা করছ তার বিশালত্বের দিকে তাকাও।"
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ছোট-বড় সকল প্রকার গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন এবং জেনে-না জেনে যে সকল গুনাহ করে ফেলি সেগুলো ক্ষমা করুন। আমীন।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...