Showing posts with label সালাফি মানহাজ. Show all posts
Showing posts with label সালাফি মানহাজ. Show all posts

Thursday, May 28, 2020

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত:





আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আহলুস সুন্নাহর ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)’র উপদেশ:
প্রশ্ন: আমরা বাইতুল ফাক্বিহ শহর থেকে আহলুস সুন্নাহ’র যুব-সম্প্রদায়। আমাদের নিজেদের জন্যে কোনো ঈদগাহ নেই যেখানে আমরা ঈদের সালাত আদায় করতে পারি। তবে শহরের মধ্যে একটি সর্বজনীন ঈদগাহ রয়েছে, যেটির খতিব একজন সূফী, আর অন্যান্য এমন লোকেরা সেখানে রয়েছে যারা সুরূরী (আধুনিক যুগের অন্যতম খারিজী মুহাম্মাদ সুরূর যাইনুল ‘আবিদীনের অনুসারী)। একারণে আমরা পার্শ্ববর্তী আরেকটি শহরে যাই (ঈদের সালাত আদায়ের জন্য) যা আমাদের শহর থেকে ৫ কি.মি দূরে। তা করার কারণে আমরা আমাদের ভাইদের সমালোচনার সম্মুখীন হই, যারা বলে, “এটা মুসলিমদের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ ঘটানো।” সুতরাং, এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন।
উত্তর: আমরা তোমাকে তামাইয়ুযের (স্পষ্টরূপে স্বতন্ত্র হওয়া) ব্যাপারে নসিহত করছি। তুমি কীভাবে একজন সূফীর পেছনে সালাত আদায় করবে যে তার সূফিয়্যাহ প্রচার করে?! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে। তাও যদি না করতে পারে, তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯]
আর বিদ‘আতীদের থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এবং উপকারী ‘ইলম ও আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার নিকটবর্তী থাকার মাধ্যমে ফিতনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। বারাকাল্লাহু ফীক।
আর যারা তোমার এই কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে, হয় তারা আহলুস সুন্নাহ’র মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ইখওয়ানুল মুসলিমীনের (মুসলিম ব্রাদারহুড) সদস্য, আর না হয় তারা আহলুস সুন্নাহ, কিন্তু হিযবীদের ষড়যন্ত্রের সাথে পরিচিত না।
সুতরাং, আমরা আহলুস সুন্নাহ’র সবাইকে নসিহত করছি সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হতে (অর্থাৎ, বিদ‘আতীদের থেকে আলাদা হতে, ঈদের সালাত, জুম‘আহর সালাত এবং মাসজিদ বা মাসজিদের বাইরের অন্যান্য সালাতের ব্যাপারে)। আত-তামাইয়ুয একটি পরম প্রয়োজনীয়তা। এটা করার পর ইন-শা-আল্লাহ লোকজন আসবে (তোমাদের ঈদগাহে) যদি তোমরা এমন একজন খতিব নিয়োগ করো, যে ‘ইলমের দিক থেকে ততটুক উপকৃত হয়েছে, যতটুক হলে সে অন্যদের উপকৃত করতে পারে। আল্লাহ’র অনুমতিতে (ইচ্ছায়) লোকেরা আসবে, তোমাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং ওই সূফীকে বর্জন করবে।

সুতরাং, আমি আল্লাহ’র কাছে আহলুস সুন্নাহ’র এই ভাইদের ব্যাপারে একটি অভিযোগ করছি। হতে পারে সে একজন সুন্নী, যে কল্যাণ ভালোবাসে, কিন্তু সে এসব বলে (অর্থাৎ, বলে যে ওই সূফী ইমামের পেছনে ও অন্যান্য সুরূরীদের সাথে ঈদের সালাত আদায় না করে আলাদাভাবে সালাত আদায় করা হলো মুসলিমদের ঐক্যে বিভেদ ঘটানো)! যারা এটা বলে তাদেরকে বর্জন করো। আল্লাহ বলেন, “যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তোমাদের মাঝে ফিতনা-ফাসাদই বৃদ্ধি করত। আর তারা তোমাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দৌড়াদৌড়ি করে ফিরত।” [সূরাহ আত-তাওবাহ: ৪৭]
সুতরাং, আমরা বিদ‘আতী এবং রোগাক্রান্ত অন্তরের লোকদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। এবং আমরা রাসূলুল্লাহ’র (ﷺ) সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর মহান কিতাবে বলেন, “নিজেকে তুমি রাখবে তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে তাদের রাব্বকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, ফলে সে তার খেয়ালখুশির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে, তুমি তার আনুগত্য কোরো না।” [সূরাহ কাহফ: ২৮]
সুতরাং, বিদ‘আতীদের কথার ব্যাপারে আমরা ন্যূনতম চিন্তিতও নই। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত খুশি হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মতো বিদ‘আতী হয়ে যাও। সুতরাং, শুরু থেকেই আমরা নিজেদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি, আর আমরা বিদ‘আহ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখব। ওয়াল্লাহুল মুস্তা‘আন।
·
[ইমাম মুক্ববিলের ‘আল-ঈলাহ মিন
বাইতিল ফাক্বীহ’ নামক অডিয়ো ক্যাসেট থেকে]
·
উৎস: https://goo.gl/U8ZSsn
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম



Saturday, November 9, 2019

জঙ্গে কাশ্মীর : শাসকের অনুমতি নেওয়া কি অনাবশ্যক?



▌জঙ্গে কাশ্মীর : শাসকের অনুমতি নেওয়া কি অনাবশ্যক?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

সম্প্রতি কাশ্মীরে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে সম্মাননীয় উস্তায ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ)’র একটি ভিডিয়ো ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিয়োতে দেখা গেছে, ড. জাকারিয়া স্যারকে কাশ্মীরে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ওখানে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। শাসকের অনুমতি ছাড়া ওখানে যুদ্ধ করতে যাওয়া না-জায়েজ। [দ্র.: https://youtu.be/BcboIzSgeKw (১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট থেকে দেখুন)]

তো স্যারের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভুঁইফোঁড় মুফতি সাহেব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। দেখা গেছে, কেউ কেউ বলছে, মাঝে মাঝেই উনি এরকম বিতর্কিত কথাবার্তা বলেন। কেউ বলছে, তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে নাকি তাওহীদ ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। আবার জনৈক হাম্বালী দাবিদার সেলিব্রেটি ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য আংশিক উদ্ধৃত করে ড. জাকারিয়া স্যারের বক্তব্যকে রদ করার অপচেষ্টা করেছেন। অনুরূপভাবে জনৈক দেওবন্দী মুফতি সাহেব উরাধুরা ইস্তিদলাল করে জনমনে সংশয় সৃষ্টি করেছেন। তাই এই বিষয়ে সৃষ্ট সংশয় দূরীকরণের লক্ষ্যে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধ লিখতে বসলাম।

·
সুপ্রিয় পাঠক, এটি একটি সর্বজনবিদিত বিষয় যে, আমভাবে জিহাদ করার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। শাসকের অনুমতি হলো সশস্ত্র জিহাদের অন্যতম শর্ত। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থি লোক এই সুবিদিত বিষয়টি মানতে চায় না। কিছু চরমপন্থি আবার এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংশয় তৈরি করে। কেউ বলে, বর্তমানে মুসলিমদের কোনো প্রধান নেতা নেই, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নেতা, অতএব এখন আর শাসকের অনুমতি নিতে হবে না। আবার কেউ বলে, জিহাদ দু প্রকার। এক. আক্রমণাত্মক জিহাদ, দুই. প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে না। দ্বিতীয়োক্ত সংশয়টি বর্তমানে ছড়ানো হচ্ছে, বিধায় আমরা এই সংশয়ের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

জিহাদ দুই প্রকার। একটি হলো জিহাদুত্ব ত্বালাব তথা আক্রমণাত্মক জিহাদ, যে জিহাদে মুসলিমরা কাফিরদের ভূখণ্ডে গিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করার মাধ্যমে যুদ্ধ আরম্ভ করে। আরেকটি হলো জিহাদুদ দিফা‘ তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। এই জিহাদে শত্রুরা আগবাড়িয়ে মুসলিমদেরকে সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করে এবং যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে শত্রুদেরকে প্রতিহত করা ওই দেশের অধিবাসীদের ওপর ওয়াজিব। তারা যদি অপারগ হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর জিহাদ ওয়াজিব হয়। তারাও অপারগ হলে তার পরে যে দেশ আছে তাদের ওপর জিহাদ ওয়াজিব হয়। এভাবে পুরো মুসলিম বিশ্বের ওপর ওয়াজিব হয়, কিংবা কোনো প্রতিবন্ধকতা—যেমন: অক্ষমতা—থাকার কারণে জিহাদের আবশ্যকতা বাতিল হয়ে যায়। তো আক্রমণাত্মক জিহাদের মতো প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নিতে হবে। তবে যদি এমন হয় যে, শত্রুরা অতর্কিত হামলা করেছে, এমতাবস্থায় শাসকের অনুমতির অপেক্ষা করলে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হবে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু অবস্থা যদি এরকম না হয়, তাহলে অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।

·
এই নীতিমালার আলোকে কাশ্মীরে জিহাদে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে। কারণ হামলা আপনার দেশে—আপনার ওপর হয়নি, হামলা হয়েছে কাশ্মীরে। সেখানে কাশ্মীরীরা পরিস্থিতি অনুযায়ী আত্মরক্ষার তাগিদে যুদ্ধ করবে। তারা অপারগ হলে তাদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশ সাহায্য করবে। বিষয়টি এরকম। এখানে এসব বলে বিশৃঙ্খলা করার কোনো সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশ থেকে শাসকের অনুমতি না নিয়েই বহির্বিশ্বে—কাশ্মীরে হোক বা অন্য কোনো অঞ্চলে হোক—জিহাদ করতে যাওয়া জায়েজ; কারণ ওখানে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হচ্ছে।

আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। প্রথমত, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত হওয়ার বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা‘ উল্লেখ করব। দ্বিতীয়ত, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে ‘উলামায়ে সুন্নাহ’র বক্তব্য উল্লেখ করব। তৃতীয়ত, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত কিনা, এবং এ ব্যাপারে প্রাধান্যযোগ্য মত কোনটি—তা আলোচনা করব। চতুর্থত, শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে উত্থাপিত কিছু বহুল প্রচলিত সংশয়ের জবাব দিব। ওয়াল্লাহুল মুওয়াফফিকু ওয়াল মু‘ঈন।

·
❏ প্রথম ধাপ: আমভাবে জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। এটা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা‘ দ্বারা প্রমাণিত।

এক. কুরআন থেকে:

ক. মহান আল্লাহ বলেছেন, عَفَا اللَّهُ عَنْكَ لِمَ أَذِنْتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَتَعْلَمَ الْكَاذِبِينَ “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। তুমি তাদেরকে কেন অনুমতি দিলে, যতক্ষণ না তোমার কাছে স্পষ্ট হয় তারা সত্য বলেছে এবং তুমি জেনে নাও মিথ্যাবাদীদেরকে।” [সূরাহ তাওবাহ: ৪৩]

খ. মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, فَإِنْ رَجَعَكَ اللَّهُ إِلَىٰ طَائِفَةٍ مِنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ فَقُلْ لَنْ تَخْرُجُوا مَعِيَ أَبَدًا وَلَنْ تُقَاتِلُوا مَعِيَ عَدُوًّا ۖ إِنَّكُمْ رَضِيتُمْ بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوا مَعَ الْخَالِفِينَ “অতএব যদি আল্লাহ তোমাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফিরিয়ে আনেন এবং তারা তোমার কাছে বের হওয়ার অনুমতি চায়, তবে তুমি বল, ‘তোমরা আমার সাথে কখনো বের হবে না এবং আমার সাথে কোনো দুশমনের বিরুদ্ধে কখনো লড়াই করবে না।’ নিশ্চয় তোমরা প্রথমবার বসে থাকাই পছন্দ করেছ, সুতরাং তোমরা বসে থাক, পেছনে থাকা লোকদের সাথে।” [সূরাহ তাওবাহ: ৮৩]

গ. মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ “হে ইমানদারগণ, তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহ’র রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা জমিনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়ো?” [সূরাহ তাওবাহ: ৩৮] অত্র আয়াতে শাসক কর্তৃক জিহাদে বের হওয়ার নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, জিহাদের বিষয়টি শাসকের ওপর অর্পিত, অতএব জিহাদের জন্য তাঁর অনুমতি নিতে হবে।

ঘ. মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا “আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। তারা যদি সেটা রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।” [সূরাহ নিসা: ৮৩] অত্র আয়াতে আল্লাহ সংকটময় পরিস্থিতিতে—জিহাদও তার অন্তর্ভুক্ত—কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে ফিরে যেতে বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিহাদের জন্য কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না, বরং শাসকের অনুমতি নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে জিহাদ করতে হবে।

·
দুই. সুন্নাহ থেকে:

ক. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوْا “যখন তোমাদেরকে (যুদ্ধে) বের হবার নির্দেশ দেওয়া হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৮২৫] ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো, “শাসক যখন তোমাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দিবে, তখন তোমরা যুদ্ধে বের হবে।” [শারহু মুসলিম, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১২]

খ. আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ ﷺ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ “আমি আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জিহাদ হলো হজ’।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৮৭৫] আম্মিজান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) জিহাদের জন্য শাসকের কাছে অনুমতি চাইলেন।

গ. ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ عَرَضَهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَهُوَ ابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْهُ وَعَرَضَهُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَهُ “উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধের জন্য) নিজেকে পেশ করেছিলেন, কিন্তু নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চোদ্দো বছর। তবে খন্দক যুদ্ধের দিন তিনি নিজেকে পেশ করলে নাবী ﷺ তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পনেরো বছর।” [সাহীহ বুখারী, হা/৪০৯৭] অত্র হাদীস থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, জিহাদে যাওয়ার জন্য শাসকের অনুমতি নিতে হবে।

ঘ. আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, إِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ “শাসক তো ঢালস্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জিত হয়।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭] এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ করার কর্তৃত্ব শাসকের হাতে ন্যস্ত। সুতরাং যুদ্ধে যেতে হলে তাঁর অনুমতি নিতে হবে।

·
তিন. ইজমা‘ থেকে:

ইমাম ক্বারাফী (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করে বলেছেন, فإذا تقرر الفرق بين آثار تصرفه ﷺ بالإمامة والقضاء والفتيا؛ فاعلم أن تصرفه –عليه الصلاة والسلام– ينقسم إلى أربعة أقسام: قسم اتفق العلماء على أنه تصرف بالإمامة وإقامة الحدود وإرسال الجيش ونحوها “যেহেতু নেতৃত্ব, বিচার-ফায়সালা ও ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নাবী ﷺ এর কর্তৃত্বের প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য সাব্যস্ত হয়ে গেল, সেহেতু তুমি জেনে রেখো যে, নাবী ﷺ এর কর্তৃত্ব চার ভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে একটি প্রকারের ব্যাপারে ‘উলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, তিনি নেতৃত্ব দেওয়া, দণ্ডবিধি প্রতিষ্ঠা ও সৈন্যদল পাঠানো প্রভৃতির ব্যাপারে পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখতেন।” [আল-আহকাম ফী তাময়ীযিল ফাতাওয়া ‘আনিল আহকামি ওয়া তাসাররুফাতিল ক্বাদ্বী ওয়াল ইমাম; পৃষ্ঠা: ১০৯; গৃহীত: শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; পৃষ্ঠা: ১৪৯]

এই বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদল পাঠানোর কর্তৃত্ব কেবল শাসকের রয়েছে। তাই যুদ্ধে যেতে হলে কর্তৃত্বের অধিকারী শাসকের নিকট অনুমতি নিতে হবে।

·
❏ দ্বিতীয় ধাপ: জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি—মর্মে ‘উলামায়ে সুন্নাহ’র বক্তব্য:

এক. প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম হাসান বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أربع من أمر الإسلام إلى السلطان : الحكم والفيء والجهاد والجمعة “ইসলামের চারটি বিষয়ের কর্তৃত্ব শাসকের ওপর অর্পিত। যথা: রায়, ফাই (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ), জিহাদ ও জুমু‘আহ।” [মাসাইলুল ইমাম আহমাদ (হারব আল-কিরমানীর রিওয়াইয়াত), পৃষ্ঠা: ৩৯২]

দুই. ইমাম ইবনুল মানাসিফ আল-কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) জিহাদ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে দ্বিতীয় শর্ত প্রসঙ্গে বলেছেন, فصل : في طاعة الإمام و الغزو مع كل أمير براً أو فاجراً “পরিচ্ছেদ: শাসকের আনুগত্য এবং পুণ্যবান-পাপাাচারী সকল শাসকের অধীনে যুদ্ধ করা প্রসঙ্গে।” এরপর তিনি তাঁর কথার সপক্ষে দলিল পেশ করেছেন। [আল-ইনজাদ ফী আবওয়াবিল জিহাদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৩]

·
তিন. ইমাম আবুল বারাকাত ‘আব্দুস সালাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز الغزو إلا بإذن الإمام، إلا أن يفاجئهم عدو يخشى علبُه بالإذن فيسقط “শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা না-জায়েজ। তবে যদি শত্রুরা মুসলিমদের ওপর অতর্কিত হামলা করে, আর অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে তখন অনুমতি নেওয়ার শর্ত বাতিল হয়ে যাবে।” [আল-মুহার্রার, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৪১]

চার. ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ويرون –يعني أهل السنة– إقامة الحج والجهاد والجمع مع الأمراء أبراراً كانوا أو فجاراً “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত মনে করে, শাসক পুণ্যবান হোক কিংবা পাপাচারী—হজ প্রতিষ্ঠা করা, জিহাদ করা এবং জুমু‘আহ প্রতিষ্ঠা করার মতো বিষয়গুলো তাঁর (শাসকের) অধীনেই সম্পন্ন করতে হবে।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৫]

অনুরূপ কথা বলেছেন ইমাম ত্বাহাউয়ী, ইমাম ইবনুল মাদীনী, ইমাম আবূ যুর‘আহ আর-রাযী, ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল-সহ আরও অনেকে। রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা‘ঈন। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র স্পষ্টভাবে বলেছেন, الجهاد لا يقوم به إلا ولاة الأمور “শাসক ব্যতীত অন্য কেউ জিহাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।” [মিনহাজুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১১]

·
পাঁচ. ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا تخرج السرايا إلا بإذن الإمام “শাসকের অনুমতি ব্যতীত সৈন্যদল যুদ্ধ করার জন্য বের হবে না।” [আল-জামি‘ লি আহকামিল কুরআন, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৭৭]

ছয়. ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أمر الجهاد موكول للإمام واجتهاده ويلزم الرعية طاعته فيما يراه من ذلك “জিহাদের বিষয়টি শাসকের ওপর এবং শাসকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আর এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা শাসিতের জন্য অপরিহার্য।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ১৩]

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, لا يخرجون إلا بإذن الأمير؛ لأن أمر الحرب موكول إليه، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم، ومكامن العدو وكيدهم، فينبغي أن يرجع إلى رأيه، لأنه أحوط للمسلمين؛ إلا أن يتعذر استئذانه لمفاجأة عدوهم لهم، فلا يجب استئذانه، لأن المصلحة تتعين في قتالهم والخروج إليه “তারা শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করতে বের হবে না। কেননা যুদ্ধের বিষয় শাসকের ওপর অর্পিত। তিনিই শত্রুদের আধিক্য ও স্বল্পতা সম্পর্কে এবং শত্রুদের ঘাঁটি ও কৌশল সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা এটাই মুসলিমদের জন্য অধিক সতর্কতামূলক পন্থা। তবে শত্রুরা তাদেরকে অতর্কিতভাবে হামলা করার কারণে শাসকের অনুমতি নিতে অপারগ হলে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের দিকে ধাবিত হওয়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২১৩]

·
সাত. ইমাম বূতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز الغزو إلا بإذن الأمير؛ لأنه أعرف بالحرب وأمره موكول إليه “শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা তিনিই যুদ্ধ সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই উক্ত বিষয় তার ওপরই অর্পিত।” [কাশশাফুল ক্বিনা‘, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২]

আট. নাজদী মাশায়েখ—‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুল লাত্বীফ বিন ‘আব্দুর রাহমান, হাসান বিন হুসাইন, সা‘দ বিন হামাদ ‘আতীক্ব, মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল লাত্বীফ তৎকালীন শাসক ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ইমাম ‘আব্দুর রাহমান আলে ফায়সালের নিকট পত্র প্রেরণ করেছিলেন, যেখানে তাঁরা বলেছেন,
ورأينا أمرا يوجب الخلل على أهل الإسلام، ودخول التفرق في دولتهم، وهو الاستبداد من دون إمامهم، بزعمهم أنه بنية الجهاد، ولم يعلموا أن حقيقة الجهاد ومصالحة العدو، وبذل الذمة للعامة، وإقامة الحدود، أنها مختصة بالإمام، ومتعلقة به، ولا لأحد من الرعية دخل في ذلك إلا بولايته ؛ وقد سئل صلى الله عليه وسلم عن الجهاد، فأخبر بشروطه بقوله صلى الله عليه وسلم: «من أنفق الكريمة، وأطاع الإمام، وياسر الشريك، فهو المجاهد في سبيل الله». والذي يعقد له راية، ويمضي في أمر من دون إذن الإمام ونيابته، فلا هو من أهل الجهاد في سبيل الله.
“আমরা একটি বিষয় লক্ষ করেছি, যা মুসলিমদের মধ্যে প্রমাদ সংঘটিত হওয়াকে এবং তাদের দেশে বিভেদ সৃষ্টি হওয়াকে অপরিহার্য করে দিবে। আর তা হলো তাদের শাসককে বাদ দিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুতি নেওয়া, এ ধারণাবশত যে, তারা যা করছে তা জিহাদের নিয়তে করছে। অথচ তারা জানে না যে, জিহাদ করা, শত্রুপক্ষের সাথে সন্ধি করা, চুক্তিবদ্ধ লোকদের আশ্রয় দেওয়া, দণ্ডবিধি কায়েম করা প্রভৃতি শাসকের সাথে খাস এবং এগুলো তাঁর সাথেই সম্পৃক্ত। তাই কোনো শাসিতের জন্য শাসকপ্রদত্ত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে এসবের মধ্যে অনুপ্রবেশ করা বৈধ নয়। নাবী ﷺ কে জিহাদ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জিহাদের কিছু শর্ত উল্লেখ করে বলেন, “যে ব্যক্তি মূল্যবান বস্তু দান করে, শাসকের আনুগত্য করে, আর সাথীদের সাথে কোমল ব্যবহার করে, সে হলো আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদকারী প্রকৃত মুজাহিদ।” সুতরাং যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য পতাকা স্থাপন করে, এবং শাসক ও তাঁর প্রতিনিধির অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করে, সে আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদকারী প্রকৃত মুজাহিদ নয়।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৯৫]

·
নয়. ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র নেতৃত্বাধীন ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ি কমিটি (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় জিহাদ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, بدؤه والدخول فيه من شأن ولي أمر المسلمين “জিহাদ আরম্ভ করা এবং জিহাদের মধ্যে প্রবেশ করা মুসলিমদের শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ১২]

দশ. ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) আলজেরিয়ার এক যুবকের সাথে জিহাদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, هل دولتكم تسمح لكم للجهاد في سبيل الله، قال: لا تسمح، قال الشيخ: إذًا كيف تتصورون أنكم تستطيعون أن تجاهدوا؟! كيف تَصِلون إلى منطقة الجهاد؟ “তোমাদের রাষ্ট্র কি তোমাদেরকে আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অনুমতি দিয়েছে? যুবক বলল, অনুমতি দেয়নি। তখন শাইখ বললেন, তাহলে তোমরা কীভাবে ভাবলে যে, তোমরা জিহাদ করতে সক্ষম?! আর তোমরা কীভাবেই বা জিহাদের ময়দানে পৌঁছবে?!” এই ফোনালাপে ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) শাসকের অনুমতি ও কর্তৃত্ব ব্যতীত স্বপ্রণোদিত হয়ে জিহাদ করা থেকে বারণ করেছেন। [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=sbQtJzc4D_4]

·
এগারো. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا يجوز غزو الجيش إلا بإذن الإمام مهما كان الأمر، لأن المخاطب بالغزو و الجهاد هم ولاة الأمر وليس أفراد الناس ... فالغزو بلا إذنه افتيات وتعد على حدوده، ولأنه لو جاز للناس أن تغزو بدون إذن الإمام لأصبحت المسألة فوضى كل من شاء ركب فرسه وغزا؛ ولأنه لو مكن الناس من ذلك لحصلت مفاسد عظيمة “যে অবস্থাই হোক না কেন, শাসকের অনুমতি ব্যতীত সৈন্যদের যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা যুদ্ধ ও জিহাদ করার জন্য শরিয়তপ্রণেতা কর্তৃক শাসকদের সম্বোধন করা হয়েছে, জনসাধারণকে নয়। ... তাই শাসকের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ করা সীমালঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার শামিল। কেননা শাসকের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ করা যদি জনসাধারণের জন্য জায়েজ হতো, তাহলে বিষয়টি গোলযোগে পরিণত হতো। ব্যাপারটি এমন হতো—যার ইচ্ছা হলো, সে তার ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ চলে গেল! যদি মানুষ এরকম করে, তাহলে অবশ্যই বড়ো ধরনের বিপর্যয় সংঘটিত হবে।” [আশ-শারহুল মুমতি‘, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২২]

বারো. ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, الذي يأمر بالقتال وينظم القتال إمام المسلمين، من صلاحيات الإمام إقامة الجهاد و تنظيم الجيوش وتنظيم السرايا يقودها بنفسه أو يؤمر عليها من يقودها فالجهاد من صلاحيات الإمام ولا يجوز للمسلمين أن يقاتلوا بدون إذن الإمام “যিনি যুদ্ধ করার নির্দেশ দিবেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবেন, তিনি হলেন মুসলিমদের শাসক। জিহাদ প্রতিষ্ঠা করা, সৈন্যদল প্রস্তুত করা প্রভৃতি শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়। হয় তিনি নিজে এগুলো পরিচালনা করবেন, কিংবা এসবের পরিচালককে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দিবেন। বস্তুত জিহাদ শাসকের কর্তৃত্বাধীন বিষয়। তাই শাসকের অনুমতি ব্যতীত মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ করা জায়েজ নয়।” [আল-জিহাদ ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু, পৃষ্ঠা: ৩২]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, সশস্ত্র জিহাদ করার জন্য মুসলিম শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। অনুমতি ছাড়া গোপনে যুদ্ধ করতে যাওয়া না-জায়েজ।

·
❏ তৃতীয় ধাপ: প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া কি জরুরি?

আমি বলছি, এ ব্যাপারে ‘উলামাদের মধ্যে দুই ধরনের মত পরিলক্ষিত হয়। যথা:

এক. সংক্ষিপ্ত মত। এই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম ইবনু বায, ইমাম আলবানী, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয রাজিহী-সহ আরও অনেকে। ইনারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে নিঃশর্তভাবে বলেছেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। আসলে এই বক্তব্য ব্যাখ্যার দাবি রাখে, যা দ্বিতীয়োক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

দুই. ব্যাখ্যাপূর্ণ বিস্তারিত মত। এই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইবনু কুদামাহ, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল-সহ আরও অনেকে। তাঁদের মতে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। তবে যদি শত্রুরা অতর্কিত হামলা করে, এমতাবস্থায় শাসকের অনুমতির অপেক্ষা করতে গেলে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হবে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ করতে পারবে। সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে এই মতটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিবেচিত হয়।

·
প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি শর্ত নয়—বলে যে সংশয় সৃষ্টি করা হয়, তার চমৎকার প্রামাণ্য জবাব দিয়েছেন মক্কাস্থ উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ, ড. মুহাম্মাদ বিন ‘উমার সালিম বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ)। আমি শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র সম্পূর্ণ বক্তব্যের সরল বঙ্গানুবাদ পেশ করছি।

‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘উমার সালিম বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—

❝সংশয়: প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়। যেহেতু আক্রমাণত্মক জিহাদে যেসব বিষয়কে শর্ত করা হয়, তা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে শর্ত করা হয় না। শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারটি স্রেফ আক্রমণাত্মক জিহাদের জন্য শর্ত।

সংশয়ের জবাব: মৌলনীতি হলো—জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া শর্ত। তবে শত্রুরা যদি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে, আর শাসকের অনুমতি নিতে গিয়ে শত্রুকে প্রতিরোধ করতে দেরি করলে মুসলিমদের ওপর শত্রুর উন্মত্ততার আশঙ্কা প্রকটিত হয়, তাহলে সেই অবস্থার কথা ভিন্ন। কিন্তু এই অবস্থা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিতে হবে।

ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, سمعت أبي يقول: إذا أذن الإمام، القوم يأتيهم النفير فلا بأس أن يخرجوا. قلت لأبي: فإن خرجوا بغير إذن الإمام؟ قال: لا، إلا أن يأذن الإمام، إلا أن يكون يفجأهم أمر من العدو ولا يمكنهم أن يستأذنوا الإمام فأرجو أن يكون ذلك دفعًا من المسلمين “আমি আমার পিতাজিকে (অর্থাৎ ইমাম আহমাদকে) বলতে শুনেছি, “যদি শাসক অনুমতি দেয়, আর জনগণের নিকট শত্রুদের সৈন্যদল আগমন করে, তাহলে জিহাদের জন্য বের হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।” আমি পিতাজিকে বললাম, “তারা যদি শাসকের অনুমতি না নিয়ে জিহাদের জন্য বের হয় তাহলে?” তিনি বললেন, “না, যতক্ষণ না শাসক অনুমতি দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বের হবে না। তবে শত্রুরা যদি তাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে, আর শাসকের অনুমতি নেওয়াও তাদের জন্য সম্ভবপর না হয়, তাহলে আমি মনে করি, তখন অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা মুসলিমদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ হিসেবে গণ্য হবে।” (মাসাইলু ‘আব্দিল্লাহি লি আবীহী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৫৮)

ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে দুটো অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন এবং দ্বিতীয় অবস্থার ক্ষেত্রে (তথা অতর্কিত হামলার ক্ষেত্রে) শাসকের অনুমতি নেওয়াকে শর্ত করেননি।

ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,
لأن أمر الحرب موكول إليه، وهو أعلم بكثرة العدو وقلتهم، ومكامن العدو وكيدهم، فينبغي أن يرجع إلى رأيه، لأنه أحوط للمسلمين، إلا أن يتعذر استئذانه لمفاجأة عدوهم لهم، فلا يجب استئذانه، لأن المصلحة تتعين في قتالهم، والخروج إليهم، لتعين الفساد في تركهم، لذلك لما أغار الكفار على لقاح النبي ﷺ فصادفهم سلمة بن الأكوع خارجًا من المدينة، تبعهم فقاتلهم من غير إذن، فمدحه النبي ﷺ، قال: َخَيْرَ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ‏ بْنُ الْأَكْوَعِ. وأعطاه سهم فارس وراجل. اه‍
“কেননা যুদ্ধের বিষয় শাসকের ওপর অর্পিত। তিনিই শত্রুদের আধিক্য ও স্বল্পতা সম্পর্কে এবং শত্রুদের ঘাঁটি ও কৌশল সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা এটাই মুসলিমদের জন্য অধিক সতর্কতামূলক পন্থা। তবে শত্রুরা তাদেরকে অতর্কিতভাবে হামলা করার কারণে শাসকের অনুমতি নিতে অপারগ হলে ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে তাদের সাথে যুদ্ধ করা এবং তাদের দিকে ধাবিত হওয়ার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। যেহেতু তাদেরকে ছেড়ে দিলে বিপর্যয় অপরিহার্য হয়ে পড়বে। এজন্য কাফিররা যখন নাবী ﷺ এর উটের পালের ওপর হামলা করল, আর কাকতালীয়ভাবে সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ মদিনার বাইরে তাদেরকে পেয়ে গেলেন, তখন তিনি তাদেরকে ধাওয়া করলেন এবং (নাবীজীর) অনুমতি ছাড়াই তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন। পরে নাবী ﷺ তাঁর প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘আমাদের শ্রেষ্ঠ পদাতিক হলো সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘।’ এরপর তিনি ﷺ তাঁকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ দিয়েছিলেন।” (আল-মুগনী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৩৬৭)

উক্ত কথার দলিল: নাবী ﷺ এর যুগে মুশরিকরা যখন মক্কায় ছিল, তখন তাদের সাথে জিহাদ ও যুদ্ধ করা এবং তাদেরকে মক্কা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ছিল প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। এতৎসত্ত্বেও রাসূল ﷺ তাদের সাথে সন্ধি করেছেন। যেমন: হুদাইবিয়ার সন্ধি। তিনি শুরুতেই তাদের সাথে যুদ্ধ করেননি এবং মক্কায় তাদেরকে প্রতিহত করেননি। রক্ষণাত্মক জিহাদের যদি শর্ত নাই থাকত এবং তা যদি (নিঃশর্তভাবে) ফরজে আইন তথা প্রত্যেকের ওপর ফরজ হতো, তাহলে সাহাবীগণের যুদ্ধ করতে দেরি করা এবং কাফিরদের সাথে সন্ধি করা জায়েজ হতো না।

এরই ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, শত্রুদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক জিহাদ করার সামর্থ্য না থাকলে শত্রুদের সাথে সন্ধি করা জায়েজ আছে, যদি শাসক সেই সিন্ধান্ত নেন তবেই। সেক্ষেত্রে যে অবস্থা তৈরি হয়, তা আক্রমণাত্মক জিহাদের মতোই। যেমন রাসূল ﷺ মুশরিকদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধি করেছেন। তিনি তখন মক্কার ভূখণ্ড এবং সেখানে অবস্থিত মুসলিমদের সম্পদকে বিপর্যয় থেকে প্রতিহত করেননি।

শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার সামর্থ্য না থাকলে, যুদ্ধ না করা জায়েজ আছে—এই কথাটির আরও দলিল হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক ‘ঈসা ﷺ এর প্রতি নির্দেশ (যে নির্দেশ তিনি কেয়ামতের প্রাক্কালে দিবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় আবির্ভূত হওয়ার পর)। হাদীসে এসেছে, তিনি বলবেন, إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لاَ يَدَانِ لأَحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ “আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটেয়েছি, যাদের সঙ্গে কারও যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। অতএব তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাও।” (সাহীহ মুসলিম, হা/২৯৩৭; ফিতনা অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৫৪; পরিচ্ছেদ- ২০)

এটা সুবিদিত যে, ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবে যা ঘটবে, তা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের মতোই। এ সত্ত্বেও মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের সাথে লড়াই না করার নির্দেশ দিবেন। এই হাদীসের মধ্যে এ কথার বড়ো দলিল রয়েছে যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের দ্বিতীয় অবস্থায় শত্রুর সাথে লড়াই করার জন্য শক্তি ও সামর্থ্য থাকা শর্ত। অন্যথায় উক্ত জিহাদ ওয়াজিব নয়।

ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘র যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, সেটাও এ ব্যাপারে একটি দলিল। সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,
قَدِمْنَا الْحُدَيْبِيَةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ .... ثُمَّ قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِظَهْرِهِ مَعَ رَبَاحٍ غُلاَمِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَأَنَا مَعَهُ وَخَرَجْتُ مَعَهُ بِفَرَسِ طَلْحَةَ أُنَدِّيهِ مَعَ الظَّهْرِ فَلَمَّا أَصْبَحْنَا إِذَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْفَزَارِيُّ قَدْ أَغَارَ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَاسْتَاقَهُ أَجْمَعَ وَقَتَلَ رَاعِيَهُ قَالَ فَقُلْتُ يَا رَبَاحُ خُذْ هَذَا الْفَرَسَ فَأَبْلِغْهُ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ وَأَخْبِرْ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَنَّ الْمُشْرِكِينَ قَدْ أَغَارُوا عَلَى سَرْحِهِ - قَالَ - ثُمَّ قُمْتُ عَلَى أَكَمَةٍ فَاسْتَقْبَلْتُ الْمَدِينَةَ فَنَادَيْتُ ثَلاَثًا يَا صَبَاحَاهْ ‏.‏ ثُمَّ خَرَجْتُ فِي آثَارِ الْقَوْمِ أَرْمِيهِمْ بِالنَّبْلِ وَأَرْتَجِزُ أَقُولُ أَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمَ يَوْمُ الرُّضَّعِ فَأَلْحَقُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَصُكُّ سَهْمًا فِي رَحْلِهِ حَتَّى خَلَصَ نَصْلُ السَّهْمِ إِلَى كَتِفِهِ - قَالَ - قُلْتُ خُذْهَا وَأَنَا ابْنُ الأَكْوَعِ وَالْيَوْمُ يَوْمُ الرُّضَّعِ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا زِلْتُ أَرْمِيهِمْ وَأَعْقِرُ بِهِمْ.
“আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে হুদাইবিয়ায় পৌঁছলাম। ... তারপর আমরা মদিনায় আসলাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তার গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটসমূহ পাঠালেন। আর আমিও ত্বালহাহ’র ঘোড়ায় চড়ে তার সাথে সাথে উটগুলো হাকিয়ে চারণভূমির দিকে নিয়ে গেলাম। যখন আমাদের ভোর হলো, তখন ‘আব্দুর রাহমান ফাজারী হামলা করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সমস্ত উট ছিনিয়ে নিয়ে গেল এবং পশুপালের রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, “এই রাবাহ, ধরো, এই ঘোড়া নিয়ে তুমি ত্বালহাহ বিন ‘উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলবে, মুশরিকরা তাঁর উটগুলো লুট করে নিয়ে গেছে।” তিনি (সালামাহ) বলেন, এরপর আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম এবং মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার চিৎকার দিলাম, ‘ইয়া সাবাহা!’ তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম, আর তাদের ওপর তির নিক্ষেপ করতে লাগলাম। তখন আমি মুখে এই পঙ্‌ক্তি উচ্চারণ করছিলাম, “আমি হলাম আকওয়া‘র পুত্র, আজকের দিন মাতৃদুগ্ধ (কে কত খেয়েছে তা) স্মরণ করার দিন।” সেসময় আমি তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তার ওপর এমনভাবে তির নিক্ষেপ করেছি যে, তিরের অগ্রভাগ তার কাঁধ ছেদ করে বেরিয়েছে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১৮০৭; জিহাদ অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৩৩; পরিচ্ছেদ- ৪৫)

হাদীস থেকে দলিল গ্রহণের স্থান হলো: সালামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র এই কথা—“এই রাবাহ, ধরো, এই ঘোড়া নিয়ে তুমি ত্বালহাহ বিন ‘উবাইদুল্লাহকে পৌঁছে দিবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলবে, মুশরিকরা তাঁর উটগুলো লুট করে নিয়ে গেছে।” এরপর আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম এবং মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার চিৎকার দিলাম, ‘ইয়া সাবাহা!’ তারপর আমি লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম।”

দলিলগ্রহণের দিক: সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘র কাছে এটি সুনির্ধারিত বিষয় ছিল যে, জিহাদের জন্য অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। তাই তিনি তাঁর যুদ্ধযাত্রার খবর পৌঁছানোর জন্য একজনকে রাসূল ﷺ এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তাঁর যখন প্রবল ধারণা হলো যে, তিনি যদি অপেক্ষা করেন, তাহলে শত্রুরা উটের পাল নিয়ে চলে যাবে, আর তিনি যদি তাদেরকে ধাওয়া করেন, তাহলে উটগুলোকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবেন, তখন তিনি তাদেরকে ধাওয়া শুরু করলেন, অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলেন না। পরে রাসূল ﷺ তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং তাঁকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ প্রদান করেছেন।

পূর্বোক্ত হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে, قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : كَانَ خَيْرَ فُرْسَانِنَا الْيَوْمَ أَبُو قَتَادَةَ وَخَيْرَ رَجَّالَتِنَا سَلَمَةُ‏.‏ قَالَ ثُمَّ أَعْطَانِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ سَهْمَيْنِ سَهْمُ الْفَارِسِ وَسَهْمُ الرَّاجِلِ فَجَمَعَهُمَا لِي جَمِيعًا “রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আজকের দিনে আমাদের শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী হচ্ছে আবূ ক্বাতাদাহ, আর আমাদের শ্রেষ্ঠ পদাতিক হচ্ছে সালামাহ।” সালামাহ বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসেবে গনিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি একত্রে দুটো অংশ দিলেন।” (প্রাগুক্ত)❞ [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৪]

·
‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব।

এখানে একটি বিষয়ের দিকে ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারছি না। কিছু চরমপন্থি আছে দেখবেন, যারা বলে, যুদ্ধের জন্য শক্তি-সামর্থ্যের দরকার নেই, অমুক অমুক যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা কত কম ছিল, তারপরও তাঁরা যুদ্ধ করেছেন! অথচ আপনারা দেখলেন, ‘ঈসা ﷺ এর প্রতি আল্লাহ’র কী নির্দেশ। আল্লাহ কী চাইলে পারেন না, তাঁর রাসূলকে সাহায্য করতে?! এই নির্দেশের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ’র প্রজ্ঞা। এই নির্দেশ প্রমাণ করে যে, সামর্থ্য না থাকলে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে এবং সন্ধি করবে। যাইহোক আমরা মূল আলোচনায় ফিরে যাই।

·
প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ’র বক্তব্য উপস্থাপন করি। সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সামাহাতুল ওয়ালিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—

السؤال: هل يحتاج جهاد الدفع إلى إذن الإمام؟
الجواب: نعم، نحن مع ولي أمر المسلمين، ومع ولي أمرنا، دائمًا وأبدًا، وجهاد الدفع لا بد من إذن الإمام، لا بد من الإذن في الجهاد عمومًا، سواءً كان جهاد الطلب أو جهاد الدفع، ما يصلح الفوضى أبدًا، ولا بد أن نكون مع الإمام، ولا يجوز أننا نقاتل إلا بإذنه، لا نذهب هنا وهناك إلى القتال في ساحة—خارج البلاد إلا بإذن ولي أمرنا، لأننا رعية تحت راعٍ، فلا بد أن نتقيد بأوامره لما في ذلك من المصالح العظيمة، وهو ينظر في مصالح المسلمين ويتولى هذا الأمر، وهو نائب عن المسلمين، ينظر فيما هو الأصلح، فإذا أمر أطعناه، وإذا نهى أطعناه، لما في ذلك من المصلحة العظيمة.

প্রশ্ন: “প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য কি শাসকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে?”

উত্তর: “হ্যাঁ। আমরা মুসলিমদের শাসকের সঙ্গে আছি। আমরা সর্বদাই আমাদের শাসকের সঙ্গে আছি। প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য অবশ্যই শাসকের অনুমতি নিতে হবো। জিহাদের জন্য ব্যাপকভাবে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। চাই তা আক্রমণাত্মক জিহাদ হোক, কিংবা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হোক—উভয়ের ক্ষেত্রে একই কথা। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা করা চলবে না। আমাদেরকে (এ ব্যাপারে) শাসকের সাথে থাকা আবশ্যক। তাঁর অনুমতি ব্যতীত আমাদের জন্য যুদ্ধ করা না-জায়েজ। আমরা আমাদের শাসকের অনুমতি না নিয়ে দেশের বাইরে—বিশ্বের এখানে ওখানে—যুদ্ধ করার জন্য যাব না। কেননা আমরা একজন নেতার অধীনস্থ প্রজা। তাই আমাদের জন্য তাঁর নির্দেশনা মান্য করা আবশ্যক। কারণ এতে বিরাট কল্যাণ রয়েছে। শাসক মুসলিমদের কল্যাণের দিকে নজর দিবেন এবং তিনি নিজে এই বিষয়ের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি হলেন মুসলিমদের প্রতিনিধি। তিনি লক্ষ করবেন, কী করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তিনি যখন নির্দেশ দিবেন, তখন আমরা তাঁকে মান্য করব। তিনি যখন নিষেধ করবেন, তখন আমরা তাঁকে মান্য করব। কেননা এতে বিরাট কল্যাণ রয়েছে।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=jJq0c10BAvQ.]

·
ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) অন্যত্র বলেছেন, “যে ব্যক্তি তোমার বাড়িতে, অথবা তোমার এলাকায় তোমার ওপর হামলা করে, তোমার সম্পদ কেড়ে নিতে চায়, কিংবা তোমার প্রাণ হরন করতে চায়, অথবা তোমার সম্ভ্রম নষ্ট করতে চায়, তুমি সে ব্যক্তিকে প্রতিহত করতে পারবে, যদি তাতে বড়ো কোনো বিপর্যয় সংঘটিত না হয়। এক্ষেত্রে তুমি তাকে প্রতিহত করবে, এ জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। মহান আল্লাহ তোমাকে এই অনুমতি দিয়েছেন যে, তুমি তোমার জান, মাল ও সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য শত্রুকে প্রতিহত করতে পারবে।

পক্ষান্তরে সার্বজনিক প্রতিরক্ষা তথা দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই শাসক লাগবে। তিনি বিষয়টি সুবিন্যস্ত করবেন, এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করবেন এবং সৈন্যদল প্রস্তুত করবেন। শাসক থাকা আবশ্যক। এটি গোলযোগের বিষয় নয়। ... অন্যথায় তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হবে এবং শেষে দেখা যাবে, তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে দিবে। কিন্তু যখন শাসকের নেতৃত্বে যুদ্ধ হবে, তখন এরকম মতোবিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না।” [দ্র.: https://youtu.be/terop7kP-Jo.]

·
সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ড. ‘আব্দুল ‘আযীয আর-রাঈস (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

تقدمت الأدلة على وجوب أخذ إذن ولي الأمر في الجهاد، وبعض الناس أثار على هذا شبهات، منهم من قال: إن هذا في جهاد الطلب بدون جهاد الدفع، فيقال: إن الأدلة لم تفرق بين جهاد الدفع وجهاد الطلب. وقد نص الإمام مالك والإمام أحمد أن هذا حتى في جهاد الدفع. وذكر هذا الخراقي، وذكر ابن قدامة في المغني. قالوا : إلا أن لا يتيسر هذا الأمر، بأن يأتي العدو مباغتا المسلمين، وينقطع سبيل الإتصال بين المسلمين وبين ولي أمرهم، ففي هذا الحال لا يحتاج إلى إذن ولي الأمر وفي أمثاله من الحالات. والإ الأصل: فإنه بجب أخذ إذن ولي الأمر.

“জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক হওয়ার দলিলভিত্তিক আলোচনা গত হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু লোক এ ব্যাপারে সংশয় ছড়াচ্ছে। তাদের কেউ কেউ বলছে, কেবল আক্রমণাত্মক জিহাদের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া জরুরি, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে নয়। অথচ ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এ মর্মে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি। ইমাম খিরাক্বী এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম ইবনু কুদামাহ এটা ‘মুগনী’ গ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তবে যদি অনুমতি নেওয়া সহজসাধ্য না হয়, যেমন আকস্মিকভাবে শত্রুরা মুসলিমদের ওপর চড়াও হলো, এমতাবস্থায় মুসলিমদের সাথে তাদের শাসকের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন, তাহলে এরকম অবস্থায় শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। অন্যথায় মৌলনীতি হলো—শাসকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।” [দ্র.: https://youtu.be/Dn3_EQ6AGDY (০ মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত)]

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি।

·
❏ চতুর্থ ধাপ: শাসকের অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারে উত্থাপিত কিছু বহুল প্রচলিত সংশয়ের জবাব

এক. হুদাইবিয়ার সন্ধি চলাকালীন সময় মক্কার নির্যাতিত সাহাবী আবূ বাসির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ও তাঁর সঙ্গীবর্গ মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। অথচ তাঁরা রাসূল ﷺ এর অধীনে ছিলেন না। সম্পূর্ণ ঘটনা সাহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে (হা/২৭৩১)। এই ঘটনা থেকে অনেকে দলিল গ্রহণ করেন যে, জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়।

·
এই সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, أبو بصير رضي الله عنه ليس في قبضة الإمام ولا تحت إمرته، بل هو في قبضة الكفار وفي ولايتهم، فهو يريد أن يتخلص من قبضتهم و ولايتهم، فليس هو تحت ولاية الرسول ﷺ لأن الرسول سلّمه لهم بموجد العهد والصلح الذي جرى بينه وبين الكفار، فليس هو في بلاد المسلمين ولا تحت قبضة ولي الأمر “আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কোনো শাসকের বা কোনো রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন ছিলেন না। বরং তিনি কাফিরদের কবজায় ছিলেন এবং কাফিরদের অধীনে ছিলেন। তিনি তাদের কবজা ও অধীন থেকে নিষ্কৃতি চেয়েছিলেন। তিনি রাসূল ﷺ এর অধীনে ছিলেন না। কারণ কাফিরদের সাথে সন্ধি ও চুক্তিবদ্ধ থাকার কারণে রাসূল ﷺ তাঁকে কাফিরদের কাছে সোপর্দ করেছিলেন। তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) না ছিলেন কোনো মুসলিম দেশে, আর না কোনো শাসকের অধীনে।” [শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; পৃষ্ঠা: ৯৪]

·
‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) উক্ত সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ولو كان عملًا مرغبًا فيه مطلقًا، لرأينا من الصحابة الذين كانوا مع الرسول ﷺ في المدينة من جاء إلى أبي بصير وقاتل معه، ولكنه لما لم يكن من أبواب الجهاد، لم يحصل هذا، نعم القصة تدل على أن من كان حاله كحال أبي بصير ومن معه يجوز له فعل ذلك، فلا يتخذ ذلك قاعدة في الجهاد “এটা যদি নিঃশর্তভাবে উৎসাহব্যঞ্জক কাজ হতো, তাহলে আমরা অবশ্যই দেখতাম যে, রাসূল ﷺ এর সাথে মদিনায় অবস্থানকারী সাহাবীরাও আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে চলে যেতেন এবং তাঁর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতেন। যেহেতু এটা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই সেরকমটি ঘটেনি। হ্যাঁ, এই ঘটনা প্রমাণ করছে, যার অবস্থা আবূ বাসীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ও তাঁর সাথীদের মতো হবে, তার জন্য ওই কাজ করা জায়েজ আছে। তাই কেউ যেন এটাকে জিহাদের মূলনীতি না বানায়।” [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭০]

·
দুই. কতিপয় লোক নাজদী শাইখ ইমাম ‘আব্দুর রহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র একটি উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন যে, জিহাদের জন্য ইমামের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। উক্তিটি হলো, “কোন কিতাব বা কোন দলিল দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, শাসক না থাকলে জিহাদ ওয়াজিব হয় না? এটি দ্বীনের মধ্যে মিথ্যা সংযোজন এবং মুমিনদের অনুসৃত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার শামিল। এ বক্তব্যকে বাতিলকারী দলিলগুলো এতটাই প্রসিদ্ধ যে, তা উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে না। সেসব দলিলের মধ্যে অন্যতম হলো—জিহাদের আদেশের ব্যাপকতা, জিহাদ করার প্রতি উৎসাহপ্রদান এবং তা বর্জনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে বর্ণিত শার‘ঈ দলিল।” [আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৯৭]

এই সংশয়ের জবাব দিতে গিয়ে ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, كلام هذا العالم عن حال جهاد الدفع الذي يفجأ فيه العدو بلدًا من بلاد المسلمين، ففي هذا الحال دفع العدو فيه من باب دفع الصائل، فلا يشترط فيه شرط مما يشترط في جهاد الطلب والدعوة. أو يريد هذا العالم بكلامه الرد على من يشترط لوجوب الجهاد إذن الإمام العام، الذي تنضوي تحته جميع بلاد الإسلام، وعلى هذا فإن هذا فلا جهاد اليوم، لأنه لا يوجد إمام عام لجميع المسلمين في الدنيا، فالعالم يرد على من يقول ذلك، لا أنه ينفي طلب إذن ولي الأمر في الأصل “এই ‘আলিম প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের বিশেষ অবস্থার ব্যাপারে বলেছেন, যে অবস্থায় শত্রুরা কোনো মুসলিম দেশে অতর্কিতভাবে হামলা করে। এই অবস্থায় শত্রুদের প্রতিহত করা অতর্কিত হামলাকারীকে প্রতিহত করার পর্যায়ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদের শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে না। অথবা এই ‘আলিম তাঁর উক্ত কথার মাধমে তাদেরকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন, যারা জিহাদ ওয়াজিব হওয়ার জন্য সার্বজনিক শাসক (ইমামে ‘আম)—সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্র যাঁর অধীনে থাকে—থাকা শর্ত বলে দাবি করে। এই শর্ত মেনে নিলে বর্তমানে কোনো জিহাদই থাকবে না। কেননা বর্তমান পৃথিবীতে মুসলিমদের কোনো সার্বজনিক শাসক নেই। আসলে এই ‘আলিম উক্ত কথার কথককে খণ্ডন করেছেন। তিনি শাসকের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টিকে নাকচ করেননি।” [‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; পৃষ্ঠা: ৭১-৭২]

·
তিন. ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) নাকি বলেছেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়?! ইমাম ‘উসাইমীন বিরচিত শারহুল মুমতি‘ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে, তাঁর মতে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। আসলে উক্ত কথা পুরোপুরি সঠিক নয়। তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য পড়লে বোঝা যায়, তিনি আমাদের নিবন্ধে উল্লিখিত দ্বিতীয় মতটিই ব্যক্ত করেছেন।

ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র সম্পূর্ণ বক্তব্য নিম্নরূপ— لا يجوز لأحد أن يغزو دون إذن الإمام إلا على سبيل الدفاع، وإذا فاجأهم عدو يخافون كلبه فحينئذٍ لهم أن يدافعوا عن أنفسهم لتعين القتال إذًا “কারও জন্য শাসকের অনুমতি ব্যতীত যুদ্ধ করা জায়েজ নেই। তবে আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করলে সে কথা ভিন্ন। যদি শত্রুরা মুসলিমদের ওপর অতর্কিত হামলা করে, আর মুসলিমরা তাদের মাধ্যমে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, তখন তাদের জন্য আত্মরক্ষা করা জায়েজ হবে। কেননা তখন যুদ্ধ করা প্রত্যেকের ওপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে।” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২২]

·
প্রিয় পাঠক, ইমাম ‘উসাইমীনের উক্তিটি ভালোভাবে পড়লে বুঝতে পারবেন যে, শাইখ মুহাম্মাদ বাযমূল দলিল দিয়ে যেই তাফসীলী (বিস্তারিত) আলোচনা করেছেন, ইমাম ‘উসাইমীন সেই কথাই এখানে বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—ইমাম ‘উসাইমীনের এই বক্তব্য থেকে কিছু ভাই বুঝেছেন যে, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ মাত্রই তাতে শাসকের অনুমতি লাগবে না। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ইমাম ‘উসাইমীন এখানে দু প্রকার জিহাদের কোনো আলোচনাই করেননি। বরং তিনি বিশেষ অবস্থাটির কথা বর্ণনা করেই ক্ষান্ত থেকেছেন। যেই বিশেষ অবস্থাটি হলো—শত্রুরা যখন অতর্কিতভাবে হামলা করে, আর সেসময় অনুমতি নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নাই, বরং অনুমতির জন্য অপেক্ষা করলে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তখন আত্মরক্ষার তাগিদে অনুমতি ছাড়াই জিহাদ করা জায়েজ হবে। অন্যথায় প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হবে।

·
চার. অনেকে বিভিন্ন ইমামদের থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ যেহেতু ফরজে আইন, সেহেতু এর জন্য শাসকের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। এ ধরনের সংক্ষিপ্ত কথাও ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, অনুমতি নেওয়ার দলিলগুলো প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য স্বতন্ত্র বিধান সাব্যস্ত করেনি। দ্বিতীয়ত, ইমামদের উক্ত বক্তব্য সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হয়, যা আমরা ইতঃপূর্বে আলোচনা করেছি। এই বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন নেই মর্মে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যথায় প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্যও অনুমতি নিতে হবে।

অতএব জিহাদ হবে সুশৃঙ্খলভাবে, এতে কোনো বিশৃঙ্খলা বা গোলযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই বাংলাদেশ থেকে যেসব উগ্রপন্থি গোপনে বহির্বিশ্বে যুদ্ধ করতে যায় এবং অন্যদের যেতে উৎসাহ দেয়, আপনারা তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। এরা যা করছে তা অন্যায় ও গোলযোগ, এদের কর্মকাণ্ডকে প্রকৃত জিহাদ বলা যায় না। তাই নিজেরাও এদের থেকে সাবধান থাকবেন, এবং পরিচিতদেরকেও সাবধান করবেন। আর সর্বোপরি, আমরা সবাই মজলুম ভাইদের জন্য দু‘আ করব। কেবল এই কাজটা করার মতো সামর্থ্যই আমাদের আছে। আল্লাহ যেন মজলুম ভাইদের প্রতি রহম করেন, তাঁদেরকে সম্মানিত করেন, আর আল্লাহদ্রোহী কাফিরদের লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত করেন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘ঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম। আমীন, আমীন, সুম্মা আমীন।

·
❏ প্রমাণপঞ্জি:

(১) ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ : তা‘রীফুহু ওয়া আনওয়া‘উহু ওয়া দ্বাওয়াবিতুহু; রেডিয়োসুন্নাহ ডট কম থেকে সংগৃহীত সফট কপি।

(২) শাইখ ড. হামাদ আল-‘উসমান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-জিহাদ আহকামুহু ওয়া আনওয়া‘উহ; গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ‘আল্লামাহ সালিহ আস-সুহাইমী (হাফিযাহুল্লাহ), আদ-দারুল আসারিয়্যাহ, আম্মান কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি.।

(৩) “ইশতিরাতু ইযনিল ইমামি ফিল জিহাদ”– শীর্ষক নিবন্ধ; গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম।

·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

·
রচনাকাল—
বিকেল ৫ টা।
বুধবার।
২৬শে জিলহজ, ১৪৪০ হিজরি।
১৩ই ভাদ্র, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
২৮শে আগস্ট, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

ইয়াযীদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র অবস্থান



▌ইয়াযীদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র অবস্থান

·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় বলা হয়েছে—

وأما يزيد بن معاوية فالناس فيه طرفان ووسط، وأعدل الأقوال الثلاثة فيه أنه كان ملكًا من ملوك المسلمين له حسنات وسيئات ولم يولد إلاَّ في خلافة عثمان رضي الله عنه، ولم يكن كافرًا ولكن جرى بسببه ما جرى من مصرع الحسين وفعل ما فعل بأهل الحرة، ولم يكن صاحبًا ولا من أولياء الله الصالحين. قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله : وهذا قول عامة أهل العقل والعلم والسنة والجماعة، وأما بالنسبة للعنه فالناس فيه ثلاث فرق: فرقة لعنته، وفرقة أحبته، وفرقة لا تسبه ولا تحبه، قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى: وهذا هو المنصوص عن الإِمام أحمد وعليه المقتصدون من أصحابه وغيرهم من جميع المسلمين، وهذا القول الوسط مبني على أنه لم يثبت فسقه الذي يقتضي لعنه أو بناء على أن الفاسق المعين لا يلعن بخصوصه إما تحريمًا وإما تنزيهًا، فقد ثبت في [ صحيح البخاري ] عن عمر في قصة عبد الله بن حمار الذي تكرر منه شرب الخمر وجلده رسول الله صلى الله عليه وسلم لما لعنه بعض الصحابة قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تلعنه، فإنه يحب الله ورسوله ، وقال صلى الله عليه وسلم: لعن المؤمن كقتله متفق عليه.
وهذا كما أن نصوص الوعيد عامة في أكل أموال اليتامى والزنا والسرقة فلا يشهد بها على معين بأنه من أصحاب النار لجواز تخلف المقتضى عن المقتضي لمعارض راجح: إما توبته، وإما حسنات، وإما مصائب مكفرة، وإما شفاعة مقبولة، وغير ذلك من المكفرات للذنوب هذا بالنسبة لمنع سبه ولعنه. وأما بالنسبة لترك المحبة فلأنه لم يصدر منه من الأعمال الصالحة ما يوجب محبته، فبقي واحدًا من الملوك السلاطين، ومحبة أشخاص هذا النوع ليست مشروعة، ولأنه صدر عنه ما يقتضي فسقه وظلمه في سيرته، وفي أمر الحسين وأمر أهل الحرة. وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم.

“ইয়াযীদ বিন মু‘আউয়িয়াহর ব্যাপারে মানুষ দুটো প্রান্তিক ও একটি মধ্যপন্থি দলে বিভক্ত। ইয়াযীদের ব্যাপারে তিনটি অভিমতের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ মত হলো—সে মুসলিমদের একজন রাজা ছিল, তার ভালোকর্ম ছিল, আবার মন্দকর্মও ছিল। সে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র খেলাফত-আমলে জন্মগ্রহণ করে। সে কাফির ছিল না। কিন্তু তার কারণে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকাণ্ড ও হার্রাহ’র যুদ্ধের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। সে না ছিল সাহাবী, আর না ছিল সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহ’র ওলি।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এটাই অধিকাংশ প্রাজ্ঞ ও বিবেকবান আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত।” [১]

আর ইয়াযীদকে লানত করার ব্যাপারেও মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত। একদল ইয়াযীদকে লানত করে। একদল ইয়াযীদকে ভালোবাসে। আরেক দল ইয়াযীদকে গালি দেয় না, আবার ভালোও বাসে না। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইমাম আহমাদ এই মত ব্যক্ত করেছেন। আর এই মতের ওপরই রয়েছেন ইমাম আহমাদের অনুসারী ও অন্যান্য মুসলিমদের মধ্য থেকে মধ্যপন্থি ব্যক্তিবর্গ।”

এই মধ্যপন্থি মত এ বিষয়ের ওপর ভিত্তিশীল যে, ইয়াযীদের এমন কোনো পাপকাজ প্রমাণিত হয়নি, যা তাকে লানত করার দাবি করে; অথবা নির্দিষ্টভাবে একজন পাপী লোককে লানত করা হয় হারাম আর নাহয় মাকরূহে তানযীহী (অপছন্দনীয় কর্ম)। সাহীহ বুখারীতে ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন হিমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বেশ কয়েকবার মদ্যপান করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বেত্রাঘাত করেছিলেন। এ কারণে জনৈক সাহাবী ওই মদ্যপায়ী সাহাবীকে লানত করেন। তখন নাবী ﷺ বলেন, “তুমি ওকে লানত কোরো না। নিশ্চয় সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।” [২]

নাবী ﷺ অন্যত্র বলেছেন, “মুমিনকে লানত করা হত্যার সমতুল্য।” [৩]

ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, জেনায় লিপ্ত হওয়া, চুরি করা প্রভৃতি পাপের ক্ষেত্রে যেসব ব্যাপকার্থবোধক ও শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞাযুক্ত দলিল বর্ণিত হয়েছে, সেসব দলিলের ভিত্তিতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে এরকম সাক্ষ্য দেওয়া যায় না যে, সে ব্যক্তি জাহান্নামী। কেননা বিভিন্ন অগ্রাধিকারযোগ্য কারণে এরকম বিষয় বিমোচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হয়তো সে তওবা করেছে, অথবা তার পুণ্যকর্ম আছে, কিংবা সে পাপমোচনকারী দুর্যোগে পতিত হয়েছে, অথবা তার জন্য কারও কৃত শাফায়াত (সুপারিশ) গৃহীত হয়েছে, কিংবা এগুলো ছাড়াও তার অন্য কোনো পাপমোচনকারী বিষয় সংঘটিত হয়েছে। এটা গেল গালি না দেওয়া ও লানত না করার প্রসঙ্গ।

পক্ষান্তরে ইয়াযীদকে না ভালোবাসার কারণ—তার থেকে এমন কোনো ভালো কাজ প্রকাশিত হয়নি, যা তার ভালোবাসাকে জরুরি করে। সে একজন শাসক বা রাজা মাত্র। এ ধরনের লোককে ভালোবাসা শরিয়তসম্মত (বিধেয়) নয়। তাছাড়া ইয়াযীদের জীবনীতে এবং হুসাইন ও হার্রাহ-সংক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের ঘটনায় তার নিকট থেকে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা দাবি করে যে, সে একজন ফাসেক ও জালেম ছিল।

আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”

ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।

·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

[১]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪০৯ ও ৪১৪; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪৩, ৪৮৪ ও ৫০৬।

[২]. সাহীহ বুখারী, হা/৬৭৮০।

[৩]. সাহীহ বুখারী, হা/৬১০৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১১০।

·
তথ্যসূত্র:

ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৮৫-২৮৬; ফতোয়া নং: ১৪৬৬; ফতোয়ার আরবি টেক্সট আজুর্রি (ajurry) ডট কম থেকে সংগৃহীত।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা



▌মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা

·
আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—

প্রশ্ন: “বাজারে যাওয়ার সময় মহিলার সাথে কি মাহরাম থাকা শর্ত? জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”

উত্তর: ❝যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:

যদি মহিলার এমন কোনো প্রয়োজন থাকে, যার ফলে তার বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়—যেমন: চিকিৎসা নেওয়া, বাজারসদাই করা, মসজিদে যাওয়া প্রভৃতি—তাহলে তার দ্বীন পালনের স্বার্থে ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বাড়ির বাইরে বের হওয়া জায়েজ। কেননা নাবী ﷺ সাওদাহ বিনতে যাম‘আহর উদ্দেশে বলেছেন, قَدْ أَذِنَ اللهُ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَوَائِجِكُنَّ “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫২৩৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২১৭০]

তবে প্রয়োজনের কারণে বৈধভাবে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই তা শরিয়তের একগুচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে পরিবেষ্টিত হতে হবে। নিম্নে মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা হলো।

প্রথমত, মহিলাকে তার অভিভাবক কিংবা তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে, এবং তার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে স্বামীর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মূলত উক্ত শর্ত যাবতীয় ভালোকাজে স্বামীর আনুগত্য করার আওতাভুক্ত। যাতে করে তাদের দাম্পত্যজীবন হয় সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ও কলহমুক্ত। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ “পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই বিষয়ের হেফাজত করে, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।” [সূরাহ নিসা: ৩৪]

নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا؛ قِيلَ لَهَا: ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الجَنَّةِ شِئْتِ “যদি কোনো মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি সে দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করো।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬১; সাহীহুল জামি‘, হা/৬৬১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

নাবী ﷺ আরও বলেছেন, إِذَا اسْتَأْذَنَكُمْ نِسَاؤُكُمْ بِاللَّيْلِ إِلَى المَسْجِدِ فَأْذَنُوا لَهُنَّ “তোমাদের স্ত্রীগণ রাত্রিবেলায় তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তোমরা তাদের অনুমতি দাও।” [সাহীহুল বুখারী, হা/৮৬৫; সাহীহ মুসলিম, হা/৪৪২]

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মসজিদে যাওয়ার জন্যই যদি অনুমতির প্রয়োজন হয়, তাহলে বাজারসদাই করা বা অন্যান্য কাজের জন্য বাইরে যেতে হলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আরও বেশি, আরও উপযোগী।

দ্বিতীয়ত, মহিলা তার স্বামী বা অভিভাবকের সম্পদ থেকে কেবল ততটুকু নিবে, যতটুকু নেওয়ার অনুমতি তাকে দেওয়া হয়েছে। স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি ও পরামর্শ না নিয়ে সে সম্পদ খরচে স্বেচ্ছাচারিতা করবে না; এমনকি মহিলা তার নিজের সম্পদ খরচেও স্বেচ্ছাচারিতা করবে না। যাতে করে মহিলার ওপর তার স্বামীর পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় থাকে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, وَلَيْسَ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَنْتَهِكَ شَيْئًا مِنْ مَالِهَا إِلَّا بِإِذْنِ زَوْجِهَا “কোনো মহিলার জন্য বৈধ নয় যে, সে তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার নিজের সম্পদ নষ্ট করবে।” [ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, ২২/৮৩; সাহীহুল জামি‘, হা/৫৪২৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

তৃতীয়ত, যদিও সফর ব্যতীত অন্যক্ষেত্রে মহিলার জন্য মাহরাম থাকা ওয়াজিব নয়, তথাপি সে কোনো বিশ্বস্ত সখীর সাথে বাইরে বেরোবে। যাতে তার ইজ্জত-আবরু ও দ্বীন-ধর্ম নিরাপদে থাকে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا “আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, এমন মহিলার জন্য বিনা মাহরামে একদিন ও একরাতের পথ সফর করা জায়েজ নয়।” [সাহীহ বুখারী, হা/১০৮৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৯]

নতুবা একাকী বাজারে বের হলে সে ফেতনা, ফাসাদ ও অনিষ্ট ডেকে আনে—এমন বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, خَيْرُ البِقَاعِ المَسَاجِدُ، وَشَرُّ البِقَاعِ الأَسْوَاقُ “সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ। আর সর্বনিকৃষ্ট স্থান হলো বাজার।” [ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩৭৯৮, হাকেম, মুস্তাদরাক, হা/৩০৬; সাহীহুল জামি‘, হা/৫৪২৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

চতুর্থত, মহিলা বাজারের পানে বাড়ি থেকে বের হলে, নিজের সম্পূর্ণ শরীর পর্দা দিয়ে আবৃত করবে। তার জন্য সৌন্দর্য প্রকাশ করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা সুশোভিত হয়ে, সৌন্দর্যবর্ধক পাউডার ব্যবহার করে, অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধান করে, অহংকারী হয়ে, নিজের দেহসৌষ্ঠব ও রূপের ব্যাপারে আত্মগর্বিতা হয়ে, পুরুষদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে বাইরে বের হওয়া না-জায়েজ। তাই পোশাক ও লজ্জার ভূষণে নিজেকে আবৃত করা তার জন্য আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ “আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাক-জাহেলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” [সূরাহ আহযাব: ৩৩]

মহান আল্লাহ আরও বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا “হে নাবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরাহ আহযাব: ৫৯]

নাবী ﷺ বলেছেন, وأَيُّمَا امْرَأَةٍ وَضَعَتْ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا فَقَدْ هَتَكَتْ سِتْرَ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ “যে নারী তার স্বামীর বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও তার কাপড় খোলে, সে আল্লাহ ও তার মধ্যকার পর্দা ছিঁড়ে ফেলে।” [সুনানে তিরমিযী, হা/২৮০৩; সাহীহুল জামি‘, হা/২৭১০; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

নাবী ﷺ আরও বলেছেন, ثَلَاثَةٌ لَا تَسْأَلْ عَنْهُمْ، وفيه: وَامْرَأَةٌ غَابَ عَنْهَا زَوْجُهَا قَدْ كَفَاهَا مُؤْنَةَ الدُّنْيَا فَتَبَرَّجَتْ بَعْدَهُ “তিন ব্যক্তিকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না (সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে)। তার মধ্যে রয়েছে ওই নারী, যার স্বামী বাইরে গিয়েছে, তার দুনিয়ার খোরপোশের জোগান দিতে, অথচ সে (স্বামীর অনুপস্থিতিতে) তার সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৪৩, আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯০; সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/৫৪২; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

নাবী ﷺ অন্যত্র বলেছেন, وَشَرُّ نِسَائِكُمُ المُتَبَرِّجَاتُ المُتَخَيِّلَاتُ وَهُنَّ المُنَافِقَاتُ، لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْهُنَّ إِلَّا مِثْلُ الْغُرَابِ الأَعْصَمِ “তোমাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট নারী তারাই, যারা সৌন্দর্য প্রকাশ করে, আর অহংকার করে। তারা তো মুনাফেক রমনী। ওই নারীদের মধ্য থেকে ‘সাদা পা-বিশিষ্ট কাকের মতো’ অতীব বিরল সংখ্যক নারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৩৪৭৮; সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৮৪৯; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

নাবী ﷺ বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ “কোনো নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, আর সম্প্রদায়ের লোকেরা তার ঘ্রাণ পায়, তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী।” [সুনানে নাসায়ী, হা/৫১২৬; সাহীহুল জামি‘, হা/২৭০১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

নাবী ﷺ আরও বলেছেন, صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، وذَكَر: وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ المَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا “দুই শ্রেণির জাহান্নামীকে আমি কখনো দেখিনি। তার মধ্যে এক শ্রেণি হলো—ওই সমস্ত নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ। তারা পুরুষদের আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও তাদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের পিঠের কুঁজোর মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২১২৮; ‘পোশাক-পরিচ্ছদ ও প্রসাধনী’ অধ্যায়]

পঞ্চমত, সে যখন বাজারে বা অন্য কোথাও যাবে, তখন সে তার স্বামী অথবা অভিভাবকের আমানত রক্ষা করবে। সে কোনোভাবেই তার স্বামী বা অভিভাবকের সাথে খেয়ানত করবে না। তাই সে কোনো পরপুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না, এমনকি ইতস্তত দৃষ্টিতেও পরপুরুষকে দেখবে না। সে পরপুরুষের সাথে সম্মোহনকারী প্রলোভিত কথা বলবে না এবং নিষিদ্ধ অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত হবে না। সে স্বামী বা অভিভাককে ধোঁকা দিয়ে পরপুরুষের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করবে না এবং পাপাচারমূলক সাক্ষাতে লিপ্ত হবে না। বস্তুত এগুলো এমন সব কাজ, যা তার দ্বীন-ধর্ম ও ইজ্জত-আবরুকে কদর্য করে দেয়। সুতরাং স্বীয় চোখের চাহনি অবনমিত করা, গলার আওয়াজ নিচু করা এবং স্বীয় জবান ও হাতকে অন্যায়, অশ্লীলতা ও কদর্যতা থেকে হেফাজত করা তার জন্য অপরিহার্য—ওয়াজিব।

কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ “পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই বিষয়ের হেফাজত করে, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।” [সূরাহ নিসা: ৩৪]

মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَٰتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَٰرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَاۖ “আপনি মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।” [সূরাহ নূর: ৩১]

মহান আল্লাহ বলেছেন, يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِىِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ ٱلنِّسَآءِۚ إِنِ ٱتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِٱلْقَوْلِ فَيَطْمَعَ ٱلَّذِى فِى قَلْبِهِۦ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا “হে নাবীপত্নীরা, তোমরা অন্য নারীদের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক, তাহলে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। বরং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” [সূরাহ আহযাব: ৩২]

মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, لَّا يُحِبُّ ٱللَّهُ ٱلْجَهْرَ بِٱلسُّوٓءِ مِنَ ٱلْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا “আল্লাহ কোনো মন্দকথার প্রচারণা ভালোবাসেন না, তবে কেউ অত্যাচারিত হয়ে থাকলে তার কথা স্বতন্ত্র; বস্তুত আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।” [সূরাহ নিসা: ১৪৮]

ষষ্ঠত, মহিলার জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় পরপুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত হওয়া জায়েজ নয়। যেমনভাবে তার জন্য বৈধ নয়—কোনো পরপুরুষের ব্যবসাকেন্দ্রে বা অন্য কোনো জায়গায় একাকী সেই পরপুরুষের কাছে প্রবেশ করে তার সাথে হারাম নির্জনতা অবলম্বন করা। ফিতনার রাস্তা রুদ্ধ করার জন্যই তা বৈধ নয়। যেহেতু সে কুনজর, কুকথা ও কুকর্মের বেষ্টন থেকে নিরাপদ নয়। কেননা অন্তর যে কাজের প্রতি প্ররোচিত করে, আর শয়তান যে কাজ করার কুমন্ত্রণা দেয়, সে কাজের পুরো পরিণামই কেবল ক্ষতি আর ক্ষতি, নিন্দা আর নিন্দা! তাইতো নাবী ﷺ বলেছেন, أَلَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ “কোনো মহিলা পরপুরুষের সাথে একাকী মিলিত হলেই, তাদের তৃতীয়জন হিসেবে সেখানে উপস্থিত হয় শয়তান।” [সুনানে তিরমিযী, হা/২১৬৫; সাহীহুল জামি‘, হা/২৫৪৬; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]

সপ্তম ও সর্বশেষ মূলনীতি হলো—মহিলা যদি তার দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজনে বাইরে বেরও হয়, তথাপি তার স্কন্ধে যে আমানত অর্পিত হয়েছে, তার দাবি অনুযায়ী তার জন্য স্বেচ্ছাচারিতা করে এমন কাজ করা জায়েজ নয়, যা আল্লাহ’র কাছে পছন্দনীয় নয়। তাই সে এমন জায়গায় যাবে না, যেখানে অসার ক্রিয়াকলাপ ও পাপাচার সংঘটিত হয়। সে এমন জায়গায় যাবে না, যেসব জায়গা অশ্লীল কর্মকাণ্ডে ভরপুর, অথবা যেসব জায়গায় মন্দ ও অকল্যাণ ছড়ানো হয়; সাধারণত যে জায়গাগুলোতে অসভ্য ও ইতর শ্রেণির লোকেরাই যেয়ে থাকে। কেননা সন্দেহাতীতভাবে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারমূলক পদচারণা আমানতের খেয়ানত, নিজের বিনাশ এবং ধ্বংস ও দুর্যোগে নিপাতিত হওয়ার অসিলা।

বস্তুত প্রকৃত ‘ইলম আল্লাহ’র নিকট রয়েছে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।❞

·
তথ্যসূত্র:

https://ferkous.com/home/?q=fatwa-451।

·
অনুবাদক: ‘আব্দুর রাহমান মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Sunday, August 25, 2019

বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ


▌বিদ‘আতীদের খণ্ডন করা আবশ্যক, আর তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

এটি সুবিদিত যে, বিদ‘আত একটি গর্হিত অপরাধ এবং অন্যায় কাজ। বিদ‘আতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার জন্য এই দুটি হাদীসই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ:
ক. নাবী ﷺ বলেছেন, “(দ্বীনের মধ্যে) যাবতীয় নবআবিষ্কৃত বিষয় থেকে সাবধান! কারণ প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয় হলো বিদ‘আত, আর প্রত্যেক বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” [আবূ দাউদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]

·
খ. নাবী ﷺ বলেছেন, “আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। আমি তখন বলব, এরা তো আমারই উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না আপনার পরে এরা (দ্বীনের মধ্যে) কী সব নতুন নতুন কথা ও কাজ (বিদ‘আত) সৃষ্টি করেছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে, তারা দূর হও, দূর হও!” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫৮৩-৬৫৮৪]

আর মহান আল্লাহ বলেছেন, لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ، كَانُواْ لاَ يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাঊদ ও মারইয়াম তনয় ‘ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। নিশ্চয় তারা যা করত তা কতইনা নিকৃষ্ট!” [সূরাহ মাইদাহ: ৭৮-৭৯]

·
ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,

أَوَّلُ مَنْ بَدَأَ بِالْخُطْبَةِ يَوْمَ الْعِيدِ قَبْلَ الصَّلاَةِ مَرْوَانُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ الصَّلاَةُ قَبْلَ الْخُطْبَةِ.‏ فَقَالَ قَدْ تُرِكَ مَا هُنَالِكَ‏.‏ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ.

“মারওয়ান সর্বপ্রথম ‘ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুত্ববাহ দেয়ার (বিদ‘আতী) প্রথা প্রচলন করেন। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, খুত্ববাহ’র আগে সালাত (সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। তখন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ওই ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গৰ্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) তা পরিবর্তন করে, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে জবান দ্বারা তা পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে, তবে এটা ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম অবস্থা।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ‏.

“আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবীকেই কোনো উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সঙ্গী ছিল। তারা তাঁর আদর্শকে সমুন্নত রাখত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। তারপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর (দ্বীনের ব্যাপারে) যা করে, তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি (অর্থাৎ, বিদ‘আত)। অতএব যে ব্যক্তি তাদেরকে হাত (শক্তি) দ্বারা মোকাবিলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যক্তি জবান দারা মোকাবিলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা মোকাবিলা করবে সেও মু’মিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৫০; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২০]

·
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] কে বললাম,
إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم.
“অমুক দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)– বলা আমার কাছে খুব ভারী মনে হয়।” আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সাহীহ-দ্ব‘ঈফ জানাবে কে?” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদ রাহিমাহুল্লাহ’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]

ইমাম আবূ মুহাম্মাদ হাসান বিন ‘আলী বিন খালফ আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] বলেছেন,
واعلم أن الخروج عن الطريق على وجهين: أما أحدهما فرجل قد زل عن الطريق، وهو لا يريد إلا الخير؛ فلا يقتدى بزلته فإنه هالك، ورجل عاند الحق وخالف من كان قبله من المتقين؛ فهو ضالّ مضِلّ، شيطان مريد في هذه الأمة، حقيقٌ على من عرفه أن يحذر الناس منه، ويبين للناس قصته، لئلا يقعَ في بدعته أحدٌ فيهلكَ.
“জেনে রেখো, সঠিক পথ থেকে বের হয়ে যাওয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। হয় ব্যক্তি পথ ভুল করেছে, অথচ সে স্রেফ কল্যাণের অভিলাষীই ছিল। এক্ষেত্রে তাঁর ভুলের অনুসরণ করা যাবে না। নতুবা সে (জেনেশুনে ভুলের অনুসরণকারী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর না হয় ব্যক্তি সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করেছে এবং তার পূর্ববর্তী মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের বিরোধিতা করেছে। এই ব্যক্তি নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। সে এই উম্মতের অবাধ্য শয়তান। যে ব্যক্তি তার প্রকৃত অবস্থা জানে, তার উচিত ওর থেকে মানুষকে সতর্ক করা এবং ওর ঘটনা মানুষের কাছে বর্ণনা করা। যাতে করে কেউ ওর বিদ‘আতে পতিত হয়ে ধ্বংস না হয়।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯-৭০; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] পূর্বোক্ত কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,

هذا الذي خرج عن الحق متعمدًا لا يجوز السكوت عنه بل يجب أن يكشف أمره ويفضح خزيه حتى يحذره الناس ولا يقال: الناس أحرار في الرأي، حرية الكلمة، إحترام الرأي الآخر، كما يدندنون به الآن من إحترام الرأي الآخر فالمسألة ليست مسألة أرآء المسألة مسألة إتباع نحن قد رسم الله لنا طريقًا واضحًا وقال لنا سيروا عليه حينما قال وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [ الأنعام: ١٥٣] فأي شخصٍ يأتينا ويريد منا أن نخرج عن هذا الصراط فإننا: أولا نرفض قوله. وثانيا :نبين ونحذر الناس منه ولا يسعنا السكوت عنه، لأننا إذا سكتنا عنه اقترّ به الناس، لاسيما إذا كان صاحب فصاحة ولسان وقلم وثقافة فإن الناس يغترون به فيقولون هذا مؤهل هذا من المفكرين كما هو حاصل الآن فالمسألة خطيرة جداً.
وهذا فيه وجوب الرد على المخالف عكس ما يقوله أولئك يقولون اتركوا الردود دعوا الناس كل له رأيه واحترامه وحرية الرأي وحرية الكلمة بهذا تهلك الأمة فالسلف ما سكتوا عن امثال هؤلاء بل فضحوهم وردوا عليهم لعلمهم بخطرهم على الأمة، نحن لا يسعنا ان نسكت على شرهم بل لابد من بيان ما أنزل الله وإلا فأننا نكون كاتمين من الذين قال الله فيهم: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ [البقرة: ١٥٩] فلا يقتصر الأمر على المبتدع بل يتناول الأمر من سكت عنه فإنه يتناوله الذم والعقاب لأن الواجب البيان والتوضيح للناس وهذه وظيفة الردود العلمية المتوفرة الآن في مكتبات المسلمين كلها تذب عن الصراط المستقيم وتحذر من هؤلاء فلا يروج هذا الفكرة فكرة حرية الرأي وحرية الكلمة واحترام الآخر إلا مضلل كاتم للحق نحن قصدنا الحق ما قصدنا نجرح الناس نتكلم في الناس القصد هو بيان الحق وهذه أمانة حمّلها الله العلماء فلا يجوز السكوت عن أمثال هولاء لكن مع الأسف لو يأتي عالم يرد على أمثال هولاء قالوا هذا متسرع إلى غير ذلك من الوساوس فهذا لا يخذّل أهل العلم أن يبينوا شر دعاة الضلال لا يخذلونهم.

“যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হক থেকে বেরিয়ে গেছে, তার ব্যাপারে চুপ থাকা বৈধ নয়। বরং তার বিষয়টি প্রকাশ করা এবং তার রহস্য উন্মোচন করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ তার থেকে সতর্ক থাকতে পারে। একথা বলা হবে না যে, মানুষ তার মতপ্রকাশে স্বাধীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে। যেমন তারা ইদানীং ‘অন্যের মতকে সম্মান করতে হবে’ বলে বকবক করছে। এটি নানাজনের মতামতের ইস্যু নয়। এটি ইত্তিবা‘ তথা অনুসরণের ইস্যু। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্পষ্ট পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে ওই পথে চলতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করো।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)

সুতরাং যে ব্যক্তিই আমাদের কাছে আসে এবং চায় যে, আমরা এই পথ থেকে বের হয়ে যাই, আমরা প্রথমত তার কথা প্রত্যাখান করব। দ্বিতীয়ত, আমরা বিষয়টি বর্ণনা করব এবং তার থেকে মানুষকে সতর্ক করব। আমাদের কাছে তার ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। কেননা আমরা যদি তার ব্যাপারে চুপ থাকি, তাহলে মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে। বিশেষত সে যখন বাগ্মিতা, ক্ষুরধার লেখনী ও উচ্চশিক্ষার অধিকারী হয়। কেননা মানুষ তার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হবে, আর বলবে—ইনি তো যোগ্য লোক, ইনি একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ইত্যাদি। যেমনটি বর্তমানে হচ্ছে। সুতরাং এটি খুবই বিপজ্জনক বিষয়।

এতে আমাদের জন্য শরিয়ত বিরোধীকে রদ করার আবশ্যকীয়তার বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যের বিপরীতে, যারা বলে, ‘তোমরা রদ করা বাদ দাও এবং সকল মানুষকে দা‘ওয়াত দাও, প্রত্যেকের মতামতের সম্মান রয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, একারণে উম্মত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’ সালাফগণ ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকেননি। বরং তাঁরা তাদের বিষয় প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে রদ করেছেন। কারণ তাঁরা জানতেন, উম্মতের জন্য ওরা কতটা বিপজ্জনক।

আমাদের নিকটেও তাদের অনিষ্টের ব্যাপারে চুপ থাকার কোনো স্কোপ নেই। বরং আবশ্যিকভাবে আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান বর্ণনা করতে হবে। নতুবা আমরা শরিয়ত গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যে সব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯)

বিষয়টি শুধু বিদ‘আতীর উপরই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে বিদ‘আতীর ব্যাপারে চুপ থেকেছে, বিষয়টি তাকেও শামিল করে। উল্লিখিত ভর্ৎসনা ও শাস্তি তাকেও শামিল করে। কেননা মানুষের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব। বর্তমানে মুসলিমদের লাইব্রেরিগুলোতে বিদ্যমান পর্যাপ্ত ‘ইলমী রুদূদের (রিফিউটেশনস) সকল গ্রন্থ সিরাত্বে মুস্তাক্বীম তথা সরল-সঠিক পথকে ডিফেন্ড করে এবং ওই ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক করে। সুতরাং এই মতবাদ –সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, অন্যের মতের সম্মান আছে ইত্যাদি বলার মতবাদ– হককে গোপনকারী এবং অন্যকে পথভ্রষ্টকারী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ প্রচার করে না।

আমরা হক বর্ণনা করতে চাই। আমরা মানুষকে জারাহ করা, বা মানুষের সমালোচনা করার অভিলাষ করি না। আমাদের অভিলাষ তো স্রেফ হক বর্ণনা করা। এটি একটি আমানত, যা আল্লাহ ‘আলিমদের উপর অর্পণ করেছেন। সুতরাং ওদের মত ব্যক্তিদের ব্যাপারে চুপ থাকা না-জায়েজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো ‘আলিম এসে ওদের মত ব্যক্তিদের রদ করলে তারা বলে, ‘ইনি তাড়াহুড়া করছেন’ ইত্যাদি কুমন্ত্রণামূলক কথাবার্তা। সুতরাং কেউ ‘আলিমদেরকে পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অনিষ্ট মানুষের কাছে বর্ণনা করতে বারণ করবে না, তাঁদেরকে (এ থেকে) বারণ করবে না।” [ইমাম সালিহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), ইতহাফুল ক্বারী বিত তা‘লীক্বাতি ‘আলা শারহিস সুন্নাহ লিল ইমাম আল-বারবাহারী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯৩-৯৫; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

ومثل أئمة البدع من أهل المقالات المخالفة للكتاب والسنة، أو العبارات المخالفة للكتاب والسنة، فإن بيان حالهم وتحذير الأمة منهم واجب باتفاق المسلمين، حتى قيل لأحمد بن حنبل: الرجل يصوم ويصلي ويعتكف أحب إليك أو يتكلم في أهل البدع؟ فقال: إذا قام وصلى واعتكف فإنما هو لنفسه، وإذا تكلم في أهل البدع فإنما هو للمسلمين هذا أفضل.
فبيّن أن نفع هذا عام للمسلمين في دينهم من جنس الجهاد في سبيل الله، إذ تطهير سبيل الله ودينه ومنهاجه وشرعته ودفع بغي هؤلاء وعدوانهم على ذلك واجب على الكفاية باتفاق المسلمين، ولولا من يقيمه الله لدفع ضرر هؤلاء لفسد الدين، وكان فساده أعظم من فساد استيلاء العدو من أهل الحرب، فإن هؤلاء إذا استولوا لم يفسـدوا القلوب وما فيها من الدين إلا تبعاً، وأما أولئك فهم يفسدون القلوب ابتداءً.

“যেমন কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য বা কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী কথার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত বিদ‘আতের ইমামগণ। তাদের অবস্থা বর্ণনা করা এবং উম্মাহকে তাদের থেকে সতর্ক করা মুসলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এমনকি আহমাদ বিন হাম্বালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “একজন ব্যক্তি সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে, ই‘তিকাফ করে– সে আপনার কাছে অধিক প্রিয়, না কি সে ব্যক্তি যে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে?” তখন তিনি বলেন, “যখন সে সিয়াম পালন করে, সালাত পড়ে এবং ই‘তিকাফ করে, তখন সে তা নিজের জন্য করে। আর যখন সে বিদ‘আতীদের সমালোচনা করে, তখন সে তা মুসলিমদের জন্য করে; সুতরাং এটি উত্তম।”

তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মুসলিমদের জন্য তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে এই কাজের উপকারিতা ব্যাপক, যা আল্লাহ’র রাস্তায় জিহাদ করার অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহ’র রাস্তা, দ্বীন, মানহাজ ও শরিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং এর উপর এদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকে প্রতিহত করা মুসলিমদের ঐক্যমতে ওয়াজিবে কিফায়াহ। [ওয়াজিবে কিফায়াহ’র অর্থ: উম্মাহ’র কতিপয় আদায় করলে, বাকিদের উপর থেকে তা আদায় না করার পাপ ঝরে পড়ে। – সংকলক।] আল্লাহ যদি কতিপয় ব্যক্তিকে এদের অনিষ্ট প্রতিহত করতে নিয়োগ না করতেন, তাহলে অবশ্যই দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত। যেহেতু এর অনিষ্ট শত্রু যোদ্ধাদলের কাছে পরাভূত হওয়ার অনিষ্ট থেকেও বেশি। কেননা তারা যখন পরাভূত করে, তখন তারা (মানুষের) অন্তর এবং অন্তরিস্থ দ্বীনকে নষ্ট করে না; তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় নিজের দ্বীন নষ্ট করে, তবে তার কথা ভিন্ন। পক্ষান্তরে এরা শুরুতেই মানুষের অন্তরকে নষ্ট করে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১-২৩২; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]

·
বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

فالواجب على علماء المسلمين توضيح الحقيقة ومناقشة كل جماعة أو جمعية ونصح الجميع بأن يسيروا في الخط الذي رسمه الله لعباده ودعا إليه نبينا محمد ﷺ، ومن تجاوز هذا أو استمر في عناده لمصالح شخصية أو لمقاصد لا يعلمها إلا الله- فإن الواجب التشهير به والتحذير منه ممن عرف الحقيقة، حتى يتجنب الناس طريقهم وحتى لا يدخل معهم من لا يعرف حقيقة أمرهم فيضلوه ويصرفوه عن الطريق المستقيم الذي أمرنا الله باتباعه في قوله جل وعلا: وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.

“মুসলিমদের ‘আলিমদের উপর প্রকৃত বিষয় বর্ণনা করা, প্রত্যেক দল বা সংগঠনের সাথে (শার‘ঈ) বিতর্ক সম্পন্ন করা এবং সবাইকে ওই পথের উপর চলতে নসিহত করা ওয়াজিব, যে পথ স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য চিত্রিত করেছেন, আর যে পথের দিকে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে আহ্বান করেছেন। যে ব্যক্তি এই পথের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বা কেবল আল্লাহ জানেন এমন কোনো (গুপ্ত) উদ্দেশ্যের কারণে নিজের জিদ ও হঠকারিতায় অটল থাকে, তাহলে যারা প্রকৃত বিষয়টি জানে তাদের জন্য ওই ব্যক্তির সমালোচনা করা এবং তার থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ এই ব্যক্তিদের পথ বর্জন করে, আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বিষয় জানে না সে তাদের দলে প্রবেশ না করে। নতুবা তারা ওই অজ্ঞ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। যেই সঠিক পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এটি তো আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ কোরো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর।” (সূরাহ আন‘আম: ১৫৩)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,

ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻟﺴﻜﻮﺕ ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﻟﻠﻔﺎﺟﺮ ﻭﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻉ ﻭﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻓﺈﻥ ﻫﺬﺍ ﻏﻠﻂ ﻋﻈﻴﻢ ﻭﻣﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺍﻧﺘﺸﺎﺭ ﺍﻟﺸﺮ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﺧﺘﻔﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﻗﻠﺘﻪ ﻭﺧﻔﺎﺀ ﺍﻟﺴﻨﺔ. ﻓﺎﻟﻮﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺘﻜﻠﻤﻮﺍ ﺑﺎﻟﺤﻖ ﻭﻳﺪﻋﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻳﻨﻜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭﻳﺤﺬﺭﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻭﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﻭﺑﺼﻴﺮﺓ.

“পাপাচারী, মূর্খ ও বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা ‘আলিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা এটি একটি মারাত্মক গলত। এটি অকল্যান ও বিদ‘আত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটি কল্যাণ কমে যাওয়া, কল্যাণ দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং ‘আলিমদের জন্য হক বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বাতিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শার‘ঈ ‘ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৫৩]

·
❏ যারা বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকে, তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ولو سكت أهل الحق عن بيانه: لاستمر المخطئون على أخطائهم، وقلدهم غيرهم في ذلك، وباء الساكتون بإثم الكتمان الذي توعدهم الله في قوله سبحانه: إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
وقد أخذ الله على علماء أهل الكتاب الميثاق لتبيننه للناس ولا تكتمونه، وذمهم على نبذه وراء ظهورهم، وحذرنا من اتباعهم.
فإذا سكت أهل السنة عن بيان أخطـاء من خالف الكتاب والسنة شَـابَهُوا بذلك أهل الكتاب المغضوب عليهم والضالين.

“হকপন্থিরা যদি হক বর্ণনা করা থেকে চুপ থাকে, তাহলে ভুলকারীরা তাদের ভুলে অটল থাকবে এবং অন্যরা সেই ভুলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। আর নীরবতা অবলম্বনকারীরা শরিয়ত গোপনের পাপ বহন করবে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তাদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

আল্লাহ আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ‘আলিমদের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তারা তা মানুষের কাছে বর্ণনা করবে, গোপন করবে না। কিন্তু তারা সে অঙ্গীকার তাদের পিছনে ছুঁড়ে ফেলার কারণে আল্লাহ তাদের ভর্ৎসনা করেছেন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করেছেন।

কিতাব ও সুন্নাহ’র বিরোধীদের ভুল বর্ণনা করা থেকে আহলুস সুন্নাহ যদি চুপ থাকে, তাহলে তারা এর মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে, যে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩]

·
❏ বিদ‘আতীদের রদ না করে তাদের ব্যাপারে চুপ থাকা মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত:

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يقول السَّائل: هل عدم الرَّد على أهل البدع وكتمان باطلهم والدِّفاع عنهم يعتبر من الغشّ للمسلمين؟

“প্রশ্নকারী বলছেন, বিদ‘আতীদের রদ না করা, তাদের বাতিল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদেরকে ডিফেন্ড করা কি মুসলিমদের সাথে ধোঁকা হিসেবে পরিগণিত হবে?”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

هذا من أكبر الغش للمسلمين، السكوت على أهل البدع وعدم بيان بدعهم هذا من الغش للمسلمين، فإذا انضاف إلى هذا أنه يمدحهم ويثني عليهم فهذا أشد وأنكر والعياذ بالله، فالواجب على من عنده علم أن يُبَيِّن البدع والمحدثات وأن ينهى عنها ويُحذِّر منها ولا يسكت،السكوت هذا من الكتمان ﴿إِنَّ الذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ البَيِّنَاتِ وَالهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ إِلَّا الذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾ لا يجوز للمسلم الذي عنده علم أن يسكت على البدع والمخالفات ولا يُبَيِّنُها للناس لأنه إذا سكت احتجَّ الناس به وقالوا لو كان هذا محرمًا أو ممنوعًا ما سكت العالم الفلاني وهو يراه، نعم.

“এটি মুসলিমদের সাথে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। বিদ‘আতীদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং তাদের বিদ‘আত বর্ণনা না করা মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত। আর যখন এর সাথে এটা যুক্ত হয় যে, সে তাদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করছে, তখন তা হয় অধিক ভয়ানক ও গুরুতর। সুতরাং যার ‘ইলম আছে, তার উপর ওয়াজিব হলো বিদ‘আতসমূহ বর্ণনা করে তা থেকে নিষেধ ও সতর্ক করা এবং এ ব্যাপারে চুপ না থাকা। কেননা চুপ থাকা শরিয়ত গোপন করার অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, সেগুলিকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা সেসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। তবে তারা ছাড়া, যারা তাওবাহ করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব আমি তাদের তাওবাহ কবুল করব। বস্তুত আমি তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৫৯-১৬০)

যে মুসলিমের কাছে ‘ইলম আছে, তার জন্য বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধিতার ব্যাপারে চুপ থাকা এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করা বৈধ নয়। কেননা সে যদি চুপ থাকে, তাহলে মানুষ তা দলিল হিসেবে গ্রহণ করবে এবং বলবে, “এটা যদি হারাম বা নিষিদ্ধই হত, তাহলে অমুক ‘আলিম তা দেখা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতেন না”।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=122996 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]

·
পরিশেষে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ আমাদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক থাকার, অন্যদের সতর্ক করার এবং যারা বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক করা থেকে বারণ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Friday, August 23, 2019

বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?


▌বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ কি অগ্রহণযোগ্য?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

কতিপয় বিদ‘আতী একটি অদ্ভুত অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। তারা বলে, বর্তমান যুগের পরিস্থিতি সালাফদের যুগের পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন। সুতরাং সালাফদের মানহাজ তাঁদের যুগের জন্য উপযোগী হলেও, বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী নয়। অর্থাৎ, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগের জন্য পারফেক্ট নয়। ধূর্ত বিদ‘আতীদের এই অভিনব কৌশল কতইনা নিকৃষ্ট! আল্লাহ’র কাছে এদের থেকে পানাহ চাচ্ছি।

·
সালাফী মানহাজের ব্যাপারে ধূর্ত বিদ‘আতীদের এ জাতীয় কূটকৌশলের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,

ومنهم من يقول لسنا مكلفين بفقه السلف وعلم السلف، لسنا مكلفين نشق طريقنا نحن، نستنبط الأحكام من جديد، نوجد لنا فقهاً جديداً هذه فقه قديم، فقه السلف فقه قديم، ويقولون ما يصلح لهذا الزمان هو صالح لزمانهم، زماننا غير فيزهدون في فقه السلف، ويدعون إلى فقه جديد، كثر هذا في الجرائد والمجلات من الكُتاب وأهل الضلال، يريدون أن يفلتوا أيدينا من منهج السلف، لأننا إذا لم نعرف مذهب السلف وزهدنا به ولم ندرسه، فإنه لا يكفي الانتساب إلى السلف من غير علم ومن غير بصيرة بمذهبه، هذا ما يريدون منه، يريدون أن نترك مذهب السلف وفقه السلف وعلم السلف ونحدث فقهاً جديدا كما يقولون يصلح لهذا الزمان مع أن هذا كذب، وشريعة الإسلام صالحة لكل زمان ومكان إلى أن تقوم الساعة.
فمنهج السلف صالح لكل زمان ومكان، نور من الله عز وجل، لا يزهدك فيه كلام هؤلاء المخذلين أو الضالين لا يزهدك فيه.
الإمام مالك رحمه الله يقول: «لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها»، الذي أصلحها أولها ما هو؟
هو الكتاب والسنة واتباع الرسول صلى الله عليه وسلم، العمل بالقرآن والعمل بالسنة هذا هو الذي أصلح أول الأمة ولا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلحها أولها.

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, “আমরা সালাফদের ফিক্বহ ও সালাফদের ‘ইলমের ব্যাপারে শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা এর আজ্ঞাপ্রাপ্ত নই। আমরা নিজেরাই আমাদের রাস্তা তৈরি করব। আমরা নতুন করে বিধিবিধান উদ্ঘাটন করব। আমরা আমাদের জন্য নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করব। এগুলো প্রাচীন ফিক্বহ। সালাফদের ফিক্বহ হলো প্রাচীন ফিক্বহ।” তারা বলে, “এটি (সালাফদের ফিক্বহ) এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, এটি তাদের যুগের জন্য উপযোগী ছিল, আমাদের যুগ ভিন্নতর।” তারা সালাফদের ফিক্বহ ত্যাগ করতে বলে, আর নব্য ফিক্বহের দিকে আহ্বান করে। বিভিন্ন কলামিস্ট ও পথভ্রষ্টদের মাধ্যমে এই বিষয়টি পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আমাদের হাতকে সালাফদের মানহাজ থেকে মুক্ত করতে চায়।

কেননা আমরা যখন সালাফদের মানহাজ জানব না, সে ব্যাপারে অনাগ্রহী হব এবং তা অধ্যয়ন করব না, তখন সালাফদের মানহাজের ব্যাপারে না জেনে সালাফদের দিকে নিজেদের সম্পৃক্ত করা যথেষ্ট হবে না। আর তারা এটাই চায়। তারা চায় যে, আমরা সালাফদের মানহাজ, ফিক্বহ ও ‘ইলম পরিত্যাগ করি, আর তাদের ভাষ্য মোতাবেক এই যুগের জন্য উপযোগী নতুন ফিক্বহ উদ্ভাবন করি, যদিও তাদের ভাষ্য মিথ্যা। ইসলামী শরিয়ত কিয়ামত অবধি সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। এটি মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আগত নূর (জ্যোতি)। ওই নিরাশকারী ভ্রষ্টদের কথা যেন তোমাকে এ থেকে অনাগ্রহী না করে।

ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।” এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, সেটা কী? তা হলো কিতাব, সুন্নাহ এবং রাসূল ﷺ এর অনুসরণ। কুরআনের প্রতি আমল এবং সুন্নাহ’র প্রতি আমল। এটাই এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে সংশোধন করেছে। আর এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই পারে এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “মানহাজুস সালাফিস সালিহি ওয়া হাজাতুল উম্মাতি ইলাইহি”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/15030.]

·
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবুল হারিস মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুর রহমান বিন আবূ যি’ব—ইবনু আবী যি’ব নামে প্রসিদ্ধ—(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৯ হি.] বলেছেন,

إن الحق لا تنقله الأزمان عن مواضعه ، ولا تغيره عن وجهه.

“নিশ্চয় যুগসমূহ হককে তার যথাস্থান থেকে স্থানান্তরিত করে না এবং তার প্রকৃত অবস্থা থেকেও তাকে পরিবর্তিত করে না।” [ইমাম আবূ সুলাইমান আর-রাব‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-জুয’উ ফীহি মিন আখবারি ইবনি আবী যি’ব; পৃষ্ঠা: ৫৮; মুআসসাসাতুর রাইয়্যান, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); গৃহীত: সাহাব ডট নেট]

অর্থাৎ, হক অপরিবর্তিত। হক সকল যুগের জন্যই উপযোগী। সুতরাং আধুনিক যুগে সালাফদের মানহাজ অনুপযোগী, এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

·
ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২৯ হি.] —যিনি কিনা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছাকাছি যুগের মানুষ ছিলেন এবং ইমাম আহমাদের ছাত্রদের ছাত্র ছিলেন—বলেছেন,

فانظر رحمك الله كلّ من سمعت من كلامه من أهل زمانك خاصة فلا تَعْجَلَّنَ، ولا تدخلنّ في شيء منه حتى تسأل وتنظر هل تكلم فيه أحد من أصحاب النبي ﷺ ورضي الله عنهم أو أحد من العلماء؟ فإن وجدت فيه أثراً عنهم فتمسك به، ولا تُجاوزه لشيء، ولا تختار عليه شيئاً فتسقط في النار.

“আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি যাদের কথা শুনো, তাদের প্রত্যেককে লক্ষ করো, বিশেষ করে তোমার যুগের লোকদেরকে। তুমি তাড়াহুড়া কোরো না। তুমি তাদের কোন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না তুমি প্রশ্ন করছ, আর লক্ষ করছ যে, এ ব্যাপারে কি নাবী ﷺ এর সাহাবীবর্গের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ, অথবা (নির্ভরযোগ্য ও সালাফদের মানহাজের অনুসারী এমন) ‘আলিমদের কেউ কথা বলেছেন? তুমি যদি এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো কথা পাও, তাহলে তা আঁকড়ে ধরো। তুমি কোনো কিছুর জন্যই তা অতিক্রম কোরো না। তুমি তার ওপর কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিয়ো না। নতুবা তুমি জাহান্নামে পতিত হবে।” [ইমাম বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৬৯; মাকতাবাতুল গুরাবাইল আসারিয়্যাহ, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

ইমাম বারবাহারী’র ওপর আল্লাহ রহম করুন। তাঁর কথা পড়ে মনে হচ্ছে, তিনি যেন কথাগুলো এই যুগের ধূর্ত বিদ‘আতীদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন।

·
❏ বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইখওয়ানী দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূরের কুফরি বক্তব্য ও তার জবাব:

সুরূরিয়্যাহ মানহাজের প্রবক্তা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ঈ মুহাম্মাদ সুরূর বিন নায়িফ যাইনুল ‘আবিদীন [মৃত: ২০১৬ খ্রি.] বলেছেন,

نظرت في كتب العقيدة فرأيت أنها كتبت في غير عصرنا وكانت حلولاً لقضايا ومشكلات العصر الذي كتبت فيه رغم أهميتها ورغم تشابهه المشكلات أحياناً، ولعصرنا مشكلاته التي تحتاج إلى حلول جديدة، ومن ثم فأسلوب كتب العقيدة فيه كثير من الجفاف لأنها نصوص وأحكام، ولهذا أعرض معظم الشباب عنها وزهدوا بها.

“আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে, এগুলো আমাদের যুগে লেখা হয়নি। এগুলো সে যুগের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকারী ছিল, যে যুগে এগুলো কখনো কখনো তার গুরুত্ব এবং (সে সময়ের) সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার কারণে লেখা হয়েছিল। আমাদের যুগেরও বিভিন্ন সমস্যা আছে, যেগুলো নতুন সমাধানের মুখাপেক্ষী। আর ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” [মুহাম্মাদ সুরূর, মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮; গৃহীত: ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৫; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا غلط عظيم كتب العقيدة: الصحيح أنها ليست جفاءً، قال الله، قال الرسول. فإذا كان يصف القرآن والسنة بأنها جفاء؛ فهذا رِدَّة عن الإسلام، هذه عبارة سقيمة خبيثة.

“এটি একটি মহাভুল। সঠিক কথা হলো—‘আক্বীদাহর বইপুস্তক বাতিল নয়। এগুলো স্রেফ ক্বালাল্লাহ, আর ক্বালার রাসূল (আল্লাহ ও রাসূলের কথা)। সে যদি কুরআন-সুন্নাহকে বাতিল বলে থাকে, তবে তা ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল। এটি একটি নোংরা রোগাগ্রস্ত কথা।”
এছাড়াও তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “বইটিতে যদি এই কথা থেকে থাকে, তাহলে তা বিক্রি করা না-জায়েজ। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক (إن كان فيه هذا القول فلا يجوز بيعه، ويجب تمزيقه)।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রদত্ত “আফাতুল লিসান”– শীর্ষক লেকচার; লেকচার প্রদানের তারিখ: ২৯শে যুলহাজ্ব, ১৪১৩ হিজরী; অনূদিত অংশের সময়: ৩৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড থেকে ৩৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত; লেকচার লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=QfoTo2MVqnY (অডিয়ো ক্লিপ)]

·
মুহাম্মাদ সুরূরের কথাটির ব্যাপারে ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

هذا القائل من دعاة الضلال؛ نسأل الله العافية فيجب أن نَحْذَر من كتابه هذا، وأن نُحذِّر منه. وأذكر لكم أن الشيخ محمد أمان الجامي – وفقه الله – قد أملى شريطًا كاملاً على هذه الكلمة «أن كتب العقيدة نصوص وأحكام …» رد عليه ردًا بليغًا فعليكم أن تبحثوا عن الشريط وأن تنشروه بين المسلمين، حتى يحذروا من هذا الخبث، ومن هذا الشر الوافد إلى بلاد المسلمين.
نعم؛ هذا شريط قيم جدًا، جزا الله خيرًا شيخنا الشيخ محمد أمان الجامي، ونصر به الإسلام والمسلمين.

“এই কথার কথক পথভ্রষ্ট দা‘ঈদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা আল্লাহ’র কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তার এই বই থেকে সতর্ক থাকা এবং (মানুষকে) তা থেকে সতর্ক করা আবশ্যক। আমি তোমাদেরকে বলছি, শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (আল্লাহ তাঁকে তাওফীক্ব দান করুন) এই কথা—“আক্বীদাহর বইপুস্তক স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান”– এর ব্যাপারে তাকে পূর্ণরূপে রদ করে একটি অডিও ক্লিপ (টেপ/ক্যাসেট) বের করেছেন। তোমাদের জন্য এই অডিও ক্লিপটি খুঁজে বের করে তা মুসলিমদের মধ্যে প্রচার করা আবশ্যক। যাতে করে মুসলিমরা এই দুষ্কর্ম এবং মুসলিমদের দেশে আগত এই অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
হ্যাঁ, এটি খুবই মূল্যবান একটি অডিও ক্লিপ। আল্লাহ আমাদের শাইখ আশ-শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের উপকৃত করুন।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭৯; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]

·
ইয়েমেনের প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৬ হি./২০১৫ খ্রি.] সুরূরিয়্যাহ মানহাজের ভুলত্রুটি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন,

المأخذ الأول : ولاؤهم لمحمد سرور وقد قال : كلمة (الكفر)، وهذه الكلمة هي التي ذكرها في كتابه «منهج الأنبياء في الدعوة إلى الله»، إذ قال : «نظرت في كتب العقيدة ... إلى أن قال: فرأيت أن أسلوبها فيه كثير من الجفاف ، لأنها نصوص وأحكام ولهذا أعرض عنها معظم الشباب» وهذه الكلمة لما سُئل عنها الشيخ ابن عثيمين قال هذه الكلمة كفر، ولما سئل عنها الشيخ الفوزان قال : هذا كفر، من قال هذا ؟! قالوا هذا محمد سرور قال : هذا رجل خبيث، ولما سئل عنها الشيخ ابن باز – إلا أنها حرفت على السائل – بكلمة (جفاء) بدل (جفاف) فقال : هذه ردة وكلمة خبيثة قالوا يا شيخ ما حكم بيع هذا الكتاب والقراءة فيه؟! قال: يحرم بيعه ويجب تمزيقه. وعام 1408هـ جاء محمد سرور بنفسه إلى دماج وأنا حين ذاك موجود، فألقى محاضرة بعد المغرب ولم أكن قد علمت أنه سطر هذه الكلمة الخبيثة في كتابه المذكور من قبل أربع سنين حتى سمعتها منه مشافهة قالها بلسانه بأن كتب العقيدة فيها كثير من الجفاف ولما انتهى من كلمته قال لي الشيخ مقبل تفضل تكلم وكان محمد سرور موجوداً فقلت: إن هذا الكلام على كتب العقيدة ووصفها بأن فيها كثيراً من الجفاف لا يجوز وهذا حرام ويجب على المسلم أن يعظم كلام الله وكلام رسول الله، والعقيدة هي أساس ديننا، ولا قبول للأعمال إلا أن تكون موحداً لله سبحانه وتعالى ومن ذوي العقيدة الصافية ... الخ، وظهر عليه الغضب والإنفعال ولما انتهينا من صلاة العشاء ذهبنا إلى بيت الشيخ مقبل –حفظه الله– أيضاً كان كالذي يأكل نفسه ما هو موافق على ما قلنا في رد ظلمه وعدوانه على كتب العقيدة وبعد أربع سنين من ذلك الحين تأتي كلمة الشيخ عبدالعزيز بن باز –حفظه الله– ثم تتابع كلام أهل العلم كالشيخ الفوزان والشيخ ابن عثيمين.

“প্রথম ভুল: তারা (সুরূরীরা) মুহাম্মাদ সুরূরের জন্য মিত্রতা স্থাপন করে। অথচ সে কুফরি কথা বলেছে। এই কথা সে তার লেখা “মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ দা‘ওয়াতি ইলাল্লাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। সে বলেছে, “আমি ‘আক্বীদাহর বইপুস্তক পড়েছি। আমি লক্ষ করেছি যে... ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকের পদ্ধতিতে অনেক শুষ্কতা রয়েছে। কেননা এগুলো স্রেফ কতগুলো নস (প্রামাণ্য টেক্সট) এবং বিধিবিধান। একারণে অধিকাংশ যুবক এ সমস্ত বই থেকে বিমুখ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়েছে।” এই কথার ব্যাপারে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কথা কুফর।’ এ ব্যাপারে শাইখ ফাওযানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি কুফর। কে বলেছে এই কথা?!’ তাঁকে বলা হয়েছে, ‘এই লোক মুহাম্মাদ সুরূর।’ তখন তিনি বলেন, ‘এ তো খবিস লোক।’ তার ব্যাপারে শাইখ ইবনু বাযকে প্রশ্ন করা হলে—তবে প্রশ্নকারী জাফাফ (শুষ্কতা) শব্দের পরিবর্তে জাফা (বাতিল) বলেছে—তিনি বলেন, ‘এটি রিদ্দাহ তথা মুরতাদ হয়ে যাওয়ার শামিল, এটি জঘন্য কথা।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এই বই বিক্রি ও তা পড়ার বিধান কী?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘বইটি বিক্রি করা নাজায়েয। বরং বইটি ধ্বংস করা আবশ্যক।’

১৪০৮ হিজরীতে স্বয়ং মুহাম্মাদ সুরূর দাম্মাজে এসেছিল। আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সে মাগরিবের পর বক্তব্য দিল। আমি জানতাম না যে, সে এই জঘন্য কথা চার বছর আগেই তার উল্লিখিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছে, যা আমি সরাসরি তার মুখ থেকে শুনেছি। সে তার জবানে বলেছে যে, ‘আক্বীদাহর বইপুস্তকে শুষ্কতা রয়েছে। সে যখন তার কথা শেষ করল, তখন শাইখ মুক্ববিল আমাকে বললেন, ‘এসো, কিছু কথা বলো।’ তখনও মুহাম্মাদ সুরূর উপস্থিত রয়েছে। আমি তখন বললাম, “ ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহে শুষ্কতা রয়েছে—এরূপ বলা জায়েজ নয়, এটি হারাম। আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রাসূলের কথাকে সম্মান করা মুসলিমের ওপর আবশ্যক। ‘আক্বীদাহ আমাদের দ্বীনের মূলভিত্তি। মহান আল্লাহকে এক গণ্যকারী (তাওহীদবাদী) এবং বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত কারও আমল কবুল করা হবে না।...”

তার মধ্যে ক্রোধ ও উত্তেজনা দেখা গেল। আমরা ‘ইশার সালাত শেষ করে শাইখ মুক্ববিল (হাফিযাহুল্লাহ)’র বাসায় গেলাম। সে যেন (ক্রোধে) নিজেকে খেয়ে ফেলছিল। ‘আক্বীদাহর গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে তার বিদ্বেষ ও জুলুমের ব্যাপারে আমরা যা বলেছি, সে ব্যাপারে সে আমাদের সাথে একমত ছিল না। এই ঘটনার চার বছর পর এ ব্যাপারে শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য এসেছে। তারপর অন্যান্য ‘আলিমগণের বক্তব্য এসেছে। যেমন: শাইখ ফাওযান, শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন।” [শাইখ ওয়াসাবী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “ ‘ইশরূনা মা’খাযান ‘আলাস সুরূরিয়্যাহ”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=51016.]

·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়েছে,

يزعم بعض الناس أن منهج أهل السنة و الجماعة لم يعد مناسباً لهذا العصر ، مستدلين بأن الضوابط الشرعية التي يراها أهل السنة و الجماعة لا يمكن أن تتحقق اليوم؟

“কতিপয় লোক মনে করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী হিসেবে বিবেচিত নয়; এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত যেসব শার‘ঈ মূলনীতির মত পোষণ করে, সেগুলো বর্তমান সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।”

তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন,

الذي يرى أن منهج السلف الصالح لم يعد صالحاً لهذا الزمان، هذا يعتبر ضالاً مضللاً؛ لأن منهج السلف الصالح هو المنهج الذي أمرنا الله باتباعه حتى تقوم الساعة، يقول ﷺ : فإنه من يعش منكم فسوف يرى اختلافاً كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسكوا بها وعضّوا عليها بالنواجذ.
وهذا خطاب للأمة إلى أن تقوم الساعة، وهذا يدل على أنه لابد من السير على منهج السلف، وأن منهج السلف صالح لكل زمان ومكان، والله سبحانه وتعالى يقول : وَالسَّابِقُونَ الأوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ [التوبة : ١٠٠] وهذا يشمل الأمة إلى أن تقوم الساعة.
فالواجب عليها أن تتابع منهج السابقين الأولين من المهاجرين و الأنصار ، و الإمام مالك بن أنس يقول : لا يصلح آخر هذه الأمة إلا ما أصلح أولها.
فالذي يريد أن يعزل الأمة عن ماضيها ويعزل الأمة عن السلف الصالح يريد الشر بالمسلمين، ويريد تغيير هذا الإسلام ويريد إحداث البدع و المخالفات، وهذا يجب رفضه ويجب قطع حجته و التحذير من شره، لأنه لابد من التمسك بمنهج السلف والاقتداء بالسلف ولابد من السير على منهج السلف.
وذلك في كتاب الله عز وجل وفي سنة رسوله ﷺ كما ذكرنا، فالذي يريد قطع خلف الأمة عن سلفها في الأرض يجب أن يرفض قوله وأن يرد قوله وأن يحذر منه، والذين عرف عنهم هذا القول السيء لا عبرة بهم.

“যে মনে করে, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মানহাজ এই যুগের জন্য উপযোগী নয়, সে নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ তো সেই মানহাজ, কেয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে মানহাজের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)

এই সম্বোধন কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহ’র উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, অবশ্যই সালাফদের মানহাজ অনুসরণ করতে হবে, আর ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ সকল যুগ ও স্থানের জন্য উপযোগী। মহান আল্লাহ বলেছেন, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী এবং যারা উত্তমরূপে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও আল্লাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” (সূরাহ তাওবাহ: ১০০) মহান আল্লাহ’র এই বাণী কেয়ামত অবধি আগত সকল উম্মাহকে শামিল করে।

উম্মাহ’র ওপর অবশ্য করণীয় হলো, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সারির অগ্রণী, তাঁদের মানহাজ অনুসরণ করা। ইমাম মালিক বিন আনাস বলেছেন, “এই উম্মাহ’র প্রথম প্রজন্মকে যা সংশোধন করেছে, কেবল সেটাই এই উম্মাহ’র সর্বশেষ প্রজন্মকে সংশোধন করতে পারে।”

সুতরাং যে ব্যক্তি উম্মাহকে তার অতীত থেকে আলাদা করতে চায়, উম্মাহকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের থেকে আলাদা করতে চায়, সে মূলত মুসলিমদের অনিষ্ট কামনা করে। সে এই ইসলামকে পরিবর্তন করতে চায় এবং বিদ‘আত ও শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড উদ্ভাবন করতে চায়। তাকে বর্জন করা, তার দলিল কর্তন করা এবং তার অনিষ্ট থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। কেননা অবশ্যই সালাফদের মানহাজ আঁকড়ে ধরতে হবে এবং সালাফদের অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই সালাফদের মানহাজে পথ চলতে হবে।

আর এটি মহান আল্লাহ’র কিতাব এবং তাঁর রাসূলের ﷺ সুন্নাহ’য় রয়েছে, যেমনটি আমরা উল্লেখ করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি পৃথিবীতে এই উম্মাহ’র খালাফকে (শেষ প্রজন্ম) তার সালাফদের (প্রথম প্রজন্ম) থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, সে ব্যক্তির কথা প্রত্যাখ্যান করা, তার কথা খণ্ডন করা এবং তার থেকে উম্মাহকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাদের নিকট থেকে এই খারাপ কথা এসেছে বলে জানা গেছে, তাদের কোনো মূল্য নেই।” [ড. ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আর-রিফা‘ঈ, মুরাজা‘আতুন ফিল ফিক্বহিল ওয়াক্বি‘ইস সিয়াসিয়্যি ওয়াল ফিকরী (শাইখ ইবনু বায, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান এবং শাইখ সালিহ আস-সাদলানের সাথে কথোপকথন); পৃষ্ঠা: ৫৫-৫৬; দারুল মা‘আরিজিদ দাওলিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, সালাফী মানহাজ বর্তমান যুগেও গ্রহণযোগ্য। যারা বর্তমান যুগে সালাফী মানহাজ অগ্রহনযোগ্য—বলে প্রচার করে, তারা বিদ‘আতী। আল্লাহ আমাদেরকে ধূর্ত বিদ‘আতীদের সৃষ্ট যাবতীয় সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...