Showing posts with label দাওয়াহ ইলাল্লাহ. Show all posts
Showing posts with label দাওয়াহ ইলাল্লাহ. Show all posts

Sunday, April 21, 2019

রামাযান মাসে মুমিনের দৈনন্দিন কর্মসূচী

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ । ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

রহমতের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস মাহে রামাযান আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কি রামাযানের এই মহামূল্যবান সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি? আসুন না একটি তালিকা তৈরি করি যেন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে নেকী কুড়িয়ে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি।

ফজর পূর্বে:

  • (১)  আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও দুয়া: কারণ মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন: “কে আছে আমার কাছে দুআকারী, আমি তার দুআ কবুল করবো”।[ মুসলিম ]
  • (২)  সাহরী ভক্ষণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “সাহরী খাও। কারণ সাহরীতে বরকত আছে”।[বুখারী মুসলিম ]

ফজর হওয়ার পর:

  • (১)  ফজরের সুন্নত আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার থেকে উত্তম”। [ মুসলিম ]
  • (২) ইকামত পর্যন্ত দুআ ও যিকিরে মশগুল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না”।[আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ]
  • (৩)  ফজরের নামায আদায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”তারা যদি ইশা ও ফজরের ফযীলত জানতো, তো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৪)  সূর্যোদয় পর্যন্ত সকালে পঠিতব্য দুআ-যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে অবস্থান: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর নিজ স্থানেই সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করতেন”। [ মুসলিম ]
  • (৫) সূর্যোদয়েরে পর দুই রাকাআত নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি জামায়াতের সহিত ফজরের নামায পড়লো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকর করলো, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, তার জন্য এটা একটি পূর্ণ হজ্জ ও উমরার মত “। [ তিরমিযী ]
  • (৬)  নিজ নিজ কর্মে মনোযোগ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিজ হাতের কর্ম দ্বারা উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার নেই”। [ বুখারী ]

 যহরের সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত জহরের নামায আদায়। অতঃপর কিছুক্ষণ কুরআন কিংবা অন্যান্য দীনী বই পাঠ।
  • (২)  আসর পর্যন্ত বিশ্রাম, কারণ  তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে।

আসরের সময় :

  • (১)  আসরের নামায জামাতের সাথে সম্পাদন:  অতঃপর ইমাম হলে নামাযীদের উদ্দেশ্যে দারস প্রদান কিংবা দারস শ্রবণ কিংবা ওয়ায নসীহতের ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:”যে ব্যক্তি মসজিদে ভাল কিছু শিক্ষা নিতে কিংবা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেল, সে পূর্ণ এক হজ্জের সমান নেকী পেল”। [ ত্ববারানী ]
  • (২) পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারির আয়োজনে সহায়তা করা: এর মাধ্যমে যেমন কাজের চাপ হাল্কা হয় তেমন পরিবারের সাথে ভালবাসাও বৃদ্ধি পায়।

মাগরিবের সময় 

  • (১)  ইফতারি করা এবং এই দুআ পাঠ করা: “যাহাবায্ যামাউ ওয়াব্ তাল্লাতিল্ উরূকু ওয়া সাবাতাল্ আজরু ইন্ শাআল্লাহু তাআলা”। অর্থ: পিপাষা নিবারিত হল, রগ-রেশা সিক্ত হল এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হল।  [ আবূ দাউদ ]
  • (২)  মাগরিবের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা যদিও ইফতারি পূর্ণরূপে না করা যায়। বাকি ইফতারি নামাযের পর সেরে নেওয়া মন্দ নয়। অতঃপর সন্ধ্যায় পঠিতব্য যিকির-আযকার পাঠ করে নেওয়া।
  • (৩)  স্বভাবানুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

ইশার সময় :

  • (১)  জামায়াতের সহিত ইশার নামায আদায় করা।
  • (২)  ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীর নামায আদায় করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম করবে, (তারাবীহ পড়বে ) তার বিগত সমস্ত (ছোট গুনাহ) ক্ষমা করা হবে”। [বুখারী ও মুসলিম]
  • (৩)  সম্ভব হলে বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামায কর”।   [মুত্তাফিকুন আলাইহ]
Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' 
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে 
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-


. রামাদানকে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠান মনে করাঃ
আমাদের অনেকের কাছে রামাদান তাঁর আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘zombie’র মত উপোস থাকি শুধুমাত্র আমাদের আশেপাশের সবাই রোজা রাখে বলে। আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের অন্তর ও আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আমরা দু’আ করতে ভুলে যাই, ভুলে যাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করতে। নিশ্চিতভাবে আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই!
যদিও আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার নিকট রামাদান আসল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ হল না, এবং আমি বললাম, আমিন। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির নাকও মাটিতে ঘষুন যে জীবদ্দশায় তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ হতে দেখল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার রাখল না তাদের সেবা করার মাধ্যমে আর আমি বললাম, আমিন।
অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার উপস্থিতিতে যখন আপনার নাম উচ্চারণ করা হয় তখন সে আপনার প্রতি সালাম বর্ষণ করে না আর আমি বললাম, আমিন।” [তিরমিযী, আহমাদ, এবং অন্যান্য_আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত]
২. পানাহারের ব্যাপারে অতিমাত্রায় চাপে থাকাঃ
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, রামাদান মাসের পুরোটাই খাবার ঘিরে  আবর্তিত হয়। সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া বদলে আমরা পুরোটা দিন কেবল পরিকল্পনা প্রণয়ন, রান্নাবান্না, কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করে কাটাই। আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরোটা জুড়েই থাকে ‘খাওয়া-দাওয়া’।
যার দরূন আমরা উপোস থাকার মাসকে ভোজের মাসে পরিণত করেছি। ইফতারের সময়ে আমাদের টেবিলের অবস্থা দেখার মত! পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং পানীয়ে পরিপূর্ণ। পক্ষান্তরে, আমরা রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি, আর এভাবে আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির অনুসরণ বাড়তে থাকে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষালাভ করার বদলে। এটাও একধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন।
“তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ।” [সূরা আ’রাফঃ৩১]
৩. সারা দিন রান্না করে কাটানোঃ
কতিপয় বোন(হয় স্বেচ্ছায় নতুবা স্বামীর চাপে) সারা দিন ও সারা রাত ধরে রান্নাবান্না করতে থাকেন, তার ফলে দিনের শেষে তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে এশার সালাত পড়তে পারেন না, তাহাজ্জুদ কিংবা কুরআন তিলাওয়াত তো দূরে থাক! এই মাস হল মাগফিরাত এবং মুক্তিপ্রাপ্তির মাস। সুতরাং, চলুন আমরা চুলা বন্ধ করে নিজেদের ঈমানের প্রতি মনযোগী হই।
৪. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়াঃ
আমাদের কিছুসংখ্যক সেহরীর সময়ে নিজেদেরকে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভরাক্রান্ত করে তুলি, কারণ আমরা মনে করি সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না করার এটাই একমাত্র পথ, আর কিছুসংখ্যক রয়েছেন যারা ইফতারের সময় এমনভাবে খান যাতে মনে হয় আগামীকাল বলে কিছুই নেই, সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যাহোক, এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ।
পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আদম সন্তান তার উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এত খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো খাবারই যথেষ্ট। যদি তোমাদেরকে উদর পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করো।” [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী কর্তৃক সহীহ্কৃত]
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং অন্তরকে বধির করে ফেলে।
ইমাম আহমদকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “উদরপূর্ণ অবস্থায় একজন মানুষ কি তার হৃদয়ে কোমলতা ও বিনয় অনুভব করে?” তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “আমার মনে হয় না।”
৫. সারা দিন ঘুমিয়ে কাটানোঃ
রামাদান মাস হচ্ছে অত্যন্ত মূল্যবান সময়, এতটাই মূল্যবান যে মহান আল্লাহ্ পাক একে ‘আইয়্যামুম মাদুদাত’(একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিবস) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের অনুধাবন করার পূর্বেই এই মাগফিরাত ও মুক্তির মাস শেষ হয়ে যাবে। আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত এই পবিত্র মাসের প্রতিটি মূহুর্ত আল্লাহর ইবাদাতে কাটানোর, যাতে করে আমরা এই মাসের সর্বোচ্চ সওয়াব হাসিল করতে পারি। যাহোক, আমাদের কিছুসংখ্যক রামাদানের দিনগুলি ভিডিও গেমস্ খেলে অতিবাহিত করে, অথবা জঘন্যতম হল টিভি দেখা, ছবি দেখা এমনকি গান শোনা পর্যন্ত। সুবহানাল্লাহ্!!! আল্লাহকে মান্য করার চেষ্টা করা হয় তাঁকে অমান্য করার মাধ্যমে!
৬. রোজা রাখা অথচ খারাপ কাজ বর্জন না করাঃ
আমাদের কিছু সংখ্যক রোজা রাখে কিন্তু তারা মিথ্যাচার, অভিশাপপ্রদান, মারামারি, গীবত ইত্যাদি বর্জন করে না এবং কিছুসংখ্যক রোজা রাখার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পানাহার থেকে বিরত নয় বরং আল্লাহর প্রতি তাকওয়া(পরহেজগারী) অর্জন অনুধাবন না করে রোজা রাখে কিন্তু তারা প্রতারণা, চুরি, হারাম চুক্তি সম্পাদন, লটারির টিকেট ক্রয়, মদ বিক্রি, যিনা ইত্যাদিসহ যাবতীয় অননুমোদিত কর্মকান্ড বর্জন করে না। 
“হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” [সূরা বাকারাঃ১৮৩]
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও এর ওপর আমল করা বর্জন করে না ও মূর্খতা পরিহার করে না, তার পানাহার হতে বিরত থেকে উপবাস করা আল্লাহর নিকট প্রয়োজন নেই।” [ বুখারী ]
৭. ধূমপানঃ
  ধূমপান ইসলামে বর্জনীয় সেটা রামাদান মাসেই হোক বা এর বাইরে হোক, কারণ এটা “আল-খাবিছ্’(খারাপ কাজ) এর একটি। এবং এটা যাবতীয় ধূমপানের সামগ্রী অন্তভূর্ক্ত করে যেমনঃ সিগার, সিগারেট, পাইপ, শিশা, হুক্কা ইত্যাদি।
“তাদের জন্য যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসসমূহকে তাদের ওপর হারাম ঘোষণা করে”[সূরাআ’রাফঃ১৫৭]
এটা শুধু যে ধূমপায়ী তার জন্য ক্ষতিকর- তা নয়, বরং তার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের জন্যও ক্ষতিকর। এটা কারো অর্থ অপচয়ের জন্য একটি মাধ্যমও বটে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করা যাবে না কিংবা ক্ষতিসাধন বিনিময়ও করা যাবে না।”
এই হাদীস বিশেষত রামাদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটা সাওমকে বাতিল করে দেয়। [ফতওয়া-ইবনে উছাইমিন]
বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন
৮. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়াঃ
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “সেহরী খাও, কারণ এটার মধ্যে বরকত রয়েছে।” [বুখারী, মুসলিম]
এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ “আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।” [ মুসলিম]
৯. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেওয়াঃ
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃ “এটা বিদ’আত ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে নেই। বরং সুন্নাহ হল তার উল্টোটা করা। আল্লাহ প্রত্যুষের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান করেছেনঃ “আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।” [সূরা বাকারাঃ১৮৭]
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না।”
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া। এটা ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী আচরণ। আর রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে।” [ মুসলিম ]
১০. সেহরী না খাওয়ায় সাওম পালন না করাঃ
আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা সাওম পালন করে না এই ভয়ে যে সেহরী খাওয়া হয় নি।যাহোক, এটা এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালোবাসা ও কাপুরূষতা। এ আর এমন কি ব্যাপার যে সামান্য কয়েক মুঠো খাবার খাওয়া বাদ হয়ে যায়? এমন না যে এর কারণে আমরা মারা যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
১১. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়েদুআউচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইফতার এবং সেহরির যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত হয় সেগুলো বিদআত। ইফতার অথবা সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ হাদিস এ নেই। এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে।
১২. রোযা ভাঙতে দেরি করাঃ
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান শেষ হলে রোযা ভাঙেন। সূর্য অস্ত যাবার পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে রোযা ভাঙা সুন্নাহ সম্মত। আনাস(রাঃ) বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন।(মুসলিম)
১৩. ইফতার বেশি খেতে গিয়ে মাগরিবের নামায জামাআত ধরতে না পারাঃ
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা। এটা একেবারেই অনুচিত। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার ভেঙে অতঃপর মাগরিবের নামাজ এর জন্য চলে যেতেন। নামাজ শেষ করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও কিছু খেতে পারি।
১৪. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াঃ
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন: “তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- ১)একজন পিতার দুয়া, ২)রোযাদার ব্যক্তির দুয়া, ৩)মুসাফিরের নামাজ”। [ বায়হাকি ]
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল হওয়া ?
১৫. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পরাঃ
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন: “সালাত(নামাজ) হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী”। [ মুসলিম ]
আসলে শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) না পরলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না।রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন: “যে আসরের সালাত পরেনা, তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে যায়।” [ বুখারি ]
১৬. রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব না পরা কবীরা গুনাহ।
“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”  [ আন-নুরঃ ৩১ ]
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [আল-আহযাবঃ ৫৯]
সুতরাং রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা অবশ্যই সিয়াম পালনের পুরস্কার হতে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও এটি সিয়াম ভঙ্গ করেনা।
১৭. পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য রোযা না রাখা
পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে রোযা না রাখা  শরীয়ত সম্মত নয়। সকালে পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময় থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।পড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন।
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” [আত-তালাকঃ ২-৩]

১৮. স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে রোযা রাখা
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোযা রাখা উচিত নয়। এটি অন্যতম একটি বড় ভুল যা আমরা করে থাকি। সিয়াম পালন করার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে কেউ রোযা রাখে তাহলে তা শিরকের(ছোট শিরক বা শিরকুল আসগার) আকার ধারন করতে পারে।
১৯. তারাবীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধঃ
তারাবীর নামাযের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাআত নেই। আট এবং বিশ রাকাআত-এ দুটোই শরীয়ত সম্মত। শেখ ইবনে উথাইমিন বলেন,“এগারো কিংবা তেইশ রাকাআতের কোনটিকে নির্দিষ্ট করে অপরটি বাতিল করা অনুচিত।কারন বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।”
২০. নির্দিষ্টভাবে শুধু ২৭ রমযানের রাতকে লাইলাতুল ক্বাদর মনে করে ইবাদত করাঃ
আমরা অনেকেই কেবল ২৭ রমযান রাতে লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করে থাকি,কিন্তু অন্যান্য বিজোড় রাতগুলিকে প্রাধান্য দেইনা। অথচ রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“রমযানের শেষ দশ রাত্রির বিজোড় রাতগুলিতে লাইলাতুল ক্বাদর তালাশ কর।”(বুখারি ও মুসলিম)
২১. ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের শেষাংশ অবহেলায় পালন করা
আমরা অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি(নতুন কাপড় কেনা,খাবারের আয়োজন করা,মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা)নিতে গিয়ে রমযানের শেষ দশ দিন অবহেলায় পালন করি(ঠিকমত ঈবাদত না করা এবং লাইলাতুল ক্বাদরের তালাশ না করা)। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)রমযানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন,কেনাকাটি করায় ব্যস্ত থাকতেন না। রমযান শুরু হবার আগেই আমাদের কেনাকাটি শেষ করা উচিৎ।
 আয়শা (রাঃ)হতে বর্ণিত: “যখন রমযানের শেষ দশক শুরু হত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন(অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন,স্ত্রীদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতেন),রাত্রি জাগরণ করতেন এবং তাঁর পরিবারকে জাগিয়ে তুলতেন।” [বুখারী,মুসলিম]
২২. ইফতার পার্টির আয়োজন করা
যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব আছে এবং এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন,যেখানে হিজাববিহীন নারীদের আগমন থেকে শুরু করে অশ্লীল নাচ-গান, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা,তারাবিহ এর নামাজ ছেঁড়ে দেওয়া- এ সবই হয়ে থাকে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ।
collected from quraner alo

Sunday, March 3, 2019

হিংসুকদের কটুকথা ও সমালোচনা থেকে বাঁচার ৪টি উপায়

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
লেখকঃআব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

হিংসুকদের কটুকথা ও সমালোচনা থেকে বাঁচার ৪টি উপায়

সবচেয়ে নির্বোধ ও ব্যর্থ লোকেরাই হিংসুক হয়। তারা অন্যের সাফল্য সহ্য করতে পারে না। তখন নানা বাজে কথা ও হিংসাত্মক মন্তব্য ছুড়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। কিন্তু সফল ও বিচক্ষণ ব্যক্তিরা এ সব হিংসুক ও বিদ্বেষীদের থেকে আত্মরক্ষার পদ্ধতি অবলম্বন করে সামনে এগুতে থাকে। আল্লাহর দয়ায় কোন কিছুই তাদেরকে দমাতে পারে না। এখানে হিংসুক লোকদের বিষাক্ত তীর সদৃশ কথা ও সমালোচনার আঘাত থেকে আত্মরক্ষার চারটি পদ্ধতি তুলে ধরা হল:

❒ ১) উত্তেজিত হবেন না; নিজ কর্তব্যে অবিচল থাকুন:

– হিংসুক ও বিদ্বেষপরায়ণ লোকদের কথায় উত্তেজিত হবেন না বরং নিজ গতিতে দৃঢ়তা ও সতর্কতার সাথে পথ চলা অব্যহত রাখুন।
মনে রাখবেন, রেগে গেলে নিশ্চিতভাবে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সুতরাং রাগ যেন কোনভাবেই আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।
– হাসুন। হাসি এক বিস্ময়কর যাদু; যা রাগের আগুনকে নিভিয়ে দেয়।
– ধৈর্য ধরুন। কেননা, ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ আছেন।
– আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির আজিম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করুন।
– আর হিংসুকদের হিংসা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন।

❒ ২) পাত্তা দিবেন না: 

হিংসুকদের সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্যে পাত্তা দিবেন না।
কেননা কথা দিয়ে রাজপ্রাসাদ ভাঙ্গা যায় না। কথা বলে কঠিন দুর্গের দেয়াল ধ্বংস করা যায় না। সুতরাং যারা জীবনে সফলতা অর্জন করেছে হিংসুকদের কথা-বার্তা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
তাই এ সব লোকদের কথার মূল্য দেয়া উচিৎ নয়। ওসব কথা নিয়ে ভেবে সময় অপচয় করাও অনর্থক। বরং আপনি সঠিক কাজটি নিজের মত করে যান। আল্লাহর উপর সুদৃঢ় আস্থা রাখুন এবং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি আপনাকে হিংসুকদের গাত্রদাহ সত্যেও অনেক দূর এগিয়ে নিবেন ইনশাআল্লাহ।

❒ ৩) আপনিই সেরা:

আপনি নিশ্চয় এ সব লোকদের চেয়ে চারিত্রিক দিক দিয়ে সেরা, কর্ম ক্ষেত্রে এগিয়ে আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দিক দিয়েে অধিক শক্তিশালী। পিতামাতার সেবা, পরোপকার, সমাজ কল্যাণ সহ নানা সৎকর্মে আপনি অগ্রগামী এবং জীবনের নানা প্রতিযোগিতায় সফল।
আপনার মধ্যে এসব আকর্ষণীয় গুণাবলী না থাকলে তো হিংসুকরা আপনাকে নিয়ে ভাবতো না। আপনার সাফল্যে এদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটতো না।
সুতরাং এতেই পরিষ্কার হয় যে, আপনি তাদের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন।
অত:এব, আপনি আরও দৃঢ়প্রত্যয়ে আপনার গুণাবলীগুলোকে সমৃদ্ধ করতে থাকুন। তাহলে দেখবেন, এরা নিজেরাই নিজেদের হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

❒ ৪) কাজ করুন এবং উন্নয়ন চেষ্টা অব্যাহত রাখুন:

এ সব বিদ্বেষপরায়ণ ও হিংসুকদের সবচেয়ে বড় জবাব হল, আপনি আপনার চারিত্রিক সৌন্দর্য, অধ্যাবসা ও পরিশ্রম বৃদ্ধি করুন। আল্লাহর প্রতি ঈমানী দৃঢ়তা বাড়ান। আরও বেশি পরিমাণ কল্যাণকর কাজ আঞ্জাম দিন এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এটাই হবে তাদের উপযুক্ত জবাব। প্রমাণিত হবে হিংসুকদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। সেই সাথে বাড়বে আপনার ব্যক্তিত্বের পরিপক্বতা এবং জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার মানসিক শক্তি।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। (মোটিভেশন মূলক আরবী প্রবন্ধ অবলম্বনে রচিত)
————————
গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

Friday, January 11, 2019

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
46
অনুবাদক: ইকবাল হোছাইন মাছুম
প্রচারেঃজাহিদ হাসান নিলয় 

সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ

المعروف এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে : المعلوم বা জ্ঞাত ও জানা বস্তু বা বিষয়। عرف يعرف معرفة وعرفانا এর অর্থ জানা। المنكر- المعروف (অজ্ঞাত ও অপরিচিত) এর বিপরীত। المعروف শব্দটি المعرفة (জানা) এবং الاستحسان (কল্যাণকরন) উভয়কে শামিল করে।
শরিয়তের পরিভাষায় মারুফ বলা হয়: যে সকল ফরজ ও নফল কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং নৈকট্য সাধিত হয় তাকে মারূফ বলে। আর মুনকার হচ্ছে মারূফের বিপরীত। এমন কথা ও কাজ যাকে শরিয়ত হারাম, অপছন্দ ও ঘৃণা করে হারাম সাব্যস্ত করেছে। উপরোক্ত সংজ্ঞা দ্বয়কে সামনে রাখলে আমরা দেখতে পাব যে শরিয়তের মৌলিক ও আনুষঙ্গিক সব বিষয় যেমন আক্বিদা-বিশ্বাস, ইবাদত, আখলাক-সুলুক ও মুআমালাত-ফরয হোক বা হারাম, মোস্তাহাব কিংবা মাকরূহ-সবই উভয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে যা ভাল ও কল্যাণকর তা মারূফের অন্তর্ভুক্ত আর যা খারাপ ও অকল্যাণকর মুনকারের অন্তর্ভুক্ত। আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার ওয়াজিব। এ মর্মে অনেক আয়াত ও অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটি ওয়াজিবে কেফায়া। উম্মতের যথেষ্ট পরিমাণ অংশ এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যদের থেকে গুনাহ রহিত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:- আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করবে, নির্দেশ করবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হল সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান:১০৪)
আয়াতে (ولتكن) শব্দটি أمر তথা নির্দেশ সূচক বাক্য। যা আবশ্যকীয়তাকে প্রমাণ করে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:- আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা:৭১) আর মুনাফেক সম্পর্কে বলেছেন: মুনাফেক নর, মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ। অসৎকর্মের এবং সৎকর্ম নিষেধ করে। (সূরা তাওবা : ৬৭)
আল্লাহ তাআলা আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকারকে (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ) মোমিন ও মুনাফেকদের সাথে পার্থক্যকারী নিদর্শন হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। সাহাবি আবু সাইদ খুদরী রা, থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি তোমাদের কেউ অন্যায় অশ্লীল কর্ম দেখলে শক্তি দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি সমর্থ না হও তাহলে কথার দ্বারা প্রতিবাদ করবে এতেও সমর্থ না হলে মন থেকে ঘৃণা করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচে দুর্বল ঈমান। হাদিসে বর্ণিত فليغيره শব্দটি নির্দেশ সূচক বাক্য যা আবশ্যকীয়তার দাবিদার। ইজমা প্রসঙ্গে আল্লামা ইমাম নববী রহ. বলেন- আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে, কোরআন, সুন্নাহ, এবং ইজমা অভিন্ন মত পোষণ করেছে। বাকি থাকল ওয়াজিবে কেফায়া হওয়া। এটিও জমহুরে উম্মতের মতামতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, আল্লামা ইবনুল আরাবী মালেকি রহ. আল্লাহর বাণী ولتكن منكم أمة প্রসঙ্গে বলেন। আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার যে ফরযে কেফায়া তার প্রমাণ এ আয়াতের মধ্যেই বিদ্যমান।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের তিনটি তাৎপর্য :

(এক) সৃষ্টির বিরুদ্ধে إقامة حجة الله على خلقه আল্লাহর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী রাসূল প্রেরণ করেছি যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ আরোপ করার মত অবকাশ না থাকে। (সূরা নিসা:১৬৫)
(দুই) আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণকারী আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালনের জামানত থেকে মুক্তি পাওয়া। যেমন শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের ভাল ও সৎ লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : তারা বলল, তোমাদের পালনকর্তার নিকট দায়িত্ব-মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা সাবধান হয় এ জন্য। (সূরা আরাফ : ১৬৪)
(তিন) যাকে সৎ কাজের আদেশ দেয়া হয় বা অসৎ কাজ থেকে বারণ করা হয় তার উপকারের প্রত্যাশা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:- আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মোমিনদের উপকারে আসবে। (যারিয়াত : ৫৫)
আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের ফজিলত : আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকার ইসলামের একটি অত্যবশ্যকীয় দায়িত্ব। একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং এ ধর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য। সংস্কার ও সংশোধনের বিশাল মাধ্যম। তার মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। তার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির বিস্তার ঘটে। কল্যাণ ও ঈমান বিস্তৃতি লাভ করে। যিনি আন্তরিকতা ও সততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক। কোরআনে অসংখ্য আয়াত ও প্রিয় নবীর অগণিত হাদিস এর প্রমাণ বহন করে। এর অল্প কিছু নীচে প্রদত্ত হল।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন: অর্থাৎ আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক-সুহৃদ। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সালাত প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ রহম ও দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী। প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা : ৭১) আয়াতে পরিষ্কার দেখা গেল যে আল্লাহ তাআলা আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের উপর রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
(২) মহান রাব্বুল আলামীন আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন কারীদের প্রশংসা এবং তাদের পরিণাম ও শেষ ফল কল্যাণময় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই সফল কাম। (আলে ইমরান : ১০৪)
(৩) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার পার্থিব মুসিবত ও পারলৌকিক শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। আল্লাহ বলেছেন: যে উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হয়ে গেল। তখন আমি সে সব লোকদের মুক্তি দান করালাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহ্‌গার জালিমদেরকে নিকৃষ্ট আজাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানির ফলস্বরূপ। (সূরা আরাফ : ১৬৫)
(৪) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার পরিত্যাগ করা আল্লাহর লানত, গজব ও ঘৃণার কারণ এবং এ কারণেই দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তি নেমে আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: অর্থাৎ বনী ঈসরাইলের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম তনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এ কারণে যে তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমালঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না যা তারা করত। তারা যা করত অবশ্যই মন্দ ছিল। (সূরা মায়েদা : ৭৮-৭৯)

মন্দ কাজে বাধা প্রদান ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলি :

প্রথমত : আদেশদান ও বাধা প্রদানকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি:
(১) ঈমান। অমুসলিমদের উপর এ দায়িত্ব ওয়াজিব নয়।
(২) মুকাল্লাফ বা শরিয়ত কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া। অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীকে বুদ্ধিমান (عاقل) ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। নির্বোধ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উপর আদেশ ও নিষেধ করা ওয়াজিব নয়।
(৩) সামর্থ্য। যিনি এ কাজে ক্ষমতা রাখেন তার উপরই ওয়াজিব। আর যার ক্ষমতা নেই, অক্ষম ও অসমর্থ তার উপর ওয়াজিব নয়। তবে তাকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে ও অপছন্দ করতে হবে। করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়ত: অসৎ কাজ (যা প্রতিহত করা হবে তার সাথে) সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি।
(১) কাজটি মন্দ ও নিষিদ্ধ এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। ধারণা ও সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে বাধা প্রদান বা প্রতিহত করণ জায়েজ হবে না।
(২) যে মন্দ কাজ প্রতিহত করার ইচ্ছা তাকে সম্পাদনকারী সহ প্রতিহত করার সময় কাজে লিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যেতে হবে।
(৩) প্রতিরোধ উদ্দিষ্ট অসৎকর্মটি স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হতে হবে। অনুমান নির্ভর হলে প্রতিহত করণ জায়েজ হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন: – ولا تجسسوا তোমরা দোষ ও গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। (সূরা হুজুরাত : ১৩) তাছাড়া ঘর ও এ জাতীয় (সংরক্ষিত) জিনিসের একটি স্বকীয় মর্যাদা আছে। শরয়ি কোন কার্যকারণ ব্যতীত সেটি বিনষ্ট কর বৈধ হবে না।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার সম্পাদন কারীর কিছু আদব:

ইখলাস ও আন্তরিকতা। কারণ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের বাধা প্রধান একটি অন্যতম শীর্ষ ইবাদত ; আর ইবাদত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:- অতএব আপনি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন।
(২) ইলম তথা প্রয়োজনীয় জ্ঞান। ইলম ব্যতীত অসৎ কাজে বাধা প্রদান করতে যাবে না। কারণ এতে শরয়ি নিষিদ্ধ কাজ সমূহে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:- বলে দিন, এটাই আমার পথ আমি আল্লাহর দিকে বুঝে শুনে সজ্ঞানে আহ্বান করি-আমি এবং আমার অনুসারীরা (ইউসুফ : ১০৮)
(৩) আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের ক্ষেত্রে হক স্পষ্ট করার পাশাপাশি হিকমত ও সুকৌশল, সদুপদেশ এবং সূক্ষ্ম পন্থার সাহায্য নেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: অর্থাৎ আপনি মানুষদের আপনার প্রতিপালকের পথে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করুন। (সূরা নাহল : ১২৫) আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারুন আ.-কে ফেরআউনকে দাওয়াত দেয়ার কৌশল শিক্ষা দিয়ে বলেছেন : অত:পর তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে এতে করে হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। [ত্ব-হা:৪৪] আমাদের নবী মুহম্মদ সা.-কে লক্ষ্য করে বলেন: আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)
(৪) আমর বিল মারূফ ও নেহি আমিল মুনকার-এর ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সর্বাপেক্ষা জরুরি বিষয় হচ্ছে : সবর ধৈর্য এবং সহনশীলতা। লোকমান আ. স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন: হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।(সূরা লোকমান : ১৭)
(৫) কল্যাণ ও অকল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখা। সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ তখনই করবে যখন অকল্যাণের চেয়ে কল্যাণের দিকটি প্রবল থাকে আর যদি অবস্থা বিপরীত হয় যে এটি করতে গেলে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের সম্ভাবনাই বেশি তাহলে আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার জায়েজ হবে না। কারণ এতে অপেক্ষাকৃত ছোট মুনকার দূর করতে গিয়ে আরো বড় মুনকারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
(৬) মুনকার ও অসৎকাজ দূর করার ক্ষেত্রে সবচে সহজ কাজের সাথে সংগতিপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করা। সুতরাং, সংগতি পূর্ণ পন্থা ও মাধ্যম বাদ দিয়ে আরো বড় মাধ্যম গ্রহণ করা জায়েজ হবে না।
(৭) আবু সাইদ খুদরী রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিন্যাস অনুযায়ী ধারাবাহিকতা ও স্তর বিবেচনায় রেখে মন্দ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের পদক্ষেপ নেয়া। আবু সাইদ খুদরী রা. বলেন. আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি। তোমাদের কেউ মন্দ কাজ হতে দেখলে (শক্তি প্রয়োগ করে) প্রতিহত করবে, সম্ভব না হলে (মুখের মাধ্যমে) প্রতিবাদ করবে। এও সম্ভব না হলে (মনে মনে) ঘৃণা করবে। আর এটি হচ্ছে ঈমানের সর্ব নিম্ন স্তর। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সহজ পন্থা ও পদ্ধতিতে কাজ সম্ভব হলে কঠোর পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। বরং এটি ঠিকও হবে না। যেমন, যে মন্দ কাজ প্রতিবাদের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব সেখানে শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করা শরিয়তের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। এ নীতিমালা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের উপকারিতা:

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানে অনেক ফায়দা ও উপকারিতা রয়েছে, তার কয়েকটি নিম্নে প্রদত্ত হল।
(১) মন্দ ও অন্যায় দেখে তা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার পদক্ষেপ না নেয়া শাস্তি যোগ্য অপরাধ। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে। সুতরাং আমার বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে আল্লাহর সে শাস্তি হতে দূরে থাকা যায় ও পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
(২) আল্লাহ তাআলা কল্যাণ ও নেক কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার উৎসাহ-বরং নির্দেশ দিয়েছেন। আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে উক্ত নির্দেশের বাস্তবায়ন হয় এবং কল্যাণ ও নেকের কাজে সহযোগিতা হয়।
(৩) সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কারণ এর মাধ্যমে যাবতীয় অকল্যাণ ও অনিষ্ট বিদূরিত হয়। ফলে মানুষ স্বীয় দ্বীন-জান-সম্পদ ও সম্মানের ব্যাপারে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বোধ করে।
(৪) এর মাধ্যমে অন্যায় ও অনিষ্টের হার হ্রাস পায়। সমাজ থেকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের প্রতিযোগিতা প্রদর্শনী বিলুপ্ত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যেগুলো মূলত সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করত। ফলে সমাজ শান্তি শৃঙ্খলা, মিল-মহব্বত ও সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে।

Thursday, September 13, 2018

শিরক (اَلشِّرْكُ)

রচনায়: নাফি
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রসূলিল্লাহ্ (স:)
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য এবং সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (স:) এর উপর। অতঃপর শিরকের মত মহাপাপকাজ থেকে সতর্ক করার জন্য মুসলিম সমাজে সংঘটিত কয়েকটি শিরকী কার্যক্রমের বর্ণনা কুর’আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এই লিফলেটটিতে তুলে ধরা হলো। এতে কুর’আনের রেফারেন্স বুঝানোর জন্য সূরাহ্-সংখ্যা ও আয়াত-সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন: [১২:১০৬] দ্বারা ১২ নং সূরাহ্ অর্থাৎ ‘সূরাহ্ ইউসুফ’ এর ১০৬ নং আয়াত বুঝানো হয়েছে।
শিরকের অর্থশাব্দিক অর্থে শিরক/শিরক (اَلشِّرْكُ) মানে অংশীদারিত্ব; কোন কিছুতে অংশীদার সাব্যস্ত করা। ইসলামের পরিভাষায় এর অর্থ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে কোন বিষয়ে (তাঁর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে, তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে কিংবা তাঁর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে) কোন অংশীদার বা সমকক্ষ স্থির করা।
শির্কের ব্যাপকতাআমাদের সমাজে অনেকের ধারণা শির্ক বলতে শুধু মূর্তি পূজাকেই বুঝানো হয়। কিন্তু ঈমান আনার পাশাপাশি মানুষ তার কথা, চিন্তা ভাবনা, নিয়্যত বা কর্মের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রতিনিয়ত শির্ক করে যাচ্ছে। আল্লাহ্’র তাওহীদ সম্পর্কে সহীহ জ্ঞানের অভাব, প্রচলিত রীতি-নীতি রসম-রেওয়াজের অন্ধ অনুসরণ, তথাকথিত ওলী-বুযুর্গদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি শির্ক বিস্তারের কারণ। আল্লাহ্ বলেন: অধিকাংশ লোক আল্লাহ্’র প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক। [১২:১০৬] আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন: যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলম (শির্ক) দিয়ে কলুষিত করেনি প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্যই রয়েছে শান্তি-নিরাপত্তা এবং তারাই হচ্ছে হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [৬: ৮২]
আয়াতের মর্মার্থ:  যাদের ঈমানের সঙ্গে শির্কের সামান্যটুকুও মিশ্রণ নেই তাদেরকেই শুধু হিদায়াত ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শির্কের প্রকারভেদশির্ক মূলত দু’প্রকার: বড় শির্ক (اَلشِّرْكُ الأَكْبَرُ) ও ছোট শির্ক (اَلشِّرْكُ الأَصْغَرُ)। ইবাদাত সমূহের যে কোন ইবাদাত আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা বড় শির্ক। বড় শির্ক যে কোন ব্যক্তিকে সাথে সাথেই ইসলামের গণ্ডী থেকে বের করে দেয়। আন্তরিক তাওবা (تَوْبَةً نَّصُوحًا: [৬৬:৮]) ছাড়া আল্লাহ্ তা’আলা এ ধরনের শির্ক কখনো ক্ষমা করবেন না। ছোট শির্ক বলতে এমন কাজ ও কথাকে বুঝানো হয় যাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দিবেনা বটে, তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহাপাপ এবং তা বলবৎ রাখলে বড় শির্কের দিকে নিয়ে যায়। ছোট শির্কের মধ্যে একটি বিশেষ প্রকার হচ্ছে ‘গুপ্ত শির্ক’ (الشرك الخفي) অর্থাৎ ইবাদাত প্রদর্শন করার ইচ্ছা বা ‘রিয়া’।
শির্ক করার শাস্তি: 
“নিশ্চয়ই শির্ক হলো বড় যুলম।” [সূরাহ লুকমান, আয়াত ১৩] শির্কের মাধ্যমে মানুষের সব সৎ আমল নষ্ট হয়ে যায়। [সূরাহ যুমার, আয়াত ৬৫] শির্কে লিপ্ত ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম; জাহান্নামই হবে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা।
কুর’আন থেকে দালীল: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
 ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। তবে তিনি এটা ছাড়া অন্য সব (গুনাহ্) যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করবেন।’’ [৪:৪৮]
 ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করে আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে করেন তার ঠিকানা। এরূপ অত্যাচারীদের জন্য তখন আর কোন সাহায্যকারী থাকবে না।’’ [৫:৭২]
হাদিস থেকে দালীল: রসূল (স:) বলেন, “যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন বস্তু বা ব্যক্তিকে শরীক করছে তাহলে সে নিশ্চিতভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [বুখারী ১২৩৮, ৪৪৯৭, ৬৬৮৩ মুসলিম ৯২]
কতিপয় শির্কের তালিকা: 
 আহ্বান ফরিয়াদের শির্কপুণ্যার্জন বা মানুষের নিজের সাধ্যের বাইরে কোন পার্থিব লাভের আশায় বা কোন পার্থিব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে আহ্বান করা বা কারো কাছে দুআ করা শির্ক। গাছ, পাথর, বিভিন্ন ‘মাজারের’ কচ্ছপ, কুমির ইত্যাদি অক্ষমদের কাছে চাওয়া, মনের আবেদন বলা, তাদের বরকতময় মনে করাও শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহ্’র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না? আর তাদের আহ্বান সম্পর্কেও তারা অবহিত নয়। [৪৬:৫]
 জবাইয়ের শির্ক: একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর নৈকট্য লাভের জন্য বা অন্য কারোর নামে (নাবী, ওলী, বুযুর্গ বা জিনের নামে) কোন পশু জবাই করা শির্ক। “আপনি বলুন: আমার সলাত, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্র-ই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই।” [৬:১৬২-১৬৩; দ্রষ্টব্য ৬:১২১]
 মানতের শির্ক: একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য বা অন্য কারোর নামে কোন কিছু মানত করা শির্ক। বর্তমান যুগে যারা তথাকথিত ওলী-বুযুর্গদের উদ্দেশ্যে বা তাদের কবরের জন্য মানত বা উৎসর্গ করে যাচ্ছে তাদের ও মক্কার মুশরিকদের মধ্যে সামান্যটুকুও পার্থক্য নেই। আল্লাহ্ মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন: “মুশরিকরা আল্লাহর দেয়া শস্য ও পশু সম্পদের একাংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে অতঃপর তাদের ধারণানুযায়ী বলে এ অংশ আল্লাহর জন্য আর এ অংশ আমাদের শরীকদের (তাদের ভ্রান্ত উপাস্যদের)।” [৬:১৩৬] কিন্তু মু’মিন শুধু মাত্র আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে মানত করে:  দ্রষ্টব্য [৩:৩৫]।
 আনুগত্যের শির্কশরীয়তের গ্রহণযোগ্য কোন দালীল ছাড়াই হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েযের ব্যাপারে আলেম, বুযুর্গ, নেতা / উপরস্থ কারোর সিদ্ধান্ত/নীতি অন্ধভাবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া শির্ক; যেমন: সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার বা মদ জাতীয় হারাম বস্তুকে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক দ্বারা হালাল করা, পুরুষ ও মহিলার ওয়ারিসি সম্পত্তির সমবন্টন কিংবা পর্দাহীনতার নীতি সমর্থন ও পালন এসবই আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শির্ক। আল্লাহ্ বলেন: “তারা আলিম ও ধর্ম যাজকদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে আল্লাহকে ছেড়ে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহ্ (ঈসা) কেও।” [৯:৩১] অথচ “সকল সৃষ্টি আল্লাহ্র-ই এবং হুকুমের অধিকারীও একমাত্র তিনি।” [৭:৫৪; আরো দ্রষ্টব্য ১২:৪০]
 তাওয়াক্কুল ভরসার শির্কমানুষের অসাধ্য ব্যাপার সমূহ সমাধানে বা বিপদ-আপদে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর উপর ভরসা করা শির্ক। পীর ফকির কে সম্মান করে বা দেনেওয়ালা বিশ্বাস করে তার কাছে সন্তান, ব্যবসায় উন্নতি চাওয়া, তাকদীর ফেরানো, তাদেরকে মুশকিল আসানকারী মনে করা সবই শির্কের অন্তর্ভুক্ত। শির্কমুক্ত ঈমানের শর্ত হচ্ছে: “তোমরা একমাত্র আল্লাহ্’র উপরই ভরসা করো যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।” [৫:২৩; দ্রষ্টব্য ৮:২]
 শাফায়াত / সুপারিশের শির্কআল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর কাছে পরকালের সার্বিক মুক্তির জন্য কোন সুপারিশ কামনা করা শির্ক, যেমন: শাফায়াত লাভের আশায় পীর, হুজুর, ইমামদের কাছে মুরীদ হওয়া শির্ক। “সমস্ত সুপারিশ আল্লাহ্রই ক্ষমতাধীন।” [৩৯:৪৪; আরো দ্রষ্টব্য ২:২৫৫, ৬:৫১, ১০:৩, ১১:১০৫, ২০:১০৯, ২১:২৮, ৩২:৪, ৫৩:২৬, ৭৪:৪৮, ৭৮:৩৮] কিয়ামতের দিন রসূল (স:) এর সুপারিশ পাওয়ার ভাগ্য শুধু তাদের হবে যারা শির্কমুক্ত অবস্থায় ইন্তিকাল করবে। [বুখারী ৯৯ (ইল্’ম অধ্যায়), ৬৫৭০ (আর-রিক্বক), মুসলিম, ঈমান অধ্যায় ১৯৯ (দারুসসলাম ৪৯১), তিরমিযী: নং ২৪৪১, ৩৬০২]
 ওসীলার শির্ক মৃত ব্যক্তির (এমনকি নাবী, রসূল, অলীদের) অসীলা দেওয়া বা মাধ্যম সাব্যস্ত করা শির্ক। “আল্লাহ্-কে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা সবাই তোমাদের মতই বান্দা।” [৭:১৯৪; দ্রষ্টব্য ১৭:৫৭]
 কসমের শির্ক: আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম কাটা (যেমন: আমার মায়ের কসম, কুর’আনের কসম, নাবীর কসম) বা কুর’আন ছুয়ে শপথ করা শির্ক। “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর কসম খাবে সে মুশরিক হয়ে যাবে।” [তিরমিযী ১৫৩৫; দ্রষ্টব্য বুখারী ২৬৭৯, ৬১০৮, ৬৬৫০]
 ভক্তিভালবাসার শির্কসলাতে দাঁড়ানোর মত অন্যের সামনে বা স্মৃতি স্তম্ভ, স্মৃতি সৌধ, শহীদ-মিনার, শিখা-চিরন্তন বা শিখা-অনির্বাণের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা পেশ করা/নিরবতা পালন করা এ সবই শির্ক। “মানুষের মধ্যে অনেকেই এমন যে, তারা আল্লাহ্র সাথে অন্যান্যকে শরীক করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে যেমন ভালবাসা হয়ে থাকে আল্লাহ্র প্রতি।” [২:১৬৫] আল্লাহ্-কে ভালোবাসার নিদর্শন সমূহ: আল্লাহ্’র ইচ্ছাকে নিজ ইচ্ছার উপর প্রাধান্য দেয়া এবং সকল বিষয়ে আল্লাহ্’র বিধি-বিধান ও রসূল (স:) এর সুন্নাহ্ মেনে চলা [৯:২৪, ৩:৩১, ৪৮:২৯, ৫:৫৪, ৪:৫৯]। প্রসঙ্গত: উল্লেক্ষ্য “যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক তাহলে সে যেন নিজ বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” [তিরমিযী, কিতাবুল আদাব ২৭৫৫]
১০ ভয়ের শির্কএকমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ (যেমন: কোন মূর্তি, মৃত ‘কামেল’ ব্যক্তি, অদেখা কোন জিন, ‘জিন্দা পীর’ বা কবরে শায়িত পীর) অপ্রকাশ্যভাবে দুনিয়া বা আখিরাত সংক্রান্ত কোন ক্ষতি সংঘটন করতে পারে বলে অন্ধ বিশ্বাস করে তাকে ভয় পাওয়া শির্ক। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “নিশ্চয়ই এ শয়তান; যে সবসময় তোমাদেরকে নিজ বন্ধুদের ব্যাপারে ভয় দেখিয়ে থাকে। তোমরা ওদেরকে ভয় করোনা। শুধু আমাকেই ভয় করো যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।” [৩:১৭৫] তেমনি ভাবে ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্যকে ভয় বা লজ্জা করা শির্ক (মানুষ কি বলবে? যদি সলাত পড়ি তাহলে কি চাকুরী থাকবে? দাড়ি রাখলে তো অন্যেরা হাসে, পর্দা করলে মানুষ উপহাস করে); যেখানে আল্লাহ্ বলছেন: “তাদেরকে ভয় করোনা; শুধু আমাকেই ভয় করো।” [৫: ৩]
১১ হিদায়াতের শির্কআল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত দিতে পারে (বা নিয়ে নিতে পারে) এমন বিশ্বাস করা অথবা এ বিশ্বাসে কারোর নিকট হিদায়াত কামনা করা শির্ক। এমনকি আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (স:) ও নিজ ইচ্ছায় কাউকে হিদায়াত দিতে পারেননি। আল্লাহ্ তা’আলা রসূল (স:) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “তাদেরকে সুপথে আনার দায়িত্ব তোমার উপর নেই, বরং আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন।” [২:২৭২; দ্রষ্টব্য ২৮:৫৬]
 কবর পূজার শির্ককবরে শায়িত তথাকথিত কোনো ওলী বা বুযুর্গের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বা এমনিতেই কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা, বিনম্রভাবে কবরের সামনে দাঁড়ানো, কবরের মুরাকাবা করা, কবরবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান/ফরিয়াদ, সাজদাহ, টাকা-শিন্নি দেয়া, ইসালে সওয়াব করা এসবই শির্ক। আশ্চর্য! কবরের মৃত ব্যক্তি নিজেরই কোনো উপকার করতে পারে না সে কিভাবে অন্যের সমস্যার/বিপদের সমাধান করবে? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত। তারা প্রাণহীন, মৃত তাদের কোনই চেতনা নেই কবে পুনরুত্থিত হবে।” [১৬:২০-২১]
  খেয়ালখুশি তথা নফসের’ অনুসরণের শির্ক: ‘যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে’ [৪৫:২৩], সে-ই এই শির্ক করছে।  এই শ্রেণীর উদাহরণ:
(সলাত ত্যাগের শির্কনিজের খেয়াল-খুশিকে প্রাধান্য দিয়ে ইচ্ছাকৃত/অলসতা বশত নিয়মিতভাবে দৈনন্দিনের ফরয সলাত আদায় না করা মুশরিকের কাজ [৩০:৩১]
(শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য ও স্বার্থে কাজ করা, যেমন: পড়াশুনা করছি শুধু ভালো চাকুরীর জন্য, মাতাপিতার সেবা করছি সমাজের জন্য। কিন্তু জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু এক আল্লাহ্’র জন্য ইবাদত, সৎকর্ম [৫১:৫৬, ৬৭:২, ৩১:১৪]
 আল্লাহ্ নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ককোন নিয়ামত একমাত্র আল্লাহ্’র অনুগ্রহ স্বীকার না করে তা নিজ/অন্য কারোর মেধা বা যোগ্যতার পাওনা বলে দাবি করা শির্ক [১৬:৫৩, ১৬:৮৩; ১৭:৬৬, ৪১:৫০, ২৮:৭৮,৮১;বুখারী ৩৪৬৪]
১৫ তাবিজকবচের শির্কসমস্যা-মুসিবত ও রোগ-শোক দূর করার জন্য কিংবা সৌভাগ্য আনয়নের জন্য তাবিজ-কবচ, তাগা-বালা, পাথর, রিং, সুতা, নকশা ব্যবহার করা শির্ক। “বলো: তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, আল্লাহ্ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? বা তিনি আমার প্রতি রহমত করতে চাইলে তারা কি সে রহমত বন্ধ করতে পারবে? বলো, আমার পক্ষে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।” [৩৯:৩৮] “যে তাবিজ ঝুলালো সে শির্ক করল।” [আহমাদ ১৬৯৬৯, আস্-সিলসিলাহ আস্-সহীহ্ ৪৯২]
১৬ যাদুর শির্কসকল প্রকার কালো যাদু, যাদু করানো, যাদুকরদের সম্মান করা শির্ক। যাদুকরেরা জিনদের নামে পশু জবাই, তাদেরকে  সিজদা এরকম সব বড় শির্কের মাধ্যমে শয়তান জিনদের প্রিয়ভাজন হয় এবং তাদের সাহায্য নিয়ে পরস্পরের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, কাউকে জ্ঞানশুন্য করে ফেলা ইত্যাদি ক্ষতি করে থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” [২:১০২]
১৭ আল্লাহ্ সিফাতের শির্কবিভিন্ন ভাবে মানুষ এই শির্ক করে থাকে, যেমন:-
(একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়াও কোন নাবী, ওলী বা পীর-বুযুর্গ সব কিছু শুনতে বা দেখতে পান বা অন্তরের গোপন কথা বুঝতে পারেন এমন মনে করা শির্ক। এতে করে আল্লাহ্’র সাথে সমকক্ষ দাঁড় করানো হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ্’র জন্য প্রযোজ্য সিফাত্গুলোর সাথে: সর্ব-শ্রোতা (السَّمِيعُ), সর্ব-দ্রষ্টা (الْبَصِيرُ) এবং সর্ব-জ্ঞানী (الْعَلِيمُ); দ্রষ্টব্য [২:১২৭, ৩:১৬৩, ২:২৯]।
(একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়াও কোন নাবী, ওলী, গাওস, ক্বুতুব, আব্দালের এ বিশ্ব পরিচালনায় অথবা এর কোন কর্মকাণ্ডে হাত আছে (যেমন: ‘বুযুর্গের’ এক হুকুমে বৃষ্টি দেয়া, তুফান বন্ধ করা ইত্যাদি) এমন বিশ্বাস / মনে করা শির্ক। সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রক একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা; দ্রষ্টব্য [১০:৩, ১০:৩১, ১৩:২, ৩২:৫]
(গণক, ভবিষ্যৎ বক্তা, ভাগ্যপরীক্ষকের কাছে যাওয়া, রাশি, তারকা-নক্ষত্র, জোতিষী, হস্তরেখা দিয়ে ভাগ্য যাচাই শির্ক। একইভাবে কোন নাবী, ওলী বা পীর-বুযুর্গ গায়েব জানেন এমন মনে করাও শির্ক। যা কোন ধরনের মানবেন্দ্রিয় বা মানব তৈরী প্রযুক্তি কর্তৃক উপলব্ধ বা জ্ঞাত হওয়া সম্ভবপর নয় তাই গায়েব (যেমন: গর্ভস্থ সন্তান ছেলে বা মেয়ে তা প্রযুক্তি দ্বারা জানা সম্ভব কিন্তু সে সন্তান কেমন মানুষ হবে, মুত্তাকি হবে কি হবে না তা ‘গায়েব’)। আল্লাহ্ বলেন: “বলো, আল্লাহ্ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না।” [২৭:৬৫; আরো দ্রষ্টব্য: ৬:৫০ ও ৬:৫৯, ৩১:৩৪]।
() একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কেউ কাউকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিতে পারে/কেউ কাউকে ধনী বা গরিব বানাতে পারে এমন মনে করা শির্ক: [৩:২৬; ১৩:২৬, ১৭:৩০]।
১৮ আল্লাহ্ নামের শির্কআল্লাহ্ তা’আলা কে তাঁর নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে যেমন: দুয়া’র সময় ‘হে খোদা’, ‘হে বিধাতা’ ‘হে পাক-পরওয়ারদিগার’ ইত্যাদি নামে ডাকা শির্ক। কুরআন আর সহীহ্ হাদীস থেকে আল্লাহ্’র যে সব নাম (আসমা-উল-হুসনা) আমরা জানতে পারি সে সব নাম দিয়েই আল্লাহ্-কে ডাকতে হবে আর এটাই বৈধ অসীলা।  এ মর্মে আল্লাহ্ আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন: “আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকো; আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামের মধ্যে বিকৃতি ঘটায়। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।” [৭:১৮০] একমাত্র আল্লাহ্র জন্য প্রযোজ্য আল্লাহ্র সিফাতি নামে কোনো মানুষের নাম রাখা ও তাকে ডাকা গুরুতর পাপ যেমন: ‘আব্দুল’ ব্যবহার না করে ‘রাব্বি’ ‘রহমান’ ‘রকিব’ ‘রহিম’ ‘গফফার’ ‘খালেক’ ‘রাজ্জাক’ ইত্যাদি নাম রাখা / সংক্ষেপ করে এসব নামে মানুষকে ডাকা।
১৯ নাবী মুহাম্মদ (🙂 এর প্রতি অতিমানবীয় গুণআরোপের শির্করসূল (স:) কে () নূরের নাবী, ()জিন্দা নাবী/হায়াতুন্নাবী, () আলিমুল গায়েব মনে করা শির্ক। () “বলো: আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ।” [১৮:১১০] () “নিশ্চয়ই তুমিও মরণশীল, তারাও মরণশীল।”  [৩৯:৩০; দ্রষ্টব্য ৩:১৪৪] () “বলো, আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তাছাড়া আমার নিজের ভালো বা মন্দ করার কোনো ক্ষমতা আমার নেই। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না।” [৭:১৮৮]
২০ কথাকুসংস্কার  মতবাদের শির্ক:
(অতীতে সংঘটিত ঘটনার ক্ষেত্রে ‘যদি’ ব্যবহার করা শির্ক; কারণ, এ ধরনের কথা তাক্বদীরে অবিচল বিশ্বাসের বিরোধী। যেমন: ‘যদি (মৃত) লোকটাকে অমুক দেশে/হসপিটালে নিয়ে যেত তো সে বেঁচে যেত’ ইত্যাদি। আবার যুগ/সময়/বাতাস ইত্যাদিকে গালি দেওয়াও শির্ক। এছাড়া অনেক কবিতা/গান ভয়াবহ শির্কপূর্ণ, যেমন: ‘খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া [বিদ্রোহী কবিতা, কাজী নজরুল ইসলাম]  
() কুসংস্কার (যেমন: হাত চুলকালে টাকা আসে), অশুভ আলামত (যেমন: কুকুর/কাক ডাকলে মানুষ মারা যায়/ক্ষতি হয়) ইত্যাদি বলা/বিশ্বাস করা শির্ক। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “আল্লাহ্ যদি তোমাকে কষ্ট দিতে চান তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেও নেই। আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের গতিরোধ করার সাধ্য কারোরই নেই।” [১০:১০৭; ৩:১৫৪, ৩১:৬, ৪৫:২৪, বুখারী ৬১৮১, মুসলিম ২২৪৬, তিরমিযী ২২৫২]
(i. শক্তির অবিনাশিতাবাদ, ii. বিবর্তনবাদ/প্রকৃতিবাদ, iii. গণতন্ত্র (সকল ক্ষমতার উত্স জনগণ), সমাজতন্ত্র, ইসলামী-গণতন্ত্র (স্ববিরোধী-শব্দ) এরকম যাবতীয় তন্ত্র ও মতবাদ বিশ্বাস করা শির্ক; i. “সবকিছুই ধ্বংসশীল একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের মুখমন্ডল (সত্তা) ছাড়া” [৫৫:২৬-২৭] ii. “আল্লাহ্ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একজন ব্যক্তি থেকে।” [৭:১৮৯] iii. “নিশ্চয়ই আল্লাহ্’র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” [৩:১৯]; আরো দ্রষ্টব্য: [৩:৮৫, ৫:৩, ১২:৪০]।
পরিশেষে:
اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَم      [আহমাদ ১৯৬০৬]
 “হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শির্ক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই।”

দাওয়াতি কাজ সকল মুসলিমের জন্য ফরজ এবং সাধারণ মানুষদের দাওয়াতি কাজের কতিপয় পদ্ধতি

  ▬▬▬✪✪✪▬▬▬ প্রশ্ন: সৎকাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কি সবার উপরে ফরজ? যাদের দ্বীনের জ্ঞান নেই যেমন জেনারেল লাইনে পড়া মানুষ কিন্তু দ্বীন জানার...